স্বামী – পর্ব ৪

0
669

#স্বামী
পর্ব-৪
#Tanima_Anam

ছাদের এক কোনে চুপটি করে বসে আছে অনু।চোখ দিয়ে টুপটুপ করে পানি পরছে।এরকম কিছু হবে সেটা তার কল্পনারও বাহিরে।

বার বার সায়নের কথা মাথায় ঘুরছে।

“কোই ভালো তো তোমায় কম বাসিনি তাহলে এভাবে অভিমান করে ছেড়ে চলে গেলে কেন??”

সায়নের সাথে প্রথম দেখা প্রেম সব যেন চোখের সামনে ভাসছে।
এই তো ছাদের এই কর্নারটাই দাড়িয়েই সায়নের সাথে প্রথম চোখা চোখি হয়েছিলো অনুর…….

অতীতে ডুব দেয় অনু…..

সায়ন হলো অনুদের প্রতিবেশী।অনুর বাবা ব্যাংকে চাকুরি করে।ট্রান্সফার জব।
বাবার বদলির খাতিরে অনুরা পরিবার সহ ঢাকায় চলে আসে।নতুন জায়গা নতুন পরিবেশ সবমিলিয়ে বেশ মন খারাপ মন খারাপ পাচ্ছিলো অনুর। পুরানো কলেজ পুরানো বন্ধু সব ফেলে আসতে কারই বা ভালো লাগে।

তাই মন ভালো করার জন্য কানে হেড ফোন গুজে ছাদের উদ্দশ্যে রওনা হয় অনু।
খোলা আকাশ মন ভালো করার মেডিসিন।
বেশ কিছুক্ষন ছাদে হাটা হাটি করতেই চোখ যায় অনুদের ছাদ বারাবর পাশেই আরেকটা ছাদের দিকে।

ছাদের মাঝখানে বিছানা পেতে বইয়ে মুখ গুজে বসে আছে একটি ছেলে।চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা পড়নে হালকা নীল রঙ্গের টি শার্ট আর কালো রং-এর থ্রি কোয়াটার প্যান্ট।এমন ভাবে বইয়ের দিকে ঝুকে আছে যে তার মুখটাও ঠিক মতো দেখা যাচ্ছে।

কেন যেন ছেলেটাকে দেখে অনুর বেশ কৌতুহল জাগে।অনুর ছেলেটার মুখ দেখতে বেশ ইচ্ছে করছে।

বেশ কিছুবার উকি ঝুকি মারার পরও ছেলেটার মুখ দেখতে অক্ষম হয় সে।
শেষ বার উকি মারতেই ছেলেটা দুম করে দাড়িয়ে যায়।
অনুর সাথে চোখাচোখি হয়ে যায় তার।

অনু লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলে

ছেলেটা অনুর দিকে এগিয়ে আসে

-আপনি কি কিছু বলবেন আমায়??
-ইয়ে মানে না তো(অনু বেশ লজ্জা পেয়ে যায়)
-না আমার মনে হলো বোধয় কিছু বলতে চান তাই বার বার। আচ্ছা যাই হোক হ্যাই আমি সায়ন আহাম্মেদ।

-আমি অনু

ছোট্ট করে নিজের নামটা বলেই অনু ছুট লাগায় নিচে। কেন যেন তার বেশ লজ্জা করছে।
“ইশ কি লজ্জা”
সায়ন সেখানে দাড়িয়েই মুচকি দিয়ে হাসছে।

-লজ্জা পাওয়া ভালো। লজ্জা তো নারীর ভূষণ।।।।

এটাই ছিলো অনু আর সায়নের প্রথম দেখা।

তারপর আর কখনো কথা হয়নি দুজনের মাঝে।তবে দেখা হতো মাঝে মাঝে ছাদের এখানটাই

সায়ন প্রায়ই ছাদের এ পাশটায় বসে বসে পড়তো।মাঝে মাঝে দুজনের দেখা হতো চোখা চোখি হতো তবে কথা হতো না”
(বাকিটা পড়ে আরেক দিন বলবো)

অতীত কতো সুন্দর ছিলো।কোথা থেকে কি হয়ে গেল।

তখন সোহাকে পাঠিয়ে দেওয়ার পর

অনু বাড়ির সবার চোখে ফাকি দিয়ে এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আশে।তার ধারনা সায়নই সোহাকে পাঠিয়েছে অনুকে নিয়ে যেতে।সে হয়তো তার প্রিয়তমার জন্য বাহিরে অপেক্ষা করছে।

সায়নের জন্য অনুর বুকে বেশ অভিমান জমে আছে….

অনু বাড়ি থেকে বেড়িয়ে ছুট লাগায় বাড়ির পেছনের দিকে।
সোহা অনুর কথা মতো সেখানেই অপেক্ষা করছিলো।।।

অনু সেখানে এসেই চারদিকে খোজাখুজি শুরু করে দেয়।
-কাকে খুজছো এভাবে??
-সোহা তোর ভাই কোথায়??
-কেন খোজছো তাকে??
বেশ ঝাঝালো কন্ঠে সোহা অনুকে প্রশ্নটা করে
অনু অবাক চোখে সোহার দিকে তাকিয়ে আছে
-মানে??
-মানে বুঝলে না বেশ তো হেলে দুলে বিয়েটা করে নিলে আবার বরকে নিয়ে বাপের বাড়িও এলে।বিয়ে করার আগে একবারও কি আমার ভাইয়ের কথা ভাবেছিলে???
-এসব কি বলছিস সোহা??
-ঠিকই তো বলছি!!!সেদিন তুমি আসো নি বলেই আজ!!
-কি??
-ভাইয়া আজই লন্ডন চলে যাচ্ছে আর মাত্র একুশ মিনিট পর ফ্লাইট।।।

সোহার কথায় অনু আকাশ থেকে পড়লো।

-সায়ন চলে যাচ্ছে???
-হুম্ম এই নাও মা এগুলো তোমায় ফিরিয়ে দিতে বলেছে…

সোহা অনুর হাতে কয়েকটা কাগজ ধরিয়ে দেয়।এগুলো কাগজ নয় এগুলো চিঠি যেগুলো অনু সায়নকে দিয়েছিলো।।

চিঠিগুলো অনুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে সোহা পেছনে হাটতে শুরু করে।।।

কিছু দূর গিয়ে সোহা দাড়িয়ে যায়।
পেছন ফিরে সোহার দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করে…
-অনু আপু হয়তো তোমার ছলনায় আমার ভাইয়ের জীবনটা শূন্য হয়ে গেল।।।আমি আমার ভাইয়ের ভালোবাসা হারালাম….

ও আর হ্যা এই চিঠি গুলোর অস্তিত্ব এখানেই শেষ করে দাও না হলে যদি তোমার বরের হাতে চলে যায়।তোমার বড়লোক বড় কি তোমার মতো এরকম মেয়েকে মানবে…..???
ভালো থেকো!!

আর একটি কথাও বলেনি সোহা।চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বাড়ির পথে হাটা ধরে সে।।।

অনু সেখানেই ঠায় দাড়িয়ে আছে।বিয়ের আগের দিনও অনুর সায়নের সাথে কথা হয়েছিলো।সায়নের কথা মতে সে রাতের মাঝা মাঝি সময়ে বাড়ির পেছন দিকটায় অপেক্ষা করবে অনুর জন্য। তারপর অনুকে নিয়ে পালিয়ে যাবে অনেক দূরে।।।

অনু এসেছিলো।সারা রাত অপেক্ষা করেছে সায়নের জন্য।কিন্তু সে তো আসে নি।তারপর দিন নির্ঝরের সাথে বিয়ে হয়ে যায় অনুর।।

অনু চিঠিগুলো মুষ্টি বদ্ধ করে বাড়ি ফিরে আসে ছাদের এককোনে গুটিশুটি মেরে বসে পড়ে। সায়নের সাথে সম্পর্কের শুরুটাও ছিলো এই ছাদ আবার হয়তো শেষটাও এখানেই হতে চলেছে।।

“আচ্ছা তবে কি ছলনা আমি করেছি তুমিই তো আসো নি বার বার ডেকেছি তবুও আসো নি মুখ ফিরিয়ে রেখেছিলে।আজ সব সম্পর্কের ইতি টেনে পাড়ি জমালে সদূর পাড়ে।তবুও ছলনাময়ী আমিই হলাম”

কথাগুলো বলেই অনু হাউ মাউ করে কাদতে শুরু করে।

এভাবে কতো সময় কেটেছে জানা নেই।
অনু যখন চোখ খোলে তখন বেশ রাত হয়ে গেছে।নির্ঝর বালিশে হেলান দিয়ে একটা ডায়রিতে কিছু একটা লিখছিলো আর অনু নির্ঝরের বুকের উপর শুেয় আছে একে বারে নির্ঝরকে জাপটে ধরে।।

অনু ধরফর করে উঠে দাড়ায়।এদিক সেদিক চোখ বুলায়, না এটা তো তার ঘর নেই।এই ঘরটা সাথে অনুর বাড়ির কোনো ঘরেরই মিল নেই…..

সে তো বাবার কাছে ছিলো।ঘরে ড্রমি লাইট জ্বালানো ছিলো তাই তেমন কিছু দেখাও যাচ্ছে না।।

অনু বার বার মনে করার চেষ্ট করছে এটা কোন জায়গা

-মি.চৌধূরী আমাকে কোথায়। এনেছেন??

নির্ঝর অনুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে উওর দেয়

-যে দিন আমি তোমার নাম নিয়ে তিন বার কবুল বলি সেদিনই তোমার পায়ে এক অদৃশ্য শিকল পড়িয়ে দিই আর যখন তুমি আমার নামে তিন তিন বার কবুল বলো সেদিনই তুমি নিজে নিজেই সেই শিকল পায়ে বেঁধে নাও অর্থাৎ তুমি চাইলেও আমার থেকে দূরে যেতে পারবে না।কারণ তোমার অস্তিস্ত এখন আমাতেই বন্দী।আমি যে তোমার স্বামী।।।

অনুর চোখ বেয়ে আবার বৃষ্টি নামে।
কথাগুলো সায়ন বললে বোধয় ভালো শুনাতো।।

নির্ঝর ওঠে গিয়ে ঘরের আলোটা জ্বালিয়ে দেয়।অনু ভালো করে তাকিয়ে দেখে এটা নির্ঝরের ঘর।নির্ঝর তাকে আবার এ বাড়ি নিয়ে এসেছে।সকালেই তো অনু ঘরটাকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলো আবার ফিরতে হলো এই ঠিকানায়

বিকেলে,
অনুকে অনেক খোজাখুজরি পর যখন অনুর দেখা মিলছিলো না তখন অনুর বাবা মায়ের মুখ শুকিয়ে যায়।তাদের ধারনা বোধয় তাদের একমাত্র মেয়ে পালিয়ে গিয়েছে।

কিন্তু নির্ঝর কি মনে করে ছাদে চলে যায়।ছাদে যেতেই চোখ পড়ে অনুর দিকে অনু ছাদের দেয়াল ঘেষে পড়ে রয়েছে।নির্ঝরের বুক ধক করে ওঠে
“অনু কিছু করে বসলো না তো??”

অনুর কাছে যেতেই দেখে না সে অঙ্গান হয়ে গিয়েছে।।

নির্ঝর একটা স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে অনুকে কোলে তুলে নেয়।
তারপর আর একমুহূর্ত সেখানে দাড়ায় না।
অনুকে কোলে নিয়ে হাটা ধরে গাড়ির দিকে।
শ্বশুড় বাড়ির সবার কথা অগ্রহ্য করে নির্ঝর অনুকে নিয়ে বাড়ি চলে আসে।।

কান্না কাটির ফলে অনুর বেশ মাথা ধরেছে…..
তাই অনু কথা না বাড়িয়ে বালিশ নিয়ে ওঠে আশে।তার জায়গা যে এ ঘরের মেঝেতে।

অনু ওঠে আসতেই নির্ঝর অনুর কোমড় জড়িয়ে ধরে।তারপর অনুর খোলা পেটে মুখ ডুবিয়ে দেয়।অনু ঠায় দাড়িয়ে আছে…..

হয়তো এটাই তার নিয়তি।এখন থেকে যা হবে সব তাকে মানতে হবে।

হাজার হোক এটাই অনুর নিয়তি।।।

চলবে….

(আজকে বোধয় খুব একটা ভালো লিখতে পারিনি তবুও চেষ্টা করেছি।কেমন হয়েছে জানাবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here