তুমি বললে আজ – পর্ব শেষ(১ম)

0
917

#তুমি_বললে_আজ
লেখনীতেঃ #রিধিমা_জান্নাত_রূপা
অন্তিম পর্ব (প্রথমাংশ)

.
কখন কার প্রতি কিভাবে ভালোলাগা এসে যায়, সেটা অবুঝ মনটাও বুঝতে পারে না। শুধু হঠাৎ করেই কাউকে ভালো লেগে যায়। তেমনি কিয়ানার হঠাৎ করেই দ্বিতীয় বার কাউকে ভালো লেগে গেল। তবুও প্রথম ভালোলাগা থেকে ভালোবাসার নাম দেওয়া তাসফি কে ছাড়া অন্য কারোর প্রতি নজর দিবে না সে। শুধু ভালো লাগাতেই সীমাবদ্ধতা রাখতে চায়। তাসফির সাথে রূপার সংসারের হাল ধরতে চায়, তার মেয়েকে সামলে রাখতে চায়। রূপার পরিণতিটা সঠিক না জানলেও তামায়ার বলা ‘মাম্মাম অনেক দূর’ বলা কথাটায় অনেক কিছুই বোঝা যায়। হয়তো পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছে সে। তা না হলে এমন কথার মানে হয় না। তামায়ার বয়সটা তো প্রায় দুই থেকে আড়াই বছর বয়স হবে হয়তো। তারমানে তাসফি ও রূপার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলোর সময় কাল প্রা দুই থেকে আড়াই বছর হয়ে গেছে?

“এক্সকিউজ মি! আপনি কি ওকে চিনেন?”

পুরুষালী কণ্ঠে নিজের ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসলো কিয়ানা। সামনে তাকিয়ে দেখে ছেলেটা তামায়া কে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সামনে। ঠোঁটে ঝুলে আছে হালকা হাসি। ছেলেটা আবারও বললো,
“তামায়া… মানে ও আপনার সাথে কি করছিলো? চিনেন ওকে?”

নিজের ভাবনা গুলোকে দূরে সরিয়ে দিলো কিয়ানা। হালকা হেঁসে আস্তে করে বলে উঠলো,
“আগে চিনতাম না, একটু আগেই পরিচিত হলাম। তাই না বুড়ি?”

বলেই তামায়ার গাল টেনে দিলো। তামায়া সাথে সাথে তার ছোট মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যা বললো। একটু থেমে কিয়ানা সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“ও তাসফি স্যারের মেয়ে, তাই তো?”

হালকা হাসলো ছেলেটা। কিয়ানা বোঝার চেষ্টা করলো ছেলেটার তাসফির ঠিক কি হয়। কৌতুহল দমাতে না পেরে বলেই ফেললো,
“আপনি ওর কি হন?”

ছেলেটা আবারও হাসলো। তামায়ার গাল টেনে নিয়ে বললো,
“মামুনি বলো তো আন্টিকে, কে হই আমি তোমার?”

“তাতাই…”

তামায়ার কথা ভুরু কুঁচকে গেল কিয়ানার। বোঝার চেষ্টা করলো ঠিক কি বললো। তার মুখের ভাবভঙ্গি দেখে হো হো করে হেঁসে ছেলেটা। তামায়াও খিলখিল করে হাসতে লাগলো।

“বুঝতে পারলেন না তো? আসলে চাচা মামা দুটোই হই আমি ওর। কি বলে ডাকবে ভেবে পায় না, তাই দুটো কে বাদ দিয়ে তাতাই বলে ডাকে।”

হাসলো কিয়ানা। এবার বুঝতে পারলো ছেলেটা তাসফি ও রূপা ভাই হয়। কেমন ভাই হয়, সেটা জিজ্ঞেস করার আগেই ছেলেটা বলে উঠলো,
“বাই দ্যা ওয়ে আমি রাহাত, আপনি?”

“আমি কিয়ানা।”

নিজের নাম বলে রাহাত নামটা মনে করার চেষ্টা করলো কিয়ানা। কিন্তু তাসফি ও রূপার নামটা ছাড়া ডায়েরিতে থাকা আর কোন নাম-ই ঠিক মনে পড়লো না। কিন্তু মনে মনে ভেবে নিলো রূপার কথা জিজ্ঞেস করবে এই ছেলেটার কাছে। তামায়া বললেও তার শিয়র হওয়া প্রয়োজন। অপারেশনের পর রূপার ঠিক কি হয়েছিলো সেটা জানা প্রয়োজন। তা না হলে কিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না সে। কথাগুলো ভাবতে রাহাতের দিকে তাকালো। তামায়ার সাথে দুষ্টুমিতে মেতে আছে। হঠাৎ আধো বুলিতে তামায়া বলে উঠলো,
“তাতাই, বাবাই বকে দিতে আমাকে।”

“কি… এত বড় সাহস, আমাদের মামুনিকে তার বাবাই বকা দিয়েছে? তোমার বাবাই কে বকা দিয়ে দিবো আমি।”

“না… বাবাই কে বকে দিবা না। বাবাই বেস্ট!”

বলেই থামলো তামায়া, তারপর কিছুটা মন ভার করে ছলছল চোখে বললো,
“মাম্মাম পঁচা, আমাল কাছে আসে না, আদল কলে না।”

“আসবে তো মামুনি, তোমার মাম্মাম তো অনেক দূরে আছে, তাই আসতে পারছে না।”

মনটা ভার করে বললো সে৷
রাহাতের কথায় কিছুটা কাজ হলেও পুরোপুরি ভাবে হলো না। একই সুরে বলে উঠলো,
“মাম্মাম পঁচা, আদল কলে না আমাকে।”

রাহাত এবার কিছু না বলে করুন চোখে তাকিয়ে রইলো শুধু। তাদের কথায় কিয়ানা ভাবলো এটাই সুযোগ রূপার কথা জিজ্ঞেস করার। যদিও এখন বুঝতে পারছে রূপা হয়তো আর বেঁচে নেই, তবুও অপারেশনের পরের ঘটনাগুলো তার জানা দরকার। তাসফি ও তামায়ার সাথে বাকিটা জীবন কাটানোর জন্য হলেও জানা প্রয়োজন। কিছুটা দ্বিধাবোধ নিয়েই বলে উঠলো,
“যদি কিছু মনে না করেন, একটা কথা বলবো?”

কিয়ানার দিকে তাকিয়ে আলতো হেঁসে বললো,
“জি জি অবশ্যই।”

“আসলে রু…. না মানে তামায়ার মায়ের কি হয়েছিলো?”

কিয়ানার প্রশ্নের ধরণ দেখে কিছুটা অবাক হলো রাহাত। কিন্তু তেমন গুরুত্ব দিলো না। নরমাল প্রশ্ন ভেবেই বলতে লাগলো,
“আসলে রূপা…. মানে ওর মা তো আ…”

হঠাৎ তা মোবাইল বেজে ওঠায় চুপ হয়ে গেল। পকেট থেকে মোবাইল বের করতেই দেখলো ‘তাসফি ভাই’ নামটা ভেসে উঠেছে। সময় নষ্ট না করে সাথে সাথে রিসিভ করে হ্যালো বলতে নিলো। কিন্তু তার আগের ওপর পাশ থেকে কর্কশ কণ্ঠে ভেসে আসলো,
“কোথায় তুই? এতক্ষণেও আসিস নি কেন? এদিকে মেয়েটার জ্বালায় আমি শেষ, তাড়াতাড়ি আয়।”

“তাসফি ভাই আমি তোমার ডিপার্টমেন্টর সামনে। তামায়া আমার সাথেই আছে, চিন্তা করো না”

“এই মেয়েটাকে নিয়ে আমি আর পারি না। ওকে নিয়ে এগিয়ে আয়, আমি বের হচ্ছি।”

ঠিক আছে বলে কলটা কেটে দিলো রাহাত। এতক্ষণে তামায়া তার কোল থেকে নেমে দুষ্টুমি শুরু করেছে কিয়ানার সাথে। খুব তাড়াতাড়িই যেন মিশে গেছে তার সাথে। রাহাত কিছুটা এগিয়ে গিয়ে কিয়ানাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“সরি, আর কথা বলতে পারছি না আপনার সাথে। আজকে যেতে হবে, তাড়া আছে একটু।”

“কিন্তু ওর মা….”

কথাটা শেষ করার আগেই তামায়ার হাত ধরে সামনে এগোতে লাগলো রাহাত। এখন না গেলে নিশ্চিত তাসফির থেকে ধমক শুনতে হবে তার। এগিয়ে যেতেই তাসফি বেরিয়ে আসলো। এগিয়ে আসতে লাগলো তাদের দিকে। তামায়া তার বাবাই কে দেখেই লাফালাফি বন্ধ করে চুপ হয়ে গেল। রাহাত বলে উঠলো,
“তাসফি ভাই, ওকে নাকি বকেছো তুমি?”

“তো বকবো না? মেয়ে আমার ব্যাগপত্র নিয়ে ভার্সিটিতে আসবে, নিয়ে আসলাম। তার নাকি বই লাগবে তাও দিলাম, কিন্তু না তার মাম্মামের ডায়েরি লাগবে তার। তাকে হাজারো বুঝিয়ে কোন লাভ হলো না, বাধ্য হয়েই দিলাম। কিন্তু কি করলো? ডায়রিটা হারিয়ে ফেললো সে। আর বললো তো বললো কখন, বাসায় যাবার পর। এখন ডায়েরিটা আমি খুঁজে পাবো কিভাবে? রূপার কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে সেই ডায়রির সাথে।”

গম্ভীর স্বরে কথাগুলো বলে তামায়ার দিকে তাকালো তাসফি। ফ্যালফ্যাল করে তার দিকেই তাকিয়ে আছে মেয়েটা। বাবার কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করছে। একদম মায়ের মতো করে তাকিয়ে আছে। ওর জায়গায় রূপা থাকলে ঠিক এভাবেই তাকিয়ে থাকতো। মেয়েটার এভাবে তাকানো দেখে হুট করেই রাগটা চলে গেল তাসফির। মুখে মৃদু হাসি ফুটিয়ে মেয়েটার দিকে হাত বাড়িয়ে কোলে তুলে নিলো। অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিলে তামায়া। মেয়ের অভিমানী মুখটা দেখে হালকা হাসলো তাসফি। রাগ, অভিমান সবকিছুই মায়ের মতো হয়েছে। রূপার কথা ভাবতেই হঠাৎ মনে পরলো রূপা বারবার বলেছিলো সে না থাকলে যেন মেয়েটাকে না বকে, সবসময় যেন আগলে রাখে। ইস্ সামান্য কথাটাও রাখতে পারলো না সে। তাসফি মেয়েটার গাল টেনে বলে উঠলো,
“সরি আম্মু, বাবাই আর বকা দিবে না।”

“তুমি আমাকে বকা দিছো ক্যানু? লাগ কলছি আমি।”

“সরি বললাম তো আম্মু, আর বকা দিবো না আমার আম্মা টাকে।”

“তাইলে আদল কলে দাও।”

তামায়ার গালে চুমু দিতেই হেঁসে উঠলো সে। সেও আদর করে দিতে লাগলো তাসফি কে।

কিছুটা দূর থেকে তাদেরকে দেখতে লাগলো কিয়ানা। কিন্তু তাদের কোন কথাই কানে আসলো না। তাসফিকে কালো শার্টে দেখে চিনচিন করে উঠলো বুকে। মনে পরে গেল রূপার ডায়রির পাতায় লেখা কিছু কথা। আসলেই তাসফি স্যার কে শার্টে মারাত্মক সুন্দর লাগে। যে কোনো মেয়ের বুকেই আঘাত আনতে সময় নিবে না। এজন্যই বুঝি তাসফি স্যার কে কালো রঙের শার্ট পরতে বারণ করতো।
হঠাৎ ডায়রির কথা মনে হতেই ভাবলো ডায়রিটা তো ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। আর এই সুযোগে তাসফির সাথেও কিছু কথা বলা যাবে। ভেবেই এগিয়ে যেতে লাগলো। কিন্তু তার আগেই তাসফিরা চলে গেছে ক্যাম্পাসের গেইট পেরিয়ে। কিয়ানা ছুটে গেল সেদিকে, কিন্তু নাগালে পেল না। সেখানেই দাঁড়িয়ে পরতে হলো তাকে।

.
মনটা ভার করে সুক্ষ অনুভূতি নিয়ে ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে আসলো কিয়ানা। কেন জানি গত তিন দিনে কোন কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারছে না সে। বারংবার তাসফি, তামায়া ও রূপা নামটাই উঁকি দিচ্ছে তার মনে। এই তিন দিন লাগাতার ভার্সিটিতে আসলেও কোন রূপার ব্যাপারে কোন তথ্যই কালেক্ট করতে পারে নি সে। আর না পেরেছে তাসফি কে ডায়েরিটা ফিরিয়ে দিতে। তামায়ারও দেখা পায় নি।

আজকে মিমি না আসায় কিছুটা হলেও খারাপ লাগছে তার। প্রতিদিন তার বকবকানি গুলো শুনতে বিরক্ত লাগলেও আজকে মনে হচ্ছে, মিমির কথা শুনে কিছুটা হলেও সময় কাটতো। আপাতত এখন আর ক্লাস নেই। তাই ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে হাঁটতে লাগলো ক্যাম্পাসে। হঠা সামনে চোখ পড়তেই চকচক করে উঠলো তার চোখ দুটো। তামায়া গুটিগুটি পায়ে হেঁটে হেঁটে কিছু একটা খুঁজে চলছে। আর দাঁড়ালো না কিয়ানা, দূত হেঁটে এগিয়ে এলো। একটা হাসি দিয়ে বলে উঠলো,
“কি তামায়া বুড়ি, আমাকে চিনতে পারছে?”

একটু সময় নিয়ে মনে করার চেষ্টা করলো কিয়ানাকে। মনে পরতেই মাথা ঝাকালো। তার আধো বুলিতে বললো,
“তুমি তো ওই আন্তি। আমাকে ফেলে দিতে চাছিলা।”

তার কথা বলার ধরনে হেঁসে উঠলো কিয়ানা। আলতো করে গাল টেনে নিয়ে বললো,
“মনে আছে দেখছি। ধাক্কা দেবার সরি হ্যা, আন্টির ভুল হয়ে গেছে।”

বলেই ব্যাগ থেকে একটা চকলেট বের করে তামায়ার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
“এটা তোমার জন্য।”

“নিবো না, বাবাই বকা দিবে।”

“দিবে না বুড়ি, নাও। এটা তোমার জন্যই এনেছি।”

তামায়া মাথা ঝাকালো, নিবে না সে। কিয়ানা কিছু বলতে চাইলেই ভেসে আসলো এক গম্ভীর কণ্ঠস্বর।

“তামায়া।”

সাথে সাথে সেদিকে তাকালো তামায়া। তামায়াকে লক্ষ্য করে পিছন ফিরে তাকালো কিয়ানা। তার অনেকটা কাছেই দাঁড়িয়ে আছে তাসফি। হঠাৎ এতটা কাছে তাসফি কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা চমকে গেল কিয়ানা। সাথে সাথে বসা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। কিয়ানাকে চিনতে পেরে তাসফি বলে উঠলো,
“আরে কিয়ানা, তুমি ওর সাথে?”

“হ্যা আসলে…. ওর সাথে সেদিন হঠাৎ ধাক্কা লেগে গেছিলো, তারপর বললো ও আপনার মেয়ে। আজকে ওকে দেখলাম কিছু একটা খুঁজছে, তাই…”

“ইস্ এই মেয়েটাকে নিয়ে আমি আর পারি না। একদম চুপ করে এক জায়গায় বসে থাকতে চায় না। আমি তোমাকে খুঁজে যাচ্ছি আর তুমি এখানে কি খুঁজো আম্মু?”

প্রচন্ড বিরক্ত নিয়ে বলে উঠলো তাসফি। বাবার কথা শুনে মনটা কিছুটা ভার হয়ে গেল তার। বললো,
“মাম্মামের বই খুঁজি বাবাই।”

মেয়েরটা যে ডায়রি খোঁজার কথা বলছে, সেটা বুঝতে পারলো তাসফি। তামায়ার কথায় কিছুটা মায়া লাগলো তার। বাবার মন খারাপের কারণ হয়ে থাকতে চায় না বলে ডায়েরিটা খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দ’হাত বাড়িয়ে মেয়েকে কোলে তুলে নিলো। আদুরে গলায় বললো,
“ডায়েরিটা তোমার খুঁজতে হবে না আম্মু। আমি ঠিক খুঁজে বের করবো, তুমি আর এভাবে হুটহাট আমাকে না বলে চলে আসবে না।”

মাথা ঝাকালো তামায়া, বাবার কথা শুনবে সে। সামনে তাকিয়ে কিয়ানাকে কিছু বলতেই কিয়ানা নিজের ব্যাগ থেকে ডায়েরিটা বের করলো। তাসফির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
“স্যার, এটার কথা বলছেন কি?”

ডায়েরিটার দিকে নজর পরতেই অবাক হলো সে। তামায়া ডায়েরিটা দেখেই তৎক্ষনাৎ কিয়ানার হাত থেকে নিয়ে নিলো। চিৎকার করে বলে উঠলো,
“এইতো… মাম্মামের বই বাবাই। ইয়ে… পেয়েছি মাম্মামের বই…”

তাসফি অবাক হয়ে বলে উঠলো,
“ওটা তোমার কাছে কিভাবে?”

“আসলে, সেদিন লাইব্রেরি তে পেয়েছিলাম। এই কয়েকদিন আপনাকে নাগালে পাই নি, তাই আর দেওয়াও হয় নি।”

ডায়েরিটা দেখে স্বস্তির একটা নিশ্বাস ছাড়লো তাসফি। কিয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো,
“থ্যাংকস! তামায়ার থেকে হঠাৎ করেই হাড়িয়ে গিয়েছিলো। এই ডায়েরিটার মাঝে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে আমাদের।”

তৎক্ষনাৎ কিছু বললো না কিয়ানা। একটু সাহস নিয়ে ধীর গতিতে আস্তে করে বলে উঠলো,
“রূপার… না মানে তামায়ার আম্মুর কি হয়েছিলো পরে? কোথায় আছে উনি?”

হঠাৎ চমকে উঠলো তাসফি। কৌতুহলী চোখে কিয়ানার দিকে তাকানো। তাসফির হঠাৎ এমন রিয়াকশনে ভরকে গেল কিয়ানা। আমতা আমতা করে বলে উঠলো,
“সরি স্যার, আ..আসলে আমি ডায়েরিটা পড়ে ফেলেছি।”

গুরুগম্ভীর ভাব থেকে নিজেকে স্বাভাবিক চেহারায় আনার চেষ্টা করলো তাসফি। কণ্ঠে মলিনতা এনে বলে উঠলো,
“পড়েই যখন ফেলেছো তখন আর কি করার? অনেক কিছুই জেনে গেছো তাহলো।”

“সরি স্যার, নিজের কৌতুহলকে দমিয়ে রাখতে পারি নি।”

তাসফি কিছু না বলে চুপ করে থাকলো। কিয়ানা বলতে লাগলো,
“আপনার স্ত্রীর অপারেশনের পর কি হয়েছিলো? সুস্থ হয়েছিলো, নাকি…. না মানে, ডায়েরির লেখা অনুযায়ী আপনার স্ত্রীর তো এই ভার্সিটিতেই পড়ার কথা, কিন্তু এতদিনেও তো ওনাকে দেখলাম না। তাই আর কি….”

সেকেন্ডের মতো সময় নিয়ে আবারও বলে উঠলো,
“কিছু মনে করবেন না, আসলে আপনাদের এত সুন্দর ভালোবাসার অসমাপ্ত পরিণতি মানতে পারি নি, তাই জানার আগ্রহটা প্রবল হয়ে উঠেছে।”

সহাসয় উত্তর দিলো না তাসফি। বেশ কিছু সময় নিয়ে ছোট করে বলেলো,
“চলো, ওখানটায় গিয়ে বসি।”

ক্যাম্পাসের একটা গাছের কাছে বেঞ্চের দিকে ইশারা করে বললো। কিয়ানার উত্তরের আশা না করে তামায়া কে নিয়ে এগিয়ে গেল তাসফি। কারণ সে জানে, কিয়ানা ঠিকই আসবে। বেঞ্চটায় বসে পকেট থেকে নিজের মোবাইল বের করে তামায়ার দিকে এগিয়ে দিলো। বললো,
“চুপচাপ গেমস খেলো আম্মু, একদম এদিক ওদিক যাবার চেষ্টা করবে না।”

সাথে সাথে মাথা ঝাঁকিয়ে না বললো তামায়া। সে এখন মায়ের ডায়েরিটা নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। এখন আর কিছু প্রয়োজন নেই তার। কিয়ানা আসতেই তাকে ইশারায় বসতে বললো তাসফি। একটু সময় নিয়ে বলে উঠলো,
“একটা ছেলে যখন তার ভালো বা খারাপ নজরে কোন মেয়ের দিকে তাকায়, চোখ দিয়ে ভালোলাগা বা নিজের অনুভূতি বোঝায় তখন সেই মেয়েটা কিন্তু খুব সহজেই বুঝে যায় ছেলেটার মনোভাব। ঠিক তেমনি একটা ছেলের ক্ষেত্রেও। সামনের মেয়েটা তার দিকে কেমন নজরে তাকায়, কি বোঝাতে চায়, একটা ছেলেও কিন্তু সহজেই বুঝে যায়। তোমার এই সুক্ষ নজরটাও আমার চোখ এড়ায়নি। তুমি এডুকেটের গার্ল, এতক্ষণে হয়তো বুঝে গেছো আমি কি বলতে চাইছি।”

থামলো তাসফি, সেকেন্ডের মতো সময় নিয়ে তামায়ার দিকে ইশারা করে বলে উঠলো,
“ও আর ওর মা, আমার জীবনের পুরো অংশ। আমার কাছে থাকলেও, এবং দূরে গেলেও। ওদের দুজনের কাছেই আমার সমস্ত কিছু গচ্ছিত আছে। রূপা না থাকলেও আমি ওর জায়গাটা তোমাকে দিতে পারবো না, শুধু তোমাকে কেন, কাউকেই কখনো দিতে পারবো না।”

হুট করে তাসফির দিকে চোখ তুলে তাকালো কিয়ানা। কিন্তু বলার মতো কিছু খুঁজে পেল না। তাকে যে এভাবে সরাসরি কথাগুলো বলবে তাসফি, সেটা ভাবতেই পারে নি। কিয়ানাকে চুপ থাকতে দেখে আবারও বললো,
“রূপার ডায়েরিটা পড়ে অনেক কিছুই জেনে গেছে ইতিমধ্যে। তাই ওর অপারেশনের পর কি হয়েছিলো সেটা জানতে চাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। ওকে চেন্নাই নিয়ে যাবার পর ডক্টরা বেশ কিছু টেস্ট দেয় ওর। রিপোর্ট আসার পর জানায় টিউমারের অবস্থান বেশিদিন হওয়ায় অপারেশনে ফিফটি পার্সেন্ট চান্স আছে ওর বাঁচার। রোগীর কিছু হলে তারা দায় নিতে পারবে না বলেও জানায়। ভেতরে ভেতরে প্রচন্ড ভেঙে পরলেও বাইরে প্রকাশ করতে চাই নি। নিজেকে শক্ত রেখেই সাইন করতে হয়েছিলো ওর অপারেশনের পেপারে। সেদিন ওর….”

হঠাৎ সামনে তাকিয়ে চুপ হয়ে গেল তাসফি। কিয়ানাও তাসফি কে লক্ষ্য করে তাকালো সেদিকে। একটা মেয়ে জড়িয়ে ধরে আছে তামায়াকে। তামায়া প্রচন্ড খুশি হলেও পরক্ষণেই মুখটা ভার করে ফেললো। মেয়েটা কে? ঠিক বুঝতে পারলো না কিয়ানা। তাসফির দিকে তাকাতেই দেখতে পেল, চোখ-মুখ শক্ত করে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে। ইতিমধ্যেই তামায়া ছুটে এসে মুখটা ভার করে তাসফির কোলে বসে গেল।

.
.
চলবে……

আজকে পর্বে শেষ করতে চেয়েও পারলাম না। আগামীকাল শেষ পর্বের শেষ অংশ দিবো ইনশাআল্লাহ। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ভালোবাসা রইল সবাইকে।🖤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here