তুমি বললে আজ – পর্ব ৩২

0
866

#তুমি_বললে_আজ
লেখনীতেঃ #রিধিমা_জান্নাত_রূপা
পর্বঃ ৩২.

.
শেষ করতে পারলাম না কথাটা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আচমকা নিজের ঠোঁটের স্পর্শে আমার ঠোঁট মেলাতে শুরু করলেন। আমি যেন কোন রিয়াক্ট দিতেই ভুলে গেছি। শুধু স্পর্শতে সীমাবদ্ধ থাকেন নি, কামড়াতে শুরু করেছেন নিজের ইচ্ছে মতো। আমি সহ্য করতে না পেরে ছাড়িয়ে নেবার জন্য ছটফট করতে শুরু করলাম। আমর ছটফটানি তে উনি জোরে একটা কামড়ে দিয়ে ছেড়ে দিতেই চিৎকার করে উঠলাম। আমি কিছু বলার আগেই উনি রাগী গলায় বলে উঠলেন,
“ফারদার যদি এসব ফালতু কথা মুখে আনিস না, এর থেকেও কিন্তু খারাপ হবে। মরে যাওয়া কি এতটাই সহজ বলে মনে হয় তোর কাছে? বেয়াদব!”

বলেই একটু থামলেন, জোরে নিশ্বাস টেনে আমার হাতের বাহু শক্ত করে ধরে আবারও বললেন,

“থাকবো না, মরে যাবো, এমন ফালতু এক্সকিউজ বলার আগে আমার করা অবহেলা গুলো মনে করার চেষ্টা করিস। তুই না চাইলেও সারাজীবন এই আমার সাথেই কাটাতে হবে তোর, আমার একান্ত ব্যাক্তিগত সম্পত্তি হয়ে। কথাটা একদম মাথায় সেট করে নে।”

আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি শুধু। ওনার কথাগুলো বুঝতে মিনিট দুয়েক সময় লেগে গেল যেন। কথাগুলোর মানে বুঝে উঠতেই বিস্মিত হলাম আমি। এতটুকু কথাতে যে উনি এমন রিয়াক্ট করবেন সেটা আমার জন্য অপরিকল্পিত ছিলো। আমি আমতা আমতা করে কিছু বলতে চাইলেই উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে, বিছানা ছেড়ে উঠে গেলেন। মনটা আরও বিষন্নতায় ছেয়ে গেল। আমি ওনাকে ছেড়ে যাবার কথা ভাবতেই পারি না। সেগুলো তো জাস্ট কথার কথা ছিলো, আর উনি তাতেই এতটা রেগে গেলেন। আমিও তো ওনার মতো ওনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না কিছুতেই। সেটা এই দু’টো দিনে ওনার সাথে কথা না বলে খুব ভালোভাবেই টের পেয়েছি।

“আ..আমি তো আসলে ও..ওটা তো কথার কথা ছিলো। আ..আপনাকে ছেড়ে যাবার কথা তো ভাবতেই পারি না আ…”

আমতা আমতা করে আমার বলা কথাটা শেষ না হতেই উনি রুমের লাইট জ্বালিয়ে দিলেন। এতক্ষণ অন্ধকার রুমে থাকার ফলে হঠাৎ আলো জ্বলায় চোখে এসে বিধলো। সাথে সাথে চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে নিলাম। মাথাটা হঠাৎ চিনচিন ব্যাথা করে উঠলো পেছন থেকে। তেমন একটা পাত্তা দিলাম না তাতে। মিটমিট করে চোখ খুলে তাসফিকে দেখতে পেলাম না রুমে। দরজার দিকে তাকিয়ে দরজা আটকানে দেখে বুঝতে পারলাম হয়তো ওয়াশরুমে গেছে। এর মাঝে ওয়াশরুম থেকে পানি পরার শব্দ পেয়ে সিয়র হয়ে গেলাম।

মিনিট পনের পর অর্ধেক গোছল করার মতো ভিজে বেরিয়ে আসলেন ওয়াশরুম থেকে। পুরো মাথায় পানি দেবার ফলে শরীর বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে সমানে। শার্টও হয়তো ভিজে গেছে তাই খালি গায়ে-ই ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এসেছেন। পুরো শরীর বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে প্যান্ট টাও অনেকটা ভিজে গেছে। রুমে ঢুকতে ঢুকতে দু’হাতে মাথা ঝাড়তে লাগলেন। আমি কিছু না বলে ছুটে গিয়ে বারান্দা থেকে তোয়ালে এনে ওনার কাছে এগিয়ে গেলাম। নিজেই মাথা মুছে দেবার ইচ্ছে থাকলেও তা করতে পারলাম না উনি লম্বা হওয়ায়। নিজেই তোয়ালেটা আমার হাত থেকে নিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালেন। এবার কিছুটা সাহস নিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
“রেগে আছেন কেন?”

“রেগে নেই।”

“তাইলে এমন গম্ভীর হয়ে আছেন কেন? আপনাকে এভাবে দেখলে কিন্তু আমার অনেক ভয় লাগে। তখন তো এমনিতেই কথার কথা বলেছিলাম আমি। আমি আ….”

“এসব কি?”

আমার কথাটা শেষ হবার পূর্বেই উনি নিচের দিকে তাকিয়ে বললেন। ওনাকে অনুসরণ করে ওনার পায়ের দিকে তাকাতেই মনটা আরও ভারী হয়ে উঠলো। বিস্মিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আবারও বললেন,
“এসব কি করে হলো?”

“জানি না আমি।”

“জানিস না মানে? তুই জানিস না, তো কে জানে? নিশ্চয়ই এই চুলগুলো অন্য কারোর না, তোর। তবুও বলছিস জানিস না? বেয়াদব!”

আমি আমতা আমতা করে চুপ হয়ে গেলাম। বলার মতো কিছু খুঁজে পেলাম না। আমি এখন কি করে বলবো ওনাকে, যে এভাবে এতগুল চুল কেন ঝড়ে পড়ছে। তাসফি আবারও বললেন,
“কবে থেকে এভাবে চুল পড়ছে?”

এবার শুকনো একটা ঢোক গিললাম। কি বলবো আমি এবার? কিন্তু মুখ তো খুলতেই হবে। আমার উপর ছোটখাটো একটা সুনামী বয়ে যাবে সেটা নিশ্চিত হ’য়ে আস্তে বলে বললাম,
“দুই মাসের মতো হবে।”

উনি স্থির হয়ে তাকিয়ে থাকলেন আমার দিকে। সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলাম আমি। ওনার লাল লাল রাগী চোখে তাকিয়ে থাকার সাহস হলো না আমার।
“নিজের শরীরের সাথে সাথে চুলেরও অযত্ন শুরু করছিস? বেয়াদব! সবদিকে আমাকেই কেন দেখতে হবে, নিজের একটু খেয়াল রাখতে পারিস না?”

“না… মানে, আমি তো… চুল পড়তে দেখে শ্যাম্পু চেন্স করছিলাম, তারপর চুল পড়া বন্ধ হয়ে গেছিলো। আজকে আবারও কোন এতগুলো চুল উঠলো বুঝতে পারছি না।”

“তা বুঝতে পারবি কেন? শুধু রাগ দেখাতে পারবি, আর আমার মাথা খেতে পারবি।”

“আমি তো আ….”

“এত কথা না বলে আমার শার্ট প্যান্ট গুলো নিয়ে আয় ওই রুম থেকে।”

“আ..আপনি কি আমার রুমে থাকবেন?”

“না…. পাশের বাসার আবদুল মামার ছেলে মামুনের ভাইয়ের বউয়ের রুমে। গাধী কোথাকার!”

“ছি এসব কি কথা বলছেন? লজ্জা করলো না আপনার এসব কথা বলতে? অসভ্য ছেলে একটা, এজন্যই বুঝি আমাকে বিয়ে করেছেন? এই নাকি আপনি আমাকে….”

“চুপ, আর একটাও কথা নয়। আমার শার্ট প্যান্ট গুলো আনতে বললাম না। তাড়াতাড়ি যা বেয়াদব!”

মনে মনে ওনাকে হাজারো বকা দিতে দিতে রুম ছেড়ে বেড়িয়ে গেলাম ওনার বরাদ্দকৃত রুমে। আলমারি থেকে ওনার শার্ট প্যান্ট গুলো নেবার সময় ভাবলাম বাকিগুলো এখানে রেখে গিয়ে কি করবো, উনি তো আর এ-রুমে থাকবে না। তার চেয়ে বরং আমার রুমেই নিয়ে গিয়ে রাখি। তাসফির কাপড়গুলো নিয়ে রুম ছেড়ে বেরুতেই হঠাৎ কিছু একটা মনে হতেই নিজেই বোকা বনে গেলাম আমি। নিজেই নিজেকে বকতে শুরু করলাম এবার। আমি আসলেই একটা গাধী, তা না হলে ওনাকে কিভাবে জিজ্ঞেস করতে পারি, উনি আমার রুমে থাকবেন কি না। আগে তো আমাদের সম্পর্কটা অন্যরকম ছিলো, কিন্তু এখন তো তাসফি আমার স্বামী।

এবার নিজেকে বকতে বকতে রুমে আসতেই রিফাপুর দরজার সামনে থেমে গেলাম। আপুকে তখন রাগের মাথায় অনেক মেজাজ দেখিয়ে কথা বলে ফেলেছি, নিশ্চয়ই রাগ করে আছে আমার উপর। এখনি গিয়ে রিফাপুকে সরি বলতে হবে, তা না হলে আমি নিজেই হয়তো ঘুমাতে পারবো না। দরজায় টোকা দিয়ে খুলতে বললেই দরজা খুলে দিলো রিফাপু। কানে হেডফোন গুঁজে মোবাইল হাতে নিয়ে আছে, হয়তো ভাইয়ার সাথে কথা বলছিলো। আমাকে দেখে হেডফোন খুলে বললো কি হয়েছে? আমি হাতের শার্ট প্যান্ট গুলোর দিকে একবার তাকিয়ে রিফাপুর দিকে তাকালাম। জড়িয়ে ধরতে চেয়েও পারলাম না। তাই সেভাবেই বলে উঠলাম,
“সরি, আসলে আমি তখন তোমাকে সেভাবে কথাগুলো বলতে চাই নি রিফাপু। রাগের মাথায় বলে ফেলছি।”

আমার কথায় কোন প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে হো হো করে হেঁসে উঠলো রিফাপু। বললো,
“ভাগ্যিস রেগে গেছিলি, তা না হলে আরও দুটো দিন তোদের অত্যাচার সহ্য করতে হতো আমার।”

“মানে?”

“মানেটা হলো আপনার জামাই, ওরফে আমার ভাই। দুইটা কি না কি নিয়ে রাগারাগি করে কথা বলা বন্ধ করছিস, আর তোর সকল তথ্যাদি আমাকে প্রেরণ করা লাগছে।”

“কি বলছো তুমি এগুলো? কিশোর তথ্য?”

“তোর ওনার রূপার তথ্য। কালকে থেকে ঠিক এক ঘন্টা পর পর ফোন করে তোর খোঁজ নিয়ে যাচ্ছে আমার থেকে। সন্ধ্যা রাতে ফোন দিয়ে বলে ‘রিফা এক্ষুনি ওর রুমে যা, আমার সাথে লাইনে থেকে ওর সাথে একটু গল্প কর। ওর কণ্ঠ শুনতে না পেলে শান্তি পাচ্ছি না আমি’। হুমকি ধামকি দিয়ে সাদিকের সাথে আমার ব্রেকআপের ভয় দেখিয়ে পাঠালো। ভাগ্যিস তখন তুই ওভাবে কথাগুলো বললি, তবেই না তাসফি ভাই তোর কথাগুলো শুনে মিইয়ে গেল। আমিও রাগ দেখানোর সুযোগ পেয়ে ছাড়লাম না, সাথে তোর কয়েকটা ছবি সেন্ট করলাম, তাতেই ভাইটা আমার বউয়ের জন্য ছুটে ছুটে চলে আসলো।”

আবারও হাসতে শুরু করলো রিফাপু। আমি অবাক হয়ে গেলাম কথাগুলো শুনে। আমার পিঠ পিছে যে এতকিছু হয়েছে সেটা তো বুঝতেই পারি নি।

“ছবি সেন্ট করছো মানে? আজকের ছবিগুলো দিছো ওনাকে?”

জানতে চাইলে রিফাপু সাথে সাথেই হুম বলে উঠলো। আমি এবার সবকিছু পরিষ্কার ভাবে বুঝতে পারলাম। ওনার হুট করে এসে রাগ ভাঙানো, আবারও একদিন শাড়ি পরে ওনার মনের মতো করে সাজতে বলার ব্যাপারটা ধরতে পারলাম। রিফাপু মজার ছলে বলে উঠলো,
“আহ্ কি ভালোবাসা দুটোর। একজন রাখতে বেলা বউয়ের রাগ ভাঙাতে চলে আসছে, আর অন্যজন জামাইয়ের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করছে।”

“দূর আজাইরা সব কথা বলো।”

“হুমম… সেটা তো আপনার হাতের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারছি।”

রিফাপুর কথায় কিঞ্চিৎ লজ্জা পেলাম এবার। আপুকে থাকো বলেই চলে আসতে নিলাম রুম ছেড়ে। আমাকে তাড়াহুড়ো করে রুম ছাড়তে দেখে আবারও হেঁসে উঠলো জোরে করে।

আর না দাঁড়িয়ে সোজা রুমে চলে আসলাম। দরজা লাগিয়ে বিছানায় তাকালাম। গলায় তেয়ালে ঝুলিয়ে খাটের সাথে হেলান দিয়ে মোবাইল টেপায় ব্যস্ত হয়ে গেছেন বজ্জাত লোকটা। আমি কিছু না বলে হাতের কাপড় গুলো বিছানায় রেখে একটা শার্ট আর প্যান্ট ওনার দিকে এগিয়ে দিলাম। উনি শুধু প্যান্টটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। একবার বিছানার উপর রাখা বাকি কাপড় গুলোর দিকে তাকিয়ে বললো,
“সবগুলো নিয়ে আসছিস কেন?”

“ওই রুমে রেখেই বা কি হবে? সেই আমাকেই তো ছুটতে হবে নিয়ে আসার জন্য। আপনি তো আর যাবেন না, ও রুমেও তো আর থাকবেন না।”

“যাক, শেষমেষ বুঝতে পারলি তাহলে।”

ওনার বলা কথার মাঝেই কাপড়গুলে আলমারি তে তুলে রাখলাম রাখলাম। উনি প্যান্ট-টা হতে নিয়ে গভীর চোখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। ওনাকে একই ভাবে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে দেখে জিজ্ঞেস করলাম,
“এমন দাঁড়িয়ে আছেন কেন? যান, কাপড়গুলো পাল্টে আসেন।”

“লাগবে না।”

ওনার লাগবে না শুনে ভুরু কুঁচকে গেল আমার। বললাম,
“লাগবেনা মানে? ভেজা প্যান্ট পরে কি ঘুমাতে পারবেন?”

বাচ্চাদের মতো করে ঠোঁট উল্টিয়ে না বললেন। ওনার না শুনে রাগী রাগী গলায় বলে উঠলাম,
“তাইলে লাগবে না বলছেন কেন? যান, প্যান্ট পাল্টে আসেন।”

“বউয়ের ভালোবাসার উষ্ণতায় শুকিয়ে নিবো বলে।”

বলেই কিছু বুঝে ওঠার আগেই চট করে কোলে তুলে নিলো আমাকে। আমি প্রচন্ড অবাক হয়ে গেলাম ওনার কান্ডে এবং কথাগুলো শুনে। এই বজ্জাতটা সিরিয়াস মোমেন্টকে এত রোমান্টিক বানায় কিভাবে সেটাই বুঝে উঠতে পারি না আমি। নামার জন্য চেষ্টা চালিয়ে ছটফট করতে লাগলাম ওনার কোলে। নামিয়ে দিতে বললে উনি বরাবরের মতোই আরও গভীর ভাবে জড়িয়ে নিলেন। আর আমাকেও বরাবরের মতো হাল ছেড়ে দিতে হলো। ছটফট করা থামিয়ে স্থির হয়ে গেলাম। দু’হাতে ওনার গলা শক্ত করে জড়িয়ে নিলাম। ওনার গভীর চোখে তাকিয়ে অবাধ্য কিছু করার মনোবাসনা জাগলো হঠাৎ। মনটাকে কিছুতেই দমিয়ে রাখতে পারলাম না যেন। মাথাটা উঠিয়ে ওনার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলাম, আলতো করে দু’বার ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে আস্তে করে বললাম,
“ভালোবাসি!”

অনুভব করলাম হঠাৎ করে হালকা কেঁপে উঠলেন উনি। সাথে সাথে নড়াচড়া থামিয়ে স্থির হয়ে গেলাম আমি। মিনিট দুয়েকর মতো উনিও একইভাবে স্থির হয়েই দাঁড়িয়ে রইলেন আমাকে কোলে নিয়ে। তারপর বিছানায় নিয়ে শুয়ে দিয়ে নিজেও ঝুঁকে গেলেন আমার উপর। ঘোর লাগা কণ্ঠে আস্তে করে বললেন,
“আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না বউ, তুমি আমায় দূর্বল বানিয়ে দিয়েছো। খুব করে দূর্বল বানিয়ে নিয়েছো আমাকে, নিজের প্রতি।”

.
ঠাস করে ডায়েরি টা বন্ধ করে ফেললো কিয়ানা। চোখ দুটো তার জ্বলে উঠছে কেন জানি। কেন তার চোখ দুটো এমন জ্বলে উঠছে, ঘুম নষ্ট করে রাত জাগার জন্য, নাকি ডায়েরির প্রতিটা লাইন তার সুক্ষ মনে আঘাত আনার জন্য? ঠিক বুঝতে পারলো না কিয়ানা। তাসফি আর রূপার এতএত ভালোবাসা দেখে ভালো লাগলেও কোন জানি রূপা নামের মেয়েটিকে হিংসা হতে লাগলো। তাকে এক নজর দেখার জন্য মনটা ছটফট করতে লাগলো। তার ভালোলাগার মানুষটার পাশে রূপা নামের মেয়েটিকে কেমন লাগে, সেটা দেখার জন্য মনটা ছটফট করতে লাগলো কিয়ানার।

প্রায় তিন মাস ধরে তাসফি নামক মানুষটাকে সে দেখে আসছে, কই এই তিনটা মাসেও তো জানতে পারলো না তাসফি বিবাহিত, তার বউ আছে। বরং তার ক্লাস মেটরাও তাকে সিঙ্গেল বলেই জানে। রুপে গুণে সুন্দরীদের তালিকায় এক নাম্বারে রাখা যায় তাকে। পড়াশোনায় মেধাবীদের তালিকায় নাম রয়েছে। ছেলেরা দু’দিন পর পর প্রেমের প্রস্তাব দিয়েই থাকে, কিন্তু একটার পর একটা ছেলেকে রিজেক্ট করে এসেছে সে। কিন্তু তার অবাধ্য মনটা তাসফি নামক মানুষটার কাছে এসেই থমকে গেছে। তাসফি কথাবার্তা, আচার আচরণ সবকিছুই মুগ্ধ করেছে কিয়ানা কে। তার সাথে বেশ কয়েকবার হেঁসে হেঁসে কথাও বলেছে তাসফি। এতে তার অবাধ্য মনটা আরও ঝুঁকে গেছে তাসফির প্রতি। তার বান্ধবীরাও প্রতি পদে পদে বুঝিয়ে গেছে তাসফিও কিয়ানার প্রতি কিছুটা হলেও আসক্ত। তার বান্ধবীদের থেকে কৌশলে জেনেও নিয়েছে তাসফি একদম সিঙ্গেল, তারপরই কিয়ানার মনের সুপ্ত বাসনা আরও জাগ্রত হয়েছে। কিন্তু এতবড় একটা সত্যি জেনে অনেকটাই ভেঙে গেল কিয়ানা।

রাতের প্রায় দুটো বাজে। প্রতিদিন সময় মতো ঘুমিয়ে পরলেও আজকে ডায়রিটা পড়ার ঝোঁকে ঘুমাতে পারে নি। কিন্তু এখন আর কিছুতেই চোখ দুটো খুলে রাখতে পারছে না। ডায়েরি টা টেবিলের উপর রেখে লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো বিছানায়। ভাবতে লাগলো, তাসফি স্যারের যদি রূপা নামের কারোর সাথে বিয়ে তাহলে সে কোথায়? ডায়েরির লেখা অনুযায়ী এই ভার্সিটিতেই তো থাকার কথা, তবে কোথায় সে? আর তার ক্লাসের সবাই তাসফি কে সিঙ্গেল বলেই বা জানে কেন? সবকিছু কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে কিয়ানার কাছে। তাসফি কে নিয়ে সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমিয়ে গেল কিয়ানা।

.
.
(চলবে…..)

কিয়ানা কে সেটা আস্তে আস্তেই জানতে পারবেন সবাই। একটু ধৈর্য ধরুন। তাসফি ও রূপার কাহিনি কিয়ানা ডায়েরি তে পড়ছে, এটা হয়তো বুঝতেই পারছেন। কিয়ানার ব্যাপারটাও বুঝতে পারবেন। রি-চেক করার সময় পাই নি। ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাইকে অনেক ভালোবাসা রইল।🖤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here