স্বামী – পর্ব ১৫

0
510

#স্বামী
পর্ব-১৫
#Nirzana(Tanima_Anam)

বারান্দায় পেছন ফিরে দাড়িয়ে আছে অনু।আর অনুকে পেছন থেকে জড়িয়ে রেখেছে নির্ঝর।
তখন হুট করেই অনুর হাত থেকে ফোনটা কেঁড়ে নেয় নির্ঝর।

-আপনি তখন আমার হাত থেকে ফোনটা ওভাবে নিয়ে নিলেন কোন??

অনুর কথা নির্ঝরের কানে যাচ্ছেই না সে তো অনুর ঘাড়ে নাক ঘষতে ব্যস্ত।
(তখন নির্ঝরের ফোনে সায়ন নামটা দেখে অনু প্রথমে একটু ভড়কে গেলেও পরে মানিয়ে নেয় হতে পারে এটা অন্য কেউ)

-(..)
-কি হলো বলুন???
-এমনি
-এমনি না অন্য কিছু??
-বললাম তো এমনি।ইশ্ এতো নড় কেন একটু চুপটি করে দাড়াতে পারো না??
-ছাড়ুন তো সব সময় ভালো লাগে না….ঐসব!!

কথাটা বলেই অনু নির্ঝরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে একটু দূরে সরে দাড়ায়।নির্ঝর কিছুই বলে না।
অনুর দুচোখ এখন আকাশে ওঠা বড় চাঁদটার দিকে….
আর নির্ঝরের চোখ অনুর দিকে।অনুর চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত চোখ বুলাচ্ছে নির্ঝর…।।আজ বোধয় অনুকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে।

-এভাবে ড্যাব ড্যাব করে কি দেখছেন টা কি হুম্ম??
-তোমাকে!!
-এমন করে দেখছেন যেন এক্ষুনি গিলে খাবেন!!
-খাবোই তো
অনু নির্ঝরের দিকে দু কদম এগিয়ে এসে দু হাত দিয়ে নির্ঝরের গলা জড়িয়ে ধরে।নির্ঝর অনুর কোনড় জড়িয়ে একটু উঁচু করে তুলে ধরে…..

-জানেন তো আমি খাওয়ার জিনিস না!!
-তো তুৃমি কিসের জিনিস??
-ভালোবাসার জিনিস
-তাই বুঝি???(মুচকি হেসে)
-হুম্ম!!
-আমি তো ভালোবাসিই কিন্তু তুমি???
-জানি না!!
-জানতে হবে না!!

দুজন বেশ কাছাকাছি।নির্ঝরের গরম নিঃশ্বাস অনুর চোখে মুখে আঁচড়ে পরছে…অন্যরকম অনুভূতি

“কোই খারাপ তো লাগছে না ভালোই লাগছে নিজেকে কোমন বর সোহাগী মনে হচ্ছে”

নির্ঝর হটাৎই অনুর ঠোটে ঠোট মিলিয়ে দেয়।দুজন পাড়ি দেয় অন্য জগতে!!
বেশ কিছুক্ষন পর অনু নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।
-অনু তুমি সায়নকে এখনো ভালোবাসো তাই না??
-জানি না!!
-ওওও
-হুম্ম্
-জানতে হবে না কারণ তুমি আমার শুধুই আমার।নির্ঝর পেছন ফিরে চলে আসতেই অনু নির্ঝরকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে….।
নির্ঝর অনুকে সামনে ঘুড়িয়ে কোলে তুলে নেয়..!!
তারপর বিছানায় নিয়ে গিয়ে শুয়ে দেয়।।
-আজ আকাশে অনেক বড় চাঁদ ওঠেছে।হালকা বৃষ্টি একটু শীত শীত আবহাওয়া।ওয়েদারটা বেশ রোমান্টিক।জানো তো এমন ওয়েদারে বর বউরা মধুচন্দ্রীমায় যায়
-(…)
-তুমি যাবে আমার সাথে মধূচন্দ্রীমায়??
-(….)
অনু লজ্জায় লাল গোলাপী হয়ে গেছে

-বোধয় আজ আমাদের ফের ফুলসয্যা হবে!!(মুচকি হেসে)

অনু নির্ঝরের কথায় বেশ লজ্জা পেয়ে গেছে…!!!
কি জানি আজকাল নির্ঝরকে তো আর আগের মতো খারাপ লাগে না।নির্ঝরও আগের মতো নেই…

তবে এটা কি ভালোবাসা না কি শুধুই সস্তা আবেগ??নাকি এটাকে শুধুই মানিয়ে নেওয়া বলে?? কি জানি!!এর কোনো অর্থই অনুর মাথায় ঢুকছে না!!

সায়নের ঘরে…

বারান্দার গ্রীলে বেশ কয়েকটা বাড়ি দিয়েছে সায়ন।হাট কেটে রক্ত পড়ছো তবুও রাগটা কমছে না।সায়ন স্বভাবত বেশ শান্ত শিষ্ট তবে রেগে গেলে নিজের উপর কোনো নিয়ন্ত্রন থাকে না তার।রাগে গ্রীলে আরো কয়েকটা বাড়ি দেয় সায়ন।পাশেই সিমি আছে তবুও কিছু বলছে না বাঁধাও দিচ্ছে না!!
চুপটি করে সায়নের কান্ড দেখছে সে!

সায়ন রক্ত বর্ন চোখে সিমির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়
-নির্ঝর এরকম একটা নোংরা প্লান করলো তুই জেনে শুনে আমাকে আগে কিছুই বললিস নি কেন??
-সায়ন বিশ্বাস কর আমি আগে কিছুই জানতাম না।আমি তো রিসেন্টলি এসব জেনেই তোকে দেশে ফিরে আসতে বললাম।আর নির্ঝর অনুকে পাওয়ার জন্য এরকম কিছু করবে তা আমার কল্পনার বাহিরে!!

সিমি এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে দম নেয়

-অনুর দিকে যে নির্ঝরের নজর ছিলো সেটা তুই আগে থেকে জানতিস??
-ইয়ে মানে
-ইসেছ ওর নো!!
-হুম্ম।জানতাম….।।।সে বার সমুদ্র সৈকতে গিয়ে অনুকে নির্ঝরের ভালো লাগে।
-তাহলে আমাকে আগে বলিস নি কেন ইউ স্টুপিড গার্ল!!

-বিশ্বাস কর সায়ন নির্ঝর যেদিন জেনেছিলো অনুর সাথে তোর সম্পর্ক আছে সেদিন নির্ঝর দমে গেছিলো আমি ভেবেছিলাম নির্ঝর হয়তো অনুকে ভুলে যাবে কিন্তু অনুকে পাওয়ার জন্য যে নির্ঝর এতো কিছু করবে তা যদি জানতাম

(সায়ন শুধু রাগে ফুসছে।এয়ারপোর্টে সায়নকে না পেয়ে নির্ঝর বাড়ি চলে এলেও সিমি কাজের নাম করে সরাসরি সায়নের বাড়ি চলে আসে সায়নকে এখন তার প্রয়োজন।তাই তো সবার আড়ালে সায়নকে এতো কিছু বলতে এসেছে সিমি।সায়নই তো তার….)

সায়নকে রাগতে দেখে সিমি জ্বলন্ত আগুনে আরেকটু ঘি ঢেলে দিলো

-সায়ন আমার মনে হয় অনুর ঐ রিপোর্টটাও মিথ্যা হয়তো অ্যান্টিকে অনুর বিরুদ্ধে রাগানোর জন্য নির্ঝরই ঐ ফলস্ রিপোর্টটা বানিয়েছে আফটার অল ঐ নার্সিং হোমটা তো নির্ঝরের ফ্রেন্ডের!!

সায়ন একটু চুপ হয়ে গেলো।হুম্ম আকদের দিন হটাৎই অনু সিড়ি থেকে পড়ে যায়।পেট ব্যাথ্যায় বার বার ছটপট করতে থাকে সায়ন কোনো তাল না পেয়ে নির্ঝরকে ফোন দেয় নির্ঝরই তো সে দিন অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়েছিলো।তারপর তো ঐ রিপোর্ট ওরকম একটা ঘটনা সব কেমন তাল গোল পাকিয়ে দিলো।অনুর ব্যাপারে ওরকম একটা কথা জানার পর সায়নের মা আর একটি মুহূর্ত সায়নকে হাসপাতালে থাকতে দেয় নি।সত্য গোপনের দায়ে অনুর পরিবারকে যাচ্ছে তাই বলে অপমান করে।তবে বিষয়টা দুঃখজনক হলেও অনুর এরকম সমস্যার কথা তারাও আগে টের পায় নি।তবে সায়নের মার কাছে তারা অপরাধী তাই তাদের যোগ্য অপমানই করেছিলো সেদিন।।
বিয়েটা ভেঙ্গে দিয়ে সায়নকে নিয়ে চলে আসেন তিনি।কসম টসম দিয়ে সায়নের মুখও বন্ধ করে দেয়!তবে সেদিন অনুর রিপোর্টটা কি মিথ্যে ছিলো???সেদিনের সবই কি নির্ঝরের সাজানো প্লান ছিলো অনুকে আমার থেকে আলাদা করার জন্য??

নাহ আর কিছু ভাবতে পারছে না সায়ন।মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে।নির্ঝর তো শুধু সায়নের ভাই ছিলো না বেস্ট ফ্রেন্ডও ছিলো তাহলে!
বন্ধু হয়ে বন্ধুর সাথে এতো বড় বেঈমানী??

-নির্ঝর শুধু মাত্র নিজের জন্য নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে বেঈমানী করলো এরফল ভালোহবে না একদম ভালো হবে না।

কথাগুলো বলতে বলতে সায়ন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় আর সিমি বিছানায় একই ভঙ্গিতে বসে আছে।
যেন সেও বিষয়টা মানতে পারছে না।।

তবে ধীরে ধীরে তার মুখে ম্লান হাসি ফুটে উঠছে….

“খেলা তো সবে শুরু মি.নির্ঝর এবার দেখো তোমার কর্মের ফল তোমায় আমি কিভাবে দেয়।আমি ভালো নেই নির্ঝর তুমিও ভালো থাকবে না।তোমাকে আমি ভালো থাকতে দেবো না”

চলবে……

(আমি বোধয় গল্পে একটু বেশিই রহস্য করে ফেলেছি।তবে সব রহস্য সমাধান দিয়েই আমি বিদায় নিবো ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here