তুমি আমার -পর্ব ২০

0
463

#তুমি_আমার
#পর্ব_২০
#লেখনীতে_নাজিফা_সিরাত

অনেক্ষণ কান্নার পরও কান্না থামছে না সিরাতের।এবার রাগ হলো আবেশের। নিজের ভালোলাগার ফিলিংস জানালো কোথায় খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরে দু চারটা চুমো খাবে তা না তখন থেকে কেঁদে ভাসাচ্ছে আজব এই মেয়ে আজব তার কাজ কারবার।আবেশ কপালে তিনটি ভাঁজ ফেলে বললো,

“অসহ্য!এবার তো কান্না থামাও।এবার রাগ হচ্ছে আমার”।সিরাত কান্নার গতি কমিয়ে নিলো।মনে মনে বিরবির করে বললো,

“ব্যাটা আনরোমান্টিক!নিজের অনুভূতি জানিয়ে লাপাওা।একবারও ভালোবাসি বলে জড়িয়ে ধরলো না।ফিল্মি স্টাইলে প্রপোজও করলো না।আমি ভালোবাসি কিনা সেটাও জিজ্ঞেস করলো না আল্লাহ এ খচ্চর এমন কেন?”
সিরাতকে চুপ থাকতে দেখে বললো,

“চলো তোমায় বাসায় পৌঁছে দেই।এবার তোমার যা ইচ্ছে হয় তাই করো।আমি বাধা দেব না।আমার কাছে তোমার খুশি সবার আগে”।সিরাত আবেশের দিকে এক পলক তাকিয়ে বললো,

“যদি বিয়েটা না ভাঙ্গি তখন”?আবেশ হাসলো প্রাপ্তির হাসি।এটা তো চায় সে।সারাজীবনের জন্য এই পাগল আজব টাইপ মেয়েকে পাশে চায়।ওর চোখে চোখ রেখে বললো,”জীবনটা রঙিন সিরাত।সেই রঙিন জীবন আরো রাঙিয়ে তুলতে সামনে এগিয়ে চলো”।
♥♥♥

সিয়ামের অফিসে সিয়ামের জন্য ওয়েটিং রুমে দশ মিনিট ধরে অপেক্ষা করছে রিয়া।সেদিনের পর থেকে তার সাথে দেখা হয়নি রিয়ার।তবে যতটুকু জানে ছেলেটা ভালো নেই।তিহানা ওর সবটুকু ভালোবাসা কেড়ে নিয়েছে।এখানে আসার পর রিপসেপশনিষ্ট জানায় সিয়াম মিটিংয়ে আছে আধ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে।তাই বসে রইলো সে।প্রায় বিশ মিনিট পর সিয়ামের কেবিনে পাঠিয়ে দিলো রিয়াকে নিজের কেবিনে আছে সে।রিপসেপশনিষ্ট সিয়ামকে রিয়ার কথা বলতেই ওর কেবিনে পাঠাতে বললো।সিয়ামের কেবিনে দাঁড়িয়ে আছে রিয়া।কিন্তু সে নেই।কিছুক্ষণেই হাত মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলো সে।মুখে হাসি টানিয়ে বললো,

“মিস ঝগড়ুটে যে তা হঠাৎ এখানে ঝগড়া করতে এসেছেন বুঝি”?রিয়া এক পলক তাকিয়ে থাকলো ওর দিকে।ছেলেটাকে দেখে বুঝার জোঁ নেই ক’দিন আগেই মন ভেঙ্গেছে তার।সবার সাথে কি হাসি খুশি।ওর কথায় পাওা না দিয়ে চোখ সরিয়ে বললো,

“আপনি ভালো আছেন”?সিয়াম হেসে হেসে বললো,”আমাকে দেখে কি অসুস্থ মনে হচ্ছে”?ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো রিয়া।তবুও সন্দিহান কন্ঠে বললো,”সব সময় চোখের দেখা ঠিক হয়না।আপনাকে ফিট দেখালেও আপনার মনে কি চলছে সেটা কি কেউ জানে নাকি”?

“মন!মন ভালো থাকলে শরীরও ভালো থাকে।কারণ মন আর শরীর দুটো অতপ্রোতভাবে জড়িত।এবার বলো কি খাবে চা,কফি,কোল্ড ড্রিংকস”।

“আপাদত কিছুই না।তিহানার ব্যাপারটা ভুলে গেছেন?আপনার উপর এফেক্ট পরে নি”?মুখটা কালো হয়ে গেলে সিয়ামের।এই নামটা মনে করতে চায় না সে।ভুলতে চায় ইভেন সে চেষ্টায়ও আছে কিন্তু চাইলেই কি সব সম্ভব।ফিচেল হাসলো সিয়াম বললো,”অতীত নিয়ে পরে থাকতে চাই না আমি।তাই অতীত ভুলতে চাইছি এবং আমি বিশ্বাস করি পারব আমি।যাইহোক এখানে আসার কারণ জানতে পারি”?

“আপনার ভালো মন্দের খবর নেওয়া ব্যাস এইটুকুই।শত হোক আমার কাজিনের কারণেই আপনি কষ্ট পেয়েছেন তাই ভাবলাম একবার দেখা করে যাই”।

“আমার জন্য ভাববেন না।আমি ভালো আছি।আর তিহানাকে এই ব্যাপারে কিছু জানাবেন না প্লিজ”।

“ওকে!ভালো থাকবেন আসছি”।রিয়াকে বিদায় জানিয়ে অবাক হলো সিয়াম।আজ মেয়েটা কোনো ঠেস দিয়ে কথা বললো না।ঝগড়া করলো না এটাও হওয়ার ছিলো।যে মেয়ে একটা ভালো কথার বিপরীতে দশটা কথা শুনায় সে আজ কিছু বললো না স্ট্রেঞ্জ।

❤️❤️❤️

বাড়িতে এসে নিজের ফুপিকে দেখে কপাল কুঁচকে গেলো আবেশের।এত বছরে যে কিনা খুব একটা যাওয়া আসা করে নি।অথচ সেই এই ক’দিনে দু দু বার চলে এলো।এর মধ্যে কাহিনী আছে নিশ্চয়।আবেশকে দেখেই তিনি বললেন,

“কেমন আছিস বাবা?সেদিন আমার কথাবার্তায় কিছু মনে করিস না।আসলে আমিও তো একটা মেয়ে তাই মেয়েটার এমন অবস্থা দেখে এসব বলেছি “।

“না না ফুপি আমি কিছু মনে করি নি।তুমি না জেনে আমার অনেক উপকার করেছো।সিরাত কে আমার জীবনে এনে দেওয়ার জন্য আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ”।সৌজন্য সূচক কথাবার্তা বলে আবেশ উপরে চলে গেলো।ওর কথায় হা হয়ে গেলো ফুপি।কি ভেবেছিলেন আর কি হলো।তবে কি আবেশ মেনে নিয়েছে মেয়েটাকে।সিঁড়ির কাছে যেতেই এক জোড়া হাত পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো আবেশকে।আচমকা এমন হওয়ায় ভড়কে গেলো আবেশ।কে হতে পারে সন্দিহান চোখে তাকালো।অশনি পেছন থেকে বললো,

“শুনলাম তুমি নাকি ট্র্যাপে পড়ে বিয়েতে ফেঁসে গেছ?এবার নাকি ওই মেয়েটার সাথে আবার বিয়ে হবে তোমার”?আবেশ হাত ছাড়িয়ে ওর কাছ থেকে দূরে সরে মৃদু হেসে বললো,

“হুম!তবে ট্র্যাপ হলেও আমি খুশি”।কথাটি বলে এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না সে।হনহন করে সিঁড়ি ডিঙিয়ে চলে গেলো উপরে।ওর কথা শুনে অশনির মুখটা কালো হয়ে গেলো।এভাবে খুশি হলে তো চলবে না।

♥♥♥
রাদিফের কেবিনে বসে আছে আরু।আরুকে দেখে কপালে তার হাজারো চিন্তার ভাজ।হঠাৎ মেয়েটা কেন আসবে এখানে আচ্ছা কোনোকিছু কি বুঝতে পেরেছে।নাকি এমনি।আরু তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,

“শুনলাম পাকাপাকিভাবে দেশে চলে এসেছেন”?রাদিফ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো।হাতের কাটা দাগটা দেখে বললো,”এই দাগটা কিসের”?রাদিফ সেদিকে নজর দিয়ে বললো,”ছোটবেলায় পড়ে গিয়ে কেটে গেছে।কিন্তু দাগটা উঠে নি”।আরু চুপ করে রইলো।রাদিফ বললো,

“কি খাবে বলো?”

“নাথিং!রহস্যের জাল কাটতে এসেছিলাম হয়তো তার দ্বার প্রান্তে পৌছে গেছি।খুব তাড়াতাড়ি রহস্যভেদ হয়ে যাবে”।রাদিফ হাসলো হেসে বললো,”আপনিই একটা রহস্যেঘেরা মানুষ।সেখানে রহস্যভেদ কিসের”?

“সেটা সময় হলে বুঝতে পারবেন”।চোখ কুঁচকে রাদিফের দিকে প্রশ্ন ছুড়লো আরু,

“কাউকে ভালোবাসেন?শুনলাম তার টানেই এই দেশে পার্মানেন্টলি থাকতে চাইছেন”?রাদিফ নিঃসংকোচে নির্ধিদ্বায় বললো,”হুম!খুব ভালোবাসি তাকে।একমাএ ওর জন্যই সব ছেড়ে ছুঁড়ে চলে এসেছি”।মনটা বিষিয়ে উঠলো আরুর।মূলত এই বিষয়টা ক্লিয়ারলি জানার জন্যই এখানে এসেছে সে।যখন তিন্নির কাছ থেকে এটা শুনলো তখনই ছুটে এসেছে।কিন্তু সত্যি এটা শুনবে ভাবতে পারে নি।কিছুক্ষণ নীরবতায় কাটলো দুজনার।একজন এসে দু কাপ কফি দিলো।রাদিফ একটি কাপ আরুর দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বললো,

“তুমি কাউকে ভালোবাসো?”নাহ আবার হুম ভাসতাম কিন্তু এখন বাসি না!”ঝটপট উওর আরুর।রাদিফ অবাক হলো আরুর মুখভঙ্গি দেখে।কেমন চুপ হয়ে গেছে সে।হয়তো ভালোবাসার মানুষের সাথে সুখময় স্মৃতি ভেসে উঠছে।আচ্ছা ওদের কি ব্রেকাপ হয়েছে।থাক অন্য কোনোদিন জেনে নেবো।নীরবতা ভেঙ্গে বললো,

“আমি আসছি”!বাধ সাধলো রাদিফ।কিছুতেই খালি মুখে ছাড়বে না তাকে।জোর করে কফি খেতে বাধ্য করলো তাকে।ওকে পৌঁছে দেবে বলে শপিংমলে ঢুকলো।বিরক্তি নিয়ে আরু বললো,

“এখানে কেন এসেছেন?আমি বাসায় যাবো”।

“প্লিজ আরু আমার গার্লফ্রেন্ডকে গিফট দিতে চাই তুমি একটু হেল্প করবে”?রাগে সমস্ত শরীর জ্বলে উঠলো আরুর।একে তো অন্য কাউকে ভালোবাসে তার উপর এখন তার জন্য গিফট চয়েজ করতে হবে আতিক্যেতা।নিজের ভালোবাসার ফুল ফুটতে না ফুটতেই ঝরে গেলো।কাঁদতে ইচ্ছে করছে তার।কিন্তু কাঁদবে না।কারোর সামনে ওর দুর্বলতা প্রকাশ করবে না সে।নিজেকে শক্ত করে রাদিফের পিছু পিছু হাঁটছে।ভীড় ভাট্রা ঠেলে ভিতরে ঢুকে আরুর হাতের মাপে একটা ডায়মন্ড রিং কিনলো।একটি শাড়ি আর সাথে কিছু অর্নামেন্টস সবকিছুই আরুর পছন্দ মতো।সবশেষে রাদিফ বললো,”থ্যাংকস আরোহী আমাকে সময় দেওয়ার জন্য।তোমার পছন্দ আছে বলতে হবে”।আরু বিপরীতে জোরপূর্বক হাসলো আর মনে মনে বিচ্ছিরি কয়েকশত গালি উপহার দিলো রাদিফকে।

সেদিনের পর কেটে গেছে দুই দিন।আবেশের সাথে এই দুদিন দেখা হয়নি তার।না হয়েছে কোনো ফোনকল।কলেজ ছুটি হওয়ায় দেখাও নেই।তবে এখন ভিতরে ভিতরে নিশ্চিন্ত সে।বারান্দায় চেয়ারে বসে বসে চাঁদ দেখছে সিরাত।আজ চাঁদটাকে খুব সুন্দর লাগছে তার কাছে।হয়তো মনের অনুভূতিগুলো সুন্দর স্বচ্ছ তাই।আবেশের তখনকার কথাগুলো বারবার কানে বাজছে।আবেশ তাকে ভালোবাসে ভাবলেই হৃদয় হিম শীতল হয়ে যায়।মানুষটা তার পুরোপুরি তার।ফোন হাতে নিয়ে আবার রেখে দিচ্ছে।জড়তার কারণে কল দিতে পারছে না সে।আবার আজ খুব ইচ্ছে করছে ফোনে প্রেমালাপ করতে।আয়েশা তো কত ছেলের সাথে ফ্লাটিং করে।রাতভর কথা বলে।কিন্তু সে তো পবিএ সম্পর্কে কথা বলবে এতে কোনো পাপ নেই।ওর ভাবনার মধ্যেই আননোন নাম্বার থেকে কল এলো।ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে সেন্টার টেবিল থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভ করে কানে রাখতেই ওপর পাশ থেকে বললো,

“এই যে মায়াপরী কে বলেছে চাঁদের আলোয় বসে নিজেকে আলোকিত করে আমাকে পাগল করে দিতে।এবার এই পাগলের পাগলামি সহ্য করতে পারবে তো”।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here