#তুমি_বললে_আজ
লেখনীতেঃ #রিধিমা_জান্নাত_রূপা
পর্বঃ ৩১.
.
বিষন্ন মনে অন্ধকার রুমে খাটের এক কোনায় ঘাপটি মে/রে বসে আছি। রুম জুড়ে অন্ধকারে ছেয়ে থাকলেও বারান্দা এবং জানালা দিয়ে আসা মৃদু আলো রুমের মাঝে প্রতিফলিত করেছে। কেন জানি ভীষণ কান্না করতে ইচ্ছে হচ্ছে, কিন্তু কিছুতেই আঁটকে রাখা কান্নাটা বেরিয়ে আসতে চাইছে না। কিন্তু চোখ দিয়ে অনবরত পানি বেরিয়ে যাচ্ছে। রাত অনেক হলেও তেমন গভীর রাতে পরিণত হয় নি।
এতক্ষণ সবাই আমাকে ডাকাডাকি করলেও যখন মাথা ব্যাথার দোহায় দিলাম, তখন থেকে কেউ আর বিরক্ত করে নি। কিন্তু রিফাপু এর মাঝে একবার এসে বিভিন্ন ভাবে কথা বলতে চাইলেও আমি বলি নি। বরং অনেক খিটখিটে মেজাজ দেখিয়ে চলে যেতে বলেছি রিফাপু কে। আমার কথায় হয়তো অনেক কষ্ট পেয়েছে আপু, কিন্তু তখন কেন-ই বা আপুর সাথে এমন করলাম নিজেরই জানা নেই। এখন আপুর কথা ভেবে আরও বেশিই খারাপ লাগছে আমার।
নিজের সমস্ত রাগ, অভিমান, অভিযোগ গুলো একজনের প্রতি গিয়েই আঁটকে যাচ্ছে শুধু। ভীষণ রকমের খোপ জমে গেছে সেই মানুষটার প্রতি। এত এত ভালোবাসা পাবার পর সে মানুষটার থেকে একটু অবহেলা সহ্য করা অনেক কঠিন হয়ে উঠেছে আমার জন্য। পুরো দু’টো দিন সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষটাকে দেখতে না পেরে, তার সাথে কথা না বলে অভিমানের পাল্লাটা ব্যাপক ভারী হয়ে উঠেছে ওনার প্রতি।
সেদিন সন্ধ্যায় চলে যাবার পর আর দেখা পাই নি ওনার। ফোন দিলেও ত্রিশ সেকেন্ডের বেশি কথা হয় নি, শুধু এতটুকুই বলেছে ব্যস্ত আছেন উনি। একটু অভিমান হলেও রাতে যখন আব্বু ও বড় চাচার থেকে জানতে পারলাম তাদের ব্যাবসার কাজে প্রচুর ব্যস্ত ছিলেন সারাদিন, কালকে ফুপা ফুপি এবং তাসফি আসবে তখন নিমিষেই মনটা ভালো হয়েছিলো। আজকে তাসফির আসার কথায় নিজেকে অন্য ভাবেই সাজিয়ে ছিলাম ও। ওনার পছন্দ মতো শাড়ি পড়ে ওনার মনের মতো করে সাজিয়ে ছিলাম নিজেকে। সবার সামনে লজ্জা ও অস্বস্তির সম্মুখীনে পরতে হলেও, এক অদ্ভুত ভলোলাগা কাজ করছিলো নিজের প্রতি, প্রিয় মানুষটার জন্য নিজেকে সাজিয়ে তুলে।
দুপুরের দিকে ফুপা ফুপি আসার পরও যখন সেই মানুষটার দেখা পেলাম না তখন কিছুটা খারাপ লাগলো। তবুও নিজের মনকে সান্ত্বনা দিলাম নানান ভাবে, হয়তো বিকেলে বা সন্ধ্যার দিকে চলে আসবেন উনি। কিন্তু যখন জানতে পারলাম আসবেন না উনি, তখন আমার অনুভূতিটা ঠিক কেমন ছিলো বোঝাতে পারবো না। নিজেকে সামলে নিয়ে সবার সাথে থাকলেও একসময় আর ধৈর্য রাখতে পারলাম না। ফুপা বাসায় চলে যাবার পর ফুপির সহ সকলের সাথে একটু কথা বলে রুমে চলে আসলাম। রুমে এসে নিজের সাজ-টাকে মুহূর্তেই নষ্ট করে শাড়িটা টেনেটুনে খুলে ফেললাম। শাড়ি পাল্টে নিজেকে সামলে নিয়ে বেনি করার জন্য চুল আঁচড়াতে গিয়ে আবারও যেন অবহেলা পেলাম নিজের ভালোবাসার কাছে। এতগুলা চুল পরা দেখে রাগে দুঃখে এবার কান্না পেয়ে গেল আমার। চিৎকার করে কান্না না করলেও চোখ দিয়ে অনবরত পানি গড়িয়ে পড়লো। চুপ করে বিছানার এক কোণায় বসে রইলাম। বড়মা ড্রয়িং রুমে যাবার কথা বললেও ‘মাথা ব্যাথা করছে, ঘুমাবো’। বলে কাটিয়ে দিলাম।
.
একাকী মন খারাপে আকাশকুসুম ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখ দুটো লেগে গেছিলো বুঝতেই পারি নি। দরজার খটখট শব্দ হালকা ঘুমটা ভেঙে গেল। একটুপর আম্মুর গলা ভেসে আসলো। বললো,
“রূপা… এই রূপা খেতে আয়। সারাদিন ঘরে শুয়ে থাকলে মাথা ব্যাথা তো হবেই, তাড়াতাড়ি আয়।”
জবাব দিলাম না আমি আম্মুর কথায়। ভীষণ বিরক্ত লাগছে আম্মুর কথাগুলো, মাথায় গিয়ে যেন ধাক্কা লাগছে একটার পর একটা কথাগুলো। তবুও হজম করে নিলাম। কিন্তু আম্মুর সেটা হয়তো সহ্য হলো না, আবারও আগের চেয়েও বেশি জোরে ডেকে উঠলো,
“কখন থেকে ডাকছি শুনতে পাচ্ছিস না? শুয়ে থাকলেই তো আর মাথা ব্যাথা কমে যাবে না, বাইরে একটু বের হ।”
“খাবো না আমি, যাও তো এখান থেকে। একটু ঘুমাতে দাও আমাকে। ঘুমালে ঠিক হয়ে যাবে।”
নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করে কথাগুলো বললাম আম্মুকে। আর শব্দ পেলাম না ওপাশ থেকে। আবারও চোখ বন্ধ করে ঘুমের প্রয়াস চালাতে লাগলাম, কিন্তু কাঁচা ঘুমটা ভেঙে যাওয়ার আর ঘুম ধরা দিতে চাইলো। এতক্ষণ মাথা ব্যাথার বাহানা দিলেও এবার সত্যি সত্যিই মাথা ব্যাথা শুরু হলো। হুট করে মাথা ব্যাথা বেড়ে যাওয়ায় নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না আর, তবুও বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে থাকলাম।
মিনিট দশেক পর আবারও দরজার শব্দ পেয়ে মেজাজ বিগড়ে গেল আমার। আগের চেয়েও বেশি খিটখিটে মেজাজে পরিণত হলো। এবার অনেকটা চিৎকার করেই বলে উঠলাম,
“বললাম না তোমাকে, খাবো না আমি? এত বিরক্ত করার কি আছে? একটু শান্তিতে কি থাকতে দিবা না আমাকে?”
বলেই চুপ হয়ে গেলাম। এর চেয়ে বেশি কিছু বলার ইচ্ছে বা শক্তি কোনটাই নেই নিজের মাঝে। দরজা লাগানোর শব্দও হয়ে থেমে গেল। হয়তো আমার কথা শুনে দরজা আঁটকে চলে গেছে আম্মু হয়তো। আম্মুকে এভাবে বলায় একটু খারাপ লাগলো, তবুও সেভাবেই শুয়ে থাকলাম।
প্রায় দু’মিনিট পর হঠাৎ গায়ের উপর ভারী হাতের স্পর্শে চমকে উঠলাম। ‘কে? বলে মৃদু চিৎকার করে উঠতেই আচমকা পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো কেউ। ঘাড়ও গলার মাঝে মুখ ডুবিয়ে দিতেই কেঁপে উঠলাম। জড়িয়ে ধরার মানুষটা যে কে হতে পারে, সেটা বুঝতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো আমার। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো সাথে সাথে। কোন রকম ভাবে কান্নাটা আঁটকে রেখে ছাড়াতে চেষ্টা করলাম জড়িয়ে রাখা তাসফির হাত দু’টো। কিন্তু বরাবরের মতো এবারও ব্যার্থ হতে হলো আমাকে। ওনার শক্তির সাথে কুলাতে পারলাম না নিজেকে। তবুও ওনাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললাম,
“কি সমস্যা? সবসময় জড়াজড়ি করতে হয় কেন আপনার? ছাড়েন আমাকে, একটু শান্তিতে ঘুমাতে দেন।”
তাসফি ছাড়লো না আমাকে, বরং আগের চেয়েও শক্ত করে জড়িয়ে নিলো। ছোট ছোট করে চুমু দিতে লাগলো আমার ঘাড় ও গলা জুড়ে। আমি আবারও ছাড়ানোর চেষ্টা করে আগের চেয়েও চড়া গলায় বলে উঠলাম,
“অসভ্যের মতো কি শুরু করলেন এগুলো? ছাড়তে বলছি না আপনাকে? ছাড়েন…ছাড়েন বলছি। রাত বিরাতে এ-সব করার জন্য আমার রুমে আসছেন? এক্ষুনি বেরিয়ে যান আমার রুম থেকে।”
“উফ্, জান কথা বলে না প্লিজ। একটু চুপ থাকো।”
কেঁপে উঠলাম আমি। ওনার ঘোর লাগা কণ্ঠে হঠাৎ চুপ হয়ে গেলাম, নড়াচড়াও বন্ধ হয়ে গেল কয়েক সেকেন্ডের জন্য। আবারও ঠোঁটের স্পর্শ পেতেই নিজের স্তম্ভিত ফিরে পেলাম। এবার আর দমিয়ে রাখা কান্নাটা আঁটকে রাখতে পারলাম না। এবার কেঁদে উঠলাম। কি মনে করেন উনি নিজেকে, যখন যেভাবে খুশি সেভাবে ট্রিট করবে আমাকে?
“সরি জান! অনেক কষ্ট দিয়েছি না?”
আগের চেয়েও জোরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম। এত সময়ের কান্নাটা যেন এবার নিমিষেই বেরিয়ে আসছে। কিছু বলতে চাইলেও বলতে পারছি না। আমাকে হঠাৎ কাঁদতে দেখে সোজা করে শুইয়ে দিলেন। পুরো মুখে চুমু দিতে দিতে বলতে লাগলেন,
“সত্যি বলছি, আর কখনো এমন করবো না। সেদিন হঠাৎ আমার কি হয়েছিলো নিজেই জানি না। প্লিজ জান, এভাবে কান্না করে না।”
কান্নার রেশ কিছুটা কমে আসলে এবার। ভাঙা ভাঙা গলায় অস্পষ্ট সুরে বলে উঠলাম,
“আ..আপনি খখ্..খুব খারাপ…?
” সত্যিই তো.. খুব খারাপ আমি। তা না হলে আমার মিষ্টি বউটাকে এভাবে কাঁদাতে পারি?”
কিছু বললাম না আমি, ওনার বুকে মুখ গুজে থেকে থেকে ফুঁপিয়ে উঠলাম বার কয়েক। উনিও নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন আবারও। জোরে একটা শ্বাস নিয়ে বললেন,
“ভালোবাসি তো বউ। এভাবে কান্না করা তো আমার সহ্য হচ্ছে না একদম, প্লিজ বউ এবার শান্ত হও।”
আস্তে আস্তে ফুঁপানো কমে গেল, শান্ত হয়ে গেলাম একদম। ওনার বুকে মুখ ঘষে গেলাম সমানে। মনে হচ্ছে কতদিন পর এই মানুষটাকে কাছে পেলাম আমি, কতদিন পর একটু ছুঁয়ে দিতে পারছি। এই দু’টো দিনে আমি খুব করেই বুঝে গেছি, এই ছেলেটাকে ছাড়া এক মুহুর্তও চলবে না আমার। সেভাবেই কেটে গেল কিছু সময়। দুজনের নীরবতাকে ভেঙে তাসফি-ই বলে উঠলো,
“শাড়িটা খুলেছো কেন? আমার পছন্দ মতো সেজে আমাকেই সাজটা দেখা থেকে বঞ্চিত করলা? ইট’স নট ফেয়ার।”
আমি অবাক হলাম এবার। উনি কিভাবে জানলেন আমি শাড়ি পরেছিলাম আজকে। আর ওনার মনের মতো করে সেজেছিলাম সেটাই বা জানলো কিভাবে? আমি কিছু বলতেই উনি বলে উঠলেন,
“বিকেলে আসলে আমার বউটাকে সরাসরি দেখতে পেতাম, সাথে অনেক কিছু করতেও পারতাম। যাই হোক দোষটা যেহেতু আমারই তাই শাস্তিটা মেনে নিলাম, তবে হুট করে সেভাবে সামনে এসে খুব করে চমকে দিতে হবে কিন্তু আমাকে।”
চট করে মনে পরলো তাসফির কথায়, আমি তো ওনার উপর রেগে ছিলাম। সেই রাগটা যে কখন গলে গেছে বুঝতেই পারি নি। তবুও এত তাড়াতাড়ি ছাড় দিবো কিভাবে ওনাকে? না… এটা তো কিছুতেই করা যাবে না। মন থেকে রেগে না থাকলেও রাগার অভিনয় তো করতেই হবে। বোঝাতে হবে তো আমি ভীষণ রেগে আছি ওনার প্রতি, যেন পরের বার আর এমন করতে না পারে আমার সাথে। তাই গলায় রাগের আভাস নিয়ে মাথা উঠিয়ে বললাম,
“হুট করে কেন আমি আপনাকে চমকে দিবো, হ্যাঁ? কে হন আপনি আমার? কেউ না আপনি, সেজন্যই তো দু’টো দিন আমার সাথে কথা বলেন নি আপনি, খোঁজ নেন নি আমার। এখন কেন আসছেন আপনি এখানে? চলে যান বলছি, ছাড়েন আমাকে…”
“আহ্ বউ, আবার শুরু হয়ে গেলা? সত্যিই একটু ব্যস্ত ছিলাম। বললাম তো আর এমন হবে না।”
“সব জানি আমি, খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি আমাকে আর ভালো লাগে না আপনার। ভার্সিটিতে সুন্দর সুন্দর মেয়েদের পড়িয়ে তাদের কে এখন ভালো লাগে, তাই না? সব বুঝতে পারছি আমি। ছাড়েন আমাকে, একদম ধরবেন না।”
“ভালোবাসি তো, অনেক বেশিই ভালোবাসি। কেন বুঝিস না বউ? আমার প্রথম এবং শেষ নারীর ঠিকানা যে তুই পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। সবকিছুর জন্য সরি তো বউ।”
তাসফির কথা আবারও ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম। এবারের কান্নাটা রাগ বা অভিমানের নয়। সুখের কান্না পাচ্ছে আমার। হ্যাঁ এই মানুষটা তো আমার, একান্ত আমার নিজের পুরুষ। এই মানুষটার ভাগ সে নিজেই আমাকে ছাড়া কাউকে দিবে না, তবুও তার একটু অবহেলাতে শেষ হয়ে যাবো আমি। এই দু’টো দিনে খুব ভালো ভাবেই সেটা উপলব্ধি করতে পেরেছি। আমিও কখনো কাউকে ওনার ভাগ দিতে পারবো না, কিছুতেই না। প্রচন্ড অভিমান নিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বলতে লাগলাম,
“এত অবহেলা করেন কেন আমাকে? আমি৷ তো সহ্য করতে পারি না আপনার অবহেলা, বোঝেন না কেন? যখন থাকবো না, তখন ঠিকই বুঝবেন। মরে গেলে তখন আ….”
শেষ করতে পারলাম না কথাটা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আচমকা নিজের ঠোঁটের স্পর্শে আমার ঠোঁট মেলাতে শুরু করলেন। আমি যেন কোন রিয়াক্ট দিতেই ভুলে গেছি।
.
মোবাইলের রিংটোন শব্দে চমকে উঠলো কিয়ানা। গভীর মনোযোগটা হঠাৎ করেই ভেঙে গেল তার। প্রচন্ড বিরক্ত নিয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো তাকিয়ে ‘মা’ শব্দটা ভাসছে। আগের চেয়েও বিরক্ত তার চোখে মুখে ভেসে উঠলো। মায়ের কলটা ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও তাকে রিসিভ করতে হবে। তা না হলে লাগাতার বেজে যাবে মোবাইল নামক এই প্যারা টি। হাতের ডায়েরিটা আলতো করে বন্ধ করে টেবিলের উপর রাখলো কিয়ানা। বিরক্ত নিয়ে কল রিসিভ করে মোবাইল কানে দিয়েই বলে উঠলো,
“শুরু করেন।”
বলেই চুপ হয়ে গেল কিয়ানা। কারণ সে জানে, তার মা একবার কথা বলা শুরু করলে ভাঙা রেডিওর মতো বাজতেই থাকবে। কথাগুলো শোনার ইচ্ছে না থাকলেও শুনতেই হবে তার। কিয়ানা কল রিসিভ করতেই তার মা বলতে লাগলো,
“এতক্ষণ লাগলো কেন তোর কল রিসিভ করতে, ঠিক আছিস তো? কিছু হয় নি তো তোর? তোর আব্বু ঠিক আছে তো কিয়া? দরজা ভালোভাবে লক করবি কিন্তু। খাইছিস তো রাতে? তোর বাবা কি করে রে? এতবার ফোন দিলাম রিসিভ করলো না কেন? কি রে, কথা বলছিস না কেন? ঠান্ডা লাগে নি তো আবার? আমি ক….”
এতক্ষণ কিয়ানার পুরো ধ্যান ডায়রিটার প্রতিই ছিলো। মায়ের এমন কথার সাথে সে বরাবরই পরিচিত, তাই সেদিকে তেমন পাত্তা দিলো না। তবুও মায়ের বকবকানি গুলো থামানোর জন্য কথার মাঝেই বলে উঠলো,
“আমার দুজনেই একদম ঠিক আছি। আব্বু ঘুমাচ্ছে, আর আমিও এখন ঘুমাবো। তোমার এত চিন্তা করতে হবে না।”
“তোদের একা রেখে এসেছি চিন্তা তো হবেই। তোর বাবাটা না জানি একা একা কি করছে, আর থাকবো না আমি কালকেই কুহুকে নিয়ে চলে যাবো। তোর নানীকে দেখতে আসছিলাম দেখে শেষ, আর আমি সংসার ফেলে থাকতে পারবো না। তাছাড়া তো….”
“রাখছি আম্মু। ”
বলেই কল কেটে দিলো কিয়ানা। তার মায়ের এই স্বভাবটা বরাবরই তার ভীষণ বিরক্ত। বাইরে কোথায় গেলেই ফোন করে এমন আজেবাজে কথা শুরু করবে।
মায়ের চিন্তা বাদ দিতেই আবারও ডায়রিটার কথা মাথায় ঢুকলো তার। প্রতিটা লাইন পড়ার সময় যেন সবকিছু তার চোখের সামনে ভাসছে, জীবন্ত দেখতে পাচ্ছে সমস্ত কিছু। ডায়রিটা আলতো করে টেবিল থেকে হাতে নিলো কিয়ানা। যাকে নিয়ে ডায়েরির প্রতিটি লাইন লেখা তাকে ভালোভাবেই চিনে সে। কিছুটা হলেও জানে সেই মানুষটাকে, কিছুটা হলেও কাছে পেতে চায়। তাই জানার আগ্রহটা আরও ব্যাপকভাবে বেড়ে যাচ্ছে তার মাঝে। এর শেষ টুকু না পড়ে কিছুতেই যেন শান্তি পাবে না সে, আর না শান্তিতে ঘুমাতে পারবে। ডায়েরিটা পড়া যেখান থেকে শেষ করেছিলো ঠিক সেখান থেকেই আবারও পড়তে শুরু করলো।
.
.
(চলবে….)
ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং শুধরে দেবার চেষ্টা করবেন। নেক্সট, নাইস না লিখে ছোট করে নিজেদের মতামত জানিয়ে যাবেন।🖤