#পালিয়ে_বিয়ে
# Part_6
# Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
,
ইহিতা আর ইশান দুইজন দুইদিকে দাঁড়িয়ে আছে। ইশান ইহিতাকে বলল
-লাঞ্চ করবে। ফ্রেশ হয়ে এসো। আমি গেস্ট রুমে যাচ্ছি ফ্রেশ হতে।
-আমি বাসায় যাব & right now.
-ইহিতা যা বলেছি করো। বেশি কথা বলে আমাকে রাগিও না। ইশানের আসল রুপ কিন্তু তুমি দেখোনি।
-আসল রুপ হাহহ। I dnt care who r u. আমি আমার জায়গায় থাকলেই হবে। বিকেলে আমি বাসায় চলে যাব।
-আগে তো দেখো ঘর থেকে বাগানে যেতে পারো কি না! আর বাসা তো অনেক দূর।
-তোর মতো নির্লজ্জ আমি খুব কম দেখেছি।
-এইটা স্বাভাবিক। ভালোবাসার কাছে নির্লজ্জ না হলে তা আদায় করা যায়না।
-ভালোবাসা মাই ফুট। তোর এই ভালবাসাই তোকে বিপদে ফেলল।
-উহু বিপদে পরিনি। আর তুই বলার মতো সম্পর্ক না এখন তোমার আর আমার মধ্যে। তাই তুমি করে বলো।
-তুমি তাও তোর মতো চিটারকে! ইহিতা কখনই তোকে তুমি বলবেনা।
-ইহিতা একটা কথা বলি শুনো। আম্মু,,পাপা,,বউমনি আর ভাইয়া এই ৪ জন যাতে তোমার কাছ থেকে যথেষ্ট রেসপেক্ট পায়। আমাকে যা ইচ্ছা বলো তুমি কিন্তু ওদের দিকে কোনোদিন চোখ তুলেও কথা বলবেনা। সেইদিন তাহলে আমি কি করব তোমায় জানিনা।
-এই বাসায় আমি থাকলে তো বিহেভের কথা আসবে! আমি আজই চলে যাব।
-ওই যে বললাম গিয়ে আগে দেখাও।
ইহিতা কিছু বলার আগেই তিন্নি নক করে রুমে। ইশান আসতে বলে তিন্নিকে।
-ইশান যাও ফ্রেশ হয়ে আসো। আজকে সবাই এক সাথে লাঞ্চ করব। (তিন্নি)
-যাচ্ছি কিন্তু তোমার হাতে কি এইগুলো বউমনি? (ইশান)
-যাও পরে দেখতে পাবে।
-যাচ্ছি।
ইশান চলে যাওয়ার পর তিন্নি ইহিতার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো আর ইহিতাকে বলল
-ইহিতা ফ্রেশ হয়ে এই শাড়ি আর গহনা গুলো পরবে। (ইহিতার হাতে দিয়ে)
-What? আমি এসব পরতে পারব না। আমাকে টি শার্ট দিন।
-ইহিতা মির্জা পরিবারের বউরা কখনো এসব পরেনা। এই পরবারের একটা ট্র্যাডিশন আছে। তোমাকেও সেইটা মানতে হবে। অন্তত দিনের বেলাতে।
-বউমনি I can’t. (ইহিতা)
-ইহিতা তুমি পারবে। তুমি শাড়ি পরেই দেখো কতটা ভাল লাগবে তোমাকে। আর আজ তোমার আর ইশানের সবচেয়ে মধুর একটা দিন। নিজেকে সুন্দরভাবে সাজাও ওর জন্য। দেখবে ও অনেক খুশি হবে।
-বউমনি আমার কোনো ইচ্ছে নেই ওই স্টুপিডটার জন্য সাজতে। ওকে আমি ঘৃণা করি জাস্ট হেইট হিম।
-সময় হোক তখন বুঝবা ইশান কি আর কেমন। এখন চটপট রেডি হও।
-ওর সম্পর্কে জানার কোনো ইন্টারেস্ট নেই আমার আর আমি শাড়ি পরতে পারিনা।
-আমি হেল্প করবো। যাও গোসল করে আসো আগে। ওয়াশরুমে টাওয়েল রাখা আছে।
-যাচ্ছি।
ইহিতা বের হয়ে আসার পর তিন্নি ইহিতাকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিল আর ইহিতাকে শাড়ি আর গহনা পরিয়ে দিল।
-দেখো তো এখন কেমন লাগছে নিজেকে? (তিন্নি ইহিতাকে বলল)
-ইহিতা অবাক হয়ে যায় নিজেকে দেখে। শাড়ির সাথে যেই ইহিতাকে যায়না সেই ইহিতা আজ শাড়ি পরেছে আর গা ভর্তি গহনা। অবাক লাগছে নিজেকে দেখে।
-কি বললেনা কেমন লাগছে?
-বউমনি এতগুলো গহনা পরতে পারছিনা। খুলে রাখি এগুলো!
-না অভ্যাস করতে হবে।
-কিন্তু অনেক ভারি তো।
-কিচ্ছু হবেনা এখন নিচে চলো।
তিন্নি ইহিতাকে ডায়নিং এ বসালো আর শৈলিকে (কাজের মেয়ে) বলল সবাইকে ডেকে নিয়ে আসতে। আয়মান আম্মু দুইজন এসে গেছে। ইশান আর পাপা আসেনি। তিন্নি পাপাকে ডেকে নিয়ে আসলো। ইহিতাকে দেখে পাপা বললেন
-মাশায়াল্লাহ।আমাদের ইশানের পছন্দ আছে বলতে হবে রাহেলা(মিসেস মির্জা)
-পাপা দেখতে হবে তো ভাইটা কার? (আয়মান)
-তিন্নি ইহিতাকে ইশারা করে বলল পাপাকে সালাম দিতে। ইহিতা সালাম দিল শুধু আর কিছু বলল না। ইশান চুল নাড়তে নাড়তে সিঁড়ি দিয়ে নামছিল। চেয়ার টান দিয়ে বসতে যাবে তখন সরাসরি ইহিতার দিকে চোখ পরে ইশানের। তিন্নি আর আয়মান দুইজনের দিকে তাঁকিয়ে হাসছে। ইশান হা করে সবার সামনে তাঁকিয়ে আছে ইহিতার দিকে। ইহিতাও ইশানকে এভাবে দেখে কয়েক সেকেন্ড তাঁকিয়ে ছিল পরে আবার চোখ সরিয়ে নেয়। আয়মান ইশানের পায়ে চিমটি দেয় আর ইশানের কানের সামনে গিয়ে বলে
-এভাবে তাঁকিয়ে আছিস কেন।? আজ প্রথম দেখলি নাকি?
-ইশান থতমত খেয়ে যায় আয়মানের কথা শুনে।
তিন্নি যখন ইশানের প্লেট এ ভাত দিচ্ছিল তখন তিন্নি ইশানকে আস্তে করে বলে
– রাতে দেখো মন ভরে।এখন খাও। (তখন ও ইশান ইহিতার দিকে অপলক তাঁকিয়ে ছিল) তিন্নি ইশানকে ইহিতার পাশে গিয়ে বসতে বলে। ইশান তখন উঠে গিয়ে ইহিতার পাশে বসে। তিন্নি আয়মানের পাশে বসে পরে। সবাই খাওয়া শেষ করে কিন্তু ইহিতা খাচ্ছে না। মিসেস মির্জা বললেন
-ইহিতা খাচ্ছো না কেন? বসে আছো যে!
-ঠিকই তো! ইহিতা কি হয়েছে খাচ্ছো না কেন? রান্না ভালো হয়নি?
-না আসলে…..
-কি হয়েছে? বলো? (ইশান)
-আমি নিজের হাতে খাইনি কখনো। চামচ ধরতেই আনইজি লাগছে।
-ওহ এই কথা! ইশান ইহিতাকে খাইয়ে দে! (আয়মান)
-না আমি খেতে পারবো। (ইহিতা)
-না পারবেনা। (তিন্নি)
ততক্ষনে খাবার খেয়ে আম্মু আর পাপা টেবিল থেকে উঠে গেছেন। ইহিতা খুব আনইজি ফিল করছে। ঘেমে যাচ্ছে পুরো ইহিতা। তিন্নি ইশানকে ধমক দিয়ে বলল
-তোমার ভাই কি বলল শুনো নাই ইশান?
-শুনেছি। দিচ্ছি তো! (ভয়ে ভয়ে)
ইহিতার প্লেট হাতে নিয়ে ইশান হা করতে বলে ইহিতাকে। ইহিতা কিছু বলেনা। সে ইশানের হাতে খাবেনা এইটাই বুঝাতে চাইছে ইশানকে। ইশান বুঝেও না বুঝার ভান করে ইহিতাকে জোর করে খাইয়ে দেয়। আয়মান তখন তিন্নিকে বলল
-আমিও তোমায় খাইয়ে দেই। হা করো
-তিন্নি হেসে দেয় আর আয়মানের হাত থেকে খাবার খায়। তিন্নি ইহিতাকে বলছে
-এখন খেতে পারছো?
-ইহিতা হুম বলে শুধু।
খাওয়া শেষ করে সবাই উঠে যায়। আয়মান ডেকোরেটস দের সাথে কথা বলছে বাসর সাজানোর ব্যাপারে। তিন্নির পছন্দ মতো ইশানের ঘরকে সাজানো হয়। ইহিতা তিন্নির ঘরে ছিল আর ইশান বসে ছিল। সন্ধ্যায় ইহিতার বাবা মির্জা প্যালেসে আসে। ইশানের উপর প্রচন্ড রেগে যান উনি। তারপর আয়মান বুঝায় উনাকে। কিন্তু উনি মানতে পারছেন না। কেন পারছেন না সে কারন ও বলছেন না। তখন আব্বু আর পাপা চৌধুরীকে বুঝান। তবুও উনি শান্ত হতে পারছেন না। ইহিতা চলে যেতে চায় বাবার সাথে। কিন্তু ইশান ইহিতার হাত ধরে খুব শক্ত করে। ইহিতার হাতে ইশানের ৫ আঙ্গুলের ছাপ পরে যায়। কোনোভাবেই ছাড়াতে পারছেনা ইহিতা নিজেকে ইশানের কাছ থেকে। ইশান তখন চৌধুরীকে বলে
-বাবা ও এখন আমার স্ত্রী। আপনার থেকে বেশি অধিকার এখন আমার ওর উপর। আপনি মানুন বা না মানুন। ইহিতা কোথাও যাবে না।
-অভ্র তুমি কেন বুঝছো না এইটা সম্ভব নয়?(ইহিতার বাবা)
-কেন নয়? আমার কি অর্থ কম? নাকি আমি অশিক্ষিত? (তখনো ইশান ইহিতার হাত ধরে ছিল)
-এসবের কথা বলছিনা আমি।
-আপনি যাই বলুন আরর না বলুন ইহিতা এখন আমার আর ও আমার কাছেই থাকবে।
-ওকে। এখানে আমারো আর কিছু করার নেই। কিন্তু পরে আফসোস করো না যেন! (ইহিতার বাবা কাঁদছিলেন তখন)
-কোনো আফসোস হবেনা! আর আফসোস কেন হবে? ভালবাসাকেই তো বিয়ে করেছি!
-দেখে রেখো ওকে। মির্জা সাহেব দেখে রাখবেন আমার মেয়েটাকে! কখনো চুল পরিমান কষ্ট দেইনি ওকে।
-আপনি চিন্তা করবেননা চৌধুরী সাহেব। আমরা আছি।
এরপর ইহিতার বাবা চলে গেলেন। ইহিতা কাঁদছিল বাবার কান্না দেখে। ইহিতার চোখে পানি ইশান এই প্রথম দেখলো। ইশান ইহিতার চোখের পানি মুছে দিল আরর হাত ছেড়ে দিল।
# চলবে …….
# পালিয়ে_বিয়ে
# Part_7
# Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
,
ইশান ইহিতার হাত ছেড়ে দেয়। ইহিতার ফর্সা হাত নীল রঙের হয়ে গেছে। ইশান দেখে ভয় পেয়ে যায়। তিন্নি মলম নিয়ে আসে তারাতারি করে। ইশান মলম লাগাতে যাবে তখন ইহিতা বলে
-লাগবে না। ব্যাথা পাইনি আমি। (এই কথা বলে ইহিতা উপরে চলে যায়)
ইশান ও মলম নিয়েই পিছু পিছু যায়। ইহিতা গেস্ট রুমে গিয়ে বসে আর চাদর খামচাচ্ছে জেদে। ইশান এইটা দেখে বুঝতে পারে ইহিতা অনেক রেগে আছে। ইশান ইহিতার সামনে আসে। ইহিতার হাত টান দিয়ে নিজের পায়ের উপর রাখে।
-কি হচ্ছে কি? (রেগে গিয়ে ইহিতা)
-ইহিতা প্লিজ মলমটা লাগাতে দাও। আমি স্যরি। বুঝিনি এমন হয়ে যাবে।
-Don’t touch. Just leave me alone.
-ইহিতা প্লিজ
-নো। I am alright.
-যা ইচ্ছে হয় আমাকে বলো কিন্তু মলমটা লাগাতে দাও হাতে। নয়ত ব্যথা করবে আর ফুলে যাবে।
-যাক। তুই হ্যাপি হবি তো তখন?
-ইহিতা এইটা কি ধরনের কথা বলার স্টাইল? স্যরি পার্মিশন না নিয়ে আসার জন্য! (তিন্নি)
-আরে না বউমনি পার্মিশন কিসের। বসো।
-এই ঘরে কেন তোমরা? তোমাদের ঘরে যাও।
-না আমি এখানেই থাকব। ওই ঘরে যাব না। (ইহিতা)
-ইশান বাইরে যাও তো! আর এইটা দিয়ে যাও আমি লাগিয়ে দিচ্ছি।(তিন্নি)
-কিন্তু বউমনি? (ইশান)
-যাও
-আচ্ছা যাচ্ছি। (ইশান চলে গেলো)
তিন্নি ইহিতার পাশে বসে ইহিতার হাতে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে আর ইহিতাকে বলছে
-জানো ইহিতা স্বামী হচ্ছে মেয়েদের শ্রেষ্ঠ অলংকার?
-না
-একটা মেয়ের যখন বিয়ে হয় তার বেষ্ট ফ্রেন্ড,, বয়ফ্রেন্ড,, রাগ অভিমানের সাথী সব যে স্বামী হয় সেইটা জানো?
-না।
-যখন ওর আর আমার বিয়ে হয় তখন আমি কেবল ইন্টার পরীক্ষা দিয়েছি আর ও তখন ইউরোপিয়ান ৮ টা কান্ট্রির লিডারশিপ এ।আর এখন তো ও পুরো ওয়ার্ল্ডের ই। তো বুঝতেই পারছো ওর আর আমার বয়সের গ্যাপটাও ৮ বছরের।সে যাই হোক, যেদিন ওর আর আমার বিয়ে হলো সেদিন আমি ভয়ে কান্না করে দিয়েছিলাম এই বাড়িতে এসে। তখন আম্মু আর ও মিলে আমায় নরমাল করলো। যখন ওর সাথে আমাকে ওর ঘরে দিয়ে আসলো তখন তো আমি যাব না বলে একদম ফ্লোরে বসেছিলাম। এইটা দেখে ইশান আর ও হাসছিল। ইশান ও কে বারবার বলছিল বউমনি আসলেই পিচ্চি রে ভাইয়া। ও তখন আমার সামনে এসে বসে আর হাত ধরে বলে আমি আছি তো কিচ্ছু হবেনা! এই ৬ টা বছর এই কথা আমার কানেই বেজেছে শুধু। তখন ইশান আর ইরাশা(ইশানের কাজিন) আমায় ঘরে দিয়ে আসলো। ও ঘরে এসে আমাকে বলল তিন্নি যেদিন তোমার মাইন্ড সেট আপ হবে আর যেইদিন আমায় ভয় পাবেনা ঠিক সেইদিনই তোমার কাছে অধিকার চাইবো এর আগে নয়! ওর কথা ও রেখেছিল। বিয়ের দেড় বছর পর আমাদের নতুন করে পথচলা শুরু হয়। আর এই দেড় বছর আমার শরীরে ও স্পর্শ করেনি। কিন্তু এখন বুঝি কি অপরাধ করেছি আমি ওর কাছে। দেড়টা বছর ও আমার সবকিছু সহ্য করেছে। এখন পাগলের মতোই ভালোবাসে। কি বুঝলে বলো তো? কেন আমি এই কথা বললাম তোমাকে জানো?
-না
-আমি চাই তুমি যাতে এই ভুল না করো। হতে পারে তোমাদের বিয়েটা অস্বাভাবিক ভাবে হয়েছে কিন্তু ইহিতা এইটা ভুলে যেয়ো না ইশান শত হলে ও তোমার সারাজীবনের সাথী। তোমার বন্ধু ও।
-বউমনি ওর নাম আমি শুনতে চাই না। প্লিজ ওর নাম বলো না।
-পরে আফসোস করো না ইহিতা!
-কখনই না। ওর জন্য আফসোস আমি মরে গেলেও করব না।
-একদিন বুঝবে ইশানকে সেইদিন খুব বেশি দূরে নয়। আর পাপা আম্মু থাকে বাসায়।তাই আমি চাই অন্তত সবার সামনে তুমি ওর সাথে ভালো ব্যবহার করো। ওর সাথে ঘুমাও।
-ইম্পসিবল বউমনি! (ইহিতা দাঁড়িয়ে যায়)
-ইহিতা এই পরিবারের একটা সম্মান আছে। একটু ভুলের জন্য পাপা কথা শুনবে,,ও কথা শুনবে,,ইশান কথা শুনবে! সেইটা কি ভালো হবে বলো?
-তাহলে আমাকে কি ওই স্টুপিডটার সাথে ঘুমাতে হবে?
-হ্যা ইহিতা। সেইটা তুমি না চাইলেও করতে হবে কিচ্ছু করার নেই।
-বউমনি আমি পারবো না।
-চলো আমার সাথে।
তিন্নি ইহিতার হাত ধরে ইশানের ঘরে নিয়ে যায় ইহিতাকে। ইশান তখন ভ্যালকনিতে দাঁড়িয়ে বাইরে দেখছিল। তিন্নি ইশানকে ডাকে আর ইশান এসে দাঁড়ায় তিন্নির সামনে। তিন্নি ইহিতার হাত ইশানের হাতের উপর রেখে বলে
-সারাজীবন দেখে রাখতে পারবে তো?
-পারবো। (ইহিতার চোখের দিকে তাঁকিয়ে)
-Have a nice moment…. Bye. (এই কথা বলে তিন্নি চলে গেল দরজা লক করে দিয়ে)
ইহিতা এক টানে ইশানের হাতের উপর থেকে ওর হাত সরিয়ে দূরে দাঁড়ালো।
-ইহিতা চিন্তা করো না আমি কাপুরুষ নই যে তোমায় ছুঁবো তোমার অনুমতি ছাড়া।
-ইহিতা কিছু বলে না।
-ইহিতা বসো। আজকে তোমায় কিছু কথা বলি!
-না আমি কিছু শুনতে চাইনা তোর মুখ থেকে।
-শুনা যে দরকার তোমার। বোরিং কিছু বলব না।
এরপর ইহিতা ড্রেসিং টেবিলের সামনের টুলে বসলো আর ইশান ইহিতার বিপরীতে সোফায় বসলো। দূরত্ব কয়েক হাতের। ইশান ইহিতার দিকে তাঁকিয়ে বলে
-প্রথম দেখেছিলাম ১১ ই জানুয়ারি ২০১৩ বিকেল ৫ টা বেজে ৫৬ মিনিট। আমি লন্ডন থেকে এসেছি বাংলাদেশে ৩ দিন হবে। তুমি এসএসসি দিবে। ভাইয়ার সাথে মার্কেট এ গিয়েছিলাম বউমনির জন্য গিফট কিনতে। CT max এর পাশের দোকানে ছিলে তুমি। বের হওয়ার সময় তোমার দিকে চোখ যায় আমার। White T-shirt,,Black jeans আর স্ট্রেইট করা চুলগুলো একদম খোলা। সাথে তোমার বাবা ছিল। আমি এক দৃষ্টিতে তোমার দিকে তাঁকিয়ে ছিলাম তখন ভাইয়া বলল এমন করে কি দেখছি? আমি বললাম একটা পরীকে। তখন ভাইয়া হেসে দিল আর বলল ওই মেয়ের ডিটেইলস আমার জানা। বাসায় চল বলছি। আমি তখন ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কিভাবে চিনো? ভাইয়া বলল আশরাফ চৌধুরীর মেয়েকে সবাই চিনে। তখন ভাইয়া সব বলল তোমার জেদ,,তোমার অহংকার,, তোমার don’t care attitude সম্পর্কে। আমি তখন ভাইয়াকে প্রমিস করেছিলাম ওকেই আমি আমার করব। তখন থেকেই শুরু হলো আমার ভাবনা তোমায় নিয়ে। যতই ভাবতাম ততই ভালো লাগত। লন্ডনে আমার রুমে তোমার ছবি লাগানো। সেইগুলো দেখতাম আর ভাবতাম কবে তুমি বড় হবে? যখন আমার PhD complete হলো তখন ই ভাইয়াকে বলে প্ল্যান করেই তোমার ভার্সিটি তে যাই। প্রিন্সিপাল স্যার সব জানেন। আর যেদিন তোমায় চড় মেরেছিলাম সেইদিন আমি নিজের হাত কেটেছি। এই দেখো! (ইহিতার সামনে হাত বাড়িয়ে দিয়ে) বউমনি খুব বকেছিল সেইদিন। যখন তুমি আমার দেওয়া ড্রেসটা কেটে ফেলেছিলে তখন অনেক রাগ হয় আমার। আর তাই আমি তোমাকে এইভাবে বিয়ে করে নিয়ে আসি। বলো আমার ভাবনা আর আমার কাজে কি কোনো ভূল ছিল?
-একটাই তোর ভুল সেইটা আমায় ভালোবাসা আর বিয়ে করা।
-সেই ভুল তুমি চাইলেই শুধরে দিতে পারো! (একটু মুচকি হেসে ইশান)
-মরে গেলেও না। কখনো তোকে মেনে নিব না আমি শুনেছিস তুই?
-তাহলে তো আমার পাগলামী এপ্লাই করতে হবে আমার বউয়ের উপর।
-How dare u? তোর বউ কে?
-এই সুন্দরী আর পরীটা! চলো ঘুমাবে।
-তোর সাথে না!
-হ্যা আমার সাথেই আর আমার বুকের উপরে! (ইশান ইহিতার সামনে দাঁড়িয়ে)
-What? ?
# চলবে ………
# পালিয়ে_বিয়ে
# Part_8
# Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
ইহিতাকে ইশান কোলে তুলে নিলো। ইহিতা ইশানের পিঠে মারছে ওকে ছাড়ার জন্য কিন্তু ইশান শুনছেই না। ইশান ইহিতাকে ফুল দিয়ে সাজানো বিছানায় শুইয়ে দিল। ইহিতা এক সাইড হয়ে শুয়ে পরে। ইশান বিছানায় শোয় আর ইহিতাকে টেনে ওর পাশে নিয়ে আসে।
-আমাকে তুই টাচ করবিনা। তুই তোর মতো থাক আর আমায় আমার মতো থাকতে দে।
-না। তোমায় টাচ করার পুরা অধিকার আছে আমার। কিন্তু এখন যদি তুমি চুপচাপ আমার কাছে না ঘুমাও তাহলে তোমার সাথে নেক্সট এ যা করব তার জন্য তুমি প্রস্তুত থাকবেনা ইহিতা। সো বুঝতেই পারছো কি করব? (ইহিতার হাত ধরে ইশানের হাতের উপর শুইয়ে)
-ইশান তুই আমাকে তুলে নিয়ে বিয়ে করেছিস বলে আমার সব স্বাধীনতা আর চাওয়া পাওয়া হরণ করে নেসনি। আমাকে আমার মতো থাকতে না দিলে অবস্থা তোর আরো খারাপ হবে।
-ইহিতা চুপ করো। পাশে ভাইয়ার রুম। এত রাতে চেচালে তারা কি ভাববে? (ইহিতার মুখে হাত দিয়ে)
-What the!! আমার মুখে হাত দিয়েছিস কেন?
-ঘুমাও তো আর যেভাবে আছো সেভাবেই ঘুমাও। (ইহিতাকে জড়িয়ে ধরে)
-ইশান ছাড় আমায়। (ইহিতা চিল্লিয়ে)
-এই মেয়ে তো আমার কথাই শুনছেনা। স্কচটেপ নিয়ে আসবো এখন দেখো।
-তুই আমায়……. (ইহিতা কিছু বলার আগেই ইশান ইহিতাকে কিস করে দেয় আর ইহিতা চুপ হয়ে রাগি দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে থাকে ইশানের দিকে আর ইশান ইহিতাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে যায়)
ইহিতা আনইজি তো ফিল করিছেই সাথে রেগেও আছে। এই ছেলে পেয়েছে টা কি? যখন ইচ্ছা আমায় মারবে আর যখন ইচ্ছা আমায় কিস করবে? ইহিতা সব রাগ একসাথে করে ঘুমিয়ে পরে।
সকালবেলা ইহিতা ঘুম থেকে জেগে দেখে ইশান এখনো ইহিতাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে আর ইহিতার গলায় ইশানের মুখের খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি লাগছে। ইহিতা একটু সরে গিয়ে উঠতে যায় তখন দেখে ইহিতার শাড়ির আচল ইশানের পিঠের নিচে। ইহিতা লজ্জায় শেষ হয়ে যায়। এখন ইশানকে ডাকলেই তো ও উঠে দেখবে ওকে এইভাবে আর আরো লজ্জা পাবে ইহিতা। ইহিতা এখন কি করবে কিচ্ছু ভেবে পাচ্ছে না! ইশানের প্রতি রাগ হচ্ছে কেন ওকে জড়িয়ে ধরতে গেল? ইহিতা নড়াচড়া করতে থাকে অস্থিরতায়। ইশানের ঘুম ভেঙ্গে যায় ইহিতার নড়াচড়াতে। ইশান দেখে ইহিতা জেগে গেছে আর ওর কোনোকিছুর কোনো ঠিক নেই। শাড়ি পরা ওর অভ্যাস নেই তাই। ইশান ইহিতার দিকে তাঁকিয়ে মুচকি হাসি দেয়। ইহিতার তো তখন রাগে গা জ্বলতে থাকে। ইহিতা এক টানে শাড়ির আচলটা পরে বিছানা থেকে উঠে শাড়িটা ঠিক করতে থাকে। ইহিতা পারছেনা ঠিক করতে সব খুলে যাচ্ছে। ইশান হাতের উপর মাথা রেখে মায়াবী দৃষ্টিতে দেখছে ইহিতার কর্মকাণ্ড আর হাসছে। আওয়াজ না করেই হাসছে যাতে ইহিতা শুনতে না পায়। ইহিতার সিল্কি চুলগুলো জট করে আছে। গয়নাগুলোও উলট পালট হয়ে সরে গেছে। ইহিতা যত শাড়ি ঠিক করছে ততই খুলে যাচ্ছে। ইহিতা এইবার প্রচন্ড ক্ষেপে যায়। শাড়ি ফেলে দিয়ে বিছানায় বসে পড়ে। ইশানের দিকে একবারো তাকাচ্ছেনা ইহিতা। ইশান বিছানা থেকে উঠে ইহিতাকে দাঁড় করায় আর ইহিতার শাড়ি ঠিক করে দেয়। ইহিতার চুল ঠিক করে দেয় ইশান। ইহিতা বিরক্ত হয়েই সহ্য করলো। ইহিতা রেডি হয়ে তিন্নির কাছে গেল। তিন্নি টেবিলে খাবার সার্ভ করছিল আর আয়মান কফি খাচ্ছিলো। ইহিতা তিন্নিকে বলল
-Good morning বউমনি আর গুড মর্নিং ভাইয়া।
-Good morning ইহিতা। (দুই জন এক সাথে) ইশান কই?
-জানিনা। (বিরক্ত হয়ে ইহিতা)
-আচ্ছা বসো তুমি। (তিন্নি)
ইহিতা বসে পেপার পরছিল তখন ইহিতার বাবা আসে। বাবাকে দেখে ইহিতা দাঁড়িয়ে যায় আর জড়িয়ে ধরে। চৌধুরী তিন্নির হাতে এক ব্যাগ ওষুধ দিয়ে যায়। কিন্তু সবগুলোর নাম উঠানো। তিন্নি অবাক হয়ে যায়।
-আংকেল এই মেডিসিন গুলো কেন?(তিন্নি)
-ইহিতাকে প্রতিদিন ২ টা করে খাইয়ে দিও মনে করে প্লিজ। আমার মামনিটাকে দেখো।
-কিন্তু আংকেল এতগুলা মেডিসিন তাও নাম ছাড়া। আরর কিসের ওষুধ এগুলো?
-আমার বুঝ হওয়ার পরই দেখছি বাবা প্রতিদিন ২ টা করে এই ওষুধ আমায় খাওয়ায় কিন্তু কোনোদিন বলেনি কিসের ওষুধ। (ইহিতা)
-আংকেল বলেন কিসের ওষুধ ? (তিন্নি ভয় পেয়ে)
-এত কিছু বলতে পারব না। আমার অফিসের টাইম হয়ে গেল। যেতে হবে আর ওষুধ গুলো খাইয়ে দিও প্লিজ। (এইই কথা বলে হনহন করে বেরিয়ে যায় ইহিতার বাবা)
তিন্নি আর আয়মান দুইজন দুইজনের দিকে তাঁকিয়ে আছে। ইহিতা ওষুধ গুলো নিয়ে ঘরে রেখে আসে। ইশান কে কেউ কিছু বলল না। সবাই নরমালি নিল ব্যাপারটা কিন্তু তিন্নির মনে খটকা লেগে গেলো। তিন্নি সবাইকে খাবার সার্ভ করলো। সবাই খেয়ে দেয়ে উঠে গেলো। তিন্নি আয়মানকে বলল ইহিতার ব্যাপারটা। আয়মান তিন্নিকে বলল হবে হয়ত কিছু। বাদ দাও,,খেতেই পারে। তিন্নিও আর মাথা ঘামালো না। তিন্নি ইহিতাকে ওষুধ খেতে বলল। ইহিতা ওষুধ খাওয়ার পর তিন্নি ইহিতাকে ছবির এলবাম দেখাতে বসলো। পাশে ইশান বসে জুস খাচ্ছে। আয়মান অফিসে। তিন্নি ইহিতাকে আগে ওদের বিয়ের ছবি দেখালো। ইহিতা হাসছে আর দেখছে আর ইশান ইহিতার দিকে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাঁকিয়ে আছে। এরপর তিন্নি ইশানের ছবি দেখালো ইহিতাকে। ইহিতা হা হয়ে দেখছে আর পাতা উল্টাচ্ছে। অনেক সুন্দর লাগছে ইশানকে। এরপর ইহিতা আঁড়চোখে ইশানকে দেখলো এমনিতেও ইশান দেখতে মাশায়াল্লাহ। একটু পর ইশানের ফোনে ইশানের বেস্ট ফ্রেন্ড নাদিরা কল করলো। ইশান ইহিতা আর বউমনির সামনেই ফোন রিসিভ করলো
-হ্যালো নাদিরা। কেমন আছিস? (হাসি মুখে ইশান)
-….
-হ্যা আমিও ভালো আছি। বাংলাদেশে আসছিস কবে?
-….
-তারাতারি আয়।
এসব শুনে ইহিতা রাগে দাঁড়িয়ে যায়। এরপর ইহিতা সেখান থেকে ঘরে চলে যায় আর ওয়াশরুমে গোসল করতে ঢুকে। কিন্তু কোনো কাপড় নিয়ে যায়নি ইহি
# পালিয়ে_বিয়ে
# Part_9
# Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
ইহিতা কোনো ড্রেস না নিয়েই ওয়াশরুমে ঢুকে যায় গোসল করতে। গোসল করার পর চেঞ্জ করার সময় দেখে ইহিতা ড্রেস নিয়ে আসেনি। ইহিতা টাওয়েল পরে রুমে আসে কারণ ইহিতা জানে বেডরুমে এখন কেউ আসবে না। ইহিতা রুমে চুল মুছতে মুছতে আসে। এসে দেখে ইশান বিছানায় বসে ফোন টিপছে। ইশান ইহিতার দিকে খেয়াল করেনি। ইহিতার রাগ ও হচ্ছে আর কিছু বলতেও পারছেনা। ইহিতা ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল কয়েক মিনিট সেখানে। ইশান ফোন রেখে উঠতে যাবে তখন দেখে ইহিতা এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে আর চোখ তো রাগে আগুনের মতো জ্বলছে। ইশান টি শার্ট টান দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। ইহিতার সামনে গিয়ে ইহিতার চারপাশে একবার চক্কর খায়।
-তুমি ইহিতাই তো? (মজা করে ইশান)
-How dare you? (ইহিতা)
-Nothing is impossible for me so dare করার প্রশ্নই আসে না ! বাট এই অবস্থায় আমার সামনে আসার মানে কি? আমার কাছে আসার এত ইচ্ছা আমাকে বললেই পারো!
-Shut up! It’s my mistake. আমি ড্রেস নিয়ে যাইনি।
-ওহ রিয়েলি নাকি এইটা একটা বাহানা?
-I just see U. আমার ভার্সিটি তে যেতে লেইট হবে নয়ত আজকে তোর কি হাল যে করতাম! বের হ এখান থেকে আমি চেঞ্জ করব।
-যাচ্ছি।
ইশান বের হচ্ছে আর মনে মনে বলছে দুইদিন হলো বিয়ে হয়েছে। আজ রাতে বুঝবে ইহিতা মির্জা কত ধানে কত চাল আর এক ইশানে কয়টা রুপ। আগামী কয়েকঘন্টা তুই তুকারি করে নাও। বাট রাতের পর থেকে পারবা নাকি সেইটা নিয়ে আমায় একটু ভাবতে হবে।
ইহিতা রেডি হয়ে নিচে যায়। ইশান ইহিতাকে ১ মিনিট দাঁড়াতে বলে। ইহিতা না চাইলেও দাঁড়াতে হয় কারণ তিন্নি সামনে ছিল। ইশান সুন্দর করে রেডি হয়ে আসে। ইশান যখন সিঁড়ি দিয়ে নামছিল তখন ইহিতা হা করে তাঁকিয়ে ছিল। ইশানের চুলগুলো উড়ছে আর কালার গুলো গ্লো করছে। ইহিতা তাঁকিয়েই থাকে। ইশান এসে ইহিতাকে বলে
-দেখা শেষ? (সানগ্লাস পরতে পরতে)
-তোকে দেখে আমি কি করব? (আস্তে করে বলল ইহিতা)
-বউমনি আসছি। চলো (ইহিতাকে উদ্দেশ্য করে)
-চলো মানে? তুই কোথায় যাবি?
-তোমাকে দিয়ে আসব আর নিয়ে আসব।
-No need I can go alone.
-I know Mam but responsibility is mine so let’s go without time loss.
-যত্তসব।
ইহিতা হনহন করে হেঁটে গাড়িতে গিয়ে বসে পরলো। ইশান গাড়ি ড্রাইভ করছে। ইহিতা চুপ করে বিরক্তি নিয়ে বসে আছে। ইশান ইহিতাকে বলল
-আজকে কি ক্লাস?
-জানি না।
-তুমি কি স্টুডেন্ট?
-না মহিলা!! (রেগে গিয়ে ইহিতা)
-মহিলাই তো! তবে অসার মহিলা!
-অসার কি?
-জানিনা।
-আমাকে বাজে কথা বললে কিন্তু!
-নামার আগে ওড়নাটা ঠিক করে পরে তারপর নামবেন।
-স্টুপিড কোথাকারের! আমি যা ইচ্ছা করব তাতে তোর কি?
-সোনা বউ তোমার শরীর অন্য কেউ কি করে দেখবে বলো তো? তুমি কি চাও যে দেখবে তার চোখ তুলে নেই নাকি নিজে ঠিক করে চলতে চাও?
-এসে গেছি।
-হুম।
ইশান গাড়ি পার্ক করে ইহিতার সাথে নামলো। প্রিন্সিপাল ইশানের সাথে কথা বলবেন বললেন আর ইশান ইহিতাকে ক্লাসরুমে বসিয়ে দিয়ে প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলতে গেলো।
-ইশান আমি তোমায় একটা অনুরোধ করব রাখবে? (প্রিন্সিপাল)
-স্যার প্লিজ বলুন। অনুরোধ কেন? আপনি বলুন।
-আমি চাইছি কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্ট এর ইংলিশ ক্লাসটা তুমি নাও কারণ সোহেল স্যারকে কোনো স্টুডেন্ট লাইক করেনা আর ওনার নামে অনেক কমপ্লেইন ও আছে।
-কিন্তু স্যার?
-আমি জানি ইশান তুমি এমন জব ডিজার্ভ করো না বাট তুমি না চাইলে ঠিক আছে।
-না স্যার আমি তা বলছিনা। ইহিতা আমার ওয়াইফ সেইটা তো আপনি জানেন তাহলে আমি কিভাবে নিবো সেই ক্লাস?
-সেইটা আমি দেখব। আর তুমি তো আকাশকে VP এর দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছো। কোনো প্রব্লেম হবে না।
-আচ্ছা স্যার দেখব আমি।
-আজকেই একটা ক্লাস নাও
-আজকেই? আজকে আমার কোনো প্রিপারেশন নেই।
-ওপেন করো জাস্ট।
-আচ্ছা স্যার।
প্রিন্সিপাল আর ইশান কথা বলা শেষ করে ক্লাসরুমের দিকে গেলো। History teacher বের হওয়ার পরেই প্রিন্সিপাল আর ইশান ক্লাসে ঢুকলো। ইশানকে দেখে ইহিতাসহ সবাই অবাক। ইহিতা প্রিন্সিপালের জন্য উঠে দাঁড়ালো কিন্তু মুখে বিরক্তি নিয়ে।
-তোমরা অলরেডি ইশানকে চিনো। আজ থেকে তোমাদের ইংলিশ লেকচারার ইশান মির্জা PhD from London University.
ইহিতা এইটা শুনে হা করে ইশানের দিকে তাঁকিয়ে থাকে। তিথি ইহিতাকে বলে
-কিরে ঘরে তো রোম্যান্স করবিই এখন কলেজেও? (ফাইজলামি করে)
-তিথি just shut up! ওর মতো ফাজিলকে আমি মেনে নিব কখনই না! কাল থেকে আর কলেজেই আসব না।
-তোর ইচ্ছা আর এমনিতেও তো আসিসনা। সুন্দর বরকে সামলে রাখিস নয়ত যে কেউ যখন তখন চুরি করে নিয়ে যাবে।
-খুব বেশি বলছিস। (রেগে গিয়ে ইহিতা)
প্রিন্সিপাল চলে যাওয়ার পর ইশান একেক করে সবার নাম জিজ্ঞেস করলো। যখন ইহিতার পালা আসলো তখন ইশান বলল
-ইহিতা মির্জা। নেক্সট তুমি বলো What is ur name? (তিথিকে উদ্দেশ্য করে)
যখন পরিচয় পর্ব শেষ হলো তখন একটা মেয়ে ইশানকে প্রশ্ন করলো
-স্যার আপনি কি ম্যারিড?
-দেখে কি মনে হয়? (ইহিতার দিকে তাঁকিয়ে)
-এত হ্যান্ডসাম আপনি gf তো নিশ্চই আছে ?
-Personal matter নিয়ে কথা না বলি?
-শিউর স্যার।
এরপর ইশান পড়াতে শুরু করলো আর ইহিতা এসব শুনে পারেনা নিজের চুল ছিঁড়ে ফেলে। ইশান বিয়ের ব্যাপারটা হাইড করলো কারণ ইশান কাউকে এখনি কিছু জানাবেনা। ইহিতার মন জয় করার পরই জানাবে। ইশানের পড়ানোর স্টাইলে সবাই ফিদাহ হয়ে গেলো। সবাই মনোযোগ দিয়ে ইশানের ক্লাস করলো শুধু ইহিতা ছাড়া। এক পর্যায়ে ইহিতা বিরক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে
-May I go out?
-No. Take your seat
-আমাকে আটকানোর আপনি কে?
এই কথা শুনে ইশান মার্কার হাতে নিয়ে ইহিতার সামনে এসে একটু নিচু হয়ে দাঁড়ায়।
-ভুলে যাবেননা মিসেস এইটা কলেজ not ur home so be gentle
-I am ok. আমি ক্লাস করব না।
-ওকে করা লাগবে না। Get lost from here.
ইহিতা ইশানের এই ব্যবহার দেখে রাগে ক্লাস থেকে বেরিয়ে যায়। ইশান তখন ইহিতাকে একটা মেসেজ সেন্ড করে “Ami na asha porjonto campus e thakbe otherwise obostha kharap hobe tomar”.
এরপর ইশান ক্লাস শেষ করে ইহিতাকে খুঁজতে থাকে কিন্তু ইহিতা ক্যাম্পাসে নেই আর গাড়িও নিয়ে যায়নি। ইশানের মাথা প্রচন্ড খারাপ হয়ে যায়। ইশান বাসায় ফোন দিয়ে জানে ইহিতা বাসায় ও যায়নি।
চলবে
#part_10
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
ইশান ক্লাস শেষ করে যখন ইহিতাকে পেলো না তখন ইশানের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। ইশান গাড়ি নিয়ে যায় ইহিতাকে খুঁজতে। ইশান ইহিতাকে অনেকক্ষণ ধরে খুঁজলো কিন্তু পেলো না। হঠাৎ ইশানের মনে হলো ইহিতা লেকের দিকে যায়নি তো? ও তো আবার লেকের দিকে বেশি যেতে পছন্দ করে! ইশান আর কিছু না ভেবে গাড়ি ঘুরিয়ে লেকের দিকে যায়। খুব দ্রুত গাড়ি চালায় ইশান। গাড়ি থামিয়ে গাড়ি থেকে নামার পর ইশান দেখে ইহিতা মুখ ঘুরিয়ে বসে আছে। ইশানের দেহে প্রাণ ফিরে আসলো ইহিতাকে দেখে। ইশান ইহিতার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ইহিতা মাথা তুলে দেখে সামনে ইশান দাঁড়ানো আর নাক মুখ লাল হয়ে আছে। প্রখর দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে ইশান ইহিতার দিকে।
-কি বলেছিলাম? (ইশান)
-ইহিতা কোনো কথা বলল না।
-Answer me damn it! আমি তোমায় এখানে আসতে বলেছিলাম? (চিল্লিয়ে ইশান)
-কেন? আপনাকে বলে আসতে হবে আমার?
-উঠো!
-না আমি যাব না।
ইশান ইহিতাকে আর কিছু না বলে ইহিতাকে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসালো। ইহিতা চুপ করে আছে কারণ ইশান অনেক রেগে আছে। লাঞ্চ টাইম অলরেডি ওভার হয়ে গেছে আর না খেয়ে এতক্ষন আমাকে খুঁজেছে। নিশ্চই মাথা গরম হবারই কথা!! ইহিতা এসব ভাবছে আর ইশান গাড়ি ড্রাইভ করছে খুব দ্রুত। আধা ঘন্টা পর ইশান ইহিতাকে নিয়ে বাসায় ঢুকলো। তিন্নি বলল
-লাঞ্চ করেছো তোমরা?
-না (গম্ভীর ভাবে উত্তর দিয়ে ইশান উপরে চলে গেলো)
-কি হয়েছে ইশানের? (ইহিতাকে জিজ্ঞেস করলো তিন্নি)
-ইহিতাও কিছু না বলে ঘরে চলে যায়।
ইহিতা ঘরে গিয়ে দেখে ইশান চেঞ্জ করছে। তখন ইহিতা বাইরে চলে আসে। ৫ মিনিট পর ড্রেস নিয়ে ইহিতা গেস্ট রুমের দিকে যাওয়া শুরু করলে ইশান ইহিতার হাত ধরে।
-এই ঘরেই চেঞ্জ করবে আর সেইটা আমার সামনেই।
-মানে?
-কথা না বলে চেঞ্জ করো। (দরজা ধাক্কা দিয়ে)
-পারবো না আমি।
-ওকে তাহলে আমি তোমায় ড্রেস পরিয়ে দিচ্ছি। (ইহিতার ওড়না টান দিয়ে সরিয়ে)
-না আমি পারবো!
-সেইটা এতক্ষন তোমার মনে ছিল না? এখন যেহেতু আমি বলেছি সো আমিই চেঞ্জ করিয়ে দিব।
এরপর ইহিতা চোখ বন্ধ করে নিল। ইশান ইহিতাকে শাড়ি পরিয়ে দেয়, ইহিতার গায়ে গহনা পরিয়ে দেয়, চুল আঁচড়ে দেয়। ইহিতার খারাপ লাগছেনা ইশানের ছোঁয়া গুলো। ইহিতা কোনো প্রতিবাদ করেনি। এরপর ইশান ইহিতাকে খাইয়ে দিয়ে নিজে খেয়ে নেয়। সন্ধ্যা হয়ে যায় লাঞ্চ খেতে খেতে। সন্ধ্যার পর সবাই ড্রইং রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে আর স্ন্যাকস করছে। মিসেস মির্জা আর মিস্টার মির্জা ও আছেন। আয়মান,,তিন্নি সবাই আছে। ইশান এক কোণে বসে কফি খাচ্ছে আর মনোযোগ দিয়ে খেলা দেখছে। ইহিতার দিকে একবারো তাঁকায়নি। কিন্তু আজ ইহিতা বারবার তাঁকাচ্ছে ইশানের দিকে। ইশান আজ ওর থেকে দূরে সরে আছে সেইটাও ভালো লাগছে না ইহিতার। ইহিতা হঠাৎ করে সবার সামনে থেকে উঠে ছাদে চলে যায়। ইশান খেয়াল করলো। এরপর ইশান ও ছাদে যায়। ইহিতা ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। পেছন থেকে দেখে যে কেউ প্রেমে পরে যাবে এই মায়াপরীর। পিঠের উপরের অংশটা দেখা যাচ্ছে,, চুলগুলো হাল্কা করে খোঁপা করা,,শাড়ির আচল রেলিং এর সাথে ছড়িয়ে আছে। মুগ্ধ হয়ে দেখছে ইশান। হাল্কা কমলা রঙের শাড়িতে দারুন মানিয়েছে ইহিতাকে। ইশান আস্তে আস্তে গিয়ে পেছন থেকে ইহিতাকে জড়িয়ে ধরে। ইহিতা ভয় পেয়ে কেঁপে উঠে। পেছনে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে ইশান। ইশান ইহিতার ঘাড়ের উপর থুতুনি রেখে জিজ্ঞেস করে
-ভয় পেয়েছিলে?
-হুম
-একা একা কেন? মন খারাপ?
-না
-তাহলে কি হয়েছে? (ইহিতাকে সামনের দিকে ঘুরিয়ে ইশান)
-কিছু হয়নি। কি হবে?
-আজ ইহিতার সাথে তো গত ইহিতার মিল পাচ্ছিনা আমি! এত শান্ত,,নম্রভাবে কথা বলছে ইহিতা!! আজ আমায় কিছু বলল না।
-কেন? আমি কি সব সময় আপনাকে বকি?
-What? What did u say? আমাকে তুমি আপনি বললে? ইহিতা কি হয়েছে তোমার?
-I am alright. (আকাশ দেখতে দেখতে ইহিতা)
-বলবে না আমায়? কি হয়েছে তোমার?
-একটা কথা বলব রাখবেন?
-কি বলো?
-আগামীকালকে সবাইকে বলে দিয়েন আমি আপনার স্ত্রী আর আপনি বিবাহিত।
-ইহিতা আর ইউ ওকে? তোমার এই আচরণ কিন্তু আমার ভালো লাগছে না! (চিন্তায় পরে গেল ইশান)
-আমি ঠিক আছি। মেহের নামে মেয়েটা আপনার উপর ক্রাশ,,আদিবা তো প্ল্যান করেই ফেলেছে আপনার আর ওর বিয়ের,,তিথি শুধু জানে u r my husband তবুও ও আপনার প্রতি সিক।
-তাতে কি হয়েছে?
-সেইটা তো আমি জানি না তাতে কি হয়েছে কিন্তু এইসব আমি Tolerate করতে পারিনি বলেই ক্লাস না করে বেরিয়ে এসেছি।
-ইহিতা তুমি jealous feel করছো? (অবাক হয়ে ইশান)
-হয়ত (চলে যেতে যেতে ইহিতা)
-দাঁড়াও কোথায় যাচ্ছো? (ইহিতাকে টান দিয়ে ইশানের উপর ফেলে) কি বললে তুমি আরেকবার শুনতে চাই। (ইহিতার চোখের দিকে তাঁকিয়ে)
-আমিও জানিনা আমি কি বলেছি বাট আমার মন যা বলছিল সেইটাই আমি বলেছি।
-ইহিতা Do u love me?
-Don’t know
-Ihita Do u love me?
-I don’t know
এরপর ইশান ইহিতার ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ইহিতাকে বলল
-তুমি আমায় ভালোবেসে ফেলেছো সোনা বউ। সেইটা তুমি চাইলেও আর অস্বীকার করতে পারবেনা। (ইহিতার ঠোঁটে কিস করে)
-ইহিতা কিছু না বলে নিচের দিকে তাঁকিয়ে আছে ইশানের টি শার্ট খামচে ধরে।
-ইহিতা তাঁকাও আমার দিকে। কাঁদছো কেন?
-জানিনা।
-ইহিতা কান্না থামাও। এত সুন্দর কাজল রাঙা চোখ নষ্ট করে ফেললে আমি তখন কি দেখব? (ইশান বুঝতে পেরেছে ইহিতা ইমোশোনাল হয়েই কান্না করে দিয়েছে)
-ইহিতা ইশানকে জড়িয়ে ধরে। ইশান ও ইহিতাকে জড়িয়ে ধরে। ইশান মনে মনে বলছে
-আর কাঁদতে হবে না তোমায়। জীবনের সেরা উপহার আজ আমায় তুমি দিয়েছো। কখনই এ বাঁধন আর ছিঁড়বেনা।
অনেকক্ষণ পর ইশান ছাদ থেকে গেল ইহিতাকে নিয়ে। বাসায় ঢুকার পর ইহিতার চেহারা স্পষ্ট দেখলো ইশান। চোখ নাক একদম লাল হয়ে ফুলে গেছে। কি কষ্ট পেয়েছে ইহিতা!!! ইশান ইহিতার মুখ ধুইয়ে দিল। তিন্নিকে ডাকলো ইশান। কিছুক্ষন পর তিন্নি আসলো ওদের বেডরুমে।
-কি ব্যাপার? ইহিতার চেহারা এমন লাগছে কেন?(ইহিতার মাথায় হাত দিয়ে)
-বউমনি ইহিতার জন্য যেই টি শার্ট গুলো কিনেছিলাম সেইগুলো একটু দিয়ে যাও। ওর প্রব্লেম হচ্ছে শাড়িতে!
-দিচ্ছি।
-না বউমনি লাগবে না। আমি ঠিক আছি। এইভাবেই ভাল লাগছে। (ইহিতা)
-শিওর? (ইশান ইহিতাকে জিজ্ঞেস করলো)
-হুম।
এরপর ইশান আর ইহিতা ডিনার শেষ করে ঘরে চলে আসে। এখনো ইহিতা মুড অফ করে রেখেছে। ইশান ঘরে ঢুকে দরজা লক করে দেয় আর ইহিতা খাটে বসে আছে। ইশান ড্রয়ার খুলে একটা বক্স বের করে এনে ইহিতার সামনে বসে। বক্স থেকে একটা রিং বের করে ইহিতাকে পরিয়ে দেয় ইশান। একটা লকেট ছিল সেইটাও ইশান ইহিতাকে পরিয়ে দেয়।
-ভেবছিলাম যেদিন তুমি আমায় মেনে নিবে সেইদিন এইগুলো তোমায় পরিয়ে দিব। যেখানে শুধু আমারই চিহ্ন থাকবে। (ইহিতার হাতে চুমু দিয়ে)
-ইহিতা আর কিছু বলল না।
ইশান বাতি নিভিয়ে ইহিতাকে বুকের উপর রেখে শুয়ে পরলো। ইহিতা শান্তিতে ইশানের বুকে ঘুমিয়ে পরলো।
পরেরিদন ভার্সিটি তে ইহিতা আর ইশান একসাথে গেলো। ইশান ইহিতাকে ক্লাসে বসিয়ে দিয়ে অফিস রুমে গেলো। ইশান ক্লাস করাতে যখন আসলো তখন ইশান সবাইকে বলল
-আমার মনে হয় আমার একটা বিষয় সম্পর্কে তোমাদের জানা উচিৎ!
-কি স্যার? (সবাই এক সাথে)
-আমি মেরিড আর ইহিতা আমার ওয়াইফ!
-ইহিতা চৌধুরী? (সবাই অবাক হয়ে)
-হুম। মিসেস ইশান এখন ও। (ইহিতাকে উদ্দেশ্য করে)
-স্যার আপনি মজা করছেন তাই না? (প্রায় কেঁদে দিয়ে আদিবা)
-না। মাত্র কয়েকদিন হলো আমাদের বিয়ের। আর সেইটা প্রিন্সিপাল ই জানেন শুধু।
-ওহ congratulation sir & Ihita তোমাকেও। (আদিবা)
-থ্যাংক্স
এরপর ইশান ক্লাস শেষ করে ইহিতার দিকে তাঁকিয়ে বের হয়ে যায়।
চলবে6+10