#তুমি_বললে_আজ
লেখনীতেঃ #রিধিমা_জান্নাত_রূপা
পর্বঃ ০৩
.
একমুহূর্তের জন্য মনে হলো হয়তো আকাশের ঝলমলে রুপালি রঙের চাঁদটা আমার হাতে এসেছে। এই মুহুর্তে খুশির চোটে আবেগপ্রবণ হয়ে গেছি প্রায়। এই ‘লুপা’ ডাকটা অসম্ভব রকমের ভালো লাগে আমার কাছে, কিন্তু এই মুহুর্তে যে কেমন লাগছে তা বলে বোঝাতে পারবো না হয়তো। তাসফি ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম অনেকটা স্বাভাবিক রুপে ফিরে এসেছেন এতক্ষণে। মনে মনে আল্লাহকে অসংখ্য বার শুকরিয়া জানালাম। মলিন মুখে হাসি ফুটিয়ে পিছনে তাকালাম, ঠোঁটের কোণের হাসিটা আরও বিস্তৃত হলো আমার। কিছু বলার আগেই গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে আবারও চিৎকার করে বলে উঠলো,
“লললুপা আপু….”
নিমিষেই আরও শতগুণ ভালো হয়ে গেল আমার মনটা। ফট করে কোলে তুলে নিয়ে একহাত দিয়ে গালটা টেনে বলে উঠলাম,
“আতু বুড়ি..!”
খিলখিল করে হেসে উঠলো আমার সাড়ে তিন বছরের পিচ্চি চাচাতো বোন আতিফা। কেন জানি এই পিচ্চিটার পুতুলের মতো মুখ, মিষ্টি মিষ্টি কথাগুলো আমার মন বিশাল পরিমাণের ভালো হওয়ার একটা কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আজ কতটা দিন পর পিচ্চিটাকে দেখতে পেয়ে ভীষণ রকমের খুশি লাগছে।
বড় বাবা ও আব্বুর চাচাতো ভাই হলেন আতিফার বাবা আহতাফ কাকু। সবগুলো চাচাদের মাঝে তিনিই হলে সবার ছোট। লেখাপড়া শেষ করে চাকরি তে ঢুকে তারপরই বিয়ের গন্ডি পেরোয় তিনি। আহতাফ কাকুর ছেলে আবিদ হবার বছর তিনেক পর তাদের কোলে আসে এক ফুটফুটে মেয়ে। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে আমার নিস্পাপ ভাইটার মতোই মায়া ত্যাগ করে পৃথিবীর। তারপর চাচী কোন বাচ্চা না নেবার সিদ্ধান্তে অটল থাকলেও আল্লাহর নিয়ামতে প্রায় কয়েক বছর পর ফুটফুটে পুতুলের মতো আতিফার জন্ম হয়। পুরো পরিবারের সবার সাথেই আতিফার খুব ভালো মেলামেশা থাকলেও আমার সাথে যেন ওর বন্ডিংটাই একদম অন্যরকম। চাকরির জন্য চাচী ও দুই সন্তান নিয়ে ফেনী তে থাকতে হয় আহতাফ কাকুর। শহরে এত বছর থাকলেও চাচী বরাবরই গ্রাম ভীষণ পছন্দ করে। কাকু চাকরির জন্য গ্রামে আসতে না পারলেও চাচী ঠিকই ছেলেমেয়ে দু’টো কে নিয়ে নিয়ম করে প্রতি মাসেই আসে ফেনী থেকে। তাই মাঝে মাঝে গ্রামে গেলেই দেখা হতো তাদের সাথে। কিন্তু এবার প্রায় কয়েক মাস পর রিমি আপুর বিয়ে উপলক্ষে দেখা। আতিফাকে দেখার পর অনেক আবেগপ্রবণ হয়ে পরেছি যেন। ওর গালে হাত রেখে বললাম,
“কেমন আছো আতিফা বুড়িটা?”
আমার কথা শুনে তার ছোট ছোট অস্পষ্ট আধো বুলিতে বলে উঠলো,
“খুববব ভালো।”
পিচ্চির কথাটা শুনেই জড়িয়ে ধরে ওর নরম গালে গভীরভাবে একটা চুমু খেলাম। তারপর আমার গালটা ওর দিকে বাড়িয়ে বললাম,
“আমাকে একটা আদর করে দিবা না?”
সাথে সাথে আমার গাল, কপাল, নাক সহ পুরো মুখে চুমুতে ভড়িয়ে দিলো আতিফা। সত্যিই, এই মেয়েটার ভালোবাসা মাঝে মাঝে ভীষণ অবাক করে দেয় আমাকে। আমিও গভীর করে আরও একটা চুমু দিলাম ওর গালে। দুজনের খিলখিল করে হেসে উঠলাম।
“উফ্! তাসফি তোর কপালে এগুলো নাই। কন্ট্রোল কর নিজেকে।”
তাসফি ভাইয়ার ধীর কণ্ঠের কথাটার কিছু কানে আসতেই চুপ হয়ে গেলাম সাথে সাথে। এতক্ষণে তো ভুলেই গেছিলাম এই বজ্জাত লোকটাও এখানে আছে। কিন্তু আতিফার সামনে আমাকে কিছু বলবেন না উনি, এতেই শান্তি। কতটা বজ্জাত হলে, বাচ্চা মেয়ে আমাকে একটু আদর করলে তার হিংসা হয় যে এভাবে বলতে পারে? ভেবেই রাগ হতে লাগলো আমার। আমাকে অনুসরণ করে আতিফাও তাকালো তাসফি ভাইয়ার দিকে। তারপরই শুরু হয়ে গেল আমার কোল থেকে নামার জন্য তার উদগ্রীবতা। আমার কোল থেকে নেমে ছুঁটে গিয়ে তাসফি ভাইয়ার কোলে চড়ে গেল। তারপরই শুরু হলো আতিফার বিখ্যাত আদরের বর্ষণ। হতাশ হলাম আমি, উনাকে তো বলতেও হলো না আদর করে দেবার কথা। একটুও অবাক হলাম না আমি বরং আরও রাগ যুক্ত হলো তাসফি ভাইয়ার উপর।
গত ছয় মাস আগে কোন জরুরি একটা কাজে ফেনী গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে দশ-বারো দিনের মতো থাকতেও হয়। আহতাফ কাকুর ওখানেই উঠেছিলেন। তারপর থেকেই আতিফার সাথে উনার বন্ডিংটা ঠিক আমার মতোই গড়ে উঠেছে। মাঝে মাঝে মনে হয় আমার থেকেও হয়তো অনেকটা বেশি। এটা মনে হতেই আরও একধাপ রাগ বেড়ে যায় উনার প্রতি।
তাসফি ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেঁসে আতিফার দু’গালে আমার থেকেও গভীর করে চুপু দিলো। তাও কোথায়? আমার ঠোঁটের লিপস্টিকের দাগ যেখানে স্পষ্ট, ঠিক সেখান টায়। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে আবারও উনার সেই বিখ্যাত বাঁকা স্টাইলে হেঁসে উঠলেন। এই হাসিটা হাজারো মেয়ের মন কারা হলেও আমার এই মুহুর্তে ঠিক সহ্য হলো না। ভিতর ভিতর জ্বলে উঠলাম যেন।
“তাফি ভাইয়া আমাল চকলেট কোতায়?”
আতিফার কথায় ওর দিকে ফিরে তাকালেন তাসফি ভাইয়া। ওর গালে হাত রেখে বললেন,
“আতু বুড়ির চকলেট চাই তো? এক্ষুনি এনে দিচ্ছি। কিন্তু তার আগে তো নতুন বউকে হলুদ লাগাতে হবে। তাই না?”
আতিফাও মাথা নাড়ালো তাসফি ভাইয়ার কথায়। উনার কোল থেকে নামতে চাইলেই বললেন,
“কি হলো নামছো কেন? যাবে না আমার সাথে?”
“না না! আমি তো লুপা আপুর সাথে যাবো। দেখো আমাদের জামাও এক, তাই লুপা আপুর সাথেই যাবো।”
চকচক করে উঠলো আমার চোখ দুটো আতিফার কথায়। উফ্ এই মুহূর্তে আমার মনে হচ্ছে জিতে গেছি আমি এই বজ্জাত লোকটার থেকে। তাই তাড়াতাড়ি করে হাত ধরে টেনে নিয়ে আসতে লাগলাম ওকে তাসফি ভাইয়ার থেকে। বললাম,
“ছাড়েন ওকে, দেখছেন না ও আমার সাথে যেতে চাচ্ছে। এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে, এখন আপনার জন্য দেরি হচ্ছে। সেই তো পরে আমাকেই বকাঝকা শুরু করবেন।”
“ছেলেদের দেখানোর জন্যই তো পেতনি সাজতে দেরি করিস, আর বলিস আমার জন্য দেরি হচ্ছে? তোর তো সাহস কম না, চরম লেভেলের বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস তে দিন কে দিন।”
চুপ হয়ে গেলাম আমি। মনে হচ্ছে এই বজ্জাত লোকটার গলাটা টি*পে ধরি এখনি। উনার জ্বালায় আজ পর্যন্ত কোন ছেলের সাথে ঠিক মতো ফ্রেন্ডশিপও করতে পারলাম না, আর বলে কিনা ছেলে মানুষকে দেখানোর জন্য পেতনী সেজেছি। হু! এখন অবশ্য এসব কথায় সহ্য করতে শিখে গেছি। কারণ প্রায়ই আমাকে উনার কাছে থেকে এসব কথা শুনতে হয়।
আতিফা এতক্ষণ আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকলেও এখন সেও হয়তো বিরক্ত। বারবার আমার হাত ঝাঁকিয়ে যাচ্ছে। আমার কোন সাড়া না পেয়ে এবার বলে উঠলো,
“ওওও লুপা আপু চলো না, আপু বউয়ের কাছে যাবো।”
ধ্যান ভাঙ্গলো আমার। তাসফি ভাইয়ার থেকে চোখটা সড়িয়ে ওর দিকে তাকালাম। ঠোঁটের কোনায় হাসি এনে বললাম,
“ওলে বাবা লে, এইতো যাচ্ছি আতু বুড়ি। চলো!”
আর দাড়ালাম না ওখানে। আতিফার হাতটা ধরে হাঁটতে লাগলাম এবার। যেতে যেতে একবার পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলাম, আমাদের যাবার দিকে বাঁকা হেঁসে তাকিয়ে আছেন তাসফি ভাইয়া। বুঝলাম না সবসময় কেন তার এই বিখ্যাত বাঁকা স্টাইলে হাসতে হবে? হাঁটতে হাঁটতে বিরবির করে বলে উঠলাম,
“অ*সহ্য অ*সভ্য বজ্জাত একটা মানুষ।”
.
এক আকাশ সমান হতাশা নিয়ে হলুদের টেজের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরলাম আমি আতিফার হাত ধরে। এত এত ভয় ভীতি যেন হঠাৎ করেই তুচ্ছ মনে হতে লাগলো আমার কাছে। ওই বজ্জাত লোকটার সাথে সাথে এখন রিফাপুকেও আচ্ছা করে ধো*লাই দিতে মন চাচ্ছে। হাড়িয়ে ফেলা রাগটাও যেন আবার ফিরে এসেছে। আসবে নাই বা কেন? বরং আরও অতি উচ্চ পরিমাণের রাগ ফিরে আসার কথা। আমাকে এত পরিমাণের তাড়া দিয়ে রেডি করিয়ে এখনও তাদের ফটোসেশান করায় শেষ হয় নি।
আমাকে দেখে কাজিন দল তাকিয়ে থাকলেও রিফাপু এগিয়ে আসলো। উপচে পরা খুশি নিয়ে বলতে লাগলো,
“যাক অবশেষে আসলি তাহলে, আমি তো ভাবলাম এখনো তোর সাজগোজ হয় নি।”
“তুমি ও? তুমিও শুরু করলে এখন? কই সেজেছি আমি? আমাকে ভয় দেখিয়ে তাড়াহুড়ো করে নিচে আনলে, কিন্তু এখনো তাদের ফটোসেশান করাই হয় নি। আরও আধা ঘণ্টার নিচে শেষও হবে না। আর আমি ওদিকে শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম, হু।”
তেতিয়ে উঠে কথাগুলো বললাম। আমার কথার কোন প্রকার রিয়াকশন না দিয়ে হেঁসে উঠলো রিফাপু। একটুও অবাক হলাম না তাতে। ঠিক এমনটাই যেন আশা করেছিলাম তার থেকে। সবচেয়ে রিফাপু আমাকে বেশি বোঝে। দূরে থাকলেও সুখ দুঃখ শেয়ার করার আমার একমাত্র সঙ্গী যেন সে।
রাজশাহীতে চান্স পাবার জন্য বছর দুয়েক ধরে সেখানেই থাকতে হয় আপুকে। পড়াশোনার চাপে বাসায় তেমন আসতে না পারলেও দেড় দুই মাস পরপর ছুটে আসে। আর বাসায় আসলেই গল্পের ঝুড়ি নিয়ে কে*টে যায় আমাদের নির্ঘুম রাত। ঝগড়াঝাটি না থাকলেও রাগ অভিমান ভালোবাসা গুলো যেন সবসময় থাকে আমাদের মাঝে। হাসতে হাসতে রিফাপু বলতে লাগলো,
“কত দিনের প্লানিং করে বিয়ে হচ্ছে আপুর, আজকে ছবি তুলবে না তো কবে তুলবে? চল এখন এই পাকনা বুড়িটাকে নিয়ে। আপু কতবার বললো তোর কথা, ছবি তুলবে বলে।”
“চলো চলো, তালাতালি চলো। সবাই ছবি তুলে শেষ করলো।”
রিফাপু ও আমি একসাথে হেসে উঠলাম আতিফার কথা শুনে। আসলেই একটা পাকনা বুড়ি। ওর গাল টেনে হাসতে হাসতে বললাম,
“হ্যাঁ হ্যাঁ চলো, শেষ করে ফেললো সবাই…..”
.
রিমি আপুর কাছে যেতেই ক্যামেরাম্যান আমাদেরকে বসতে বললেন আপুর পাশে। বসে পরার সাথে সাথেই শুরু হয়ে গেল বিভিন্ন স্টাইলে ছবি তোলার হিড়িক। একের পর এক ছবি তুলেই যাচ্ছেন ক্যামেরাম্যান আর তার পাশেই আরও একজন ভিডিও করছে পুরো হলুদের অনুষ্ঠানের।
তাসফি ভাই এসে উপস্থিত হতেই তাকেও আমাদের পাশে দাঁড়াতে বললো রিমি আপু। তাতে কোন প্রকার দ্বিমত না করে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে পরলেন তিনি। খানিকটা অবাক হলেও প্রকাশ করলাম না। আরও কিছুক্ষণ ছবি তোলার পর সড়ে আসলাম রিমি আপুর পাশ থেকে। সাথে সাথে রিমি আপুর বিশাল বান্ধবীর দল জায়গা করে নিলো আপু আশেপাশে। তাদের দেখে চলে আসতে লাগলেন তাসফি ভাইয়া, তখনি একটা আপু বলে উঠলো,
“যাচ্ছেন কেন? আমাদের সাথেও কিছু ছবি তুলতে পারেন, মাইন্ড করবো না।”
বলেই লাজুক হাসলো আপুটা। মনে হয় উনার উপর ক্রাশ নামক বাঁশটা খেয়েই বসেছে। সাথের সবগুলো আপুও সায় দিলো ওই আপুটার কথায়। তারাও চাচ্ছে উনাদের সাথে ছবি উঠাক তাসফি ভাইয়া। সহসায় কপাল কুঁচকে গেল আমার। কেমন মেয়ে ভাবা যায়? একটু সুন্দর ছেলে দেখলেই তাদের সাথে ছবি তোলার অফার করে বসে।
তাসফি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি আবারও উনার সেই বিখ্যাত মার্কা বাঁকা স্টাইলে হেঁসে চলেছেন। এবার মেয়েগুলো হয়তো একেবারেই শেষ হয়ে যাবে হাসিটা দেখে। আপু গুলো হয়তো ভেবেই নিলো উনি রাজি হবেন। কিন্তু সবাইকে অবাক করে বলে উঠলেন,
“সরি আপু। এতক্ষণ তো অনেক ছবি তুললাম, এখন আর মুড নেই। এসব ছবি তোলার আলো টালো আবার আমার একদম সহ্য হয় না। যখন ভালো লাগবে তখন তুলবো আপনাদের সাথে। ছবি!”
আপু গুলোর মুখগুলো বেলুনের ন্যায় চুপসে গেল যেন। তাদের দেখে মনে মনে হাসলাম আমি। ঠিক এমনটাই আশা করেছিলাম উনার থেকে। উফ্! যা দিলো না, একদম ঠান্ডা মাথায় বাঁশ যাকে বলে। কিন্তু আপু গুলোকে দেখে মায়াও হলো আমার। কি হতো একটা ছবি তুললে? কত আশা করেছিলো আপু গুলো। উনি আসলেই একটা বজ্জাত মানুষ।
ফটোসেশানের পালা শেষ হলো আরও মিনিট বিশেক পর। তারপর শুরু হলো আপুকে হলুদ ছোঁয়ানোর পালা। প্রথমেই বড় চাচা ও বড়মা হলুদ ছোঁয়ালেন আপুকে, তারপর আব্বু-আম্মু, ফুপি-ফুপা, কাকু-চাচীরা সহ মুরুব্বিরা শেষ করলেন আপুকে হলুদ ছোঁয়ানো। তারপর শুরু হলো আমাদের পালা। আস্তে আস্তে সবাই একটু একটু করে রিমি আপুকে হলুদের ছোঁয়া দিতে লাগলো। আপুকে হলুদ ছোঁয়ানো শেষ করে একটা চেয়ারে বসে পরলাম কাজিন দলের সাথে। আতিফাকে সেই কখনো নিয়ে গেছেন তাসফি ভাইয়া চকলেটের লোভ দেখিয়ে। রিফাপুও বাসার ভিতর গেছে কিছু একটা আনতে। তাই বাকি কাজিনদের সাথেই আড্ডা দিতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পরেই শুরু হবে নাচ-গান।
হঠাৎ হাতের মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। ঠিক চিনতে পারলাম না ভেসে উঠা নম্বরটা। রিসিভ করবো কি না ভাবতে ভাবতেই কেটে গেল। পর মুহুর্তে আবারও বেজে উঠলো। ভাবলাম হয়তো পরিচিত কেউ। রিসিভ করে ‘হ্যালো’ বললেও কাজিনদের হৈ-চৈয়ে অপর পাশের কথার কিছুই কানে আসলো না। তাই চেয়ার ছেড়ে উঠে এগিয়ে গেলাম কিছুদূর। রূপালী রঙের ঝলমলে চাঁদটা না উঠায় চারদিকে অন্ধকারে ছেয়ে আছে। লাইটিংয়ের আলো যতদূর পৌঁছাচ্ছে ঠিক ততদূরেই আলোকিত হয়ে আছে।
ফোনটা কানে নিয়ে কিছুদূর দূরেই এসে দাড়ালাম। ‘হ্যালো হ্যালো’ বললেও কোন শব্দ আসলো না ওপর পাশ থেকে। ফোনটা সামনে নিয়ে দেখলাম লাইনটা কেটে গেছে কিনা? কিন্তু না লাইনেই আছে। বুঝতে পারলাম, হয়তো কেউ মজা করার জন্য এমন করছে। আবারও কানে নিলাম ফোনটা। কিছু তিক্ত ভাষা বলার জন্য মুখ খুলতেই হঠাৎ অনুভব করলাম আমার গালে ঠান্ডা হাতের স্পর্শ। কেঁপে উঠলাম আমি । মুখ ফুটে কিছু বলার সাহস হাড়িয়ে ফেললাম এক নিমিষেই। শুধু বুঝতে পারলাম একটা শক্ত শীতল হাত বিচরণ করছে আমার ডান গালে।
প্রায় বিশ পঁচিশ সেকেন্ড পর হাতটা সরে গেল আমার গাল থেকে। এতক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকলেও, কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনের ফ্ল্যাস জ্বালালাম। হাতের মানুষটা কে তা দেখার জন্য পিছন ফিরে তাকিয়ে আরও চমকে গেলাম। গলাটা শুকিয়ে গেল ফট করে। এই মুহুর্তে এক ফোঁটা পানির ভীষণ রকমের প্রয়োজন আমার। না, আর কিছুতেই এখানে থাকা সম্ভব না। আর এক সেকেন্ড থাকলে হয়তো আমি আজকে শেষ। গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে ছুঁটতে লাগলাম বাসার দিকে।
.
.
চলবে….
যারা গল্পের আগের বা পরের পর্ব গুলো খুঁজে পান না, তারা গল্পের নামের উপর বা লেখিকার নামের উপর টার্চ করবেন। তাহলেই পেয়ে যাবেন আশা করি। গল্পটা কেমন হচ্ছে জানাতে ভুলবেন না।🖤