#সুখ
#Part_7
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
নীলিমাকে সাকিব বই নিয়ে পড়তে বসতে বলল। নীলিমা ফর্মালিটি মেইনটেইন এর জন্য পড়তে বসলো। সাকিব নীলিমার পাশে গিয়ে বসলো তবে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে। নীলিমা অবাক ই হলো সাকিবের ব্যবহারে তবে কিছুই বলল না। সাকিব নীলিমার ফরম পূরণ করে অনলাইনে সাবমিট করে দেয় যাতে পরেরদিন কষ্ট করতে না হয়। আয়ান এর ফরম ও সাকিব সাবমিট করে দেয়। নীলিমা ফিজিক্সে কাঁচা বরাবর ই। ফিজিক্স ম্যাথ করতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে নীলিমাকে। ৩০ টা ম্যাথ করেছে এর মধ্যে ১২ টাই ভুল। সাকিব নীলিমার খাতা দেখে হাসতে হাসতে শেষ।
-Like srsly? এইভাবে ম্যাথ করে বুঝি প্লাস পেয়েছো? (হাসতে হাসতে সাকিব)
-নীলিমা সাকিবের মুখের হাসি দেখে প্রেমে পড়ে যায়। তাঁকিয়েই থাকে নীলিমা সাকিবের মুখের দিকে। এই কয়েকমাসে নীলিমা সাকিবকে কখনো মুচকি হাসতেও দেখেনি আর আজ!!!
-থিওরি ভুল করলে ম্যাথ ভুল হবেই। পেন দাও আমি করে দিচ্ছি। (হাত বাড়িয়ে নীলিমার থেকে পেন চেয়ে সাকিব)
-For your kind ইনফর্মেশন, I am not an engineer like you okh?? আমি ফিজিক্স পারিনা। এইটা চরম সত্য।
-সেইটা আমি তোমার খাতা দেখেই বুঝেছি। কাছে এসো আর বই নাও হাতে। (নীলিমার খাতা হাতে নিয়ে সাকিব)
– কোথায় আসব?
-সামনে এগিয়ে এসো। ম্যাথগুলো বুঝিয়ে দিচ্ছি।
নীলিমা সাকিবের সামনে এগিয়ে এলো। নীলিমার শাড়ির আচল সাকিবের হাঁটুর নিচে পরে যায় আর নীলিমা সেইটা খেয়াল করলেও সাকিব করেনা। সাকিব খুব সুন্দরভাবে নীলিমাকে ম্যাথগুলো বুঝিয়ে দিলো। নীলিমা মনে মনে বলে
-ভালো টিচার বাট ভালো হাজবেন্ড হতে পারলো না আজ পর্যন্ত। 😏😏
-বুঝেছো কিভাবে করবা? (সাকিব)
-হুম। আর আমি এডমিট কেন হব? (প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাঁকালো নীলিমা)
-মানে? (অবাক হয়ে সাকিব)
-আমি আর পড়াশুনা করব না৷ ভালো লাগে না আর। সবকিছুই এখন বিরক্তিকর লাগে। (কথা বলতে বলতে দাঁড়িয়ে যায় নীলিমা)
-Very good decision but I am sorry. i can’t agree with you. সাকিব আহম্মেদ এর ওয়াইফ জাস্ট ইন্টার পাশ হবে? It’s a joke.
-স্যরি?? সাকিব আহম্মেদ এর ওয়াইফ আমি? (পেছনে তাঁকিয়ে নীলিমা)
-সন্দেহ আছে? (সাকিব একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো)
-হাস্যকর। (শুকনো হাসি দিয়ে নীলিমা)
-কেন?
-বাদ দিন। রাত হয়েছে অনেক ডিনার করতে আসুন।
নীলিমা এই কথা বলে এগিয়ে যায় নিচের দিকে। ঘর থেকে বের হওয়ার আগেই নীলিমা হঠাৎ দরজার কাঠ ধরে দাঁড়িয়ে যায়। নীলিমা স্বাভাবিকভাবে দাঁড়াতে পারছেনা। সাকিব নীলিমাকে ওইরকম ভাবে দাঁড়াতে দেখে সামনে এগিয়ে যায়।
-কি হয়েছে??(সাকিব)
নীলিমা হাত ইশারা করে বলল পানি দেওয়ার জন্য। সাকিব পেছনে ঘুরে গ্লাসভর্তি পানি নীলিমাকে এগিয়ে দিলো আর নীলিমাকে ধরে সোফায় বসালো।
-কি হয়েছে তোমার? নীলিমা আর ইউ ওকে? (এই প্রথম সাকিব নীলিমাকে টাচ করলো)
নীলিমা কিছু না বলে মাথা নিচু করে বসে আছে আর প্রচুর ঘামছে। সাকিব নীলিমাকে দেখে রীতিমতো ভয় পেয়ে যায় আর সাকিব আয়ানকে ডাকে।
-আয়ান? আয়ান? (চিল্লিয়ে সাকিব)
-কি হয়েছে ভাইয়া? (দৌঁড়ে সাকিবের ঘরে এলো আয়ান)
-ডক্টরকে ফোন করে বাসায় আসতে বল তারাতারি। (নীলিমাকে কোলে নিয়ে)
-ভাবির কি হয়েছে ভাইয়া? (নীলিমার হাত ধরে আয়ান)
-জানিনা। তুই তারাতাড়ি ডক্টরকে ফোন কর। (নীলিমাকে খাটে শুইয়ে দিয়ে সাকিব)
-হ্যা ভাইয়া।
আয়ান ওর ফোন দিয়ে ডক্টরকে ফোন করে। ডক্টর ১ ঘন্টা পর আসে। ততক্ষণে নীলিমা ওর সেন্স হারিয়ে ফেলে। সাকিব এসিটার পাওয়ার লো করে দেয় আর নীলিমার হাত পা মাসাজ করতে থাকে। সুহানা আর আয়ান নীলিমার মাথার পাশে বসে আছে। ডক্টর এসে নীলিমাকে চেকাপ করে বলল
-শাড়িটা পালটে দাও নয়ত জ্বর এসে যাবে। শাড়িটা একদম ই ভেজা। আর সাকিব তুমি একটু বাইরে এসো তো। তোমার সাথে আমার কথা আছে। (ডক্টর)
-হুম। সুহানা চেঞ্জ করে দাও। (সাকিব)
-ওকে ভাইয়া।
আয়ান আর সাকিব ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। আয়ান ওর ঘরে চলে গেলো আর ড্রইংরুমে বসে সাকিবের আম্মুর সামনে সাকিবের সাথে কথা বলল।
-কাজটা কি তুমি ঠিক করছো বলে মনে হচ্ছে তোমার সাকিব? (চশমাটা খুলে ডক্টর)
-ডক্টর মানে? (অবাক হয়ে সাকিব) আমি কি করেছি?
-সাকিব মেয়েটা বাচ্চা। একদম ই বাচ্চা একটা মেয়ে। এইভাবে ওকে ডিপ্রেশনে কেন রেখেছো তুমি? তোমার আম্মু কিন্তু আমায় সব জানিয়েছে। নীলিমার প্রেশার বেড়ে গিয়েছিলো। অবিশ্বাস্য সব জিনিস দেখছি আমি। এইটুকু বয়সে কিভাবে প্রেসার বাড়ে সাকিব? (সাকিবকে প্রশ্ন করলো ডক্টর)
-টেনশন করলে আর ডিপ্রেশনে থাকলে।
-সাকিব তুমি যথেষ্ট ম্যাচিউরড। মেয়েটা ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছে। একটা মেয়ের জীবন এভাবে তুমি নষ্ট হতে দিতে পারো না। অনেক ঝামেলা হবে কিন্তু এরপর নীলিমার। যত্নে রেখো ওকে৷ আসছি আমি।
ডক্টর চলে যাওয়ার পর সাকিব ওর আম্মুকে বলল
-এইটাই তো চেয়েছিলে তুমি তাই না মা? আমি হেনস্থা হই জায়গায় জায়গায়? আমি নীলিমার জীবন নষ্ট করেছি? কথাটা কি আদৌ সত্যি?
-সাকিব তোর ভালর জন্যই আমি নীলিমাকে এই বাড়ির বউ করে এনেছিলাম। কিন্তু তোর জন্য যে মেয়েটা এত কষ্ট পাবে সেইটা ভাবিনি। আমার যেই ছেলে মানুষের কষ্ট দেখতে পারেনা আজ সে নিজের বউকে এইভাবে কষ্ট দিচ্ছে। সাকিব তোকে নিয়ে আমার গর্ব হত জানিস আর আজ ঘৃণা হচ্ছে। কতটা স্বার্থপর হয়ে গেছিস তুই! ছিঃ
এই কথাগুলো বলে সাকিবের আম্মু চলে গেলো। আর সাকিব ড্রইংরুমেই বসে পরলো। সাকিব পারছেনা শুধু চিৎকার করে কাঁদতে।
চলবে