#মন_পাথরে_হঠাৎ_ঝড়
#পর্ব_১১
Tahrim Muntahana
সূর্যটা উঁকি দিয়েছে মাত্র। হালকা বাতাসে সকাল টা একদম স্নিগ্ধ লাগছে। যে কারোর মন ভালো করে দেওয়ার মতো মনোরম পরিবেশ। এই মনোরম পরিবেশে আদর দাড়িয়ে আছে ছাদের রেলিং ঘেসে। চোখ মুখে বিষাদের ছায়া। মনের মধ্যে ঘুরছে নানান কিছু। শান্তি লাগছে না মনে।
কালকে রাতের কথা মনে হতেই আদর শক্ত করে রেলিং টা ধরে রইলো। বিষণ্নতা যেন কয়েকগুন বেড়ে গেলো। ভাবতে লাগলো কালকের কথা,
হাসান শিকদারের মোবাইল চেক করে ওরা একটি প্রাইভেট নম্বর থেকে ম্যাসেজ পায়। যেখানে লিখা ছিলো,
‘আর খুঁজার চেষ্টা করো না আহনাফ চৌধুরীকে। সে এখন আমার বন্দী। আমার উদ্দেশ্য সফল না হওয়া পযর্ন্ত সে আমার খাঁচায় থাকবে। আর যেদিন আমার উদ্দেশ্যে সফল হবে সেদিন ইনফরমেশন পেয়ে যাবে। তোমার প্রতিশোধকে সেদিন তোমার খাঁচায় দিয়ে যাবো।’
ম্যাসেজটি পড়ে সবাই অবাক হয়েছিলো। কি উদ্দেশ্য লোকটির? হাসান শিকদার জানায় লোকটি আর কখনো ম্যাসেজ পাঠায়নি। তাই সবাই ধরে নেয় আহনাফ চৌধুরী এখনো বেঁচে আছে। রাত গভীর হচ্ছে বলে হৃদান আদর দের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। কোনো কথা বলে না সে। আদর ও নির্জিব ছিলো তখন। হাসান শিকদারের ঠায় হয় কোডেটে! ভয়ংকর সেই কসাই খানায়!
হঠাৎ কারো উপস্থিতি টের পেয়ে আদর ভাবনা থেকে বের হলো। নড়লো না, চুপটি করে রইলো। আতইয়াব এসেছে। আতইয়াব বোনের মলিনতা বুঝতে পারলো। তাই কথা বাড়ালো না; যদিও তার অনেককিছু জানার ছিলো। ঘুরে চলে যেতে নিবে আদর বলে উঠলো,
কালকে কেন মিথ্যে বলতে বললাম এটাই জানতে চাইছো তো?
আতইয়াব থেমে গেলো। হ্যাঁ তার এটাই জানার ছিলো। আদর ঘুরে তাকালো আতইয়াবের দিকে। মলিন কন্ঠে বলল,
জানতে পারবে। তবে এখন না! কিছুটা পর। সে পযর্ন্ত অপেক্ষা করো ভাইয়া।
আতইয়াব মাথা নাড়িয়ে নিচের দিকে হাটা ধরলো। তার মাথাটাও ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। সে এমন ম্যাচিউর গম্ভীর বোন চায়না; কিছুঘন্টা আগের সেই চঞ্চল ইমম্যাচিউর বাচ্চা বোনটাকে চায়। কবে আবার সবকিছু আগের মতো হবে? কবেই বা সব রহস্যের উন্মোচন হবে?
____________________
আতইয়াব হৃদান মুখোমুখি বসে আছে। আগের মতো দুজনের চোখে রাগ নেই। দুজনের চোখেই প্রশ্ন। দুজন ই আদরের দিকে প্রশ্নাত্মক চোখে তাকিয়ে আছে। কারণ আদর ই তাদের আসতে বলেছে। আদর নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টায় চা বানিয়ে নিয়ে আসলো। কিছুক্ষণ নিরাবতা পালন করে হৃদান বলল,
সুপারহিরো যে ডায়েরীটা দিয়েছে সেটি কোথায় আদর? তোমার বাবা মানে আমার মামা! একটা রাতেই সম্পর্কের পরিবর্তনটা দেখার মতো! তুমি আমি সম্পর্কে মামাতো ফুফাতো ভাই-বোন!
কে মামাতো বোন আপনার? আহনাফ চৌধুরী আমার বাবা নয়!
চমকে উঠলো হৃদান। কি বলছে আদর? একেক সময় একেক কথা কেন বলছে? তাহলে আহনাফ চৌধুরীর মেয়ে কোথায়? হৃদান কিছু বলবে তার আগেই আদর বললো,
কালকে যা বলেছি তার কিছু সত্য ছিলো কিছু মিথ্যে ছিলো। আমার বাবা হলো জার্নালিস্ট রাতাফ আহমেদ। গোপনে কাজ করছিলেন আহনাফ চৌধুরীর মিসিং রহস্য নিয়ে। আমার বয়স তখন ১১ বছর। বাবা জানতেন এই রহস্য বের করতে তাকে অনেক বিপদের মুখে পড়তে হবে। কিন্তু আহনাফ আংকেল তো বন্ধু ছিলো। বেস্টফ্রেন্ড! কি করে পিছিয়ে যেতো। মা তো সেই কবেই মরে গেছে। আমার সেইফটির জন্য আমাকে এতিম খানায় রেখে আসলো। বাবা থাকতেও একটা মাস আমার এতিম হয়ে থাকতে হয়েছে। বাবার উপর অনেক অভিমান জমা হয়েছিলো। এক মাস পর বাবা আসলেন।সাথে আনলেন আতইয়াব ভাইয়াকে। বললেন সে আমার বড়ভাই। এতদিন লুকিয়ে রেখেছিলো কোনো কারণে। ছোট ছিলাম বিশ্বাস করে নিয়েছিলাম। সেদিন ই বাবা আমাকে আর ভাইয়াকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেয়। ভাইয়া তখন ভালোয় বড়। বাবার সরল কথায় সব বিশ্বাস করে বাবাকে ছেড়ে চলে এসেছিলাম। কিন্তু একদিন হঠাৎ করে খবর এলো আমার বাবা দুর্ঘটনায় স্পট ডেথ! মানতে পারছিলাম না। তাড়াহুড়োয় চলার সময় দেয়ালের সাথে জোরে ধাক্কা খাওয়ায় শর্ট টাইম মেমোরি লস ছিলো। মেমোরি তো তখন ফিরে পেলাম যেদিন দেখা হলো আহনাফ আংকেলের মেয়ের সাথে। ছয় মাস আগের কথা। ভার্সিটি তে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে একটি মেয়ের সাথে ধাক্কা লাগে আর মেয়েটি পড়ে যায়।অনেক গুলো ব্যাগ ছিলো মেয়েটির কাছে। মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। কিছু বলবো তার আগেই মেয়েটি নিজের ব্যাগটা ফেলে দৌড়ে চলে যায়। তার আগে আমার সামনে একটা চিরকুট ফেলে যায়। চিরকুটে লিখা ছিলো,
আমি জানিনা আপনি কে? কেমন মানুষ তাও জানিনা। শুধু বলবো আমার ব্যাগটি একটু যত্ন করে রাখবেন। ব্যাগের মধ্যে রাখা ডায়েরীটা খুলে দেখবেন। তারপর নাহয় আমাকে খুঁজে বের করবেন। রহস্যও খুঁজতে পারেন যদি আপনি ভালো মানুষ হোন!
অনিশ্চিত ছিলো ভাবনা। কার হাতে যেন পড়ে। আমি লুকিয়ে বাসায় এনে রাখি ডায়েরীটা। খোলার সাহস হয়নি। একদিন হঠাৎ করে মনে হতেই ডায়েরীটা নিয়ে বসি। যেখানে আহনাফ আংকেল নিজের কেসের সম্পর্কে বলেছিলেন। চৌধুরী পরিবারের কেসের সম্পর্কে বলেছেন। পারিবারিক শত্রুতা সম্পর্কেও বলেছেন। শুধু আপনাদের নামগুলো সাসপেন্স রেখেছেন। হয়তো উনি ভেবেছিলেন ডায়েরীটা খারাপ লোকের হাতে পড়লে আপনি বিপদে পড়তে পারেন। ডায়েরীর অর্ধেক পাতা আহনাফ আংকেল আর তার পরের পাতার লিখাগুলো সম্ভবত তার মেয়ের। বাবার বলা কিছু কথা মিলে যাচ্ছিলো ডায়েরীর সাথে। সেদিন ই হুট করে সম্পূর্ণট মনে পড়ে আমার। মেয়েটি পরের পাথাগুলোয় বলেছিলেন সেদিন হামলার রাতে তাকে আহনাফ আংকেল তার এক বন্ধুর কাছে রেখে যায়। বন্ধুটি ভালো হলেও তার বউ খারাপ ছিলো। মেয়েটিকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। মেয়েটি তখন হৃদানের সমবয়সী ছিলো। চারদিকে তো খারাপ মানুষের বালাই নেই। তার ই পাল্লায় পড়ে। সেদিন উদ্ধার করে একটা বৃদ্ধ মহিলা যিনি ছিলেন বড় ফ্যামিলের। সেই বাড়িতেই থাকতেন তিনি। কিন্তু বৃদ্ধটি মারা যাওয়ার পর মেয়েটিকে বাড়ির সবাই কাজের মেয়ে বানিয়ে দেয়। মেয়েটি ডায়েরী তে একবার ও ওই বাড়ির কথা উল্লেখ করেনি। নাহলে এতদিন আমি তাকে আমার কাছেই রাখতাম। মেয়েটি এত এত ধাক্কা সামলিয়েও নিজের বাবাকে খুঁজার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ওই বাড়িতে থেকে সম্ভব হচ্ছিলো না। তবুও সাহস করে বাড়ি থেকে বের হতো। যেদিন আমার সাথে দেখা হয় সেদিন ওই বাড়ির কাউকে দেখেই ভয় পেয়েছিলো হয়তো। তাই পালিয়ে গিয়েছিলো। এখন কথা হলো খুঁজবো কি করে তাকে।
এতকিছু ঘটেছে আতইয়াব হৃদান ভাবতেই পারছে না। আদর ছয়মাস ধরে এত প্ল্যান করে রেখেছে বুঝার উপায় ই নেই। হৃদান বলল,
কিন্তু তুমি নিজেকে সুপারহিরোর মেয়ে বললে কেন?
কারণ আমার সন্দেহ মতে আহনাফ আংকেল বেঁচে থাকলেও বা না থাকলেও অপরাধী আহনাফ আংকেলে মেয়েকে খুঁজ করতো। কারণ ডায়েরী অনেক কিছুই লিখা ছিলো। আর আপনি যার অপারেশন করিয়েছেন এসবের পেছনে কে জানার জন্য তার সাথে আমার একবার দেখা হয়েছিলো হসপিটালে। ফোনে সে বারবার কিসব বলছিলো। হাসান শিকদারের সাথে মেবি ঝগড়া করছিলো। আর রেস্টুরেন্টে হাসান শিকদারকে দেখে; তার উপর সুপারহিরো সুপারচ্যাম্প ডাক শুনে দুই এ দুই চার করলাম। আর আমার মনে হয়েছে হাসান শিকদার এসবে একা নেই। তার সাথে আরো একজন জড়িত।যে এসবের মূলে। তাই প্ল্যান করলাম আমি তো সব জানি তাহলে নিজেকে আহনাফ চৌধুরীর মেয়ে বললে কিছু রহস্য খুলতে পারে। আর আমি রেস্টুরেন্টের একদম ভেতরে দরজার পাশে একজন কে দাড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম। যে কান পেতে শুনছিলো সবকিছু। আমার মনে হয়েছে সে হয়তো শত্রুপক্ষের কেউ। তাই একটু রিস্ক নিলাম। সবটা সন্দেহের বশে করেছি। এখন ঢিলটা যদি ঠিক জায়গায় লাগে তাহলে আহনাফ আংকেল আর তার মেয়েকে খুঁজে পাবো। আর বাবার অসম্পূর্ণ কাজটা সম্পূর্ণ হবে। জার্নালিজম নিয়ে পড়াটা তো এর জন্যই।
আর ভাইয়া মিথ্যে বলেছে আমার কারণে। এক ফাঁকে ভাইয়ার কাছে গিয়ে হালকা করে বলেছিলাম এমন করে বলতে। আর আমার ভাইয়া তো কামাল করে দিয়েছে। কি এক্টিং টাই না করলো! আমি তো জাস্ট ফিদা।
আদর হেসে উঠলো। আতইয়াব বোনের মুখে হাসি দেখে নিজেও হাসলো। কিন্তু হৃদান তখনো গম্ভীর হয়ে বসে আছে। হয়তো ভাবছে কোথায় খুঁজবে তিনজন কে। তারা কি আদও বেঁচে আছে? আদর হাসি থামিয়ে আতইয়াবের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,
তোমার পরিচয় কি ভাইয়া?
আমি সবটাই বলেছি সেদিন। শুধু শেষের কথাগুলো মিথ্যে ছিলো। সৎ মায়ের আত্যাচারে বাড়ি থেকে চলে আসি। হঠাৎ করেই তোমার বাবার সাথে দেখা হয়। কিছুদিনের পরিচয়ে বাবা আমাকে অনেকটা ভালোবাসা দিয়েছিলো। বাবা বলে ডাকতাম তোকে। তোমার কথা আমাকে বলতো। তোমাকে দেখার জন্য ছটফট করতাম। বাবা বলতো একদিন সময় হলে দেখা করাবে। সেদিন ই বললো বোন কে নিয়ে অন্যত্র চলে যেতে হবে। কথা দিয়েছিলাম বাবাকে তোমার কোনো ক্ষতি হতে দিবো না। জানতেও দিবো না তুমি আমার রক্তের কেউ না। কিন্তু আত্মার কেউ!
আদরের কাছে এবার সবটা পরিস্কার। এতকিছু শুনেও হৃদান চুপ। কোনো প্রতিক্রিয়া করছে না। আদর বুঝতে পারলো হৃদানের মনের অবস্থা। তাই বলল,
হৃদান শুনুন। আপনি হাসান শিকদার কে আরেকটু টাইটলি জিজ্ঞাসবাদ করেন। তার কাছেই আপনার বোনের মিসিং হওয়ার ইনফরমেশন আছে। কারণ সে এই ব্যাপারটা সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেছে।
এতকিছুর মাঝে হৃদান এটা খেয়াল ই করেনি। আদর ঠিক করেছে। একটা আশা খুঁজে পেলো যেন। হৃদানের মুখেও হাসি ফুটে উঠেছে। আতইয়াবের বিরক্ত লাগছে হৃদান কে। আদরের সাথে মেশাটা তার ভালো লাগে না। হৃদান উঠে চলে গেলো। তারিম বিরক্তি নিয়ে তাকালো আতইয়াবের দিকে। আতইয়াব কিছু বললো না। তার বোনের ক্ষতি সে হতে দিবে না!
_____________________
হৃদান দাড়িয়ে আছে কোডেটের সামনে। অপেক্ষা করছে সময়ের। সময়ের আগে কোডেটের দরজা খুলবেনা। সে একটু তাড়াতাড়িই চলে এসেছে। সময় হতেই কোড বসিয়ে ভেতরে চলে গেলো। যেখানে হাসান শিকদার কে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। হৃদান শান্ত হয়ে সোফায় বসলো। রেগে যাওয়া যাবে না। হাসান শিকদার হৃদান কে দেখেই ভয় পেয়ে গেলেন। হৃদান দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
আমার বোন কোথায়?
চমকালেন মি. শিকদার। সে তো সুক্ষ্ম ভাবে এড়িয়ে গেছেন ব্যাপারটা। আবার নতুন করে চলে আসছে। হাসান শিকদার মুখ খুলছে না বলে হৃদান পিয়াস কে বলল,
ওর ঠিক নিচে আগুন জ্বালিয়ে দে। দেখি কতক্ষণ ঠিক থাকে!
হাসান শিকদার মিনতি করলেও কাজ হলো না। পিয়াস হৃদানের কথা মতো আগুল জ্বালিয়ে দিলো। প্রথম ঠিক ছিলো কিন্তু আগুনের শিখা যখন বাড়ছিলো আর হাসান শিকদারের শরীরটা একটু একটু করে লালচে হয়ে কালোতে রূপ নিচ্ছিলো তখন আর সইতে পারলেন না তিনি। চিৎকার করে বলে উঠলেন সে সব বলবে। হৃদান বাঁকা হাসলো। কাজ দিয়েছে! আগুন নেভানো হলো। হাসান শিকদার কে নামায়ি নিচে বসালো। তিন কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে থেকে বলল,
সেদিন মি চৌধুরী বাড়িতে ছিলেন। সাথে তোমার বোন। হামলা করি আমরা। তাকে মেরে তোমার বোনকেও মারতে চাই কিন্তু আমার লোক বুদ্ধি দিলো দ্বিগুন হারে বিক্রি করা যাবে। তাই করলাম। বিক্রির জন্যই নিয়ে যাচ্ছিলাম। ততক্ষণে আহনাফ চৌধুরী সব জায়গায় এসব খবর জানিয়ে দেয়। পুলিশ গাড়ি চেক করছে। ভয় পেয়ে তোমার বোন কে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়ি। দৌড়াতে থাকি। কিন্তু হোচট খেয়ে রাস্তার একপাশে পড়ে যায় তোমার বোন। ওখান দিয়ে যাচ্ছিলেন একজন মধ্যবয়স্ক লোক। আমি লোকটিকে চিনি। পিজি কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন। আমি অনেকবার গিয়েছি ওই কলেজে। লোকটির কি নাম যেন মনে নেই। সেই তোমার বোনকে নিয়ে যায়। ওইদিকেই যাবো কিন্ত আমি রাস্তার মধ্যে থাকায় একটা গাড়ি ধাক্কা মেরে দেয়। জ্ঞান হারায়। ফেরার পর অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি।
হৃদান আর দাড়ায় না। এক ছুটে বেরিয়ে যায় কোডেট থেকে। উদ্দেশ্য তার পিজি কলেজ। আজকেই এসব রহস্য বের করবে সে। এখান থেকে যেতে অন্তত দু’ঘন্টা লাগবে। স্পিড বাড়িয়ে দিলো। পৌঁছাতে লাগলো দেড় ঘন্টা। মুখে মাস্ক পড়ে যাওয়ায় কেউ চিনে নি। আর আজ কে তাড়াহুড়োয় সে গার্ড নেয়নি। হেড অফিসে গিয়ে নিজের পরিচয় দিতেই সবাই ভয় পেয়ে যায়। হাসলো হৃদান। আজ সে যদি একজন সাধারণ পাবলিক হয়ে আসতো কিছু তেই তারা এতবছরের পুরোনো ফাইল চেক করতে দিতো না। দপ্তরি কে নিয়ে স্টোর রুমে চলে গেলো। খুঁজতে লাগলো ফাইল। কে জানে আছে কিনা। একেকটা সেকেন্ড যেন হৃদানের কাছে ঘন্টা মনে হচ্ছে। দপ্তরি হাক ছেড়ে জানান দিলো পেয়ে গেছে। দৌড়ে গেলো হৃদান। ফাইলের উপরের নামটা দেখে হৃদান অবাক হলো। সার নেইম টা তার খানিক টা পরিচিত। একটা ছবি দেওয়া আছে বাট সে চিনতে পারছে না। ফাইল টা নিয়ে দপ্তরির হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে বের হয়ে এলো। গাড়ি নিয়ে ছুটলো আদর দের বাড়ির উদ্দেশ্যে। আদর কিছু হেল্প করতে পারে।
ফাইলের দিকে চোখ বড় বড় করে থাকিয়ে আছে আতইয়াব আদর। তারিম রান্না ঘরে রান্না করছে। হৃদান ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
এক্সপ্রেশন দেখে সে চিন্তায় পড়ে গেলো। আতইয়াব কিছু বলবে আদর থামিয়ে দিলো। ওদের কে ইশারা করে বাইরের দিকে যেতে লাগলো। আতইয়াব কিছুটা বুঝলেও হৃদান কিছুই বুঝলো না। তার এখন রাগ হচ্ছে। কিছু বললেও তো পারতো। এভাবে না বলে ছুটার কি আছে!
একটা একতালা বাড়ির সামনে গাড়ি থামালো আতইয়াব। আতইয়াবের মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে ভিষণ চিন্তিত। আর আদর সে তো আজানা কৌতুহলে ছুটেই চলছে। হৃদান মুখটা গম্ভীর করে ওদের পেছনে হাটতে লাগলো। বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়লো একজন মধ্যবয়স্ক লোক সোফায় বসে আছে।
আদর গিয়ে সোফায় বসে পড়লো। মিসেস দেলোয়ারা রান্না করছিলেন। আদর কে দেখেই ছুটে এলেন। আদর কে তার একদম ই সহ্য হয়না। আদর কোনো দিক না তাকিয়েই বলল,
তারিমের প্রতি আপনাদের অবহেলার কারণ টা কি? নিজের মেয়ে তো আপনাদের?
চমকালো দুজন ই। হৃদানের রাগ হলো আরো। সে কি বর্তমানে তারিমের সমস্যা সমাধান করতে আসছে। আগে তার বোনকে খুঁজে বের করতে হবে। তারপর নাহয় তারিমের টা দেখবে সে। তারিমকেও সেখুব ভালোবেসে ফেলেছে। মিসেস দেলোয়ারা কিছু বলবে মি. তারেক চোখ রাঙিয়ে তাকালেন। শান্ত সুরে বললেন,
কে অবহেলা করেছে?
দেখুন আংকেল সোজাসাপ্টা উত্তর দেন। এমনিতেই মাথা ভনভন করছে। তারিম আপনার নিজের মেয়ে না তাইতো? আপনার বাবা তারিম কে কুড়িয়ে পেয়েছিলো তাইতো? তার জন্যই এত অবহেলা!
এবার মি. তারেক রেগে গেলেন। তাই তো পরের মেয়েকে সে কেন আদর করবে। কোথাকার কোন মেয়ে কে বলতে পারে? খারাপ কাজের ফল নাকি কে জানে? তাকে কেন ভালোবাসবে সে? রেগে বললেন,
হ্যাঁ তারিম আমার মেয়ে না। বাবা একদিন একটা মেয়েকে এনে বলে সন্তানের পরিচয়ে মানুষ করতে হবে। কোথাকার কোন মেয়ে। সম্পত্তিও লিখে দিলো মেয়েটিকে। তাই তো কিছু করতে পারিনি। বাড়ি থেকেও বের করতে পারিনি।
আদর আতইয়াব এবার হৃদানের দিকে তাকালো। হৃদান চোখ বড় বড় করে সব শুনছে। আদরের চোখ হৃদানের অবস্থা দেখে ছলছল করে উঠলো। মানুষটা কত কিছু সহ্য করেছে। আদর মাথা নেড়ে সম্মতি দিতেই হৃদান চোখ থেকে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। তার এত বছরের অপেক্ষার আজ সমাপ্তি হয়েছে। আস্তে আস্তে হেটে বাইরে চলে গেলো। মি তারেক এবং মিসেস দেলোয়ারার উদ্দেশ্য আদর বললো,
কোথাকার কোন মেয়ে যাকে বললেন সে হলো নাবিল চৌধুরীর একমাত্র মেয়ে। হৃদান চৌধুরী বোন। আরেকবার উল্টাপাল্টা বলে দেখেন কি হয়!
ওরাও চলে গেলো। মি তারেক আর মিসেস দেলোয়ারা মুখে হাত দিয়ে বসে আছে। চিন্তা করছে। ভয় হচ্ছে বোনকে অবহেলার জন্য তাদের মেরে ফেলবে না তো!
রান্না শেষ করে ড্রয়িং রুমে এসে কাউকে না পেয়ে তারিম ভড়কে গেলো। সদর দরজাটাও খোলা। কি হলো বুঝার জন্য দরজার দিকে যেতেই কেউ ঝড়ের বেগে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলো। চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। তারিম আকস্মিক এমন হওয়ায় ভয় পেয়ে গেছে। কথা বলার সাহস টুকু পাচ্ছে না। নিজের ঘাড়ে গরম পানির আবাশ পেতেই ফট করে মাথা তুললো। হৃদান কে দেখেই অবাক হলো সে। হৃদান তারিমের কপালে শব্দ করে চুমু খেলো। তারিম হা হয়ে শুধু দেখছে। পাশেই আতইয়াব আদর দাড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক হয়ে তারিম কে সব কথা জানালো সে। তারিম তো বিশ্বাস ই করতে পারছে না হৃদান তার আপন ভাই। একদম লেপ্টে আছে হৃদানের বুকে। ভাই-বোনের মিলনে আতইয়াব-আদরের মুখেও হাসি। কিন্তু হৃদান কে আতইয়াবের পছন্দ না। সে বোনকে হৃদানের হাত থেকে শতহাত দূরে রাখবে। বোনের ক্ষতি সে হতে দিবে না।
প্রায় সব রহস্য খোলাশা হয়েছে। শুধু আহনাফ চৌধুরী এবং তার মেয়েকে খুঁজে পাওয়া বাকি। সাথে এর মূলে আসল কালপ্রিটকে শাস্তি! ওরা কি আদও পারবে?
চলবে….?