#সুখ
#Part_8
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
সাকিবের আম্মুর কথা শুনে সাকিবের খুব জোরে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। সাকিব তো চায়নি এমন টা হোক কারণ ও মনে প্রাণে তানহাকে ভালবাসে আর তানহাকে ছাড়া আর কারো স্পর্শে যাওয়ার কথা ও ভাবতেও পারেনা। সাকিব তো চায়নি বিয়েটা করতে কিন্তু সাকিবের মা বাধ্য করেছে বিয়ের জন্য। আজ উনি ও সাকিবকে ভুল বুঝলেন!! ড্রইংরুমে সাকিব মাথা নিচু করে বসেছিলো। কিছুক্ষণ পর আয়ান এসে সাকিবকে জিজ্ঞেস করলো
-ভাইয়া ঘরে যাবা না? ভাবি তো একা!
-সুহানা কোথায়? (সাকিব)
-এই যে ভাইয়া! (পেছন থেকে সুহানা) ভাইয়া তুমি ঘরে যাও। ভাবি একা। তিশা আর তুলি ঘুমিয়ে গেছে তাই টের পায়নি কিছু।
-হ্যা ভাইয়া সুহা ঠিক ই বলছে। যাও ঘরে যাও। (আয়ান)
আয়ান আর সুহানা দুজনেই বুঝেছে কেন মন খারাপ সাকিবের! ওরা এই কারনে আর বেশি কিছু বলেনা। সাকিব ও উঠে ঘরে চলে যায়। সাকিব ঘরে গিয়ে আস্তে করে দরজা টা লক করে দেয়। ওয়াশরুমে গিয়ে মুখ ধুয়ে আসে সাকিব। নীলিমা শুয়ে আছে। সাকিব নিজের চোখের পানি ধুয়ে ফেলতে চেয়েছিলো। সে সফল ও হয়েছে।
-ভালো আছো এখন? (টাওয়েল দিয়ে হাত মুখ মুছতে মুছতে সাকিব)
-হুম। (উঠে বসতে নিয়ে নীলিমা)
-উঠতে হবেনা। তুমি শুয়ে থাকো। ডিনার করবেনা? (নীলিমার সামনে বসে সাকিব)
– ক্ষুধা নেই। আপনি তো ডিনার করেন নি? সুহানাকে বলুন খাবার বেড়ে দিতে। তিশা আর তুলি খেয়েছে?
-হুম। তুমি থাকো আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসি।
এইটুকু বলেই সাকিব বাম হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে নিচে চলে গেলো। নীলিমা দেখেনি সেই পানি। সাকিব যাওয়ার পরে নীলিমাও কেঁদে দিয়েছে। সাকিবকে এইভাবে দেখে নীলিমার মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এতটা চেঞ্জ হওয়ার মানুষ সাকিব না। সাকিব আসার আগেই নীলিমা শাড়ির আচল দিয়ে মুখ মুছে ফেলে। সাকিব দরজা লাগিয়ে দিয়ে এলো ঘরে। নীলিমা উঠে বসলো।
-নিজে খাবে নাকি আমি খ খাইয়ে দিব? (কাঁপা কাঁপা গলায় সাকিব)
-দিন আমিই খাচ্ছি। (হাত বাড়িয়ে নীলিমা)
নীলিমা প্লেট টাই ঠিক করে ধরতে পারছেনা আর খাবে কি করে! সাকিব নীলিমার থেকে প্লেট টা নিয়ে নীলিমাকে খাইয়ে দিল। মুখে ছিল মুচকি হাসি। নীলিমা বলল সাকিবকেও খেতে। সাকিব ও সাথে একটু খেলো। খাওয়ানো শেষ করে সাকিব নীলিমাকে ওষুধ দিল খাওয়ার জন্য। নীলিমা ওষুধ খেয়ে শুয়ে পরে। সাকিব ও নীলিমার পাশে শুয়ে পরে বাতি নিভিয়ে। নীলিমার বিপরীত পাশে ঘুরে শোয় সাকিব আর নীলিমাও অন্যদিক ফিরে ঘুমায়। নীলিমা একবার পিছু ফিরে দেখে সাকিব শুয়ে আছে। কখন নীলিমা ঘুমিয়ে যায় জানেনা।
মাঝরাতে হঠাৎ সিগারেটের গন্ধে নীলিমার ঘুম ভেঙে যায়। কোনোরকম চোখ খুলে দেখে সাকিব খাটে নেই আর বারান্দায় রঙীন বাতি জ্বলছে। নীলিমা উঠে বারান্দায় যায়। নীলিমার লম্বা চুলগুলো সামনে আনা আর ঘুম ঘুম চোখে নীলিমাকে একদম হুরপরীর মতো লাগছে। নীলিমা বারান্দায় গিয়ে দেখলো সাকিব গ্রিল ধরে সিগারেট খাচ্ছে আর নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে। নীলিমা সাকিব কে ডাকলো।
-এত রাতে সিগারেট খাচ্ছেন? (চুলগুলো পেছনে নিয়ে নীলিমা)
-তুমি উঠে এলে যে! (সিগারেটের ফিল্টার টা ফেলে দিয়ে সাকিব)
-সিগারেটের গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসছিলো তাই ঘুম ভেঙে গেছে। (সাকিবের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে নীলিমা) কাঁদছিলেন কেন? (সাকিবের চোখের দিকে তাঁকিয়ে নীলিমা)
-কই? কখন কাঁদলাম? (চোখ ঘুরিয়ে নিয়ে সাকিব)
– কষ্ট হচ্ছে অনেক তাই না? (সাকিবের ঘাড়ে হাত রাখলো নীলিমা)
-কিসের কষ্ট? (চোখ মুছে সাকিব)
-ছেলেদের এইভাবে কাঁদতে হয়না। ওরা তো লোহার চেয়েও শক্ত আর নির্ভীক। কান্না ওদের চোখে মানায় না। আপনাকে তো কষ্ট……….. (নীলিমা পুরো কথা শেষ করার আগেই সাকিব নীলিমাকে জড়িয়ে ধরলো আর জোরে জোরে কেঁদে দিল। নীলিমা এর জন্য একদম ই রেডি ছিল না। সাকিবের চোখের পানি সব নীলিমার ঘাড়ে পরছে। নীলিমাও নিঃশব্দে কাঁদছে।)
-নীলিমা আমি সত্যিই পারবো না তানহাকে ভুলে যেতে। এইটা ভাবতেই আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সেই আমি তোমার সাথে সংসার করব কি করে? (কেঁদেই যাচ্ছে সাকিব)
-কি করছেন কি? এইভাবে কেউ কাঁদে। তানহা আপু আপনার ই তো। কে বলেছে আমার সাথে সংসার করতে? #সুখেই তো ছিলাম এতদিন। প্লিজ থামুন। আমার কিন্তু কষ্ট হচ্ছে। (সাকিবের চোখের দিকে তাঁকিয়ে নীলিমা)
-কেন? (নীলিমাকে ছেড়ে দিয়ে চোখ মুছলো সাকিব)
-এই যে আপনি এইভাবে কাঁদছেন! আমি কোনোদিন ই তানহা আপুর জায়গা চাইনি জাস্ট একটু ভালবাসা ই চেয়েছিলাম। আপনি আজকে যা করেছেন আমার জন্য এতেই আমি অনেক খুশি হয়ে গেছি। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার চাইনা। আর দয়া করে কোনোদিন সিগারেট খাইয়েন না। আমি যে এসব একদম ই সহ্য করতে পারিনা। না আমাকে দাম দিতে হবে না তবে প্লিজ খাবেন না৷ (নীলিমা ঘুরে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় তখন সাকিব নীলিমার শাড়ির আচল ধরে নীলিমাকে ওর কাছে নিয়ে আসে)
-এত ধৈর্য্য কোথা থেকে আসে? (সাকিব)
-মানে?
-এতদিন সব মন থেকে মেনে নিয়ে ছিলা তো আমার সাথে নাকি শুধুই ভালো থাকার অভিনয়? (সাকিব)
-একটা মেয়ে হলে বুঝতেন আসলে সেইটা কি ছিল! আপনি তানহা আপুর ভালবাসা পেয়ে তাকে হারিয়েছেন কিন্তু আমি কি পেয়েছি বলতে পারেন?? (নীলিমা)
-জানিনা তোমরা মেয়েরা না থাকলে আমাদের এইভাবে সহ্য কে করত? সিগারেট ছেড়ে দিলাম যাও। আর খাব না কখনো।
-প্রমিস? (হাত বাড়িয়ে দিয়ে নীলিমা)
-হ্যা প্রমিস। (নীলিমার হাতের উপর হাত রেখে সাকিব)
সাকিব আর নীলিমা ঘুমাতে চলে আসে। দুইজনের সাথে দুইজনের হাত লেগে আছে। সাকিব আগে ঘুমিয়ে যায় এরপর নীলিমা ঘুমায়। একটা প্রাপ্তির হাসি দিয়ে আজ নীলিমা ঘুমালো।
পরেরদিন সকালবেলা…….
-রেডি হয়েছো? (সাকিব নীলিমাকে জিজ্ঞেস করলো)
-হুম। আয়ান কোথায়? ও কি চলে গেছে? (নীলিমা)
-না আছে নিচে। আমাদের জন্য ওয়েট করছে৷
-ওহ আচ্ছা চলুন।
নীলিমা আর সাকিব বেরিয়ে গেলো ভর্তি পরিক্ষা দিতে।
চলবে