#তুমি_আমার
#পর্ব_০৫
#লেখনীতে_নাজিফা_সিরাত
গ্রীষ্মকাল পড়ন্ত বিকেলবেলা।রিয়া এদিক সেদিক ঘুরে কেনাকাটাতে ব্যস্ত।কিছু কসমেটিক্স আর ড্রেস কিনতে এসেছে সাথে ওর কাজিন তিহানা।অত্যন্ত সুন্দরী।ব্যবহারও বেশ মার্জিত।হলুদ রঙের একটি থ্রি পিস পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।গায়ের রঙের সাথে হলুদ রঙ খুব সুন্দর ফুটে উঠেছে।দুজনে মিলে এটা সেটা দেখছে।কিন্তু কিছুই পছন্দ করতে পারছে না।হঠাৎ রিয়া একটা হ্যান্ড ওয়াচ দেখে ওটাতে হাত দিতে গেলো আরেকটি বলিষ্ঠ হাত সেটা তাঁর আগেই কেড়ে নিলো।হাতে নিয়ে ঘড়িটিকে ভালোভাবে দেখতে লাগলো সে।লোকটিকে দেখে বেশ রেগে গেলো রিয়া।রাগী কন্ঠে বলল
-‘আপনি!এখানেও চলে এসেছেন’?ভ্রুকুটি করে রিয়ার দিকে তাকালো সিয়াম।আরে এটা ত সিরাতের পাগল বন্ধু সেই ঝগড়ুটে।সেদিনের কথা মনে হতেই ঢোক গিললো সে।আজও যদি রাস্তার মত আবোল তাবোল বকতে থাকে তাহলে আমার মান সম্মান সব শেষ।তবুও সাবলীল ভাবে জবাব দিল….
-‘কেন আমার আসা বারণ নাকি’।
-‘বারণ বলিনি!যাগগে আপনি আমার জিনিস নিয়েছেন কেন’?সিয়াম অবাক হয়ে বলল….
-‘আপনার জিনিস?আপনার জিনিস আমি কখন নিলাম’?ঘড়িটিকে দেখিয়ে রিয়া বলল….
-‘এই তো এটাই আমার ছিল।আগে আমি চুজ করে হাত দিতে যাব অমনি আপনি কেড়ে নিয়েছেন।আমার জিনিস আমাকে ফেরত দেন’।
ওর কথায় এবার হাসতে লাগলো সিয়াম বলল….
-‘তাহলে এটা আপনার জিনিস কি করে হলো।এটার পিল পে করেছেন করেন নি।তাছাড়া আগে হাতে আমি নিয়েছি তাই এটা আমার।সো বাই মিস ঝগড়ুটে’।বলে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে ইনোসেন্ট লুক নিয়ে রিসেপশনে চলে গেলো।ওদিকে রিয়া রাগে ফুস ফুস করে বকাবকি করতে ব্যস্ত। রিসেপশনিষ্টকে হুবহু দুটো প্যাক করে দিতে বলল।সে অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানালো এটা একটাই আছে আর নেই।তাই সিয়াম ভাবলো মিস ঝগড়ুটে কে দিয়ে দেবে। আবার রিয়ার কাছে গেলো।ওখানে যেতেই রিয়া বলল….
-‘কি হলো পিছু ছাড়ছেনই না।এখনই না এখান থেকে গেলেন।আবার এসেছেন কেন’?
-‘এই এখন সব কথার কাজের কৈফত কি আপনাকে দিতে হবে।যত্তসব আমার ইচ্ছে হলে আমি এখানে সারাদিন ঘুরব তাতে আপনার কি’।তিহানাকে উদ্দেশ্য করে বলল’তুমি খুব ভদ্র এবং সুইট!পাশের টা মারাত্মক অভদ্র আর ঝগড়াটে’!আর এক মুহূর্তও না দাঁড়িয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করলো সে।মেজাজ টাই খাটাপ করে দিলো।যত চাই বোনের ফ্রেন্ড বাজে ব্যবহার করব না ততই করতে বাধ্য করে।রিয়া এখনও রেগে আছে পাশ থেকে তিহানা বলল….
-‘আপু ছেলেটা কিন্তু জোশ’!
🍁🍁🍁
আজ পুরো দশ দিন পর কলেজ এসেছি।আজকেও আসতাম না কিন্তু আজকে আবেশ স্যারের ক্লাস টেস্ট আছে।এতদিন বন্ধুদের কাছ থেকে নোটস নিয়ে পড়েছি। আম্মুর বকাবকি এতদিন আমলে না নিলেও গতকাল হেড কোয়ার্টার থেকে আদেশ এসেছে কলেজে যাওয়ার।ব্যস হয়ে গেলো এবার কলেজ না গিয়ে উপায় নেই।আম্মুর শত কটু কথা বকাবকি কাজে না দিলেও আব্বুর ঠান্ডা মাথার একটা কথাই যথেষ্ট।আমরা এমনই মা’কে উপেক্ষা করার শক্তি থাকলেও বাবার একটা কথা উপেক্ষা করার শক্তি বা সাহস কোনোটাই নেই।কলেজ এসেই সবার কথার তলে জ্বলসে মরছি।আরু ফুলে বম হয়ে আছে।আয়েশা সবকিছুর জন্য নিজেকে দায়ী করছে।ওদের সাথে সব ঝামেলা চুকিয়ে ক্লাসে যাচ্ছি।মনে মনে একটাই প্রার্থনা আর যেন খারাপ কিছু না হয়।এবার যেন উনি উনার মত আর আমি আমার মত থাকতে পারি।আট দশটা টিচার স্টুডেন্টের মত আমার সাথে বিহেভ করেন তিঁনি।ক্লাসে এসে ঢুকলেন আবেশ স্যার।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।ঘেমে সাদা শার্ট একদম শরীরের সাথে লেপ্টে লেগে হয়তো কলেজ ঢুকেই ক্লাসে চলে এসেছেন।আমার দিকে একবার দৃষ্টিপাত করেই চোখ সরিয়ে নিলেন উনি।সকলের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলে এক্সাম নিতে শুরু করলেন।লিখার মধ্যেখানে আচমকা আমার নাম ধরে ডাকলেন উনি।উনার মুখে আমার নাম শুনে চমকে উঠলাম।আজকে আবার কি হলো আমি তো কোনো ব্লান্ডার করিনি তাহলে।নিজেকে ধাতস্থ করে অসহায় মুখ করে উঠে দাঁড়ালাম আমি।আমার দিকে নজর না দিয়ে পেছনে একটি সিট দেখিয়ে বললেন….
-‘ তুমি তোমার খাতা নিয়ে এখানে এসো’।আমি কোনো কথা না বলে সকলের দিকে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চুপচাপ সেখানে গিয়ে বসলাম।একে একে আমাদের সবাইকে আলাদা আলাদাভাবে বসালেন তিনি।এর অর্থ ইতিমধ্যে সকলের কাছে জলের মত পরিষ্কার।আমরা টুকলি করতে না পারি তাই এই ব্যবস্থা।উনার মীর জাফরি বুদ্ধি দেখে হতাশার শ্বাস ফেললাম আমি।
আজ আরুর বাসায় এসেছি।আবিদ ভাইয়ার বিয়ের আর মাএ তিন দিন বাকী।যদিও আমার এক সপ্তাহ আগে আসার কথা ছিল কিন্তু উনার সাথে ঝামেলার জন্য এই বাসায় আর আসতে চাই নি।কিন্তু আরু আর আন্টির জেদ আর গাল ফুলানো দেখে অনিচ্ছা স্বও্বেও আসতে হলো।এসেও শান্তি নেই আন্টির শত কথা শুনতে হলো।যত যাইহোক উনারা আরুর থেকে কম ভালোবাসেন না আমায়।বাসার কেউ বাড়িতে নেই।উনিও আসেন নি এখনও।সবাই যার যার কাছে বাইরে আছে।আরু বাগানে গেছে আমার ভালো লাগছিলো না তাই আন্টির পাশে রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে আছি।আন্টি আমাকে বললেন…..
-‘শুনলাম আবেশ নাকি তোকে অনেক কথা শুনায় ক্লাসে।সেদিন কি নিয়ে নাকি বিচ্ছিরি একটা কান্ড ঘটিয়েছে।সেজন্য কি তুই এখানে আসতে চাস নি’?
আন্টির কথায় বিপাকে পরে গেলাম।এখন কি বলব আমি।যতই হোক উনি আমার টিচার সেই অর্থে তাঁর চোখে খারাপ কিছু লাগলে তিনি আমাকে শাসন করতেই পারেন।তাই বলে এটা নিয়ে বাসায় উনার মাকে বলা মানায় না।আমার শব্দ ভান্ডারে উপযুক্ত বাক্য পেতে ব্যর্থ হওয়ায় চুপ করে রইলাম।আমাকে চুপ থাকতে দেখে আন্টি বললেন….
-‘মা রে ওর ব্যবহারে রাগ করিস না।এমনিতেই খুব ঠান্ডা মেজাজ কিন্তু রাগ উঠলে কি বলে মাথায় থাকে না।আজ আসুক বাসায় খুব বকে দেব’বলে মুচকি হাসলেন তিনি।আমি বাধা প্রধান করলাম….
-‘না আন্টি এই নিয়ে উনাকে কিছু বলবেন না।কারণ কলেজে আমার আর উনার সম্পর্ক টিচার স্টুডেন্টের তাই এইগুলো বাসায় না টানাই ভালো’।আমরা কথা বলছি তখনই হন্তদন্ত হয়ে বাসায় ঢুকলেন উনি।রান্নাঘরে দৃষ্টিপাত না করেই বললেন….
-‘আরু আমার রুমে পাঁচ মিনিটে এক কাপ কফি নিয়ে আয়’।
ছেলের এমন হুকুম দেখে ফুস করে নিশ্বাস ছাড়লেন তিনি।মেজাজ ভালো নেই বুঝা যাচ্ছে তাঁর।তাই চট করে কফি করে নিলেন।এবার মসিবতে পরলাম আমি।সবাই বাঘের সামনে খাবার দেওয়ার জন্য আমাকেই পায় নাকি ভেবে কুল পাই না আমি।আন্টি অনুনয়ের স্বরে বললেন….
-‘সিরাত এই কফিটা ওকে দিয়ে আসো না।আমি এখন তরকারি বসাচ্ছি দেরী হলে রাগ করবে প্লিজ!উনার করুন চাহনী উপেক্ষা করে না বলার সাহস যোগাতে অক্ষম হলাম আমি।বাংলার পাঁচের মত মুখ করে কাপটা হাতে তুলে নিলাম।উনি হয়তো বিষয়টা বুঝতে পেরেছেন তাই মিষ্টি হেসে বললেন….
-‘কিচ্ছু হবে না দেখিস’।উনার কথায় কিছুটা ভরসা খুঁজে পেলাম।অরণা মাথায় দিয়ে ধীর পায়ে দরজার সামনে দাঁড়ালাম।কিন্তু কি করবো ডাকবো নাকি না।দরজায় হাত দিতেই দরজা ফাঁক হয়ে গেলো।বিছানায় মুখ গুঁজে উল্টো হয়ে সটান শুয়ে আছেন তিনি।উনাকে দেখে হাসি থামছে না আমার।একটা ধামড়া ছেলে কি করে এভাবে শুতে পারে।বিনা শব্দে কিছুক্ষণ হেসে রুমে ঢুকলাম।বিছানার পাশের ছোট্র টেবিলটায় কাপটা রাখতেই হালকা স্বরে বললেন….
-‘ওখান থেকে গিয়ে মোভ নিয়ে আয়।গো ফাস্ট মাথা ব্যাথায় মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে।মেডিসিনেও কাজ হয় নি’।
এই কোন মসিবতে পরলাম আমি এখন নিজের কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করছে আমার।ওদিক খুঁজে মোভ হাতে উনার সামনে দাঁড়িয়ে ধরলাম কিন্তু উনি কোনো রেসপন্স করলেন না।ছোট্র করে বললেন ম্যাসাজ করে দে।ততক্ষণে যদি ঘুম চলে আসে ঘুমাব।এবার অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছালাম।এটা কি বলছেন উনি আমি পারব না।তাই মোভ টা উনার পাশে রেখে চলে যেতে উদ্যত হলে বিরক্তির সুরে বললেন….
-‘হ্যাঁ এখন তো দিবি না।কারণ কোনো ঘুষ পাস নি।মাঝে মাঝে মনে হয় তুই আমার বোন না।নইলে কি করে সবসময় সুদ আসলের হিসেব কষিস।যাইহোক ড্রেসিং টেবিলে দেখ চকলেট বক্স রাখা আছে।এবার ত হাত লাগা’।
আমি এখনও স্ট্যাচুর মত দাঁড়িয়ে আছি।এটা আমি পারব না কিছুতেই না।আমার পক্ষে কেন আমার আত্মার পক্ষে অসম্ভব।তাই মুখ ফুটে বলেই ফেললাম…..
-‘সরি আমি পারব না’।
-‘ঘুষেও কাজ হয়নি নাকি আরও কিছু চাস বল’।
-‘দেখুন ঘুষ সুদ এসব কিছুর আমার প্রয়োজন নেই।আমি আরু নই যাচ্ছি ওকে পেলে পাঠিয়ে দেবো’
এতক্ষণে খেয়াল হলো আমার।আচ্ছা সিরাতের গলা শুনলাম মনে হলো।এটা নিজের কল্পনা নাকি সত্যি।নিজের ভাবনায় সুতো কেটে বিছানায় উঠে বসলাম।সামনে তাকিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেলাম সত্যি এটা সিরাত।এতক্ষণ আরু ভেবে সিরাতের সাথে কথা বলছিলাম ও মাই গড।তা আমি কি করে জানবো এটা কে ইডিয়ট একটা।তাছাড়া আমি ত তাকাই নি এই বাড়িতে আরু ছাড়া এমন পিচ্চি আর কেউ নেই।তাই ও ধরে নিয়েছিলাম বিস্মিত হয়ে বললাম….
-‘তুমি!তুমি এখানে কি করছো’?ভ্রু কুটি করে তাকালাম আমি এতক্ষণ এত কাজ করিয়ে এখন বলছেন ‘তুমি এখানে কি করছো’ নিজের মনে কথাগুলো আওড়াতে লাগলাম।তারপর উনাকে সবটা বলে বের হচ্ছি তখন পেছন থেকে কিছু কথা কর্ণপাত হলো কিন্তু কিছু বললাম না!
-‘এই জেনারেশন গুলো বড্ড অদ্ভুত টাইপের।কাজের সময় মুখে খুলো পেতে থাকবে আর অকাজে মুখ থেকে কথার খই ফুটবে।এইজন্যই এদের বলে কাজের বেলায় অষ্টরম্ভা আর কথার বেলা ঠিক’।
{গতকাল দেইনি বলে বকাবকি, রাগ, অভিমান, গাল ফুলানোর মোটেও প্রয়োজন নেই।সম্ভব হলে ছোট করে রাতে আরেক পার্ট দিব।কি লিখেছি জানিনা।ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন!}
#চলবে