#স্বামী
পর্ব-২৬
#Nirzana(Tanima_Anam)
-সায়ন তুমি নীরাকে বিয়ে করে নাও
-কি বলছো এসব??
-ঠিকই বলছি।আমাকে ভুলে যাও আর নীরাকে বিয়ে করে নাও নীরা যে তোমায় খুব ভালোবাসে।
-অনু প্লিজ ফিরে এসো!!
-সব দরজা সবার জন্য সব সময় খোলা থাকে না।
-তোমার জন্য আমার মনের দরজা সব সময় খোলা অনু।
-জানো তো সায়ন যে পথ আমার নয় সে পথে বার বার গিয়ে ফিরে আসতে হয়।সায়ন তোমার আর আমার পথ আলাদা হয়ে গেছে অবশ্য আমাদের পথ এক ছিলোই বা কবে যে নতুন করে আলাদা হবে।যা হয়েছে ভুলে যাও ভুলে যাও অনু নামের কেউ ছিলো তোমার জীবনে।
-শুধু শুধু নির্ঝরের ভুলের শাস্তি আমাকে দিচ্ছো কেন??
-ভুল যে নির্ঝর একা করেছে তা তো নয় ভুল আমি ও করেছি বার বার করেছি।ভুল করে ঠকেছি।বার বার ঠকেছি!
যাই হোক ভালো থেকো।আর নীরাকে ভালো রেখো
-অনু
-বিয়েটা করে নাও
-অ….
-টুট টুট টুট….
বাড়ি থেকে বেরিয়ে অনু শুধু একবার সায়নকে ফোন করে কথাগুলো বলে ফোন অফ করে দেয়।
সায়ন বার কয়েক অনুকে ফোন করলেও লাইন পায় নি।ফোনটা সুইচট অফ বলছে।।।
এখন পর্যন্ত অনুর কোনো খবর নেই।নির্ঝর সারা রাত অনুকে খুজেও কোথাও পায় না।
অনু বাবার কাছে যায় নি।নির্ঝর খবর নিয়েছিলো কিন্তু অনুর বাবার বাড়ির কেউ জানে না অনু কোথায়।নির্ঝর অনেক খোজা খুজি করে ভোরের দিকে বাড়ি চলে আসে।
নির্ঝর ঢুলু ঢুলু চোখে ক্লান্ত শরীরে বাড়ির ভেতর ঢুকতেই দেখে অন্ধকারে কেউ একজন সোফায় উল্টো দিকে ফিরে বসে আছে।
নির্ঝর হালকা আলো আধারে পেছন ফিরে থাকা মেয়েটাকে দেখছে।সেই হালকা গোলাপি কালারের শাড়িটা নির্ঝর স্পস্ট দেখতে পাচ্ছে।কাল রাতেও অনু এই শাড়িটাই পড়ে ছিলো।
-অনু??
-(…)
নির্ঝর একছুটে গিয়ে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।অনুর ঘারে মুখ গুজে বাচ্চাদের মতো কাদতে থাকে।এতোক্ষন পর যেন নির্ঝরের বুকের খাচায় প্রান ফিরে এলো।
অনুকে শক্ত করে ধরে বলতে শুরু করে..
-কোই গিয়েছিলে??এভাবে কেউ হুট হাট করে চলে যায়?জানো কতো চিন্তা হচ্ছিলো!!তুমি কেন বঝোনা আমি তোমায় কতোটা ভালোবাসি??
-(…)
-কি হলো চুপ করে আছে কেন??
-(..)
-অনু…
নির্ঝর অনুকে এপাশ ফেরাতেই দেখে।এতো অনু নয়।
-সিমি???
সিমি অনুর সেই হালকা গোলাপী রঙ্গের শাড়িটা পরেছে।অনুর মতো করে হাত খোপা করে পিঠে ছড়িয়ে দিয়েছে। খোপায় সদ্য মালা করা বেলী ফুল পরেছে।
নির্ঝর সিমিকে দেখে দূরে সরিয়ে দেয়।সিমি আবার নির্ঝকে কাছে টেনে নেয়।
-নির দেখো আমি শাড়ি পরেছি এই রংটা তোমার অনেক পছন্দের তাই না!!আমি জানি….দেখো নির আমাকে অনুর মতো লাগছে তাই না….এবার আমায় ভালোবাসো!!
কথাগুলো বলেই সিমি নির্ঝরকে জড়িয়ে ধরে।
নির্ঝর সিমিকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয়।
-তোর মাথা কি আবার খারাপ হলো?
-নীর দেখ না আমাকে অনুর মতো লাগছে তো?তাহলে আমাকে অনুর মতো ভালোবাস না প্লিজ।দেখ ধরে নে না আমিই অনু
-সিমি😡😡😡 ছাড় আমায়
-নির প্লিজ একটু ভালোবাস না প্লিজ একটু
কথাগুলো বলেই সিমি নির্ঝরের দিকে এগিয়ে গিয়ে নির্ঝরের গলা জড়িয়ে ধরে।
-সিমি প্লিজ ছাড়
-এই নির এই একটু ভালোবাসলে কি হয় বল না??কেন এমন করিস আমার সাথে? আমি ভুল করেছি নির প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দে
-সিমি সব কিছুর একটা সীমা আছে।আমার সহ্যেরও একটা সীমা আছে প্লিজ!
-নির কেন করিস এমন হুম্ম।কার জন্য করিস তোর বউ তো তার পুরানো প্রেমিকের সাথে ভেগেছে একটিবার ও তো তোর কথা ভাবে নি।তোকে কাঁচ কলা দেখিয়ে পালিয়েছে।শুধু শুধু কেন আমার সাথে এমন করছিস ভুলে যা না।অনু সুখে বাঁচার জন্য সায়নকে বেছে নিয়েছে তুই ও আমাকে নিয়ে নে না তোর করে। প্লিজ একটু ভালোবাস না আমাকে..আমাকে ভালোবেসে তোর করে নে।
ঐ চরিত্রহীন মেয়ের জন্য আর কতো কষ্ট দিবি আমাকে…???(চেঁচিয়ে)
নির্ঝর সিমিকে সরিয়ে দিয়ে ঠাটিয়ে থাপ্পর মেরে দেয়।সিমি ছিটকে গিয়ে সোফায় বসে পরে।
-আর একবার অনুর নামে কোনো বাজে কথা বললে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।
কি ভেবেছিস তুই বার বার আমার সামনে অনুকে খারাপ প্রমান করলেই অনু খারাপ হয়ে যাবে।সেদিন তুই সায়নকে সপিং মলে ডেকে অনুর নাম দিয়েছিলি তোর জন্যই আমি সেদিন অনুকে….
ছি…মেয়েটা কষ্টে ছটপট করেছে বেল্টের আঘাতে রক্তাত্ত হয়েছে তবে মুখ দিয়েয়ে টু শব্দ করে নি।
কথাগুলো বলেই নির্ঝর দেয়ালে ঘুষ মারে….
তুই সেদিন আনিকা আপু বেবি সওয়ারে সায়নকে ডেকেছিলি।ভেবেছিলো অনু আমাকে ছেড়ে চলে যাবে!!
সায়ন সেদিন অনুকে জোড় করেছিলো সায়নের সাথে যাবার জন্য কিন্তু অনু যায় নি।কারণ কি জানিস? অনু আমাকে ভালোবেসেছে।তবে সেদিন তুই আড়াল থেকে ছবি তুলেছিলিস আরর আমাকে পাঠিয়েছিলিস যাতে আমি অনুকে ভুল বুঝে দূরে সরিয়ে দিই।
-মা….মানে কি বলছিস এসব?
-বুঝতে পারছিস না তাই না…(সিমির দুই হাত ধরে ঝাকিয়ে)
আমি ঐ ছবিগুলো দেখে অনুকে হয়তো ভূলই বুঝতাম। বুঝতাম কেন তুইই তো আমাকে যা বুঝিয়েছিলিস তাই বুঝে অনুকে….
যাই হোক….থ্যাকস্ টু আল্লাহ সেদিন সঠিক সময় আনিকা আপু আমাকে বলে দিয়েছিলো অনু আর সায়নের মাঝে কি কি কথা হয়েছিলো!!
-নির প্লিজ আমি তোকে খুব ভালোবাসি!!
সিমিকে জোড়ে ধাক্কা দিয়ে
-তোর অনেক কিছু পাও না আছে সৌমিতা খান আমার থেকে অনুর থেকে সব হিসেব মিলিয়ে দিয়ে তারপর তোর ছুটি
-নির
নির্ঝর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
একটা ঘর তখনই পরিপূর্ণ হয় যখন সে ঘরে ভালোবাসা থাকে।আর সেই ভালোবাসা যত্ন করে সাজিয়ে রাখে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মানুষ।সেই মানুষগুলো যখন থাকে না তখন না থাকে ভালোবাসা না থাকে ভালোলাগা।ভালোবাসা ছাড়া সব কিছুই কেমন অগোছালো ছন্নছাড়া।মায়াহীন…..
নির্ঝর খুব দ্রুত গাড়ি ড্রাইভ করছে।
মাথা ভর্তি চিন্তা।অনু কোথায় কেমন আছে সে??অনুও কি তবে হারিয়ে গেলো???
আচ্ছা আমার কপাল এমন কেন?একটু তো ভালোবাসাই চেয়েছি বেশি কিছু তো চাই নি!!
অনু কি সায়নের কাছে গেছে??
অসম্ভব…
নির্ঝর কি মনে করে সায়ন কে ফোন দেয়…
-হ্যালো সায়ন?
-হু
-অনু কোই?অনু কি তোর সাথে??
-লিসেন মি.নির্ঝর চৌধূরী আমার অনুর যদি কিছু হয় তোকে আমি ছাড়বো না!!
-টুট…টুট….টুট
সায়ন হুট করে ফোন রেখে দেয়।অনু কোই সেটা সায়ন জানে না।
নির্ঝর দুঃখের মুখে হেসে দেয়
“আমি ও না কতো বোকা বার বার তোমায় অবিশ্বাস করি।আজ ও করলাম।অনু তুমি কোই??একটিবার ফিরবা প্লিজ শুধু একবার ছরি বলবো”
নির্ঝরের চোখ দিয়ে টুপটুপ করে পানি পরছে…
বুকের ভেতর এক অজানা ভয় কাজ করছে।অনুকে ফিরে পাবো তো??
চলবে…..
#স্বামী
পর্ব-২৭
#Nirzana(Tanima_anam)
-আর কতো জোড় করবেন আমাকে মি.নির্ঝর?জোড় করে বিয়ে করলেন!বিয়ের প্রথম রাতে জোড় করে স্বামীত্ব ও ফলালেন এখন এসছেন জোড় করে ধরে বেঁধে সংসার করাতে!এভাবে আমি পারছিনা প্লিজ এবার আমায় মুক্তি দিন প্লিজ!!
[অনেক খোজাখুজির পরও নির্ঝর অনুর খোজ পাচ্ছিলো না।অনুর বাবার বাড়ি থেকেও কেউ কিছু বলছিলো না।নির্ঝর পাগলের মতো এদিক ওদিক খুজছিলো কিন্তু অনুর কোনো খবর নেই।হটাৎই অনুর ভাবি নির্ঝরকে ফোন দেয়।
-সংসারে এমন মান অভিমান হবেই।অনু ছেলে মানুষ তাই রাগ কন্ট্রোল করতে পারে নি।তুমি একটু গিয়ে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে এসো
-ইয়ে মানে অনু তো আমাকে বলে যায়নি মানে আমি জানি না অনু কোথায়
-তা ভাই এ বিষয়ে আমি তোমায় সাহায্য করতে পারি
-হ্যা ভবি বলেন না অনু কোই
-বাবাহ্ বউকে দেখার তড় সইছে না
-ইয়ে….
-বলছি অনু ছোট ফুপ্পির বাড়ি গেছে।
অনু ভাবির কাছ থেকেই নির্ঝর জানতে পারে অনু তার ফুপ্পির বাসায় আছে।নির্ঝর খবর পেয়েই ভাবির ঠিকানা মতো ছুট লাগায় অনুর কাছে।
অনুর কাছে পৌছালেও অনু নির্ঝরের সাথে দেখা করতে নারায।সে এক জিদ ধরে বসে আছে।
অনেক জোড়া জুড়ির পর শেষ মেষ দেখা করতে রাজি হয়।অনু বার বারই নির্ঝরের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে কথা বলছিলো যা নির্ঝরের একদম পছন্দ হয়নি তাই সে জোড় করে গিয়ে অনুকে জড়িয়ে ধরে।অনুকে একরকম জোড় করেই বাড়ি নিয়ে যেতে চায়।তখনই অনু নির্ঝরকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে কথাগুলো বলে
অনু কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে বসে পড়ে।নির্ঝর মূর্তির মতো দাড়িয়ে আছে]
“আজ অনু মুক্তি চাইছে!!মুক্তি চাইছে তার ভালোবাসা থেকে।অনু মুক্তি চাইছে এই সম্পর্ক থেকে”
নির্ঝরও অনুর পাশে বসে পড়ে অনুর মুখটা উঁচু করে তুলে ধরে
অনুর চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে
-অনু একটি বার আমার চোখে চোখ রেখে বলো তুমি আমায় ভালোবাসো না??
-(…)
-কি হলো বলো
-(….)
অনু মাথা নিচু করে নেয়।নির্ঝর আবার অনুর মুখটা উঁচু করে তুলে ধরে
-তোমার ঐ দুই চোখে আমার বার বার ডুবতে চেয়েছি।তোমার ঠোটের কোণে ঐ মিষ্টি হাসিটাতে বার বার হাড়িয়ে যেতে চেয়েছি।তোমার ভালোবেসে পাড়ি দিতে চেয়েছি নিজের বাঁকি জীবন।অনু তোমার হাতে হাত রেখে আমি বুড়ো হতে চেয়েছি।আমার এই চাওয়াগুলো কি এতোই বেশি ছিলো যে তুমি মুক্তি চাইছো আমার থেকে।বলো না বলো???
অনু নির্ঝরের জ্বলন্ত দৃষ্টি থেকে চোখ সড়িয়ে নেয়।অনুর থুতনি থেকে নির্ঝরের হাত সরিয়ে নেয়
-আপনার চাওয়াগুলো ভুল ছিলো ভুল হলাম আমি।নির্ঝর আপনি ভুল মানুষের কাছে ভুল জিনিস চেয়েছেন।প্লিজ আমি হাত জোড় করছি আমাকে এবার মুক্তি দিন।
নির্ঝর অনুকে শক্ত করে ধরে তারপর দাড় করিয়ে দেয়
-বার বার এক কথা কেন বলছো
-বলছি তার কারণ আপনার মতো বিশ্বাসঘাতক বেঈমান লোকের সাথে আমি একটি মুহূর্তও থাকতে চাই না।
-অনু…
-দয়া করে আর একবার ও আমাকে ছোবেন না প্লিজ
-কি করেছি আমি?
-আপনি আমাকে ডিভোর্স দিবেন নাকি আমি নিজেকে…??
নির্ঝর অনুকে ঠাটিয়ে চড় মারে
-আমি বার বার বলছি তোমাকে ছাড়া আমি মরে যবো
-আপনার মতো স্বামী থাকার থেকে বিধবা হওয়া অনেক ভালো!!
নির্ঝর অনুকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে যায়।নির্ঝরের কানে বার বার অনুর বলা একটা কথায় বাজছে।”বিধবা!অনু বিধবা হতে চায়”
-আমার ভালোবাসা তোমার কাছে এতোই অসহ্য লাগছে যে তুমি আমার মৃত্যু কামনা করছো!!
-আসলে….
-আসছি।আল্লাহ্ তোমার ইচ্ছে পুরন করুক
কথাগুলো বলেই নির্ঝর বেরিয়ে যেতে নিলে….অনুু বলে উঠে
-আপনার পরিকল্পনা সার্থক হয়েছে মি.নির্ঝর চৌধূরী আপনার বোনের ভালোবাসার পথে আরর আমি বাঁধা হয়ে দাড়াবো না।আপনার বোন তার ভালোবাসার মানুষকে পাবেই
-কি?(অবাক হয়ে)
-আপনি এখন আসতে পারেন আর যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ডিভোর্সটা দিয়ে দিবেন এই সম্পর্কে এবার ইতি টানা প্রয়োজন!!
অনুর কথাগুলো শুনে নির্ঝর আর একমুহূর্ত দাড়ায়নি।হনহনিয়ে বেরিয়ে পড়ে
“যখন কেউ আঘাত করে ব্যাথ্যা লাগে খুব লাগে কিন্তু ভালোবাসার মানুষের দেওয়া আঘাত শুধু ব্যাথ্যা দেয়না সাথে দেয় অসহ্য যন্ত্রনা।যে যন্ত্রনা প্রত্যেক মুহূর্তে ভেতরটা কুড়ে কুড়ে খায়”
নির্ঝর গাড়ি নিয়ে একটানে হাইওয়েতে চলে এসেছে।রাতের এই সময়টা হাইয়ওয়ের রাস্তা ফাঁকায় থাকে ইচ্ছে মতো গাড়ি চালানো যায়।নির্ঝরেরর গাড়িও সর্বোচ্চ গতিতে ছুটছে।
অনুর দেওয়া ব্যাথ্যাগুলো মনে হয় নির্ঝরের হৃদয়ে গেথে গেছে।
এদিকে কাঁদতে কাঁদতে অনুর ও নাজেহাল অবস্থা।ভেতরটা বড্ড বেশি পুড়ছে।মুখে তো বলে দিলো সে মুক্তি চায় নির্ঝর নামের প্যারা থেকে সে মুক্তি চায় কিন্তু সেই মুক্তির স্বাদ কি অনু নিজে মেনে নিতে পারবে??কি করে থাকবে সে নির্ঝরের সেই রোমান্টিক অত্যাচার ছাড়া…
কথাগুলো মনে হতেই অনুর চোখ বেয়ে পানি পরতে থাকে।
হটাৎই অনুর বা চোখ কেমন কাঁপছে।ছোট বেলায় অনুর মা বাম চোখ কাঁপলেই কেমন ভয় পেতেন বা চোখ কাঁপলে না কি কাঁছের মানুষের বিপদ হয়।
হুট করেই অনুর মাথায় নির্ঝরকে বলা শেষ কথাটা চলে আসে।
“আপনার মতো স্বামী থাকার থেকে বিধবা হওয়া অনেক ভালো”
তাহলে কি নির্ঝরের কোনো ক্ষতি হবে।কথাটা মাথায় আসতেই অনুর বুকটা ভয়ে কেঁপে উঠে
অনেক ধৈয্য ধরে শেষ মেষ এক পাহাড় সংকোচ নিয়ে নির্ঝরকে ফোন করে
দুইবার ফোন বাজতেই নির্ঝর ফোনটা তোলে….
ফোনটা কানে ধরে নির্ঝর চুপ করে আছে।অনুও চুপ করে আছে।অনু বার বার কথা বলতে চেয়েও বলতে পারছে না।সব কথা কান্না হয়ে গলায় এসে আটকা পরে যাচ্ছে আর চোখে জল হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসছে।
অনেক ক্ষন চুপ থেকে নির্ঝর বলতে শুরু করে
-জানো তো অনু কেন যেন আমার মনে হচ্ছে এটাই তোমার সাথে আমার শেষ দেখা হয়তো আর কখনো তোমায় দেখতে পাবো না!!
-নির্ঝর আপনি ঠিক আছেন তো কিছু হয় নি তো???
-এখন ঠিক আছি তবে কতোক্ষন ঠিক থাকবো জানি না!!
-নির্ঝর…..
-টুট…টুট….টুট
হটাৎ দুম করে নির্ঝরের ফোনটা কেটে যায়।অনুও অবাক হয়।তারপর বার কয়েক নির্ঝরকে কল ব্যাক করলেও ফোনটা কানেক্ট হচ্ছে না।অনুর বুকের ভেতর ঢিপ ঢিপ করছে।কেন যেন প্রচুন্ড ভয় হচ্ছে।ভয়ে হাত পা কাঁপছে…
“ভুল করে মুখ দিয়ে ভুল কথা বেরিয়ে গেছে কথাটা যেন সত্যি না হয়”
অনুর মাথয় বার বার একটা প্রশ্নই ঘুরছে “নির্ঝর ঠিক আছে তো??”
।
।
।
নীরা সোফায় বসে রাগে ফুসছে।রাগে দুঃখে চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।হাত পা থরথর করে কাঁপছে।
পাশেই সিমি বসে বসে নীরার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।নীরার চোখ মুখের ভঙ্গি দেখে সিমির বেশ হাসি পাচ্ছে।
অনুর কান্ড করখানার গুলো বেশ রং চং মিশিয়ে নীরার সামনে উপস্থাপন করেছে সিমি।
“সিমির কথা হলো:সুখ যদি আমি না পাই তুমিও পাবে না অনু।নির্ঝর তোমার নয়।সে আমার সম্পদ তাই সেই সম্পদের রক্ষা আমাকেই করতে হবে।হোক না তা বাঁকা পথে তবুও নির শুধু আমার।
তোমাকে যে আমি সুখে থাকতে দিবো না।যে সুখ আমার নয় তা তোমারও নয়”
নীরার ঠিক বিপরীতে নির্ঝরের মা ও বসে বসে সিমির কথাগুলো শুনছিলো।রাগে শরীর জ্বলছে ওনার।
একেই তো বাজা মেয়ে মানুষ তার উপর মেয়ের কি না চরিত্রখারাপ।ভাবা যায় এসব!
-মেয়ের মুখ দেখে মনে হয় ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না এখন দেখছি ঠিক উল্টো এ মেয়ের মুখে এক ভেতরে আরেক।
অসভ্য বাজা মেয়ে মানুষ।আমার ছেলে তো দয়া করে বিয়ে করেছিলো এখন অন্য প্রেমিক পেয়ে…ছি ছি যতো সব নোংরা মেয়ে মানুষের কৃত্তিকারখানা!!
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলেই দম নেয় নীরার মা।রাগে ফুসতে ফুসতে পায়চারি করছেন ওনি
-বোঝো না মা ঐ মেয়ে যে গভীর জলের মাছ।বাহিরে ভালোর মুখোশ পড়ে এক সাথে দুই নৌকায় পা রেখে চলছিলো।এখন সুযোগ পেয়ে ভাইয়াকে রেখে…..
কথাগুলো শেষ করতে পারে নি নীরা।হাউ মাউ করে কেঁদে উঠে।ঐ একজনকেই তো সে ভালোবেসেছে।নিজের জীবনে আর কউকে চায়নি সে শুধু সায়নকে ভালোবেসে সারা জীবন কাটিয়ে দিতে চেয়েছে।সেই। সায়নই কিনা এভাবে ঠকালো।
সায়নের তো কোনো দোষ নেই সব দোষ এই মেয়ের মেয়ে যদি ছেলেকে ফুসলায় তাহলে কোন ছেলে গলবে না….
নীরা ফুপিয়ে কাঁদছে।ছোটবেলার ভালোবাসা,এতো দিনের চাওয়া এক মুহূর্তে ভুলে যেতে হবে তাকে।মুছে ফেলতে হবে জীবন থেকে।
নীরার চোখ দিয়ে পানি পারছে।এর চেয়েও বেশি কষ্ট হচ্ছে ভাইয়ের কথা ভেবে।
ভাই অনু ভবিকে ছাড়া কি করে বাঁচবে?এই একজন মেয়েকে ভালোবেসে ভাই গোটা পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে…
আর আজ সেই মেয়েই কি না তার প্রাক্তনের সাথে পালিয়ে গিয়ে ভাইয়ের পিঠে ছুড়ি মারলো।ভাই ভাবির দেওয়া এতো বড় আঘাত মানতে পারবে তো???
কথাগুলো মনে আসতেই অনুর আরো কান্না পাচ্ছে।এদিকে নির্ঝরের মা তো তখন থেকেই অনুকে গাল মন্দ করেই চলেছে…..
ওনি তো মনে মনে স্থির করেই ফেলেছে সিমিকে এবার বাড়ির বউ করবে।তা নির্ঝর চাক বা না চাক…
আগের বার ছেলের জিদ ওনি রেখেছে এবার ছেলেকে তার জিদ মানতে হবে।
এখানে যে যার চিন্তায় আছন্ন।এমন সময় বাড়ির ল্যান্ড নম্বারে ফোন আসে।প্রথম বার বেজে বন্ধ হয়ে যায় আবার বাজতেঔ নীরা গিয়ে ফোন তোলে…
অপর পাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠে
-এটা কি নির্ঝর চৌধূরীর বাড়ি??
-জ্বি কে বলছেন??
-আমি হাসপাতাল থেকে বলছি।আসলে নির্ঝর চৌধূরী…..
চলবে…..
(আজকে অনেক বড় করে লিখলাম আশা করি আর দুই এক পর্বে আমার গল্পের সমাপ্তি ঘটবে।ধন্যবাদ)