তুমি বললে আজ – পর্ব ৪০

0
804

#তুমি_বললে_আজ
লেখনীতেঃ #রিধিমা_জান্নাত_রূপা
পর্বঃ ৪০.

.
‘মা’ এক অক্ষরের এই শব্দটার মাঝে ঠিক কতটা আবেগ, অনুভূতি, ভালোবাসা জড়িয়ে থাকে সেটা মা হবার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত জানা খুবই কঠিন। মিশ্র এই অনুভূতিতে, এই মুহুর্তে আম্মুর বলা ‘আগে নিজে মা হ, তারপর বুঝবি মা হবার কেমন জ্বালা, কি অনুভূতি।’ কথাটা বারংবার মনে পরতে লাগলো। আসলেই এই অনুভূতিটা প্রখর ভাবে গেঁথে গেছে মনে, যখন তাসফির কোলে থাকা পিচ্চি পিচ্চি হাতটা আলতো করে ছুঁয়ে দিলাম। সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে আলতো ভাবে কোলে নিয়ে আছেন তাসফি। ছোট মুখটার দিকে তাকিয়ে প্রশান্তিতে ছেয়ে গেল আমার মনটা। মনে হতে লাগলো স্বপ্নে দেখা সেই বাচ্চা মেয়েটার কথা।
জ্ঞান ফেরার পর বাচ্চাটা সুস্থ আছে কি না, ভেবে কেমন জানি ছটফটানি শুরু হয়েছিলো মনে। নার্স এসে বলার পরও কেন জানি শান্ত করতে পারছিলাম না নিজেকে। আমার বাচ্চাটাকে এক নজর দেখার জন্য উত্তেজিত হয়ে পরেছিলাম মুহুর্তেই। ঠিক তখনই তাসফি ওকে কোলে করে ভেতরে নিয়ে আসেন।

তাসফি কে ইশারা করতেই আরও একটু ঝুঁকে নিলেন ওকে, আলতো করে ওর গালে হাত ছুঁয়ে দিতেই, কান্নায় দলা পাকিয়ে গেল গলায়। ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম আমি। তাসফি ওকে আমার পাশে শুইয়ে দিয়ে, আমাকে এক হাতে জড়িয়ে নিলেন। কপালে বেশ কিছুক্ষণ ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে বললেন,
“আমাদের মেয়ে রুপু, একদম তোর মতো মিষ্টি দেখতে।”

“উহুম! আপনার মতো। একদম ওর বাবার মতো।”

“আই লাভ ইউ রুপু। এত সুন্দর একটা পুতুলকে আনার জন্য। আমাকে বাবা ডাকটা উপহার দেবার জন্য।”

ওনার সবগুলো বলা কথার মাঝে পরপর ঠোঁট ছুঁয়ে দিলেন আমার কপালে। মেয়েকে এক হাতে আগলে নেবার চেষ্টা করে অন্য হাতে তাসফির গালে হাত রাখলাম। এই সময়টাকে এভাবেই বেঁধে রাখতে ইচ্ছে হচ্ছে, এভাবেই শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত এই দুজনের সাথে কাটিয়ে দেবার বাসনা জাগছে। জানি না আদোও আমার এই ইচ্ছেটা পূরণ হবে কি না। তবুও চেষ্টা চালিয়ে যাবো আমি। কঠিন পরিস্থিতির সাথে মোকাবেলা করে যাবো প্রতিনিয়ত।

.
হাসপাতাল থেকে পাচঁদিন পর বাসায় আনা হয় আমাকে। সময়ের আগেই ডেলিভারি হওয়ায় আরও কয়েক দিন থাকতে বলা হয়েছিলো। কিন্তু হাসপালের দম বন্ধকর পরিবেশ অ/স/হ্য হয়ে উঠেছিলো আমার কাছে। তাই এক প্রকার জেদ করেই বাসায় আসা। সেদিন রাতেই সবাই ঢাকায় চলে এসেছে আমার কথা শুনে। এ-দিকটা গুছিয়ে দিয়ে বড় চাচা এবং আব্বু চলে গেলেও ফুপা থেকে গেছেন। এই কয়েকদিন আম্মু, বড়মা এবং ফুপি সবসময় আমার পাশে থাকার চেষ্টা করেছে। আার তাসফি, সে তো সবসময় আমাকে ও মেয়েকে সঙ্গ দিয়ে গেছেন।
মেয়েকে বাসায় আনার পর সবকিছুই যেন চেন্স হয়ে গেল। সবাই মেয়েটাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলো। এর মাঝে সময় করে একদিন ছোট খাটো ভাবে আকিকা দিয়ে নাম রাখা হলো মেয়েটার রাহিয়ান তামায়া। আমার নামের সাথে মিল রেখে তাসফি ওর নাম রাখলো রাহিয়ান, এবং ওনার নামের সাথে মিল রেখে আমি ওর নাম দিলাম তামায়া।

শত কষ্ট এবং মন খারাপের মাঝেও মেয়েটা সবার খুশির কারণ হয়ে দাঁড়ালো। রিফাপু, রিমি আপুও এসে দেখে করে গেল আমার সাথে। চাচাী, খালা ও ফুপুরাও একএক করে দেখে গেলেন আমাদের। তাদের প্রথম নাতনিকে নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাতে শুরু করলো ফুপি, আম্মু ও বড়মা। আমার অসুস্থ হবার কথাটা সবাই কিছুটা ভুলে নাতনিকে নিয়ে মেতে থাকতে শুরু করলো। সারাদিন মনমরা হয়ে থাকা তাসফিও মেয়েকে কোলে নিলে খুশির ঝিলিক দেখা দিতো। সবার এত আনন্দের মাঝে আমার মাথা ব্যাথার কথাটা ভুলে যেতে লাগলাম। অ/স/হ্য য/ন্ত্র/ণা সহ্য করে হাসি মুখে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যেতাম। কিন্তু এতকিছুর পরও ঠিকই ধরা খেয়ে যেতাম আমি তাসফির কাছে। সারাদিন নজরে রাখতেন উনি।
মাথায় তীব্র য/ন্ত্র/ণা সহ্য করলেও মনের মাঝে ভয়টা গেঁথে যেতে শুরু হলো। প্রতিনিয়ত ভাবনায় চলতে লাগলো আমি কি তাসফি এবং তামায়ার সাথে এই সুখের মুহুর্তগুলো আরও কাটাতে পারবো, নাকি খুব অল্প সময়ের ব্যাবধানে তাদের থেকে আলাদা হয়ে যাবো।

.
তিনটা মাস যখন পেরিয়ে গেল তখন একদিন নিজের সহ্যশক্তি হারিয়ে গেল হঠাৎ করেই। তামায়াকে খাওয়ানো সময় হঠাৎ করেই অ/স/হ্য যন্ত্রণায় ছটফট করে উঠলাম। মেয়েটা চিৎকার করে কাঁদলেও থামাতে পারলাম না ওকে। তামায়ার চিৎকারে আম্মু ও ফুপি ছুটে আসলো রুমে। ফুপি মেয়েটাকে কোলে নিলো আর আম্মু আমাকে ধরে বলতে লাগলো, ‘কি হয়েছে? হঠাৎ এমন করছি কেন?’ কিন্তু কোন জবাব দিতে পারলাম না আমি। দু’হাতে মাথা চেপে গননা বিহীন চিৎকার করে গেলাম শুধু। ফুপি হয়তো আমার অবস্থা বুঝতে পেরে তাসফি কে ফোন করলো। প্রায় বিশ মিনিটের মতো সময় নিয়ে ছুটে এসে রুমে ঢুকলেন উনি। ওনাকে দেখলেও কথা বলার মতো শক্তি ছিলো না আমার মাঝে। উনি ছুটে এসে দু’হাতে শক্ত করে চেপে ধরলেন মাথা দু’পাশে। আজকে যেন তাতেও ব্যাথাটা কিঞ্চিৎ পরিমাণও কমলো না। আমি আগের ন্যায় ছটফট করতে লাগলাম শুরু। আম্মু ব্যাথার ওষুধ খাওয়াতে চাইলেও তা খেতে পারলাম না কিছুতেই। প্রায় দশ মিনিট পর ড. রিয়াদ আসলেন রুমে। আমাকে এভাবে ছটফট করতে দেখে একটা ইনজেকশন পুশড করে দিলেন হতে। মিনিট পাঁচেক পর অনুভব করলাম মাথা ব্যাথাটা আস্তে আস্তে কমে আসতে লাগলো। সাথে চোখ দুটোও বন্ধ হয়ে গেল। তাসফি কে কিছু একটা বলছেন ড. রিয়াদ কিন্তু সেসবের কিছুই আমার কান পর্যন্ত পৌঁছালো না।

.
পনের থেকে বিশ দিনের মাঝেই ভিসা রেডি করে টিকিট কাটলেন তাসফি। আজকে রাতে চেন্নাইয়ের ফ্লাইট। আমার ব্রেইন টিউমারের অপারেশনের ব্যাবস্থা চেন্নাইয়ের ভেলুতে একটা হসপিটালে করা হয়েছে। সেখানে যাবার পর পরীক্ষা করে অপারেশন শুরু করবে। আম্মু ও ফুপির মাঝে কেউ একজন সাথে যেতে চাইলেও তাসফি বারণ করে দেয়। দুজনে মিলে মেয়েকে দেখে রাখার কথা বলে দেন। বারবার বলেও মেয়েটাকে সাথে নেবার জন্য রাজি করাতে পারি নি তাসফি কে। তাসফি এবং বড় চাচাই শুধু যাবেন আমার সাথে। জানি না সেখান থেকে আদোও ফিরতে পারবো কি না। মেয়েটাকে একটু ছুঁয়ে আদর করতে পারবো কি না? তাসফির ভালোবাসা পাবার সুযোগ পাবো কি না। হয়তো এগুলোর উত্তর না -ই থেকে যাবে। কালকে সারারাত এক ফোঁটাও ঘুমাতে পারি নি। মেয়েটাকে কোলে নিয়ে তাসফির বুকে কাটিয়ে দিয়েছি সারারাত। হয়তো এই মুহুর্তটাকে আর কখনোই নাগালে পাবো না। তাসফির বুকে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে ওনাকে বলেছিলাম,
“আমার কিছু হলে আপনি আবার বিয়ে করবেন কিন্তু, নিজের জন্য না হলেও তামায়ার জন্য করবেন। ওকে কখনোই মায়ের অভাব বুঝতে দিবেন না। মা বলে ডাকা থেকে বঞ্চিত করবেন না ওকে। কিন্তু আপনার কাছে আমার জায়গটা কাউকে দিবেন না প্লিজ, আপনাকে আমি কারোর সাথে শেয়ার করতে পারবো না, দূরে থেকেও কাউকে সহ্য করতে পারবো না আমি আপনার সাথে।”

আমার কথাগুলো শুনে কিছু না বলে, নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে শক্ত চেপে ধরেছিলেন নিজের সাথে। পর মুহুর্তেই তরল কিছুর অস্তিত্ব অনুভব করেছিলাম নিজের ঘাড়ে। উনি কান্না করছেন বুঝতে পেরে ভেতরটা হু হু করে কেঁদে উঠলো আমার। মুল্যবান জিনিসগুলো হারিয়ে ফেলার ভয়ে তোলপাড় শুরু হতে লাগলো বুকের বা পাশে।

জানি না, আমার স্বামী, মেয়ে, সাংসার ফেলে রেখে যাবার পর আর কখনো ফিরতে পারবো কি না না। ছুঁতে পারবো কি না তাদের কে এবং আমার সংসারের প্রতিটি জিনিস গুলোকে। আমার অবর্তমানে কে-ই বা আগলে রাখতে পারবে এগুলো কে? শুধু চাইবো যে-ই আসুক না কেন, আগলে রাখুক আমার ফেলে যাওয়া সংসারটাকে, আমার জায়গাটা রেখে দিয়ে ভালোবাসুক আমার সন্তান ও স্বামীকে।

.
পরের আরও কয়েক পৃষ্ঠা পাল্টেও আর কোন লেখা দেখতে পেল না কিয়ানা। শেষ পরিণতি জানার জন্য উত্তেজিত হয়ে উঠলো। ডায়েরির শেষ পাতা পর্যন্ত উল্টে পাল্টে দেখেও আর কিছু পেল না। চোখ যেন দু’টো তো মুহুর্তেই ভরে উঠলো। ঠিক বুঝতে পারলো না সেটা দুঃখের নাকি খুশিতে। রূপার শেষ পরিণতিটা জানতে না পারলে কিছুতেই স্বস্তি পাবে না সে, খুশি হতে পারবে না। কিন্তু কিছুটা আশার আলো দেখতে পেল যেন, ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পাবার একবিন্দু অনাকাঙ্ক্ষিত ইচ্ছে। পর পর আরও কয়েকবার ডায়রির পাতায় শেষ লেখাগুলো পড়লো। বোঝার চেষ্টা করলো রূপা তাসফির জীবনে দ্বিতীয় কোন নারীর আগমনের কথাটা স্পষ্ট ভাবে বলেছে। অনুমতি দিয়েছে তাসফি এবং তার মেয়ের জীবনে কাউকে প্রবেশ করার। কিন্তু সবার আগে রূপার শেষ পরিণতি জানাটা তার জন্য ভীষণ জরুরি। কিন্তু বিগত দুই মাস ধরে লাগাতার ভার্সিটিতে যাওয়া আসা করলেও তাসফি স্যারের বউ বা বাচ্চার ব্যাপারে কিছুই শুনে নি সে। রূপারও একই ভার্সিটিতে পড়ার কথা থাকলেও তাসফি স্যারের সাথে কোন মেয়েকে চোখে পরে নি তার। তাহলে কি রূপা আর….

.
সকালেই ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস কিয়ানার। আজকে বাকি রাতটা ঘুমানোর সময়ও ডায়রির ব্যাপারটা তাকে তাড়া করে বেড়িয়েছে যেন। তাই ঘুমটাও প্রতিদিনের তুলনায় তাড়াতাড়ি ভেঙে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে ডায়েরিটা নিয়ে বারান্দায় বসে পরে, শেষ টুকু জানার জন্য। কিন্তু শেষ হয়েও যেন শেষ করতে পারলো না।
কালকে ভার্সিটির লাইব্রেরিতে ডায়রিটা পরে থাকতে দেখে কিয়ানা। কৌতুহল বসত ডায়েরিটা তুলে নিয়ে দেখতে থাকে। ডায়রির মালিক কে খোঁজার চেষ্টা করেও খুঁজে পায় না। আগামীকাল খুঁজে দিয়ে দিবে ভেবে নিজ ব্যাগে পুরে নেয়। বাসায় এসে ব্যাগটা খুলতেই নজরে পরে ডায়েরিটা। প্রথম পাতা খুলেই তাসফির পুরো নামটা দেখে অবাক হয়ে যায় কিয়ানা। কৌতুহল দমাতে না পেয়ে পড়তে শুরু করে।

নিজেকে খুব একটা শান্ত রাখতে পারছে না কিয়ানা। যতদূত সম্ভব তাকে ভার্সিটিতে যেতে হবে, তবেই হয়তো বাকিটুকু জানতে পারবে সে৷ সময়টাও প্রায় হয়ে গেছে ভার্সিটিতে যাবার। ঝটপট রেডি হয়ে বাবাকে বলে বেরিয়ে পরলো কিয়ানা। মা থাকলে নিশ্চিত আধা ঘন্টার আগে বেরোতে পারতো না, কিন্তু আজকে আর সেই ঝামেলাটা নেই।

.
ক্যাম্পাসে আসতেই তার বান্ধবী মিমি জরুরি কথা আছে বলে হাত ধরে টানতে লাগলো। কিয়ানা ছাড়িয়ে নিতে চাইলেও পারলো না। অগ্যতা যেতে হলো ক্লাস রুমের দিকে। মিমি কিয়ানার হাত ধরে টেনে নিয়ে কোণায় একটা বেঞ্চে বসালো। তারপর নিজেও বসে কিয়ানার দিকে এগিয়ে এসে আস্তে করে বললো,
“জানিস কিয়ানা, অনেক বড় একটা সত্যি জানতে পরেছি। আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না দোস্ত।”

প্রচন্ড বিরক্ত হলো কিয়ানা। বিরক্ত সুরেই বলে উঠলো,
“না বললে জানবো কি করে? এত হেয়ালি না করে কি বলবি বল।”

“জানিস? তাসফি স্যার বিবাহিত, স্যারের একরা মেয়েও আছে। ওনাকে দেখে বোঝা যায় নাকি বল? ইস্! কথাটা শোনার পর থেকেই কষ্টে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে, তোর জন্য।”

এবার আরও বেশি বিরক্ত হলো কিয়ানা। কপাল কুঁচকে মিমির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘জানি আমি।’
কিয়ানার কথায় মিমি প্রচন্ড অবাক হলো। কিয়ানা কিভাবে জানে সেটাই বোঝার চেষ্টা করলো। কিছু বলতে চাইলেও বলতে পারলো না। তার আগেই ক্লাসে স্যার ঢুকে গেল।

.
টানা তিনটা ক্লাস শেষ করে তবেই বাইরে আসতে পারলো কিয়ানা ও মিমি। মিমি ক্যানটিনে যেতে চাইলেও কিয়ানা একটু পর আসছি বলে তাকে একাই যেতে বললো। কিয়ানার এখন একটাই উদ্দেশ্য, যে করেই হোক রূপার শেষ পরিণতিটা তাকে জানতেই হবে। মিমি ক্যানটিনের দিকে গেলে, সে পিছন ফিরে চলে আসতেই হঠাৎ ধাক্কা লাগলো কারো সাথে। ঠিক কার সাথে ধাক্কাটা লাগলো সেটা দেখার জন্য তাকাতেই ভেসে আসলো আধো বুলিতে কিছু কথা।
“তুমি পঁতা, আমাকে ফেলে দিত্তো কেন? বাবাই কে বলে দিবো কিন্তু। বাবাই খুব মালবে তোমাকে। ”

কিয়ানা সেদিকে তাকাতেই দেখে পেলো ফুটফুটে একটা বাচ্চা মেয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছে। বাচ্চা মেয়েটার আধো বুলিতে কথাগুলো শুনে হেঁসে উঠলো কিয়ানা। নিচু হয়ে মেয়েটার সমান হয়ে হালকা করে গাল টেনে নিয়ে বললো,
“বাবাই কে বলে দিবো? নাম কি তোমার বাবাইয়ের?

“তোমাকে বলবো ক্যানু?”

বাচ্চা মেয়েটার কথা হেঁসে উঠলো কিয়ানা। আরও দু’একটা কথা বলে কিছুটা ভাব জমিয়ে নিলো মেয়েটার সাথে। তারপর বললো,
“আচ্ছা ঠিক আছে বলতে হবে না, তাহলে তোমার নামটা বলো।”

“লাহিয়ান তামায়া।”

নামটা শুনে চমকে উঠলো কিয়ানা। এই নামটাই তো সে দেখেছিলো ডায়েরির পাতায়। তাহলে কি এটাই তাসফি স্যার এবং রূপার মেয়ে? শিয়র হবার জন্য নামটা উচ্চারণ করে বললো এই নামটাই তোমার। সাথে সাথে মাথা নাড়ালো তামায়া। কিয়ানা তামায়ার দিকে তাকিয়ে নরম গলায় আবারও তার বাবার নাম জানতে চাইলো। এবং আর দ্বিমত পোষণ করলো না, সাথে সাথেই বলে উঠলো,
“তাতফি।”

এবার পুরোপুরি শিয়র হয়ে গেল কিয়ানা, এটাই তাসফির ও রূপার মেয়ে। রূপার কথা মাথায় আসতেই তামায়া কে জিজ্ঞেস করলো,
“তামায়া বুড়ি তোমার আম্মু কোথায়?”

তামায়া কিছু সময় চুপ থেকে মন খারাপ করে তার বুলিতে বলে উঠলো,
“মাম্মাম নাকি অনেক দূল। আমাকে লেকে চলে গেতে।”

“তোমার মাম্মাম তোমার কাছে আর আসে না?”

তামায়া নিজের মাথা ঝাঁকিয়ে বলে উঠলো,
“না… মাম্মাম খুব পঁতা, আমাকে আদল কলে না। কেউ আমাকে মাম্মামের কাতে নিয়ে যায় না। মাম্মাম আ….”

“তামায়া…. মামুনি!”

হঠাৎ পরিচিত কণ্ঠস্বরে নিজের কথা থামিয়ে সেদিকে তাকালো তামায়া। কিয়ানাও তামায়া কে লক্ষ্য করে তাকালো সেদিকে। সুদর্শন একটা ছেলেকে তাদের দিকে এগিয়ে আসতে দেখলো। ছেলেটাকে দেখে তামায়া ছুটে গেল তার দিকে।

.
.
চলবে……

রি-চেক করা হয় নি। ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং ধরিয়ে দেবার চেষ্টা করবেন।🖤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here