পতিতা বউ – পর্ব ১০

0
511

#পতিতা_বউ

১০ম পর্ব

আফিফ ঠিক করে ফেললো কিভাবে কি করতে হবে। খুশিতে পরেরদিন সে সময়ের আগেই পৌছে গেলো সেখানে। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করার পর নুহা আসলো।
নুহা কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়ালো আফিফ কে দেখে। আফিফ কে আজ দারুণ লাগছে। ব্লু টিশার্ট উপরে হোয়াইট শার্ট ব্ল্যাক জিন্স ব্লু সান গ্লাস হাতে ওয়াচ এক কথায় জাস্ট কিলার লুক।
এদিকে নুহা ও কম না। আজ বোরকা পড়েনি সে। ব্ল্যাক আর গাঢ় মিষ্টি কালারের একটা সিম্পল গাউন পড়েছে ব্ল্যাক কালারের স্টোনের উপরে একটা হিজাব।সেই হিজাব টা দিয়েই নিকাবের মত করে বেধেছে এক হাতে ব্রেসলেট। বলতে গেলে কেউ কারো থেকে কম না। আফিফ এতক্ষণ নুহাকে খেয়ালই করেনি। হঠাৎ তার নজর নুহার উপর পড়তেই সে ও অবাক। নিজের অজান্তেই তার মুখ দিয়ে মাশা-আল্লাহ বের হয়ে গেলো। নুহা তার সামনে তুরি বাজাতেই তার ঘোর কাটলো।

>>এতক্ষণে এলে তুমি?

>>আমি তো ঠিক সময়মতই এসেছি। আপনি সময়ের অনেকটাই আগে এসেছেন।

>>ঘর থেকে বেড় হওয়ার সময় টাইম দেখিনি আসলে।

>>তাই বলেন শুধু শুধু আমাকে দোষ দেন কেনো?

>>ওহো তুমি তো দেখছি ঝগড়া করছো আমার সাথে। ঝগড়াটে হয়ে গেছো ইদানীং।

>>কি?? আমাকে ঝগড়াটে বললেন?আমি যাবোই না আপনার সাথে হুহহ।

>>আরেহ আরেহ রাগ করো কেনো আমি তো এমনেই ফান করলাম। সরি এবার চলো তো।

>>উঁহু আমি যাবোনা ঝগড়াটে মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে হবেনা আপনার।

>>আরেহ বাবা সরি তো। প্লিজ চলো। এখন কি আমি এভাবে রাস্তার ধারে কান ধরে উঠাবসা করবো নাকি বলো?

>>না থাক হয়েছে হয়েছে। লাগবে না।

নুহা বাইকে উঠে বসতেই আফিফ তাকে বাধা দিলো। নুহা এবার বিরক্ত হয়ে বললো,

>>এবার কি?

>>দেখি তোমার হাত টা দাও।

>>কেন হাত কেন?

>>হাত কেটে রেখে দেবো তো তাই দিবে কিনা বলো।

>>আচ্ছা আচ্ছা।

নুহা হাত বাড়িয়ে দিতেই আফিফ একটি ওয়াচ পড়িয়ে দিলো নুহা কে। নুহা তো অবাক। ওয়াচ টা অনেক সুন্দর ছিলো।

>>পছন্দ হয়েছে?

>>হ্যা তবে এটা কেনো?

>>গিফট দিলাম রাখো প্লিজ। এবার বলো পছন্দ হয়েছে??

>>হ্যা অনেক সুন্দর।

>>দ্যাটস গ্রেইট। এবার উঠো বাইকে।

নুহা বাইকে উঠে বসতেই আফিফ বাইক স্টার্ট দিলো। এরপর তারা মিরসরাই লেকে পৌছে গেলো। টিকেট কেটে ভেতরে ঢুকে তারা একটি বেঞ্চে বসলো। নুহা অনেক কথা বলতে পারে সেটা আফিফের জানা ছিলোনা। খালি বক বক করেই যাচ্ছে আফিফকে কিছু বলার সুযোগ ও দিচ্ছে না। আফিফ শুধু হা হু উত্তর দিচ্ছে আর মন ভরে নুহাকে দেখছে। সুযোগে নুহার কয়েকটা পিক ও তুলে ফেলেছে সে।

>>বাপরে তুমি এত কথা বলতে পারো আমার জানাই ছিলোনা।

>>মানে কি হ্যহ আমি বেশি কথা বলি?

>>হ্যা খুব বাচাল তুমি।

>>আমাকে বাচাল বললেন। ওকে আমি আর কথায় বলবোনা।

নুহা অন্যদিকে ফিরে গেলো। আফিফ মুচকি মুচকি হাসছে। আজকে প্রথম নুহা ঝগড়া করছে তার সাথে। নুহার এই রূপ টা সে আগে কখনোই দেখেনি। সে গিয়ে নুহার সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়লো।

>>আপনি এভাবে বসেছেন কেনো?

>>দেখি তোমার পা দাও।

>>কেনো?

>>এই মেয়ে একদম প্রশ্ন করবেনা নাহয় এই লেকে ছুড়ে ফেলে দেবো।

নুহা চুপচাপ পা এগিয়ে দিলো। আফিফ খুব সুন্দর একটি নুপুর নুহার পায়ে পড়িয়ে দিলো। ব্ল্যাক স্টোনের কাজ করা। আফিফের হাত নুহার পায়ে স্পর্শ লাগতেই নুহার সারা শরীর কেমন যেন অচল হয়ে এলো। আফিফ নুপুর পড়িয়ে দিয়ে নুহার পায়ে হাল্কা করে একটা চুমু খেলো এতে নুহা একটু কেঁপে উঠলো। আবেশে সে চোখ বুজে ফেললো। নুহা তার শরীরে অনেক স্পর্শ পেয়েছে। কিন্তু আফিফের এই স্পর্শ একদমই আলাদা ঠেকছে তার কাছে। দু’জনের মধ্যেই কেমন যেন একটা ঘোর কাজ করছিলো। হঠাৎ নুহা উঠে দাঁড়িয়ে চলে আসতে নিলেই আফিফ তার হাত ধরে তাকে আটকালো। আফিফের প্রতিটা স্পর্শই নুহাকে কাঁপিয়ে তুলছিলো। আফিফের এভাবে আটকানোতে নুহার মনের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়ে গেলো।

>>ভালোবাসি নুহা।

কথা এটা শোনা মাত্রই যেন নুহার শিরদাঁড়া বেয়ে একটি ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গেলো। সে নিজেকে সামলে নিয়ে আফিফের কাছ থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো। আফিফ তার দু’হাত নুহার দু’গালে রাখলো। নুহা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে। সে জানে সে ও আফিফ কে ভালোবাসে। কিন্তু তার যে কাউকে ভালোবাসার অধিকার নেই। সেই ভয়ে সে চাচ্ছে আফিফ থেকে পালিয়ে বেড়াতে।

>>তাকাও আমার দিকে। প্লিজ নুহা।
বিশ্বাস করো তুমিই আমার জিবনের একমাত্র মেয়ে যাকে এতটা ভালোবাসি আমি। সেই প্রথম দিন থেকেই তুমি আমার মনে নিজের জায়গা করে নিয়েছো। আমি জানি নুহা তুমিও আমাকে ভালোবাসো। তোমার চোখে দেখেছি আমি।

>>ছাড়ুন আমাকে। প্লিজ। আমি ভালোবাসিনা আপনাকে।

আফিফ মুহুর্তেই নুহাকে ছেড়ে দিলো।

>>চোখ কখনো মিথ্যা বলেনা নুহা। প্লিজ। স্বীকার করাতে ক্ষতি কি বলো? আমি কি এতটাই খারাপ আমাকে কি ভালোবাসা যায়না।

>>আপনি মোটেও নিজেকে খারাপ ভাববেন না। আর আমি সত্যিই বলছি আমি আপনাকে ভালোবাসিনা। আমি কাউকেই ভালোবাসতে পারিনা। আমার অধিকার নেই কাউকে ভালোবাসার। ভুলে যাও আমাকে আমি তোমার অযোগ্য।

নুহা কাঁদতে কাঁদতে এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে চলে এলো। আফিফ এখনো সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। নুহা একটা রিকশা নিয়ে সোজা বাসার দিকে রওনা দিলো। আফিফ সেখানে ধপ করে বসে পড়লো। খুব চিৎকার করে করে কাঁদছে সে। এতটা সে সেদিন কেঁদেছিলো যেদিন সে তার বাবাকে হারিয়ে ছিলো।

চলবে…

#Razia_Binte_SuLtan

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here