স্বামী – পর্ব ১৩

0
487

#স্বামী
পর্ব-১৩
#Nirzana(Tanima_Anam)

-আপনি খুব বাজে একটা লোক মি.নির্ঝর চৌধুরী!!

গাড়িতে মুখ গোমড়া করে বসে আছে অনু।নির্ঝর ড্রাইভ করছে।

অনু তো তখন থেকেই নির্ঝরকে যা নয় তাই বলে যাচ্ছে কিন্তু তাতে নির্ঝরের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই সে তো চোখ মুখ লাল করে বসেই আছে।

নির্ঝরের গাড়িটা অনুদের বাড়ির সামনে গিয়ে থামে।
নির্ঝর গাড়ি থেকে নেমে অনুর সামনে দরজাটা খুলে দিয়ে অনুকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়।
-নামো
-(…)
-নামবে কি না??
-না নামবো না!!

অনু নির্ঝরের দিকে একবার তাকিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে নেয়!!!
নির্ঝর রেগে গিয়ে অনুর হাত ধরে জোড় করে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়।
অনুতো রেগে মেগে আগুন!!নির্ঝরের হাতে একটা খামছি দিয়ে বলতে শুরু করে…

-আপনি একটা লুচ্চু,গন্ডার,বদমেজাজী হাতি,ছাগল সব! সব! সব আপনি….
-চুপ!!
-ইউ চুপ!!!আমি নীরার বিয়েটাই দেখতে পারলাম না…..(এ্যা…এ্যা)
-অনু এখন তো বিয়ে হচ্ছে না শুধু আকদ হচ্ছে।।
-তো আমি নীরার আকদে থাকতে চাই মি.নির্ঝর!!আমি না ঐ বাড়ির একমাত্র বউ!!
-তাই বুঝি??
-(….)
-কবে থেকে তুমি নিজেকে আমার বউ ভাবতে শুরু করলে??
-আমি তো!!
-তুমি নীরার আকদে থাকতে পারবে না তোমার কষ্ট হবে আমি চাই না তুমি কষ্ট পাও….
-কেন??কেন হবে আমার কষ্ট??
-জানি না যাও তুমি বাড়িতে আমি পরে এসে তোমাকে নিয়ে যাবো!!

কথাগুলো বলেই নির্ঝর পেছনে হাটা ধরে….!!!

-আপনি খুব বাজে মি.চৌধুরী!!আপনার থেকে সায়ন….

নির্ঝর একবার অনুর দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়িতে চড়ে বসে।
অনু বোকার মতো দাড়িয়ে আছে।
নির্ঝর আর একবারও পেছন না ফিরে চলে যায়!!
অন্য দিন নির্ঝরের সামনে সায়নের কথা বললে রেগে যেতো কিন্তু আজ নির্ঝরের চোখে কোনো রাগ ছিলো না।কি জানি কি ছিলো ঐ দুই চোখে।যা ছিলো তা নীরার বোঝার বাহিরে!!

অনু বাড়ি ভেতরে আসতেই সবাই অনুকে দেখে অবাক।।সবাই তখন ড্রইং রুমে বসে চা খাচ্ছিলো!!

অনুর মা অনুর দিকে এগিয়ে আসে।

-কিরে তুই এই ভর সন্ধ্যেবেলা এভাবে??কি হয়েছে??জামাই কোথায়??আসে নি??বাড়িতে কি কিছু হয়েছে???তুই আবার কোনো কান্ড বাধাস নি তো??

অনু মায়ের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে
-কি রে চুপ করে আছিস কেন??
-তোমার দেখছি আমাকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন।তোমার বা তোমাদের কোনো প্রশ্নের উওরই আমি দিবো না।
-মানে??
-মানে সব প্রশ্ন তোমার জামাইকে কোরো সেই আমাকে রেখে গেল!!কেন রেখে গেলো জানি না তাই তোমারা তাকেই প্রশ্ন করো হয়তো তোমাদের বলবে আমাকে রেখে যাওয়ার কারণটা।

অনুর বাবা এতো সময় অনুর কথা শুনছিলো।এবার বলতে শুরু করে

-নির্ঝর এসেছিলো অথচ আমাদের জানায় নি।বাড়ির দরজা থেকে ঘুড়ে চলে গেল!!তুমি তাকে ভেতরে আসতে বলো নি কেন??
-প্রয়োজন বোধ করি নি তাই!!

কথাগুলো বলেই অনু চলে যায় নিজের ঘরে।চোখ দুটো ছল ছল করছে।নির্ঝর তাকে এভাবে ছুড়ে ফেলে দিয়ে চলে গেল!!

এই নাকি স্বামী…..

আজ দুদিন হলো নির্ঝরের সাথে অনুর কথা হয় নি।নির্ঝর একটি বারের জন্যেও অনুকে ফোন করে নি।অনুও ফোন করার প্রয়োজন বোধ করে নি!!
যে কথা বলতে চায় না তাকে জোড় করার প্রয়োজন নেই!!

অনু বারান্দায় চা হাতে দাড়িয়ে আছে।মনটা যে বড্ড খারাপ।

বোধয় এই আজকেই নীরার আকদ।
ইশ্ যদি থাকতে পারতাম!!

অনুর বুকে বড্ড অভিমান জমেছে নির্ঝরের উপর।একেই তো এভাবে রেখে গেলো তার উপর একটিবার খবরও নিলো না।

কি প্রেমিক রে বাবা!! না না প্রেমিক তো নয়।প্রেমিক শব্দের অর্থটা অনেক গভীর।প্রেমিক মানে প্রেমিকার মেঘলা আকাশে একটা ছোট্ট সূর্য।
প্রেমিক মানে ঘন বর্ষন যে বর্ষার প্রত্যেকটা ফোটা প্রেমিকার হৃদয়কে ভিজিয়ে দেয়। প্রেমিক মানে প্রেমিক মানে একটা বিশাল সাগর যে সাগরে প্রত্যেকটা প্রেমিকই হাসি মুখে ডুবে যেতে পারে….আর প্রেমিক মানে…..

ধূর প্রেমিক নিয়ে এতো ভেবে কি লাভ সে জায়গাটা তো সায়নের ছিলো।আর নির্ঝর সে তো প্রেমিক নয় সে তো শুধুই স্বামী!!

আচ্ছা স্বামীরা কি প্রেমিক পুরুষ হতে পারে না??নাকি বউয়েরা প্রেমিকা হতে পারে না??
না কি তাদের প্রেমিক প্রেমিকা হতে মানা?? কে জানে!!!!

অনু নিজের মনেই কথা গুলো ভাবছিলো।মায়ের ডাকে হুস ফিরে অনুর পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে মা দাড়িয়ে আছে।
-কিছু বলবে??
-নির্ঝরের সাথে কি মনমালিন্য হয়েছে??

অনু মুচকি হেসে জবাব দেয়
-যার সাথে মনেরই কোনো সম্পর্ক নেই তার সাথে আবার….বাদ দাও সে সব!!
-তাহলে??সায়নকে নিয়ে সমস্যা??
-জানি না!!
-জানো না মানে নির্ঝর তোমার স্বামী!!
-তো
-অনু (ধমকের সুরে)

অনু মায়ের দিকে তাকিয়ে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে।
-সায়নকে তোমারা কেন তাড়িয়ে দিলে।সায়নকে যে আমি বড্ড ভালোবাসতাম।
-আর নির্ঝর তোকে বড্ড ভালোবাসে
-কিন্তু মা সে তো একবারও আমার খবরই নিলো না!!

অনুর মা মুচকি হেসে অনুর মাথায় হাত বুলা বুলাতে বলে
-অভিমান এক তরফা ভালো যখন অভিমান দুই তরফা হয়ে যায় তখন সম্পর্কে ফাটল ধরে…..

কথাগুলো বলেই অনুর মা চলে যায়। যেতে যেতে অনুর মা পেছন ফিরে অনুকে উদ্দেশ্য করে বলে
-তোমার ওনি রোজ দিনে দুই করে ফোন দিয়ে তোমার খোজ নেয়।।।
কোই তুমি তো তাকে একবারও ফোন দাও না…

অনুর মা কি বলতে চাইছে তা হয়তো অনু বুঝতে পেরেছে।
অনু কি মনে করে ফোনটা হাতে নিয়ে নির্ঝরকে ফোন করে একবার রিং হয়ে কেটে যায়
দিত্বীয়বার রিং হতেই রিসিভ করে নেয়
অনু কথা বলতে যাবে তার আগেই অপর প্রান্ত থেকে মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসে।
-হ্যালো

অনু বাকরুদ্ধ এতো সিমির গলা!!
-সিমি তুমি নির্ঝর কোথায়
-কে অনু!! নির তো ওয়াশরুমে সাওয়ার নিচ্ছে।
-ওওও রাখছি
-ওকে

অনু ফোনটা কেটে দিয়ে বিছানায় ছুরে মারে।
খুব রাগ হচ্ছে ভিষন রাগ হচ্ছে।রাগে গা জ্বালছে।এই মেয়েটা যেমন লুচু আবার বরটাও তেমন লুচু……

আচ্ছা সত্যিই কি সিমির সাথে নির্ঝরের কোনো সম্পর্ক আছে??
-এ্যা এ্যা এই লুচু ব্যাটার সাথে যদি সিমি না না তখন আমার কি হবে???

আজকাল অনু বড্ড বেশি নির্ঝরকে নিয়ে ভাবে।তবে কখনো সখনো অনুর মেঘলা আকাশে সায়ন উঁকি দেয়।সায়নের কাছে অনুর একটাই প্রশ্ন সে কেন অনুকে একা ফেলে চলে গেল????

চলবে……

(অনেক অপেক্ষা করাচ্ছি গল্পটা নিয়ে।আসলে প্রচুর ডিপ্রেশানে আছি।আসলে অ্যাডমিশন নামক ঝড়টা সমলাতে পারছিনা সবাই প্লিজ আমার জন্য দোয়া করবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here