#তোমাতে বিলীন🍁
#লেখিকা—আমায়া নাফশিয়াত ☘
#পর্ব—|| ০৮ || (রিপোস্ট)
সবার সব কথা ছাপিয়ে মি.মোরশেদ মি.আনিসুলকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন;
মি.মোরশেদ:-আমাদের ব্যাপারে সবই তো শুনলেন এবং জানলেন ভাই,,, আপনার আপত্তি না থাকলে ঊদিতাকে আমি আমার মেঝো ছেলের বউ করে নিয়ে যেতে চাই। আমার আশিয়ানের জন্য ঊদিতা মাকে ছাড়া আর কাউকে আমাদের দরকার নেই।আমি বউমা নয় আমার মেয়ে বানিয়ে নেবো আমার মা’টাকে। যদি আপনাদের আপত্তি না থেকে থাকে। অনেক আশা নিয়ে এসেছি আপনাদের কাছে,,, আশা করি আমাদেরকে ফিরিয়ে দেবেন না আপনি,,।
মি.মোরশেদের কথা শুনে মি.আনিসুল মনে মনে অনেক খুশি হলেন। আশিয়ানের ছবি দেখেছেন তিনি,,, ওনার কাছেও মনে হয়েছে যে ঊদিতার জন্য আশিয়ানই পারফেক্ট। দুজনের মনের মিল ও আছে অনেকক্ষেত্রে। তবে মি.আনিসুল কিছুটা দোটানায় পড়ে গেছেন।ওনার চিন্তাভাবনা ছাপিয়ে মিসেস লিমার খুশিমাখা কন্ঠ শুনা গেল;
মিসেস লিমা:-আলহামদুলিল্লাহ,,, ভাইজান। এটা তো অনেক খুশির বিষয়,, আমাদের ঊদিতাকে আপনারা ছেলের বৌ করে নিয়ে যেতে চান এর থেকে খুশির খবর আর কী হতে পারে!আমরাও আশিয়ান বাবার মতো ছেলেকে আমাদের মেয়ের জন্য চাই।আমাদের কোনো আপত্তি নেই ভাইজান,,, মেয়েকে দিতে আমরা রাজী।
মিসেস ইয়াসমিন:-আলহামদুলিল্লাহ,,,। আপনাদের উত্তর শুনে মনটা ভরে গেল।
মি.এনামুল:-বাহ তাহলে আর দেরী কিসের? শুভমুহুর্তে মিষ্টিমুখ করেন সবাই।
এই বলে মি.এনামুল মি.আনিসুলকে ও মি.গোলজারকে মিষ্টির প্লেট থেকে একটা মিষ্টি নিয়ে খায়িয়ে দিলেন।মি.আনিসুল বাধা দিতে পারেন নি। একপ্রকার মৌন থেকে সম্মতি দিয়েছেন তিনি। শাহরিয়ারও খুশিমনে রাজী৷ সবাই পালা করে একে অন্যের মিষ্টিমুখ করালো। আনন্দের জোয়ার বয়ে গেল যেন ড্রয়িং রুম জুড়ে। এনা খুশিতে ইয়েএএএ বলে চিৎকার করে ঊদিতাকে ঝাপটে ধরলো। তার থেকে বেশি খুশি বোধহয় আর কেউ হয়নি। তারিন ও আলেয়া মনে মনে রাগে ও হিংসায় ফুঁসছে। কেয়া ও খুশি হয়ে ঊদিতাকে মিষ্টি খায়িয়ে দিলো।মিসেস আনিতা, তানিয়া আর উসামা ও খুশি।এককথায় বলতে গেলে সবাই ভীষণ খুশি হয়েছে ঊদিতার সাথে আশিয়ানের বিয়ে ঠিক হওয়ায়। শুধুমাত্র ঊদিতা বরফের মতো জমে গেছে যেন। সে ভাবেনি সবাই এত সহজে রাজী হয়ে যাবে।
মি.আনিসুল এবার আমতা আমতা করে বলে উঠলেন;
মি.আনিসুল:-সবই ঠিক আছে,,,। আপনারা আমার মেয়েকে বাড়ির বউ করতে চান এটা আমাদের সৌভাগ্য। তা আপনাদের চাহিদাটা যদি এবার বলতেন তাহলে ভালো হতো আরকি। বুঝতেই পারছেন যোগাড় যন্ত্রের একটা ব্যাপার আছে।
মি.মোরশেদ মি.আনিসুলকে আর কিছু বলতে না দিয়ে বললেন;
মি.মোরশেদ:-দেখেন ভাই,,, আপনি কিন্তু ইনডাইরেক্টলি যৌতুকের কথা বলতে চাচ্ছেন।এ বিষয়টা আমরা মোটেই পছন্দ করি না। আর আমার যে ছেলে,,, যৌতুকের নাম শুনলেই লঙ্কাকাণ্ড বাঁধিয়ে ফেলে,,, সে জায়গায় ওর নিজের বিয়েতে যৌতুক গ্রহণ করবে সেটা বড্ড বেশি অতিকল্পনা হয়ে যায়। আমরা শুধু মেয়েটাকে চাই তাও আমাদের নিজের মেয়ের মতো করে নিয়ে যেতে চাই। আপনাদের কিছু দিতে হবে না। আমাদের মেয়েকে আমরা সাজিয়ে নিয়ে যাবো। আর আপনাকে আমরা কথা দিতে পারি ঊদিতা মাকে আপনি যেমন আদরযত্ন দিয়ে রেখেছেন আমার বাড়িতে সে ঠিক সেরকম আদরযত্নেই থাকবে ৷(আন্তরিক ভাবে)
কেয়া এবার অমায়িকভাবে শান্তনা স্বরূপ হাসিমুখে বলে উঠলো;
কেয়া:-আঙ্কেল আপনি একটুও চিন্তা করবেন না,,,ঊদিতা আমার নিজের বোনের মতো,,, ও বাড়িতে ওর বোন হিসেবে আমি আছি। আপনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন। আমি থাকতে ঊদিতার কোনো সমস্যা হবে না। আর আমার দেবর থেকে শুরু করে পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষ খুবই ভালো মনের এবং আন্তরিক। আমি আল্লাহর কাছে প্রায়শই শুকরিয়া আদায় করি এত ভালো একটা পরিবার পাওয়ার জন্য। দেখবেন আশু ভাইয়ের সাথে বিয়ে হলে ঊদিতা খুব সুখী হবে।
কেয়ার কথা শুনে মিসেস ইয়াসমিন সস্নেহ চোখে তার দিকে তাকালেন। ঊদিতার কপালে আলতো করে স্নেহের পরশ এঁকে দিলেন তিনি।ঊদিতা লজ্জায় এখনো মাথা নিচু করে বসে আছে।শাহরিয়ার বলে উঠলো;
শাহরিয়ার:-আমি জানি না কী দেখে আপনারা আমার বোনকে পছন্দ করেছেন। আমার জানামতে আমার বোনটা ভীষণ সরল সোজা টাইপের। ঘরের কাজকর্ম,, রান্না বান্না সব করতে পারলেও এখনো সে ম্যাচিউর হয়ে উঠতে পারে নি।যে বয়সে মেয়েরা ফোন ইউজ করে ফেসবুক,ইনস্টাগ্রাম এসব চালায় সে বয়সে সে টম এন্ড জেরি কার্টুন দেখে। কারো মুখে মুখে তর্ক করে না সে।। আজপর্যন্ত আমাদের সিদ্ধান্ত ছাড়া একা একা কিছু করতে পারে নি। কাপড় চোপড় চয়েস থেকে শুরু করে স্কুল চয়েস করা আমি আর আব্বুই করেছি। বাইরে কারো কাছে পড়তে দিইনি,,,যতটুকু সম্ভব আমি আর আব্বু গাইড দিয়েছি পড়াশোনার ব্যাপারে। রেস্টুরেন্টে যাওয়া, ফ্রেন্ড সার্কেলের সাথে আড্ডা দেয়া, ফ্রেন্ডের বাসায় বেড়াতে যাওয়া এসব কিছু থেকে বিরত রেখেছি ৷ যা দরকার লাগতো আমরাই এনে দিতাম,,। কোথাও গেলে বা স্কুলে গেলে আমি সাথে করে নিয়ে যাই এখনো। মোটকথা বাইরের পরিবেশের সাথে একটুও পরিচিত নয় সে। আমার বোনদেরকে ছোটবেলা থেকেই পর্দানশীল বানিয়েছেন আমার আম্মু ও দাদী। সময় মতো নামাজ আদায় করা, সবগুলো রোজা রাখা আমার বোনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বেশি মানুষের সামনে কখনো কম্ফোর্ট ফিল করে না তাই মেহমান এলেও তাদের সামনে তেমন একটা যায় না সে। অতিরিক্ত লজ্জাবতী যাকে বলে আরকি। অর্থাৎ ইন্ট্রোভার্ট টাইপের।এখন ওকে বিয়ে দেয়ার মোটেও ইচ্ছে ছিলো না আমার৷ একদম অল্প বয়স তার উপর ম্যাচিউর না,, জানি না নিজের সংসার কতটুকু গোছাতে পারবে। একসময় না একসময় তো বিয়ে দিতেই হবে,, তাই বাঁধাও দিতে পারছি না। প্রচন্ড দোটানায় ভুগছি আমি।(অসহায় কন্ঠে)
মিসেস ইয়াসমিন শাহরিয়ারের কষ্টটা বুঝতে পারলেন। তাকে আশ্বাস দিয়ে তিনি বললেন;
মিসেস ইয়াসমিন:-আমি তোমার কষ্টটা বুঝতে পারছি বাবা। তুমি নিশ্চিত থাকতে পারো,,তোমার বোনকে তুমি যেভাবে আগলে রাখতে ঠিক সেরকম ভাবেই আমরাও আগলে রাখবো। এখনই ওর ওপর সংসারের সব ভার ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।এনা ও কেয়ার মতো সেও আমার মেয়ে হয়ে আমার কাছে থাকবে। পড়াশোনা কন্টিনিউ করবে। বাসায় সে যেরকম ছিলো সেরকমই থাকবে তোমায় কথা দিলাম বাবা,,,যদি কোনোদিন দেখাে তোমার এই আন্টির কথার কোনো হেরফের হচ্ছে তাহলে সেদিনই তুমি তোমার বোনকে এসে নিয়ে যেও আমি বাঁধা দিবো না। আমি এককথার মানুষ বাবা,,,কথার হেরফের আমি কখনোই পছন্দ করি না। আর আমার ছেলে আশিয়ান মোটেও খারাপ ছেলে নয়,,,স্ত্রীর সম্মান কীভাবে দিতে হয় তা সে ঠিকই জানে। আর আমার ঊদিতাকে এতটাই পছন্দ হয়েছে যে আমি ওকে আমার ছেলের বৌ বানানোর জন্য প্রায় উতলা হয়ে গেছিলাম। মনটা অশান্ত ছিলো ততক্ষণ। এখন একটু শান্তি লাগছে। আমার জানামতে ঊদিতার মতো মেয়ে আমি ২য় টা আমার আশিয়ানের জন্য খুঁজে পাবো না। তাই তো দেরী করতে তর সয়নি। তোমার আঙ্কেলকে পাগল বানিয়ে ফেলেছি ঊদিতা মামণির কথা বলতে বলতে।(মুচকি হেসে)
মিসেস ইয়াসমিনের কথা শুনে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন মি.আনিসুল ও শাহরিয়ার। যাক তাহলে একটা ভালো ঘরেই অবশেষে ঊদিতাকে বিয়ে দেয়া হচ্ছে। মিসেস ইয়াসমিন ঊদিতার থুতনিতে ধরে কপালে একটা চুমু খেয়ে আদুরে কন্ঠে বললেন;
মিসেস ইয়াসমিন:-মাশা-আল্লাহ,,, আমার মেয়েটার ওপর কারো নজর যেন না লাগে।
এই বলে মিসেস ইয়াসমিন ঊদিতার জন্য আনা গহনার বাক্সটা খুলে নিজহাতে তাকে গহনাগুলো পড়িয়ে দিতে লাগলেন। ঊদিতার গলায় স্বর্নের হার ও চেইন,, আঙ্গুলে সুন্দর ভরাট কারুকাজ করা ৩ টা স্বর্নের আংটি,,হাতে মোটা বালা ও চিকন স্বর্নের চুড়ি,, কানে স্বর্নের ঝুমকা,,নাকে ডায়মন্ডের নাকফুল এগুলো সযত্নে পড়িয়ে দিলেন ৷ গহনাগুলো একদম ইউনিক ডিজাইনের ছিলো,, আর ঊদিতা এগুলো পড়ায় তার সৌন্দর্য্য যেন একদম উপচে পড়ছে।ঊদিতার পরিবারের সবাই খুশি হয়ে গেছে মিসেস ইয়াসমিনের কাজ দেখে। মিসেস ইয়াসমিন এবার অনেকগুলো ব্রান্ডেড কোম্পানির শপিং ব্যাগ ঊদিতার হাতে ধরিয়ে দিলেন। ঊদিতা সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকালো মিসেস ইয়াসমিনের দিকে। মিসেস ইয়াসমিন মুচকি হেসে ঊদিতাকে বললেন;
মিসেস ইয়াসমিন:-এ ব্যাগ গুলোতে আমার মামণি’টার জন্য কিছু শাড়ি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস আছে। আর এনা ও কেয়া তোমার জন্য কিছু গিফটস কিনেছিলো,,,সেগুলোই আছে এই ব্যাগগুলোর মধ্যে। আশা করি তোমার পছন্দ হবে আম্মু। আর এখানে আলেয়ার জন্য কিছু গিফটস আছে। দেখে বলিও মামণি তোমার পছন্দ হয়েছে কিনা!(আলেয়াকে লক্ষ করে)
আলেয়া খুশিতে একপ্রকার আত্মহারা হয়ে মিসেস ইয়াসমিনের হাত থেকে ব্যাগগুলো এসে নিয়ে গেলো। এবং ওনাকে অবশ্যই থ্যাংকস জানাতে ভুলে নি সে। গিফট পেলে ওর মাথা ঠিক থাকে না। আর সেই গিফটগুলো যদি হয় দামী দামী শাড়ি ও অর্নামেন্টস তাহলে তো কোনো কথাই নেই।
এবার মিসেস তারানা বলে উঠলেন;
মিসেস তারানা:-ভাবী এবার আমাকে ওর সাথে কথা বলতে দাও দেখি। তুমি তো মেয়েটাকে ছাড়ছোই না একটুর জন্য,,,
মিসেস তারানার কথা শুনে মিসেস ইয়াসমিন ঠোঁট এলিয়ে হাসলেন৷ বাকিরাও হাসছে তাদের কান্ড দেখে। ঊদিতা তো পুতুলের মতো বসে আছে। সে শুধু দেখেই যাচ্ছে তাদের সবার কর্মকাণ্ড।আর শুনছে তাদের কথাবার্তা৷
মিসেস তারানা ঊদিতাকে এবার নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে ঊদিতাকে ভালো করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আদুরে কন্ঠে বললেন;
মিসেস তারানা:-এই যে মেয়ে শুনো,,শুধু ভাবী নয়,, আমিও তোমার আরেক মা হই,, তুমি আমাকে মামণি বলে ডাকবে সবসময় বুঝলে? আমার আদরের আশিয়ানের হবুবউ হলে তুমি,,,। আমার ছেলেটা বিয়ে করবে ভাবতেই কত আনন্দ লাগছে আমার তা বলে বুঝাতে পারবো না। এখন শুধু সেই সময়ের অপেক্ষা,, কখন তোমাকে আমাদের বাসায় নিয়ে যাবো,,,।দোয়া করি আমার মা’টা যেন খুব সুখী হয়।
এই বলে মিসেস তারানা ঊদিতার গলায় অনেক সুন্দর একটা ডিজাইনকৃত মোটা সোনার চেইন পড়িয়ে দিলেন। সেই সাথে ঊদিতার হাতে ১০ হাজার টাকা গুঁজে দিয়ে বললেন;
মিসেস তারানা:-আমার তরফ থেকে আপাতত এই সামান্য উপহার তোমার জন্য। বাকি উপহার সব তোলা রইলো। সময়মতো দিয়ে দিবো।
ঊদিতার মনে হচ্ছে সে না জানি কোন মাইনকার চিপায় ফেঁসে গেলো। এরা যে হারে গিফট আর টাকা দিচ্ছে বাপরে বাপ।ঊদিতা কখনো ভাবতেও পারে নি যে তার নিজের জীবনে এমন একটা দিন আসবে। সে যতটুকু জানতে পারলো ওর হবু শ্বশুর বাড়ির লোকেরা যেমন বড়লোক তার সমান সমান তার হবু স্বামী ও সেই লেভেলের বড়লোক। তার স্বামীর একারই অনেক টাকাপয়সা ও ধনসম্পত্তি আছে। কিন্তু ঊদিতা তো কখনোই এত কোটিপতি কাউকে স্বামী হিসেবে চায় নি। সে তো চেয়েছিলো তার স্বামী খুবই সাধারণ পরিবারের ভালো ও চরিত্রবান ছেলে হবে। যার মধ্যে থাকবে না কোনো টাকার গরম,, থাকবে না কোনো অহংকার। আশিয়ান ও ভালো ছেলে কিন্তু সে তো হাজারো মেয়ের ক্রাশ। কিন্তু ঊদিতা তো এমন কাউকে চায়নি যে এত এত মেয়ের স্বপ্ন। আশিয়ান কী সত্যি তাকে স্বীয় স্ত্রী হিসেবে মেনে নেবে?আদৌ সেটা জানা নেই কারও!
মি.এনামুল ও মি.মোরশেদ ঊদিতাকে ২০ হাজার করে মোট ৪০ হাজার টাকা সালামি দিলেন। এসব টাকা তাদের মতো বড়লোক বিজনেসম্যানদের কাছে কিছুই নয়। মোটমাট প্রায় ৬০ হাজার টাকা শুধু সালামিই পেয়েছে ঊদিতা। মি.এনামুল ও মি.মোরশেদ এনগেজমেন্টের বিষয়ে আলোচনা করলেন ওনাদের সাথে। কোন জায়গায় ফিক্সড করেছেন তা জানালেন ওনাদের। পরশুদিন কার্ড পাঠিয়ে দেয়া হবে এখানে এও জানালেন। আর কালকে অথবা পরশু যেকোনো একদিন আলেয়া ও ঊদিতাকে শপিংয়ে নিয়ে যাওয়ার কথাও বলা হলো ওনাদের। ওনারা কেউ আপত্তি জানালেন না।
অবশেষে হাসিমুখে নাস্তা সেড়ে বিদায় জানিয়ে চলে গেলেন ওনারা সবাই। যাবার আগে এনা ঊদিতাকে একটা লম্বা হাগ দিতে ভুললো না। ঊদিতারও এনাকে ভীষণ পছন্দ হয়েছে,,, মেয়েটা খুবই ফ্রী মাইন্ডের। তবে অবাক করা বিষয় হলো সে যতটা সম্ভব আলেয়াকে ইগনোর করেছে। আলেয়াকে ওর একটুও ভালো লাগে না কেন জানি। অবশ্য কেউ এটা নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামায় নি। কেয়াও খুবই আন্তরিক ভাবে ঊদিতাকে জড়িয়ে ধরে আদুরে কন্ঠে বলেছিলো “আমার ছোটমোট কিউট পিউট পিচ্চি জা”! ঊদিতা লজ্জায় লাল হয়ে গেছিলো তখন কেয়ার কথা শুনে। তারিন দায়সারা ভাবে ভালো থেকো কথাটি বলেছিলো জাস্ট আর কিছু বলে নি।তারপর ওনারা সবাই চলে গেলেন।
ওনারা যাওয়ার পর ঊদিতা মায়ের হাতে সালামির টাকা ও শপিং ব্যাগগুলো ধরিয়ে দিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালো। সবাই ভীষণ খুশি ঊদিতার এত ভালো একটা ফ্যামিলিতে বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ায়৷ সবাই আরো জমিয়ে একদফা আড্ডা দিতে লাগলেন ড্রয়িং রুমে বসে। টপিক হলো ঊদিতার বিয়ে নিয়ে। ঊদিতার এসব শুনার ইন্টারেস্ট নেই আপাতত। মাগরিবের নামাজটা আদায় করে নিতে হবে। নয়তো কাজা হয়ে যাবে।
ঊদিতা রুমে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ভালো করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো। নিজেকে দেখে তার ছোটখাটো একটা স্বর্নের দোকান বলে মনে হচ্ছে।সোনা গুলো থেকে থেকেই ভীষণরকম চিকচিক করছে।এখানে প্রায় দুই কী আড়াই লক্ষ টাকার মতো স্বর্ন আছে।
বড়লোকদের বিরাট কারবার,, এসব তো তাদের কাছে কিছুই না। গত পরশু তো আলেয়াকেও প্রায় সমপরিমাণ অর্থ ও গহনা দিয়েছেন ওনারা। তাও যেন কমতি নেই তাদের।আর বিয়েটাও যে ভীষণ ধুমধাম করে হবে এ ব্যাপারেও কোনো সন্দেহ নেই তার। হাজার হোক একজন নামীদামী সফল বিজনেসম্যানের বিয়ে বলে কথা। যে বিয়েতে শহরের নামীদামী সকল ব্যক্তিত্বরা অবস্থান করবেন। সবাই আশিয়ানের স্ত্রী হিসেবে ঊদিতাকেও জানবে,, চিনবে,,।
সব মেয়েরা তাকে দেখে হিংসায় জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাবে,,, ঊদিতার সৌভাগ্য দেখে ঈর্ষান্বিত হবে। এসব ভেবে সাধারণত একটি মেয়ের ভালোলাগার কথা। কিন্তু ঊদিতার ভীষণরকম অস্বস্তি অনুভব হচ্ছে। আলেয়া হলে তো পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করতো,,,কিন্তু ঊদিতা এসবের ধারেকাছেও নেই। সে তার পড়াশোনার চিন্তা করছে ৷ এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার পর যদি বিয়ের প্রস্তাবটা আসতো তাহলে হয়তো ঊদিতা নির্বিবাদে রাজি হয়ে যেত,, তখন সামান্য হলেও ম্যাচুয়েরিটি থাকতো তার মাঝে। কিন্তু এখন তো সে বিয়ের জন্য মোটেও প্রস্তুত নয়,,,।
স্বামীর চাহিদা,, ভালোবাসা,,নিজ সংসার সামলানো,, এসব সম্পর্কে তার বিন্দুমাত্র আইডিয়া নেই। রান্নাবান্না ও অন্যান্য কাজ করতে পারলেই যে সংসারও সামলাতে পারবে তেমনটা কিন্তু মোটেই নয়। এই বয়সে বিয়েশাদী সম্পর্কে বেশিরভাগ মেয়েরাই অবগত থাকে। প্র্যাকটিক্যালি না করলেও স্বামী,,সংসার সম্পর্কে অনেক ভালো ধারণা থাকে তাদের। কিন্তু ঊদিতা সম্পূর্ণ বিপরীত। এসব বিষয়ে সে কখনো কারও কাছ থেকে কিছু জানার চেষ্টা করে নি। মূলত ইন্টারেস্ট ছিলো না তার। আর তার বাবা ও ভাই যেভাবে তাকে আগলে রেখেছিলো সবসময় এসব বিষয়ে কারও সাথে আলোচনা করারও সুযোগ হয়ে ওঠে নি ঊদিতার।
ঊদিতা এখনো ভাবতে পারছে না যে তার মতো একটা আনস্মার্ট ও অবুঝ টাইপের মেয়েকে কীভাবে আশিয়ানের পরিবারের লোকেরা পছন্দ করলো!এটা খুবই আশ্চর্যের বিষয় মনে হচ্ছে তার ৷ আর বেশি চিন্তা করলে মাথার মগজ গোলা হয়ে যাবে তাই এখানেই চিন্তাভাবনার ইতি ঘটিয়ে শাড়ি পাল্টে বাসার জামা পড়ে নিলো ঊদিতা। গহনাগাটিগুলো খুলে বক্সের ভেতর ঢুকিয়ে বক্সটা মায়ের কাছে দিয়ে আবারও রুমে ফিরে এসে ওয়াশরুমে চলে গেল সে ওযু করতে।মিনিট পাঁচেক পর ওযু সেড়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ফ্লোরে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ আদায় করতে লাগলো সে একমনে।
🖤🖤🖤
অফিসে,,
ফাইনাল ইন্টারভিউ শেষে ২৫ জনের মধ্যে মোট ৮ জন মাত্র ঠিকলো। আর তাদের প্রত্যেকের ইন্টারভিউ স্বয়ং আশিয়ান নিজে নিয়েছে। যারা ঠিকে গেছে তাদেরকে আশিয়ান কাজের রুলস সমূহ অক্ষরে অক্ষরে বুঝিয়ে দিলো। কাজে মনযোগী হওয়ার জন্য শর্টকাট বক্তৃতা দিলো তাদের উদ্দেশ্যে। আগামীকাল থেকে কাজে জয়েন করার জন্য বলা হলো তাদের। আশিয়ানের পিএ ইউনুস তাদের কার কী কাজ তা লিস্ট অনুযায়ী বুঝিয়ে দিলো। সবকাজ শেষ করতে করতে রাত ৮ টা হয়ে গেল। আজ আর এক্সট্রা কোনো কাজ নেই আশিয়ানের তাই অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে সোজা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো সে।
একটা সুপারশপের সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে সেখান থেকে এনার জন্য ও দুই আদরের ভাতিজি এরাত ও পুতুলের জন্য বেশ কয়েক বক্স চকোলেট ও খেলনা কিনলো,,বাবার জন্য একটা ব্রান্ডেড ওয়াচ, মায়ের জন্য এরিয়ার সবচাইতে বড় লাইব্রেরি থেকে ৫ টা উপন্যাসের বই নিলো,,মিসেস ইয়াসমিন বই পড়তে ভীষণ ভালোবাসেন তাই।
আশিয়ান নিজেও একসময় ভীষণ বইপোকা ছিলো,,।ওর নিজের একটা বেশ বড়সর ব্যক্তিগত লাইব্রেরি আছে নিচতলাতে।প্রায় পনেরো হাজারের মতো বই তার সংগ্রহে আছে।এমন একটা সময় ছিলো যখন বই ছাড়া তার কিছুই ভালো লাগতো না। আর এখন পরিস্থিতিটা এমন যে সে বই ছুঁয়ে দেখারও সময় পায় না কাজের চাপে।
ইলিয়ানা যাওয়ার সাথে সাথে তার অনেকগুলো অভ্যাস পুরোপুরি রূপে পাল্টে গেছে।বই পড়ার অদম্য উচ্ছাসটাও হারিয়ে গেছে সেই সাথে। এখন আর বই কালেক্ট করাও হয় না,, পড়াও হয় না।এসব সুন্দর মুহূর্ত গুলোর কথা মনের স্মৃতির পাতায় শুধু জ্বলজ্বল করে।তাই আজ সেই স্মৃতিটাকে জাগিয়ে তোলার উদ্দেশ্যেই নিজের সংগ্রহে রাখার জন্য প্রায় বেছে বেছে ৩০ টার মতো বই কিনলো সে।যে বইয়ের টাইটেলটা ভালো লাগছে সেটাই কিনছে।মনে মনে ভাবছে এখন থেকে আবারও নতুন করে বই পড়া শুরু করবে।বই মনকে উৎফুল্ল করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।বই পড়লে আশিয়ানও নিশ্চয়ই তার জীবনের বিষাক্ত কালো অতীতটা কিছু সময়ের জন্য হলেও ভুলে থাকতে পারবে।
বাসার অন্যান্য সদস্যদের জন্য টুকটাক কেনাকাটা করলো আশিয়ান। তারপর সেগুলো নিয়ে গাড়িতে রেখে আবারও বাসার দিকে গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলো।
আজ প্রায় ২ বছর পর বাসায় সঠিক সময়ে যাচ্ছে আশিয়ান। যদিও আগে প্রায়শই বাসায় আসার পর আবার বের হতো কাজে। ইলিয়ানা ধোঁকা দেয়ার পর থেকে বিনাকারণেই বাসায় দেরি করে আসে সে।মাঝে মধ্যে বারে গিয়ে মদ খেয়ে লেট করে বাসায় আসে।ছেলের এত মনঃকষ্টের কারণে মিসেস ইয়াসমিন ও তাকে কিছু বলতে পারেন না।আশিয়ান কসম কাটাকাটি পছন্দ করে না নইলে মিসেস ইয়াসমিন কোনদিনই কসম কেটে বসে থাকতেন ছেলের ভালোর জন্যে।
সারাজ হিসেবে প্রায় ৫ বছর ধরে পরিচিতি পেয়ে আসছে আশিয়ান। এর আগে সারাজ নামে কেউ ছিলো না। ঢাকার নামকরা এক সন্ত্রাসী এমপিকে হত্যা করার পর থেকে সবার মুখে মুখে সারাজের নাম পরিচিতি লাভ করে,,,সেটা অবশ্য আশিয়ানের ইচ্ছাতেই। সবার তো জানা থাকা উচিৎ যে অন্যায়কারীদেরও যম আছে।পুলিশ তাদেরকে উচিৎ শিক্ষা না দিলেও তাদের প্রাপ্য শাস্তি দেয়ার জন্য সারাজ আছে এটা সারা বাংলাদেশে প্রকাশ করা হয়েছে।নিজের সমস্ত ডিটেইলস সিক্রেট রেখে খুবই সন্তর্পনে কাজ সাড়ে তার টিমের লোকেরা ও সে।
এধরণের কাজ করতে নিজের ব্যক্তিগত পরিচয় লুকিয়ে ছদ্মনামে বেঁচে থাকতে হয় নইলে শত্রুরা যে ওত পেতে থাকবে। এতে নিজের চাইতে পরিবারের লোকজনদের লাইফ রিস্ক বেশী থাকে। মিসেস ইয়াসমিন যেদিন জানবেন যে সারাজ খানই হলো ওনার ছেলে আশিয়ান তাহলে সেদিনই হয়তো ওনি হার্ট অ্যাটাক করে মারা যাবেন। তাইতো খুবই সূক্ষ্মভাবে নিজের পরিচয় লুকিয়ে রেখেছে সে। যার কারণে আজতক কেউ তাকে কখনো সন্দেহ করতে পারে নি। তার বিরুদ্ধে এসব ব্যাপারে কোনো প্রমাণ নেই আর না আছে কারও কোনো অভিযোগ। তাইতো নির্বিবাদে একা একা চলাফেরা করতে পারে সে। কখনো সেরকম কোনো বিপদের সম্মুখীন হয় নি।
(গঠনমুলক কমেন্ট আশা করছি সবার কাছ থেকে। হ্যাপি রিডিং)
চলবে…🍃