তোমাতে বিলীন – পর্ব 39

0
888

#তোমাতে বিলীন🍁
#লেখিকা—আমায়া নাফশিয়াত ☘
#পর্ব—|| ৩৯ ||
ঊদিতা বারবার আর্তনাদ করে উঠছে পেটের যন্ত্রণায়।চিত্রা ও ২ জন মহিলা ডক্টর এবং ৪ জন নার্স এগিয়ে আসে তাদের কাছে।ঊদিতার কথা অনুযায়ী আশিয়ান মেয়ে ডক্টর ও নার্সকে বলে দিয়েছে যেন তারা ওর ডেলিভারি করে।কোনো পুরুষ মানুষ যেন না ঢুকে কেবিনে।
আশিয়ানের ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে ঊদিতার জন্য।নিজের অজান্তেই চোখ জোড়া থেকে পানি গড়িয়ে গাল বেয়ে পড়ে তার।ঊদিতা এত যন্ত্রণার মাঝেও আশিয়ানের হাত টেনে নিয়ে হাতের তালুতে কয়েকটা চুমু খায়।ব্যথা ও কান্নামিশ্রিত হাসি দিয়ে অস্ফুটস্বরে বলে,,,
“অনেক ভালোবাসি আপনাকে!”
আশিয়ান ঊদিতার কপালে চুমু খেয়ে বলে;
আশিয়ান:-আমিও খুব ভালোবাসি আমার বউটাকে,,,।অপেক্ষা করছি সোনা,,,আমাদের ছেলেকে নিয়ে দ্রুত ফিরে আসো।
চিত্রার কথামতো দ্রুত ঊদিতাকে অটির কেবিনে নিয়ে যাওয়া হয়।ঊদিতা ব্যথার চোটে চোখ বন্ধ করে ফেলে।আশিয়ান একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার প্রিয়তমা স্ত্রীর দিকে।বুক জুড়ে শূন্যতা বিরাজ করছে তার।মনে ভয়ের সৃষ্টি হচ্ছে ঊদিতাকে নিয়ে।হারিয়ে ফেলবে না তো আবার তার প্রাণপ্রিয়াকে!নয়তো সে নিজেও আর বেঁচে থাকতে পারবে না যে।নিঃশ্বাসটা আটকে আসছে তার অজানা আশংকার কথা ভেবে।
মি.মোরশেদ,মি.এনামুল ও আশিয়ানের ভাইয়েরা তাকে শান্তনা দিচ্ছে বারবার।কিন্তু এসব শান্তনা তার কর্ণকুহরে প্রবেশ করছে না।একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অটির কেবিনের দরজার দিকে।চিত্রা বলেছে ঊদিতার নরমাল ডেলিভারি হবে।মিসেস ইয়াসমিন আশিয়ানের কাঁধে হাত রেখে তাকে দুশ্চিন্তা করতে মানা করেন।আশিয়ান অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় মায়ের দিকে।
এমনসময় চিত্রা বাইরে বেরিয়ে আসে।এবং আশিয়ানকে বলে,
চিত্রা:-আশু তুই চাইলে ভেতরে আসতে পারিস।তোকে দেখে হয়তো ঊদিতার মনের ভয় কাটবে।আসলে ছুড়ি কাঁচি এসব দেখে আতঙ্কে লাফালাফি শুরু করেছে ঊদিতা।তুই থাকলে মনে সাহস জুগাবে ও,,বেশি ভয় পাবে না।
মিসেস ইয়াসমিন ইশারা করে বললেন তাকে দ্রুত যেতে।চিত্রার কথা শুনে আশিয়ান আর একমুহূর্তও বিলম্ব না করে ত্রস্ত পায়ে কেবিনের ভেতর প্রবেশ করে।তার পেছন পেছন চিত্রা।ঊদিতাকে দুজন নার্স ধরে রেখেছে কারণ ঊদিতা প্রচন্ড রকমের ভয় পেয়েছে।আশিয়ান দ্রুত ঊদিতার কাছে গিয়ে ঊদিতার হাত ধরে।একজন নার্স সরে যায় আশিয়ান আসায়।আশিয়ানকে দেখে ঊদিতা জোরে জোরে কান্না করে দিলো।এই প্রথম আশিয়ানের নাম ধরে বলে;
ঊদিতা:-আশিয়ান,,,,আমার অনেক ভয় করছে!প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবেন না।আমার কষ্ট হচ্ছে ভীষণ!
ঊদিতার কান্না দেখে আশিয়ানও বেদিশা হয়ে গেছে।নিজেকে সামলিয়ে দ্রুত ঊদিতাকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে তাকে শান্ত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সে।আশিয়ানকে শক্ত করে ধরে রেখে থরথর করে কাঁপছে ঊদিতা।আশিয়ান ঊদিতার সাথে মৃদু স্বরে কথা বলতে শুরু করে।ডক্টররা তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছেন ততক্ষণে।একজন নার্স ঊদিতার হাতে ক্যানোলার লাগালেন সেলাইন দেয়ার জন্য।ঊদিতা আশিয়ানের সংস্পর্শ পেয়ে কিছুটা শান্ত হয়েছে ঠিকই কিন্তু ব্যথায় কাতরাচ্ছে অনবরত।অসহনীয় এক যন্ত্রণা যেন এটা।
কিছুসময় পর চিত্রা ঊদিতাকে বললো,
চিত্রা:-ঊদিতা,,,বোন তুমি জোরে জোরে পুশ করো তো!
আশিয়ান ঊদিতাকে ধরে রেখেছে।চিত্রার কথামতো ঊদিতা জানের জোরে পুশ করতে লাগে।ডক্টররা উৎসাহ দিচ্ছেন ঊদিতাকে।একজন নার্স ঊদিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।ঊদিতা মুখের ভেতর ওড়না ঢুকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে জোরে জোরে পুশ করতে লাগে।পুশ করতে করতে বেহুশ হয়ে যাচ্ছে সে বারবার।আশিয়ান কাছে আছে দেখে মনোবল ভাঙেনি ঊদিতার।নিজের চেষ্টায় বারবার শক্তি প্রয়োগ করছে সে।আশিয়ান ঊদিতাকে বারবার সাহস জুগিয়ে দিচ্ছে।
বাইরে সবাই টেনশনে ঘেমে যাচ্ছেন।অজানা আশংকায় সবার বুকই দুরুদুরু করছে।ঊদিতার পরিবারের সবাই হসপিটালে আছেন।মিসেস আনিতা কান্না করতে করতে শেষ।মি.আনিসুল ও শাহরিয়ার চিন্তিত হয়ে পায়চারি করছেন অনবরত।বাকি সবার চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট।ঊদিতা ও তার অনাগত সন্তানের জন্য সবাই মনেপ্রাণে দোয়া করছে।
ডক্টররা খুবই সাবধানে নিজের কাজ করছেন।বাচ্চার মাথাটা বের হয়েছে শুধু।ঊদিতা আশিয়ানের হাত একপ্রকার খামচে ধরে জোরে জোরে পুশ করছে।আশিয়ানের শরীরে থেকে টপটপ করে ঘাম ঝরছে।চিন্তার পাহাড় জমেছে তার মাথার ওপর।তার বউটার যে অতিরিক্ত কষ্ট হচ্ছে।আল্লাহর কাছে মনেপ্রাণে দোয়া করে যাচ্ছে সে নিজের স্ত্রী সন্তানের জন্য।নিজের হায়াতের বিনিময়ে ওদেরকে চাইছে।
সর্বশেষে সমস্ত শক্তি দিয়ে জোরে একটা পুশ করে ঊদিতা অস্ফুটস্বরে আল্লাহু আকবার বলে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।প্রায় আধাঘন্টা চেষ্টা করার পর ডক্টররা বাচ্চাকে বের করতে সক্ষম হলেন।রক্তে রাঙা একটা শিশুকে উচু করে তুলে ধরলো চিত্রা হাসিমুখে।বাচ্চাটা তারস্বরে চিৎকার করে কান্না করছে।আশিয়ান ভেজা চোখে নিজের সন্তানের দিকে তাকালো।টানটান উত্তেজনা হারিয়ে যেতেই আশিয়ান বুঝতে পারলো তার হাত পা ভেঙে আসছে যেন।খুশিতে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করতে লাগলো সে অনবরত।চিত্রা হাসিমুখে আশিয়ানকে বলে উঠে;
চিত্রা:-কংগ্রাচুলেশনস আশু,,,মিষ্টিমুখ করা আগে,,,ফুটফুটে একটা ছেলের বাবা হয়েছিস তুই।
আশিয়ান চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আনন্দের আতিশয্যে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো;
আশিয়ান:-আলহামদুলিল্লাহ,,,, আলহামদুলিল্লাহ,,, আলহামদুলিল্লাহ!আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন।
সেন্সলেস ঊদিতার কপালে আলতো করে একটা চুমু খেলো আশিয়ান।ঊদিতার নাকমুখ ও গলা ঘেমে-নেয়ে একাকার।শরীরের জামাটাও ভিজে একসা হয়ে গেছে ঘামের জন্যে।দুজন নার্স পিচ্চিটাকে পরিষ্কার করে তোয়ালে দিয়ে প্যাঁচিয়ে আশিয়ানের কোলে এনে দিলো।বাকি নার্স ও ডক্টররা ঊদিতাকে নিয়ে পড়েছেন।আশিয়ান কাঁপা কাঁপা হাতে ছোট্ট বেবিটাকে নিজের কোলে নিলো।ছেলের মুখ দেখে খুশিতে আবারও কেঁদে ফেলে সে।এটা যে আনন্দের কান্না,,খুশির কান্না।
বাচ্চাটার শরীর থেকে কী সুন্দর একটা মিষ্টি স্মেল ভেসে আসছে।আশিয়ান মুচকি হেসে নিজের ছেলের কপালে চুমু খেলো।পিচ্চিটা অনেক ছোট্ট।হাত পা গুলো তো একদম ছোট ছোট।আশিয়ানের অবয়ব ফুটে ওঠেছে যেন বাচ্চাটার চেহারায়।কী নিষ্পাপ ওর চেহারা।দুধসাদা ফর্সা এবং কী মিষ্টি দেখতে।মুখে ছোট্ট একটা আঙ্গুল পুরে চোখ বুঁজে ঘুমিয়ে আছে।আনমনে হেসে বললো;
আশিয়ান:-আমার ছেলে দিয়ান!
আশিয়ান ঊদিতার মাথায় হাত বুলিয়ে অটি কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো।ঊদিতাকে চেকআপ ও পরিষ্কার করিয়ে অন্য একটা কেবিনে শিফট করা হবে তাই আশিয়ান বেবিকে নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো।
আশিয়ানের পরিবার ও ঊদিতার পরিবারের সবাইকে একজন নার্স ততক্ষণে বলে দিয়েছে যে ঊদিতা ছেলে সন্তানের মা হয়েছে।ওনারা সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ঊদিতা ও তার সন্তানকে দেখার জন্য।ঠিক তখনই আশিয়ানকে তোয়ালে দিয়ে মোড়ানো একটা বাচ্চা কোলে নিয়ে কেবিন থেকে বের হতে দেখে সবাই যারপরনাই আনন্দিত হয়ে গেল।মিসেস ইয়াসমিন ও মিসেস আনিতা দ্রুত এগিয়ে এলেন আশিয়ানের সামনে।আশিয়ান তাদের দিকে তাকিয়ে বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে বললো;
আশিয়ান:-আম্মু দেখো,,,আমার ছেলে!
মিসেস ইয়াসমিন নাতীকে কোলে নিয়ে কপালে চুমু খেয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলেন।এনা তো খুশিতে আত্মহারা।বাকিরাও সেইম।মিসেস ইয়াসমিন ওনার বেয়াইনের কোলে নাতীকে দিলেন।শাহরিয়ার এগিয়ে এসে দেখছে তার পিচ্চি বোনটার ছেলেকে।শাহরিয়ার আশিয়ানের সাথে কোলাকুলি করলো খুশিতে।শাহরিয়ার জিজ্ঞেস করলো;
শাহরিয়ার:-ভাই আশিয়ান,,,,আমার বোনটা কেমন আছে?
আশিয়ান:-আলহামদুলিল্লাহ,,,ও ভালো আছে।তবে ওর শরীরটা একটু দুর্বল।
মি.আনিসুল:-কখন আমার মেয়েটাকে দেখতে পাবো বাবা?(চিন্তিত কন্ঠে)
আশিয়ান:-ওকে ওরা কেবিনে শিফট করার পর যখন সেন্স ফিরে আসবে তখনই দেখা করতে পারবো আমরা।
মি.মোরশেদ নাতী হওয়ার সুবাদে ওনার সেক্রেটারিকে ফোন দিয়ে বললেন মিষ্টি কিনে সবাইকে খাওয়াতে।মিডিয়াতেও ততক্ষণে জানাজানি হয়ে গেছে যে আশিয়ান ছেলের বাবা হয়েছে।বেশ কয়েকজন রিপোর্টারও চলে এসেছে হসপিটালে তবে আশিয়ানের ভাইরা তাদেরকে সামলে নিয়েছে কোনোমতে।
🍁🍁🍁
প্রায় আধাঘন্টা পর ঊদিতার জ্ঞান ফিরে এলো।ছেলেকে ঊদিতার পাশেই শুয়িয়ে দিয়েছেন মিসেস ইয়াসমিন।ঊদিতা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাচ্চাটার দিকে।আশিয়ান কেবিনে নেই।সেন্স ফিরার পর থেকে ঊদিতা আশিয়ানকে দেখতে পায় নি।ওর মনটা খালি আকুপাকু করছে আশিয়ানকে দেখার জন্য।একে একে সবাই ঊদিতার সাথে দেখা করে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো।সবশেষে আশিয়ান কেবিনে প্রবেশ করলো।ঊদিতা দিনদুনিয়া সব ভুলে আশিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।একদম শান্ত হয়ে গেছে সে প্রিয়তম স্বামীকে দেখতে পেয়ে।আশিয়ানের ঠোঁটের কোণে নজরকাঁড়া হাসি দেখে ঊদিতা ফিদা।
আশিয়ান হাসিমুখে ঊদিতার কাছে এসে বসলো।ঊদিতা প্রেম প্রেম চোখে তাকিয়ে আছে আশিয়ানের দিকে।আশিয়ান ছেলের গালে দু আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করলো।পিচ্চিটা হালকা একটু শরীর মুচরিয়ে আবার ঘুমিয়ে গেল।ছেলেটা ভীষণ ঘুমকাতুরে ভাবতেই ঠোঁট এলিয়ে হাসে আশিয়ান।ঊদিতা বাপ ছেলের দিকে তৃপ্তির হাসি দিয়ে তাকায়।ঊদিতা বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে বলে;
ঊদিতা:-আমাদের ছেলে দিয়ান!
আশিয়ান ঊদিতার দিকে মুচকি হেসে তাকালো এবার।ঊদিতার ডাগর ডাগর আঁখি জোড়ায় সবসময়কার মতো আজও নিজেকে হারিয়ে ফেলে সে।ঊদিতার কপালের সাথে কপাল ঠেকায় আশিয়ান।ঊদিতার নাকে মুখে আশিয়ানের গরম নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ে।পরম আবেশে চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয় ঊদিতা।ঊদিতার হাতের আঙ্গুলের ভাঁজে নিজের হাতের আঙ্গুল ঢুকিয়ে শক্ত করে ধরে আশিয়ান নেশা ধরানো কন্ঠে বলে;
আশিয়ান:-অনেক ধন্যবাদ তোমাকে জান,,,আমাকে এত সুন্দর একটা অনুভূতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য।বাবা হওয়ার আনন্দটা তুমি থাকায় আজ খুব করে অনুভব করছি।আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই তোমার মতো একজন অর্ধাঙ্গিনীকে আমার জীবনে উপহার স্বরুপ পাঠানোর জন্য।
ঊদিতা অন্য হাত আশিয়ানের গালে রাখলো।আজ প্রথম নিজে থেকে আশিয়ানের ঠোঁটে চুমু খেয়ে ফিসফিস করে বললো;
ঊদিতা:-বিয়ে হওয়ার আগে ভাবতাম বিয়ের পর আপনি আমাকে পছন্দ করবেন কী না!আপনার সাথে অন্যান্য স্বামী স্ত্রীদের মতো আমার সম্পর্কটা সহজ হবে কী না!কারণ আপনার আর আমার বয়সের পার্থক্য নিয়ে নানাজনের মুখ থেকে নানা কথা শুনেছি।আমার পরিবারের লোকেরা হয়তো এই ভেবে রাজি হয়েছেন যে আপনার মতো কোনো প্রভাবশালী লোকের সাথে বিয়ে হলে আমি অনেক ভালো থাকবো,সুখে থাকবো।কিন্তু আমি শুধু আল্লাহর কাছে চাইতাম একজন সুন্দর মনের ভালো মানুষের সাথে যেন আমার বিয়ে হয়।তাহাজ্জুদের নামাজেও এমন একজনকে চেয়েছি যে আমাকে মনেপ্রাণে ভালোবাসে।এখন দেখুন,,আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন।আমি কত সৌভাগ্যবতী যে আপনার মতো একজনকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছি।আলহামদুলিল্লাহ।আমি অনেক খুশি আপনাকে পেয়ে।জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত আপনাকেই শুধু ভালোবেসে যাবো।অনেক অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি আমার বাচ্চার বাবাকে।
আশিয়ান ঊদিতার সারা মুখে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিতে লাগে।ঊদিতা চোখ বন্ধ করে মুচকি হেসে আশিয়ানের আদরগুলো অনুভব করছে।ঊদিতা একহাত দ্বারা বাচ্চাকে বুকের সাথে লাগিয়ে অন্যহাত দিয়ে আশিয়ানের গাল আঁকড়ে ধরে তার ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট জোড়া মিশিয়ে নেয়।আশিয়ান একহাত ঊদিতার ঘাড়ে ও একহাত ঊদিতার গালে রেখে তার আদরে সাড়া দিতে লাগে।দুজন দুজনকে অনুভব করতে ব্যস্ত।ভালোবাসাময় মুহূর্তে দুজন দুজনার মাঝে বিলীন হয়ে গেছে।
প্রায় মিনিট দশেক পর বাচ্চার কান্নার শব্দ কানে আসতেই আশিয়ান ঊদিতার ঠোঁট জোড়া ছেড়ে দেয়।ঊদিতা তাকায় পিচ্চির দিকে।পিটপিট করে ঊদিতার চোখের মতো ডাগর ডাগর চোখ মেলে আশপাশে চঞ্চল দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে দিয়ান।যেন চিন্তায় পড়ে গেছে,,,”এ আমি কোথায় এলাম?”
আশিয়ান:-বাচ্চাটার মেবি খিদে পেয়েছে ঊদিতা!ওকে খাওয়াউ!
আশিয়ান ঊদিতাকে ঠিক করে শুতে সাহায্য করে বাচ্চাকে ঊদিতার একদম কাছে নিয়ে রাখে।ঊদিতা দিয়ানকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ব্রেস্ট ফিডিং করাতে ব্যস্ত হয়ে যায়।
🌼🌼🌼
আজ থেকে প্রায় দুদিন পর ঊদিতাকে হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ দেয়া হয়।হসপিটাল থেকে সব ফর্মালিটি মেইনটেইন করে ঊদিতাকে ও বাচ্চাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে।বাসার ভেতর প্রবেশকালে ঊদিতার কোলে দিয়ান আর আশিয়ানের কোলে ঊদিতা ছিলো।দৃশ্যটা ভীষণ সুন্দর।এনা ঝটপট এত সুন্দর মুহূর্তটি ফোনে ক্যাপচার করে ফেলে।
সারা বাড়ি জুড়ে আবারও উৎসবঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।বাসার সবাই ভীষণ আনন্দিত দিয়ানের আগমনে।দিয়ানই একমাত্র বংশের প্রদীপ বলা যায় কারণ সব ভাইবোনদের মাঝে একমাত্র আশিয়ানেরই ছেলে সন্তান হয়েছে বাকিরা মেয়ে সন্তানের বাবা।যদিও এটা নিয়ে কোনো হইচই নেই।কারণ তাদের পরিবারে ছেলে মেয়ের মধ্যে কোনো বৈষম্য সৃষ্টি করা হয় না।সবাই সমান অধিকারের যোগ্য।
আশিয়ান ঊদিতাকে সোফায় বসালো।একে একে সবাই দিয়ানকে এসে ছুঁয়ে দেখছে।এনা ঊদিতার কোল থেকে দিয়ানকে নিয়ে বিভিন্ন এংগেল থেকে ফটো তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।মিসেস ইয়াসমিন ঊদিতার একপাশে ও মিসেস আনিতা অন্যপাশে বসেছেন।মিসেস তারানা একটা প্লেটে খাবার এনে মিসেস আনিতার হাতে দিতেই তিনি ঊদিতাকে যত্নসহকারে খায়িয়ে দিতে লাগলেন।ঊদিতারও খিদে পেয়েছে অনেক তাই সে বাধ্য মেয়ের মতো মায়ের হাতে খেতে লাগে।এনার কোল থেকে দিয়ানকে মিসেস ইয়াসমিন নিজের কোলে নিয়ে ওর মাথায় ও শরীরে নরম একটুকরো কাপড় গরম করে স্যাক দিতে ব্যস্ত হয়ে গেছেন।
বেশ কিছুক্ষণ স্যাক দেয়া শেষে ওকে তার দাদার কিনে আনা নতুন কাপড় পড়িয়ে দিয়ে নানার আনা টাওয়েল দিয়ে প্যাচিয়ে মি.মোরশেদের কোলে দিলেন।মি.মোরশেদের দুই পাশে এরাত আর পুতুল ওরা বারবার তাদের ভাইকে ছুঁয়ে দিচ্ছে।মি.এনামুল আতিয়াকে কোলে নিয়ে বসে বসে নাতীকে দেখছেন।
কিছুক্ষণ পর আশিয়ান এসে ঊদিতাকে কোলে নিয়ে নিলো মিসেস ইয়াসমিনের কথামতো।ঊদিতাকে এখন প্রপার রেস্টে থাকতে হবে।কারণ ওর শরীর এখনও অনেক দুর্বল।ঊদিতা একহাতে দিয়ানকে কোলে নিয়ে অন্য হাতে আশিয়ানের গলা জড়িয়ে ধরে আছে।আশিয়ান ঊদিতার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে নিজের রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।
রুমে এসে সারারুমে চোখ বোলাতেই ঊদিতা তো শকড।আগের রুম আর এখনের রুমে প্রচুর পার্থক্য আছে।যেখানেই চোখ পড়ে খালি বাচ্চাদের জিনিস দেখতে পায় সে।বাচ্চাদের ওয়ার্ড্রোব,বাচ্চাদের খেলনা,বাচ্চাদের র‍্যাক,বাচ্চাদের ছোটখাটো দোলনা,মশারি,বেবি পুশ চেয়ার,বাচ্চাদের কাঁথা বালিশ,কোলবালিশ,বিছানা হেন কোনো জিনিস কিনে আনতে বাকি রাখে নি আশিয়ান।সবকিছু সুন্দর ভাবে সাজানো গোছানো আছে।বিছানার সামনে দেয়ালে মেজেন্টা কালারের ইংলিশ অক্ষরের বেলুন দিয়ে সাজিয়ে লেখা “ওয়েলকাম টু হোম আওয়ার সন দিয়ান!”
আশিয়ানের এমন পাগলামি দেখে ঊদিতা হেসে ফেললো।পিচ্চিটা ঘুমিয়ে আছে।আশিয়ান ঊদিতার কপালে ও বাচ্চার কপালে চুমু খেয়ে বললো;
আশিয়ান:-ওয়েলকাম টু আওয়ার রুম সুন্দরী!পছন্দ হয়েছে তোমার?
ঊদিতা আশিয়ানের গালে একটা চুমু খেয়ে খুশি হয়ে বললো;
ঊদিতা:-ভীষণ পছন্দ হয়েছে!অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আমাদেরকে এরকম সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য।
আশিয়ান মুচকি হেসে ঊদিতাকে আস্তেধীরে বিছানার ওপর বসালো।আশিয়ান ঊদিতার কোল থেকে বাচ্চাকে নিজের কোলে নিয়ে সাবধানে ঊদিতার পাশেই ছোট একটা বালিশের ওপর ওর মাথা রেখে ঘুম পাড়িয়ে দিলো।শরীরের ওপর পাতলা একটা কাঁথা দিয়ে দু পাশে কোলবালিশ রেখে গালে চুমু খেয়ে সরে এলো সে।ঊদিতা গাল ফুলিয়ে আশিয়ানকে অভিযোগ করে বলে;
ঊদিতা:-পিচ্চিটা এত ঘুমায় কেন?হওয়ার পর থেকেই তো খালি ঘুমাচ্ছে।এত ঘুম তো আতিয়াও ঘুমায় নি জন্মের পর!তাহলে আপনার ছেলে এত ঘুমকাতুরে স্বভাবের কীভাবে হলো বলুন তো?
আশিয়ান ঠোঁট টিপে হেসে জবাব দিলো;
আশিয়ান:-কিছু বলার নেই,,ওর মাও এমন ঘুমকাতুরে স্বভাবের।মায়ের স্বভাব তো ছেলে পাবেই এটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার!তুমি ঘুমিয়ে গেলে আর দুনিয়ার কোনো হুঁশ থাকে না।তো তোমার ছেলে এমন না হলেই বরং অড লাগবে!
ঊদিতা:-হুহ,,,কে বলেছে আমি এত ঘুমাই!আপনি শুধু শুধু মিথ্যা কথা বলেন!আমি মোটেই এত ঘুমাই না।
আশিয়ান ঠোঁট এলিয়ে হেসে ফেললো।তারপর আলমারি থেকে নতুন একটা ঢিলাঢালা মেক্সি ও পাজামা নিয়ে ঊদিতার কাছে এসে বললো;
আশিয়ান:-বউটা আমার!হসপিটাল থেকে এসেছো,,,এখন জামাটা চেঞ্জ করে নাও তো একটু কষ্ট করে।তারপর ঔষধ খেয়ে ঘুমাবে।
ঊদিতা:-আপনি পড়িয়ে দিন,,আমি পারবো না।পেটে ব্যথা করবে বেশি নাড়াচাড়া করলে।
আশিয়ান বিনাবাক্যব্যয়ে ঊদিতাকে যত্নসহকারে ড্রেস চেঞ্জ করে দিতে লাগে।কাপড় পাল্টানো শেষে একগ্লাস পানি ও নির্দিষ্ট ঔষধ গুলো ঊদিতাকে দেয় সে।ঊদিতা চুপচাপ ঔষধ গুলো খেয়ে নেয়।তারপর আশিয়ানের সাহায্যে বিছানায় শুয়ে পড়ে সে।ঊদিতা আবদারের করে বলে;
ঊদিতা:-আপনিও আসুন না!আপনাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে ইচ্ছা করছে।
আশিয়ান:-এইতো সোনা আমি আসছি।তুমি ঘুমানোর চেষ্টা করো,আমি নিচ থেকে একটা চক্কর দিয়ে আসি।
ঊদিতা সায় জানিয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে।আর আশিয়ান নিচে চলে যায়।
কিছুক্ষণ পর রুমে এসে আশিয়ান ডোর লক করে নিজের জামা পাল্টে ঊদিতার পাশে এসে শুয়ে পড়ে।ঊদিতা পিচ্চিকে খাওয়াচ্ছে।আশিয়ান পিছন থেকে ঊদিতাকে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় পুরোপুরি।কানে কানে ফিসফিস করে বলে;
আশিয়ান:-ভালোবাসি!
ঊদিতা মুচকি হেসে জবাব দেয়;
ঊদিতা:-আমিও ভালোবাসি!
(আগামী পর্বে সমাপ্তি টানা হবে হয়তো।আজকের পর্ব পড়ে কার কেমন লাগলো রিয়েক্ট ও কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।হ্যাপি রিডিং গাইজ।)
চলবে…🍃

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here