অদ্ভুত বর – পর্ব 14

0
446

#অদ্ভুদ_বর
#দিয়া_মনি [ DîYã MôÑî ]
#পর্ব_১৪
রোশান দিয়ার হাত চেপে যখনি দিয়ার কাধে মুখ গুজতে যাবে অমনি দিয়া চিল্লিয়ে ওঠে
— যাবো
— কোথায় যাবে… কোথাও যাওয়া যাবে না।
দিয়া রোশানকে ঠেলতে ঠেলতে উঠে গেলো।
— যাবো না মানে..? আমি যাবো। নাহলে তুমি যাও আমার হয়ে পটি করে আসো।
— পটি মানে??
— বাথরুম,, পায়খানা। যাও যাও করে আসো।
— ( কি মেয়েরে বাবা এমন সময়ও বাথরুম পায়। উফফ। না যেতে দিলে ১৪বার ঘ্যান ঘ্যান করবে তার চেয়ে যাক। ) আচ্ছা যাও।
দিয়া কোনোমতে নিচের বাথরুমে ঢোকে। মিনিট পাঁচেক পর ওর দরজায় খট খট আওয়াজ হয়। দরজা খুলতেই দেখলো রওশন দাড়িয়ে আছে। দিয়া একটানে রওশনকে ভেতরে নিয়ে গেলো,,
— কেমন মানুষ আপনি বউকে ভাইয়ের বিছানায় পাঠাতে চান.? ওর বাচ্চা আমাকে আম্মু আম্মু বলে ডাকবে কেন.? আমি ওর কাছে যাবো না আর। আপনি অন্য কাউকে পাঠান। আমি যাবো না ওর কাছে। আমার অস্বস্তি লাগে।
বলেই কান্না জুরে দিলো দিয়া। ওদিকে রওশন দিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।
— দিয়াপাখি,,, তুমি আমাকে চিনলে কিভাবে.?
— আপনার নাকের নিচে তিল আছে কিন্তু আপনার ভাইয়ের নেই। রাগলে আপনার চোখ বেশি বাদামী হয় কিন্তু আপনার ভাইয়ের চোখ কালো কুচকুচে হয়ে যায়।
— দিয়াপাখি আমি যা বলবো তাই করতে পারবা.?
— সব পারবো কিন্তু ওই জ্বীনের সাথে থাকতে পারবো না। দেখুন আমার হাত কেটে দিসে।
বাচ্চাদের মতো নাকে নাকে কথা বলতে বলতে হাত এগিয়ে দিলো দিয়া। জোরে হাত চেপে ধরার কারনে বালার ঘসায় হাতের চামড়া কেটে রক্ত ঝরছে। রওশন দিয়ার হাতটা মুখের কাছে নিয়ে রক্তগুলো শুষে নিলো।
— এই ভ্যাম্পায়ারদের মতো রক্ত খাচ্ছেন কেন..? তাহলে আপনি জ্বীন না ড্রাকুলা। ওরে আল্লাহ এ কাদের পরিবারে এসে পড়লাম।
— দেখো সব ব্যাথা শেষ। আর আমি মানুষ। অন্যকিছু না।
— মানুষদের কোনো বৈশিষ্ট আপনার মধ্যে পাইনা। যাই হোক আপনার ভাই বিরক্ত করার আগে ওর থেকে বাঁচার উপায় বলুন।
— লকেট তো পড়ে গেছে। ওটা আর কাজ করবে না। তবে রোশানের বুকের বা পাশে একটা জন্মদাগ আছে ওখানে তোমাকে তোমারর
— আমার কি?
— ওখানে আদর করতে হবে।
দিয়া এবার ভীষন চটে গেলো। এ কেমন বর.? নিজের বউরে এডভাইস দিচ্ছে যে বউ যেন ভাইকে আদর করে। এরকম বরের গুল্লি মারি।
— ঠিক আছে। আজকে দেখুন আমি কি করি। ওর অনেক পিরিত করার শখ তাইনা। ওর পিরিত ছুটাচ্ছি। আর কাল সকাল হলেই বাড়ি চলে যাবো। আপনাকে ডিভোর্স পেপারও পাঠিয়ে দিবো। কোনো দরকার নাই এমন বর আর শশুড়বাড়ি। ভালোই হচ্ছিলো মরে যাচ্ছিলাম।
রওশন দিয়ার মাথা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো। দিয়া রওশনের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে মুখ গোমরা করে অন্যদিকে তাকালো।
— মজা করছিলাম দিয়াপাখি। তোমাকে রোশানের ওই জন্মদাগের ওপর পানি দিতে হবে।
— পানি মানে.?
— চোখের পানি। রোশানের জন্য নিয়ম আছে অনেক। রোশানের জন্মদাগে যদি কোনো মেয়ের চোখের পানি পড়ে তাহলে ও সেদিনের জন্য ঘুমিয়ে যাবে। ২৪ঘন্টার আগে উঠবে না। আর আজকের রাতটা কেটে গেলে ওর উঠেও লাভ নাই কারন ও তোমাকে আর কখনো ছুঁতে পারবে না। বুঝেছো?
— কাঁদবো কেন.? আমি কি ওকে ভয় পাই.?
— তো যাও হানিমুন করো।
— না না কাঁদবো। কিন্তু চোখের পানি ওর বুকে যাবে কিভাবে যে মোটা শার্ট।
— খুলে ফেলতে হবে।
— আপনার শার্টই খোলার সুযোগ পাইনি এখন দেবরের শার্ট খুলতে হবে? আমার ক্যারেক্টারে আপনাদের মতো লুচ্চার ট্যাগ নাই।
— আমি লুচ্চা.? কাল রাতে বুঝাবো আমি কি
— দেখলেন তো প্রমাণ করে দিলেন আপনি লুচ্চা। যাক আমি এখন যাই। শার্ট খুলতে হবে তো।
— শোনো
— আবার কি?
— শুধু ওকে ঘুম পাড়ানোর জন্য শার্ট খুলবা। আর কিছু করবা না ওর সাথে। ও কিন্তু তোমার দেবর হয় সম্পর্কে। আর আমি তোমার জামাই। তোমাকে যেন ও সেভাবে ছুঁতে না পারে।
— জ্বলে?
উত্তরে রওশন দিয়ার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে দিয়ার চোখের দিকে তাকালো,, রওশনের চোখে পানি টলমল করছে। দিয়া যত রওশনের চোখের দিকে তাকাচ্ছে তত ও বাদামী চোখের গভীর অতলে হারিয়ে যাচ্ছে।
— যাও দিয়াপাখি। সাবধানে থেকো।
রওশন দিয়াকে ছেড়ে সাইড দিয়ে দাড়ালো। দিয়া দরজা খুলে বাইরে চলে গেলো। তবে মিনিটখানেকের মধ্যে আবার ফিরে আসলো।
— কি হয়েছে? কোনো সমস্যা?
দিয়া রওশনের গলা টেনে নিচু করে ওর ঠোটে ঠোট ছুইয়ে বললো
— ভালোবাসি আপনাকে। টাটা
দিয়া চলে গেলেও রওশন ঠায় দাড়িয়ে রইলো।
— মেয়েটা এতো পাঁজি আগে জানলে বিয়ে টা আরো আগে করতাম। পাগলি।
♠♠
ছাদে রোশান রাগে গজগজ করছে এমন সময় দিয়া আসলো উপরে। রোশান দিয়ার দিকে একনজর তাকিয়ে মাটির দিকে তাকালো।
— ৩০মিনিট ধরে কি করছো.?
— আমার তো টাইম লাগে বেশি। তুমি জানো না?? ( তোমার ভাই এর সাথে রোম্যান্স করছিলাম দেবরজি।)
— ওহ ( এতো টাইম লাগে। বাথরুমটাকে বেডরুম বানিয়ে ফেলে মনে হয়।) কয়টা বাজে?
— আমাকে দেখে কি ক্লক মনে হয়.? যাও নিজে গিয়ে দেখো কয়টা বাজে।
— ১টার কাছাকাছি। ঘুমাবো কখন?
— ছাদে ঘুমাবো কিভাবে.? রুমে যাবো আমি। আমারও ঘুম পাচ্ছে।
রোশান উঠে এসে দিয়াকে কোলে তুলে নিলো। দিয়া একহাতে রোশানের গলা জরিয়ে অন্যহাত ওর শার্টের বোতামে রাখলো,,
— দিয়াপাখি,,
— কিচ্ছে বাল।
— বাল মানে..??
— বাল মানে, মানে হলো বলো। স্লিপ অফ টাং। জান জামা খোলো
দিয়ার কথা শুনে রোশান ভীষম খেলো। এতোক্ষন শয়তানি করে এখন জামা খুলতে বলছে.? রোশানেরও এবার খটকা লাগছে। বাথরুম থেকে এসে মানুষের এতো পরিবর্তন হয়?
— আগে রুমে যাই তারপর দিয়াপাখি।
— (খাটাশের বাচ্চা খাটাশ। ভাবছি এখনই কেঁদেকেটে তোর বুক ভিজাবো ব্যাটা বিছানায় না গিয়ে খুলবি না ঠিক করছিস। দাড়া তোর জামা ছিড়ে ফেলাবো। তাও রুমে তোর সাথে যাবো না।) নামাও আমাকে। নামাও বলছি।
রোশান দিয়াকে নামিয়ে দিলো। দিয়া দাড়িয়ে থেকে রোশানের জামার সব বোতাম খুলে ফেললো,,
— নাও হয়ে গেছে। এবার চলো।
— সম্পূর্ণ খোলো। ( জন্মদাগটা কই? )
রোশান সম্পূর্ন জামা খুলে ফেললো তারপর জোর করে দিয়াকে তুলে বিছানার ওপর রাখলো। দিয়া ততক্ষনে জন্মদাগটা দেখে নিয়েছে। রোশান ঘরে একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে দিয়ার দিকে এগোচ্ছে।
— ( হায় হায় আমার সবকিছু দেখে ফেলবে।) মোমবাতি নিভাও।
— তাইলে অন্ধকারে তোমাকে খুজে পাবো না তো।
— ( তাও তো ঠিক অন্ধকারে ওর জন্মদাগও তো খুজে পাবো না। এক কাজ করি কাঁদি। ওরে আল্লাহ চোখে পানি আসে না কেন.?? এবার আমার কি হবে.? )ওহ
রোশান এসে দিয়ার ওপর হালকা ঝুকে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।
— জান তোমার বুকে ঘুমাবো। ( এতো নির্লজ্জ মনে হয় জীবনে হইনি। আল্লাহ কি করাচ্ছো আমাকে দিয়ে। রেহাই দাও,,, চোখে পানি আনার শক্তি দাও। ঠিকঠাক সময় কাজের কিছু পাইনা )
রোশান দিয়াকে নিজের উদাম বুকের ওপর নিয়ে শুয়ে পড়লো। দিয়ার চোখ ঠিক রোশানের জন্মদাগের সাথে লেপ্টে আছে। দিয়ার একভাবে তাকিয়ে আছে যেন চোখ জ্বলে আর পানি পড়ে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।
— (আগে জানলে চোখে লেবুর রস দিতাম। এখন তো তারও উপায় নেই।)
হঠাৎ দিয়া অনুভব করলো রোশানের হাত ওর শাড়ির ভেতরে যাচ্ছে। অস্বস্তিতে পরে গেলো দিয়া। রোশান দুহাতে দিয়ার কোমর জরিয়ে ধরলো,, তারপর হাত আস্তে আস্তে উপরে উঠাতে লাগলো,, রাগে দিয়ার নাকমুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। চোখগুলোও জ্বলতে আরম্ভ করেছে।
— দিয়াপাখি। লাভ ইউ।
— ( বেয়াদব পোলা। রওশন কোথায় আপনি? প্লিজ এখানে আসুন। )
রোশান দিয়ার পেট ধরে ওকে ওর বুকের ওপর উচু করে ধরলো, শাড়ির আঁচল পিন থেকে খুলে নিচে পড়ে গেছে ,, অস্বস্তিতে গা ঘিনঘিন করে উঠলো দিয়ার। হঠাৎ রোশানের হাত আলগা হয়ে আসে আর দিয়ার ওর বুকের ওপর ঢুপ করে পড়ে। দিয়া রোশানের মুখের দিকে তাকাতেই দেখলো রোশান চোখ বুজে আছে। দিয়া এবার ওর বুকের দিকে তাকালো সারা বুক ভিজা।
— ইয়াহু। বেঁচে গেছি। কিন্তু কাঁদলাম কখন.?
— যখন ও তোমাকে উচু করে ধরেছিলো তখন দিয়াপাখি।
রওশনের গলা শুনে দিয়ার হাসিমুখ মলিন হয়ে গেলো।
— ( এতোক্ষন পরে এসে ন্যাকামি করছে। বেদ্দব বর)গোসল করবো। ব্যবস্থা করে দিন।
— সেকি কেন.? কিছুই তো করোনি তোমরা তাহলে গোসল কেন?
দিয়া রাগি চোখে রওশনের দিকে তাকালো। রওশন হাসতে হাসতে বললো
— কি হয়েছে?
— অপবিত্র হয়ে গেছি আমি। পবিত্র হওয়ার জন্য গোসল করবো।
— এই ব্যাপার.? চলো তোমাকে পবিত্র আমি করছি। সকালে নাহয় দুজন একসাথেই ফরজ গোসল সেরে নিবো।
রওশন দিয়াকে সেভাবেই কোলে নিলো যেভাবে রোশান নিয়েছিলো।
— দুই ভাইয়ার নাটক দেখে গা জ্বলে যাচ্ছে। আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ একটা দিন আর রাত গেলো এটা।সব হইছে আপনার জন্য। আপনাকে বিয়ে না করে সবুজ বা তুহিন ভাইকে বিয়ে করলে সুখে শান্তিতে থাকতে পারতাম।
— কাল থেকে রুমের বাইরে বের হবা না। আর তুহিন সবুজদেরও আমাদের বাড়িতে আসা বন্ধ।
— কেন কেন? ওরা আপনার কোন পাঁকা ধানে মই দিসে?
— ওরা আমার পাঁকা বউটার নজর আমার ওপর থেকে সরানোর চেষ্টা করছে।
— কি আমি পাঁকা? আপনি পাঁকা আপনার ১৪গুষ্টি পাঁকা।
— একদম। সেটা কি আজ জানলে?
— ফালতু লোক একটা আপনার সাথে কথা বলাই হলো অপাত্রে দান করা।
— তোমার দান চেয়েছে কে?আমি তো আমার অধিকারটাই বুঝে নিচ্ছি। গেট রেডি ফর দ্যাট দিয়াপাখি।
— যত্তোসব।
♥সকালে♥
রওশন ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ নিয়ে বাইরে বের হলো। দিয়া তখন নাস্তা করছিলো। রওশনকে দেখে ওর চোখ আমড়ার আটি হয়ে যায়। সবাই রওশনকে দেখে মিটিমিটি হাসছে।
— রশনি আজ বিকালে ফিরে যাবো আমরা। তোরা রেডি থাকিস। ( আমাকে দেখে সবাই হাসছে কেন..? আর দিয়াপাখি মনে হচ্ছে রেগে যাচ্ছে কাহিনি কি?)
রওশন নিজের জামাকাপড় দেখতে লাগলো। সব ঠিকঠাকই আছে। তাহলে ব্যাপারটা কি?
— ভাইয়া রাতে ঘুম হয়েছে ঠিকঠাক..?( ঠোট চেপে হাসতে হাসতে প্রশ্ন করলো রশনি )
— আহা রশনি আপু এভাবে কেউ প্রশ্ন করে.? দেখে বুঝতে পারছো না কত্তো ভালো ঘুম হয়েছে। ( কথাটা বলেই হাসতে হাসতে তুহিনকে স্যান্ডউইচ দিলো তিথি। )
— মানে..? আর তোরা হাসছিস কেন.? ( বোকার মতো প্রশ্ন করে ফেসে গেলো রওশন। দিয়া রাগ করে তাবুতে চলে গেছে কারন টিয়া অনবরত দিয়াকে খোচাচ্ছিলো )
— ভাই রাতের কাহিনি সবাইকে বলার কি দরকার.? জামার বোতাম আটকে রাখলেই পারতি। শুধু শুধু ভাবি লজ্জা পেয়ে চলে গেলো। (তুহিন।)
তুহিনের কথা শুনে রওশন নিজের বুকের দিকে তাকালো। সর্বনাশ গতকাল রাতে দিয়া বুকে কামড় দিসিলো সেই দাগ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। গলার কাছটাতেও হালকা কেটে গেছে।
— এটা ইদুরের কামড়ানোর দাগ। অন্যকিছু না।
— হ্যা তো ইদুরি,, মেয়ে ইদুর। বাবাহ ইদানিং ইদুর তোমার বুকে কামড় দেয়, গলায় আচড় দেয়। দেখছো কতো সৌভাগ্যবান তুমি?
রশনির কথা শেষ হতেই সবাই কিটকিটিয়ে হেসে ওঠে। রওশন রশনির মাথায় ছোট করে চাটি মেরে তাবুর দিকে হাটা শুরু করে।
— আস্তে দৌড়া ভাই তোর বউকে কেউ নিয়ে যাচ্ছে না। ( তুহিনের কথায় আবার হেসে ওঠে সবাই। )
ওদিকে দিয়ার তাবুুর বাইরে একপায়ে কান ধরে দাড়িয়ে আছে,,
চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here