#তোমাতে বিলীন🍁
#লেখিকা—আমায়া নাফশিয়াত ☘
#পর্ব—|| ০৩ ||
হঠাৎ করে এনাকে দেখে কিছুটা হকচকিয়ে গেলেন মিসেস ইয়াসমিন।মায়ের চমকে উঠা দেখে এনা হেসে ফেললো।মিসেস ইয়াসমিন নিজেকে সামলে নিয়ে এনার উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন;
মিসেস ইয়াসমিন:-একটু শব্দ করে তো আসবি নাকি?আচমকা এভাবে আসায় পুরো ভয় পেয়ে গেছি আমি। (বুকে থুথু দিয়ে)
এনা মিসেস ইয়াসমিনকে রিল্যাক্স হওয়ার টাইম দিয়ে বলে উঠলো ;
এনা:-আরে আম্মু কুল,,,,ভয় পাওয়ার কী আছে? আমিই তো!তোমার মেয়ে এনা!(মুচকি হেসে)
মিসেস ইয়াসমিন:-হয়েছে আর বলতে হবে না,,,! আমি জানি তুমি আমার মেয়ে,,। তা কীজন্য এসেছিস ফটাফট বলে ফেল টাইম ওয়েস্ট না করে?
এনা মায়ের কথা শুনে চোখের চশমা ঠিক করে সিরিয়াস হয়ে বলতে লাগলো ;
এনা:-আম্মু,,, আমি যা ভাবছি,,, তুমিও কী তাই ভাবছো?
মিসেস ইয়াসমিন ভ্রু কুঁচকে এনার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন;
মিসেস ইয়াসমিন:-কোনটা?
এনা:-আমার না ওই ঊদিতা মেয়েটাকে আশু ভাইয়ার জন্য ভীষণ পছন্দ হয়েছে। কত সুন্দর ফুটফুটে মেয়েটা। বিশ্বাস করো আম্মু,,, এত সুন্দর মেয়ে আমি এর আগে কখনো দেখি নি। একদম ন্যাচারাল লুক তার। কোনো ধরনের কোনো প্রসাধনী ব্যবহার করে নি। একদম নরমাল।দেখলেই বোঝা যায়,, খুব ধার্মিক ও রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে সে। আর ভীষণ সংসারীও বটে।এদিকে,, তাসকিন ভাইয়ারটার আসল চেহারা তো দেখিই নি এখনো,, যে হারে পার্লার থেকে সাজগোজ করে এসেছে বাপরে! আর এতবড় ধামড়া মেয়ে নাকি রান্না করতে পারে না,, কই আমাকে তো তুমি সব ধরনের রান্না ও ঘরের কাজ শিখিয়েছো। অথচ ওর থেকে আমার পড়ার চাপ বেশি। ইন্জিনিয়ারিং পড়া তো আর চাট্টিখানি কথা নয়।
মিসেস ইয়াসমিন এনার দিকে একপলক তাকিয়ে বললেন;
মিসেস ইয়াসমিন:-সবার যে সবকিছু শিখতে হবে এমন কোনো কথা নেই এনা,,। যে সংসার করবে,, মানে তোর তাসকিন ভাইয়ার কথা বলছি,, তার তো কোনো অসুবিধা নেই,,, তাহলে তোর এত বিরক্ত লাগছে কেন শুনি?
এনা:-সে তো এখন হবু বউকে দেখে স্বপ্নের রঙিন রাজ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে,, বিয়ের পর ঠিকই টের পাবে কোন ধানিলঙ্কাকে বিয়ে করে এনেছে,,।তখন তার আফসোসের সীমা রইবে না দেখো তুমি। মিলিয়ে নিয়ো আমার কথা (চ্যালেন্জ করে)।,, দেখেই বুঝেছি ওই আলেয়া ভীষণ দেমাগী টাইপের মেয়ে,, অহংকারে ভরা তার মন।
মিসেস ইয়াসমিন:-সে যাগগে,,,ওর কথা চিন্তা করে আমাদের লাভ নেই। তুই ঊদিতার কথা জানতে চাইছিলি না?তাহলে শুন,,আমি ওকে আংটি পড়িয়ে দিয়ে এসেছি,, সাথে ১০ হাজার টাকা দিয়েছি সালামি হিসেবে। সত্যি বলতে আশিয়ানের জন্য আমারও তাকে ভীষণ পছন্দ হয়েছে।আমি শিওর তোর আব্বু জানলে কিছুই বলবে না বরং শুনে খুশি হবে খুব,, আমার পছন্দে যে ওনার পছন্দ সে আমি জানি। এবার শুধু তোর ভাইকে রাজি করানোর পালা।(প্লেটে ও বাটিতে ভাত তরকারি নিয়ে)
এনা মনে মনে খুশি হলো এ জন্য যে তার আম্মু তার থেকেও ভীষণ ফাস্ট। তবুও কিছু একটা চিন্তা করে এনা সংশয় ভরা কন্ঠে বললো;
এনা:-আমরা তো আমাদের পছন্দ নিয়ে মেতে আছি আম্মু,,, ভাইয়ার কী তাকে পছন্দ হবে?আর ঊদিতার আব্বু আম্মু কী মানবেন? ঊদিতার তো বয়সও খুব কম। মাত্র ১৬ বছর। এবয়সে বিয়ে দিলে তো বাল্যবিবাহ হয়ে যাবে,, প্লাস বিয়ের রেজিস্ট্রি ও হবে না।আর ভাইয়ার সাথে ওর বয়সের তফাৎ ও অনেক।পুরো ১০ বছরের ব্যবধান।
মিসেস ইয়াসমিন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললেন;
মিসেস ইয়াসমিন:-ওসব নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। আমি মনে মনে সব প্ল্যান করেই রেখেছি।এমন প্ল্যান করেছি যে সবকিছু ১০০ পার্সেন্ট হওয়ার নিশ্চিত সম্ভাবনা আছে।সাপ ও মরবে লাঠিও ভাঙবে না। তোর ভাইয়াও রাজি হবে,, মেয়ের বাবা মা ও রাজি হবে ৷ আর বয়স নিয়ে চিন্তা নেই,, রেজিস্ট্রি পেপারে বয়স বাড়িয়ে দিলে অবশ্যই রেজিস্ট্রি হবে। তবে আমি রেজিস্ট্রি নিয়ে চিন্তা করছি না। আপাতত ধর্মমতে বিয়েটা হয়ে গেলেই এনাফ। তারপর ঊদিতার ১৮ বছর পূর্ণ হয়ে গেলেই বিয়ের রেজিস্ট্রার পেপারে সাইন করে ফেললেই হয়ে গেল। আর কিছু লাগবে না।আর তোর বাবা তো আমার থেকে বয়সে ১১ বছরের বড়! তো?তোর বাবার সাথে কী আমি সংসার করছি না নাকি? (নির্বিকার চিত্তে)
তাই তো?এটা তো এনা ভাবে নি কখনো!এই বয়সটা তো তেমন একটা ম্যাটার করে না।মাত্র ১০ বছর।অনেকে তো ১৫ – ২০ বছরের বড় ছেলেকে বিয়ে করে।এসবের মাঝে তো এটা কিছুই না!
এনা মনে মনে তার আম্মুর বুদ্ধির তারিফ করলো। তার আম্মু আসলেই অনেক বুদ্ধিমান। এনা জানে মিসেস ইয়াসমিন যখন বলেছেন তার মানে তাঁর প্ল্যান ১০০ পার্সেন্ট সফল হবেই হবে। এখন সে শুধু দর্শকের মতো সব দেখে যাবে।এনা কিছু একটা চিন্তা করে আবারও বলে উঠলো;
এনা:-সবই বুঝলাম আম্মু। কিন্তু আব্বুর বন্ধুর মেয়ে আশাকে কী করবে? মেয়েটা ভীষণ চ্যাছড়া,,,। এত সহজে কী ভাইয়ার পিছু ছাড়বে বলে মনে হয় তোমার?যেখানে ইলিয়ানা থাকার সত্ত্বেও ভাইয়ার পিছু পিছু ঘুরেছে সে সেখানে ওকে এত ইজিলি ভাইয়ার পিছু কী করে ছাড়াবে? আমার তো মনে হয় না যে ও এত সহজে ভাইয়াকে ছেড়ে দেবে।
মিসেস ইয়াসমিন:-ওই জোঁকের কথা বাদ দে। তুই ভালো করে জানিস আমি ওই মেয়েকে দুচোক্ষে দেখতে পারি না।আর ঊদিতা এ বাড়ির বউ হয়ে আসলে ও এমনিতেই আমার ছেলের পিছু ছাড়তে বাধ্য। আর সেই ব্যাপারটা ঊদিতা নিজ হাতে কন্ট্রোল করবে,,আশা করছি সে তার স্বামীর কাছে অন্য কোনো মেয়েকে কখনও এলাউ করবে না।
এনা খুশিতে গদগদ হয়ে তার আম্মুকে পিছন থেকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো।কন্ঠে খুশির আমেজ ফুটিয়ে তুলে বললো;
এনা:-ওহ মাই ডিয়ার আম্মু,,, এজন্যই তোমাকে আমি এত্তো এত্তো ভালোবাসি। দুনিয়াতে সবথেকে বেস্ট কেউ থেকে থাকলে সে হলো আমার আম্মু।জানো তো আম্মু আমার না ভীষণ খুশি লাগছে তোমার কথা শুনে। সত্যি বলছি,, ঊদিতাকে আমি আমার ভাবী হিসেবে পেলে আর কিছুই চাইবো না। আমার আশু ভাইয়ার বউ হিসেবে একমাত্র ওই পারফেক্ট। দুজনকে একসাথে দেখলে যে কেউই বলবে,, মেইড ফর ইচ আদার,,, তাই না আম্মু?
মেয়ের খুশি দেখে মিসেস ইয়াসমিনের মুখেও হাসি ফুটে ওঠলো। সত্যিই তিনি খুব ভাগ্যবতী একজন মহিলা। তার বড়ছেলের বউ যেমন নিরহংকার ভালো মনের সহজ সরল টাইপের মেয়ে তেমনি ঊদিতাও সেরকম,,।
এবং ঊদিতাকে ছেলের বউ হিসেবে ঘরে আনলে তাঁর সংসার একদম পরিপূর্ণ ও সবচাইতে সুখী পরিবার হিসেবে গন্য হবে। মিসেস ইয়াসমিন কখনোই রত্ন চিনতে ভুল করেন না। বেছে বেছে ঠিকই তিনি খাঁটি রত্ন নিয়ে আসেন তার ছেলেদের জন্য। আশিয়ানের বিয়ের পর তাশজিদের জন্যও মেয়ে দেখতে হবে।
নিজের ছেলেমেয়েদেরকে একটা দিক লাগাতে পারলে এবং তাদের জন্য সঠিক জীবনসঙ্গী বাছাই করে দিয়ে তাদেরকে সুখী দেখে তিনি তখন শান্তিতে মরতেও পারবেন। তখন আর তাঁর মধ্যে কোনো আক্ষেপ থাকবে না।
মিসেস ইয়াসমিন মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আদুরে কন্ঠে বললেন;
মিসেস ইয়াসমিন:-পাগলী মেয়েটা আমার,,,। শুধু দোয়া কর তোর ভাইয়া যাতে সহজে বিয়ের বিষয়টা মেনে নেয়। এতে আমার বাকি কাজ সারতে সুবিধা হবে। আর হ্যা তোর আর আমার মধ্যকার কথাবার্তা যেন লিক না হয়। এসব ব্যাপারে সঠিক সময় না হওয়া পর্যন্ত কেউ যেন জানতে না পারে,,,।সব ঠিকঠাক করে আমিই সবাইকে জানিয়ে দেবো।আগে তোর ভাইকে ম্যানেজ করি,তারপর। মনে থাকবে তো? (হুশিয়ার করে)
এনা বাধ্য মেয়ের মতো মাথা দুলিয়ে বললো;
এনা:-ঠিক আছে আম্মু,,,তুমি নিশ্চিত থাকতে পারো এসব ব্যাপারে এখন কেউ কিছুই জানবে না।
মিসেস ইয়াসমিন একটা ট্রে তে খাবার ও কড়া এক মগ কফি নিয়ে এনাকে উদ্দেশ্য করে বললেন;
মিসেস ইয়াসমিন:-আচ্ছা এখন তুই ড্রয়িং রুমে যা। সবার সাথে গিয়ে গল্প কর,, আর তোর আব্বুকে এই চায়ের কাপটা দিয়ে দিস। আমি আশিয়ানের রুমে যাচ্ছি। সারাদিন ধরে ছেলেটা বাসায় আসে নি,, খেয়েছে কিনা সেটাও জানি না। আমি যাই,,।
এই বলে মিসেস ইয়াসমিন তাড়া দেখিয়ে চলে গেলেন। এনাও চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে ড্রয়িং রুমের দিকে পা বাড়ালো।
মিসেস ইয়াসমিন ট্রে হাতে আশিয়ানের রুমে নক করে ঢুকলেন।রুমে ঢুকে দেখলেন আশিয়ান সবেমাত্র শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে চুল মুছতে মুছতে বেরোচ্ছে। মিসেস ইয়াসমিনকে দেখতে পেয়ে আশিয়ান মলিন হাসলো। তার চোখমুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে ভীষণ টায়ার্ড হয়ে আছে সে। মিসেস ইয়াসমিনের বুকটা হু হু করে উঠলো ছেলের এ অবস্থা দেখে। তার এত হাসিখুশি ছেলেটা এভাবে বদলে গেল। বাইরে যতই মেকি হাসি হাসুক ভেতরে তার থেকেও ৩ গুন কষ্ট তাকে প্রতিনিয়ত কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। যা আর কেউ বুঝতে না পারলেও মিসেস ইয়াসমিন ঠিকই বুঝতে পারেন।
মিসেস ইয়াসমিনও হাসিমুখে আশিয়ানের কাছে গিয়ে বিছানার পাশে সেন্টার টেবিলের ওপর খাবারের ট্রে টা রাখলেন। আশিয়ানের পড়নে থ্রি কোয়ার্টার টাওজার ও গায়ে একটা টি শার্ট। ভেজা চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। লম্বা লম্বা চোখের পাপড়ি ও গালের খোঁচা খোঁচা কালো চাপদাড়িতে ফোঁটা ফোঁটা পানি আটকে আছে।রক্তলাল ঠোঁটজোড়াও ভেজা।তার ডানগালে কুচকুচে কালো একটা তিল তার সৌন্দর্য্য আরো ৫ গুন বাড়িয়ে দিয়েছে। হলুদ ফর্সা চেহারায় ভীষণ মায়া বিরাজ করছে তার।
আশিয়ান উচ্চতায় প্রায় ৬ ফুট ২ কী ৩ ইঞ্চি হবে। জিম করা ৬ পেগ ওয়ালা ফিট বডি তার। দেখতে ভীষণ এট্রাকটিভ। তার ঐ লুক যেকোনো মেয়ে ফিদা হওয়ার জন্য যথেষ্ট। সেই লেভেলের স্ট্রং পার্সোনালিটি তার মধ্যে বিদ্যমান। এখন সে যে লুকে আছে আই মিন আফটার শাওয়ার,, এই লুকে দেখলে তো মেয়েরা পাগল হয়ে যাবে।
মিসেস ইয়াসমিন আশিয়ানের হাতে কফির মগ ধরিয়ে দিলেন। আশিয়ান মগ হাতে নিয়ে বিছানায় বসে পড়লো। মিসেস ইয়াসমিন টাওয়েল হাতে নিয়ে সযত্নে আশিয়ানের মাথার চুল মুছে দিচ্ছেন আর বলছেন;
মিসেস ইয়াসমিন:-তোকে কতদিন বলেছি বাবা,,,গোসল শেষে সবার প্রথমে মাথার ভেজা চুলগুলো আগে মুছে নিবি,,, চুল ভেজা থাকলে তোর ঠান্ডা লেগে যাবে। তুই তো আমার কোনো কথাই শুনিস না। (অভিযোগ করে)
আশিয়ান মুচকি হেসে কফির মগে তৃপ্তির সাথে চুমুক দিয়ে এক হাত দ্বারা মাকে জড়িয়ে ধরলো। আবারো মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো;
আশিয়ান:-তুমি থাকতে আমি নিজের কথা কখনো চিন্তা করি না আম্মু। কারণ আমি জানি অন্যরা আমার কেয়ার করার কথা ভুলে গেলেও আমার আম্মু আমার কেয়ার করার কথা জীবনেও ভুলবে না। কেয়ামত হয়ে গেলেও আমার আম্মু আর সবার মতো স্বার্থপর হয়ে আমায় ফেলে চলে যাবে না। কারণ আমি জানি আমার আম্মু আমায় ভীষণ ভালোবাসে।
মিসেস ইয়াসমিন সহাস্যবদনে আশিয়ানের মাথায় একটা চুমু খেলেন। আশিয়ানকে তিনি অনেক বেশি ভালোবাসেন। এর একটা কারণ হলো গিয়ে আশিয়ান যখন মিসেস ইয়াসমিনের গর্ভে আসে,, তখন ডক্টর বলেছিলেন বেবি নষ্ট করে ফেলতে,, কারণ মিসেস ইয়াসমিনের প্রেগন্যান্সিতে বেশ কিছু কমপ্লিকেশনস দেখা দিয়েছিলো।তারপরও ডক্টরের কথা উপেক্ষা করে তিনি বেবি নষ্ট করেন নি।আল্লাহর উপর ভরসা করেছিলেন তিনি।
ওনি যখন সাত মাসের প্রেগন্যান্ট তখন হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়ার ফলে বেবি তার নির্দিষ্ট স্থান থেকে উল্টে যায়।এতে ওনার লাইফ রিস্ক আরো বেড়ে যায়।পরে ডেলিভারিতে ডক্টররা বলেছিলেন যে মাকে কোনোমতে বাঁচানো গেলেও বেবিকে নাও বাঁচানো যেতে পারে। কারণ বেবির অবস্থা তখন খুব শোচনীয় ছিলো। উল্টো হয়ে মায়ের নাড়ির সাথে পেঁচিয়ে গেছে সে। প্রায় সাড়ে ৪ ঘন্টা সিজার অপারেশনের পর বাচ্চাকে কোনোমতে বাঁচানো গেলেও ডক্টররা তখনও শিওর হতে পারেন নি যে বাচ্চা আদৌ বাঁচবে কি না!! তাই তারা একসপ্তাহ বাচ্চাকে মায়ের থেকে আলাদা করে বেবিদের জন্য নির্দিষ্ট আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাখলেন।
মিসেস ইয়াসমিনের আহাজারিতে অবশেষে আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠলো বাচ্চাটা,,, মানে আশিয়ান আরকি। এরজন্য মিসেস ইয়াসমিন অত্যাধিক পরিমাণ ভালোবাসেন তাঁর ছেলেকে। অন্যান্যদের থেকে আশিয়ান তার বাবা মায়ের অনেক বেশি আদরের। এতে অবশ্য তার বাকি ভাইবোনেরা মোটেও হিংসা করে না। বরং তারাও তাকে অনেক বেশি ভালোবাসে। এনা তো আশিয়ান বলতে পাগল। আশিয়ানও তার বোনকে অনেক ভালোবাসে।
মিসেস ইয়াসমিন আশিয়ানের মাথায় ও গালে হাত বুলিয়ে আশিয়ানের সামনে একটা চেয়ার টেনে বসলেন। আশিয়ান একমনে কফি খেয়ে যাচ্ছে। মায়ের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ জিজ্ঞেস করে উঠলো সে;
আশিয়ান:-তাসকিনের এনগেজমেন্ট কোনদিন ঠিক করলে আম্মু,,বললে না তো ?
মিসেস ইয়াসমিন:-একসপ্তাহ পর এনগেজমেন্ট ঠিক করা হয়েছে। ঢাকার বড় একটা কনভেনশন হলে ধুমধাম করে এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠান করা হবে। এই একসপ্তাহের মধ্যে শপিং টপিং সব সেড়ে ফেলতে হবে। এখন তোর আব্বু আর চাচ্চু মিলে বিয়ে কোনদিন হলে বেশি সুবিধা হবে তা নিয়ে আলোচনা করছেন। এনগেজমেন্টের ইনভাইটেশন কার্ড ও অর্ডার দেয়া হয়ে গেছে। কালকে সন্ধ্যায় কার্ডগুলো সব দিয়ে যাবে মনে হয়। যা করার সব এই সপ্তাহের মধ্যেই শেষ করে নিতে হবে। সামনের শুক্রবার এনগেজমেন্ট।
আশিয়ান:-বাহ,,, কাজ তাহলে অনেক এগিয়ে গেছে। বিয়ে পাগলটার (তাসকিন) বিয়ে হচ্ছে অবশেষে। ভালো। (কফি শেষ করে)
আশিয়ানের হাত থেকে কফির মগ নিয়ে টেবিলের উপর রাখলেন মিসেস ইয়াসমিন। আশিয়ানের মাথা ব্যথাটা কফি খাওয়ার পর অনেকটাই হালকা হয়ে গেছে। এবার মিসেস ইয়াসমিন ভাতের প্লেট হাতে নিলেন,,। ভাতের সাথে তরকারি মাখিয়ে আশিয়ানের মুখের সামনে ধরলেন। আশিয়ান নিজের মুখ এগিয়ে নিয়ে এসে ওনার হাত থেকে ভাতের নলাটা মুখে পুরে নিলো। মিসেস ইয়াসমিন আশিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন;
মিসেস ইয়াসমিন:-বলছি কী,,,বয়েস তো আর তোর কম হলো না বাবা,,, ২৬ এর কোঠায় পা রেখেছিস! তোকে রেখে তোরই একবছরের ছোট ভাইটাও বিয়ে করে নিচ্ছে। তুই আর কতদিন এভাবে ইলিয়ানার কথা ভেবে নিজেকে কষ্ট দিবি বলতো বাবা,,,।যেই মেয়েটার জন্য নিজেকে এভাবে হার্ট করছিস সেই মেয়েটা তো ঠিকই অন্যলোকের সাথে খুশিখুশি সংসার করছে৷ আমারও তো ইচ্ছে করে তোর বউকে দেখার,, তোর সন্তানাদি দেখার,, আমার নাতি-নাতনিদের কোলে নিতে ও তো বড্ড ইচ্ছে করে রে,,।কতদিন আর বাঁচবো বল বাবা,,মরার আগে তোকে সুখী দেখে যেতে চাই আমি। তোকে বিয়েশাদী করিয়ে তোর বাচ্চাদের মুখ দেখলে অতঃপর মরেও শান্তি পাবো বাপ৷এবার তো অন্তত আমার কথা শুন,,আজপর্যন্ত কোনো বিষয় নিয়েই তোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাইনি,,তুই যেটা করতে চাস নি,, তা নিয়ে তোকে কখনো জোর করিনি। সবসময় তোর মতামতকে প্রাধান্য দিয়েছি। তুই ইলিয়ানার কথা বলেছিলি তাতেও অকপটে রাজি হয়েছিলাম একমাত্র তুই খুশি হবি ভেবে। এবারও তোর সুখটাকেই মুখ্য বিবেচনা করছি বাবা,,কোনো বাবা মা-ই চায় না তার সন্তান এভাবে একটা মেয়ের কষ্টে নিজেকে তিলে তিলে শেষ করে ফেলুক,,এভাবে প্রতিটারাত বালিশ ভিজিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাক। আমার হাসিখুশি ছেলেটাকে যে এমন রূপে আমি আর মেনে নিতে পারছি না।
কাঁদো কাঁদো হয়ে কথাগুলো শেষ করলেন মিসেস ইয়াসমিন। আশিয়ান একদম চুপ করে খাচ্ছে।কোনো কথা বলছে না। ভাবছে সে সত্যিই তো নিজের বাবা মাকে কত কষ্ট দিচ্ছে। তার জন্য ওনারা ব্যথিত হয়ে আছেন। আম্মু তো সত্যি কথাই বলেছেন। ইলিয়ানা তো তার কোটিপতি বয়স্ক স্বামীকে নিয়ে বেশ সুখে-শান্তিতে আছে। তাহলে সে কেন ঐ ছলনাময়ী মেয়েটার জন্য নিজেকে এবং বাবা মাকে ও পরিবারের লোকজনদের কষ্ট দিবে,,?অথচ এই পরিবারের লোকজনরাই তার শুভাকাঙ্ক্ষী। সবাই তার ভালো চায়। মনে মনে ঠিক করে নিলো সে আর তার পরিবারের লোকজন ও মা বাবাকে দুঃখ দিবে না। তারা যা চায় সেও তাই করবে। আশিয়ান গলা খাঁকারি দিয়ে শান্ত কন্ঠে বললো;
আশিয়ান:-আমি কী করলে তুমি খুশি হবে আম্মু?তোমার খুশির জন্য আমি সব করতে পারবো।তুমি যা চাও তাই হবে। আমার কথার কোনো নড়চড় হবে না,,, আই প্রমিজ ইউ আম্মু।
মিসেস ইয়াসমিন ছেলের কথা শুনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলেন যেন। একমুহূর্তের জন্য তিনি বাকহারা হয়ে গেলেন। তারপর আনন্দের সাথে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললেন;
মিসেস ইয়াসমিন:-সত্যি,,,সত্যি বলছিস তুই বাবা?তুই আমার কথা রাখবি?আমি যা বলবো তা শুনবি বাবা?
আশিয়ান মিসেস ইয়াসমিনের একহাত টেনে নিয়ে হাতের উল্টোপিঠে চুমু খেয়ে ওনার হাতটা নিজের গালের সাথে লাগিয়ে বললো;
আশিয়ান:-আমি সবসময় খেয়াল করে দেখেছি আম্মু,,, তুমি যা বলো এবং করো তা আমরা ভাইবোনদের ভালোর জন্যই করে থাকো,,।বরং আমরা কেউ যদি তোমার কথা অমান্য করি তখন আমরা সেটার ফল ভোগ করি। মনে আছে,, প্রথম যেদিন ইলিয়ানাকে বাসায় নিয়ে আসি তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য,,তখন তুমি আমায় বলেছিলে যে ওই মেয়েটা সুবিধার নয় কেমন যেন অহংকারী ও লোভী টাইপ লাগে দেখলে। তখন ওকে এসব বলার কারণে তোমার সাথে রাগ করে আমি দুইদিন কথা বলি নি।এখন আমি হারে হারে বুঝতে পারি,, ঐদিন আমার মায়ের কথা মিথ্যা ছিলো না,, আমার আম্মু যে মানুষ দেখলে চিনতে পারে কে কোন টাইপের তা হয়তো আমি ঐদিন ভুলে গিয়েছিলাম। এবং আজ তার ফল ভোগ করছি। আমরা প্রত্যেকটা ভাইবোনই যখন তোমার কথা শুনি না তখন আমরা ঠিকই সেটার ফল হাতেনাতে পেয়ে যাই।আমি সেদিন থেকে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমি আমার আম্মুর সব কথা শুনবো। আজ আমার আম্মু আমার কাছে কিছু অনুরোধ করছে। তা আমি কেমন করে মানা করতে পারি বলো তো???
ছেলের কথা শুনে মিসেস ইয়াসমিনের চোখে খুশির ঠেলায় পানি চলে এলো। এজন্যই তো তাঁর কলিজাটাকে তিনি এত ভালোবাসেন। মিসেস ইয়াসমিনের মুখ ঝলমল করছে আনন্দে। আশিয়ানকে যত্ন করে খাবার খায়িয়ে তিনি বললেন;
মিসেস ইয়াসমিন:-জানিস বাবা,,, আজ তোর কথা শুনে আমার ভীষণ আনন্দ হচ্ছে। কতজন সন্তানই বা তার মা-বাবার খুশির কথা ভাবে। তবে আমি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাতে শুধু আমি আর তোর বাবা নই,,পরিবারের সবাই খুশি হবে,,,। সেই সাথে তুইও অনাবিল সুখে থাকবি। জানিস আজ আলেয়াকে দেখতে গিয়ে অন্য একটা মেয়েকে দেখামাত্র তাকে আংটি পড়িয়ে দিয়ে সাথে কনে দেখার সালামি ১০ হাজার টাকা দিয়ে এসেছি আমি।
মিসেস ইয়াসমিনের কথায় বিষম লেগে গেল আশিয়ানের ৷ তার আম্মু যে এত ফাস্ট তা সে ভাবতেই পারে নি। মিসেস ইয়াসমিন বুঝলেন যে এই কথা শুনে তাঁর ছেলে মারাত্মক শক খেয়েছে। তিনি আশিয়ানকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলেন। গ্লাস হাতে নিয়ে সে ঢকঢক করে সারা পানি খেয়ে শেষ করে ফেললো।নিজেকে কোনোমতে রিল্যাক্স করে বললো;
আশিয়ান:-মানে,,,এত জলদি মেয়ে দেখে পছন্দ হয়ে গেছে তোমার?(কিছুটা অবাক হয়ে)
মিসেস ইয়াসমিন:-তাহলে আর বলছি কী?এমন মেয়েকে কেউ হাতছাড়া করে নাকি বোকা ছেলে!!আজকালকার যুগে এত ভালো মেয়ে পাওয়া দুষ্কর। আমরা ওখানে যাওয়ার পর এত এত খাবারের আইটেম দিয়ে আমাদের আতিথেয়তা করেছেন ওনারা৷ হাতের রান্নাগুলো লা-জাবাব ছিলো। আমি ভেবেছিলাম,, মনে হয় মিসেস লিমার ছেলের বউ তানিয়া এসব মেইক করেছে। বাট, আমার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল ছিলো,, এতসব রান্নাগুলো সেই মেয়েটা একা হাতে করেছে। আমি তো শুনে পুরো তাজ্জব বনে গেছিলাম। এতটুকুন মেয়ে কাজে এত পারদর্শী তা সত্যিই অবিশ্বাস্য।
আশিয়ান:-খালি রান্নাবান্নার কথা শুনেই তুমি গলে গেলে?এটা কোনো কথা হলো আম্মু?
মিসেস ইয়াসমিন:-উহুম,,, মোটেই না,,। মেয়েটা অনেক ধার্মিক। আর খুবই ভদ্র পরিবারের মেয়ে দেখলেই বুঝা যায়। আমি যদি ওয়াশরুমে না যেতাম তাহলে হয়তো মেয়েটাকে আমি দেখতেই পারতাম না ৷ সারাটাদিন ধরে নিজেকে কাজে ব্যস্ত রেখেছে। একবারও আমাদের সবার সামনে আসে নি। কাজ শেষে রুমে গিয়ে নামাজ পড়ছিলো তখন আমি ওকে দেখি। আলেয়ার মামাতো বোন সে। নাম ইশরাত আবিয়াত ঊদিতা। ওর নাম যেমন সুন্দর,, সে তো দেখতে একদম নজরকাঁড়া সুন্দরী। সত্যি বলতে এত সুন্দর মেয়ে আমি খুব কমই দেখেছি। ওকে আমার ভীষণ ভালো লেগেছে রে। তোর সাথে মেয়েটাকে ভীষণ মানাবে। তোর কাছে আমার একটাই আবদার আর তা হলো আমি ঊদিতাকে তোর বউ করে এ বাড়িতে নিয়ে আসতে চাই। মানা করিস না বাবা প্লিজ। (অনুরোধ মেশানো কন্ঠে)
আশিয়ান কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থাকলো। সে বুঝতে পারছে মেয়েটাকে তার আম্মুর ভীষণ মনে ধরেছে। নাহলে তিনি এত এত রিকোয়েস্ট করতেন না আশিয়ানকে।
মিসেস ইয়াসমিন এত সহজে কারো প্রশংসা করেন না তাও জানে সে। মনে মনে মেয়েটার কথা চিন্তা করছে আশিয়ান। ঊদিতা নামটা জীবনের প্রথম শুনেছে সে,, একদম আনকমন নাম। মায়ের কথামতো মেয়েটাও তার নামের মতো আনকমন হবে তো,,,নাকি ইলিয়ানার মতো সেও ছদ্মবেশী ছলনাময়ী!!
ইলিয়ানার মুখেও তো কত মায়া বিরাজ করে।।এই মায়ার মাঝে নিজেকে বিলীন করে দিয়েছিলো সে,,উজাড় করে ভালোবেসেছিল তাকে,,,কিন্তু বিনিময়ে পেল একবুক কষ্ট আর জীবনের ওপর হতাশা। বেঁচে থেকেও যেন মরে গেছে সে। এই একটা মেয়ে তার জীবনটাকে একদম ছারখার করে দিলো,,। এখন তার নিত্যদিনের সঙ্গী সিগারেট এবং মদ, বিয়ার, হুইস্কি। সারা রাত ছটফট করে কাটে তার,,ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না। যার কারনে চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল তৈরি হয়েছে।সিগারেট খেতে খেতে টকটকে লাল ঠোঁট এখন কালচে লাল রঙের হয়ে গেছে। ভালোবাসা নামক শব্দটার উপর থেকে বিশ্বাস উঠে গেছে ওর।
এখন আর কোনো মেয়েকে দেখলে সেই অনুভূতিটা আসে না,, আসে শুধু একবুক ঘৃণা। সে জানে মেয়ে মানেই ছলনাময়ী,, ধোঁকাবাজ। তারা ছেলেদের মন নিয়ে খেলতে জানে৷ মিসেস ইয়াসমিন তো বিয়ের কথা বলছেন ঠিকই,, কিন্তু আদৌ কী আশিয়ান তাকে মেনে নেবে? সেটা তো মিসেস ইয়াসমিনের অজানা ৷
একজন মনভাঙা মানুষের কষ্ট সে ছাড়া আর কেউ কখনো বুঝবে না।এধরনের ছেলেরা একটা মেয়েকেই মনপ্রাণ উজাড় করে দিয়ে ভালোবাসে।তাই ভালোবাসার মানুষের থেকে প্রাপ্ত ধোঁকা ওরা এত সহজে মেনে নিতে পারে না। এই কষ্ট ভুলতে সারাদিন তারা নিজেদেরকে কর্মব্যস্ত মানুষ হিসেবে দেখালেও দিনশেষে তারা প্রচন্ড রকমের একাকিত্বে ভোগে। রাতের অন্ধকারে ঝড়ো হাওয়ার সাথে মিশে যায় তাদের হাজারো কষ্টেভরা আর্তনাদ।কে বুঝবে তাদের দুঃখ ? বুঝার মতো কী কেউ আছে? হয়তো আছে,, হয়তো বা নেই।।
আশিয়ান একটা দীর্ঘঃশ্বাস ফেলে মিসেস ইয়াসমিনের দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বললো;
আশিয়ান:-তোমার পছন্দেই আমার পছন্দ আম্মু। তোমার যখন মেয়েটাকে এত ভালো লেগেছে,, তাহলে ঠিক আছে,, আমি ওকেই বিয়ে করবো।তুমি যা ভালো বুঝো তাই করো,, তবে প্লিজ আই রিকোয়েস্ট ইউ,, সবকিছু যেন একদম সিম্পলভাবে সম্পন্ন হয়। আমি এত বার্গেনিং সহ্য করতে পারবো না। তুমি জানো ঝামেলা আমার একদমই পছন্দ নয়। আমার বিয়ে নিয়ে এত মাতামাতি করার কোনো প্রয়োজন নেই। আশা করি আমার কথা বুঝতে পেরেছো। আর হ্যা,,,এখন আমি একটু একা থাকতে চাই।
ততক্ষণে আশিয়ানের খাওয়া কমপ্লিট। মিসেস ইয়াসমিন এটো থালা বাটি সব ট্রে তে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন;
মিসেস ইয়াসমিন:-তুই একটুও চিন্তা করিস না বাবা,,।তুই যেমন যেমন বলবি ঠিক তেমন তেমনই অ্যারেন্জ করবো সব। কোনো ঝায় ঝামেলা হবে না তুই নিশ্চিত থাকতে পারিস। এখন আমি আসি।লাইট অফ করে ঘুমিয়ে পড়,,, বেশি রাত জেগে থাকিস না।
আশিয়ান:-হুম,,,ওকে।
মিসেস ইয়াসমিন ট্রে হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলেন।আশিয়ান তাঁর যাওয়ার পানে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।মনে পড়ে গেল তার ৬ বছর আগের কিছু কথা;
আশিয়ান ও ইলিয়ানা একই ভার্সিটিতে পড়তো,, তবে ইলিয়ানা আশিয়ানের ১ বছর জুনিয়র ছিল। ইলিয়ানাকে নবীন বরণ উৎসবে হলুদ ও লালের সংমিশ্রনের শাড়ি পরিহিতা অবস্থায় প্রথম দেখেছিলো আশিয়ান। দেখামাত্রই তার চোখজোড়া সেখানে আটকে গিয়েছিলো।কী সুন্দর তার হাসি মনটা যেন জুড়িয়ে গিয়েছিলো তার।
সেই থেকে ইলিয়ানার সাথে আশিয়ানের পরিচয়। এবং কথায় কথায় আশিয়ান তাকে প্রপোজ করে ফেলে৷ ইলিয়ানাও প্রায় সাথে সাথে প্রপোজালটা এক্সেপ্ট করে ফেললো। যেন এ অপেক্ষাতেই ছিলো সে। তারপর তাদের রিলেশনের শুরু।
আশিয়ান সবসময় ইলিয়ানাকে সময় দিতো। সবকাজের উপর ইলিয়ানার ইম্পোরটেন্টস ছিলো তার কাছে অনেক বেশি।ইলিয়ানাও তাকে ভালোবাসত। আশিয়ান তাকে নিয়ে ভার্সিটি শেষে প্রায় লং ড্রাইভ ও রেস্টুরেন্টে নিয়ে যেতো। খাওয়া দাওয়া আনন্দ ফুর্তি ও বেড়াতে যাওয়াই যেন মূল লক্ষ্য ছিলো তাদের। খুব ভালোই চলছিলো তাদের রিলেশনটা। দুজন দুজনার খুব কেয়ার নিতো।
ইলিয়ানার বাবাও আশিয়ানের বাবার মতো নামীদামী একজন বিজনেসম্যান ছিলেন। তারও ইচ্ছা ছিলো আশিয়ানের সাথে মেয়ের বিয়ে দেবেন। তাদের রিলেশন তখন ৪ বছরেরও বেশি হবে। তখন ঢাকার একজন নামীদামী এমপি ইলিয়ানার জন্য তার আব্বুর কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। ওর আব্বু ভীষণ লোভী ছিলেন।
আশিয়ান তখন নতুন বিজনেস শুরু করেছিলো। ততটা আয় উন্নতি হয় নি। তাই ইলিয়ানার আব্বু সেই সুযোগে এই লোকটার সাথে তার বিয়ে ঠিক করে ফেললেন।ইলিয়ানা প্রথম প্রথম রাজী হয়নি,, কিন্তু পরে যখন দেখলো এই লোকটার বাড়ি গাড়ি টাকা পয়সার কোনো অভাব নেই,,এবং কাবিন হিসেবে নগদ এককোটি টাকা ও ২ টা ডুপ্লেক্স বাসা দিবে তখন সেও আর লোভ সামলাতে পারে নি।
মূলত আশিয়ান বড়লোক দেখেই শো-অফের জন্য তার সাথে রিলেশনে গিয়েছিল সে।কিন্তু বর্তমানে ওই লোকটা আশিয়ানের থেকেও অনেকবেশি প্রভাবশালী তাই সে অকপটে বিয়েতে রাজি হয়ে যায়। এবং আশিয়ানের সাথে সম্পর্কের ইতি ঘটায়। আশিয়ান সেদিন অনেক কান্না করেছিলো কিন্তু তাও মন গলেনি ইলিয়ানার। সে তার বয়সের ২ গুন লোকটিকেই বিয়ে করে নিলো।
সেই ক্রোধে আশিয়ান নিজের কাছে নিজেকে প্রতিজ্ঞা করেছিলো যে ওই এমপির থেকে ৫ গুন বড়লোক ও ফেমাস হয়ে দেখিয়ে দেবে সে। তার এই প্রতিজ্ঞাকে সত্যি করতে সেদিন থেকেই সে উঠেপড়ে লেগেছিলো। নিরলসভাবে পরিশ্রম করে গেছে সে একনাগাড়ে।
এবং বলতে গেলে আজ সে বাংলাদেশের সফল একজন ব্যক্তিত্ব।যাকে সবাই একনামে চেনে।দিনের আলোয় সে আশিয়ান তায়েফ চৌধুরী এবং রাতের অন্ধকারে সে ফেমাস আন্ডারওয়ার্ল্ড মাফিয়া কিং এটিসি সারাজ খান। যাকে সবাই যেমন সম্মান করে তেমনি যমের মতো ভয় পায়। আজ তার সব আছে নেই শুধু ভালোবাসার মানুষটি,, যাকে সে নিজের সর্বস্ব দিয়ে ভালোবেসেছিলো।
ব্রেকআপের দুটো বছর পার হয়ে গেছে,, তাও ইলিয়ানাকে মন থেকে মুছতে পারে নি সে। মনের সবটা জুড়ে তার বসবাস। ভুলতে যেয়েও ভুলতে পারে না।ইলিয়ানা মেয়েটা অনেকবার আশিয়ানের হাতের ওপর হাত রেখে কথা দিয়েছিলো যে সে তাকে ছেড়ে কখনো যাবে না। মৃত্যুর আগ অবধি সে আশিয়ানের সাথে থাকবে। এত এত স্বপ্ন দেখিয়ে একসাথে থাকার আশা দিয়ে আজ সে নিজেই ছেড়ে চলে গেছে। একটা মেয়ে কীভাবে এত ছলনা করতে পারে জানা নেই আশিয়ানের। তাইতো সে মেয়েজাতিকে বিশ্বাস করে না। এরা খুব সূক্ষ্মভাবে ছেলেদের মন ভেঙে দিতে পারে।
হঠাৎ করে ফোনে কারো কল আসায় তার ধ্যান ভাঙলো। ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে অটোমেটিক্যালি ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেলো তার। হঠাৎ করে ইলিয়ানার তাকে ফোন দেয়ার কারণটা আশিয়ানের মোটেই বোধগম্য হলো না। রিলেশন থাকাকালিন সময়ে কলিজামনি লিখে ফোনে সেইভ করে রেখেছিলো সে ওর নাম্বারটা ৷ ব্লক করা হয়ে ওঠে নি অজানা কোনো এক কারণে।মনে মনে খুশি হবে নাকি ব্যতিত হবে তা বুঝতে পারলো না সে। ভাবনাচিন্তা বাদ দিয়ে কোনোমতে ফোনটা রিসিভ করলো সে।ফোন কানে ঠেকিয়ে রুমের দরজা লক করে বিশাল বড় থাই গ্লাস ঠেলে তার নিজের প্রশস্ত বারান্দার দিকে চলে গেল আশিয়ান।
(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সাপেক্ষ।আমি গল্প এত প্যাঁচাতে পারি না তাই সবকিছু সোজাসাপ্টা লিখে দিলাম।যেহেতু আমি এটা রোমান্টিক উপন্যাস লিখছি কোনো গোয়েন্দা গল্প নয়।আর অযথা নাইস, নেক্সট না লিখে গঠনমূলক কমেন্ট করুন।নেক্সট না বললেও আমি নেক্সট অবশ্যই দিবো।আর একটা কথা,গল্পের নায়ক নায়িকার বয়সটা কিন্তু ফ্যাক্ট না।আশা করি আপনারা বুঝতে পারছেন।সো হ্যাপি রিডিং গাইজ।ভালোবাসা অবিরাম।❤️ )
চলবে…🍃