#অদ্ভুদ_বর
#দিয়া_মনি [ DîYã MôÑî ]
#পর্ব_০৯
[ Êxtrã PårT]
বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে দিয়া। হাতে ওয়াইনের বোতল। একটু আগে ফ্রিজে রাখা জুসে মদ মিশিয়ে এখন নিশ্চিন্তে চকলেট খাচ্ছে আর রাত গভীর হওয়ার অপেক্ষা করছে দিয়া।
রাত ৯টা সবাই গেস্টরুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে এমন সময় রশনি কেক আর জুস নিয়ে আসে। দিয়া কেক নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই খাচ্ছে কিন্তু সবাই খেয়াল করলো দিয়া আর তুহিন জুস খাচ্ছে না। তিথি তুহিনকে কনুই দিয়ে গুতা দেয়
—- গুতাচ্ছো কেন..?
—- খাচ্ছো না কেন..? শুধু কেক খাচ্ছো, শুকনো কেক গলায় বেধে গেলে ডিরেক্ট উপরে চলে যাবে। জুস খেয়ে গলা ভিজিয়ে নাও। আজকের জুসটা একটু অন্যরকম লাগছে খেয়ে দেখো।
—- তুমি খাও।
জুস খেয়ে সবার মাথা ঝিম ঝিম করতে লাগলো। সবাই টাল্লি বিহেভ করছে। তিথি তুহিনকে দাড় করিয়ে ওর নাক ধরে টানছে। নিঝুম রশনিকে কোলে নিয়ে গোল গোল ঘুরছে। সবুজ টিয়া নিজেদের দিকে তাকাচ্ছে আর কিছুক্ষন পরপর হু হা করে হেসে উঠছে।ভাগ্গিস রিমিকা রায়হান বাড়ি নেই তাহলে ছেলেমেয়েদের এমন কান্ড দেখে বেহুশ হয়ে যেতো।
দিয়া পাশে একটা ফোনের ক্যামেরা অন করে রাখে। তারপর একটা বাটি আর চামচ এনে টুং টুং শব্দ করে। সবাই এবার দিয়ার দিকে তাকালো। দিয়া মুচকি হেসে বললো,,
—- সবাই বসো আমরা এখন খেলবো।
দিয়ার কথা শুনে সবাই বাধ্য ছেলেমেয়ের মতো বসে পড়লো। তিথি তুহিনের কোলে বসেছে দেখে টিয়া হাসতে লাগলো। ওদিকে রশনিকে নিঝুম কোলে নেয়নি দেখে রশনি মুখ গোমরা করে আছে। তুহিন দিয়ার দিকে তাকিয়ে গোমরা মুখে জিজ্ঞাসা করলো,,
—- এবার কি হবে ভাবি..?? সবাই তো ড্রাংক্ড। এদের সামলাবো কিভাবে..??
—- মে হু না । ( মুচকি হেসে উত্তর দিলো দিয়া ) তো সবাই বলো এখন কার কি মনে চাচ্ছে..??
তিথি লাফিয়ে উঠে বললো,,
—- রোম্যান্স। আমার আদর খেতে ইচ্ছে করছে। আই নিড অনেক আদর। তুহিন আমাকে আদর করো।
তুহিনের গাল টেনে ধরে তিথি আদো আদো গলায় বলছে আর তুহিনের দিকে মুখ এগিয়ে দিচ্ছে। দিয়া হালকা হেসে উত্তর দিলো,,
—- সেটা পরে এখন তোকে তুহিন কিছু গিফট দিতে চায়। সেটা তো নে। রাত তো এখনো অনেক বাকি। রোম্যান্স না হয় রুমে গিয়ে করিস। [ চোখ টিপ দিয়ে বললো ]
তুহিন উঠে গিয়ে একটা বড় বক্স আনে। র্যাপিং পেপারে মোরানো বক্স। তুহিন বক্সটা এনে তিথির সামনে দেয়। তিথি বক্সটা ধরে দাঁত দিয়ে কামড়ে খোলার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। খুলতে না পেরে তিথি জোরে জোরে কেঁদে দেয়।
—- বাক্স খুলতে পারছি না। আমার গিফট,, আমার গিফট। খুলে দাও এটা।
দিয়া বক্সটা থেকে র্যাপিংপেপার খুলে তিথির হাতে দেয়। তিথি এক টানে ছিড়ে ফেলে কার্টুন। ভেতরে দুটো বক্সিং গ্লোবস। তিথির ছোট থেকেই বক্সিং শেখার শখ। ও সবসময় বলতো ও বক্সিং শিখবে দূর্বল মেয়েদের পাশে দাড়াবে। বাজে বাজে ছেলেদের মেরে শিক্ষা দিবে। তাই দিয়া এগুলো সব তুহিনকে বলেছিলো। তুহিনও তিথির শখ মেটানোর সব ব্যবস্থা করে ফেললো। তিথি গ্লোবস দুটো হাতে তুলে চুমু দিলো তারপর ওগুলো পরে তুহিনের কাছে গেলো।
—- তুমি হলে বেস্ট বর। তুমি জানো আমি আব্বুর কাছে কতো কেঁদেছি বক্সিং শিখবো তাই। কিন্তৃ আব্বু বলেছে মেয়েদের এগুলো করতে হয় না ওগুলো করতে হয় না। দেখো আজ এগুলো আমার হাতে। তুমি দিয়েছো আমাকে,,, তুমি আমার সব কথা শোনো আমার সব ইচ্ছা পূরণ করো। তুমি খুব খুব খুব ভালো,,, এজন্য আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি। না না এজন্য না আমি তোমাকে সত্যিই খুব ভালোবাসি। তুমি বাসো না..???
—- আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি তিথি। আর কতোটা ভালোবাসি সেটা অজানাই থাক নাহলে তুমি যে মেয়ে আমার ভালোবাসার সুযোগ নিয়ে হাজার বার বোকা বানাবে।
—- তুমি তো বোকাই। তুমি আমার বোকা বর। তুমি #3B বোকা বেস্ট বর। লাপিউ বর।
—- লাভ ইউ টু রে পাগলি। & থ্যাংকইউ ভাবি। আপনার জন্যই এই পাগলিটাকে আমি আমার জীকনে পেলাম,,
দিয়া রাগের অভিনয় করে বললো,,,
—- আমার বান্ধবিকে পাগলি বললে কিন্তু আমি আপনাকে কামড়ে দিবো ভাইয়া। মোটেও ওকে পাগলি বলবেন না। ওকে পাগলীদের লিডার বলবেন।
হেসে দিলো তুহিন। ওদিকে রশনি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো,,
—- পিচ্চি ভাবি… আমার কাছে শুনবে না আমি কি চাই..??
—- হ্যা তো। তুমি কি চাও আপু..? রোম্যান্স কিন্তু হবে না। তোমাদের বিয়ে হয়নি। আপাতত
—- না না ওসব কেউ চায় নাকি আমি তো চাই তুমি ভাইয়াকে সারাজীবন খুশি রাখবে। জানো ভাইয়া এই ৯মাস কতো কষ্ট পেয়েছে..?? কতো কেঁদেছে..?? ভাইয়া আমাকে তোমার কাছে এসব বলতে মানা করেছিলো। কিন্তু কেন শুনবো ওর মানা..?? ভাইয়ার কষ্ট হলে যে আমারও খুব কষ্ট হয়।
কেঁদে দিলো রশনি। নিঝুম রশনির চোখ মুছে দিচ্ছে আর বলছে “কাঁদে না রশনি, আমার রশনি কাঁদলে আমারও কাঁদতে ইচ্ছে করে” দিয়ার প্রথমে কান্না পেলেও ওদের এভাবে বাচ্চাদের মতো কথা বলতে দেখে মন খারাপ ভালো হয়ে যায়। দিয়া নিঝুমকে প্রশ্ন করে,,
—- তো নিঝুম ভাইয়া তোমার কি চাই..?? আমি বোধ হয় জানি তুমি কি চাও।
—- কি চাই আমি..??
—- ঘুরতে যেতে চাও। লং ড্রাইভে তাইনা..??
—- হ্যা তো। আমি তো এটাই চাই। তুমি কি করে বুঝলে। তুমি কি জ্যোতিষী..?? মনের কথা পড়তে পারো..??
—- এটা তো তোমার রশনি বলেছিলো। তাই তোমাদের জন্য আমি একটা গাড়ির কথা বলেছি রওশনকে। এসএমএস করেছিলাম হয়তো দেখে কিনে ফেলেছে। এবার খুশি তো..??
—- অনেক খুশি। তুমি অনেক ভালো ভাবি। কিন্তু তোমার চেয়ে আমার রশনি বেশি ভালো। তাইনা রশনি..??
রশনি ঘাড় ৪৫ডিগ্রি এঙ্গেলে ঘুরিয়ে একবার দিয়ার দিকে আর একবার নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো,,
—- পিচ্চি ভাবি ভালো। আমিও ভালো। আমি তোমার কাছে বেশি ভালো। পিচ্চি ভাবি ভাইয়ার কাছে বেশি ভালো।
আসলেই যে যাকে ভালোবাসে সে তাকে অন্যকারোর সাথে কম্পায়ার করতে পারে না। কখনো অন্যকারোর সাথে ঘুলিয়ে ফেলতে বা অন্যকারোর পাশে সহ্য করতে পারে না। কথাটা মাথায় আসতেই দিয়া ভাবতে লাগলো,, রওশনের কাছ থেকে দূরে গেলে রওশন নতুন আরেকজনকে ওর জীবনে আনবে..?? রওশন কি দিয়াকে ভুলে অন্যতে মিশে যাবে..?? দিয়াকে কি আর ভালোবাসবে না..??
—- আমার দিয়াপাখিকে আমি আগে যেমন ভালোবাসতাম। এখনো বাসি আর ভবিষ্যৎএ ও বাসবো। তাই আমাকে নিয়ে ভয় না পেয়ে সবাইকে নিয়ে ভাবো।আর প্লানিং এ সবাই আছে কিন্তু আমি নেই কেন..? ইট্স নট ফেয়ার দিয়াপাখি।
রওশনের গলা শুনে পেছনে তাকায় দিয়া। রওশন প্যান্টের পকেটে দুহাত গুজে দরজার সাতে পিঠ ঠেসে দিয়ার দিকে তাকিয়ে বেবি ফেস করে অদ্ভুদভাবে ঠোট নাড়িয়ে কথাগুলো বললো।
—- [ এই লোকটা এমন কেন..?? মনে মনে কি ভাবছি সেটাও বলে দিচ্ছে। কিভাবে বুঝতে পারে এসব। আমার ওপর টুকটাক করে নি তো..? ] মনে মনে
—- তোমার মনের কথা জানার জন্য আমাকে অন্য কৌশন ব্যবহার করতে হয় না দিয়াপাখি। তোমার চোখ আর ঠোট নাড়ানো দেখলেই সব বুঝতে পারি আমি।
কথাটা শোনামাত্র দিয়া হাত দিয়ে ঠোট চেপে ধরে। তা দেখে ফিক করে হেসে দেয় তুহিন। লজ্জায় দিয়া মাথা নিচু করে ফেলে। ঠিক তখনই রওশন বলে ওঠে,,,
—- এখনই এতো লজ্জা… যখন তোমাকে নিজের করে নিবো তখন কি করবে..?
তুহিন পিঞ্চ দিয়ে বললো
—- তখন তো ভাসবে রে রওশন। আমারটারে দেখেই বুঝে গেছি,, তিথির মতো গুন্ডি টাইপের নির্লজ্জ আই মিন অল্পলজ্জা ওয়ালা মেয়ে আমার সামনে লজ্জায় যে হারে কাঁপাকাঁপি করছে তাতে আমাদের ভাবিকে খুজে পাওয়াই যাবে না। বিলিন হয়ে যাবে।
রওশন ক্লোজআপ হাসি দিয়ে বললো,,
—- ও বিলিন হয়ে গেলে রোম্যান্স কি তোর বউ এর সাথে করবো..??
—- আমার বউ..?? ভাই ও হেব্বি ডেন্জারাস ছুতে গেলেই কারেন্ট লাগে,, মানে এতো ঝোড়ে ধাক্কা দেয় যে বৈদ্যুতিক শক্তিকেও হার মানায়। তোরটা পার্ফেক্ট তাই ওটা নিয়েই খুশি থাক।
—- তোরে তো তাও ছুঁতে দিসে। আমারে এখনো একটা কিসও করেনি।
দিয়া ওদের অভিযোগ আর কথা শুনে বেকুব বনে গেলো,,, কিসব লাগাম ছাড়া কথাবার্তা,,, এতোগুলো মানুষের সামনে ছোঁয়াছুঁয়ি, কিস, কারেন্ট।
—- তুহিন ভাইকে ইনোসেন্ট ভাবছিলাম এখন দেখি দুইটাই এক। এদের মধ্যে লজ্জাশরম বলতে কিছুই নাই। এজন্যই একবার বলাতে মদ নিয়ে চলে আসছে। উফ আগে তিনটা লজ্জাহীন বন্ধু ছিলো এখন আরো দুইটা এড হলো।
লজ্জায় দিয়ার নাক মুখ কান গরম হয়ে যাচ্ছে,,, রীতিমত লালচে হয়ে যাচ্ছে। রওশন দিয়াকে খোচা মেরে তুহিনকে বলে,,
—- চুপ কর আমার বউ লজ্জায় লাল টমেটো হয়ে যাচ্ছে।
—- তো খেয়ে ফেল। খেতে মানা করেছে কে..?? একবার তো টেস্ট করবি, বিয়ে করছিস তো একবার টেস্ট করে দেখবি না..??
দিয়া এবার দাড়িয়ে গেলো। বললো ” আমার একটা কাজ আছে আমাকে আমাদের রুমে যেতে হবে।” দরজার কাছে আসতেই বিপদে পড়ে গেলো দিয়া। রওশন দরজার সামনে থেকে সড়ছে না। টিয়া চিল্লিয়ে উঠলো,,
—-আমাদের কিছু দিবি না বেবি..?
রওশন দিয়ার সামনে এগোতে এগোতে বললো
—- দিয়ার অপারেশন হলে আমরা বান্দরবানে ঘুরতে যাবো। নীলগিরি,নাফাখুম,আমিয়াখুম, সাতভাইখুম। আর ট্যুরের সব খরচ আমার। এতে চলবে তো তোমাদের..??
সবুজ ঢলতে ঢলতে বললো,,
—- খুব চলবে। তবে এখন ঘুমের প্রয়োজন। আমি ঘুমালাম। টাটা সবাইকে।
—- সরুন আমি যাবো। কাজ আছে। ( দিয়া )
সরে গেলো রওশন দিয়া সোজা রুমে চলে এসে দরজা লক করে ঘুমিয়ে গেলো।
।
।
।
।
সকালে দিয়াকে নিয়ে হসপিটালে চলে আসলো রওশন আর টিয়া। তিথিরা আসতে চেয়েছিলো কিন্তু দিয়া চায়নি এতো মানুষ নিয়ে হসপিটালে যেতে। তাই তিথিরা না চাইতেও বাড়ি থেকে যায়। দিয়ার কিছু টেস্ট করিয়ে দুপুরবেলা ছেড়ে দেয় ডক্টর আংকেল। রওশন দিয়াদের নিয়ে রেস্টুরেন্টে যায়। দুপুরের খাবার খেয়ে আবার হসপিটালে আসে। দিয়াকে ৩ঘন্টা পরপর ৬টা স্যালাইন দিতে হবে।
দিয়া বিছানায় শুয়ে আছে। পাশের চেয়ারে রওশন বসা। টিয়াকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে দিয়া। বেচারি এমনিই হসপিটালে থাকতে পারে না তারওপর আজ সারাদিন থেকে অসুস্থ হয়ে গেছে।
—- বেডটা অনেক বড় বসে না থেকে শুয়ে পড়ুন।
—- দরকার নেই। তুমি ঘুমানোর চেষ্টা করো। সারাদিন অনেক ধকল গেছে তোমার ওপর দিয়ে।
—- আমি তো ভুলেই গেছিলাম। আমার পাশে ঘুমালে মানুষের গায়ে ফোস্কা পড়ে। আমার তো চর্মরোগের সমস্যা। তাইনা..??
রওশন বুঝতে পারে যে দিয়া রেগে যাচ্ছে তাই বিছানায় উঠে বসে। দিয়া ঠোট চেপে ধরে বললো,,
—- ভেবেছিলাম কারোর বুকে মাথা রেখে ঘুমাবো। কিন্তু আমার তো কেউ নাই। তাই আর ইচ্ছা জমিয়ে কি লাভ..?? থাক বালিশেই ঘুমাই।
রওশন দিয়ার পাশে হেলান দিয়ে বসে দিয়ার মাথা সাবধানে নিজের বুকের ওপর রাখে। হাত বালিশের ওপর দিয়ে রাখে যাতে ক্যানোলা ঠিক থাকে। রওশন দিয়ার চুলের মধ্যে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
—- আমার বেবিদের কি নাম দেওয়া যায় বলো তো..?? চারটা নাম ভেবে রাখতে হবে। দুইটা ছেলের আর দুইটা মেয়ের।
—- আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন কেন..? আপনার বেবি আপনি নাম রাখেন।
—- হ্যা তোমার তো কিছু না,,, থাক আমি নিজেই ভাবছি কি নাম রাখা যায়। পেয়েছি ঝুনঝুনি আর টুনটুনি। ছেলেদের নাম ঝুন টুন আর মেয়েদের নাম ঝুনি টুনি। দারুন লাগবে,, ঝুনঝুনি টুনটুনির আব্বু বলে ডাক শুনতে।
রওশনের কথায় ফিক করে হেসে দেয় দিয়া। কেন জানি না আজ ওর মন অনেক ভালো। রওশনের থেকে দূরে যাওয়ার চিন্তা ওর মাথাতেও আসছে না। শুভদিনের ইঙ্গিত পাচ্ছে ও। এভাবেই বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা,সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত,, আর রাত গড়িয়ে নতুন সকাল হয়। সারারাত রওশন দিয়াকে গল্পে মাতিয়ে রেখেছিলো যাতে মিনিমাম ডিপ্রেশনও ওর মাঝে না আসে।
অপারেশন থিয়েটারে দিয়া। ইশতিয়াক খান অপারেশন করছে OT এর বাইরে দাড়িয়ে আছে দিয়ার আব্বু দুরুক, রিমিকা রায়হান সহ বাকি সবাই। সবাই আল্লাহর কাছে দোয়া করছে ওদিকে রওশন আজ দিয়ার জন্য রোজা রেখেছে। মানত করেছে। দিয়াকে Ot তে নেওয়ার পরপরই রওশন পাশে থাকা একটা মাজারে চলে যায়।
দেড় ঘন্টা পর OT থেকে বের হয় ইশতিয়াক।দুরুক আর রায়হান সাহেব দৌড়ে ওনার কাছে যায়। দুরুক হাপাতে হাপাতে বলেলে,,
—- আমার মেয়ে..?? দিয়া কেমন আছে।
—- অপারেশন সাক্সেসফুল। বাট ও প্রপার রেসপন্স করছে না। রক্ত দিয়েছি তবুও সেটা নিতে পারছে না। টিউমার টা কেয়ারফুলি কেটে ফেলা হয়েছে ভেবেছিলাম পেসেন্ট দ্রুত রেসপন্স করবে বাট ইন ভেইন। ৭২ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান না ফিরলে ও কোমায় চলে যেতে পারে।
দুরুকের হাতপা অবশ হয়ে আসতে লাগলো,,, রায়হান দুরুককে ধরে একটা বেঞ্চে বসালো। তারপর রওশনকে খবর দিলো। খবর পাওয়ামাত্র রওশন হসপিটালে চলে আসে।
কেবিনে দেওয়া হয়েছে দিয়াকে। সবাই একনজর দিয়াকে দেখে চলে যায়। রওশন এখনো কেবিনের ভেতর ঢোকেনি। রশনি রওশনকে বুঝিয়েসুঝিয়ে দিয়ার সামনে আনে। দিয়ার মাথায় ব্যান্ডেজ করা,, হাতে ক্যানোলা মুখে অক্সিজেন মাক্স। চোখের নিচে কালো দাগ পরে গেছে । কোমর অবধি চুলের মাঝ বরাবর কেটে ফেলা হয়েছে। রওশনের চোখ যেন স্থীর হয়ে গেছে। রশনি রওশনকে রেখে বাইরে চলে যায়। রওশন আস্তে আস্তে দিয়ার কাছে যায়। দিয়ার কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয়।
—- আমার দিয়াপাখি আবার আমার বুকে ফিরে আসবে। আর এবার ফিরে আসলে কোনো কষ্টকে দিয়াপাখির কাছে ঘেসতে দিবো না আমি। এটা রওশন ইয়ারাভের প্রমিস।
টানা দুইদিন নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে দিয়ার পাশে দিয়ার হাত ধরে একভাবে বসে আছে রওশন। হঠাৎ ওর মনে হলো দিয়ার চোখের পাতা নড়ছে,,, রওশন এবার কেঁদে দিলো,, চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে দিয়ার হাতে। দিয়ার আঙ্গুলটাও নড়ে উঠলো। দিয়া পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো। সামনে রওশন বসে আছে। গালে খোচা খোজা দাড়ি। চোখের নিচটা গর্ত হয়ে গেছে।ফর্সা চেহারায় আগের মতো হাসি নেই,,, মনমরা টাইপের হয়ে আছে যা দেখে দিয়ার বুকের ভেতর মোচর দিয়ে উঠলো,,,
—- র,,র,,র,,রও,,ওও,,ওশ,,শ,,শ,,শন,,ন,,ন,,ন
—- চুপ। কোনো কথা না। আগে তোমাকে দেখতে দাও আমায়।
একদৃষ্টে দিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে রওশন। তারপর উঠে গিয়ে দিয়ার চোখে মুখে হাতে চুমু খেতে শুরু করে। দিয়া ভ্রু কুচকে তাকাতেই রওশন বলে উঠলো।
—- ওভাবে দেখো না। এখন তুমি সুস্থ হয়ে গেছো তাই তোমাকে কিন্তু আর ছাড় দিবো না। ঝুনঝুনির আম্মু হওয়ার জন্য তৈরি হও। আমি আংকেলকে ডেকে আনছি।
একসপ্তাহ পর। দিয়াকে নিয়ে রওশন বাড়ি ফিরছে। বাড়িটা ঠিক বিয়ে বাড়ির মতো সাজানো। বাইরে লাইটিং করা,,ফুল দিয়ে রাস্তা সাজানো। আর সবচেয়ে বড় কথা আজ রওশনের বিয়ে।
চলবে।