#তোমাতে বিলীন🍁
#লেখিকা—আমায়া নাফশিয়াত ☘
#পর্ব—|| ০৭|| (রিপোস্ট)
ঊদিতার বলা কথা শুনে মি.গোলজার বলে উঠলেন;
মি.গোলজার:-আলহামদুলিল্লাহ,,। আমাদের ঊদিতা মামণির কথা শুনে আমার মনটা ভরে গেছে। মেয়ে হলে ঊদিতার মতোই তো হওয়া উচিৎ।
মুরাদ:-যাক নিশ্চিন্ত হলাম,,, আমি তো ভেবেছিলাম ঊদিতা কান্নাকাটি শুরু করবে এসব কথা শুনে।(হাফ ছেড়ে)
শাহরিয়ার:-আমার বোন সবসময়ই স্ট্রং এন্ড ব্রেভ গার্ল ৷ আমার ঊদুমনিটা আজ আবারও প্রমাণ করে দিলো যে সে আমার আদর্শ বোন। আই এম প্রাউড অফ হিম।।(সপ্রশংস দৃষ্টিতে)
মিনাজ:-যাক আমার শালিকা তবে বিয়েতে আংশিক হলেও রাজি। যে পাত্রের জন্য তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তাকে রিজেক্ট করার সাধ্য কারো নেই। অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছেলেটাই হলো আশিয়ান। এমন একটা লাইফ পার্টনার থাকলে জীবনে আর কী লাগে?ছেলেটা শিক্ষিত ও। মাস্টার্স ডিগ্রী কমপ্লিট করে ফেলেছে ৩ বছর আগেই। এখন নিজের এতবড় বিজনেস সামলায় ৷ বুঝলে ঊদিতা,,, তুমি কিন্তু অনেক লাকি!
মিসেস লিমা:-আমার ভাতিজী কোনো অংশে কম নাকি জামাই বাবা?আমার ঊদিতা তো রাজকন্যা। তার কপালও রাজ কপাল। আমার ঊদিতাকে যে বিয়ে করে নিয়ে যাবে তার চৌদ্দগুষ্টির ভাগ্য সেটা বলতে হবে।
মিসেস আনিতা (ঊদিতার মা) আমতা আমতা করে বলতে লাগলেন;
মিসেস আনিতা:-কিন্তু,,, আমার মেয়েটার যে বিয়ের বয়স এখনো হয় নি। এখন এসব না ভাবলে হয় না?আমার বাচ্চা মেয়েটা এত প্রেশার কীভাবে নেবে?এখনো এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্টটাও বের হয় নি ওর।বলছিলাম কী,,,
মিসেস আনিতাকে থামিয়ে দিয়ে মিসেস লিমা বললেন;
মিসেস লিমা:-আহা আনিতা,,,,অযথাই তুমি চিন্তা করছো। এখনের যুগটা অনেক খারাপ। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য। মেয়েকে যত ঘরে রাখবে ততই ভয়ের আশংকা বাড়বে। আর সবসময় যে এরকম ভালো বিয়ের প্রস্তাব আসবে,,তার গ্যারান্টি কী শুনি?বিয়ে দিয়ে দিলেই শান্তি,, ফরজ কাজে দেরী করতে নেই। এই বয়সে বিয়ে দিলে ওরই ভালো। আর মিসেস ইয়াসমিন তো বলে দিয়েছেন যে ঊদিতা বিয়ের পর যতটুকু পড়ালেখা করতে চায় করতে পারবে তাদের কোনো সমস্যা নেই।আর আশিয়ান ও নাকি চায় তার বউ পড়াশোনা কমপ্লিট করুক৷
মিসেস লিমার কথা শুনে মিসেস আনিতা আর কিছু বললেন না। চুপ করে গেলেন ওনি৷
ঊদিতা কী আর বলবে!লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে আছে। এত জলদি বিয়ের জন্য মোটেও প্রস্তুত নয় সে,, তারপরও গুরুজনদের মুখের ওপর কথা বলা চরম রকমের বেয়াদবিতে পড়ে। বিশেষ করে বাবা আর ভাইয়ার সামনে তো ভুলেও এমনকিছু বলতে পারবে না ঊদিতা। তাই ওনাদের ওপরই সিদ্ধান্তটা চাপিয়ে দিয়েছে সে,,ওরা যা ভালো বুঝে তাই করুক।
মি.আনিসুল বসা থেকে ওঠে এসে ঊদিতার কপালে স্নেহের পরশ একে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আদুরে কন্ঠে বললেন;
মি.আনিসুল:-আমার মেয়ে আমার উপর ভরসা করেছে ৷ আমি সবকিছু যাচাই করে তবেই আমার মেয়েকে বিয়ে দেবো। এমনি এমনি নয়। আমার মেয়ের জন্য আমি সেরা কাউকে আশা করছি। আশিয়ান ছেলেটা যদি সত্যি আমার মনমতো হয় তবে ঠিক আছে আমি আমার মেয়েকে দিতে রাজি আছি ৷
মিসেস লিমা:-আমার বিশ্বাস,,, তোর খুব পছন্দ হবে ওকে। আমার ঊদিতার জন্য এই পরিবারই পারফেক্ট। তা নইলে কী আমি আমার আলেয়াকে ওই বাড়িতে বিয়ে দেয়ার জন্য রাজি হতাম বল!
অকাট্য যুক্তি। সবাই চুপ করে আছেন। মিসেস লিমা আর কথা না বাড়িয়ে সবাইকে নিয়ে ঊদিতার রুম থেকে চলে গেলেন ডাইনিং রুমে দুপুরের খাবার খেতে। মিসেস আনিতা মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে ওর মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন। ঊদিতা মায়ের হাতের স্নেহের পরশ পেয়ে দেরী না করে মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। মিসেস আনিতা মুচকি হেসে আদুরে কন্ঠে মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন;
মিসেস আনিতা:-আমার মেয়েটার কী মন খারাপ?
ঊদিতা:-হুম,,,(মাথা ঝাঁকিয়ে)
মিসেস আনিতা:-কেন জানতে পারি সোনা?
ঊদিতা:-আম্মু,,, আমার যদি বিয়ে হয়ে যায়,, তাহলে আমি তোমাদের ছাড়া কীভাবে থাকবো বলো?আমার তো খুব কষ্ট হবে আম্মু। আমার তো বিয়ে-শাদির ব্যাপারে কোনো আইডিয়াই নেই।(মলিন কন্ঠে)
মিসেস আনিতার বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো মেয়ের কথা শুনে। ঊদিতা ওনার কলিজা৷ মেয়েকে তিনি ভীষণ ভালোবাসেন। এজন্যই এখন বিয়েটা মেনে নিতে পারছেন না তিনি। তার মেয়েটা কাজেকর্মে পটু হলে কী হবে সে তো এখনও অনেক ছোট।বিয়ের ধাক্কাটা সামলাতে পারবে তো সে?এতসব ভাবনা চিন্তা একপাশে সরিয়ে মিসেস আনিতা মুচকি হেসে মেয়ের কপালে আবারও ঠোঁট ছুঁয়িয়ে বললেন;
মিসেস আনিতা:-আমার আম্মুটা বিয়ের কথা শুনে বেশি নার্ভাস হয়ে গেছে মনে হয়!ভয়ের কিছু নেই আম্মু,,। সবমেয়েদের জীবনেই বিয়ে নামক একটা অধ্যায় থাকে। আগে হোক বা পরে হোক বিয়ে একসময় না একসময় হবেই। এ নিয়ে এত চিন্তা করার কিছু নেই। সবাই ভালো পরিবার থেকে বিয়ের প্রস্তাব পায় না মা,,, তোমার ভাগ্য অনেক ভালো যে এরকম অমায়িক একটা পরিবার থেকে বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। ওনাদের কথাবার্তা থেকে বুঝলাম ছেলের মা বাবা অনেক ভালো মনের মানুষ।ছেলেও ঠিক তেমনই। আর শুনেছি ছেলের ছোট বোন তো নাকি পাগল হয়ে গেছে তোমাকে তার ভাবী বানানোর জন্য। এরকম পরিবার ক’জনই বা পায় সোনা?ওনারা সবাই তোমাকে ভীষণ পছন্দ করেছে। এখন তোমার আব্বুর যদি তাদেরকে মনে ধরে তাহলে বিয়েটা কনফার্ম। মনে মনে নিজেকে প্রস্তুত করে নাও আম্মু। মনে রেখো তুমি কিন্তু অনেক স্ট্রং গার্ল।মোটেও ভয় পাবা না। আর আম্মু আব্বুকে মিস করার কিচ্ছু নেই। আমরা তোমার সাথে প্রত্যেকদিন যোগাযোগ করবো,,, মাঝে মধ্যে গিয়ে দেখেও আসবো।তুমি তো জানো মা,, মেয়েদের আসল ঠিকানা তাদের শ্বশুর বাড়ি আর মেয়েদের প্রধান অভিভাবক তাদের স্বামী। নিয়তিকে মেনে নিও আম্মু,, তোমার জন্য ভালো হবে।এটা মানো তো আল্লাহ যা করেন সবসময় ভালোর জন্যই করেন!আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখাে মা আমার।দেখবে তুমি খুব সুখী হবে।
মিসেস আনিতার অনুপ্রেরণামূলক কথাবার্তা শুনে ঊদিতার মনের মধ্যে সাহসেরা এসে ভীর করলো।তার মনখারাপ নিমিষেই হারিয়ে গেছে মায়ের কথা শুনে। ওর যখনই মন খারাপ হয় তখনই ওর আম্মু তাকে বিভিন্ন ধরনের কথা বলে তার মনে আনন্দের খোরাক জুগিয়ে দেন। ভয় পেলে সাহস ও উদ্দীপনামুলক কথাবার্তা শুনান। এতে সে নিজেকে মনে মনে স্ট্রং করে মনে সাহস জোগায়।তার আম্মু গ্রামের মেয়ে,, তেমন একটা পড়াশোনাও করেন নি। ক্লাস এইটে অধ্যয়নরত অবস্থায় মি.আনিসুলের সাথে ওনার বিয়ে হয়ে যায়। যার কারণে সংসার সামলাতে গিয়ে পড়াশোনা কন্টিনিউ করতে পারেন নি। কিন্তু তিনি যথেষ্ট বুদ্ধিমতি মেয়ে। তার কথাবার্তা শুনে কখনোই মনে হবে না যে তিনি গ্রামের মেয়ে বা পড়াশোনা তেমন একটা করেন নি। আসলে,, পড়াশোনা করলেই কেবল শিক্ষিত হওয়া যায় না,, এরজন্য প্রয়োজন সঠিক বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী হওয়া।
🍁🍁🍁
চৌধুরী হাউজে,,
আশিয়ান সেই সকালেই অফিসে চলে গেছে। তাসকিন,তামজিদ,তাহমিদ ওরাও অফিসে। তাজিম গেছে বন্ধুদের সাথে ট্যুরে। আর তাশজিদ হসপিটালে।কেয়া, তারিন আর এনা মিসেস ইয়াসমিনদের সাথে আলেয়াদের বাসায় যাবে বলে বায়না ধরলো। অগত্যা মিসেস ইয়াসমিন তাদেরকে সঙ্গে নিতে রাজি হলেন।
বিকেল ৪ টার দিকে ওনারা রেডি হয়ে আলেয়াদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। মিসেস ইয়াসমিন মনে মনে ভীষণ খুশি আজ। অবশেষে আশিয়ানের জন্য মনের মতো একখান পাত্রী মিললো।
🦋🦋🦋
আলেয়াদের বাসা মেহমানে ভরপুর। সবার কথাবার্তার শব্দ ও বাচ্চাদের চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ সব মিলে এক আলাদা কোলাহল মুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
মি.এনামুল ও মি.মোরশেদ, মি.আনিসুলের সাথে পুরোপুরি রূপে মিশে গেছেন৷দেখে মনে হচ্ছে যেন পুরোনো ৩ বন্ধু মিলে আড্ডা দিচ্ছেন।
মি.গোলজার,মুরাদ,শাহরিয়ার, মিনাজ, আলেয়ার বড়বোনের স্বামী ইমতিয়াজ ওরাও সেই আড্ডায় সামিল আছেন।
মিসেস ইয়াসমিন, মিসেস আনিতা, মিসেস লিমা, মিসেস তারানা ওনারাও গল্পে মজে আছেন৷ কেয়া, তারিন ও এনা ভেতরে ঊদিতার রুমে গিয়েছে ঊদিতার সাথে দেখা করতে। সঙ্গে আলেয়াও আছে। আলেয়ার বড়বোন শাফেয়া, তানিয়া ও শাহরিয়ারের বউ উসামা রান্নাঘরে ব্যস্ত।আর আন্ডাবাচ্চা সবগুলো একসাথে মিলে বাইরে উঠানে খেলা করছে৷
এনা তো ঊদিতাকে পেয়ে কথার ফুলঝুরি ছুটাচ্ছে। ঊদিতাও হাসিমুখে নতজানু হয়ে তাদের সাথে কথা বলছে। কেয়া মুগ্ধ হয়ে গেছে ঊদিতাকে দেখে। কী অপরুপ দেখতে মেয়েটি!যেন সাক্ষাৎ হুরপরী!সাথে কী অমায়িক তার ব্যবহার!ওর সবকিছুই মনোমুগ্ধকর।কেয়া প্রথম দেখায় ঊদিতাকে পছন্দ করে ফেলেছে নিজের জা হিসেবে। তাকে যে আশিয়ানের সাথে ভীষণ মানাবে!কেয়া যেমন খুশি হয়েছে ঠিক তেমনই তারিন হিংসায় জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। এত্তো রূপবতী কিশোরী,,, যে নিজেই সারাটা আগুনের ফুলকির মতো তার আগমন চৌধুরী বাড়িতে পড়লে তো তারিনের বাহাদুরি ফুরিয়ে যাবে!
“ঊদিতা তো পুরো আগুন সুন্দরী,,, আশিয়ান ওকে দেখলে ড্যাম শিওর ও পাগল হয়ে যাবে,,, না,, না,,যে করেই হোক এ বিয়ে আটকাতে হবে,,, নাহলে আমার রাজত্বে ভাটা পড়বে,,” মনে মনে ভাবছে তারিন।
ঊদিতাকে পড়ানোর জন্য মিসেস লিমা ওনার আলমারি থেকে সালমন পিংক কালারের একটা হালকা কারুকাজ করা শাড়ি বের করে নিয়ে এলেন ৷ ঊদিতাকে শাড়ি পড়ানোর দায়িত্ব কেয়া নিজে নিয়ে নিলো । মিসেস লিমাও হাসিমুখে কেয়ার হাতে শাড়ি তুলে দিয়ে আবারও চলে গেলেন ড্রয়িং রুমে।কেয়া ব্লাউজ আর পেটিকোট হাতে দিয়ে ঊদিতাকে বললো ওয়াশরুম থেকে পড়ে আসতে।নতমুখে এসব নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল সে।বেশ কিছুক্ষন পর ব্লাউজ পেটিকোট পড়ে বের হলো।ঊদিতাকে দেখে কেয়া শাড়ি হাতে নিলো তাকে পড়িয়ে দেয়ার জন্য।
ঊদিতা লজ্জা মিশ্রিত অজানা আশংকায় বারবার ঘেমে নেয়ে লাল হয়ে যাচ্ছে। নার্ভাসনেস তার মাঝে যেন জেঁকে বসেছে।কেন জানি তার ভয় লাগছে খুব। কেয়া বুঝতে পারলো বিষয়টা। মুচকি হেসে ঊদিতাকে সহজ করার জন্য বললো;
কেয়া:-ঊদিতা,,, তুমি কী ভয় পাচ্ছো?ভয় পেয়ো না গো বনু,,,এখানে ভয়ের কিছু নেই। আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি কিন্তু প্রচুর ভালো। আর দেবরের কথা কী আর বলবো!বিয়ের পর তুমি বুঝতে পারবে,,, এখন এত লজ্জায় লাল হয়ো না বনু,,,লজ্জাটা আগামী সময়ের জন্য তুলে রাখাে৷
ঊদিতা লজ্জা পেয়ে আমতা আমতা করে বললো;
ঊদিতা:-আসলে তেমন কিছু নয় ভাবী,,,মানে আমি,,,আসলে,,
কেয়া:-হয়েছে আর আমতা আমতা করতে হবে না। সহজ করো নিজেকে,,, এত নার্ভাস হওয়ার কিছু নেই। তবে নিশ্চিত থাকো,,, আজ বিয়ের বিষয়টা একদম পাঁকা করা হবে। মানসিকভাবে প্রস্তুত থেকো বনু,,,আমার দেবরের সাথেই তোমার জোড়া আল্লাহ মিলিয়ে রেখেছেন।
ঊদিতার গাল টকটকে গোলাপি হয়ে গেছে লজ্জায়। এত লজ্জা সে জীবনেও পায় নি।কেয়া হেসে হেসে ঊদিতাকে শাড়ি পড়িয়ে দিতে লাগলো।
এদিকে,,,
ড্রয়িং রুমে কথাবার্তার তুমুল বর্ষন চলছে। সবাই হাসিমুখে কথা বলছেন। মিসেস লিমা একটু পর পর একেকটা করে নাশতার ডিশ নিয়ে আসছেন।যার অর্ধেকই তৈরি করেছে ঊদিতা। মিসেস লিমা সপ্রশংস গদগদকণ্ঠে বলতে লাগলেন কোন আইটেম গুলো ঊদিতা বানিয়েছে!বাকিরাও খুব প্রশংসা করছে ঊদিতার হাতের রান্নার। মিসেস ইয়াসমিন তো বারবার মি.মোরশেদকে ইশারা দিয়ে বোঝাচ্ছেন যে দেখো কেমন গুনী মেয়েকে তোমার ছেলের জন্য পছন্দ করেছি। মি.মোরশেদ কিছু না বলে মুচকি হাসছেন শুধু। এবার মি.এনামুল বলে উঠলেন;
মি.এনামুল:-বলছি কী,,,অনেক তো গল্প করলাম,,,এবার মেয়েকে নিয়ে আসুন,,, দেখি আমরা আমাদের মেয়েটাকে একবার।
মি.গোলজার সাথে সাথে বলে উঠলেন;
মি.গোলজার:-হ্যা তাইতো,,,,আসল বিষয়টাই তো মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে গল্পের তালে পড়ে। লিমা,,,যাও তো ঊদিতা মাকে নিয়ে এসো,,, যাও।
মিসেস লিমা:-হ্যা হ্যা,,,আমি ওকে নিয়ে আসছি৷
মিসেস লিমা ব্যস্ত ভঙ্গিতে ভেতরের রুমে চলে গেলেন। ততক্ষণে ঊদিতাকে কেয়া আর এনা মিলে তৈরি করে ফেলেছে। মিসেস লিমা রুমে ঢুকে ঊদিতাকে দেখে যেন থমকে গেলেন একমুহূর্তের জন্য। সালমন পিংক কালারের শাড়িতে তাকে কী না লাগছে দেখতে,,,ঊদিতা এর আগে এত ঘটা করে কখনোই শাড়ি পড়ে নি,,,আজই প্রথম। মিসেস লিমা ভাবতেও পারেন নি যে ঊদিতাকে শাড়িতে এত মায়াবি লাগবে। মিসেস লিমা মুগ্ধ হয়ে বলে উঠলেন;
মিসেস লিমা:-অপূর্ব,,, আমার ঊদিতা মাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে। আল্লাহ,,, কারো নজর যেন না লাগে আমার মা’টার ওপর।
সপ্রশংস কন্ঠে মিসেস লিমা ঊদিতার প্রশংসা করে এগিয়ে গিয়ে তার কপালে একটা চুমু দিলেন। মিসেস লিমার সাথে মিসেস আনিতাও এসেছিলেন। মেয়েকে প্রথমবার শাড়িতে দেখে তিনিও মুগ্ধ হয়ে গেছেন। মিসেস লিমার কথা শুনে মুচকি হেসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন তিনি। ঊদিতা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে পুরো।
ঊদিতার হাঁটুসমান লম্বা চুল গুলোকে কেয়া হাতখোপা করে মাথার ওপর শাড়ির আঁচল দিয়ে ঘোমটা টেনে দিয়েছে।ঊদিতার চুলের প্রশংসা করতে করতে প্রায় হাঁপিয়ে গেছে এনা।তার জানামতে ঊদিতার চুল খুবই আকর্ষণীয় আর সিল্কি। এই চুল দিয়েই সে আশিয়ানকে বেঁধে রাখতে পারবে বলে কেয়ার ধারণা।
ঊদিতাকে কেয়া হাতে গলায় কানে কিচ্ছু পড়ায় নি তার কারণ মিসেস ইয়াসমিন তাকে নিজহাতে স্বর্নের গহনাগুলো পড়িয়ে দেবেন তাই। ডান হাতের আঙ্গুলে শুধু মিসেস ইয়াসমিনের দেয়া সেই আংটিটা রয়েছে। শাড়ির সাথে ম্যাচিং থ্রি কোয়ার্টার হাতার সোনালি ব্লাউজ পড়েছে সে যার কারণে তার কনুই এর নিচ থেকে ধবধবে ফর্সা হাতদ্বয় দেখা যাচ্ছে। মুখে কোনোরকম প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহার করে নি সে,,,ঠোঁটে শুধুমাত্র মেরিল লিপবাম ব্যতিত। এতেই তাকে অপ্সরী বলে মনে হচ্ছে,,, সাজগোজ করলে না জানি কতটা আকর্ষণীয় লাগতো!!!
মিসেস লিমা দেরী করলেন না,,,ঊদিতাকে সাথে নিয়ে ড্রয়িং রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালেন। ঊদিতার দুপাশে এনা ও কেয়া গার্ডের মতো ছিলো। ঊদিতা লজ্জায় মাথানিচু করে রেখেছে। ড্রয়িং রুমে গিয়ে এত মানুষ দেখে লজ্জায় পুরোপুরি আড়ষ্ট হয়ে গেল সে। অনেক কষ্টে নিজেকে স্বাভাবিক করে সবাইকে মিষ্টিস্বরে বিনীত ভাবে সালাম দিলো। তাকে দেখে মিসেস ইয়াসমিন ও মিসেস তারানা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছেন। মি.এনামুল ও মি.মোরশেদ হাসিমুখে সালামের জবাব দিলেন। মিসেস তারানা ও সালামের জবাব দিয়ে বলে উঠলেন;
মিসেস তারানা:-এখানে এসে বসো মা। আসো,,।
ঊদিতাকে কেয়া ধরে ধরে নিয়ে গিয়ে মিসেস তারানা ও মিসেস ইয়াসমিনের মধ্যখানে বসিয়ে দিলো। মিসেস তারানা ঊদিতার থুতনি আলতো করে ধরে মুচকি হেসে বলে উঠলেন;
মিসেস তারানা:-মাশা-আল্লাহ,,,ঊদিতা মাকে আমার আশুর জন্য ভীষণ পছন্দ হয়েছে।তুমি ভীষণ মিষ্টি দেখতে মামণি।
ঊদিতা প্রতিউত্তরে কিছুটা বিব্রত হয়ে মুচকি হাসলো। মি.মোরশেদ এবার আদুরে কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন;
মি.মোরশেদ:-তোমার নাম কী মামণি?
ঊদিতা বিনীতভাবে আস্তে করে বলে উঠলো;
ঊদিতা:-জ্বী,,,,ইশরাত আবিয়াত ঊদিতা আমার নাম।
মি.এনামুল:-কোন ক্লাসে পড়ো তুমি আম্মু?
ঊদিতা:-জ্বী,, আমি এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি।
মি.মোরশেদ:-রেজাল্ট তো মনে হয় দেয় নি এখনো তাই না?(জানতে চেয়ে)
ঊদিতা:-জ্বী না,,, আঙ্কেল।
মি.মোরশেদ:-ওহহ,,। তা তোমার স্বপ্ন কী মামণি?পড়ালেখা করে বড় হয়ে কী হতে চাও?
ঊদিতা:-আসলে,,,সেরকমটা এখনো ভেবে দেখি নি। আমার ভাইয়া চান আমি একজন সমাজকর্মী হই৷ আমিও মনে মনে সেটাই ভেবেছিলাম। অনাথ,এতিম,অসহায় মানুষদের জন্য কিছু একটা করার সুপ্ত ইচ্ছে আছে আমার অনেক আগে থেকেই। আল্লাহ আমাকে সেরকম সামর্থ্য দিলে অবশ্যই আমি আমার স্বপ্নটা পূরণ করবো।এছাড়া আপাতত অন্য কোনো কিছু চিন্তাভাবনা করি নি আমি৷
ঊদিতার জবাব শুনে সবাই মুগ্ধ হয়ে গেলেন। এরকমটা করেও কেউ ভাবতে পারে তা ভাবতে পারেন নি মি.মোরশেদ ও মি.এনামুল। মি.এনামুল সহাস্যবদনে বলে উঠলেন;
মি.এনামুল:-আরে বাহ,,,আমাদের আশিয়ানের মতোই দেখি তোমারও সেইম মনোভাব। আশিয়ানের সাথে তোমার মিলবে ভালো খুব। আমার ভাতিজাও তো একই কাজ করতে ভীষণ পছন্দ করে। সে তার নিজের ইনকামের টাকা দিয়ে ২ টা এতিমখানা ও একটা বৃদ্ধাশ্রম তৈরি করেছে।অসহায় এতিম শিশুদেরকে নিজের টাকা দিয়ে পড়াশোনা করায় সে ৷ ঈদ-উল-ফিতর ছাড়াও প্রত্যেক মাসে মাসে সবাইকে জামাকাপড় কিনে দেয়। ঈদ-উল-আযহা তে সবসময় ৫ টা করে গরু কোরবানি দেয় অসহায় মানুষদের জন্য। শীতের মৌসুম এলেই সে শীতের পোশাক ও কম্বল কিনে দেয় তাদেরকে।অসহায় কেউ অসুস্থ হলে নিজ দায়িত্বে চিকিৎসা করায়। অকাতরে অসহায় দরিদ্র মানুষদের পেছনে টাকা খরচ করে আশিয়ান। আমরা কেউ তাকে বাঁধা দিই না। উল্টো আমরাও আমাদের ইনকাম থেকে ওর এতিমখানা ও বৃদ্ধাশ্রমের ফান্ডে দান করি। আমার ভাতিজার মতো নরম মনের মানুষ হতেই পারে না। খুব ভালো একটা ছেলে সে। যার মধ্যে অহংকারের কোনো ছিটেফোঁটাও নেই।
মি.এনামুলের কথায় সায় জানিয়ে মাথা ঝাঁকালেন মি.মোরশেদ ও মিসেস তারানা। মিসেস ইয়াসমিন মুখে মৃদু হাসি ফুটিয়ে ওনাদের কথা শুনছেন।শাহরিয়ার ও মি.আনিসুল আশিয়ানের এ গুনের কথা শুনে মনে মনে ভীষণ খুশি হলেন।এরকম একটা ব্যক্তিত্বের মানুষকে কে ফিরিয়ে দেবে?
ঊদিতার মনে আশিয়ানের প্রতি একধরনের শ্রদ্ধাবোধ জেগে উঠলো। মানুষটা কত ভালো মনের হলে এতটা মানব দরদী হতে পারে! তা বুঝতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হলো না ঊদিতার। আশিয়ান নামক ব্যক্তিটাকে ঊদিতা কখনোই দেখে নি,,,চেনেও না যে সে কে হতে পারে?
আশিয়ানের প্রতি তার না কোন ইন্টারেস্ট আছে আর না আছে ওর জন্য কোনো মাথাব্যথা। ঊদিতা ফোন যেমন ইউজ করে না তেমনই টিভিতে টম এন্ড জেরি কার্টুন ছাড়া অন্যকিছু দেখে না। ভার্চুয়াল জগৎ থেকে একদম বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে বেশিরভাগ সেলেব্রিটি ও নায়ক নায়িকাদেরকেই সে চেনে না। পড়াশোনা আর ঘরকন্নার কাজ নিয়েই তার সময় কাটে বেশি। আর তার ভাইয়া ল্যাপটপে নির্দিষ্ট অনেকগুলো রান্নার ভিডিও,ফাইভ মিনিট ক্রাফটস এবং হাতের কাজ শেখার ভিডিও ডাউনলোড করে রাখে যাতে ঊদিতা এগুলো দেখে কাজের কিছু শিখতে পারে।
বাইরের জগৎ সম্পর্কে ঊদিতার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। ভাইয়া আর বাবার ছায়ার নীচে বড় হয়েছে সে এবং তার বোন ৷ ফুলের টোকা অবধি লাগতে দেন নি কখনো তাদের গায়ে৷ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম হলেও আদর ভালোবাসায় কোনো কমতি রাখেন নি মি.আনিসুল ওনার ছেলেমেয়েদেরকে।দুবোনই সেইম ক্যাটাগরির,,। এক্সট্রা কোনো কিছুর চাহিদা নেই তাদের। ভাই আর বাবার কথাই তাদের জীবনের শেষ কথা। খুবই বাধ্য মেয়ে ওরা।মি.আনিসুলের কলিজা বলা যায় তাদেরকে। আর শাহরিয়ারের জান।
চলবে…🍃