তুমি আমার -পর্ব ২১

0
468

#তুমি_আমার
#পর্ব_২১
#লেখনীতে_নাজিফা_সিরাত

স্তব্ধ বাকরুদ্ধ চমকিত সিরাত।মন্ত্রমুগ্ধকর এই কণ্ঠধ্বনি।ঠান্ডা গলার কথাটা উড়ন্ত হৃদয়টাকে হিম শীতল করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।ওপাশের ব্যাক্তিটি কে বুঝতে বাকী রইলো না তার।স্থির হয়ে বসে রইলো।ওপাশ থেকে আর কিছু শোনা গেলো না।কিন্তু কল কাটে নি এখনও লাইনে আছে।সিরাত ধপাধপ পা ফেলে রুমে ফিরে এলো।এখানে আর এক মুহূর্ত থাকা যাবে না।হাতে থাকা ফোনটাকে বুকে জড়িয়ে থম মেরে কিছুক্ষণ বসে রইলো সে।আবারও বেজে উঠলে ফোনটি সিরাত ভ্রু কুঁচকে তাকালো ফোনের স্কিনে।আবারও সেই আননোন নাম্বার।দেখেই হা পা ঠান্ডা হওয়ার উপক্রম তার।একটু আগের কথা ভাবতেই মৃদু হাসলো সে।তখনকার কথা শুনে ফোন তোলার সাহস হলো না আর।সিরাত বুঝে উঠতে পারছে না এই লোকটার হঠাৎ হলোটা কি!ইনিও এতটা ঠোঁটকাটা হতে পারেন ভাবলেই অবাক হয়ে যায় সে।তার ভাবনার মাঝে ছেদ ঘটিয়ে ফোনটা পুনরায় বেজে উঠলো এবার ফোন হাতে তুলে এক বুক সাহস নিয়ে হ্যালো বলবে তার আগেই আদেশসূচক বাণী কানে এলো।যেই বাণী উপেক্ষা করার শক্তি নেই তার।

“পাঁচ মিনিটের ভিতর তোমাদের বাসার বা পাশের ছোট্র পাহাড়টায় চলে এসো।হ্যারি আপ!যদি লেইট হয় বা না আসো তাহলে আমি আসছি তোমার কাছে।নাউ ইউর চয়েজ”সিরাতকে কথা বলার না দিয়ে কলটা কেটে দিলো।সিরাত একবার ভাবলো যাবে না পরক্ষণে বাসায় আসার কথাটা মনে হতেই ঝটপট বাইরে বের হলো।এখন রাত প্রায় দশটা।বেরুনোও টাফ তবুও লুকিয়ে চুড়িয়ে সকলের নজর উপেক্ষা করে বেরুতে সক্ষম হলো সে।

❤️❤️❤️
বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদছে আরু।আজ সব বিশ্বাস ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেলো তার।ছেলে মানেই চরিএহীন লম্পট হয়।এরা কখনও এক নারীতে আসক্ত থাকতে পারে না।ক্ষণে ক্ষণে মন পাল্টায় এদের।আবার নিজের বাবা ভাইয়ের কথা মনে হতেই মতামত পাল্টালো সে।ওর চিন্তা শক্তি বললো সবাই এক নয়।কিছু কিছু পুরুষ এমন হয়।আবার কেউ কেউ একজনেই মও থেকে সারাজীবন কাটিয়ে দেয়।ওর বাবাও তো মাকে নিয়েই কাটিয়ে দিলো।আজও ভালোবাসা কমেনি এতটুকুও।রাদিফ ওকে ঠকিয়েছে কিন্তু ও পারবে না।ও নিজের সবটুকু দিয়ে রাদিফকে ভালোবেসেছে।আজীবন সেভাবেই বাসবে।ওর ভালোবাসা এতটা ঠুনকো নয় যে অল্পতে ভেঙ্গে গুড়িয়ে যাবে। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে যায় আরু।
❤️❤️❤️

রিয়া বসে বসে ভাবছে কীভাবে সিয়ামকে মনের কথা জানাবে সে।কিন্তু কিছুতেই কোনো ওয়ে খুঁজে পাচ্ছে না।সিয়ামকে প্রথমে টলারেট করতে না পারলেও কীভাবে যেন এখন ভালোবেসে ফেলেছে।লোকটা অন্যরকম একেবারে অন্যরকম।তার সাথে কারো তুলনা হয় না।জীবনে প্রথমবার কাউকে ভালো লাগার পরও কীভাবে নিজেকে সামলে নিয়েছে সে।কাউকে বুঝতে দেয় নি মনের ক্ষত।রিয়া সেই ক্ষত জায়গায় মলম লাগাতে গেলেও পারেনি।লোকটার ক্ষমতা অসীম।এখনকার যুগে যেখানে ছেলেরা নিজের পছন্দের মানুষটি না পেলে জোরপূর্বক হাসিল করার চেষ্টা করে নইলে মেয়েটার জীবনকে নরকে পরিণত করতে চায় সেখানে ও কিছুই করলো না।এই দিকটা আরো বেশি টানছে তাকে।

❤️❤️❤️
পাঁচ মিনিট হলো পাহাড়ের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে সিরাত।কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিটির দেখা সাক্ষাৎ মিলেনি এখনও।অন্যদিকে ভয়ে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে।চারিদিকে অন্ধকার শুধু চাঁদের আলোয় কিছুটা আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে।হঠাৎ পেটে কারো উষ্ণ পরশ পেয়ে কেঁপে উঠলো সে।বুঝতে বাকী রইলো না ব্যাক্তিটি কে।পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গাড়ে মুখ গুজলো আবেশ।সিরাত যেন জমে গেছে।লোকটার অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শে হৃদস্পন্দন থেমে যাওয়ার উপক্রম হয় তার।শ্বাস আটকে যায়।সিরাত চোখ বন্ধ করে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলো।আবেশ কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,

“অফ হোয়াইট সেলোয়ার কামিজে দারুন লাগছে তোমায়।ইচ্ছে করছে কামড়ে খেয়ে ফেলি।ডুব দিই তোমার মাঝে”।কথাটি বলতে বলতে গলায় হালকা দাঁত বসালো আবেশ।সিরাত কেঁপে উঠলো।সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেলো তড়িৎ গতিতে।হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো।জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো সে।জিভ দিয়ে শুষ্ক ঠোঁটদ্বয় ভিজিয়ে নিলো।ওর বেহাল অবস্থা দেখে মনে মনে হাসলো আবেশ।এতদিন ধরে ভালোবাসে অথচ ভালোবাসার মানুষের স্পর্শে এত ভয় এত লজ্জা।ওর লজ্জাটাকে আরেকটু বাড়িয়ে দিতে ওর দিকে ঘুরিয়ে ছেড়ে দিয়ে আবেশ বললো,

“ওইদিন কাঁজলের ঠোঁটে একটি চুমো খেয়েছিলাম ভেবে তুমি টানা ছয়দিন আমার সাথে দেখা করোনি।এখন তোমার কি উচিৎ নয় তোমার বরকে গুনে গুনে ছয় দু গুণে বারোটি চুমো খাওয়ার”এবার লজ্জায় নাজেহাল অবস্থা সিরাতের।এখন নিজের কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করছে তার।কেন সেদিন ভুল বুঝেছিল সে।এখন তার মাশুল এভাবে দিতে হবে ভাবেনি কখনও।মাথানিচু করে থরথর করে কাঁপছে।আবেশ একটু কাছে এসে বললো,

“কাজঁল কে এতটুকু ছুঁয়েছি ভেবে সহ্য হয়নি আবার আমার ছোঁয়াও তোমার সহ্য হয়না।কাঁপাকাঁপি করে অবস্থা নাজেহাল।এখন এই অধম কি করবে মহারাণী।একটু কাছে আসলে বউয়ের শ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম আবার পরনারীও ছোঁয়া বারণ তাহলে কি করা উচিৎ আমার”।আবেশের দিকে স্থির চাহনী নিক্ষেপ করলো সিরাত মুখে তার দুষ্টু হাসি।এখানে থাকলে এই লোকের বেফাঁস কথাবার্তায় হার্ট ফেল করে নয়তো শ্বাস কষ্ট হয়ে মারা যাবে এটা সুনিশ্চিত।আবেশের কথাগুলোর পাওা না দিয়ে নতজানু হয়ে বললো,

“আমি বাড়ি যাবো আমাকে পৌঁছে দিন”।এতে একটুও অবাক হলোনা আবেশ।যেন এটা জানাই ছিলো তার।একটু এগিয়ে এসে কপালে ভালোবাসার পরশ একে বললো,

“যা তোমার তা তোমারই।যে কোনো পরিস্থিতে বিশ্বাস হারিও না তাহলে ঠকে যাবে”!

❤️❤️❤️
কলেজে বসে গল্প করছে চার বান্ধবী।আয়ান আর মিনার অনুপস্থিত এখানে।সিরাত এদিক ওদিক তাকাচ্ছে মূলত আবেশ আর কাঁজলকে খুঁজছে সে।সেদিন ভুলবশত কি ব্যবহারটাই না করেছে ভাবলেই লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করে ওর।যেভাবেই হোক উনার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে তাকে আর সেটা আবেশের উপস্থিতিতেই।আরুর মনটা আজ বিষণ্ণ।কোনো দিকে কোনো নজর নেই তার।আবিদের বিয়ের দিনের সীনটা মনে পরলেই হুহু করে কাঁদতে ইচ্ছে করে তার।প্রথম প্রথম যতটা খারাপ লেগেছিলো এখন তারচেয়ে বেশি খারাপ লাগে।ঘৃণায় রিরি করে উঠে সারা শরীর।ওকে বিষণ্ণ দেখে কান থেকে ব্লুটুথ খুলতে খুলতে আয়েশা বললো,

“কিরে আরু তুই এই ছ্যাঁকা মার্কা ফেইস নিয়ে বসে আছিস কেন”?

“ছ্যাঁকা খেয়েছি তাই”আনমনে বলে উঠলো আরু।ওর কথাটি শেষ হতে না হতেই বিস্ফোরিত নয়নে তাকালো তিনজনে।সিরাত অবাকত্ব নিয়ে বললো,

“সিরিয়াসলি?”সকলের দৃষ্টি এখন আরুর মুখশ্রী তে নিবদ্ধ।আরু অসহায় ফেস নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,”হুম!” ব্যাস প্রশ্নের ঝুড়ি খুলে বসে পরলো তিনজনে।ছেলেটা কে?কি করে?কোথায় থাকে?কতদিন ধরে এসব চলছে?এত সব প্রশ্ন শুনে চক্ষু কুঠর হতে বেড়িয়ে আসার উপক্রম আরুর।এদের দিকে কাঁদোকাঁদো ফেইস নিয়ে তাকিয়ে বললো,

“আস্তে!একটু ধীরে সুস্থে প্রশ্ন কর।এভাবে উওর দেওয়া যায় নাকি”।সকলে চুপ হয়ে গেলো এরপর আরু সবটা খুলে বললো।সবকিছু শুনে মনে মনে রিয়া বিরবির করলো,

“দোস্ত রে তোর কপাল আর আমার কপাল সেইম।দুজনেই প্রেমে না মজে একা একা কষ্ট পেয়ে মরছি।অন্যদিকের মানুষটার সেদিকে কোনো নজরই নেই”।আয়েশা কপাল কুঁচকে বললো,

“শেষে তুইও সিরাতের দলে নাম লিখালি।আমার বাবা এসব আসে না।কেন জানিনা পারি না।কত ছেলের সাথে ফ্লাটিং করি কিন্তু কাউকে মন থেকে চাই না জাস্ট টাইম পাস”।আয়েশার কার্যকলাপ নিয়ে অনেকবার বন্ধু মহল বকেছে ওকে কিন্তু তাতে কখনও কোনো পাওা দেয় নি সে।তাই সবাই হাল ছেড়ে দিয়েছে।আজ আবার সিরাতের ইচ্ছে হলো তাই বললো,

“আয়েশা কি করিস এসব তুই এবার বাদ দে সুধরে যা।আমার ভয় হয় তোর ক্ষণিকের খুশির জন্য কেউ না সত্যি সত্যি কষ্ট পায়”।আয়েশা বীরের মতো মাথা উঁচু করে বললো,

“ওসব কিছুই হবে না কারণ তারাও সেইম জাস্ট টাইম পাস করে নো টেনশন ডার্লিং”।আরু মৃদু হেসে বলে,

“আজ এসব বলছিস একদিন ঠিক কারোর সাথে জড়িয়ে যাবি।তখন তাকে ছাড়া বাঁচা প্রায় অসম্ভব মনে হবে তোর কাছে”।এবার আরুর দিকে নজর গেলো সিরাতের।মেয়েটাও তার মতোই কষ্ট পাচ্ছে সেও তো আবেশকে কষ্ট পেত।কিন্তু এখন তার সুখের দিন আগত।আরুর সামনে পরে রয়েছে অপার সুখ যা সে নিজেও জানে না।আরুকে সকলে মিলে সাও্বনা জানিয়ে রাদিফ ভুলতে বললো।কিন্তু চাইলেই কি ভুলা যায়।মন কি শোনে কারো বারণ।

নীরব কিছুটা অন্ধকারাচ্ছন্ন পুরো ক্লাস রুম।সেখানে দাঁড়িয়ে আছে দুজন মানব মানবী।এক জন মোহিত চোখে তাকিয়ে আছে আর অন্যজন ঘৃণায় মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে।ছেলেটি দু হাত দ্বারা দেয়ালের সাথে আটকে রেখেছে তাকে।মেয়েটি নিজেকে না চাইছে সেই মানবে আবদ্ধ করতে আর না চাইছে বন্ধন মুক্ত হতে।সে স্থির দাঁড়িয়ে আছে।

আজকে দেওয়ার ইচ্ছা ছিল না তবুও আপনাদের কথা বিবেচনা করে দিলাম।আমি অসুস্থ আগামীকাল নাও দিতে পারি।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here