#স্বামী
পর্ব-৯
#Nirzana(Tanima_Anam)
অনুর কেমন কেমন লাগছে।নির্ঝর আবার সিমি নামের মেয়েটির সাথে পরকীয়ায় জড়ালো না তো?? বলায় যায় না লোকটার তো এমনিতেও চরিত্রের সমস্যা রয়েছে।
ছাদ থেকে ঘরে ফিরে বিছানার একপাশে পা ঝুলিয়ে বসে আছে অনু।নির্ঝরের কোনো খবরই নেই।
সে সিমির সাথে দেখা করতে গেছে।সিমি ঘরে।মেয়েটি নাকি এই বাড়িতেই থাকবে।
বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর নির্ঝর ঘরে ফিরে।
অনু একই ভঙ্গিতে বসে আছে।
নির্ঝর অনুর দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়
-কি হলো ঘুমোবে না
অনু একবার নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়
-কি হলো??
-দেখুন মি.চৌধুরী আমি যেমন আপনার কোনো বিষয়ে নাক গলাচ্ছি না তেমন আপনিও আমার বিষয়ে আপনার নাক ঢুকবেন না! হুহ্
-মানে??
অনু তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠলো….
-ঢং এতোক্ষন যেখানে ছিলেন সেখানেই থাকুন না শুধু শুধু এখানে এলেন কেন??এলেই যখন আমাকে নিয়ে পড়লেন কেন?
-ওওও
-ঠিক আছে?
-মানে?
নির্ঝর ওঠে গিয়ে দরজার কাছে চলে যায়
অনু রাগে ফুসছে
-মি.চৌধুরী আপনি সত্যিই একজন চরিত্রহীন মানুষ।আপনার যদি ঐ মেয়ের সাথেই বিশেষ কিছু ছিলোই তাহলে শুধু শুধু আমাকে সায়নের থেকে আলাদা করলেন কেন???
নির্ঝর ধপ করে দরজাটা বন্ধ করে দেয়….তারপর অনুর কাছে এগিয়ে এসে অনুর হাতে কব্জি ধরে টেনে তোলে
-সব কথায় সায়ন সায়ন করো কেন??লজ্জা করে না অন্যের বউ হয়ে পরপুরুষের নাম নিতে??
-না করে না কারণ আমি কোনো দিন আপনাকে….
কথার মাঝখানে অনু কেঁদে দেয়। নির্ঝর অনুর হাত ছেড়ে দিয়ে বারান্দায় হাটা ধরে…।।
আজকাল অনুকে নিয়ে নির্ঝর বড্ড দ্বদ্নে আছে।নির্ঝরের ধারনা ছিলো অনু হয়তো একটু একটু করে নির্ঝরের কাছে আসবে ভালোও হয়তো বাসবে।কিন্তু যতো দিন যাচ্ছে হীতে বিপরীত হচ্ছে।সায়ন নামটা যেন কেউ অনুর হৃদয়ে একেবারে খোদায় করে লিখে দিয়েছে।
নির্ঝর একটা সিগারেট ধরায়।তারপর ডুব দেয় অতীতে।
“সেদিন ছিলো শুক্রবার।নির্ঝর যখন বুয়েটে চান্স পেলো তখন এই দীর্ঘ অ্যাডমিশান নামক জার্নির ক্লান্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পাড়ি জমায় সমুদ্র সৈকতে…..নির্ঝর একাই ঘুরাঘুরি করতে ভালোবাসতো।
সমুদ্র বরাবরই নির্ঝরের বড্ড প্রিয় ছিলো।সেদিন নির্ঝর সূর্যদয় দেখার জন্য সমুদ্রর কিণারায় দাড়িয়ে আছে।তখনও আলো তেমন ছড়ায় নি….সবে সূর্য মামা পূবের আকাশে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন!!
হটাৎই নির্ঝরের চোখ যায় দূরে অনেক দূরে একটা কিছু ঢেউয়ে ভেসে যাচ্ছে।কাছে যেতেই দেখে একটা মেয়ে পানিতে বেশ নেকানিচুবানি খেয়ে বালির উপর পারে রয়েছে।তখন আকাশে সূর্য উঠতে শুরু করেছে।
নির্ঝর মেয়েটির মুখের উপর থেকে চুল সরাতেই সূর্যের আলো সরাসরি মেয়েটির মুখের উপর পরেছে।
“কি আশ্চর্য এ যেন কোনো এক মায়াবিনি না না হয়তো কোনো এক মৎস্যকন্যা,নয়তো জলপরী পথ ভুল করে কিনারায় উঠে এসেছে”
মেয়েটিকে প্রথম দেখেই নির্ঝরের বুকের বা পাশটা ধক করে ওঠে।জীবনে প্রথম ভালোলাগা হয়তো ভালোবাসা।
নির্ঝর মেয়েটির নাকে হাত দিয়ে দেখে মেয়েটি বেঁচে আছে।আশেপাশে তাকিয়ে দেখে না আশে পাশে কেউ নেই তাহলে কি মেয়েটি একাই এসেছিলো সমুদ্রে?? হতে পারে, এতো ভাবার সময় নেই তারপর ঝটপট কোলে তুলে নেয়।মেয়েটিকে হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়।তখন অবশ্য তার গ্ঞান ছিলো না।বেশ কিছুক্ষন পর নির্ঝর মেয়েটির কেবিন থেকে একটু বাহিরে বেরিয়ে যায় ডাক্তারের খোজে।তখন অবশ্য মেয়েটি বেঘোরে ঘুমোচ্ছে।বাহির থেকে ফিরে এসে মেয়েটিকে আর দেখা হয় নি নির্ঝরের। কোথায় সে?? গোটা হাসপাতাল খুজেও পায় নি নির্ঝর। সে নাকি গ্ঞান ফিরতেই কোথাও চলে গিয়েছে।তারপর গোটা সমুদ্র সৈকত খুজেও মেয়েটির কোনো খবর পায় নি নির্ঝর।সেই মেয়েটিই ছিলো আজকের অনু।
নির্ঝর মুচকি হেসে সিগারেটটা ফেলে দিয়ে হাটা ধরে ঘরের দিকে।
অনু গুটিসুটি মেরে আধ সোয়া হয়ে বিছানায় সুয়ে আছে।নির্ঝর অনু পাশে মেঝেতে হাটু গেড়ে বসে পড়ে।তারপর অনুর গলায় নাক ডুবিয়ে দেয়।
“সে দিন নির্ঝর ভেবেছিলো মেয়েটি হয়তো ক্ষনিকের জন্য তার বুকের বা পাশটায় এক তীর বিঁধে দিয়ে গেছে।সে তীরে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলো নির্ঝরের হৃদয়।নির্ঝর তখন হারে হারে বুঝে গিয়েছিলো ভালোলাগা কি?? এটা কি শুধুই ভালোলাগা না কি ভালোবাসা কি জানি…??? তবে সেদিনের সেই মেয়েটি যে নির্ঝরের রাতের ঘুম হারা
তারপর বেশ কিছুদিন নির্ঝরের ভালোই কেটেছে।তবে সেই এক মূহুর্তেই অনু নির্ঝর হৃদয়ে যে জায়গা করে নিয়েছে তা নির্ঝর বেশ বুঝতে পারছে।আচ্ছা এভাবেও কি ভালোবাসা হয়। হুম্ম হয় তো হয় বলেই হয়তো এতো কিছুর পরও অনুকে নির্ঝর পেয়েছে”
নির্ঝরের গরম নিঃশ্বাস বার বার অনির চোখে মুখে পড়ছে।অনুর ঘুম ভেঙ্গে যায়।
অনু লাফিয়ে নির্ঝকে সজোড়ে ধাক্কা মেরে দেয়…..।।
নির্ঝর টাল সমলাতে না পেরে মেঝেতে পরে যায়….
-আপনাকে না আমার কাছে আসতে বারণ করেছি!!
নির্ঝর চুপ করে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে।
-শুনুন ভুল করেও যদি আবার আমার কাছে আসার চেষ্টা করেন আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।
নির্ঝর এখনো একই ভঙ্গিতে বসে আছে…..
অনুর দিকে তাকিয়ে নির্ঝর বলতে শুরু করে।
“জানো অনু সায়ন তোমাকে চায় খুব করে চায় তবুও ও তোমাকে ভালোবাসে না।ও শুধু তোমাকে চায় তবে ভালোবাসে না”
কথাগুলো বলেই নির্ঝর দাড়িয়ে যায়।অনু অবাক চোখে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে আছে।
অনুর চোখ যায় নির্ঝরের হাতের দিকে।নির্ঝরের যে হাতটায় ব্যান্ডেজ করা ছিলো সে হাত থেকে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়ছে।
অনু কোনো রকমে বিছানা থেকে ওঠে নির্ঝরের কাছে গিয়ে নির্ঝরের হাতটা ধরতেই নির্ঝরে হাত সরিয়ে নেয়।
-দেখুন নির্ঝর আপনার হাত দিয়ে রক্ত পরছে।
-পরুক তাতে তোমার কি?
-কিছুই না তবে আমি এতোটা অমানবিক না।আপনার মতো???
-কি!!
-চুপ
অনু দ্রুত গিয়ে নির্ঝরের হাতে আবার ব্যান্ডেজ করিয়ে দেয়।
এরকম সময় হটাৎই নির্ঝরের ফোনটা বেঁজে ওঠে…..
অনু ওঠে গিয়ে ফোনের কাছে যেতেই দেখে ফোনের স্ক্রিনে সায়ন নামটা স্পস্ট দেখা যাচ্ছে সাথে সায়নের নাম্বারটা।
এই নাম্বারটা কি ভুল যায়???
অনু কাঁপা হাতে ফোনটা কানে ধরতেই
অপর পাশ থেকে সায়নের গলা। বেশ উত্তেজিত লাগছে সায়নকে…..
-হ্যালো নির্ঝর…. (সায়নের গলা)
-(…)
-হ্যালো হ্যালো!!
অনুর চোখ দিয়ে টুপটুপ করে পানি পরছে……এতো দিন পর সে!!!
-(…)
-শুনতে পাচ্ছিস না। আমি সায়ন বলছি…নির্ঝর!!
এবার আর অনু চুপ করে থাকতে পারে নি।একেবারে হুহু করে কেঁদে দেয়।নির্ঝর অবাক চোখে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে।অনু কাঁদছে।
অনু অস্পস্ট স্বরে বলে ওঠে
-সান তুমি আমি অনু….!!!
নির্ঝর অনুর মুখে “সান” নামটা শোনা মাত্র ওঠে গিয়ে ছো মেরে অনুর কাছ থেকে ফোনটা কেড়ে নেয়।
অনু এখনো কেঁদেয় যাচ্ছে…..
নির্ঝরের হাত থেকে বার বার ফোনটা কাড়ার চেষ্টা করছে সে
কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে বসে পড়ে অনু।
নির্ঝর অসহায় দৃষ্টিতে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে।
অনু কি মনে করে….ওঠে দাড়ায় আর নির্ঝরের কলার চেপে ধরে।।
-আপনি সায়নকে কি করেছিলেন মি.চৌধুরী??????
চলবে…..
(একটু সমস্যা থাকায় গল্পটা লিখতে পারি নি।যেহেতু সমস্যার সমাধান হয় নাই সেহেতু গল্প নিয়ে হয়তো একটু বিরম্বানা হবে তার জন্য আমি Sry)