স্বামী – পর্ব ৩০

0
489

#স্বামী
পর্ব-৩০
#Nirzana(Tanima_Anam)

-মি.চৌধূরী সত্যি করে বলুন তো ঐ সিমি কি শুধুই আপনার বন্ধু ছিলো না কি তার সাথে আপনার অন্য কোনো কাহিনী ছিলো যা আমি জানি না??
কথাটা বলেই অনু মুখ ঘুরিয়ে নেয়।আজ নির্ঝরের ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে গেছে।হবেই তো অনুর সাথে মাঝে মাঝে চন্দ্রবিলাশ করতে গিয়ে রাতে ঘুমোতে দেরী হয়ে যায়।কাল ও এমনটাই হয়েছ।
যার কারণে সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে গেছে।নির্ঝর ঝটপট জামা কাপড় পরে রেডি হয়ে অফিস বেরোচ্ছিলো।এমন সময় অনুর এমন উদঘট প্রশ্নে নির্ঝর দাড়িয়ে যায়।
-কি??
-হুম্ম।আমার তো তাই মনে হয় না হলে ঐ এক মেয়ে বার বার এতো কিছু করে যাচ্ছে অথচ আপনি ওকে একটি কথাও বললেন না ইভেন এখনো কিছুই বলছেন না…!!

অনু কথাগুলো বলে নির্ঝরের দিকে কতোগুলো ছবি ছুড়ে মারে।ছবিগুলোতে সিমি আর নির্ঝর বেশ কাছাকাছি।দুজনের হাস্যজ্জল মুখ স্পস্ট।
ছবিগুলো দেখে নির্ঝরের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়।এই ছবিগুলো অনুর কাছে কি করে??
-এগুলো কি???
-কি সেটা দেখতে পাচ্ছেন না??
-আসলে….
-এতো আসল নকল করছেন কেন?কাল সন্ধ্যের দিকে একটা পার্সেল আসে আমার কাছে পার্সেলটার কথা তো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম আজকে মনে পড়লো তাই খুললাম।খুলে দেখি এইসব।।
-অনু আসলে….
-আবার আসল নকল করে….আমি বেশ বুঝতে পারছি ছবিগুলো ঐ সিমিই পাঠিয়েছে।সিনেমায় যেমনটা হয় না নায়ক নায়কাকে আলাদা করার জন্য মহিলা ভিলেন গুলো টেকনোলজি ব্যবহার করে এইসব নোংরা ছবি ক্রিয়েট করে তারপর নায়কাকে পাঠায়…..এখানেও আমাদেরকে আলাদা করার জন্য সিমি তেমন কিছুই করছে আই আম সিউর…..!!!

নির্ঝর চুপচাপ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে…
অনুকে বার বার কিছু একটা বলতে চেয়েও গলায় আটকে যাচ্ছে।ঠিক যেমনটা হয় অনেক কিছু বলার থাকে কিন্তু সেই কথাগুলো প্রকাশ করার জন্য ভাষা থাকি না।মন এবং মস্তিষ্ক হটাৎ করেই ভাষাহীন চিন্তা চেতনাহীন হয়ে যায়।সব যেন শূন্য….শূন্য লাগে।

অনু নির্ঝরকে জোড়ে একটা চিমটি কাটে….
-আউচ…এটা কি হলো??
-যেটা হওয়ার সেটাই হলো…এতো দিন ধরে আপনার ঐ শাঁকচুন্নি বান্ধবী অনেক প্যাঁচ খেলিয়েছে আমি কিছুই বলিনি এবার কিন্তু ওকে আমি ছেড়ে কথা বলবো না।এতো দিন আমার চরিত্র নিয়ে যা নয় তাই করেছ এবার আপনাকে ফাঁসাতে চাইছে….!!
-তো??
-তো মানে??আপনি এবার যদি ওর একটা ব্যবস্থা না করেন তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না…(কথাটা বলতে বলতে অনু ফুপিয়ে কেঁদে উঠে)
নির্ঝর অনুকে কাছে টেনে নেয়….
-হুম্ম বলবো।অনেক কিছু বলবো প্লিজ কেঁদো না
-আমি আপনাকে হারাতে চাই না নির্ঝর।এমনিতেও আমি নিঃস্ব আপনি ছাড়া আমার আর কিছুই নেই আপনাকে হারিয়ে ফেললে আমি শেষ হয়ে যাবো…..

অনু কাঁদতে কাঁদতে নির্ঝরকে জড়িয়ে ধরে….
নির্ঝর অনুর চোখে পানি মুছিয়ে কপালে একটা গভীর চুমু এঁকে দেয়
-অনু আমি তোমার ভালোবাসি।তুমিই আমার বর্তমান তুমিই আমার ভবিষ্যৎ।কোনো পিছুটানই আমাকে তোমার থেকে আলাদা করতে পারবে না।
-কিন্তু সিমি যে বার বার….
-আমি….আমি দেখছি

কথাগুলো অনুকে বলেই নির্ঝর ঘর থেকে বেরিয়ে যায় উদ্দেশ্য অফিস।
আজ নির্ঝরের মন মেজাজ কোনোটাই ভালো নেই।এই সিমিটা বার বার নিজের লিমিট ক্রস করে ফেলছে।বার বার অনুকে আলদা করাতে চাইছে।কি ভেবেছে কি ও….অনুকে আমার থেকে আলাদা করে দেবে আর আমি ওকে এক্সেপ্ট করে নেবো।অসম্ভব!!
কথাগুলো ভেবেই নির্ঝর টেবিলে সজোড়ে বাড়ি মারে….

ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে সিমিকে ফোন দেয়।ফোনটা একবার বেজে উঠতেই সিমি সাথে সাথে তুলে নেয়
-হ্যালো নীর
-তুই শুধরাবি না তাই না???
-মানে
-ছবিগুলো অনুকে কেন দিয়েছিস??
-…….আমি ওকে তোর পাশে সহ্য করতে পারি না।
-তো
-তো ও তোর জীবনে থাকবে না!!তোর জীবনে আমি ছিলাম আর থাকবো!!
-ছিলাম???হিহি লজ্জা করছে না কথাটা বলতে???
-না করছে না যেটা সত্যি সেটাই বলেছি।।
-এক চড়ে তোর সবগুলি দাঁত ফালাইয়ে দিবো!!
-মার কাট যা খুশি কর তবুও আমাকে ক্ষমা করে দে না প্লিজ।আমি তোরে ভালোবাসি খুব ভালোবাসি!!
-এসব নাটক অন্য কোথাও গিয়ে কর নির্ঝর চৌধূরীর কাছে না।আর একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ
অনুই নির্ঝরের বর্তমান অনুই নির্ঝরের ভবিষ্যত নির্ঝরের জীবনে নোংরা কোনো অতীতের জায়গা নেই
-নীর
-সস্্স্ স্ সৃ স্
-নী…
-টুট টুট টুট টুট

নির্ঝর ফোনটা রেখে দেয়।সিমি ফোনটা তুলে আছাড় মারে।সাথে সাথে ফোনটা ভেঙ্গে চুড় মাড় হয়ে যায়।
সিমির রাগে নিজের চুল ছিড়তে ইচ্ছা করছে।তার একটা ভুল আজকে সব এলোমেলো করে দিলো।সে কি জানতো এমন একটা দিন আসবে যেদিন নির্ঝরকে একটি বার পাওয়ার জন্য তার ভেতরটা ভেঙ্গে চুড়ে চুড়মার হয়ে যাবে।না জানতো না…..জানলে তো আর আজকে নির্ঝরের থেকে আলাদা হতে হতো না।।

রাগে দুঃখে সমস্ত গা জ্বলছে।সিমি দৌড়ে গিয়ে বাথরুমে চলে যায়।সাওয়ারটা ছেড়ে দিয়ে জোড়ে জোড়ে কাঁদতে থাকে।
“আমি আর পারছি না আর পারছি না তোর পাশে ঐ মেয়েকে দেখতে।আমি আর পারছি না তোকে অন্য কারো সাথে শেয়ার করতে….তুই তো আমার”

সিমি হাউমাউ করে কাঁদছে।এমন যেন মনে হচ্ছে যেন নির্ঝরের প্রত্যেকটা কথা তার বুকে একেকটা পাজড় ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দিচ্ছে…….

past…..
( পরের পর্বে দিবো)

এদিকে

এই ভর দুপুর বেলা সায়নের ফোন পেয়ে নীরা চমকে উঠে।বুকের ভেতর অজানা ভয় ডানা মেলছে।হৃদয়টা ঢিপ ঢিপ করছে….
এরকম অসময় সায়ন ভাই কেন ফোন দিলো!!
-হ্যালো
-নীরা আমি সত্যি সত্যি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।বাড়িতে সবাইকে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি এখন শুধু তোমার সিদ্ধান্ত জানাবার অপেক্ষা
-(….)
-কি হলো চুপ আছো কেন???
-(…)
-নীরা তুমি কি এই বিয়েতে রাজি না??
-(…)
-হ্যা না কিছু তো বলো এভাবে চুপ আছো কেন?(ধমকের সুরে)
-কি বলবো?
-আমাকে বিয়ে করবা কি না সেটা!!
-আপনার কি মনে হয়?
-তুমি আমায় ভালোবাসো তাই তুমি কখনো না বলবা না!!
-কিন্তু আপনি তো আমায় ভালোবাসেন না!!তাহলে বিয়ে করে কি লাভ বলেন?একা ভালোবাসা দিয়ে কি আর সংসার হয়?(কাঁদো কাঁদো কন্ঠে)
-(…)
-আপনি না চাইলে এই বিয়ে করতে হবে না!!
-তোমার এসব আপনি আঙ্গে বন্ধ করবা আগে তো তুমি আমাকে তুমি বলতা!!
-আগের আপনি আর এখন কার আপনির মধ্যে অনেক পার্থক্য….
-আজকাল খুব পাঁকা পাঁকা কথা বলতে শিখছো!!
-আমি বড় হয়ছি সায়ন ভাই
-হুম্ম।বিয়ের বয়স হয়ে গেছে বিয়ে করবা কবে.?বেশি দেরী হলে কিন্তু তুমি বুড়ি হয়ে যাবা চুল পেঁকে যাবে…তখন লাল বেনারসিতে একদম মানাবে না।
-হিহিহি!!
-বাবাহ্ কতোদিন পর তুমি হাসলা!!
-সায়ন ভাই সত্যিই তুমি আমাকে বিয়ে করবা???
-আমি ভালোথাকতে চাই নীরা।আমি সত্যি ভালো থাকতে চাই!!
-মানে?
-মানে আমার ভালোথাকার টনিক তোমার কাছে আছে।তুমিই পারবা আমাকে ভালো রাখতে।একমাত্র তুমিই পারবা আমাকে ভালো রাখতে……

কথাটা বলতে বলতে সায়ন ফোনটা কেটে দেয়।
নীরা চুপচাপ ফোন হাতে ধরে বসে আছে।
ভালোবাসা নামক শব্দটায় যতোটা সুখ আছে তার চেয়ে অনেক বেশি দুঃখ লুকিয়ে অাছে।এই শব্দটা প্রথমে কাঁটার মতো বুকে বিধে যায় তারপর বিস্তার লাভ করে….
আর একটা সময় তা গোটা বুকটায় ছেয়ে যায়।

তবে কখনো কখনো তা বিষের জন্ম দেয়।গোটা বুকটা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাঁক করে দেয়।
নীরারগাল বেয়ে পানি পরছে।নিশ্চুপে কাঁদছে সে।এটা সুখের কন্না না দুঃখের তা এখনো তার মস্তিষ্ক বুঝতে পারছে না।

এদিকে গোটা সকালটায় অনুর কেঁটেছে বারান্দার গ্রীল ধরে।আজকাল নীরাও চুপ চাপ থাকে অনুর সাথে আগের মতো কথা বলে না।অনুও আর ঘর থেকে তেমন বের হয় না।শ্বাশুড়ি রান্না ঘরে ঢুকতে দেয় না।নীরাও কথা বলে না।অনুরও আর এসব ভালো লাগে না।তাই চুপচাপ ঘরে বসে থাকে।
যতোক্ষন নির্ঝর থাকে ততোক্ষন ভালো লাগে নির্ঝর নেই তো কিছুই নেই।
আজ অনুর মনটা বিষন্ন তার সাথে চিন্তিত।সে এখন ব্যস্ত সিমি নামের কাটা টা নিয়ে।
কি করে সিমিকে শায়েস্তা করা যায় সে সব ভাবছে অনু।এভাবে চলতে পারে না।আজ হয়তো সব ঠিক আছে কিন্তু কাল এই মেয়ে এমন কিছু করবে যা কল্পনারও বাহিরে….
সো এর একটা ব্যবস্থা করতেই হবে…….
কিন্তু ছবিগুলো কি আদোও গ্রাফিক্স দিয়ে করা???

চলবে……
(গল্পটা শেষের দিকে চলে এসেছে আমি একটু সাজিয়ে গুছিয়ে শেষ করতে চাইছি তাই হয়তে দুই এক পার্ট বেশি হবে।ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here