#তোমাতে বিলীন🍁
#লেখিকা—আমায়া নাফশিয়াত ☘
#পর্ব—|| ২৪ ||
গাড়িতে সারা রাস্তা পাগলামি করলো ঊদিতা।তার নেশা পুরোপুরি চড়ে গেছে।আশিয়ান টেনশনে শেষ।প্রায় উড়ে উড়ে যেন ঊদিতাকে নিয়ে বাসায় আসলো আশিয়ান।সবাই সবার রুমে আছে।নিচে সার্ভেন্ট ব্যতিত আর কেউ নেই তাই ঊদিতাকে নিয়ে খুব সহজেই নিজের রুমে চলে এলো সে।রুমে এসে ঊদিতাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে নিজের কোট ওয়াচ সব খুলে টেবিলের ওপর ফোন রেখে একটা ওড়না দিয়ে ঊদিতার দুহাত বেঁধে দিলো যাতে সে পাগলামি না করে।ঊদিতাকে চুপচাপ বসতে দেখে সে নিচে রান্নাঘরে গেল ঊদিতার জন্য তেতুল গোলা পানি বানিয়ে আনতে।
ঊদিতা এমনিতেই পাগলের মতো হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে।জোরে এক উল্টো টান মারতেই ওড়না ঢিলা হয়ে গেল।ঊদিতা ওড়না খুলে নিচে ফেলে দিয়ে আশিয়ানের কাবার্ড খুললো।তারপর সেখান থেকে সব শার্ট প্যান্ট এখানে সেখানে ছুড়ে ফেলতে ফেলতে সবশেষে আশিয়ানের ব্যবহৃত একটা পাতলা একদম হালকা ঘি কালার শার্ট তার পছন্দ হলো।শার্টটা নিয়ে সে রুমের ভেতরই নিজের গা থেকে কাপড় চোপড় সব খুলে ছুড়ে ফেলে দিয়ে শার্টটা পড়ে নিলো।শার্টের বোতাম উল্টা পাল্টা করে লাগিয়েছে সে।
জোশের ঠেলায় আশিয়ানের রুমের গান শোনার স্পিকার বক্স অন করে ফেললো সে।রুমে বেশ উচ্চস্বরে গান বাজছে।যদিও রুম সাউন্ড প্রুফ হওয়ায় বাইরে অন্য কারও কানে সাউন্ড যাবে না গানের।
আশিয়ান খুব দ্রুত তেঁতুলের জুস বানিয়ে জলদি রুমে ফিরে এলো।রুমে ঢুকে রুমের এ অবস্থা দেখে হতবাক হয়ে গেছে সে।কিছু বলার মতো নেই তার।এটাকে দেখে রুম মনে হচ্ছে না মনে হচ্ছে কোনো মাছ বাজারে ভুল করে ঢুকে পড়েছে সে।সেন্টার টেবিলের ওপর গ্লাসটা রেখে ঊদিতাকে খুঁজতে লাগলো তার চোখ জোড়া।রুমের কোথাও দেখা যাচ্ছে না তাকে।
‘কোথায় গেল মেয়েটা?উফফ,,,মাথাটা নষ্ট করে দিলো পুরো!কোন আক্কেলে যে একা ছেড়েছিলাম তাকে!এখন নিজের মাথা নিজেই ফাটাতে ইচ্ছে করছে আমার!’বিরবির করে বলে আশিয়ান।
জোরে জোরে গান বাজছে,, “মেইন লারকি সিধি সাধি সি,,, বোটল পি লি হে আধি সি”
এমন সময় হেলেদুলে বারান্দার ভারী পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো ঊদিতা।আশিয়ান ঊদিতার দিকে তাকিয়ে থমকে গেল।অজান্তেই একটা ফাঁকা ঢোক গিললো সে।ঊদিতাকে এমন রূপে কখনো দেখে নি সে এর আগে।
নরমালি চুল ছাড়া অবস্থাতেই ওকে দেখলে নেশা লেগে যেত আশিয়ানের,,সেখানে আজ ঊদিতার পরনে আশিয়ানের ফিনফিনে পাতলা একটা শার্ট যার ভেতর থেকে ডার্ক এশ কালারের অন্তর্বাসগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।এর মধ্যে আবার তার কোমড় অবধি চুলসব ছেড়ে দেয়া।শার্টের ওপরের দুটো বোতাম খোলা বিধায় শার্টের হাতা কাঁধ বেয়ে নিচে পড়ে আছে।ঊদিতা এমনিতেই চিকনা চাকনা মেয়ে তার মাঝে আশিয়ানের মতোন বডিবিল্ডার একটার শার্ট পড়েছে।ঢিলাঢালা তো হবেই।
শার্টটা ঊদিতার হাঁটু অবধি ঝুলে আছে।এর নিচে ধবধবে ফর্সা পা দেখা যাচ্ছে তার।আশিয়ানের মাথা ঘুরে উঠে ঊদিতার এমন অবস্থা দেখে।নিজেকে অনেক কষ্টে কন্ট্রোল করে ঊদিতার কাছে যেতে লাগলো সে।ঊদিতা গানের তালে তালে পাগলের মতো হাসছে আর লাফাচ্ছে।সে মোটেও নিজের হুঁশে নেই।আশিয়ান কাছে আসার আগেই ঊদিতা আশিয়ানের কাছে এসে আশিয়ানের শার্টের কলার খামচে ধরে মাতাল কন্ঠে বললো;
ঊদিতা:-শালা,,এত সুন্দরী বউ রেখে এক্সের সাথে পিরিত করোস!এত্ত কিসের প্রেম রে তোর এক্সের জন্য?আমাকে কী চোখে লাগে না?হে?এখনও এক্স ছাইড়া গেছে দেইখা শোক দিবস পালন করোস?তোর সাতজন্মের কপাল আমার মতো মেয়ে তোর বউ হইছে,,নইলে তোর মতো ছ্যাঁকাখোরকে কে বিয়ে করতো!বল!খবিশ পোলা!(পাগলের মতো বিরবির করে)
ঊদিতার বলা কথা শুনে আশিয়ান রাগে দাঁত কিড়মিড়িয়ে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নিজেকে শান্ত করলো।মনকে শান্তনা দিয়ে বললো;
আশিয়ান:-ওহহ,,আশিয়ান কন্ট্রোল ইউরসেল্ফ!ও এসব নেশার ঘোরে বলছে!নইলে ঊদিতা এমন না।ও খুব ভালো মেয়ে।
ঊদিতা আশিয়ানের গলা জড়িয়ে ধরে ঢুলে ঢুলে আশিয়ানের গালে চুমু খেয়ে বললো;
ঊদিতা:-কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে খালি তাকিয়ে দেখিস!তোর চোখ দুইটা খুলে নিয়ে জাদুঘরে রাখমু!চিনিস না তো তুই আমারে আমি কে?আমি,,হিক,,,ঊদি,,,হিক,,,(হেঁচকি দিয়ে)
আশিয়ান ঊদিতাকে জোর করে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে শান্ত কন্ঠে বললো;
আশিয়ান:-ঊদিতা!এরকম পাগলামি করে না তো!তুমি না এত ভালো মেয়ে!তাহলে আজ এরকম করছো কেন?আসো একটা মজা খাওয়াবো তোমাকে!
ঊদিতা:-কীসের,,হিক,,মজা,,?(ঢুলতে ঢুলতে)
আশিয়ান:-খেয়ে দেখোই না কীসের মজা?
এই বলে আশিয়ান ঊদিতাকে দুহাত দিয়ে আগলে ধরে ধরে সেন্টার টেবিলের কাছে নিয়ে এলো।তারপর গ্লাসটা হাতে নিয়ে ঊদিতাকে ছলেবলে কৌশলে শরবতটা জোর করে খায়িয়ে দিলো।এটা খাওয়ার পর হড়হড় করে ঊদিতা আশিয়ানের গায়ে বমি করে ভাসিয়ে দিলো।আশিয়ান হতভম্ব হয়ে গেছে পুরো।ইয়াক কী বিশ্রী গন্ধ করছে শরীরে।আশিয়ান জলদি ঊদিতাকে বিছানায় বসিয়ে একদৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।আশিয়ান কখনোই এমন বাজে পরিস্থিতিতে পড়ে নি।আজ এভাবে হেনস্তা হতে হবে ভাবতে পারে নি সে।
ঊদিতা বমি করে দূর্বল শরীর বিছানায় এলিয়ে দিলো।তারপরও নেশা কাটছে না তার।কী একটা অবস্থা।ঊদিতা এখনও পাগলের মতো বিরবির করছে।একবার আশাকে গালি দিচ্ছে,একবার আলেয়াকে বকছে,একবার আশিয়ানের চৌদগুষ্টি উদ্ধার করছে তো একবার ইলিয়ানার পিন্ডি চটকাচ্ছে।শান্তি পাচ্ছে না যেন সে।
আশিয়ান শাওয়ার সেড়ে ওয়াশরুম থেকে খালি গায়ে কোমড়ে একটা টাওয়েল জড়িয়ে বেরিয়ে এলো।ঊদিতা বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে শুয়ে পা দোলাচ্ছে।ভালো নেশায় পেয়েছে তাকে।কখন যে এই নেশা ছুটবে জানা নেই আশিয়ানের।আশিয়ান একটা শর্ট টাউজার পড়ে নিচ থেকে একজন সার্ভেন্টকে নিয়ে এলো।সার্ভেন্ট এসে রুম পরিষ্কার করে দিয়ে গেল।আশিয়ান এবার ঊদিতার দিকে নজর দিলো।ঊদিতা হেসেই যাচ্ছে।কোনো থামাথামি নেই।আশিয়ান এবার ঊদিতার কাপড় পাল্টানোর তাগিদ অনুভব করলো কারণ ওর পরনের শার্টটাও বমিতে ভরে গেছে।
আশিয়ান আলমারি থেকে একটা নাইটি নিয়ে এলো।এখন সেলোয়ার-কামিজ পড়াতে গেলে আরও ঝামেলা পোহাতে হবে তাই শর্টকাট বুদ্ধি করে নাইটি পড়ানোর চিন্তা করলো সে।
ঊদিতার পাশে বসে দুরুদুরু বুকে ঊদিতার শার্টের বোতামে হাত দিলো আশিয়ান।কেমন জানি একটা সংকোচ অনুভব হচ্ছে তার।নিজেকে কেন যেন পাগল পাগল মনে হচ্ছে।এত চিন্তা ভাবনা না করে লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে দ্রুত ঊদিতার পরনের শার্টটা খুলে ফেললো সে।তারপর আরও দ্রুত নাইটিটা পড়িয়ে দিলো।ঊদিতা বুঝতেই পারছে না যে কেউ তার পরনের জামা চেঞ্জ করে দিয়েছে।আশিয়ান ঊদিতাকে একটা বালিশে শোয়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু তার আগেই ঊদিতা শোয়া থেকে ওঠে বসে গেছে।
আশিয়ান জোর করে ঊদিতাকে নিজের কাছে টেনে নিলো।কিন্তু ঊদিতা আশিয়ানের হাতে নিজের ছোট ছোট ইদুরে দাঁত দিয়ে কুট্টুস করে কামড় বসিয়ে দিয়ে ততক্ষণে আশিয়ানের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে।আশিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে কামড়টা সহ্য করলো।মেয়েটা এত বিচ্চু জানা ছিলো না তার।মদ খাওয়ার পর যেন আসল চেহারা বেরিয়ে আসছে তার।
ঊদিতা পুরো রুম জুড়ে চরকার মতো লা লা লা লা বলে ঘুরছে।ঘুরতে ঘুরতে ঠাস করে মাটিতে পড়ে গেল সে।ঊদিতা বাচ্চাদের মতো ইনোসেন্ট চেহারা করে ঠোঁট উল্টে বললো;
ঊদিতা:-যাহ,,,পড়ে গেলাম!
আশিয়ান রাগের ঠেলায় গমগমে গলায় বললো;
আশিয়ান:-খুব ভালো হয়েছে।আমি খুশি হয়েছি।
ঊদিতা চোখ ছোট ছোট করে আশিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো;
ঊদিতা:-গম্ভীরমুখো বলদ একটা!জীবনে তো হাসতে পারোস না,,,এখন আসছিস আমার মতো বাচ্চাকে খোঁচা দিতে তাই না?এক থাবড় মাইরা আন্ধাইর কইরা দিমু!চিনোস আমারে?
আশিয়ান:-শাটআপ,,,তোমার সাহস তো কম নয় আমার সাথে গলাবাজি করে কথা বলো আবার আমাকে ইনসাল্ট করো!এক আছাড় মারবো তুলে বেয়াদব মেয়ে!(ধমক দিয়ে)
ঊদিতা ভেঙচি কেটে ঢুলুঢুলু কন্ঠে বললো;
ঊদিতা:-সাহস থাকলে মেরে দেখা।তোর হাড্ডি যদি গুঁড়া না করছি আমি!আমাকে আইসা ধমক মারে!এত সাহস কে দিসে তোরে?হে?চাকর চাকরের মতো থাকবি,,মনে রাখিস আমি তোর মালকিন!(চুল দুহাত দিয়ে মুঠ করে ধরে)
আশিয়ান:-হোয়াটট?এসব কী বলছে পাগল মেয়ে?মাথা খারাপ নাকি!দূর যা আমিও আরেক পাগল,,মাতালের সাথে আমিও কীসব কথা বলছি।ও নিজের হুঁশে এসব বলছে না।মদ খেয়ে ওর এই অবস্থা।
আশিয়ান নিজেকে বুঝ দিয়ে বসা থেকে ওঠে স্পিকার বক্স অফ করে দিলো।তারপর এগিয়ে এসে ঊদিতার পাশে নরম কন্ঠে বললো;
আশিয়ান:-ঊদিতা!তুমি না অনেক ভালো মেয়ে!
ঊদিতা আশিয়ানের মুখের কথা কেঁড়ে নিয়ে বললো;
ঊদিতা:-আমি জানি আমি ভালো মেয়ে!তোর বলতে হবে না!তুই যা তোর এক্সের কাছে।তোর এক্স তোর জন্য কুত্তার মতো ভেউভেউ করে কাঁদছে।(ঢুলে ঢুলে)
আশিয়ান নিজের কপালে চাপড়াচ্ছে ঊদিতার কথা শুনে।কী এক্স এক্স লাগিয়ে রাখছে।আশিয়ানের মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে প্রায়।নাহ সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠবে না।ঊদিতা এত ইজিলি ঘুমাবে না।তাই আশিয়ান নিজের চেস্ট অফ ড্রয়ার খুলে সেখান থেকে ফার্স্ট এইড বক্সটা নিয়ে খুলে কাঙ্ক্ষিত জিনিসটা খুঁজতে লাগলো।অবশেষে পেয়ে গেল একটা ঘুমের ইনজেকশন।
ইনজেকশন প্যাকেট থেকে বের করে আশিয়ান আস্তে ধীরে এগিয়ে এলো ঊদিতার দিকে।ঘুমের ইনজেকশন না দিয়ে উপায় নেই নয়তো সারারাত পাগলামি করে নিজেও ঘুমাবে না আশিয়ানকেও ঘুমাতে দেবে না।কালকে সকালে তার অফিসে যেতে হবে।জরুরি একটা মিটিং আছে।আশিয়ান ঊদিতার কাছে গিয়ে বসে ঊদিতাকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে চালাকি করে ঊদিতার বামহাতের বাহুতে ইনজেকশনটা পুশ করে দিলো।
ঊদিতা আশিয়ানের বুকে জোরে জোরে কিল মারছে।আশিয়ান ইনজেকশনটা দূরে ফেলে দিয়ে ঊদিতার দুহাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো।ঊদিতা পাগলা ষাঁড়ের মতো ছটফট করতে করতে একসময় নিস্তেজ হয়ে পড়লো।চোখ দুটো ঘুমে ঢুলছে তার।আশিয়ান বুঝলো ইনজেকশনে কাজ করতে শুরু করে দিয়েছে।
একটু পর ঊদিতা আশিয়ানের বুকে ঢলে পড়ে।আশিয়ান দুহাত দিয়ে আগলে নিলো তাকে নিজের বুকে।তারপর কোলে নিয়ে বিছানায় ঠিক মতোন শুয়িয়ে দিলো তাকে।দরজা, জানালা সব ভালো মতোন লক করে ঊদিতার পাশে এসে নিজেও শুয়ে পড়লো সে।ঊদিতার নিষ্পাপ মুখখানার দিকে তাকিয়ে রইলো সে পলকহীন ভাবে।সে বিশ্বাসই করতে পারছে না যে এই ঊদিতা এরকম পাগলামি করেছে।আশিয়ান খুব ভালো করে বুঝতে পারছে যে ইলিয়ানা এরকম করেছে ঊদিতার সাথে।চিত্রার কাছে শুনেছে ঊদিতা কীভাবে শান্ত কন্ঠে ইলিয়ানাকে অপমান করেছে।সব তার কানে এসেছে।আশিয়ান ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে মাহবুবকে ফোন করে একটা কাজ করে দিতে বললো।
ফোনে কথা বলা শেষে আশিয়ান ঊদিতার বুকে মাথা রেখে শান্তিতে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে গেল।
💭💭💭
সকালে ঘুম থেকে ওঠে গেল আশিয়ান।মসজিদে গিয়ে ফজরের নামাজটা আদায় করে নিলো।ইনজেকশনের প্রভাবে ঊদিতা এখনও মরার মতো ঘুমাচ্ছে।তাই আশিয়ান জাগালো না ঊদিতাকে।নিত্যদিনকার মতো ব্যায়াম করে গোসল সেড়ে নিচে নাশতা করতে চলে এলো।সবাই ডাইনিং রুমে উপস্থিত একমাত্র ঊদিতা বাদে।
মিসেস ইয়াসমিন ঊদিতার কথা জিজ্ঞেস করতেই আশিয়ান বললো যে তার শরীর খারাপ।এখনও ঘুমিয়ে আছে তাই সে জাগায় নি।কেয়া আর এনা তৎক্ষনাৎ ঊদিতাকে গিয়ে দেখে আসলো।মিসেস ইয়াসমিন এবং মিসেস তারানাও গিয়ে দেখে আসলেন তাকে।তাও ঊদিতা ঘুম থেকে জাগে নি।সবাই বেশ চিন্তায় পড়ে গেল।আশিয়ান তাদেরকে আশ্বস্ত করে বললো তেমন কিছু হয়নি।জাস্ট ওর শরীরটা দুর্বল।ঘুমালেই ঠিক হয়ে যাবে।আশিয়ানের কথায় সবাই আশ্বস্ত হয়ে ব্রেকফাস্ট করে নিলো।
আশিয়ান নাশতা করা শেষে রুমে গিয়ে রেডি হয়ে গেল অফিসে যাওয়ার জন্য।পুরোপুরি তৈরি হয়ে গাড়ির চাবি ও ফোন হাতে নিয়ে ঊদিতার কাছে গিয়ে উবু হয়ে ঊদিতার কপালে আলতো ভাবে একটা চুমু খেয়ে নিচে চলে এলো।তারপর দ্রুত বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
প্রায় এগারোটার দিকে ঘুম ভাঙলো ঊদিতার।চোখ পিটপিট করে চারপাশে তাকালো সে।ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই দ্রুত শোয়া থেকে ওঠে বসলো ঊদিতা।বুঝতে পারলো না এত বেলা হলো কখন!কেউ তাকে ডাকলোও না।নামাজটাও মিস গেল।আর আশিয়ানই বা কোথায়?মাথাটাও কেমন জানি তার ভার ভার লাগছে।শরীরটা বেশি দুর্বল লাগছে কেন জানি!কিছুই বুঝতে পারছে না ঊদিতা।
চিন্তিত ভঙ্গিতে বিছানা ছেড়ে ওঠে নিজের দিকে তাকিয়েই চমকে গেল সে।তার পরনে একটা শর্ট নাইট ড্রেস।আর কিছুই নেই।ছি,,,এই অবস্থায় সে আশিয়ানের সামনে ছিলো!ভাবতেই পারছে না ঊদিতা।লজ্জায় তার মাথা কাটা যাচ্ছে।কাপড় চোপড় সাথে নিয়ে জলদি ওয়াশরুমে গিয়ে একদম গোসল করে বের হলো ঊদিতা।শরীরটা এখন কিছুটা ঝরঝরে মনে হচ্ছে।সারা রুম অগোছালো হয়ে আছে দেখে ঊদিতা একটু অবাকই হয়েছে।সে বুঝতে পারছে না রুমের এমন অবস্থা কী করে হলো?অতশত চিন্তা না করে সারা রুম গোছালো সে।
সবকিছু পরিপাটি করে মাথায় ওড়না প্যাঁচিয়ে নিচে চলে এলো সে।বাসায় ছেলেমানুষ একজনও নেই।সবাই কাজে নয়তো ক্লাসে চলে গেছে।এনারও আজকে ক্লাস আছে।তাই সকালেই চলে গেছে সে।বাচ্চা দুটো স্কুলে।বাসায় শুধু আলেয়া,তারিন,কেয়া,মিসেস ইয়াসমিন,মিসেস তারানা আর সে-ই আছে।
ঊদিতা রান্নাঘরে গিয়ে মিসেস ইয়াসমিনকে পেল।মিসেস ইয়াসমিন ঊদিতাকে দেখে দ্রুত এগিয়ে এসে ব্যাকুল হয়ে ঊদিতার কপাল ও গলায় হাত দিয়ে চেক করে দেখলেন জ্বর এসেছে কিনা।
মিসেস ইয়াসমিন:-মা তোর বুঝি শরীর খারাপ?কী হয়েছে তোর?কালকে তো ভালো অবস্থায়ই পার্টিতে গেলি!
ঊদিতা অনিশ্চিত ভঙ্গিতে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো;
ঊদিতা:-কী জানি মা বুঝতে পারছি না কিছু।কালকে কি করে বাসায় এলাম কিছুই জানি না।ওনাকে জিজ্ঞেস করলে তবে জানতে পারবো আসলে কী হয়েছে!তবে শরীরটা ভীষণ ম্যাজম্যাজ করছে মা!আর মাথাটাও ভার ভার লাগছে।
মিসেস ইয়াসমিন ব্যস্ত হয়ে ঊদিতাকে ডাইনিং টেবিলে নিয়ে এসে একটা চেয়ারে বসালেন তাকে।ঊদিতাও বাধ্য মেয়ের মতো চুপচাপ বসে পড়লো।
মিসেস ইয়াসমিন:-তুই এখানে বসে থাক তো মা,,আমি তোর জন্য এককাপ কড়া লিকারের চা আর কিছু ভারী খাবার নিয়ে আসি।
মিসেস ইয়াসমিন রান্নাঘরে চলে গেলেন ঊদিতার জন্য খাবার আনতে।ঊদিতা চুপচাপ বসে রইলো।কিছুসময় পর মিসেস ইয়াসমিন একটা ট্রে হাতে নিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন।ট্রেতে রাখা কাপ ও বাটি থেকে গরম ধোঁয়া বেরোচ্ছে।ট্রে টা টেবিলের ওপর রেখে মিসেস ইয়াসমিন ঊদিতার সামনে একটা চেয়ার টেনে বসলেন।তারপর গরুর মাংসের বিরিয়ানির প্লেট হাতে নিয়ে ঊদিতাকে মুখে তুলে খায়িয়ে দিতে লাগলেন।ঊদিতাও বিনাবাক্যব্যয়ে গপগপ করে খেয়ে যাচ্ছে।আসলেই তার প্রচুর খিদে পেয়েছে।জানে না সেটা কী করে বুঝলেন তিনি।
বিরিয়ানি খাওয়া শেষে গরম গরম চা খেল সে।এবার শরীরটা একটু ভালো লাগছে তার।শরীরে শক্তি ফিরে এসেছে।ঊদিতা মিসেস ইয়াসমিনকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেলো।মিসেস ইয়াসমিন ঊদিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন মুচকি হেসে।
ঊদিতা ছাদে চলে এলো কবুতরদের দেখার জন্য।কবুতরদেরকে দানা ও গম খেতে দিলো সে।তারপর ছাদে একটু ঘুরাঘুরি করে নিচে তার সবজি বাগানে চলে গেল।হোসপাইপ দিয়ে সারা বাগানে পানি ছিটিয়ে আবারও রুমে ফিরে এলো সে।তারপর মিসেস তারানাকে ডেকে নিয়ে এলো নিজের রুমে সেলাই শিখবে বলে।মিসেস তারানা খুশিমনে ঊদিতাকে সেলাইয়ের ধাপগুলো দেখিয়ে দিতে লাগলেন।আজকে ঊদিতা মিসেস তারানার কাছ থেকে কাপড় কাটা শিখলো।দু ঘন্টা টানা কাজ করে কাপড় কাটা শিখতে সক্ষম হয়েছে সে।
যোহরের নামাজ আদায় করে তারপর পুঁথি দিয়ে আরও একঘন্টা লাগিয়ে একঝুটা স্ট্রবেরি বানালো সে।পুঁথি দিয়ে অনেক কিছু তৈরি করতে পারে ঊদিতা।এগুলো সে তার মায়ের কাছ থেকে শিখেছে।আলেয়া আর তারিন বাদে বাকিরা ঊদিতার প্রচুর প্রশংসা করলো।ঊদিতা কেয়াকে সেটা গিফট করে দিলো।কেয়া তো পুঁথি দিয়ে বানানো স্ট্রবেরি পেয়ে দারুণ খুশি।সে তার রুমের দরজার সামনে সেটা ঝুলিয়ে রেখে দিলো।সৌন্দর্য বর্ধন করছে এটি।
আসরের নামাজ পড়ে ঊদিতা ঘুমিয়ে গেল।মাথাটা ঘুরছে খালি তার।তাই আজ আর রান্নাঘরে যায় নি।সন্ধ্যার নাশতাও খায়নি সে।কেয়া একবার এসে ডেকে গেছিলো।কিন্তু ঊদিতার এতই অলস লাগছে যে উঠতে ইচ্ছে করছে না।আশিয়ান মায়ের ফোনে কল দিয়ে ঊদিতার খোঁজ খবর নিলো।
ঊদিতা বাধ্য হয়ে ঘুম থেকে ওঠে মাগরিবের নামাজটা আদায় করে আবারও শুয়ে পড়লো।মাথাটা শুধু ভনভন করছে তার।কাল কী এমন হলো যে তার এত শরীর খারাপ লাগছে!হিসাব মিলাতে পারলো না ঊদিতা।
রাত প্রায় দশটার সময় আশিয়ান বাসায় ফিরলো।ঊদিতা বিছানায় চুপচাপ বসে আছে।আশিয়ান রুমে ঢুকতেই সে দ্রুত বসা থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে আশিয়ানকে সালাম দিলো।আশিয়ান সালামের জবাব দিয়ে গমগমে গলায় ঊদিতাকে জিজ্ঞেস করলো;
আশিয়ান:-তোমার শরীর কেমন এখন?
ঊদিতা:-জ্বী,, ভালো।
আশিয়ান:-ঠিক আছে।
আশিয়ান গোসল করতে ওয়াশরুমে চলে গেল একটা টাওজার হাতে নিয়ে।ঊদিতা একটা গেঞ্জি আর একটা টাওয়েল কাভার্ড থেকে বের করে বিছানার ওপর রেখে নিচে চলে গেল।রান্নাঘরে গিয়ে আশিয়ানের জন্য একমগ কফি বানালো সে।তারপর কফির মগ হাতে নিয়ে রুমে ফিরে এলো সে।ঊদিতা রুমে আসার মিনিট খানেক পর গোসল সেড়ে বেরোলো আশিয়ান।বিছানা থেকে গেঞ্জি নিয়ে সেটা পড়ে ফেলে বিছানায় বসলো।ঊদিতা সবসময়কার মতো টাওয়েল দিয়ে আশিয়ানের চুল ভালো করে মুছে দিয়ে কফির মগ এগিয়ে দিলো।আশিয়ান কফির মগ হাতে নিয়ে বললো;
আশিয়ান:-অসুস্থ অবস্থায় রান্নাঘরে গেলে কেন?শুয়েবসে রেস্ট নিতে পারতে!
ঊদিতা:-জ্বী না,,আমি এখন ঠিক আছি।আচ্ছা রাতে আমরা পার্টি থেকে ফিরলাম কখন?আমারই বা কী হয়েছিলো?আমার মনে আছে আমি জুস খাওয়ায় ছিলাম।তারপর কী হয়েছে আর বলতে পারি না।
আশিয়ান গলা খাঁকারি দিয়ে শান্ত কন্ঠে বললো;
আশিয়ান:-তোমার মাথা ঘুরে গেছিলো।হয়তো শরীর দুর্বল এজন্য।আমি তোমায় বাসায় নিয়ে চলে এসেছিলাম।তুমি সেন্সলেস ছিলে বিধায় তোমায় বলতে পারো না কী হয়েছে!বাসায় এসে তোমাকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়েছিলাম।তুমি ঘুমিয়ে পড়েছিলে।(মিথ্যা বলে)
সত্যি বললে ঊদিতা অনেক কষ্ট পেত।যে মেয়ে মদ চেনে না সে মদ খেয়ে রাতে যা বেয়াদবি করেছে এসব শুনলে সে নিজেই হার্টফেল করবে।তাই আশিয়ান বিষয়টা খুব সুক্ষ্ম ভাবে এড়িয়ে গেল।ঊদিতা বুঝতে পারলো না যে আশিয়ান মিথ্যা বলছে।সে নিচুস্বরে বলে উঠে;
ঊদিতা:-ওহহ!আচ্ছা তাহলে আমার ড্রেস কে চেঞ্জ করে দিয়েছে?(জানতে চেয়ে)
আশিয়ান নির্বিকার ভাবে জবাব দিলো;
আশিয়ান:-আমি চেঞ্জ করে দিয়েছি।
ঊদিতা অবাক হয়ে বলে উঠে;
ঊদিতা:-কীই?আপনি ড্রেস চেঞ্জ করেছেন মানে?
আশিয়ান:-সো হোয়াট?আমিই তো!অন্যকোনো পরপুরুষ তো আর নই!তোমারই স্বামী!আর তোমাকে সবরকম ভাবে দেখার অধিকার আমার আছে।আশা করি বুঝতে পেরেছো!
ঊদিতা লজ্জায় রাঙা হয়ে গেছে।সে ভাবতেই পারছে না যে আশিয়ান তাকে এরকম অবস্থায় দেখেছে।
আশিয়ান:-এত লজ্জায় লাল নীল হতে হবে না।আমি তোমার সাথে উল্টো পাল্টা কিছু করি নি।তবে খুব শীঘ্রই করবো।সো বি প্রিপেয়ার্ড!নিজেকে আমার জন্য প্রস্তুত রেখো।
আশিয়ান নিচে চলে গেল।আশিয়ানের কথা শুনে ঊদিতার কান ঝাঁ ঝাঁ করছে।কী লজ্জা,,,কী লজ্জা!ইশশ!এত লজ্জা এ জীবনে পায় নি ঊদিতা।
একসাথে সবাই মিলে ডিনার করলো।ঊদিতা আরচোখে বারবার আশিয়ানের দিকে তাকাচ্ছে।চোখে চোখ পড়ে গেলে আবার দ্রুত চোখ সরিয়ে নিচ্ছে।তাসকিন ইচ্ছে পোষণ করে বললো সে আলেয়াকে নিয়ে হানিমুনে যেতে চায়।তবে এখন না এইমাস পর।সবাই সায় দিলো এতে।আশিয়ানকে যাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করলে আশিয়ান বললো এখন সে কোথাও যেতে পারবে না।আশিয়ানের কথায় তাল মিলিয়ে ঊদিতাও মানা করে দিলো।
ডিনার শেষে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে যে যার রুমে চলে গেল।আশিয়ান আর ঊদিতাও রুমে চলে এলো।ঊদিতা বিছানায় এসে শুতেই আশিয়ান তাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো।ঊদিতা শক্ত করে আশিয়ানকে জড়িয়ে ধরে রাখলো।আশিয়ান পাগলের মতো চুমু খেয়ে খেয়ে একপর্যায়ে ঘুমিয়ে গেল।আশিয়ানের সাথে ঊদিতাও ঘুমিয়ে পড়ে।
(মাই ডিয়ার রিডার্স।আজকে গল্প দেয়ার ইচ্ছে না থাকলেও খুব দ্রুত এই পার্টটা লিখলাম শুধুমাত্র আপনাদের জন্য।ভুল টুল হতে পারে কারণ আমি রিচেক দিই নি।অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই সবাইকে আমায় এত সাপোর্ট এত ভালোবাসা দেয়ার জন্য।আশা করি সবাই গঠনমূলক কমেন্ট করবেন।আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন প্লিজ,এত পরিমাণ সর্দিজ্বর সাথে গলাব্যথা, মাথাব্যথা,হাত পা সহ পুরো শরীর ব্যথা সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে আমি আর বাঁচবো না।এত অসুস্থতা নিয়ে মনে একটুও শান্তি নেই।ভালো লাগে না আর কিছু।😔)
চলবে…🍃