#পতিতা_বউ
১১তম পর্ব
নুহা ঘরে ফিরতেই দেখলো শবনম বেগম বারান্দায় বসে আছে। নুহার এত তাড়াতাড়ি ফিরে আসাতে তিনি তাকে প্রশ্ন করলেন,
>>কিরে মা আইজকা এত তাড়াতাড়ি ফিরলি। শরীল ঠিক আছে তো?
>>মামুণি আজকে না আমার ভীষণ খারাপ লাগছে। আজকে কেউ আসলে প্লিজ আমায় ডেকোনা।
>>কি হয়লো আবার তোর শরীল স্বাস্থ্য ঠিক আছে তো?
>>একটু জ্বর জ্বর লাগছে আচ্ছা আমি যায়।
নুহা দৌড়ে তার রুমে চলে গেলো। তার খুব কান্না পাচ্ছীলো। সে চাই না মামুণি কিছু দেখুক। রুমে ঢুকার পর সে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারেনি কোনো মতে দরজা টা বন্ধ করে সেখানেই বসে কান্না করতে শুরু করলো। সে খাওয়ার জন্য নিচেও নামেনি। শবনম বেগম ডাকতে এলে তাকে বললেন তার খেতে ইচ্ছে করছে না। শবনম বেগম ও আর জোরাজোরি করলেন না।
আফিফ ড্রিংক বারে বসে একটার পর একটা ড্রিংক করেই যাচ্ছে। তার যত রাগ আর ফ্রাস্ট্রেশন আছে সে সব ঝেড়ে ফেলতে চাই। নুহার রিজেকশন সে মেনে নিতে পারছেনা এমন না। সে নুহাকে ছাড়া থাকতে পারবেনা সে ভয়ে আছে যদি নুহা ও হারিয়ে যায় তাহলে কি হবে। তার লাইফে আপন বলতে রাফি ছোট মা আর নুহা ই আছে। বাকিরা পরিবার আর নুহা ভালোবাসার মানুষ। আফিফের অবস্থা দেখে ড্রিংক বার এর ওয়েটার তাকে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে। আফিফ সব খুলে বললো। ওয়েটার তাকে বললো,
>>একটা মেয়েরে না পাওয়ার দরুন এমন অবস্থা আপনি বরং পতিতালয়ে যান। যত মেয়ের দরকার হয় পাবেন। আজকাল প্রেমিকা না পুষে পতিতালয়ে গিয়ে পতিতা নিয়ে ফুর্তি করাটাই উত্তম। আপনি পতিতালয় হতে ঘুরে আসুন নিজেরে হালকা মনে করবেন।
আফিফের মনে কথাটা গভীর ভাবে গেঁথে গেলো। সে পতিতালয়ের এড্রেস নিয়ে সেদিকে পা বাড়ালো। গাড়ি চালানোর অবস্থায় ছিলোনা সে তাই বাসার ড্রাইভার কে কল করে তাকে নিয়ে চলে আসলো মহুয়া পল্লীতে।
তখন প্রায় রাত বারোটা ছুঁই ছুঁই শবনম বেগম নুহাকে ডেকে নিয়ে নিজহাতে কিছু খাইয়ে দিচ্ছিলেন। তখনি আফিফকে নিয়ে ড্রাইভার ঢুকলো। আফিফ কে দেখে নুহার বুক টা ধক করে ধরে গেলো। সে যেন আকাশ থেকে পড়লো। আফিফ নেশার ঘোরে ঠিকমত হাটতেও পারছেনা। ড্রাইভার তাকে বসিয়ে দিয়ে বললো আফিফকে একজন মেয়ের সাথে পাঠাতে সে রাত কাটাবে। সকালে সে এসে নিয়ে যাবে আর টাকাটাও দিয়ে যাবে।
সেই টাইমে সব মেয়েরা কাজে ছিলো। একমাত্র নুহা ছাড়া। শবনম বেগম নুহাকে বললো,
>>মা আর কোন মাইয়া নাই তুই একটু ওরে নিয়া যা।
নুহার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছেনা। সে অপলক আফিফের দিকে তাকিয়ে আছে। আফিফ কি যেন বিড়বিড় করছে।
>>কিরে ওরে নিয়া যা রুমে। আমার মনে হয়না পোলাডা বেশি কিছু করবো।
শবনম বেগমের কথায় নুহার ঘোর কাটলো। সে আফিফকে কোনমতে সামলে রুমে নিয়ে গেলো। রুমে খাটে তাকিয়ে বসিয়ে দিয়ে সে দরজা বন্ধ করতেই চোখের পানি ছেড়ে দিলো।নিচেই বসে পড়লো।নুহা ভাবছে আফিফ পতিতালয়েও আসা যাওয়া করে অথচ আজকেই বললো যে তার লাইফে আর কোন মেয়েই আসেনি। নুহার কান্না দেখে আফিফ ও তার কাছে গিয়ে বসলো।
>>এই মেয়ে কি হলো কাঁদছো কেন?
নুহা তখনো কেঁদে যাচ্ছে। আফিফ নেশার ঘোরেই তাকে বললো,
>>আমাকে ভয় পাচ্ছো বুঝি? ভয় নেই কোন আমি তোমাকে কিছুই করবোনা।
আফিফের কথা শুনে নুহা তার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
>>তাহলে আপনি এখানে কেন এসেছেন?
>>আরেহ আমি তো ড্রিংকস করছিলাম বারে। একজন ওয়েটার বললো পতিতালয়ে গিয়ে কোন একজন কে মনের কথা শেয়ার করতে তাই এলাম। আমি কখনো আসিনি এসব জায়গায় আজই প্রথম।
>>আপনি ড্রিংকস কেনো করেছেন?
>>খুব কষ্ট পেয়েছি আজ জানো সেই কষ্ট গুলো ভুলার জন্যই করেছি। আমি না একজন কে খুব ভালোবাসি। তাকে আজকে প্রপোজ ও করলাম আমি জানি সে ও আমাকে খুব ভালোবাসে কিন্তু তাও স্বীকার করেনি। আমাকে কষ্ট দিয়ে চলে গেলো।
এইটুকু বলেই আফিফ ঢুকরে কেঁদে উঠলো নুহার নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে। এই মানুষটা তাকে না দেখেই কত ভালোবাসে অথচ সে কিনা তাকে কষ্ট ছাড়া কিছুই দেয়নি। আফিফ কাঁদতে কাঁদতে নুহার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।
>>জানো তোমার চোখ গুলো ঠিক তার মতই আর কণ্ঠ টাও। নুহাকে খুব মিস করছি। মা কে ছোট থাকতেই হারিয়েছিলাম তাই কষ্ট বুঝিনি। বাবাকে হারানোই যে কষ্ট টা পেয়ে আজ ও সেই কষ্ট টা হচ্ছে। আমি ওকে না দেখেই ভালোবেসেছি। ও যেমনি হোক আমার ওকে চাই ই চাই। তুমি ওকে বলো প্লিজ আমাকে যাতে একটু ভালোবাসে ও।
নুহা আফিফের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তার চোখের জল আরো বেশি করে পড়ছে। আফিফ ও কাঁদছে ছেলেটা খুব কষ্ট পেয়েছে বোঝায় যাচ্ছে। নেশার ঘোরেও আফিফের নুহার কণ্ঠ আর চোখ চিনতে অসুবিধে হয়নি। আফিফ এখনো বিড়বিড় করে বলছে,
>>নুহাকে বলো আমি তাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা আমাকে একা করে দিয়ে যেন না যায়।
একসময় আফিফ মেঝেতেই ঘুমিয়ে পড়লো নুহার কোলে মাথা রেখে। নুহা মনে মনে ঠিক করলো আফিফ কে সব বলে দিবে ওর পরিচয় আর ও কি সবই বলে দিবে আফিফ তাকে যদি সত্যিই ভালোবাসে তাহলে তো তার সমস্যা থাকার কথা নয়। যা হবে হোক সে আর কিছুই লুকাবে না। নুহা ও সেখানেই ঘুমিয়ে পড়লো।
সকালে আফিফের ঘুম ভাঙ্গতেই সে নিজেকে এই অবস্থায় আবিষ্কার করলো বসা থেকে উঠে পড়লো সে লাফ দিয়ে। এদিকে তার মাথা প্রচন্ড ভারী হয়ে আছে। একে একে তার কাল রাতের সব কথা মনে পড়তে লাগলো। তার নিজের কাছেই নিজেকে জঘন্য লাগছিলো। হঠাৎ ঘুমন্ত নুহার দিকে তার চোখ গেলো। আফিফ নুহাকে কোলে করে তুলে নিয়ে শুইয়ে দিলো খাটে। নুহার ঘুমন্ত মুখের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে সে। তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই সে দেখলো নুহার গায়ে প্রচন্ড জ্বর। মনে মনে আফিফ ভাবলো “ইশ জ্বরে মেয়েটার গা পুড়ে যাচ্ছে। মেয়েটাকে কেনো জানি খুব আপন আপন লাগছে। মেয়েটা খারাপ না। কাল রাতে মেয়েটাও কাঁদছিলো। হয়তো ভয়েই কাঁদছিলো। শুনেছি এখানে যারা আসে তাদের জোর করেই এনে এখানে আটকে রাখা হয় মেয়েটার সাথেও তাই হয়েছে হয়তো। ” নিজের অজান্তেই সে নুহার কপালে একটি ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে উঠে পড়লো। পরক্ষণেই সে ভাবলো “ইশ একি করলাম। আমি নিজেও জানিনা এমন কেন করেছি। আচ্ছা তার জায়গায় যদি নুহা হতো তবে তাকেও আমি এভাবে কিস দিতাম। কিন্তু কপালে সে নেই” একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আফিফ রুম থেকে বের হয়ে গেলো। বের হয়ে শবনম বেগমের পাওনা টাকা আর কিছু বাড়তি টাকা দিয়ে বললো,
>>মেয়েটার খুব জ্বর তার একটু খেয়াল রাখবেন আর এই বাড়তি টাকা গুলো দিয়ে তার জন্য ঔষধ কিনে আনবেন।
আফিফ চলে গেলো। শবনম বেগম এমন মানুষ এই প্রথম দেখলেন যে কিনা একজন পতিতার ও এত যত্ন আত্তি করে গেলো। শবনম বেগম নুহার কপালে হাত দিতে দেখলো জ্বরে মেয়েটার গা একদম পুড়ে যাচ্ছে। জ্বরের ঘোরে সে গোঙ্গাচ্ছে।
চলবে….
#Razia_Binte_SuLtan