#তোমাতে বিলীন🍁
#লেখিকা—আমায়া নাফশিয়াত ☘
#পর্ব—|| ৩০ ||
অফিসে নিজের কেবিনে রাজকীয় চেয়ারে বসে হিসেব মেলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো আশিয়ান।রাগের মাথায় ঊদিতাকে যা নয় তা বলে এসেছে সে।কিন্তু সে খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে যে এটা ঊদিতার বিরুদ্ধে খুব সুক্ষ্ম একটা ষড়যন্ত্র যেটার মেইন হোতা হলো গিয়ে আশা।
আশিয়ান জানে তার ঊদিতা এমন নয়।যেই মেয়েটা বাসার ভেতরই সারাক্ষণ পর্দা করে ছেলেদের থেকে নিজেকে দূরে রাখে সেই মেয়ে কোনো ছেলের সাথে সারাদিন গল্প করবে তা কোনো পাগলকে বললেও বিশ্বাস করবে না।আশিয়ান তখন চিঠির লেখাগুলো পড়ে মাথা গরম করে ঊদিতাকে ইচ্ছে মতো কথা শুনিয়েছে ঠিকই কিন্তু সেটা মন থেকে নয়।এ ক’দিন তার ওপর কাজের চাপ পড়েছে অনেক।সেই চিন্তায় থাকার ফলে মেজাজটা উগ্র হয়ে ছিলো তার।
আশিয়ান মনে মনে পস্তাচ্ছে।”উফফ,,একি করে ফেললাম আমি।আমি জানি আমার ঊদিতা কেমন!তারপরও অজ্ঞাত একটা চিঠির জন্য নিজের স্ত্রীর সাথে এমন মিসবিহেভ করাটা মোটেও ঠিক হয় নি।আজ আমার কারণে আমার বউটা কান্না করেছে।এখনো মনে হয় কাঁদছে মেয়েটা।”
আশিয়ান সারাদিনে কাজে একটুও মন বসাতে পারলো না।সারাক্ষণ ঊদিতার চিন্তায় অস্থির ছিলো সে।
💔💔💔
ঊদিতা আজকে রুমের দরজা লক করে মনের দুঃখে অনেকক্ষণ যাবত কান্না করেছে।সে এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না যে আশিয়ান তাকে অবিশ্বাস করেছে।আশিয়ানের ব্যবহারে অনেক কষ্ট পেয়েছে সে।মনে মনে ঠিক করে রেখেছে আশিয়ানের সাথে সে আর কথাই বলবে না।প্রচন্ড অভিমান হয়েছে তার।যা এত সহজে ভাঙবে না।একবার চিন্তা করেছিলো আজকে আশিয়ানকে না বলে বাবার বাসায় চলে যাবে কিন্তু পরে কী একটা বিবেচনা করে আর সেই সিদ্ধান্তে আগায়নি।
সারাটাদিন ঊদিতার মনমরা হয়ে কেটেছে।রিশাদ ঊদিতার সাথে কথা বলার অনেক চেষ্টা করেছে পরে ঊদিতা মিসেস ইয়াসমিনের কাছে গিয়ে ডিরেক্ট বিচার দিয়ে দিয়েছে।বলেছে যে রিশাদ তাকে বারবার ডিস্টার্ব করে।মিসেস ইয়াসমিন কঠিন ভাবে রিশাদকে শাসিয়েছেন।বলেছেন ঊদিতার থেকে দূরে থাকতে।রিশাদ এই প্রথম বোনের বাড়িতে এসে অপমানিত হয়েছে তাই তারিনের ওপর রাগ দেখিয়ে সে তার বাসায় চলে গেছে।আর তারিন ঊদিতার ওপর ক্ষেপে গেছে।
আশার আজকের সারাদিনের আনন্দ ফুর্তি খুব চোখে পড়ার মতো ছিলো।ঊদিতা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে যে এই চিঠি দেয়ার পিছনে আশার হাত ছিলো।আশা তখন নিজের রুমে বসে মনের সুখে স্পিকারে লাউডে গান বাজিয়ে নখে নেলপলিশ লাগাচ্ছিলো।ঊদিতা আশার সামনে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলো;
ঊদিতা:-আপনাকে আজ অনেক বেশিই খুশি খুশি লাগছে।কারণটা কী জানতে পারি?
ঊদিতার এমন প্রশ্নে আশা ঘাবড়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে হেয়ালি করে বললো;
আশা:-কেন আমি কী খুশি হতে পারি না নাকি?আমি সবসময়ই হাসিখুশি থাকি।
ঊদিতা:-ওব্বাবা,,,তাই নাকি?তা প্যাচার মতো মুখ মনে হয় তখনই বানান যখন দেখেন আমার স্বামী আমাকে খুব কেয়ার করে,,তাই না?(খোঁচা মেরে)
আশা অভিযোগ করে বললো;
আশা:-দেখো তুমি কিন্তু আমায় ইন্ডাইরেক্টলি ইনসাল্ট করছো!
ঊদিতা:-ইন্ডাইরেক্টলি নয়,,,ডাইরেক্টলি ইনসাল্ট করছি।কী মনে করেন নিজেকে?আলতু ফালতু একটা চিঠি লিখে সেটা আমার জামার ভাঁজে লুকিয়ে রেখে দিলেই আমাদের সম্পর্কের মধ্যে ফাটল ধরিয়ে ফেলতে পারবেন?এত কনফিডেন্স!
আশা এবার তোতলাতে তোতলাতে বললো;
আশা:-ক,,কী বলতে,,চাইছো তু,,,তুমি?আমি কিছুই ব,,বুঝতে পারছি না!
ঊদিতা:-তা বুঝবেন কেন?লজ্জা করে না একটা বিবাহিত লোকের পিছনে যে বেহায়ার মতো পড়ে আছেন?এত এত অপমান করা হয় তাও গায়ে লাগে না আপনার?গন্ডারের চামড়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছেন নাকি?
আশা এবার চিৎকার করে বললো;
আশা:-ঊদিতাআ,,,মুখ সামলে কথা বলো!কাকে কী বলছো তুমি জানো?তুমি চেনো আমার পাপাকে?আমার বাবার এক চুটকিতে তোমার পরিবার রাস্তাতে নেমে যাবে!সো কাকে কী বলছো বুঝে শুনে বলো!নয়তো তোমার কপালে খারাপি আছে।(থ্রেড দিয়ে)
ঊদিতা একটুও ঘাবড়ালো না।উল্টো শান্ত কন্ঠে অপমান করে বললো;
ঊদিতা:-একেই বলে চোরের মায়ের বড় গলা!আমার শ্বশুর বাড়িতে থেকে আমাকেই থ্রেড দেয়।বাহ,,কী সাহসী মহিলা!আপনার বাপের ক্ষমতার গরম দেখাচ্ছেন আমায়?আমার স্বামীকে তো চেনেন?এক চুটকিতে আপনার পরিবারকে পথে নামিয়ে দেয়া ওনার বাম হাতের খেল।সো আমাকে ক্ষমতা দেখাতে যেও না।ট্রাস্ট মি,,নারীজাতিকে কলঙ্কিত করতে আপনার মতো একটা দূরাশাই যথেষ্ট।কী মনে করেছেন!এই সামান্য একটা চিঠির কারণে আমরা মারামারি করে আলাদা হয়ে যাবো?এত ইজি নাকি?জানি না বুদ্ধিটা কার মাথা থেকে বেরিয়েছে তবে বুদ্ধিটা সাংঘাতিক লেভেলের বাজে।আরও ভালো কোনো প্ল্যান করতে পারতেন।অবশ্য মাথায় তো গোবর ভরা।মাস্টার প্ল্যান আসবে কোথা থেকে?
আশা:-ফাজলামো হচ্ছে এখানে?তুমি এতটুকুন একটা মেয়ে আমাকে এসে ঝাঁজ দেখাও?তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি।দরিদ্র পরিবারের মেয়ে তুমি ভুলে যেও না।বড়লোক শ্বশুর বাড়ি পেয়ে মনে হয় সাপের পাঁচ পা দেখে ফেলেছো তুমি না?কোথায় তোমার স্ট্যাটাস আর কোথায় আমার স্ট্যাটাস,,,আমার সাথে বড় গলায় কথা বলতে এসো না কখনো।
ঊদিতা:-পরের বাড়িতে বেহায়ার মতো পড়ে থেকে আবার তেজ দেখায়!তাও এ বাড়ির আদরের পুত্রবধূকে!হাহ,,এই আপনাকে এখানে আসার জন্য কে দাওয়াত দেয়?আমার জানামতে আপনাকে কেউ বলে আনতে হয় না।এমনিতেই হাভাতেদের মতো চলে আসেন এখানে।আর মেহমান মেহমানের মতো থাকবেন,তা না করে কীভাবে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে প্যাঁচ লাগানো যায় সেটা চিন্তা করেন বসে বসে।আর হ্যা যা বলতে এসেছিলাম,,আজকে ওনি আসুক,,আমি সব খুলে বলবো যে আপনি কী কী করেছেন!রাতের জন্য রেডি থাইকেন।বাঁশ খাওয়াচ্ছি আপনাকে আমি।উচিৎ শিক্ষা না দিতে পারলে আমার নামও ঊদিতা নয়।(থ্রেড দিয়ে)
ঊদিতার কথা শুনে আশার গলা শুকিয়ে গেছে।সে ভাবে নি ঊদিতা তাকে এমনভাবে হুমকি দিবে।আশা কিছু বলতে চাইলো ঊদিতাকে, কিন্তু ঊদিতা না শুনে চোখ রাঙানি দিয়ে গটগট শব্দে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।আশার ভয়ে কাঁপুনি শুরু হয়ে গেছে।আশিয়ানকে বললে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে।আর আশিয়ান ঊদিতার কথা শুনেও সবসময়।আজকে না জানি তার কপালে কোন দুঃখ লেখা আছে!
⚫
ঊদিতা সোফায় বসে বই পড়তে পড়তে কখন যে ঘুমিয়ে গেল টেরই পেলো না।আশিয়ান হন্তদন্ত হয়ে রুমে প্রবেশ করলো।ঊদিতার ঘুমন্ত চেহারা দেখে সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে গেল আশিয়ানের।মনটা শান্ত হয়ে গেছে তার।তার জীবনের স্বস্তি হলো গিয়ে ঊদিতা।আল্লাহর দেয়া সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার।আশিয়ান ঊদিতাকে এখন না ঘাটিয়ে কাপড় পাল্টে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এলো।ঊদিতা বলতেও পারবে না কখন আশিয়ান এসেছে!সে গভীর ঘুমে মগ্ন।
আশিয়ান টাওয়েল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ঊদিতার কাছে এসে দাঁড়িয়ে উবু হয়ে তাকে কোলে তুলে নিলো সাবধানে।তারপর ঊদিতাকে কোলে নিয়ে বিছানায় এসে বসলো।ঊদিতার গালে কপালে চুমু খেতেই ঊদিতার ঘুম ভেঙে যায়।চোখ পিটপিট করে আশিয়ানকে দেখতেই অভিমানে কান্না চলে আসে তার।মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে চোখের কোণের জল আড়াল করে সে।আশিয়ান বুঝতে পারে সেটা।ঊদিতার নাকে চুমু খেয়ে আদুরে কন্ঠে বলে;
আশিয়ান:-আমার সোনা বউটা বুঝি রাগ করেছে?ও বউ,,,এদিকে তাকাও প্লিজ!
ঊদিতা তাকায় না আশিয়ানের দিকে।তীব্র অভিমানে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে তার।ঊদিতার কান্না দেখে আশিয়ানের বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়।ইশশ,,এত কষ্ট না দিলেও হতো!আশিয়ান ঊদিতার চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে গালে ঠোঁট বুলিয়ে আদুরে কন্ঠে বললো;
আশিয়ান:-কান্না করো না প্লিজ সোনা,,।আমার বুকের ভেতরটায় কষ্ট হয় তোমার চোখের পানি দেখলে।আমি সরি বলছি আজকের এই ব্যবহারের জন্য।ক্ষমা করে দাও প্লিজ বউ।আসলে চিঠিটা দেখে আমার মেজাজটা বিগড়ে গেছিলো।ট্রাস্ট মি আমি তোমায় একটুও অবিশ্বাস করি নি।জাস্ট রাগের মাথায় কী থেকে কী বলে ফেলেছি,,।প্লিজ ঊদিতা মাফ চাচ্ছি তোমার কাছে।
এত এত রিকোয়েস্টেও মন গলে না ঊদিতার।আশিয়ানের কোল থেকে নামার জন্য ছুটাছুটি শুরু করে সে।কিন্তু আশিয়ানের কাছ থেকে এত সহজে ছাড়া পাবে না সে।আশিয়ান শক্ত করে ধরে রাখে তাকে নিজের সাথে মিশিয়ে।ঊদিতা কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলে;
ঊদিতা:-কোথাকার এক উড়োচিঠি পেয়ে এত সহজে নিজের স্ত্রীকে অবিশ্বাস করে ফেললেন আপনি।আমার সাথে এতমাস ধরে সংসার করছেন,,এতদিনে এই চিনলেন আমাকে?আপনি জানেন না আমি কেমন?কীভাবে এত কথা শুনাতে পারলেন আমায়?বিনাদোষে দোষী সাব্যস্ত করলেন আমাকে আপনি?আসলে প্রধান কারণ হলো আপনি আমাকে কখনো ভালোই বাসেন নি।আমিই এতদিন ভালোবাসি ভালোবাসি বলে মুখে ফেনা তুলেছি।
ঊদিতা একঝটকা দিয়ে আশিয়ানের থেকে নিজেকে ছুটিয়ে দ্রুত হেঁটে বারান্দায় চলে গেল।আশিয়ানও ঊদিতার পিছু পিছু বারান্দায় গেল।ঊদিতা রেলিঙের ওপর হাত রেখে আকাশের পানে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছে।আশিয়ানের এমন ব্যবহার সে মেনে নিতে পারে নি।ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে কোনোপ্রকার কোনো অবহেলা বা কটুকথা মেনে নেয়া যায় না।কষ্টে বুকটা ফেটে যায় তখন।
আশিয়ান ঊদিতাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে তার কাঁধে নিজের থুতনি রাখলো।ঊদিতা আবারও বুকভরা অভিমান নিয়ে বলে উঠে;
ঊদিতা:-চিঠিটা ওই বেহায়া আশার একটা প্ল্যান ছিলো।যার ব্যাপারে আমি কিছুই জানতাম না।আশার বিশ্বাস ছিলো এই চিঠিটা পড়ে আপনি আমাকে অবিশ্বাস করবেন,,এবং সে সফল হয়েছে।আপনি ঠিকই আমাকে অবিশ্বাস করেছেন।আসলে আমাদের সম্পর্কে বিশ্বাসের বড্ড অভাব।জানেন আমাকে যদি কেউ আপনার বিরুদ্ধে এসে কখনো কিছু বলে,তবে আমি সবার আগে আপনাকে বিশ্বাস করবো।কারও মুখের কথা শুনে নিজের ভালোবাসার মানুষকে অবিশ্বাস করার প্রশ্নই আসে না।আমি আপনাকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।কিন্তু আপনি করেন না।
এই বলে হু হু করে কেঁদে ফেলে ঊদিতা।আশিয়ানের কষ্টে বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে ঊদিতার কান্না শুনে।কী করে মেয়েটার মনে এতটা কষ্ট দিয়ে ফেললো সে বুঝতে পারছে না।ঊদিতাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আশিয়ান তার কাঁধে চুমু খেয়ে বললো;
আশিয়ান:-ভালোবাসি তো!অনেক ভালোবাসি তোমায় ঊদিতা।প্লিজ লাস্টবারের মতো ক্ষমা করে দাও।আর কখনো তোমার সাথে এমন মিসবিহেভ করবো না।প্লিজ ঊদিতা,,ফরগিভ মি!
আশিয়ানের কথা কানে না নিয়ে ঊদিতা তার মতো বলে যাচ্ছে।
ঊদিতা:-ওই রিশাদ ছেলেটা খুব লুচ্চা টাইপের।এ কদিন অতিষ্ঠ করে ছেড়েছে আমায়।পারমিশন ছাড়াই রুমে চলে আসতো।বাগানে গিয়ে শান্তি পাই না,ছাদেও যেতে পারি না,ড্রয়িং রুমে একটু বসতে পারি না,,খালি কীভাবে ডিস্টার্ব করা যায় সেটাই খুঁজে।বিরক্ত হয়ে কত কটু কথা শুনিয়েছি।তাও পিছু ছাড়ে না।ভেবেছিলাম আপনাকে বিচার দিবো।কিন্তু আপনি তো ব্যস্ত থাকেন।তাই আজকে অতিষ্ঠ হয়ে মায়ের কাছে বিচার দিয়েছি।পরে মা লোকটাকে শাসিয়েছে।আজকে সে তার বাসায় ফিরে গেছে।তারিন ভাবী আমার সাথে মুখ কালা করেছেন।আমার জন্য নাকি ওনার ভাই অপমানিত হয়ে চলে গেছে।আমার কী দোষ বুঝি না?আমি পছন্দ করি না এসব ফাইজলামি।তারপরও বেহায়ার মতো এসে গায়েপড়ার মতো কথা বলতে চায় কেন!আর আশা সেটার সুযোগ নিয়ে আমাকে আপনার কাছে খারাপ প্রমাণ করলো।
আশিয়ানের রাগে গলার রগ ফুলে ওঠে।তার বউকে এত ডিস্টার্ব করেছে আর সে কিছু বলতেও পারে না।কেমন স্বামী সে?নিজের স্ত্রীর সুবিধা অসুবিধা কোনোকিছুর প্রতি কোনো খেয়াল রাখে নি।কাজের মধ্যে এতটাই ডুবে গিয়েছিল।আশিয়ান ঊদিতার গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো;
আশিয়ান:-ভাগ্যিস রিশাদ হারামজাদা আজ চলে গেছে।নয়তো আমার হাতের থাপ্পড় খেয়ে আজ বাসা থেকে বিদায় নিতো।আর আশাকে তো আমি আজ দেখে নেবো।তার বুকের পাঠা কতটুকু আমাদের মধ্যে ভেজাল তৈরি করার চেষ্টা করছে।আজকেই এই বাসায় ওর শেষ দিন।আসো দেখবে।
এই বলে আশিয়ান ঊদিতার হাত টেনে ধরে তাকে নিয়ে নিচে চলে আসে।নিচে ড্রয়িং রুমে আশা, তারিন,কেয়া ওরা টিভি দেখছে।আশিয়ান জোরে জোরে মিসেস ইয়াসমিনকে ডাকলো।তিনি ওনার রুমে ছিলেন।মিসেস তারানার সাথে বসে কথা বলছিলেন।আশিয়ানের ডাক শুনে দ্রুত নিচে নেমে আসেন দুজনে।এমন সময়,, হয়তো কো ইন্সিডেন্ট ছিলো বিষয়টা।মি.মোরশেদের সাথে মি.এনামুল আর আশার বাবা ফরহাদও বাসার ভেতর প্রবেশ করলেন একসাথে।আশিয়ানের এমন রণমুর্তি ধারন করা দেখে আশার পরাণ পাখি যায় যায় অবস্থা।সে বুঝে গেছে আজ আর তার রক্ষা নেই।
আশিয়ানের রাগী চেহারা দেখে মি.মোরশেদ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন;
মি.মোরশেদ:-কী হয়েছে তোমার আশিয়ান?এমন রেগে আছো কেন?
মিসেস ইয়াসমিনও জিজ্ঞেস করলেন;
মিসেস ইয়াসমিন:-বাবা কী হয়েছে তোর?এত আর্জেন্ট ডাকলি কেন?
আশিয়ান:-কী হয়নি সেটা বলো আম্মু!এসব কী হচ্ছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
এই বলে আশিয়ান আশার সমস্ত কীর্তিকলাপের কথা ফাঁস করে দিলো।ঊদিতার পেছনে কীভাবে লেগেছে সে,কী করে ঊদিতার ক্ষতি করার চেষ্টা করেছিলো,ঊদিতাকে পার্কে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়ার চেষ্টা থেকে শুরু করে সব খুলে বললো সে।সবাই হতবাক হয়ে শুনে যাচ্ছে এসব।মেয়ের এসব কুকীর্তির কথা শুনে ফরহাদ ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলেন।যে পরিবারের সবাই তাকে নিজের মতো ভালোবাসে সেই পরিবারের মানুষের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে তার মেয়ে এটা তিনি মেনে নিতে পারছেন না।লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে তার।আশিয়ান আজকের দেয়া চিঠিটার কথাও বললো।মিসেস ইয়াসমিন কড়া চোখে তাকিয়ে আছেন আশার দিকে।তিনি ভাবেন নি যে আশা এত নিকৃষ্টতম কাজ করেছে।মি.মোরশেদ গম্ভীর কন্ঠে বললেন;
মি.মোরশেদ:-তোমাকে আমি নিজের মেয়ের মতো মনে করতাম আশা।কখনো নিজের বন্ধুর মেয়ে বলে মনে করি নি।তার ফল তুমি এভাবে দিলে?তোমার কাছ থেকে এসব আমি মোটেও এক্সেপ্ট করি নি আশা।
ফরহাদ এই প্রথম মেয়ের গালে একটা থাপ্পড় মারলেন।আদর করতে করতে মেয়েটা যে এমন বিগড়ে গেছে ভাবতে পারছেন না তিনি।মেয়ের কারণে আজ তার সম্মানটা ধুলোয় মিশে গেল।তিনি এই প্রথম উপলব্ধি করলেন মেয়েকে ঠিকমতো শিক্ষা দিয়ে মানুষ করতে পারেন নি।আশা বাবার থাপ্পড় খেয়ে কান্না করছে।ফরহাদ কঠিন কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন;
ফরহাদ:-এমনটা কেন করেছো তুমি?কোন জিদে তুমি তোমার বয়সের থেকে ছোট একটা মেয়ের সাথে এমনটা করলে?বলো!জবাব দাও!নয়তো মেরে এখানেই পুতে রেখে যাবো!
ফরহাদের ধমকে আশা প্রায় চিৎকার করে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে বললো;
আশা:-আমি ওকে সহ্য করতে পারি না পাপা।আজ ওর জায়গায় আমি আশিয়ানের বউ হয়ে থাকতাম!আশিয়ানকে আমি ছোট থেকে পছন্দ করি।আশিয়ানকে পাওয়ার জিদে আমি এমন করেছি।আমি ওকে চাই পাপা।তোমার তো অনেক ক্ষমতা,,এই মেয়েটাকে সরিয়ে দাও না।তাহলে আমি আশিয়ানের বউ হতে পারবো।এই মেয়েকে মেরে ফেলবো আমি।আমি ওকে সহ্য করতে পারি না।ওকে হিংসা করি আমি।হিংসা করি।
ফরহাদ মেয়েকে আরেকটা থাপ্পড় মারলেন।ওনার নিজেরই এখন ঘৃণা হচ্ছে মেয়ের প্রতি।ফরহাদ রাগে দুঃখে গমগমে গলায় বললেন;
ফরহাদ:-ছি,,ছি,,আমার নিজের ওপরই এখন লজ্জা লাগছে যে আজ তোমার মতো একটা মেয়ের শরীরে আমার রক্ত বইছে।মানসম্মান আর কিছুই রইলো না আমার।এজন্যই তুমি বারবার এখানে ছুটে চলে আসো তাই না?আমি আগে জানলে বাসায় শেকল দিয়ে বেঁধে রাখতাম তোমার মতো বাজে মেয়েকে।কালকেই আমি রিফাতের সাথে তোমার বিয়ে ঠিক করবো।তোমার জন্য আশিয়ানের মতো একটা ভালো ছেলের হেনস্তা হতে হবে তা আমি বেঁচে থাকতে কখনোই হতে দেব না।এক্ষুনি তুমি সবার কাছে ক্ষমা চাও।বিশেষ করে ঊদিতার কাছে।যাও।(ধমক দিয়ে)
আশা পাল্টা চিৎকার করে বললো;
আশা:-মরে যাবো তাও ওর মতো ফকিন্নি মেয়ের কাছে আমি মাফ চাইবো না।
এবার আশিয়ান ধমক দিয়ে বলে উঠে;
আশিয়ান:-শাটআপ,,,আমার স্ত্রীকে নিয়ে আর একটাও বাজে কথা বললে জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলবো।বেয়াদব মেয়ে!
ফরহাদ এবার মেয়েকে আরেকটা থাপ্পড় মেরে বললেন;
ফরহাদ:-আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না এই বেয়াদবটার বাবা আমি।অপরাধ তো করেছে আবার মাফ চায় না।কত্তবড় সাহস।আজকে তোমার হচ্ছে।আগে বাসায় যেয়ে নেই একবার।তোমাকে আমি আজ দেখে নেব।বেশি আদরে আদরে একদম মাথায় ওঠে গেছো তাই না?
আশার হয়ে ফরহাদ ঊদিতার সামনে গিয়ে হাতজোড় করে বললেন;
ফরহাদ:-ওর হয়ে আমি ক্ষমা চাইছি মা তোমার কাছে।মাফ করে দিও প্লিজ।আজকে থেকে ও আর তোমাদের কখনো জ্বালাবে না কথা দিলাম।খুব শীঘ্রই তার বিয়ের ব্যবস্থা করছি আমি।মাফ করে দিও আশিয়ান।ওকে আমি আজ উচিৎ শিক্ষা দেবো।মেয়েটা একদম উচ্ছন্নে চলে গেছে।ঠিকমতো মানুষ করতে পারলাম না।তোমাদের সাথে ও যা করেছে তাতে ওকে আমার মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে।
ঊদিতা:-আমি কিছু মনে করি নি আঙ্কেল।আপনাকে ক্ষমা চাইতে হবে না।ওনাকে শুধু একটা কথাই বুঝিয়ে বলবে,,জোর করে কখনো কাউকে নিজের করা যায় না।ভাগ্য বলে একটা কথা আছে,,উনার ভাগ্যে আশা আপু ছিলেন না কখনো।আমিই ছিলাম ওনার ভাগ্যে।
আশিয়ান:-ওকে দেখেশুনে রাখবেন আঙ্কেল।আমরা হওয়ায় কিছু বললাম না কিন্তু অন্য কেউ এসব সহ্য করবে না।আর ওকে জলদি বিয়ে দিন।বিয়ে দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
ফরহাদ:-হ্যা বাবা,,কালকেই ওর বিয়ে ঠিক করবো আমি।আমার পরিচিত একজন পছন্দ করেছে আশাকে।ওর সাথেই বিয়ে দিবো।ভালো থাকো আজ আসি।
ফরহাদ টানতে টানতে মেয়েকে নিয়ে এ বাসা থেকে বেরিয়ে গেলেন।যাওয়ার আগে মেয়ের হয়ে সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে গেছেন।মিসেস ইয়াসমিন ঊদিতার কাছে এসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন;
মিসেস ইয়াসমিন:-আমারই ভুল ছিলো।ওই মেয়েটাকে চোখে চোখে রাখার দরকার ছিলো।নইলে আমার মা’টার এমন ক্ষতি করার সাহস পেত না।
আশিয়ান এবার ডিরেক্ট তারিনকে লক্ষ্য করে বললো;
আশিয়ান:-আশাকে যে তুমি পিছন থেকে উস্কে দিতে ঊদিতার বিরুদ্ধে তা বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছিলাম আমি।কিন্তু কিছু বলি নি।তাই বলে মনে করো না এসব আমার চোখে পড়ে না।আমি ঠিকই দেখি।লাস্ট বারের মতো ওয়ার্নিং দিচ্ছি তোমায় মেঝভাবী।আমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে কিছু করতে যেও না।ফলাফল কিন্তু ভালো হবে না কখনো।নেহায়েতই তুমি আমার ভাইয়ের বউ,,,যাই হোক,,এখনো সময় আছে, নিজেকে শুধরে নাও।আর যেন কখনো বলতে নাহয়।চলো ঊদিতা।
আশিয়ান ঊদিতাকে নিয়ে নিজের রুমে চলে এলো।তারিন বেচারি এখন তামজিদের চোখ রাঙানি খাচ্ছে ভালোমতন।মিসেস তারানাও দু কথা শুনিয়ে দিলেন তারিনকে।বেচারি তারিন এখন মাইনকার চিপায় ফেঁসে গেছে।
রুমে এসে ঊদিতা চুপচাপ বিছানার এককোণে গিয়ে বসে পড়লো গুটিসুটি মেরে।আশিয়ান ঊদিতার সামনে গিয়ে বসে ঊদিতার দুগালে হাত রেখে আদুরে কন্ঠে বললো;
আশিয়ান:-আমার বউটা কী এখনও রাগ করে থাকবে?ক্ষমা করে দাও না প্লিজ।সরি তো বাবা!আর কখনো কষ্ট দিবো না আমার বউটাকে।প্লিজ সোনা জাস্ট এবারের মতো মাফ করে দাও।কানে ধরে বলছি।
আশিয়ান কানে ধরলো তাও ঊদিতার মন গললো না।সে মুখ ফিরিয়ে চুপচাপ বসে রইলো।আশিয়ান বুঝলো এভাবে হবে না।এত সহজে বরফ গলবে না।আশিয়ান জোর করে ঊদিতাকে কোলে নিয়ে নিলো।ঊদিতা একটু গুলুমুলু টাইপের ঠিকই কিন্তু আশিয়ানের কাছে যেন এ ওজন কিছুই নয়।সে এরথেকেও বেশি ওজন নিয়ে প্রতিদিন জিম করে।অভ্যাস আছে।
আশিয়ান ঊদিতাকে কোলে নিয়ে আদর করতে লাগলো।আদর করতে করতে অতিষ্ঠ করে ফেললো সে ঊদিতাকে।ঊদিতা ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করছে।কিন্তু পারছে না।আশিয়ানের শক্তির কাছে সে নস্যি।
(আজকে একটু ছোট হয়ে গেছে পর্বটা।দুঃখিত।আমি খুব ব্যস্ত আছি আজ।একটা কাজে বাইরে যেতে হচ্ছে।আর হ্যা অভিমানটা শুধু ঊদিতা করেছে।আশিয়ানের ওপর ঊদিতা রেগে আছে অনেক।গল্পটা বেশি লম্বা হবে না।তাদের সুখময় কিছু দৃশ্য তুলে ধরবো আমি আরও কয়েকপর্বে, তারপর সমাপ্ত।যাইহোক,,হ্যাপি রিডিং গাইজ।)
চলবে…🍃