#স্বামী
পর্ব-২৩
#Nirzana (Tanima_Anam)
-অনু প্লিজ ফিরে এসো!
-সায়ন তুমি বার বার কেন ভুলে যাচ্ছো এখন আমি বিবাহিতা!!
অনু নির্ঝরের পাশে গুটিশুটি হয়ে বসে ছিলো।জ্বরটা সবে একটু কমেছে।নির্ঝরও ঘুমিয়ে আছে হটাৎই নির্ঝরের ফোনটা বেজে উঠে
অনু দেখে আননোন নাম্বার।বেশ কয়েকবার বাজার পর
অনু ফোনটা কানে ধরে সাথে সাথেই
অপর পাশ থেকে কেউ একজন “হ্যালো বলে উঠে”
অনুর বুঝতে বাকি নেই কে ফোন করেছে!!
অনু একবার নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বারান্দায় চলে যায়।
-অনু..
-(…)
-প্লিজ অনু ফোন রেখো না!!
-সায়ন কি চাই তোমার?কেন বার বার..জ্বালাচ্ছো আমাকে।
-তোমাকে চাই!!অনু প্লিজ ফিরে এসো!!
-সায়ন কখনো শুনেছো সব মানুষের সব চাওয়া পুরোন হয়!!হয় না সায়ন।জীবন সবাইকে সব কিছু দেয় না,সবার জীবনের সব সমীকরণ মিলে না।আমি আমার জীবনের সমীকরনটা মিলাতে চাইছি তবে তোমার সাথে নয় মি. নির্ঝর চৌধূরীর সাথে!!আমি বাঁধা পরে গেছি এক পবিত্র সম্পর্কের মায়াজালে।
-তুমি নির্ঝরের সাথে ভালো থাকবে না। ও একটা ঠকবাজ ও তোমাকে ঠকিয়েছে আমাকে ঠকিয়েছে আর আমাদের
-চুপ..শুনতে চাই না আমি কোনো কথা তার সম্পর্কে কারণ সে আমার #স্বামী।ভালো হোক মন্দ হোক আমারই তো।
-ওও তার মানে অন্য মেয়েদের মতো নির্ঝর তোমাকেও পট্টি পড়িয়ে দিলো!!বাহ্ নির্ঝর বাহ্
-রাখছি…
-আচ্ছা ও কি খাইয়েছে তোমাকে যে এমন স্বামী স্বামী করছো??
-মানে??
-মানে দুদিন আগেও নাকি শুধু আমি আমি করতে এখন হটাৎ করেই! আচ্ছা ও তোমায় কি পানি পড়া টানি পড়া খাইয়েছে যে তুমি।
-সায়ন প্লিজ…(বেশ জোড়ে ধমকের সুরে)
-অনু
-রাখছি!!
-অনু তোমায় অনেক কিছু বলার আছে।নির্ঝর যা যা করেছে সব বলার আছে তোমায়।
-আমার কিচ্ছু শোনার নেই
-অনু
-টুট টুট টুট….
নির্ঝর ঘুমাচ্ছিলো বলে অনু ফোনটা নিয়ে বারান্দায় চলে গিয়েছিলো।কথা বলে ঘরে আসতেই দেখে নির্ঝর বিছানায় হেলান দিয়ে সুয়ে আছে….
-কি হলো উঠে পরলেন যে জ্বরটা তো এখনো বোধয় কমে নি!
-কথা হলো??
-কি??
-কখন নিতে আসছে ও তোমায়?আজকেই না কি কাল??
-আমাকে কে নিতে আসবে?
-কে আবার সায়ন!!
-নিতে আসতে হবে কেন যেতে চাইলে আমি একাই যেতে পারবো আমার কি পা নেই না কি আমি হাটতে পারি না!! (মুচকি হেসে)
-হুম্ম খুব আছে।এক পা বেরিয়ে দেখো পা ভেঙ্গে ঘরে ফেলে রাখবো
(অনুর হাত ধরে কাছে টেনে এনে)
-বা রে একটু আগেই না বললেন যেতে চাইলেই না কি যেতে পারবো আপনি বাঁধা দেবেন এখন কি হলো??
-ধূর…
-আপনি তো দেখছি কথা উল্টাচ্ছেন।মি.নির্ঝর চৌধূরী একটা কিন্তু মোটেও ভালো কাজ নয় যা পারবেন না তা বলতে নেই।
-তুমি সত্যি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাও??
-দেখি দেখি
-কি?
-জ্বরটা তো একটু কমেছে!!
একটু বসুন কিছু খেয়ে ঔষুধ খাবেন!!
-খাবো তো।
অনু উঠতে গেলে….
কোই যাও(অনু উঠতে গেলে)
-খাবার আনতে!!
-লাগবে না দাও
-কি?
-তোমার ঠোট!!
-কিহ্
-হুম্ম
-অসুখ হয়ে মাথাটা আপনার গেছে!!
-ধূর…
(নির্ঝর একটু একটু করে অনুর কাছা কাছি যেতেই হুট করে কোথা থেকে সিমি চলে আসে।হাতে স্যুপের বাটি)
সিমি আসতেই অনু নির্ঝরের থেকে দূরে সরে যায়।
-ইয়ে সরি তোমাদের ডিসটার্ব করলাম!
-না না সিমিআপি আসো।তোমার হাতে কি?
-খাবার!!
-ওও (ভ্রু কুচকে)
-নির আমি তোকে খাইয়ে দিই?? দেখ ভালোলাগবে
সিমির কথা শুনে অনু চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে।
অনুর চোখে চোখ পরতেই নির্ঝর একটা চোখ টিপ দেয়।
-হ্যা হ্যা তুই আমাকে খাইয়ে দে সমস্যা নেই
অনু রাগী চোখে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে আছে সিমি নির্ঝরকে খাইয়ে দিচ্ছে।
অনু রাগে গজগজ করতে করতে উঠে যায়।কিন্তু পেছন থেকে সিমি ডাক দেয়।
-অনু কি সিদ্ধান্ত নিলে??তুমি যা ভেবেছো নির্ঝরের সামনে বলো ভয় নেই আমি আছি!!
-কি সম্পর্কে??(অবাক হয়ে)
-সায়ন সম্পর্কে!!তুমি কি সায়নের কাছে যেতে চাও??
-নাহৃ অনু কোথাও যাবে না।ও আমার সাথেই থাকবে(নির্ঝর বেশ জোড় দিয়ে কথাটা বলে)
-নির!!
-তুই এখন যা আমার খাওয়া হয়ে গেছে
-নির এভাবে জোড় করে….
-বললাম তো যা!অনু সিমি চলে গেলে দরজাটা বন্ধ করে দাও!!
-হু
সিমি নির্ঝরের দিকে ছলছল চোখে একবার তাকিয়ে এক ছুটে ঘর থেকে চলে যায়।অনু থম মেরে দাড়িয়ে আছে।সিমির চোখের ভাষা নির্ঝর না বুঝলেও অনুর কাছে কেমন কেমন লাগছে।সিমির চোখে অন্য কিছু ছিলো নির্ঝরের জন্য।অনুর মনটা খচখচ করছে।
হটাৎই নির্ঝর ডেকে বসে
-এই মাঝ রাতে এভাবে দাড়িয়ে আছো কেন?
-না মানে!!
-ঘুমিয়ে পড়ো মাঝ রাতেরও মাঝরাত হয়ে গিয়েছে।
-অনু মুচকি হেসে নির্ঝর পাশে শুয়ে পড়ে।
নির্ঝর জ্বর কমে গেছে।তবে গা টা ছ্যাত ছ্যাত করছে।অনু পাশে শুতেই নির্ঝর অন্য পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে।
-এই যে শুনছেন??
-হুম্ম।কি হলো?
-আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবেন না হলে আমার ঘুম আসবে না।ইয়ে মানে অভ্যেস হয়ে গেছে।
নির্ঝর মুচকি হেসে অনুকে শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রাখে।
-অনু
-হু
(কিছুক্ষন চুপ থেকে নির্ঝর বলে উঠে)
-আমায় ছেড়ে যেও না!!
-অনু…অনু(সে তো ঘুমিয়ে পরেছে)
সকালে ঘুম থেলে লাফিয়ে উঠে।ঠিক সকাল বললে ভুল হবে সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে শুরু করেছে।ঘড়িতে তখন এগারোটা বেজে বিশ মিনিট।নির্ঝর এখনো ঘুৃমাচ্ছে।
অনু ঝটপট উঠে নিচে যেতেই দেখে সবাই চলে এসেছে।
সবাই দুপুরের রান্না বান্নায় ব্যস্ত।
অনু রান্না ঘরে যেতেই দেখে অনুর শ্বাশুড়ি চোখ মুখ কালো করে কাজ করছে।অনুকে দেখে দপকরে তার চোখ দুটো জ্বলে উঠে
-কি চাই এখানে?
-না আমি!
-যাও যাও নিজের ঘরে যাও রান্না ঘরে কেন এসেছো তোমি চাইলে আমার ছেলে তোমার জন্য দশ জন দাসী বান্দি রেখে দিবে
-মা আমি আসলে
-খবর দার আমায় মা বলবে না।যে মেয়ের সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা নেই সে এসেছে আমায় মা ডাকতে
-চুপ চাপ রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে যাও।
-আপনি আমায় পছন্দ করেন না কেন?কি করেছি আমি?
-না আমি তোমায় পছন্দ করি না তোমাকে আমার ছেলের বউ বলেও মানি না।আর মতো বাজা মেয়ে মানুষকে কেই বা নিজের ছেলের বউ বলে মানে। মেয়ে মানুষ অথচ সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা নেই সে এসেছে আমার ছেলের বউ হতে।অলক্ষী মেয়ে মানুষ।আমার ছেলেকে রূপের জালে ফাসিয়ে…যাও দূর হও আমার চোখে সামনে থেকে।
অনুর শ্বাশুড়ি একদমে কথাগুলো বলেই চলেছে।তবে অনুর কানে কোনো কথায় ঢুকছে না তার মস্তিস্ক এখন একটা প্রশ্নের মানে খুজতে ব্যস্ত।
“শ্বাশুড়ি মা তাকে বন্ধ্যা বললো কেন??”
-এই মেয়ে(ধমকের।সুরে)
অনু চমকে যায়…
-হ্যা… মা.. না…. মানে
-এখানে হা করে দাড়িয়ে আছো কেন?যাও বেরিয়ে যাও ঘরে গিয়ে আমার ছেলেকে ইনিয়ে বিনিয়ে আমার সম্পর্কে লাগাও।যাতে আমি তার চক্ষূ শূল হই।এমনি তেও তো তুমি এসব ভালোই জানো!
অনু চোখের পানি ফেলতে ফেলতে মাথা নিচু করে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে পরে।দু চোখ দিয়ে টুপটুপ করে পরছে। বাবা মা কোনো দিন অনুর সাথে একটু জোড়ে কথা বলেনি সেই অনুকো শ্বাশুড়ি এতোগুলে…..
তবে এতোগুলো শব্দের মাঝে একটা শব্দ অনুর মনে গেথে গেছে….
“বাজা”
“কিন্তু ওনি আমাকে এমন একটা কথা বললেন???”
চলবে…..