#তোমাতে বিলীন🍁
#লেখিকা—আমায়া নাফশিয়াত ☘
#পর্ব—|| ২৬ ||
➤[বি.দ্র. কেউ এড়িয়ে যাবেন না দয়া করে,মনযোগ দিয়ে পড়ার জন্য অনুরোধ রইলো।]➤
রাতে ঊদিতা আশিয়ানের বুকে মাথা রেখে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে গেল।আশিয়ান অপলক দৃষ্টিতে ঊদিতার দিকে তাকিয়ে আছে।এই পিচ্চি মেয়েটার মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে আশিয়ান।বিলীন হয়ে গেছে ঊদিতার মাঝে।এই মেয়েটাই যে তার একমাত্র ভালো থাকার কারণ।আশিয়ান সেহরির আগ অবধি ঊদিতার দিকে তাকিয়ে তাকিয়েই সময় পার করলো।এলার্ম বাজতেই ঊদিতার ঘুম ভাঙলো।চোখ পিটপিট করে খুলে আশিয়ানের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো সে।আশিয়ান ঊদিতার গালে নিজের ডানহাতের আঙ্গুল দ্বারা স্লাইড করলো শুধু নিরবে।
সেহরি শেষে রোযা রাখার নিয়ত করে নামাজ আদায় করলো দুজন।তারপর আবারও ঘুমিয়ে পড়লাে।
এভাবেই তাদের দুজনের রমজান মাসের বাকি দিনগুলো কাটে।
ঈদের আগের রাতে!
সারা বাড়ি জুড়ে উৎসব উৎসব ভাব।ঊদিতা মিসেস ইয়াসমিন ও মিসেস তারানার সাথে পিঠা বানাচ্ছে বসে বসে।সবরকমের পিঠে বানানোর প্রস্তুতি চলছে।কেয়া রান্না চড়িয়েছে চুলোয়। এনা,আলেয়া আর তারিন ওরা তিনজনই কালকে কোন ড্রেস পড়বে,কীরকম সাজবে,কীভাবে ফটো তুলবে এসব নিয়েই ডিসকাস করছে।বাচ্চারা খেলাধুলায় মত্ত।আশিয়ান তার ভাইদের সাথে বসে ড্রয়িং রুমে আড্ডা দিচ্ছে।মি.মোরশেদ ও মি.এনামুল পুরনো বন্ধুদের সাথে হাঁটতে গিয়েছেন কোথায় জানি।
ঊদিতা পিঠা তৈরির কাজ স্থগিত রেখে আপাতত রান্নাঘরে গিয়ে সবার জন্য পাস্তা বানাতে লাগে।সাথে চিজ বার্গার আর মালাই চা।আর আগের বানানো পুডিং আর মিষ্টি ফ্রিজ থেকে বের করলো।দ্রুতহাতে বানিয়ে এসব একটা বিরাট বড় ট্রেতে করে নিয়ে ড্রয়িংরুমে টি টেবিলের ওপর রাখলো সে।আশিয়ান তাকিয়ে আছে তার দিকে।চোখ দিয়ে যেন গিলে খাবে ঊদিতাকে এমনভাবে তাকিয়ে আছে।ঊদিতা সবার হাতে একটা একটা করে পাস্তার বাটি তুলে দিয়ে চলে গেল।যাওয়ার আগে আশিয়ানের দিকে বাঁকা নজরে তাকিয়েছে ঊদিতা।
পিঠে বানানো শেষে এনা এসে ঊদিতাকে টেনে নিয়ে গেল মেহেদী পড়ার জন্য।ঊদিতা অনেক সুন্দর মেহেদী দিতে পারে।এনার দু’হাত ভর্তি করে মেহেদী লাগিয়ে দিলো ঊদিতা।কেয়াকেও লাগিয়ে দিলো।তারিন আর আলেয়াও বাদ গেলো না।পুতুল,এরাত এমনকি মিসেস ইয়াসমিন আর মিসেস তারানাকে মেহেদী পড়িয়ে দিলো সে।অতঃপর ক্লান্ত হয়ে রুমে ফিরে এলো।এত্তো পরিমাণ হাতে ব্যথা করছে তার যে সে রাতের খাবার না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লাে।
আশিয়ান ঊদিতাকে ডাইনিংয়ে ডিনার করতে আসতে দেখে নি বিধায় রুমে এলো।রুমে এসে দেখে ঊদিতা ঘুমিয়ে গেছে।আশিয়ান ঊদিতাকে ডাকলো কিন্তু ঊদিতা একটু গাইগুই করে আবারও ঘুমিয়ে গেল।আশিয়ান বুঝতে পারলো যে ঊদিতা সবাইকে মেহেদী পরিয়ে দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে গেছে।যার কারণে না খাবার খেয়েছে আর না নিজের হাতে মেহেদী লাগিয়েছে।
আশিয়ান আবারও নিচে এসে তার এবং ঊদিতার খাবার একটা ট্রে তে করে রুমে ফিরে এসে ঊদিতার কাছে বসলো।হাত ধুয়েই এসেছে।ঊদিতাকে আবারও ডাকলো আশিয়ান কিন্তু সে ওঠলো না।অতঃপর আশিয়ান ঊদিতাকে ঘুমের মধ্যেই নিজের হাতে গালে তুলে খায়িয়ে দিলো।ঊদিতার খিদে ছিলো ঠিকই কিন্তু হাতের হাড্ডিগুলো ব্যথায় মটমট করছে তাই খেতে ইচ্ছে করে নি।সে বুঝতে পারছে আশিয়ান যে তাকে খায়িয়ে দিচ্ছে।
ঊদিতাকে খাবার খাওয়ানো শেষে জোর করে তুলে পানি খায়িয়ে দিলো।পানি খেয়েই ঊদিতা আবারও ঘুমের রাজ্যে ফিরে গেছে।ঊদিতাকে খায়িয়ে আশিয়ান নিজেও খেয়ে নিলো।তারপর সার্ভেন্টকে ডেকে এনে এটো থালাবাসন গুলো ট্রে সমেত দিয়ে বিদায় করলো সে।কাছে এসে ঊদিতার হাত দুটো দেখলো আশিয়ান।ডানহাতটা মেহেদীর রঙ লেগে ময়লাটে হয়ে গেছে।আশিয়ান ঊদিতার দু’হাতে চুমু এঁকে দিলো।ঊদিতা ততক্ষণে সত্যি সত্যিই ঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়েছে।
আশিয়ান উঠে গিয়ে একটা মেহেদীর টিউব নিয়ে এলো।আজ সে নিজে তার বউয়ের হাতে মেহেদী লাগিয়ে দেবে বলে ভাবলো।এর আগে ইলিয়ানাকে বেশ কয়েকবার মেহেদী লাগিয়ে দিয়েছিলো সে নিজে।এত বেশি আহামরি ডিজাইন করতে পারে না সে।তবুও মোটামুটি দেখার মতো আছে।ইলিয়ানার জন্য শাড়ি পড়িয়ে দেয়া,চুল আঁচড়িয়ে খোঁপা বেঁধে দেয়া,মেহেদী দেয়া,রান্নায় টুকটাক হেল্প করা সব শিখেছিলো আশিয়ান।এসব ভাবতেই বুক চিড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে আশিয়ানের।মানুষের জীবনটা কতই না বৈচিত্র্যময়।আশিয়ান কখনো ভাবে নি সে ২য় বারের মতো কাউকে এতটা ভালোবাসবে।বিশ্বাস ওঠে গিয়েছিল তার প্রেম ভালোবাসা এসবের ওপর থেকে।কিন্তু ঊদিতাকে পেয়ে সে বুঝতে পেরেছে একজন ঠকিয়েছে বলেই আজ এত ভালো মনের কাউকে পেয়েছে সে।
আশিয়ান একবার ইউটিউব দেখে নিয়ে ঊদিতার হাতে মেহেদী পরিয়ে দিতে লাগলো।মাঝেমধ্যে নড়েচড়ে উঠে ঊদিতা আবার মরার মতো ঘুমায়।আশিয়ান ধৈর্য ধরে ঊদিতার হাতে মেহেদী পরিয়ে দিতে ব্যস্ত।হাতের তালুতে ছোট ছোট করে ইংলিশ অক্ষরে আশিয়ান তার নিজের নামটা লিখলো।মেহেদী গুলো দেয়ার পাঁচ মিনিট পর পরই খুব দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে।এটা অবশ্য ঊদিতার জন্য ভালো।নয়তো নড়াচড়া করলেই লেপ্টে যেত।
আশিয়ান টানা দেড়ঘন্টা ধরে ঊদিতার হাতে মেহেদী দেয়া কমপ্লিট করলো।তারপর মেহেদী রাঙা হাতে শুকিয়ে যাওয়া স্থানে ঠোঁটের স্পর্শ এঁকে দিলো সে।ঘুমন্ত ঊদিতার মুখখানা এত ইনোসেন্ট যে আশিয়ানের ইচ্ছা করে জনম ভর এই মুখ খানার দিকে তাকিয়ে থাকতে।
➤[বি.দ্র.:-আমি অসুস্থ,, জ্বর সর্দি,গলা ব্যথা,মাথা ব্যথা,শরীর ব্যথা সব একসাথে হয়েছে আমার।আমি কী যে অবস্থায় গল্পের পার্টগুলো লিখি তা আপনারা বুঝবেন না।এত চিন্তা ভাবনা করে লিখতে পারছি না আমি অসুস্থতার জন্য।বহু কষ্টে চোখদুটো মেলে কোনোরকমে যা মাথায় আসছে তাই লিখে যাচ্ছি আমি।এমনকি রিচেকও দিচ্ছি না।আমার ছোটবেলায় নিউমোনিয়া হয়ে শ্বাসকষ্ট হয়েছিলো।সেই ভোগান্তিটা আজও আমি ভুগি।সামান্য কারণেই ঠান্ডা লেগে যায় আমার।আমি কালকের পার্টটা তেমন চিন্তা করে লিখতে পারি নি।আমি আগেও বলেছি ভুল হতে পারে।]➤
✨✨✨
পরের দিন সকাল অর্থাৎ ঈদের দিন,,
খুব সকালে ঊদিতা ঘুম থেকে ওঠে আশিয়ানকে ডেকে দিলো।ঊদিতা তখনও নিজের হাতের দিকে খেয়াল করে নি।রুমটা অন্ধকার হয়ে আছে এখনো এজন্য।আশিয়ান আজকে বাসায় ফজরের নামাজ আদায় করে নিলো।আশিয়ানের শেষে ঊদিতা ওয়াশরুমে গেল ওযু করার জন্য।ওযু করতে গিয়ে বাথরুমের হাই পাওয়ার্ড বাল্বের আলোয় নিজের হাতের ওপর চোখ গেল তার।অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো নিজের হাতদ্বয়ের পানে।সে বুঝতে পারছে না তার হাতে মেহেদী এলো কী করে!কারণ রাতে সে তো মেহেদী লাগায় নি।নিজের রাঙাহাত দুটি বারবার আয়নায় দেখছে ঊদিতা।যেন তার বিশ্বাস হচ্ছে না যে তার হাতে কেউ মেহেদী দিয়ে দিয়েছে।কিন্তু কে দিয়েছে?সেটা অজানাই রয়ে গেল ঊদিতার কাছে।
ওযু করে এসে নামাজ আদায় করে নিলো ঊদিতা।আশিয়ানকে মেহেদীর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবে করবে বলে আর করা হয় নি।সকাল ছয়টা বাজতেই আশিয়ান ঈদের পাঞ্জাবি পাজামা নিয়ে গোসল করতে চলে গেল।গোসল শেষে হালকা একটু নাশতা করে ঈদগাহ যাবে ঈদের নামাজ পড়তে।ঊদিতা নিচে গিয়ে আশিয়ানের জন্য লাচ্ছা সেমাই এসব তৈরি করছে।সাথে রাতের বানানো পিঠে পুলি গরম করলো।
আশিয়ান ঊদিতার জন্য একটা সারপ্রাইজ রেডি করে রেখেছে।ঊদিতাকে সে বাদে বাসার সবাই ঈদের কাপড় দিয়েছে।আশিয়ান দেয় নি বলে অবশ্য ঊদিতা কোনো অভিযোগ করে নি।সেটা নিয়েই ছোটখাটো একটা সারপ্রাইজ প্ল্যান করেছে আশিয়ান।ঊদিতা আশিয়ানের ফোন দিয়ে তার বাবার বাসার সবার সাথে আলাপ করছে হাসিমুখে।আশিয়ান গোসল করে এসে দেখলো ঊদিতা তারজন্য নাশতা নিয়ে এসেছে।আশিয়ান ঊদিতা চুল মুছে দেয়ার জন্য বিছানায় এসে বসলো।ঊদিতা ফোনে কথা বলতে বলতেই টাওয়েল দিয়ে আশিয়ানের চুল মুছে দিতে লাগলো।
আশিয়ান নাশতা করে নিলো।ঊদিতাকেও নিজ হাতে খায়িয়ে দিলো।নিচ থেকে হইহট্টগোল ভেসে আসছে।আশিয়ান মাথায় টুপি পড়ে ঊদিতার কপালে চুমু খেয়ে বিদায় নিয়ে নিচে চলে গেল বাবা-চাচা ও ভাইদের সাথে ঈদগাহে যাবে বলে।ঊদিতা হাসিমুখে সিড়ির রেলিঙ ধরে দাঁড়িয়ে আশিয়ানের যাওয়া দেখলো।এখন মেয়েরা সবাই গোসল করে রেডি হবে।ঊদিতা রুমে চলে এলো।নরমাল নতুন একটা সুতির থ্রি পিস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল গোসল করতে।
গোসল শেষে বেরিয়ে এলো ঊদিতা।হাতের দিকে একবার তাকালো।নিজের অজান্তেই তার ঠোঁটে ফুটে ওঠে একচিলতে হাসি।ঊদিতার চোখ যায় সেন্টার টেবিলের ওপর সেখানে একটা চিরকুটের মতো কাগজ ফরফর করছে পেপার ওয়েটের নিচে চাপা পড়ে।কৌতুহলবশত এগিয়ে গেল ঊদিতা সেন্টার টেবিলের দিকে।কারণ কাগজটা আগে কখনো খেয়াল করে নি সে।সাদা কাগজটা হাতে নিয়ে লেখাটা পড়তে লাগে ঊদিতা।কয়েকটা লাইনের সংক্ষিপ্ত চিরকুট_
“দি গ্রেট আশিয়ান তায়েফ চৌধুরীর স্ত্রী মিসেস আশিয়ানকে বলছি,ধূসর রঙা আলমারির ডান পাশের কপাট খুলে নিচের তাকে খেয়াল করে দেখবে একটা বড় বক্স রাখা আছে।বাধ্য মেয়ের মতো সেটা হাতে নাও তো!”
তোমার ওয়ান এন্ড অনলি
হাসবেন্ড,,😜
চিরকুটটা পড়ে ঊদিতা যারপরনাই বিস্মিত হলো।সে বুঝতে পারছে না আজ তার সাথে এসব হচ্ছেটা কী!আপাতত সকল বিস্ময় চেপে গিয়ে চিরকুটের লেখা মতো ধূসর রঙা আলমারির ডান পাশের কপাট খুললো সে।নিচের তাকে তাকিয়ে দেখলো সত্যিই একটা বিশাল বড় বক্স রাখা আছে।ঊদিতা ধরাধরি করে বক্সটা তুলে বিছানায় এনে রাখলো।কালো রঙের কাগজের রেপিং পেপার দিয়ে মুড়ানো বক্সটি।কস্টিপ দিয়ে আরও একটি কাগজ বক্সের ওপর সেটে রাখা হয়েছে।ঊদিতা কাগজটা নিয়ে খুলে পড়তে লাগলো,
“একটা কাটার নিয়ে এসে এবার রেপিং পেপার কেটে ছাড়াও।তারপর বক্স খুলে একটা একটা প্যাকেট খুলে দেখাে ভেতরে কী আছে!আর হ্যা প্রত্যেকটা চিরকুট কিন্তু পড়বে।না পড়লে রাগ করবো।”
তোমার ছ্যাঁকাখোর
জামাই বলছি,😇
চিরকুটের লাস্টের লাইনগুলো পড়ে হেসে ফেললো ঊদিতা।স্টাডি টেবিলের ওপর থেকে একটা কাটার নিয়ে এসে যত্ন সহকারে বক্স থেকে রেপিং পেপার কেটে ছাড়িয়ে নিলো সে।কাটা রেপিং পেপার সব দলা মোচড়া করে ডাস্টবিনে ফেলে দিলো।আস্তে করে বক্সের ঢালা খুলে দেখতে পেল ভেতরে অনেকগুলো প্যাকেট আছে।কয়েকটি বড় আর কয়েকটি ছোট এবং মাঝারি আকারের।ঊদিতা ওপরে রাখা একটা প্যাকেট তুলে নিয়ে সেটি খুলে ভেতরের জিনিস বের করলো।অনেক সুন্দর রেড ভেলভেট কালারের চমৎকার কারুকাজ করা হাফসিল্ক শাড়িটার ওপর চোখ জোড়া আটকে গেল তার।শাড়ির ভাঁজ খুলতেই ছোট একটা চিরকুট বেরোল।ঊদিতা দুরুদুরু বুকে সেটা হাতে নিয়ে পড়তে লাগে,
“তোমার একরোখা জামাই বলছি,
ঈদগাহ থেকে ফিরে আমার বউকে আমি এই টুকটুকে শাড়ি পরিহিতা অবস্থায় দেখে মুগ্ধ হতে চাই।কোনো মানা শুনবো না।পড়তে তোমাকে হবেই।”
মুচকি হেসে শাড়িটা নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে ঊদিতা।শাড়িটা বিছানার একপাশে রেখে আরেকটা প্যাকেট হাতে নিয়ে সেটা খুলে ভেতরের জিনিস বের করে।প্যাকেটটিতে ম্যাচিং ব্লাউজ, পেটিকোট,ও আন্ডারগার্মেন্টস ছিলো।চিরকুটে লেখা,
“তোমার স্বামী এত আনাড়ি নয়।বউয়ের প্রয়োজনীয় যাবতীয় সব ম্যাচ করে নিয়ে এসেছি কিন্তু।”
আশিয়ানের পাগলামি দেখে ঊদিতার ঠোঁটে আবারও হাসি ফুটে ওঠে।আরেকটা প্যাকেট খুলে সেটাতে অনেক সুন্দর ভেলভেট রঙের দুই ডজনেরও বেশি চুড়ি পায় ঊদিতা।সাথে একটা চিরকুট।তাতে লেখা,
“শাড়ি পড়ার পর চুড়ি পরবে না তা কী হয়!তাই তো তোমার পিচ্চি হাতের মাপে চুড়ি ঝটপট কিনে ফেললাম।তোমার চুড়ির রিনরিনে শব্দ শুনতে চাই আমি।”
আরেকটা প্যাকেটে ম্যাচিং কানের দুল,গলার সিম্পল একটা স্বর্নের চিকন প্যাটেন্ড,ছোট্ট একটা স্বর্নের নাকফুল,আর পায়ের জন্য একজোড়া স্বর্নের ডিজাইনার পায়েল পেল ঊদিতা।চিরকুটে লেখা,
“অবশ্যই এগুলো পড়বে তুমি।কারণ শাড়ি পড়ার পর এসব না পড়লে বড্ড বেমানান লাগবে আমার বউটাকে।আমি আমার বউকে একদম পরিপূর্ণ রূপে দেখতে চাই।”
অন্য একটি প্যাকেটে একজোড়া সুন্দর সিম্পল শাড়ির সাথে ম্যাচিং জুতো রাখা।এটাতে চিরকুট পেল না ঊদিতা।পরেরটাতে একগাদা চকোলেট পেল ঊদিতা।সাথে চিরকুটে লেখা,
“আমার পিচ্চি বউটা বাচ্চাদের মতো চকোলেট খেতে অনেক পছন্দ করে।তাই এসবের সাথে চকোলেটও কিনে নিলাম।জানি তুমি চকোলেট দেখে মুচকি মুচকি হাসছো।তোমার হাসিটা দেখতে না পেলেও মনের মধ্যে স্কেচ করে নিলাম।চকোলেট খেতে খেতে ঝটপট শাড়িটা পড়ে নিয়ো।কারণ আমি ঈদের নামাজ পড়ে বন্ধুদের সাথে মিট করেই বাসায় চলে আসবো।তখন যদি তোমাকে রেডি না পাই তবে আমি নিজের হাতে তোমাকে শাড়ি পড়িয়ে দেব।তখন আর লজ্জা পেতে পারবে না।
তোমার ঘাড়ত্যাড়া
জামাই”
ঊদিতা হাসতে হাসতে শেষ আশিয়ানের চিরকুট লেখার ধরন পড়ে।লোকটা এত পাজি জানা ছিলো না তার।সবশেষে ঊদিতা একটা কাঠগোলাপ ফুলের ডিজাইনার ক্রাউন পেল।চিরকুটে লেখা,
“তোমার ওই শ্যাম্পু করা লম্বা চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে এই ক্রাউনটা পড়বে।তুমি হয়তো জানো, হয়তো জানো না আমি কাঠগোলাপ ফুল অনেক পছন্দ করি।আমি চাই আমার স্ত্রী নিজের চুল তার স্বামীর পছন্দের ফুল দ্বারা সাজাক।আশা করি বুঝেছো।যাকগে অনেক বকবক হয়েছে এখন দ্রুত যাও গিয়ে শাড়ি পড়ো।গো ফাস্ট।”
ইতি
তোমার কপালে চুম্বনকারী
সেই ব্যক্তি যাকে তুমি অনেক
পছন্দ করো।”
আশিয়ানের কথামতো ঊদিতা দ্রুত সব রেখে শাড়িটা হাতে নিলো।হঠাৎ তার মাথায় এলো যে সে শাড়ি পড়তে পারে না।এখন কী করবে সে ভাবতে লাগলো।তারপর একদৌড় দিয়ে সে কেয়ার রুমে চলে যায়।কেয়া তখন মেয়েকে মাথার চুল বেঁধে দিচ্ছিলো।ঊদিতাকে তার রুমে এভাবে ছুটে আসতে দেখে অবাক হয়ে গেল সে।বিস্ময় ভাব চেপে জিজ্ঞেস করলো;
কেয়া:-কী হয়েছে ঊদিতা?তুমি এভাবে উদভ্রান্তের মতো ছুটে এলে কেন?তোমার শরীর ঠিক আছে তো?
ঊদিতা হাঁপাতে হাঁপাতে জবাব দিলো;
ঊদিতা:-আমি একদম ঠিক আছি ভাবী।আমার কিছু হয়নি!আমাকে তুমি একটা হেল্প করতে পারবে ভাবী প্লিজ?(অনুরোধ করে)
কেয়া:-অবশ্যই করবো।বলো কী হেল্প করতে হবে?
ঊদিতা:-আমাকে এখন শাড়ি পড়িয়ে দিতে পারবে ভাবী?ইট’স আরজেন্ট!
কেয়া:-ওহহ আল্লাহ!এই ব্যাপার!আমি আরও কী না কী মনে করেছি।আচ্ছা তুমি রুমে গিয়ে ব্লাউজ পেটিকোট পড়ে নাও আমি আসছি।
ঊদিতা:-আচ্ছা ভাবী।
ঊদিতা যেমন এসেছিলো তেমনি রুমে চলে গেল।কেয়া ঊদিতার পাগলামি দেখে হেসে উঠে বললো;
কেয়া:-পাগলি একটা।
ঊদিতা রুমে এসেই ব্লাউজ আর পেটিকোট নিয়ে দ্রুত ওয়াশরুমে গিয়ে সেসব পড়ে এলো।কেয়া ততক্ষণে ওর রুমে চলে এসেছে।শাড়ি দেখে কেয়া অনেক প্রশংসা করলো।কে দিয়েছে জানতে চাইলে ঊদিতা লজ্জিত কন্ঠে মাথা নিচু করে আশিয়ানের নাম বললো।কেয়া ঊদিতার লজ্জা পাওয়া দেখে হেসে ফেললো।কেয়া ঊদিতার সাথে গল্প করতে করতে ঊদিতাকে অনেক সুন্দর করে শাড়িটা পড়িয়ে দিলো।
শাড়ি পড়ানো শেষে ঊদিতাকে কেয়া নিজের হাতে হাতে,কানে,গলায়,নাকে ও পায়ে আশিয়ানের দেয়া অর্নামেন্টস গুলো পড়িয়ে দিলো।ঊদিতা চকোলেট অলরেডি ৩ টা খেয়ে ফেলেছে।কেয়া ঊদিতাকে হালকা করে সাজিয়ে দিলো।সাজ বলতে চোখে মাশকারা আর কাজল এবং ঠোঁটে হালকা পিংক গ্লোসি লিপগ্লস।
ঊদিতার চুলও সুন্দর করে আঁচড়ে দিয়ে তাতে ক্রাউনটা ফিট করে বসিয়ে দিলো কেয়া।ঊদিতাকে দেখতে এত সুন্দরী লাগছে যা বলার বাইরে।কেয়া মুগ্ধ দৃষ্টিতে ঊদিতার দিকে তাকিয়ে সপ্রশংস কন্ঠে বললো;
কেয়া:-আরে বাহ ঊদিতা!তোমাকে দেখে তো আমিই ক্রাশ খেয়ে গেলাম তাহলে আমার দেবরের কী হবে?আজকে তো বেচারা শেষ!ভুল করে কোনো রাজ্যের পরী যেন আমাদের বাসায় চলে এসেছে মনে হচ্ছে!আল্লাহ কারও যেন নজর না লাগে পিচ্চিটার ওপর!অবশ্য আশিয়ানের নজর ঠিকই লাগবে।(দুষ্টু হেসে)
ঊদিতা লজ্জা পেয়ে দু’হাত দ্বারা মুখ ঢেকে বললো;
ঊদিতা:-যাহহ,,কী যে বলো না তুমি ভাবী!আমার বুঝি লজ্জা করে না!
কেয়া:-ওরে রে কী লজ্জা আমাদের ঊদিতার!সে যাকগে,, ঈদ মোবারক বনু!
কেয়া ঊদিতাকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে কথাটা।ঊদিতাও কেয়াকে আন্তরিক ভাবে জড়িয়ে ধরে ঈদ মোবারক জানায়।তারপর পুতুলের ডাকে কেয়া ঊদিতাকে বলে মেয়ের কাছে চলে যায়।ঊদিতা ড্রেসিং টেবিলের বিশাল আয়নায় নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগে।মনে মনে ভাবে আশিয়ান কী সত্যি আজ তাকে দেখে পাগল হয়ে যাবে?তারপর আর ভাবতে পারে না সে লজ্জায়।লজ্জাবতী লতার মতো গুটিয়ে নেয় নিজেকে।
➤[আর আগেই বলেছি গল্পের নায়িকার চরিত্রটা আমার এক ফুপুতো বোনের চরিত্রের সাথে মিলিয়ে লিখেছি।সে এরকম সকল কাজে পটু ছিলো এবং এরকম ভালো মনের আর সহজ সরল ছিলো।নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন তো একটা ১৬ বছরের মেয়ে কী এতটাই অবুঝ হতে পারে?অনেক মেয়েরা আছে অল্পবয়সেই ম্যাচুয়ের হয়ে যায়।আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি নিজের আত্মীয় স্বজন ও পরিবার থেকে এরকম হাজারটা উদাহরণ দিতে পারবো।কিন্তু আপনারা বিশ্বাস করেন না।শিখতে গেলে সবকিছু সহজ।আমি নিজেও অনেক কিছু করতে পারি।প্রতিভা থাকলে সবকিছু করা যায় এবং শিখা যায়।প্রথম প্রথম কিছুটা বাস্তবভিত্তিক লিখলেও বেশ কয়েক পর্বের পর থেকে চিন্তা করে কাল্পনিক ভাবে সাজিয়ে লিখতে লাগলাম আমি।]➤
আশিয়ান সবার সাথে ঈদগাহ থেকে ঈদের নামাজ পড়ে প্রথমে বন্ধুদের সাথে নিজের করা এতিমখানা ও বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে সবাইকে দেখে আসে।পথশিশু যারা ছিলো তাদেরকে নিজের এতিমখানায় থাকার ব্যবস্থা করতে বলে নিজের সেক্রেটারিকে।ঈদের ফিতরার টাকা বিলিয়ে দিয়ে আসে দরিদ্রদের মাঝে।সবার মুখের তৃপ্তির হাসি দেখে আশিয়ানের অন্তর ঠান্ডা হয়ে যায়।
এই মানুষদের জন্য কিছু করতে না পারলে নিজের জীবনটাই বৃথা ভাবে আশিয়ান।তার কোম্পানির আয় থেকে প্রতি মাসে মাসে প্রায় ২ থেকে ৩ কোটি টাকা এদের নিচে ব্যয় করে আশিয়ান।বাংলাদেশের সকল বৃদ্ধাশ্রম ও এতিমখানাতে আশিয়ান অনেক টাকা ইনভেস্ট করে।তার সাথে তার বাবা চাচা ভাইয়েরাও করে।আশিয়ানের এসব কাজকর্মে অনুপ্রাণিত হয়ে তার পরিচিত অপরিচিত আরও অনেকে সমাজসেবায় যোগদান করেছে।আশিয়ানকে অনেকে নিজের আইডল মনে করে।তার হেটার্সও অনেক কম।
সব কাজ শেষ করে আশিয়ান প্রায় ১০ টায় বাসায় ফিরে আসে সবার সাথে।নিচে সবার সাথে কোলাকুলি করে ঈদ মোবারক জানিয়ে নিজের রুমে চলে আসে আশিয়ান।কারণ নিচে ঊদিতাকে দেখে নি সে।রুমে ঢুকে সবার আগে তার চোখ পড়ে একজন হুরপরীর দিকে যে কিনা সারা রুম জুড়ে চকোলেট খেয়ে খেয়ে পায়চারি করছে।ঊদিতাকে দেখে আশিয়ানের হার্টবিট মিস হলো যেন।জীবনের প্রথম এত মারাত্মক লেভেলের ক্রাশ খেয়েছে সে কাউকে দেখে।এবং সেই কেউটা হলো তার একমাত্র বউ ঊদিতা।আশিয়ানকে দেখতে পেয়ে ঊদিতা পায়চারি থামিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।তার ফর্সা গালদুটিতে লালচে আভা ফুটে ওঠেছে লজ্জার কারণে।
আশিয়ান ঘোরের মধ্যে একপা একপা করে ঊদিতার দিকে হেঁটে আসতে লাগলো।ঊদিতা যেন বরফের মতো জমে গেছে তার জায়গায়।আশিয়ান মাথা থেকে টুপি খুলে বিছানায় ছুড়ে মারে।ঊদিতা অস্থির চিত্তে এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে পালানোর পথ খুঁজে।আজ নির্ঘাত আশিয়ান তাকে চকোলেটের মতো খেয়ে নেবে।আশিয়ান ঊদিতার একদম কাছে এসে দাঁড়িয়ে ঊদিতার কোমড় ধরে টেনে নিজের সাথে নিয়ে মিশিয়ে নিলো।ঊদিতা চোখ বন্ধ করে ফেলেছে অজানা অস্বস্তিতে।
আশিয়ান আজ ঊদিতার নেশায় পাগল হয়ে যাচ্ছে।ঊদিতার বিউটি বোনস ওয়ালা গলার সেই কালো তিলটাতে গভীর ভাবে একটা চুমু খেলো সে।আশিয়ানের দেয়া প্রতিটি জিনিস পড়ায় ঊদিতাকে একদম রানীর মতো লাগছে।আর এই রানীটি হলো একান্তই আশিয়ানের রাজ্যের রানী।ঊদিতা আশিয়ানের ছোঁয়ায় থরথর করে কাঁপছে।উফফ,,,এ কেমন অনুভূতি!
আশিয়ান ঊদিতার কপালের তিল বরাবর আরেকটা চুমু খেয়ে নিচু হয়ে তার কপালের সাথে নিজের কপাল লাগিয়ে নেশালো কন্ঠে বললো;
আশিয়ান:-উফফ,,,মেরে ফেলার ধান্দা লাগিয়েছো বুঝি?আজ তো মনে হয় না নিজেকে আমি কন্ট্রোল করতে পারবো!আজ একটা অঘটন ঘটলে আমাকে দোষ দিয়ো না প্লিজ!আজকে রাতে হয়তো আমাদের ফুলসজ্জা হয়েই যাবে।
আশিয়ানের কথা শুনে ঊদিতা ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলতে লাগে।খামচে ধরে আশিয়ানের পাঞ্জাবির কলার।কালো রঙের পাঞ্জাবিতে আশিয়ানকে দারুণ লাগছে দেখতে।আশিয়ান ঊদিতার গালের সাথে নাকের সাথে নিজের ঠোঁট ঘষছে বারবার।
এনা আশিয়ানকে ডাকতে তাদের রুমে এসেছিলো।দরজা কিছুটা ভেড়ানো দেখে সে নক করার আগে রুমের ভেতর উকি দিলো।দুজনকে এত রোমান্টিক অবস্থায় দেখে এনার চোখ চড়কগাছ।সে তাদের না ডেকে আলতো ভাবে রুমের দরজা লাগিয়ে নিঃশব্দে চলে গেল।ভাই ও ভাবীর ভালোবাসা দেখে তার ঠোঁটে ফুটে ওঠেছে তৃপ্তিময় হাসি।
আশিয়ান ততক্ষণে ঊদিতার ঠোঁট নিজের দখলে নিয়ে নিছে।ঊদিতাকে দেয়ালের সাথে নিয়ে লাগিয়ে তৃষ্ণার্থের মতো তার ঠোঁট জোড়ায় চুমু খাচ্ছে আশিয়ান।ঊদিতার ঠোঁটে চকোলেটের সুগন্ধ পাচ্ছে আশিয়ান।ঊদিতা পরম আবেশে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিয়ে আশিয়ানের ঘাড়ে হাত রেখে সেও তার সাথে তাল মেলানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।কারণ ঊদিতা রেসপন্স করতে পারে না ঠিক মতো।
ঊদিতা ভেবেছিলাে আশিয়ান তাকে এরূপে দেখে অনেক প্রশংসা করবে তাকে কতটা সুন্দর লাগছে তা বলবে কিন্তু আশিয়ান তার চিন্তা ভাবনায় একবালতি পানি ঢেলে দিয়ে পাগলের মতো চুমু খাচ্ছে।এটা তার আশায় ছিলো না।
প্রায় মিনিট দশেক পর ঊদিতার ঠোঁট ছাড়লো আশিয়ান।ঠোঁট ছেড়ে এবার ওর গালে ছোট ছোট চুমু খাচ্ছে সে।ঊদিতার বুক হাঁপরের মতো উঠানামা করছে।মানুষ কেমনে যে এত সময় ধরে কাউকে কিস করতে পারে জানে না ঊদিতা।
ঊদিতা নিজেকে সামলে নিয়ে বললো;
ঊদিতা:-কই আপনি আমাকে ঈদের সালামি দিবেন তা না করে এসেই আগ্রাসীর মতো থাবা দিয়ে ধরে চুমু খেতে লাগলেন।এটা কী ঠিক?আমি ভেবেছিলাম আপনি এসে বলবেন আমাকে শাড়ি পড়ায় কেমন লাগছে!আরও কিছু প্রশংসা করবেন।সে আশায় গুড়ে বালি!
আশিয়ান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ঊদিতার দিকে তাকিয়ে ঘোরলাগা কন্ঠে জবাব দিলো;
আশিয়ান:-বোকা মেয়ে!আমার এরকম বিহেভিয়ারেই তো তোমার বুঝে নেয়া উচিৎ তোমাকে আজ কেমন লাগছে!তোমাকে যদি আজ ভালো না-ই লাগতো তবে আমি এত পাগল হতাম না সুন্দরী!(ঊদিতার গালে স্লাইড করে)
ঊদিতা মৃদু কেঁপে ওঠে আশিয়ানের স্পর্শে।আশিয়ান ঊদিতার কোমড় জড়িয়ে ধরে তার চোখে চোখ রেখে সুর করে খোলা কন্ঠে গেয়ে উঠলো;
গানে নতুন করে এলো সুর
এ যেন আগের চেয়ে সুমধুর।
নিয়ে এলে আমায় তুমি
আজ বহুদূর,,,
নিয়ে এলে আমায় তুমি
আজ বহুদূর।
বয়ে চলেছে যেথায়
ভালোবাসার এক ধারা,,,
এই জীবন ছিলো
নদীর মতো গতি হারা
দিশা হারা,,।
ওগো তোমার আকাশ দুটি চোখে
আমি হয়ে গেছি তারা।
ঊদিতা একদৃষ্টিতে আশিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।আশিয়ান হলো তার স্বপ্নের রাজকুমার।অনেক ভালোবাসে সে লোকটাকে।ঊদিতা হাসিমুখে আশিয়ানকে জড়িয়ে ধরে তার বুকে মাথা রেখে ধীরকন্ঠে বললো;
ঊদিতা:-ভালোবাসি।অনেক ভালোবাসি আপনাকে!নিজের থেকেও বেশি চাই আমি আপনাকে।আমার প্রতিটি মোনাজাতে আপনাকেই চাই আমি।আর কিছু চাই না।কিচ্ছু লাগবে না আমার।আপনি হলেই চলবে।আই লাভ ইউ সো মাচ!
আশিয়ানকে অবশেষে মনের কথাটা বলে দিলো ঊদিতা।আশিয়ান মুচকি হেসে শক্ত করে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রাখলো তার পিচ্চি বউটাকে।ভালোবাসা কখন কীভাবে কার সাথে হবে তা কেউ বলতে পারবে না।বিয়ের আগে পর্যন্ত আশিয়ান জানতো সে ইলিয়ানা ছাড়া ২য় বার আর কাউকে কখনো ভালোবাসতে পারবে না।অথচ আজ এই মেয়েটাই তার জীবনের সব হয়ে গেল।ঊদিতার মুখে ভালোবাসি কথাটা শুনে আশিয়ানের বুকে এক দমকা হাওয়া বয়ে গেল।মনে এক আশ্চর্যরকমের শান্তি অনুভব করছে সে।আশিয়ান পাল্টা ভালোবাসি বললো না ঠিকই কিন্তু তার বুকের উষ্ণতার মাধ্যমে ঊদিতাকে বুঝিয়ে দিলো যে সে ঊদিতাকে ঠিক কতোটা চায়।
আশিয়ান ঊদিতাকে ছেড়ে দিতেই ঊদিতা মুচকি হেসে নামাজের বিশাল হিজাব পড়ে নিচে চলে গেল।আশিয়ান মাথা চুলকাতে চুলকাতে হেসে ফেললো।
নিচে সবাই ফ্যামিলি পিক তুলছে।কোথাও বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান করছে সবাই।এনা লিস্ট করছে কোথায় কোথায় যাবে তার।আশিয়ানও নিচে নেমে এসেছে।আশিয়ানকে এনা তাশজিদ তাজিম আর পিচ্চি দুইটা ঘিরে ধরলো সালামি দেয়ার জন্য।অবশেষে পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে একে একে সবগুলোকে সালামি দিলো সে।তারপর এনাকে দিয়ে ঊদিতাকেও সালামি দেয়ালো।সবাই মিটমিটিয়ে হাসছে আশিয়ানের কাজ দেখে।
দুপুরের খাবার খেয়ে সবাই রেডি হলো নন্দন পার্কে যাওয়ার জন্য।ঊদিতা শাড়ি খুলে আশিয়ানের দেয়া অন্য একটা ড্রেস পড়ে এর ওপর একটা আবায়া পড়ে নিলো।সাথে বড় ওড়না দিয়ে হিজাব বেঁধে বড় নেকাবও লাগালো।সবাই বড় দুটি হাইয়েস গাড়িতে বসলো।আশিয়ান ঊদিতার সাথে ২য় গাড়িতে পিছনের সিটে বসলো।তাদের সাথে আশাও এসে জয়েন হয়েছে বেরাতে যাওয়ার জন্য।আশা আশিয়ানের সাথে বসে গিয়েছিল পড়ে ঊদিতা আশিয়ানকে বসা থেকে তুলে নিয়ে এর পেছনের সারির সিটে বসেছে।আশা তো ঊদিতাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে।
আশিয়ান একহাত দিয়ে ঊদিতাকে আগলে ধরে বসে আছে।ঊদিতা আশিয়ানের কাঁধে মাথা রেখে বাইরের দৃশ্য দেখছে।
প্রায় একঘন্টা পর ওরা সবাই নন্দন পার্কে পৌঁছে গেলো।গাড়ি থেকে নেমে সবাই টিকিট কাউন্টারের কাছে দাঁড়ালো।আশিয়ান গিয়ে দ্রুত টিকিট কেটে নিয়ে আসলো।অতঃপর সবাই একসাথে পার্কের ভেতরে ঢুকলো।আশিয়ান ঊদিতার হাত ধরে হাঁটছে সবার পেছনে।সবাই যার যার মতো ছবি তুলতে ব্যস্ত।ঊদিতা আশিয়ানের হাত জড়িয়ে ধরে হাঁটছে।এইমুহূর্তে নিজেকে তার কাছে সবচাইতে সুখী মানুষ বলে মনে হচ্ছে।ভালোবাসার মানুষের সাথে থাকাটাই অনেক বেশি আনন্দের।
আশিয়ান ঊদিতার সাথে অনেক কাপল ছবি তুললো।তবে নির্জন স্থান দেখে যেখানে ওরা ব্যতিত কেউ নেই।আর তাদের ফটোগ্রাফার হলো তাশজিদ এবং এনা।আশা তো খালি শয়তানি বুদ্ধি হাতরাচ্ছে কীভাবে ঊদিতাকে কষ্ট দেয়া যায় এটা ভেবে।কিন্তু আশিয়ানের জন্য সেসব কিছুই চিন্তা করতে পারছে না সে।
আশিয়ান ঊদিতার জন্য আইসক্রিম আনতে গেল।ঠিক তখনই আশা একটা মোক্ষম শয়তানি বুদ্ধি কাজে লাগাতে মনোনিবেশ করলো।ঊদিতা একটু দূরে দাঁড়িয়ে ফুলের গাছে হাত দিয়ে মুগ্ধ হয়ে দেখছে।আশা ঊদিতার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।তার বুদ্ধি হলো ঊদিতাকে পিছন থেকে জোরে ধাক্কা দিবে,,,এতে বেশি ক্ষতি না হলেও নাকমুখ তো ফাটবেই।কত্তবড় হারামি এই মেয়ে ঈদের দিনও শত্রুতা করতে ছাড়ছে না।আশিয়ান আইসক্রিম কিনে নিয়ে ফিরে আসতে গিয়ে দেখে যে আশা স্টার জলসার শয়তানীদের মতো বিটকেল মার্কা হাসি দিয়ে ঊদিতার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।ওর মাথায় যে শয়তানি বুদ্ধি চড়াও হয়েছে তা বেশ বুঝতে পারছে আশিয়ান।
আশিয়ান দ্রুত ঊদিতার কাছাকাছি চলে এলো।আশা তখনো আশিয়ানকে দেখে নি।আশা একটা ভেটকি মেরে জোরসে একটা ধাক্কা দিলো ঊদিতাকে।হঠাৎ ধাক্কায় তাল সামলাতে না পেরে ঊদিতা হুমড়ি খেয়ে সামনে পড়লো।তবে মাটিতে নয় আশিয়ানের বুকে।আর আশিয়ান বুদ্ধি করে আশার সামনে নিজের লম্বা পা বাড়িয়ে দেয়াতে আশা সামনে যেতে চাইলেই আশিয়ানের পায়ের সাথে পা বেঁধে ঠাসস করে মাটিতে পড়ে গেল।
➤[আর আশিয়ান যে সবক্ষেত্রে ভালো হবে এমন কোনো কথা নেই।আমি ইচ্ছে করেই আশিয়ানের চরিত্রটা এমন তুলে ধরেছি।বেশিরভাগ ছেলেরাই তাদের স্ত্রীকে পড়ার সুযোগ দেয় না তবে আশিয়ান দিয়েছে এবং তার শর্ত হলো কলেজে না গিয়ে পড়তে হবে।কারণ সে চায় তার স্ত্রী ঘরে থাকুক।বাহিরে তেমন একটা না যাক।ঊদিতাও বাধ্য মেয়ে এত উচ্ছৃঙ্খল নয়।আর রইলো বাগানের কথা।এ সম্পর্কে আমার তেমন একটা আইডিয়া নাই যে ক’মাস পর গাছে সবজি ধরে বা ক’মাস পর গাছ ওঠে আই রিয়েলি ডোন্ট নো দ্যাট।হয়তো ভুল হয়েছে হয়তো না আমি জানি না তারপরও বলবো প্লিজ মানিয়ে পড়ে নিন।এটা আমার লিখা ২য় গল্প এত অভিজ্ঞতা নেই আমার ভুলত্রুটি হবেই স্বাভাবিক।অভিযোগ না করে ক্ষমা করে দিবেন ছোট্ট লেখিকাকে।]➤
চল