#তুমি_বললে_আজ
লেখনীতেঃ #রিধিমা_জান্নাত_রূপা
পর্বঃ ১৮
.
ঘুটঘুটে অন্ধকারে এক বিন্দু আলোর রেখা পেলে মানুষ যেমন আশার আলো ফিরে পায় ঠিক তেমনি তাসফি ভাইয়াকে দেখার পর শুকিয়ে যাওয়া গলায় পানি ফিরে পেলাম আমি। ঠোঁটের কোনে অজান্তেই এক চিলতে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। এই সিনিয়রদের পিরায় পড়ে আমি তাসফি ভাই আসার কথা ভুলেই গেছিলাম। কি করে ভুলে গেলাম আমি ওনার কথা?
“দোস্ত আর কাউকে পাইলি না? তাসফি ভাইকেই চোখে পরলো কিস করার জন্য। আশেপাশে তো আরও ছেলে ছিলো।”
শাফিন নামের ছেলেটি কিছুটা ভীতু গলায় বললো। এবার আমার হাসিটা যেন আরও চওড়া হলো। এটাও সরণে এলো উনি তো সাদা শার্ট পরে এসেছেন, তাহলে এতক্ষণ এরা তাসফি ভাইয়ের কথায় বলছিলো। এদের ভীতু চেহারা দেখে ভীষণ মজা পেলাম আমি কিন্তু তা প্রকাশ করলাম না।
এবার তাসফি ভাইয়া হয়তো আমাকে খেয়াল করলেন। মনে হচ্ছে আমাকেই হয়তো খুঁজছিলেন। সোজা এগিয়ে আসতে লাগলেন সামনের দিকে।
“উফ্ আমার ক্রাশটা আমার দিকেই আসছে। তোরা এই মেয়েকে ছেড়ে দে দোস্ত, এর পরিবর্তে আমি কিস করি ওনাকে।”
সুমি নামের মেয়েটার কথায় আপনা-আপনিই ভ্রু দু’টো কুঁচকে গেল আমার। কত্তো বড় সাহস, আমার সামনেই আমার ফুপাতো বরকে কিস করতে চায়। আমি-ই আজ পর্যন্ত চুমু টুমুর ধার দিয়ে যেতে পারলাম না, আর এই মেয়েটা চুমু খাওয়ার জন্য লাফাচ্ছে। মনে হচ্ছে চুলগুলো টেনে ছিঁড়ে ফেলি।
তাদের মাঝে আরেকটি মেয়ে বলে উঠলো,
“উফ্ দোস্ত শুধু কিস কেন? এভাবে দেখে তো আমার পুরোই গিলে খেতে ইচ্ছে হচ্ছে।”
মেয়ে দু’টো কে ধমক দিয়ে জিসান নামের ছেলেটি বললো,
“থাম তোরা, রোমাঞ্চকর সিন দেখার কথা ভুলে গিয়ে র্যাগিং-য়ের কথাও ভুলে যা। তাসফি ভাইয়ের সামনে তো একদমই মুখে আনিস না।”
কথাটা শেষ হবার পরেই তাসফি ভাইয়া এসে দাঁড়ালেন সবার সামনে। জিসান নামের ছেলেটার কথা হয়তো শুনতে পায় নি উনি। উনি এসে দাঁড়াতেই মেয়েগুলো ফ্যালফ্যাল করে তাকালো। মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই গিলে খাবে ওনাকে। ছেলেগুলো মুখে হাসি ঝুলিয়ে ওনাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“আরে তাসফি ভাই, আপনি এখানে?”
উনি গম্ভীর চোখে আমার দিকে একবার তাকালেন। তারপর সবার উদ্দেশ্য বলে উঠলেন,
“এই তো, আসতে হলো আর কি। কি হচ্ছে এখানে?”
“না ভাইয়া তেমন কিছু না, আসলে…..”
“কি তেমন কিছু না? এতক্ষণ তো একা একটা মেয়েকে পেয়ে খুব তো কথা বের হচ্ছিলো, এখন কি হলো? এতক্ষণ যে র্যাগিং করছিলেন বলেন ওনাকে।”
ফট করে বলে উঠলাম আমি। শাফিন নামের ছেলেটার ভীতু কণ্ঠে স্পষ্ট বুঝতে পারছি মি. তাশরিফ রওনাফ তাসফি কে ভয় পায় এরা। হয়তো ভার্সিটির বড় ভাই হিসেবে সম্মানও করে অনেক। তাই আমিও এই সুযোগটাই নিলাম। যদিও মনে হয় তাসফি ভাইয়া ওদের তেমন একটা কিছু করবে না, তবুও সুযোগটা হাতছাড়া করতে ইচ্ছে হলো না। আর ক্যাম্পাসের সবার সামনে চুমু খাওয়ার কথা বলেছে, এটা শুনলে নিশ্চিত একটা ধমক তো দিবেই এদের। আমার কথা শুনে ছেলেগুলোর মুখ চুপসে গেল যেন। একটা ছেলে ভয়ে ভয়ে বলতে লাগলো,
“তাসফি ভাই, আসলে তেমন কিছু না। আমরা তো….”
ছেলেটাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে আমি আবারও বললাম,
“আপনারা কি? বলেন। দেখুন না এনারা সবাই মিলে আমায় র্যাগিং করা শুরু করছে। বলে কি না আপনাকে গিয়ে কিস করতে। কত্ত বড় সাহস ছেলেগুলোর।”
“ওও আচ্ছা…”
নির্লিপ্ত ভাবে বললেন তাসফি ভাইয়া। গম্ভীর মুখে হঠাৎ অদ্ভুত এক হাসির রেখা ফুটে উঠলো ওনার। এভাবে হাসার মানেটা ঠিক ধরতে পারলাম না আমি। আমার দিক থেকে চোখ সরিয়ে সেই ছেলেমেয়ে গুলোর দিকে তাকালো। এমন ভাবে তাকালেন যেন আমাকে চিনেই না। এই প্রথমবার দেখলেন আমাকে। জিসান নামের ছেলেটির কাঁধে হালকা করে বারি দিয়ে বলে উঠলেন,
“আরে জিসান এত ভয় পাচ্ছিস কেন? জাহিদের মতো আমিও তো তোর ভাই। তাছাড়া ভার্সিটির ভাই বলে তোরা আমাকে ভয় পাবি এটা কিন্তু ঠিক না।”
“ভাইয়া আসলে আমরা….”
“ভয় পাচ্ছিস কেন? এটাই তো এনজয় করার সময়। আমরা চলে যাবার পর তো এখন তোরাই ভার্সিটির বড় ভাই। জুনিয়রদের দিয়ে এখন র্যাগিং করবি না তো আর কখন করবি? তোদের সময়ে আমরাও একটু আধটু র্যাগিং করেছি। সো চালিয়ে যা।”
থতমত খেয়ে গেলাম আমি। উনি? ওনার হঠাৎ হলো টা কি? এ তো দেখি পুরাই পাল্টে গেল। ছেলেটার সাথে যেভাবে কথা বলছেন, মনে হচ্ছে ওনার হারিয়ে যাওয়া ভাই ফিরে পেয়েছেন। তীক্ষ্ণ নজরে তাকালাম ওনার দিকে। রেগে উঠে বলতে লাগলাম,
“আপনি? আপনি এসব কি বলছে….”
“জিসান, তো শুরু কর এবার। অনেক দিন র্যাগিংয়ের মজা পাই না। আমাকে দেখে একদম ভয়-টয় পাবি না। মেয়েটাকে যেটা বলছিস সেটা করতে বল।”
আমাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই তাসফি ভাইয়া বললেন। সবাই এবার হো হো করে হেঁসে উঠলো। মনে হচ্ছে আকাশের চাঁদ পেয়ে গেছে। রাগ হলো আমার, ভীষণ রাগ হলো। মনে হচ্ছে এই বজ্জাত-বদমাশ লোকটার গলা টিপে ধরি। আমি কিছু বলার আগেই একটা ছেলে বলে উঠলো,
“কিন্তু ভাই, শাফিন তো আপনাকে কিস করতে বলেছে…”
ছেলেটার কথায় আমার দিকে তাকালেন তাসফি ভাইয়া। আবারও সেই অদ্ভুত একটা হাসি দিলেন। হাসি মুখে তাকিয়েই বললেন,
“তো কিস করতে বল মেয়েটাকে। প্রথম দিন বলে কথা, তোদেরও তো কিছু অধিকার আছে জুনিয়রের প্রতি। প্রথম দিনেই কিছু করতে না পারলে পুরো বছর টিকবি কি করে? এই মেয়ে শুরু করো।”
“আপনি কিন্তু এবার বারাবাড়ি করছেন। এনাদের সাথে আপনিও শুরু করলেন এখন? পারবো না আমি আপনাকে চুমু খেতে।”
অনেকটা চিৎকার করেই বলে উঠলাম আমি। বদমাশ অসভ্য লোক কোথাকার। কি করে ভাবলো এই ভরা ক্যাম্পাসে কিস করবো ওনাকে। আরে বেটা রুমে যে নাক ডেকে পড়ে পড়ে ঘুমাস, তবুও তো ছোঁয়ার সাহস পাই না। আর এখন কি না সবার সামনে কিস করতে বলে? তারপর আমার গালটা যে আর গাল থাকবে না সেটা তো আমার খুব ভালো করেই জানা আছে। এমন ভাব করে আছে যেন আমাকে চিনে না। অসহ্য লোক একটা। আর থাকবোই না এখানে, যা হবার হোক। রাগে কটমট চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে পা বাড়ালাম সামনের দিকে। কিন্তু যেতে পারলাম না, আঁটকে গেলাম হঠাৎ। মাথা ঘুরিয়ে দেখি তাসফি ভাইয়া আমার হিজাবের এক কোণা টেনে ধরে আছেন। বললেন,
“এই মেয়ে, শুনতে পাচ্ছো না সিনিয়ররা কি বলছে? যা বলছে সেটা তাড়াতাড়ি শেষ করে তবেই যাও।”
এবার আরও রাগে ফুশে উঠলাম আমি। বজ্জাত লোকটা কি পেয়েছে টা কি আমাকে? হিজাবের একটা পিন শুধু ছুটুক, তারপর আমিও দেখে নিবো ওনাকে। মাথার চুলগুলো একটাও আস্ত রাখবো না আর। এর মাঝে সুমি নামের মেয়েটা আমাকে ছেড়ে দেবার কথা বললো ওনাকে। সেই ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়েও বারণ করলো না করতে। কেউ পাত্তা দিলো মেয়েটার কথায়। আমার রাগের মাত্রা বাড়লো বৈ-কি কমলো না। রাগী চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলাম,
“আপনি কিন্তু এবার আ..আম্….”
শেষ করতে পারলাম না কথাটা। তার আগেই উনি আমার এক হাত ধরে কাছে টেনে নিলেন। আমার দিকে একটু ঝুকে আস্তে করে বলে উঠলেন,
“কি হলো? ওরা যেটা বলছে সেটা কর। না করলে কিন্তু এর থেকেও বড় কিছু করতে বলবে, তখন আমিও বাঁচাতে পারবো না। আর না হলে ভার্সিটিতে কিন্তু টিকতে দিবে না।”
“দেখুন আপনি কিন্তু ও….”
হঠাৎ সড়ে গেলেন উনি। তারপর জোরেই বলে উঠলেন,
“জিসান, গতবার যে একটা মেয়ে সিনিয়রের কথা অমান্য করে টিকতে পারলো না ভার্সিটিতে, মনে আছে তোদের? তুমিও কি তাই চাও? সো ভালোই ভালোই ওরা যেটা বলেছে শুরু করো।”
এবার কিছুটা ভয় ঢুকে গেল মনে। কোথায় ভাবলাম ওনাকে দিয়ে এই বদমাইশ ছেলেগুলোকে মজা দেখাবো, কিন্তু উল্টো আমিই ফাঁদে পড়ে গেলাম। আমার তো মনে রাখা উচিত ছিলো এই বজ্জাত লোকটা আমাকে সাহায্য করবে না কিছুতেই। এখন তো এদের সামনে আমাকে অপরিচিত ভাবে ট্রিট করছে। ছেলেগুলো খুব মজা পাচ্ছে মনে হয়। এদের হাসি দেখে মনে হচ্ছে দাঁত গুলো টেনে টেনে তুলে ফেলি। মনে হচ্ছে না প্রথম দিনে সবার সামনে সম্মানটা খোয়াতে হবে। তবুও বাঁচার একটা চেষ্টা করা উচিত। তাই ওনাকে বলতে লাগলাম,
“আপনাকে আ…”
“এই মেয়ে, তাসফি ভাই কি বললো শুনতে পাও নি? তা না হলে কিন্তু বেশিদিন টিকতে পারবে না ভার্সিটিতে।”
এবার রীতিমতো কান্না পাচ্ছে আমার। বজ্জাত লোকটাও সুযোগ নিচ্ছে। নিজের মানুষ না বাঁচিয়ে খুব করে সুযোগে নিচ্ছে আমার। হঠাৎ মনে হলো, আরে আমি তো আর অন্য কাউকে চুমু দিবো না। দিবো তো আমার বরকেই। এতদিন বন্ধ রুমে যেটা করতে পারি নি আজকে সবার সামনে করবো, এটাই পার্থক্য শুধু। আমার তো ভয় পাবার কিছু নেই। ইস্ এই কথাটা এতক্ষণে মাথায় আসতে হলো আমার? রূপা, তুই আসলেই একটা গাধী। উনি ঠিক কথায় বলেন।
হঠাৎ বুকে টিপটিপ শব্দটা শুরু হতে লাগলো। ভেবেই নিলাম এখানে আমার না কথা টা আর টিকবে না। ভয়, লজ্জা, অস্বস্তি সহ ওনার দিকে এগিয়ে গেলাম কিছুটা। সবার সামনে ওনাকে চুমু খেতে হবে ভাবতেই হাজারো লজ্জায় ঘিরে ধরেছে আমাকে। মাঝে একটা মেয়ে আস্তে করে বলে উঠলো, ‘মেয়েটার যে ঠিক কি অবস্থা হবে, সেটা কল্পনাও করতে পারছি না দোস্ত’।
তাসফি ভাই হয়তো মেয়েটার কথা শুনতে পাই নি।
কথাটা কানে আসতেই চোখ বন্ধ করে নিলাম, জোরে শ্বাস নিলাম দু’বার। আমার বুকের টিপটিপ শব্দটা আরও বেড়ে গেল যেন। চোখ বন্ধ করেই আরও এগিয়ে ওনার গালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলাম। সময় নষ্ট না করে সাথে সাথেই সরে আসলাম ওনার থেকে। বুকের ধুকধুক শব্দটা দ্বিগুণ থেকে দ্বিগুণ হয়ে গেল। হাত পা কেঁপে উঠলো কিছুটা৷ উফ্, কি করে করলাম আমি এটা? ওনার সামনে দাঁড়াবো কি করে এখন আমি। না… আর কিছুতেই এখানে থাকা যাবে না। ছুটে আসার জন্য পা বাড়াতেই আবারও আঁটকে গেলাম আমি। এবার হাত ধরে নয়, কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে নিলেন আমাকে। ওনার চোখে চোখ পরে গেল আমার। তাকিয়ে থাকতে পারলাম না বেশিক্ষণ। ছেড়ে দেবার জন্য হাত ছুটাতে লাগলাম। আস্তে করে বললাম,
“ক্..কি করছেন? সবাই দেখছে তো… ছাড়ুন না।”
ওনার থেকে নিজেকে ছুটিয়ে সরে আসলাম কিছুটা। সামনের দিকে তাকালাম। সবাই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। সবার এভাবে তাকানো দেখে ভীষণ লজ্জা লাগছে আমার। কেউ হয়তো বিশ্বাসই করতে পারছে না কি হলো হঠাৎ। মেয়েগুলো এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন এখনি তাদের চোখ খুলে যাবে। একরাশ লজ্জা আর অস্বস্তি নিয়ে নিচের দিকে তাকালাম। আমাকে এভাবে দেখে তিনি হঠাৎ বলে উঠলেন,
“এটাকে কি কিস করা বলে? মনেই তো হলো না। আর একটু ডিপলি করলেই পারতা। অন্য কাউকে তো নয়, নিজের বরকেই তো কিস করছো।”
চমকে উঠে তাকালাম ওনার দিকে। কি অসভ্য একটা মানুষ, সবার সামনে এভাবে না বললেই কি নয়। এবার সবার চোখ যেন আরও বড় হয়ে গেল। কথাটা মনে হয় হজম করতে পারলো না। জিসান নামের ছেলেটি বড়বড় চোখ করেই ওনাকে বললো,
“তাসফি ভাই, এই মেয়েটা আপনার….”
“আমার একমাত্র বিয়ে করা বউ, তোদের ভাবী। ভাগ্যিস আমাকেই কিস করার কথা বলেছিস। আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে কিন্তু তোরাও এতক্ষণে এখানে থাকতে পারতি না।”
“ভাই আসলে আমরা জানতাম না যে…”
“পরের বার থেকে জেনে রাখিস। আর ওকে যেন কেউ ডিস্টার্ব না করে, সেটা মাথায় রাখিস।”
তাসফি ভাইয়ার কথায় থমকালাম আমি। কত্তো ইজিলি ভাবে আমার বউ, আমার বউ বলে যাচ্ছে। অদ্ভুত এক শিহরণ বয়ে গেল মন জুড়ে। হঠাৎ কেন জানি ভালোলাগা শুরু হলো। অন্য এক অনুভূতিতে পরিচিত হতে লাগলাম।
ছেলেমেয়ে গুলোর দিকে তাকিয়ে প্রচন্ড হাসি পেল। খুব করেই জব্দ হয়েছে বুঝতেই পারছি। কিছু না বলে চুপ করেই থাকলাম আমি। মেয়েগুলোর অবস্থা যে আরও বেশি শোচনীয় সেটা খুব বুঝতে পেরেছি। তাসফি ভাইয়া আর কিছু বললেন না ওনাদের। আমার হাত ধরে বললেন,
“চলো, ক্লাসের দেরি হয়ে যাবে কিন্তু।”
প্রতিত্তোরে কিছু না বলে যেতে লাগলাম ওনার সাথে। কেন জানি মনে হলো রেগে আছেন উনি। মুহুর্তেই আমার ভাবনাকে সত্যি করে রাগটাও ঝেড়ে ফেললেন। বললেন,
“ফোনটা আমাকে দিয়ে দিবি একেবারে, দরকার নেই তোর ফোর চালানোর। ফোন দিলো যে রিসিভ করে না তার ফোন না চালানোই বেটার।”
থামলেন উনি। এবার বুঝতে পারলাম ওনার রাগের কারণ। রাতে যে সাইলেন্ট করে রেখেছিলাম, খোলার কথা তো মনেই নেই। উনি আবারও বললেন,
“চুপচাপ এক জায়গায় না দাঁড়িয়ে চরকির মতো ঘুরছিলি কেন? তবেই তো ওরা সুযোগটা পেয়েছে। আমি না থাকলে কি হতো, বুঝতে পারছিস? বেয়াদব! ”
“আমি তো….”
“চুপ… কথা বন্ধ করে চল আমার সাথে।”
বললাম না আর কিছু আমি। চুপচাপ তাল মিলিয়ে হাঁটতে লাগলাম ওনার সাথে।
.
“ফাস্ট ইয়ারের ক্লাস রুমটা কোনটা?”
“জানি না তো। আসলে, আমিও আজকে নতুন তো তাই।”
“ওও আচ্ছা, এখানে দাঁড়িয়ে আছো তার মানে এই ডিপার্টমেন্টের?”
“হুম।”
খুশি হয়ে গেল মেয়েটা। সে মাথা নাড়িয়ে বললো আমিও। মেয়েটাকে না চিনলেও ভালো লাগলো কথা বলে। তাসফি ভাইয়া তখন আমাকে নিয়ে এসেছেন। ক্লাসরুম কোনটা সেটাই দেখাতে। কিন্তু কিছু একটা ভেবে আমাকে এখানে দাঁড়াতে বললেন কিছুক্ষণ। ধমক দিয়ে বলে গেলেন কোথাও যেন না যাই, উনি এক্ষুনি চলে আসবেন। আমিও বাধ্য মেয়ের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎ সামনের মেয়েটা এসে জিজ্ঞাসা করে আমাকে। সেম ক্লাস বলে হয়তো অনেক খুশি হয়েছে। আমিও কিছুটা খুশি হলাম। সামনের মেয়েটা বলে উঠলো,
“চলো, দাঁড়িয়ে না থেকে দুজনে মিলে ক্লাস রুমটা খুঁজে নেই।”
“না… মানে আমার সাথে একজন আছেন তো, উনি দাঁড়াতে বললেন।”
“ও আচ্ছা, তাহলে আমিও দাঁড়ায়। তোমার সাথেই কথা হলো, কাউকেই তো চিনি না।”
হাসলাম মেয়েটার কথায়। বোঝালাম আমিও তো কাউকে চিনি না। টুকটাক কথা বলতে লাগলাম। এর মাঝে নামটাও শুনে নিলাম দুজন দুজনের। মেয়েটার নাম মৌশি। যাক একজনের সাথে তো পরিচয় হলো, তাও দু একটা কথা বলা যাবে। এর মাঝেই তাসফি ভাইয়া এসে বলে উঠলেন,
“চল, ওই দিকে তোর ক্লাস রুম।”
তাসফি ভাইয়াকে দেখে মৌশি অবাক হয়ে বলে উঠলো,
“ভাইয়া আপনি এখানে?”
“আরে মৌশি যে, এখানে কি করে?
” ফাস্ট ইয়ার। আপুর জন্য আব্বু আম্মুর যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে আমি চান্স নিলাম এখানে। আপনি একে চিনেন?”
“এই গাধী-টাকেই তো আনতে হলো। একে চিনো কিভাবে?”
“মাত্রই পরিচিত হলাম।”
“যাক ভালোই হলো। একে একটু দেখে রেখো। ঢাকা শহরে নতুন, তেমন কিছুই চেনা নেই। মিশমির কি খবর?”
“আপনি চিন্তা করবেন না ভাইয়া। আপু তো এখন মনোযোগ সহকারে সংসার সামলাতে ব্যাস্ত।”
বলেই হাসলো মৌশি, তাসফি ভাইয়াও হেসে উঠলেন। বজ্জাত লোকটা সবার সাথেই সুন্দর হাসি মুখে কথা বলে, কি আমি? আমার সাথে কথা বলতে গেলেই যত বিরক্তি এসে পরে ওনার মুখে। ওনাদের কথায় যতটুকু বুঝতে পারলাম তা হলো, মৌশির বড় বোন ওনার বান্ধবী ছিলো। আরও কিছুক্ষণ কথা বলে ক্লাস রুম দেখিয়ে দিলেন। যাবার আগে ধমকের সুরে সুন্দর করেই বলে গেলেন, যেন পন্ডিতি করে বাসায় ফিরতে যাই। উনি এসে নিয়ে যাবেন। আমিও ভদ্র মেয়ের মতো সায় জানিয়ে বিদায় দিলাম ওনাকে। বজ্জাত লোক, যতক্ষণ থাকবে শুধু জ্বালিয়ে যাবে আমাকে।
.
.
(চলবে…..)
রিচেক করার সময় পাই নি, ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কেমন হয়েছে জানাতে ভুলবেন না।