#অদ্ভুদ_বর
#দিয়া_মনি [ DîYã MôÑî ]
#পর্ব_০৬
রওশন, দিয়া আর রশনিকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে,,,রাতে সবাই খেয়ে ঘুমিয়ে যায় আর রওশন..?? সে ছাদের এক কোণায় বসে একটা লকেট হাতে নিয়ে ভাবতে থাকে,,, ২বছর আগের কথা দিয়া সবেমাত্র কলেজে উঠেছে। আর রওশন একজন পাঁকা বিজনেসম্যান। [ আগেই বলে রাখি দিয়ার বয়স ১৯বছর এবং রওশনের ৩০. দিয়া লাস্ট এক বছরের কথা ভুলে গেছে। তার কারন..?? কারনটা পরে জানবেন। ]
দিয়া ছিলো খুলনার সবচেয়ে দূরন্ত এবং চঞ্চল মেয়ে,,, ইন্টারন্যাশনাল নিজস্ব ভাষা থেকে শুরু করে মারপিট কোনো কিছুই তার অজানা না। একমাত্র বাবার কথা ছাড়া কারোর কথার পাত্তা দেয়না। ওর রিলেটিভরা ওর শ্যামবর্ণ নিয়ে অনেক কথা শোনায় কিন্তু দিয়া এমন একটা মেয়ে যে জন্ম পদরিচয় না নিজের অর্জন করা পরিচয়ে বাঁচতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এবং এ বিষয়ে তাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে তার বাবা।
কলেজের প্রথমদিন। দিয়া হলুদ রং এর একটা থ্রিপিচ আর হলুদ হিজাব পড়ে কলেজে আসে,,, ঘাড়ে ব্যাগ,, হাতে ঘড়ি,, পায়ে ফ্লাট শু। রাস্তায় বিভিন্ন ছেলে ওকে টিজ করে কালো বলে নয়,,, দিয়ার দৈহিক গঠন দেখে। দিয়ার শরীরের গঠন অল্প সময়ের মধ্যে যে কাউকে আকর্ষিত করতে পারে। সেদিন ছিলো দিয়ার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী,,, তাই দিয়া তার মায়ের কবর জিয়ারত করেই কলেজে এসেছিলো।কিন্তু হঠাৎ তিন চারটা ছেলে এসে ওর ব্যাগ কেড়ে নেয়। দিয়া প্রথমে রেগে গেলেও নিজের রাগ সংবরণ করে কারন আজ মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী। দিয়া শান্ত স্বরে বলে,,,
—- ব্যাগটা দিয়ে দাও। আজ কোনো ঝামেলা করতে চাচ্ছি না আমি।
একটা ছেলে রাগে ফোসতে ফোসতে বলে,,,,
—- সেদিনের বদলা আজ নিবো। সেদিন তো খুব মেরেছিলি আমাদের আজ মার..?
—- কি চাও তোমরা..??
—- তোর এই সুন্দর শরীরটা।
দিয়ার গাল থেকে শুরু করে হাত, পেট অবধি স্লাইড করে বললো । রাগে দিয়া হাত মুঠোবন্দি করে ফেললো। দিয়ার গলার কাছে একটা গাঢ় তিল আছে,, ছেলেটা ওই তিলে হাত বুলিয়ে, হাত টা মুখে নিয়ে চুঁমু খেলো।
—- নিজের হাতে চুমু খেলাম তাই এতো তৃপ্তি। তোর দেহটা যখননননয। আহহ ভাবতেই শান্তি লাগছে।
আরেকটা ছেলে এসে এক টানে দিয়ার হিজাব খুলে ফেলে,,,পিন লেগে দিয়ার কপাল ছিলে রক্ত বের হয়ে যায়।তবুও দিয়া শান্ত আছে। এবার ওরা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে লাগলো,,,
—- দোস্ত মেয়েটাকে এক রাতের জন্য ফ্লাটে নিয়ে যাই চল।
—- ফিগার দেখে তো আমার আর অপেক্ষা করতেই ইচ্ছা করছে না। মনে চাচ্ছে এখানেই সব করে ফেলি।
কলেজের সবাই দাড়িয়ে দাড়িয়ে সার্কাস দেখছে এমন সময় তিথি ( দিয়ার ফ্রেন্ড ) আসলো কলেজে। দিয়াকে ওভাবে দেখে ও দৌড়ে দিয়ার কাছে যায়। অমনি ছেলেগুলো বলে উঠলো,,
—- এই মালটাও সেই। যেমন ফর্সা তেমন বডি। আজ দুজন আমাদের ভালোই সুখ দিবে। ফর্সাটাকে কিন্তু আমি আগে নিবো।
দিয়ার পক্ষে নিজেকে আর কন্ট্রোল করা সম্ভব না। ওর নামে বলেছে যখন তখন ও সহ্য করে নিয়েছে। কিন্তু ওর বেস্ট ফ্রেন্ডকে নিয়ে একটা কথা বলা মানে হসপিটালের বেডকে আমন্ত্রণ করা।
—- ভেবেছিলাম আজ তোদের কিছু করবো না। কিন্তু তোরা নিজেরাই চাচ্ছিস হসপিটালে যেতে। তাই তোদের ইচ্ছাটাকেই সমর্থন জানালাম।। আমার সাথে প্রথম কে রাত কাটাতে চেয়েছিলি..?? তুই তাইনা..?( একটা ছেলের কলার ধরে সামনে আনলো ) আগে দিনটা কাটা তারপর রাতের কথা চিন্তা করিস।
ছেলেটার বুকের পাজরে জোরে লাথি দিলো,,, মুখ থুবড়ে নিচে পড়ে গেলো ছেলেটা। দিয়া গিয়ে ছেলেটার কলার বাম হাত দিয়ে ধরে ডান হাত দিয়ে ওর মুখে পাঞ্চ দিতে লাগলো।নাক ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। পেছন থেকে একটা ছেলে গিয়ে দিয়াকে জোরে ধাক্কা দেয়। ছিটকে পড়ে যায় দিয়া।
—- পেছন থেকে আঘাত করার অভ্যাস তোদের আর গেলো না। কোনো ব্যাপার না আমি তো সামনে থেকে মারতেই অভ্যস্ত।
পাশে থাকা একটা লাঠি উঠিয়ে নিলো,,, ছেলে গুলোও ছুরি বের করলো,,,
—- ভালোই করেছিস। নিরস্ত্রদের ওপর এট্যাক করতে আমারও ভালো লাগে না।
বলেই লাঠি দিয়ে বারি দিতে লাগলো। মারতে মারতে রক্তাক্ত করে ফেলেছে,,, তবুও দিয়া থামছে না। ওদিকে ছেলেগুলো মারবে কি? নিজেদের রক্ষাটাই ঠিকভাবে করতে পারছে না। এবার কিছু ছেলে আসলো দিয়াকে থামাতে। অমনি দিয়া বলে উঠলো।
—- এতোক্ষন যেমন সার্কাস দেখেছো তেমন দেখো নাহলে পরিনাম খুব একটা ভালো হবে না।
ছেলেগুলো পিছিয়ে গেলো। দিয়া নিজের সমস্ত রাগ ওদের ওপর ঝেড়ে তিথিকে নিয়ে ক্যান্টিনে গেলো। টিয়া আগে থেকেই ওখানে ছিলো।দিয়া চেয়ারে বসেই তিনগ্লাস পানি একবারে খেয়ে ফেললো,,, মাথাটা ঝিমঝিম করছে ওর কারন এতোক্ষন রক্তের মাঝে ছিলো,, টিয়া দিয়া মাথায় হাত দিয়ে বললো,,
—- ঠিক আছিস তুই..?? কোথায় ছিলি এতোক্ষন।
তিথি টিয়াকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলে,,,টিয়া গালে হাত দিয়ে কিছুক্ষন দিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর ব্যাগ থেকে গ্লুকোজ আর স্যালাইন বের করে একসাথে গুলিয়ে দিয়াকে খাইয়ে দেয়।
—- ইটস অকে বেবি। এটা তো তোর রেগুলার রুটিন। কিছুক্ষন রেস্ট নে ঠিক হয়ে যাবি। তিথি তোর খবর কি…??
—- ক্রাশ খাইনি আজ।
—- লুচি মাইয়্যা আমি এক্সামের কথা বলছি,,, উইকটেস্টের কি খবর? পাশ করবি তো এবার..?? নাকি ফেইল করবি..??
—- টুকে দিবো দিয়ার খাতা দেখে। পড়ার টাইম আছে নাকি…?? সারাদিনই তো ক্রাশ খুজতে ব্যাস্ত থাকি।
—- দেখিস সব ক্রাশ হয়ে,,, টাকলা বুইড়্যা যেন বর না হয়। তোরে তো আবার বিশ্বাস নাই,,, দেখা গেলো একদিন ৫০+ বছরের একটারে এনে বললি ” এই নে তোদের দুলাভাই” ভীষন লজ্জা পাবো তখন।
—- টিয়ার বাচ্চা টিয়া তোরে তো আজজজজ
শুরু হয়ে গেলো অলম্পিকের দৌড়। দৌড়ে অবশ্য টিয়াই ফার্স্ট হয় তবুও তিথি কষ্ট করে দৌড়ায়,,, দূরে গাড়িতে বসে একজন এগুলো পর্যবেক্ষণ করছে আর রহস্যময় হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলছে নিজের মুখে।
ক্লাসে,,,, দিয়া তিথি এক বেঞ্চে আর টিয়া সামনের বেঞ্চে বসেছে,,, সেকেন্ড পিরিওড শুরু হবে এমন সময় প্রিন্সিপাল দিয়াকে নিজের কেবিনে ডেকে পাঠায়।
—- মে আই কাম ইন স্যার..??
—- কাম।
—- ডেকেছেন স্যার..??
—- দিয়া তোমাকে কিছু কথা জানিয়ে রাখি। প্রথমত এটা কলেজ গুন্ডামি করার জায়গা না। দ্বিতীয়ত তুমি যাদের মেরেছো তারা কে জানো..?? আমার ভাই এর ছেলে। ওদের মারার শাস্তি কি সেটা জানো.?? তোমাকে যদি কলেজ থেকে রাস্ট্রিকেট করে দেই..?? তখন কি করবে লাইফটাই তো শেষ হয়ে যাবে। তাই এটাই ভালো হবে যে তুমি ওদের কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নাও। আর হ্যা ভবিষ্যৎ এ কখনো লাগতে এসো না কেমন..
—- টিসির এপ্লিকেশন জমা দিবো নাকি রাস্ট্রিকেট করবেন..?? চয়েজ ইজ ইউর্স।
দিয়ার কথা শুনে প্রিন্সিপাল হা হয়ে গেলো। মেয়েটা কলেজ ছাড়তেও রাজি..??
—- নিজের লাইফ এভাবে শেষ করবে…??
—- ওরা যদি আপনার ছেলেও হতো তবুও আমি মারতাম। আর ক্ষমার করার প্রশ্নই আসে না। ওরা অন্যায় করেছে আমি শাস্তি দিয়েছি। ব্যাসস এরপর তো কোনো কথা থাকার কথা না..
—- শাস্তি দেওয়ার মতো মানুষ কি তুমি একাই আছো..?? এবার তো তুমি শাস্তি পাবে। তোমাকে রাস্ট্রিকেট করা হবে।
—- ধন্যবাদ স্যার।
কেবিন থেকে বেরিয়ে আসলো দিয়া,,,, চোখের পানি মুছতে মুছতে ক্লাসে যায়। ওকে দেখে টিয়া জিজ্ঞাসা করে,,
—- বেবি কাঁদছিস কেন..? কি হইছে..??
—- আমাকে রাস্ট্রিকেট করা হবে। সকালের মারামারির জন্য।
তিথি উঠে বললো।
—- আঁধা ঘন্টা টাইম দে। তারপর দেখ কে কি করে। কার কি হয়। এমনিতেও শুনেছি ওই বুড়াটারে কেউ পছন্দ করে না। তার ওপর এতো রং তামাশা।
দিয়া জানে তিথি এখন কি করবে তাই তিথিকে মানা করার জন্য বাইরে ছুট লাগায়। কিন্তু কাজ হয়না। তিথি মাইক নিয়ে মাঠের মাঝে দাড়িয়ে আছে।
—- এটেন্শন প্লিজ। গিভ মি সাম টাইম।
তিথির এমন মাইকিং দৃশ্য দেখে সবাই দাড়িয়ে যায়। তিথি বলতে শুরু করে,,
—- আপনাদের কাছে দুইটা কথা জানতে চাই। প্রথম কথা,,,, মেয়েদের সম্মান বড় নাকি টাকাওয়ালা ছেলে..?? ভালো ছেলে না খারাপ বেয়াদব লম্পট ছেলেদের কথা বলেছি।
সবাই থতমত খেয়ে উত্তর দিলো।
—- মেয়েদের সম্মান।
তিথি আবার বললো,,,,
—- আজ সকালে আমি আর দিয়া কিভাবে হ্যারাস হয়েছি দেখেছো সবাই। দিয়া ছেলে গুলোকে মেরেছে দেখে প্রিন্সিপাল ওকে রাস্ট্রিকেট করে দিতে চায়। এখন বলো দিয়ার জায়গায় তোমরা থাকলে বা তোমাদের বোন থাকলে তোমরা কি করতে…??
সবাই এবার একে অন্যের মুখের দিকে চাওয়াচাওয়ি করছে। নিজের সম্মান বাঁচানোর জন্য কাউকে আঘাত করা নিশ্চই খারাপ কাজ না। দিয়া ক্লাস মেট নুহা বলে উঠলো,,,
—- দিয়া যা করেছে সেটা করার সাহস না থাকলেও,,,, সেটা করারই চেষ্টা করতাম। কারন দিয়া অন্যায় কিছু করেনি। প্রতিটা মেয়ের কাছে নিজের সম্মান সবচেয়ে বেশি দামি। সে সম্মানে যে হাত দিবে তার হাত ভেঙে দেওয়া উচিত। দিয়াকে যদি রাস্ট্রিকেট করা হয় তাহলে আমরা সবাই টিসির জন্য এপ্লাই করবো।
সবাই মাথা নেড়ে নুহাকে সমর্থন করলো কারন নুহা এই খুলনার দুই কমিশনারের মেয়ে এবং ভাগ্নি। সেই সাথে ওর কথায় কোনো ভুল নেই। তিথি বললো,,,,
—- কারেক্ট।
দোতলায় দাড়িয়ে টিয়া আর দিয়া তিথির কান্ড দেখছে। টিয়া, দিয়াকে চিমটি দিয়ে বললো,,,
—- আমাদের তিথি স্কুলের মতো কলেজেও নিজের বৈশিষ্ট্য ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে।
—- এটা যেন ওর কাল না হয়… তিথিকে এসবের থেকে দূরে রাখতে হবে।
—- তুই কি বলতে চাচ্ছিস… সবার টার্গেট তিথির ওপর পড়বে..??
—- তিথি সেল্ফ ডিফেন্সের কিচ্ছু জানে না। হুট করে কোনো ছেলের সামনে পড়লে নিজেকে রক্ষা করবে কিভাবে..?আমার জন্য এগুলো করে ও নিজের বিপদটাকেই ডেকে আনছে।
—- শুধু নিজের বন্ধুত্বটাই দেখিয়ে যেতে চাস্..?? তুই আমাদেরও বন্ধু তোর জন্য এতোটুকু করা তেমন বড় বিষয় না। সবসময় তুই আমাদের জন্য করবি আমাদের ঋনি বানিয়ে রাখবি সেটা তো হবে না।
—- তোর জ্ঞান তোর পকেটে রাখ।
—- পকেট নাই।
—- জামার ভেতর ঢুকিয়ে রাখ। বান্দর।
টিয়া হাসতে হাসতে তিথির কাছে যায়। ওদিকে প্রিন্সিপাল নিজে আসে দিয়ার কাছে,,,
—- একদিনেই কলেজ হাত করে ফেলেছো..??
—- আফসোস আপনি এতোদিনেও সেটা করতে পারেননি। যাই হোক রাস্ট্রিকেটের কথা ভুলে যান। নাহলে কলেজে টিকতে পারবেন না। এটা আমার কথা না সারা কলেজের স্টুডেন্টদের কথা।
—- আই উইল সি ইউ।
—- সবাই দেখছে,,, আপনিও দেখবেন। সমস্যা তো কিছু নেই।
রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো প্রিন্সিপাল। দিয়া তিথিদের কাছে আসে।
—- তোরা বাড়ি যাবি..??
—-মাত্র দুপুর হলো। এখন বাড়ি..?? ওহ তোর তো আবার বাড়ি অনেক কাজ। চল তোকে হেল্প করি।
—- আমি পারবো তোরা থাক এখানে।টাটা কাল দেখা হবে। সাবধানে থাকিস।
—- তুইও সাবধানে যা। আর শোন যাওয়ার আগে ডক্টরের কাছ থেকে ঘুরে যা।
—- হুম।
দিয়া ওখান থেকে বেরিয়ে রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছে। হঠাৎ ওর মাথা ঘুরে আসে। আর পড়ে যেতে লাগলেই কেউ একজন এসে ওকে ধরে ফেলে। দিয়ার যখন জ্ঞান ফেরে তখন ও একটা চলন্ত গাড়িতে কারোর বুকে মাথা রেখে বসে আসে।। দিয়া চোখ পিটপিট করে তাকাতেই পাশের সূদর্শন পুরুষকে দেখে চমকে যায়,,,
—- এই কে আপনি…? আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন…?? গাড়ি থামান। থামান বলছি।
—- ভয় পেও না। ( শীতল, স্থীর কন্ঠ )
—- এতোক্ষন ভয় পাইনি কিন্তু আপনার ঠান্ডা কোল্ড-ড্রিংকস এর গলা শুনে সত্যিই ভয় লাগছে।
দিয়ার কথায় মুচকি হাসলো লোকটা। তারপর পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বললো,,,
—- পানি খাও।
—- গাড়ি থামাতে বলেন। আর কে আপনি..?? আমি এখানে কিভাবে এলাম
—- উড়ে উড়ে।
—- মাথার সব তার লুজ নাকি..??আমি উড়ে উড়ে আসবো..? আমার কি ডানা আছে..?
—- চুপ করে বসো নাহলে কিন্তু তোমাকে পাঁচার করে দিবো।
—- দেখে তো মেয়ে পাঁচারকারি বলে মনে হয় না। বাদ দিন ঠান্ডা মাথায় জিজ্ঞাসা করছি। নাম কি আপনার..??
—- রওশন ইয়ারাভ।
—- কিউট নেম। তা আমাকে তুলে আনলেন কেন..??
—- রাস্তায় একটা মেয়ে সেন্সলেস হয়ে পরে যাচ্ছিলো তাই দয়া করে গাড়িতে তুলে নিলাম।
—- ধন্যবাদ। দয়া করার জন্য। তবে এখন নামিয়ে দিতে পারেন। আমি একদম ফিট এখন।
—- চেক করে দেখতে হবে।
—- কি…?? কি চেক করবেন
—- হসপিটালে যাচ্ছি। তোমার কি হয়েছে সেটা জানার জন্য। তখন ক্যান্টিনে,, আর এখন রাস্তায়। এভাবে টাল খাও কেন…??
—- ওসব জেনে আপনার লাভ নাই। কোথা থেকে উড়ে আসলেন আল্লাহই জানে,,,
—- ঢাকা থেকে এসেছি। তোমাদের কলেজ থেকে কিছু বেস্ট স্টুডেন্ট বেঁছে আমাদের কলেজে নিয়ে যাবো।
—- টিচার..?
—- হুম। ( আই হোপ তোমার কাছে আসার একটা সুযোগ পেয়ে গেলাম দিয়া। এবার তোমার মনের কাছে যাওয়ার সুযোগ খুজতে হবে আমায়। )
—- তবে এবার আমাকে বাড়ি ফিরতেই হবে। আমার অনেক কাজ আছে।
—- কি..??
—- আজ আম্মুর মৃত্যুবার্ষিকী। বাড়ি আব্বু একা আছেন। মিলাদের ব্যবস্থা করতে হবে।
কথাটা শোনা মাত্রই রওশন ড্রাইভারকে গাড়ি ব্যাক করতে বলে,,, রওশন দিয়ার বলা এড্রেসে আসে,,, দিয়া হাতের ইশারায় বলে
—-ওটা আমাদের বাড়ি।
রওশন দোতলা একটা বাড়ি দেখতে পায়,,, বেশিদিনের পুরোনো না হলেও ভুতুরে টাইপের বাড়ি। দিয়া কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য রওশনকে বাড়ির ভেতরে আসতে বলে,,, কিন্তু রওশন সোজা না করে দেয়। তবুও দিয়া নাছোড়বান্দা
—- এতোটা হেল্প করলেন। আরেকটু কষ্ট করে ভেতরে আসুন না,,,নাহলে খারাপ লাগবে আমার। প্লিজজজ
এবার আর না করতে পারলো না রওশন। অস্বস্তি নিয়েই ভুতের বাড়িতে ঢুকলো,,, কিন্তু এই অস্বস্তি বেশিক্ষন টিকলো না। অদ্ভুদ রকমের সুন্দর বাড়ির ভেতরটা। নীল আর সাদা রং এর বাড়িটা বিভিন্ন সোপিস দিয়ে সাজানো। রওশন আরেকটু ভেতরে যেতেই অনেক মানুষ দেখতে পেল,,, তারা হাতে হাতে বিভিন্ন কাজ করছে। কিন্তু দিয়াকে দেখেই সবাই একসাথে বেরিয়ে গেলো। রওশন প্রশ্ন করলো,,
—- তোমাকে দেখে সবাই বেরিয়ে গেলো কেন..??
—- ওরা শুকনো চিড়া ভাজতে আসছিলো,, আমি আসায় সেই লক্ষ্য ব্যার্থ হয়ে গেছে তাই চলে গেছে।
—- মানে..??
—-ওনারা আব্বুকে,,, আমার আর আম্মুর নামে কটু কথা শুনিয়ে উত্তেজিত করতে এসেছিলো। আব্বু হার্টের পেসেন্ট অলরেডি দুবার হার্ট এট্যাক করেছেন,,,এবার যদি কোনো প্রবলেম হয় তাহলে আব্বুকে আর,,
—- তোমার আব্বুকে মেরে ওদের কি লাভ..??
—- এই বাড়িটা।আব্বু মারা গেলে এই বাড়িটা আমার ছোট চাচার ছেলেদের নামে হয়ে যাবে। কারন আমি মেয়ে সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ পাবো আমি। যা পাওয়া আর না পাওয়া সমান।
—- তাহলে তোমার এই কঠিন রূপ।সম্পত্তির জন্য…??
—- নাহ। আব্বুর জন্য। এই বাড়িটা আব্বুর কাছে নিজের প্রাণের চেয়েও প্রিয়। আম্মুর প্রতিটা সৃতি এবাড়িতে মিশে আছে,, যেটা আকড়ে ধরে আব্বু বাঁচতে চায়।
—- তুমি কি চাও..??
—- আব্বুকে ভালো রাখতে চাই।
—- আর নিজের জন্য..?? আচ্ছা কেমন বর চাও তুমি..
—- আমার মতো শ্যামলা মেয়েকে ভালোবেসে কেউ ঘরের বউ বানাতে চাইবে না। আসলে আমাকে ভালোবাসার মতো মন কারোর নেই। এপর্যন্ত যাদের দেখেছি সবাই আমার শরীরের জন্য আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছে। কেউ ভালোবাসতে চায়নি।আমাকে বুঝতে চায়নি। নিজেকে অনেক কষ্টে এখনো টিকিয়ে রেখেছি নাহলে সেই কবেই মানুষের ভোগের বস্তু হয়ে যেতাম।
—- এসব কে কে জানে..??
—- তিথি, টিয়া, সবুজ আর আপনি।
—-সবুজ কে..??
—- বেস্টু। বাদ দিন সেসব বসুন আমি আপনার জন্য কিছু বানিয়ে আনি।
সেদিন আর রওশন ঢাকায় ফেরেনি,, দিয়ার কাছেই ছিলো,,, দিয়াকে সারাদিন হেল্প করেছে। এমনকি দিয়ার আব্বুকে একজন হার্ট সার্জনের কাছেও নিয়ে গেছে,,,,দিয়া প্রথমে মানা করলেও আব্বুর কথা ভেবে রওশনের জেদের কাছে হার মানে।
—-আপনার এই ঋণ আমি জীবনেও ভুলবো না। যদি কখনো সুযোগ পাই তাহলে ঋণ শোধ করার চেষ্টা করবো।
—- রিটার্ন জিনিসটা আমি নিজেই চেয়ে নিবো। এটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। তুমি শুধু নিজের সত্ত্বাকে এভাবেই টিকিয়ে রেখো। কাল দেখা হবে।আজ আসি।
চলে গেলো রওশন। দিয়া ফ্যালফ্যাল করে রওশনের গাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে,,, রওশনের সম্পর্কে একটা কথাই বারবার দিয়ার মাথায় আসছে,,,
—- #অদ্ভুদ_মানুষটা। এখনকার দিনে অজানা অচেনা একটা মেয়ের জন্য এতোটা কেউ করবে..??? সে করলো।আর একটা ধন্যবাদ দেওয়ারও সুযোগ দিলো না। ধুররর ভাল্লাগে না। কাল ধন্যবাদ দিয়ে দিবো। কিউট স্যার।
চলবে,,,