গোধূলি লগ্ন – পর্ব ৭+৮

0
363

#গোধূলি_লগ্ন
#writer_Tabassum_Tajnim
#part_7_8

পূন্য সেই কখন থেকে কেঁদেই চলছে। তিয়ান আর চুপ করে থাকতে পারলো না।
— কি হয়েছে তোমার?? আমাকে বলো পূন্য??আমার তো টেনশন হচ্ছে?

তিয়ানের প্রশ্ন শুনে কিছুক্ষণ তিয়ানের শার্ট খামচে ওর বুকে মাথা রেখে দাড়িয়ে রইলো পূন্য। হঠাৎ তিয়ানকে ছেড়ে দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো।

ওয়াশরুমে দাড়িয়ে আছে পূন্য। কল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। না পূন্য আর কাঁদবে না পূন্য কাউকে ভালবাসি নি, কেউ পূন্যকে ভালোবাসে নি। যত তারাতারি সে সব ভূলতে পারবো ততই মঙ্গল। পূন্য যে তিয়ানকে কষ্ট দিচ্ছে, সেটা তো ঠিক নয়।

— পূন্য

— হুম

নিবিড় পূন্যর হাত ধরলো। পূন্য নিবিড়ের দিকে তাকালো।
— I love you,,
পূন্যকে নিবিড় নিবিড় হা করে দেখছে। পূন্যর চেহারায় কিছু একটা যার কারনে নিবিড় পূন্যর দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারে না।

— কিন্তু আমি,,

নিবিড়ের হার্ট বিট বেড়ে গেলো। এমন নয় যে,, পূন্য আগে কখনো ওকে ভালোবাসি কথাটা বলে নি। তবুও ওর মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনলেই নিবিড়ের হার্টবিট বেড়ে যায়। নিবিড়ের আর সহ্য হচ্ছে না, নিবিড় বললো

— কিন্তু তুমি কি?? বলো,,

পূন্য— আমি তোমাকে Hate করি। I Hate you…

কথাটা বলেই পূন্য হো হো করে হেসে দিলো। নিবিড় পূন্যর বাহু জড়িয়ে ওর কাছে টেনে নিলো। তারপর বললো,

— আমার তাতেই চলে যাবে। পূন্য চলো আমরা পালিয়ে বিয়ে করে ফেলি।

পূন্য নিবিড় কে সরিয়ে দিলো। চোখে মুখে বিরক্তি নিয়ে বললো,

—বারবার এমন কথা বলো কেনো তুমি,,, পালিয়ে বিয়ে করবো কেন?
দেখো,, আমাদের সম্পর্ক টা সবাই মেনে নিবে। আর তোমার মা ও।

নিবিড়ের ঠিক ভরসা হলো না ওর কথায়,,বাতাসে উড়তে থাকা চুলগুলো পূন্যর কানের পাশে নিতে নিতে নিবিড় বললো,
— যে হারে তোমার বিয়ের সম্বন্ধ আসছে,,তাতে আমার ভয় হচ্ছে। যদি অন্য কারো সাথে তোমার,,,,,,,,

পূন্য নিবিড়ের ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বন্ধ করে দিলো।
— “তুমি ছাড়া আমি কাউকে বিয়েই করবো না,, আমি ছাড়া তোমার কারো সাথে বিয়েই হবে না। এটা আমার অভিশাপ,, বুঝলে অভিশাপ দিলাম।”

পূন্য নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিয়ে হাসতে লাগলো। পূন্য অনেক কষ্ট করে হাসি থামিয়ে আবার বলতে লাগলো
—“আর তাছাড়া তুমি তো এক এক করে সব কয়টাকেই ভাগিয়ে দিলে। আচ্ছা, কি বলো ওদের? যে ওরা না করে দেয়।”

—” এটা বলা যাবে না।”

“ভাইয়া”
পিছন থেকে রুপন্তর গলা শুনে নিবিড় চোখের জল মুছে ফেললো, ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এলো ।পূন্যর সাথে কাটানো প্রত্যেকটা মুহূর্ত তার কাছে স্মরণীয়। সেদিন যদি পূন্য তার কথা শুনতো, যদি বিয়েটা করে ফেলতো তাহলে আজ আর এটা হতো না। পূন্য কি করছে কে জানে?

রুপন্ত দু পা এগিয়ে আসলো, ছাদটা অনেক অন্ধকার, এই অন্ধকারে নিবিড় ভাইয়া দাড়িয়ে আছে কিভাবে কে জানে।একটু এগিয়ে রুপন্ত

— “তোমাকে নিচে সবাই খুজছে..”

আর কিছু না বলে নিবিড় ছাদ থেকে নেমে গেলো। রুপন্ত ও নিবিড়ের পিছু পিছু নেমে এলো।

তৃপ্তি মেয়েটার সাথে গিয়ে বসলো। মেয়েটা দেখতে অনেক সুন্দর। হরিনীর মতো টানা টানা চোখ। গোল গাল চেহারা। নাকটা একটু চাপা, কিন্তু চেহারার সাথে মানিয়েছে। দুধে আলতা গায়ের রং। ওর একটা দাত একটু গ্যাজা, হাসি দিলে অনেক সুন্দর লাগে এই দাঁতটার জন্য। বয়স খুব অল্পই মনে হয়,১৭-১৮ হবে। মানে তৃপ্তির বয়সী। যাই হোক ভাব জমানো দরকার ওর সাথে,, কিন্তু নামটাই তো জানে না, তৃপ্তি বললো,

— “নাম কি তোমার?? ভাবি”

সমবয়সী মেয়ের মুখ থেকে ভাবি ডাকটা শুনতে ভালো না লাগলো না মিতুর। নিচু গলায় বললো
— মিতু,,

তৃপ্তি একটু হাসলো, আর বকবক করা শুরু করলো,,
— ওও,,, আমার নাম তৃপ্তি, জানো আমার বুবুন আছে ওর নাম পূন্য, আর অরু দি ও আছে, সে অবশ্য বুবুনের বান্ধবী । আমরা কিন্তু সবাই তোমার ননদ। যদিও তুমি ওদের দুইজনের থেকে বয়সে ছোট হবে, আর আমার সমবয়সী।

কথাটা শুনে মিতু একটু হাসলো। যাক কাউকে তো পেলাম, কথা বলার। আমি তো ভেবেছিলাম কেউ থাকবে না কথা বলার।

আয়েশা আক্তার এসে দেখে তৃপ্তি বউয়ের সাথে কথা বলছে, ওনি এগিয়ে এসে বউয়ের পাশে বসলেন। তারপর বললেন,,
— অনেক রাত হয়ে গেছে, ওকে ওর রুমে দিয়ে আয় তৃপ্তি।

কথাটা শেষ করতেই তৃপ্তি মিতু কে তুলে দাড় করালো, তৃপ্তি আয়েশা আক্তারকে একদম সহ্য করতে পারে না, তাই যতো তারাতারি এখান থেকে যাবে ততই ভালো । মিতুকে ওর রুমে দিয়ে আসলো তৃপ্তি। চলেই আসছিলো হঠাৎ মিতু পিছন থেকে ডাকলো
— তৃপ্তি,, আপু

তৃপ্তি ঘুরলো মিতুর দিকে। মেয়েটা তৃপ্তিকে আপু ডাকছে।ও তো ভাবি হয় ওর।
— আপু ডাকবে না, আপু ডাকবে না,। তুমি তো আমার ভাবি। শুধু তৃপ্তি ডেকো কেমন। কিছু কি বলবে???
মিতু— পানি খাবো,, একটু পানি দিবে।

ঘরের বোতলটা একদম খালি।তৃপ্তি হাতে নেওয়ার পর বুঝতে পারলো। হলরুম থেকে পানি এনে দিতে হবে।মিতুর দিকে তাকিয়ে বললো,,

— তুমি একটু বসো। আমি পানি নিয়ে আসছি।

হলরুমে কেউ নেই। সবাই কোথায় গেলো,, হয়তো বিশ্রাম নিচ্ছে,, সারাদিন কতো পরিশ্রম হয়েছে সবার। তৃপ্তি জগ থেকে পানি ঢেলে পিছনে ঘুরতেই দেখি নিবিড় দাড়িয়ে আছে। কিছু না বলে নিবিড়কে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলো, নিবিড়ের কথা শুনে দাড়িয়ে গেলো।
— তুইও ইগনোর করছিস নাকি তৃপ্তি??

—না তো,, ইগনোর করবো কেনো?? আচ্ছা তুমি তো রুমে যাবে। এইটা নিয়ে যাবে একটু,, ভাবি মানে তোমার বউ পানি খাবে।

তৃপ্তির কথাটা শুনে রাগ উঠে গেলো নিবিড়ের। কিন্তু কন্ট্রোল করে নিলো,
রাগ হচ্ছে, খুব রাগ হচ্ছে তৃপ্তির উপর।। পানির বোতলটা ওর হাত থেকে টান দিয়ে নিয়ে নিলো নিবিড়, তারপর হন হন করে রুমের দিকে এগিয়ে গেলো।

রুমে এসে দরজাটা লক করে দেয় নিবিড়। খাট টা ফুল দিয়ে সাজানো। ইচ্ছা করছে ফুলগুলো টেনে ফেলে দিতে।কিন্তু সব ইচ্ছে তো আর পূরন হয় না। টেবিলের কাছে গিয়ে গ্লাসে পানি ঢেলে মেয়েটার দিকে এগিয়ে দিলো।
কিছুক্ষণ মিতু নিবিড়কে দেখলো। তারপর গ্লাসটা নিয়ে এক নিশ্বাসেই পানিটা শেষ করলো।কাঁপা কাঁপা হাতে পানির গ্লাসটা নিবিড়ের দিকে বাড়িয়ে দিলো।

নিবিড় কে দেখে মিতুর খুব ভয় করছে। এমনিতেই পানি পিপাসা লেগেছিল তার উপর ওনাকে দেখেই গলাটা আরো শুকিয়ে গেলো আরো বেশি,তাই পুরো গ্লাসের পানি টাই খেয়ে নিলো। মিতুর দাদু বলেছিলো, ওনাকে মানে নিবিড়কে সালাম করার জন্য, মিতুর নিজের কাজ সেরে করে ফেলতে চাইলো । নিবিড়কে সালাম করতে চাইলো।
নিবিড় দুপা পিছিয়ে গেলো, এই মেয়েটা কি করছে?? তাড়াতাড়ি বললো,
— এই সালাম করতে হবে না।

মেয়েটা দেখতে বেশ সুন্দর। বাচ্চা বাচ্চা একটা ভাব আছে ওর চোখে মুখে। নিবিড় বললো,,
— তোমার নাম কি??
— মিতু,,,
খুব কেপে বললো মিতু।

— তোমার কি খুব ঠান্ডা লাগছে???
নিবিড় প্রশ্নে হালকা বিব্রত হলো মিতু।তারপর ঠান্ডা গলায় উত্তর দিলো
— না,,
— তাহলে কেঁপে কেঁপে কথা বলছো কেনো??

মিতু চুপপ করে গেলো। মিতুকে চুপপ দেখে নিবিড় আর কোনো প্রশ্ন করলো না। ভাবলো হয়তো ভয় পাচ্ছে। নিবিড় বললো
— মিতু,, তুমি ঘুমিয়ে পড়ো। নিশ্চয় তোমার অনেক ঘুম পেয়েছে??

— আরেহ্, না দাদু বলে দিয়েছে আজকে রাতে না ঘুমাতে। আপনার সাথে গল্প করতে হবে। আর আমার তো গল্প করতে ভালোই লাগে।

মিতুর কথা শুনে নিবিড়ের হাসি পেয়ে গেলো। শুধু ওর চোখে মুখেই বাচ্চা বাচ্চা ভাব না,, ও তো পুরাই বাচ্চা। ভেবেছিলো এই মেয়েকে তার মনের অবস্থা টা বুঝাবে। কিন্তু একে কি বলবে,, ও তো বাচ্চা। হাসতে হাসতেই নিবিড় বললো
— আচ্ছা,, তা কি গল্প করবে??

— রাজা রানীর গল্প,, ভুতের গল্প করবো। অবশ্য আমি ভূতে ভয় পায়।
আপনি ভূতে ভয় পান??

— নাহ,, ভূত বলে কিছু হয় না।

— আপনি তো অনেক সাহসী। যেদিন ভূত সামনে আসবে সেদিন বুঝবেন।

মিতুর কথা শুনে নিবিড় আবার হাসলো। খুব হাসি পাচ্ছে ওর। আবার কষ্টও হচ্ছে,। তবে কথাগুলো শুনে ইচ্ছা করছে আরো কথা বলতে মিতুর সাথে। একটা সিগারেট হাতে নিয়ে জ্বালাতে চেষ্টা করলো নিবিড়। হঠাৎ মিতু সিগারেট টা হাত থেকে টান দিয়ে কেউ ফেলে দিলো। নিবিড় অনেকটা বিরক্ত নিয়েই বললো পূন্যর নামটা নিলো, কারন পূন্য ছাড়া অন্য কেউ এই ভাবে ওর সিগারেট ফেলতো না।

— পূন্য,,,

— কি পূন্য,,, সিগারেট খাওয়া একদম ভালো না,, আপনি জানেন আপনি যদি এখন সিগারেট খান তাহলে আপনার সাথে সাথে আমাকেও সিগারেট খেতে হবে এখন। তারপর আমি মারা যাবো তো। সিগারেট খেলে মানুষ বেশি দিন বাঁচে না।

নিবিড় আঁতকে উঠলাম। এই মেয়ে ওর সাথে সিগারেট খাবে মানে?? ও সিগারেট খায় নাকি!!! হালকা গলায় নিবিড় বললো,,

— তুমি সিগারেট খাও??

মিতু— আরে দূর,, গাধা। আমি কেনো সিগারেট খাবো। আপনি সিগারেট খাবেন। ধোয়া ছাড়বেন, আমি আপনার পাশে বসে আছি,, আমি যখন শ্বাস নিবো তখন তো এই ধোয়া নিশ্বাসের সাথে আমি ও নিবো। তার মানে ইনডাইরেক্টলি আমিও সিগারেট খাচ্ছি।

বাহ্,,, এই মেয়ের তো দেখছে অনেক বুদ্ধি, কথার মারপ্যাচ জানে ভালো, হাসলো নিবিড়

মিতু কখন থেকে লক্ষ করছে নিবিড় ওর কথায় হাসছে, কিন্তু মিতু তো হাসার মতো কিছু বলে নি।
মিতু নিবিড়কে বললো,,
— এই আপনি হাসছেন কেনো? আমি ভূল কিছু বলি নি তো।

নিবিড় ওর হাতটা মিতুর হাতের উপর রাখলো,,

— আরে তুমি রাগ করছো কেনো। সরি সরি। আমি আর হাসবো না,আর সিগারেট খাবো না, । আর তোমাকেও সিগারেট খেতে হবে না। আর তোমাকে মরতেও হবে না।

— প্রমিস,,

— প্রমিস।
মিতুর দুটো হাত নিবিড় ওর দু হাতের মুঠোয় এনে বললো। হঠাৎ ভাবলো সে কি করছে এগুলো। মিতুর হাত দুটো ছেড়ে দিলো, উঠে দাড়িয়ে বেলকুনির দিকে পা বাড়ালো। যেতে যেতে মিতুকে বললো

— অনেক রাত হয়ে গেছে। ঘুমিয়ে পড়ো তুমি।
চলবে,,,
#গোধূলি_লগ্ন

#Writer_Tabassum_Tajnim

#Part_8

— অনেক রাত হয়ে গেছে। ঘুমিয়ে পড়ো তুমি।

মিতু হাঁটু ভাজ করে খাটের উপর পা তুলে বসলো,মুখটা হাটুর উপর রাখলো, দূর ভালো লাগে না। ওনি শুধু ঘুমিয়ে পড়ার কথা বলছেন কেনো। গল্প তো এখনও শুরুই হলো না।তার চেয়ে ভালো জোর করে এনে বসিয়ে আরোও একটু গল্প করা যাক,, নাহ্ থাক পরে যদি বকা দেয়, লোকটা খুব রাগি মনে হয়। তারপর আবার ভাবলো না বকা দিবে না। নিবিড় বিছানার পাশেই দাড়িয়ে ছিলো। মিতু নিবিড়ের হাত ধরে টান দিতেই নিবিড় বেসামাল হয়ে মিতুর উপর পড়ে গেলো। নিবিড়ের ঠোঁট মিতুর ঠোঁট স্পর্শ করে গেলো।
একটা অজানা অনূভূতি,, একটা অজানা ভালোলাগা কাজ করছে,অজানা একটা ভয় খেলে গেলো মিতুর মনে,, চোখ বন্ধ করে ফেললো।

নিবিড় উঠে দাড়িয়ে গেলো,,রাগে তার শিরা গুলো ফুলে যাচ্ছে, ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে ঠাস করে একটা চড় মারতে,, কিন্তু কেনো জানি মারতে পারলো না। শুধু কঠিন গলায় মিতুকে বললো,,
—“বলেছি তো ঘুমিয়ে পড়তে,, এখন বসে আছো কেনো?? চুপচাপ শুয়ে পড়ো। ”

মিতু একটু ভয় পেলো, কতোটা রূঢ় গলায় বলেছে কথাটা। আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়লো। এখনও ঘন ঘন নিশ্বাস পড়ছে মিতুর। মনে হচ্ছে আর একটু হলেই মারা যেতাম। বুকের ভিতর ঝড় বইছে। লোকটার স্পর্শে কি যেনো একটা আছে,, মাতাল করে দিচ্ছিলো সেই কয়েক সেকেন্ডে,, কিন্তু শুধু এই লোকটার স্পর্শেই এমন হলো কেনো? আব্বু আর ভাইয়ারা স্পর্শ করলে তো এমন হতো না।

নিবিড় বেলকুনিতে রাখা চেয়ারটাতে বসে পড়লো। তার মতো ছেলের কপালে নাকি এমন বউ?? বাচ্চা মেয়ে!! এই মেয়েকে কিভাবে তার বউ করার জন্য পাগল হলো তার মা- বাবা। বুঝতে পারছে না। একটা সিগারেট জ্বালিয়ে দু আঙুলের ফাঁকে রেখে বাইরের দিকে তাকালো। বাহিরে যেমন অন্ধকারে ছেয়ে গেছে চারদিক,, আজ নিবিড়ের জীবনটাও এভাবে অন্ধকারে ছেয়ে যাচ্ছে। সে বুঝতে পারছে না কি করবে? কিভাবে এই বাচ্চা মেয়েটার সাথে থাকবে?বুঝতে পারছে না কিছু। সিগারেট টা ঠোঁটের মাঝে নিয়ে টান দিলো। সিগারেট টা হাতে নিয়ে হাসলো। এই সিগারেটের মতোই নিভে যাচ্ছে তার জীবনের প্রত্যেকটা আশার আলো। মোবাইলটা হাতে নিলো, ভাবলো পূন্যকে একটা কল দিবে,, নাম্বারটা লিখলো,, কিন্তু কল দিলো না। পূন্য হয়তো এখন ঘুমুচ্ছে,তাই কল দিলো না।

তিয়ান এক দৃষ্টিতে পূন্যর দিকে তাকিয়ে আছে, ঘুমালে যে কাউকে এত সুন্দর লাগে তা আগে জানতো না তিয়ান। এতো মায়াবী চেহারা,হাতটা নিজের অজান্তেই আচল সরে যাওয়া পূন্যর উন্মুক্ত পেটে চলে গেলো।

কারো কান্নার শব্দে তিয়ানের ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। বিছানায় বসে পূন্যর দিকে তাকালো। শাড়িটা পেচিয়ে দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে বসে আছে। তিয়ান এগিয়ে গিয়ে পূন্যর হাতের উপর ওর হাত রাখলো। তারপর বললো,,
—” পূন্য I’m sorry,,,Sorry,, এটা পুরো অনিচ্ছাকৃত ভাবে হয়ে গেছে। আমি ইচ্ছা করে করতে চায় নি এটা।

তিয়ানের কথাগুলো বিষের মতো লাগছে পূন্যর কাছে। বিষের চেয়েও বেশি,,ঝাপসা চোখে তিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,,
—“তাহলে,, আমার ইচ্ছাতে হয়েছে এটা??”

—“দেখো পূন্য,,এটা কে স্বাভাবিক ভাবে নাও। একদিন তো হতোই এটা।”

—” কিন্তু সেই একদিন টা তো কাল ছিলো না।”

—“সেই একদিন টা তো আরোও আগেই এসে গিয়েছিলো।বিয়ের দ্বিতীয় দিন, যে দিন তুমি নিজে এসেছিলে। আমি সেদিন বলেছিলাম যেদিন সময় হবে আমি তোমাকে কাছে টেনে নিবো। তাহলে কেনো এমনভাবে রিয়েক্ট করছো তুমি??ঐদিন যদি কাছে টেনে নিতাম, তাহলে কি করতে???

তিয়ান কিছুক্ষন চুপপ করে রইলো, পূন্যর কান্নার মাত্রা কমার বদলে আরো বেড়ে গেছে। তিয়ানের রাগ উঠে গেছে কিন্তু কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। পূন্যর কোনো উত্তর না পেয়ে তিয়ান আবার বলতে শুরু করলো,,
—” পূন্য, আবেগ দিয়ে কখনো জীবন চলে না। হতে কাল রাতে আমি ভূল করেছি, তাহলে এটাও মেনে নাও কাল তুমিও ভূল করেছো। কারন তুমি হ্যা ও বলো নি আবার না ও বলো নি। পূন্য প্লিজ,, বাস্তবতায় ফিরে আসো, প্লিজ। আমি চাই তোমার আমার সম্পর্ক টা যেনো অন্য সবার মতোই হয়। প্লিজ,, পূন্য,,

পূন্যর হাত দুটো তিয়ান নিজের হাতের মধ্যে নিলো।

পূন্য তিয়ানের দিকে তাকালো,, তিয়ান যা বলছে সব ঠিক বলছে, ওর কথায় যুক্তি আচ্ছে যা পাল্টাতে পারবে না সে। সবাই তো চায় সবার সম্পর্ক টা আর পাঁচটা সম্পর্কের হোক,, তিয়ানও চেয়েছে। তার এতে তো ওর কোনো দোষ নেই। তারপরেও কেনো পূন্য নিজের মনকে বুঝাতে পারছে না। কেনো পারছে না তিয়ানের সাথে একটা স্বাভাবিক সম্পর্কে জড়াতে।

পূন্য নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো,,তারপর উঠে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো। তিয়ান পূন্যর দিকে তাকিয়ে রইলো। ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা লাগানোর পর তিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। কেনো যে সে এই বিয়েটা করতে গেলো,, এই বিয়েটা ওর লাইফটাকে জটিল করে দিয়েছে।
শুধু জটিল নয়,, আরোও কষ্টকর করে তুলেছে।

কোনোমতে শাওয়ার টা ছেড়ে ওর নিচে বসে পড়লো পূন্য। কাল রাতে কি হয়ে গেলো? নাহ্, আমার কালকে তিয়ানকে আটকানো দরকার ছিলো। নিবিড়,,
না,, নিবিড়ের নামটা এখন মন থেকে মুছে ফেলা দরকার। কারন এখন আজ থেকে তিয়ানেই তো সব কিছু। কিন্তু গত চার বছরে যে নাম মনের মধ্যে খোদাই করে রেখেছি, সেটা কি আদৌও মুছতে পারবো!!

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে রইলো কিছুক্ষন। তারপর তিয়ানের দিকে তাকালো। সত্যিই তো ওর কোনো দোষ নেই, কাল যেটা হয়েছে সেটা ভূল হয়েছে না সঠিক হয়েছে জানি না। তবে যাই হোক সেটাকেই এখন থেকে আকড়ে ধরে বাচতে হবে। দেয়লা ঘড়িটার দিকে তাকালো, মাত্র সাড়ে চারটা বাজে। আরোও একটু সময় শুয়ে থাকা যাবে। তিয়ানের পাশে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষন তিয়ানকে দেখলো। তারপর অন্যদিকে ঘুরে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পর তিয়ান পূন্যকে জড়িয়ে ধরলো, হয়তো ঘুমের ঘোরেই জড়িয়ে ধরেছে। পূন্য তিয়ানকে সরালো না।

—“এই যে উঠুন না,, আরে আপনার বিশাল বিশাল হাত পাগুলো সরান,, আমাকে তো মেরে ফেলছেন।”

মিতুর কথা শুনে নিবিড় চোখ খুললো। তার সকাল আটটা নয়টা পর্যন্ত ঘুমানোর অভ্যাস। আর এতো সকাল সকাল এই মেয়েটা ডাকাডাকি শুরু করে দিলো। কয়টা বাজে,, মোবাইলটা খুজে হাতে নিলো। ছয়টা বাজে,,, মিতুর দিকে রাগি চোখে তাকালো,, কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই মিতু বলতে শুরু করলো,,
— ইসসস,, বাবা গো, মরে গেলাম গোওওও হাত পা সরান না।
নিবিড় চমকে গিয়ে উঠে বসলো। মিতুও একহাত দিয়ে আরেক হাত টিপতে টিপতে উঠে বসলো, তারপর নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে বললো,,
— আপনি আমাকে মারার প্ল্যান করেছিলেন নাকি?? অবশ্য আরেকটু হলে মরেই যেতাম। আমি আর এখানে থাকবো না।

কথাটা বলেই মিতু বিছানার উপর দাড়িয়ে গেলো। নিবিড় মিতুকে চুপ করে বসতে বললো,,
—সরি,, আমি একা ঘুমাই তো,, তাই এমন হয়ে গেছে। আজ থেকে মাঝে বালিশ দিয়ে রাখবো।

নিবিড়ের কথা শুনে মিতু বিছানায় ধপ করে বসলো। বিছানাটা কেঁপে উঠলো। নিবিড় বিরক্ত চোখে মিতুর দিকে তাকিয়ে বললো,,

— আাহ্,,, এভাবে কেউ বসে নাকি। এই শুনো তুমি যথেষ্ট বড় হয়েছো,, নিজের বুদ্ধি টাকে কাজে লাগাও। শশুর বাড়িতে এভাবে এই রকম বিহেইভিয়ার নিয়ে দুইদিনের বেশি ঠিকতে পারবে না। আর এখন চুপচাপ শুয়ে থাকো, নাহলে এই রুম থেকে বেরিয়ে যাও। আমি ঘুমাবো, ডিস্টার্ব করো না।

মিতু কোনো কথা বললো না, কারন তার কান্না পাচ্ছে,, এই লোকটা তার সাথে এমন বিহেইভিয়ার করে কেনো?? কাল রাত থেকেই ধমকাচ্ছে। আমি কি এমন করলাম যে এভাবে বললো। চুপচাপ ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। লাল রং টা ওর বেশ প্রিয়। তাই বেছে বেছে লাল রংয়ের শাড়িটাই পড়লো।

নিবিড় চোখ বন্ধ করে শুয়েছিলো। ঘুম আসছে না তার। এতো সকালে ঘুম ভাঙিয়ে দিলো। গুন গুন গানের আওয়াজ পেলো,, চোখ খুললো দেখার জন্য কে গান গাইছে। কন্ঠ টা খুব মিষ্টি, একেবারে পূন্যর গলার মতো। চোখ খুললে মিতুকেই দেখতে পেলো, নিবিড় উঠে বসলো। মিতুর দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো, কেনো জানি মিতুকে অসম্ভব ভালো লাগছে। অনেক সুন্দর লাগছে ওকে।
নিবিড় কে উঠে বসতে দেখে মিতুও ওর পাশে এসে বসে বললো,,
—“আপনি না ঘুমাবেন?? তা উঠে বসলেন যে??”

নিবিড় কিছু না বলে মিতুকেই দেখছে।মিতু আবার বললো,, কিন্তু কোনো উত্তর না পেয়ে নিবিড়ের মাথায় চাপড় দিলো। এটা মিতুর অভ্যাশ, কেউ ওর সাথে কথা বলতে বলতে অমনোযোগী হলেই তার মাথায় চাপড় দিবে। নিবিড়ের ক্ষেত্রেও এর অন্যথা হলো না।
চাপড় খেয়ে নিবিড়ের হুশ ফিরলো,, মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে মিতুর দিকে তাকালো,, ততক্ষণে মিতু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বসে আছে।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here