#মন_পাথরে_হঠাৎ_ঝড়
#পর্ব_১৪
Tahrim Muntahana
পার্টিতে পিনপতন নিরবতা বিরাজ করছে। প্রত্যেকটা মানুষের নিশ্বাসের শব্দটাও যেন ভয়ানক লাগছে। আদরের চিৎকারে সবাই এগিয়ে আসলেও হৃদান আসে নি। সে এগোতে পারছে না। তার মনে হচ্ছে ভেতর থেকে হৃদপিন্ডটা কেউ খুবলে নিচ্ছে। পান্চু দৌড়ে সিড়ি টপকে এসেই আগন্তুক আক্রমণকারীকে ধরে ফেলে। চারপাশ থেকে গার্ডরা ঘিরে ধরে তাকে। আতইয়াব দৌড়ে গিয়ে আদর কে নিজের কাছে নিয়ে আসে। হাতে ভালোই কেটেছে ছুরির আঘাতে। গলগল করে রক্ত পড়ছে হাত থেকে। আদর চোখ মুখ কুচকে আছে। হাতটা ব্যাথায় শিরশির করছে। জ্বালাটা যেন একটু একটু করে বাড়ছে। তারিম ঝটপট ওদের নিয়ে উপরে চলে গেলো। এখানে থাকা নিরাপদ নয়। আবার কখন আক্রমণ হয় কে জানে!
পার্টিতে আর একটা মানুষ ও নেই। সবাই নিজ নিজ বাড়ি চলে গেছে। যাওয়ার আগে গার্ডরা ভালো করে চেক করে নিয়েছে। এর মধ্যে তিনজন কে সন্দেহজনক মনে করে গোপন কক্ষে নিয়ে এসেছে। হৃদান সেভাবেই দাড়িয়ে আছে। নড়ার শক্তিটুকু তার মধ্যে নেই। চোখের সামনে শুধু আদরের হাত থেকে গল গল করে রক্ত পড়া ; চিৎকার কানে ভেসে আসছে বারবার। হাত দিয়ে কান চেপে ধরলো হৃদান। গগণ কাঁপিয়ে চিৎকার করে উঠলো। আতকে উঠলো সবাই। আদরের ব্যান্ডেজ প্রায় শেষ। ফিনিশিং টা বাকি। হৃদানের চিৎকারে আদর ভয় পেয়ে যায়। এটার ভয় ই সে পাচ্ছিলো। দৌড়ে নিচে নেমে আসে। ওর দেখাদেখি তারিম আতইয়াব ওরাও নেমে আসে। হৃদান ড্রয়িং রুমে ভাঙচুর করছে। একের পর এক ফুলদানি টি-টেবিল ভেঙে চলছে। একটু আগের পাওয়া মনের ধাক্কা টা যেন রাগ দিয়ে পুষিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু এ জ্বালা তো এসব ভেঙে হবে না। তার মনে আগের সেই হৃদান চৌধুরীর অস্তিত্ব টের পাচ্ছে। রক্ত নিয়ে খেলার ইচ্ছেটা পুনরায় জেগে উঠছে তার। পিয়াস চুপটি করে দাড়িয়ে আছে। সে বুঝে নিয়েছে এরপর কি হবে কিন্তু সে চাইলেও এটা পরিবর্তন করতে পারবে না। তার থেকে চুপ থাকায় শ্রেয়।
আতইয়াব আদরের একহাত শক্ত করে ধরে আছে। আদর চাইলেও হৃদানের কাছে যেতে পারছে না। আতইয়াবের চোখে মুখে রাগ উপচে পড়ছে। মনের মধ্যে রাগ জমা হচ্ছে হৃদান চৌধুরীর বিরুদ্ধে। তার বোনের সাথে হওয়া একটু আগের ঘটনা টার জন্য হৃদানকে দোষ দিচ্ছে সে। যেও বা একটু আগে ভেবেছিলো হৃদানের সাথে আদরের এই সম্পর্কটা সে স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নিবে কিন্তু নাহ! এখন কোনো ভাবেই সম্ভব না। হৃদান চৌধুরীর সাথে তার বোনের জীবন জড়িয়ে গেলে তার বোনের জীবন হুমকিতে থাকবে। কোনো ভাই ই চায় না তার বোন কষ্টে থাকুক।
আদরের অস্তিত্ব টের পেয়ে ভাঙচুর বন্ধ করে হৃদান। পাগলের মতো এগিয়ে আসে আদরের দিকে। মনে হচ্ছে ছুরিটা আদরের হাতে না তার কলিজায় লেগেছে। চোখ দুটো অসম্ভব লাল! মাঝখানে বাধাপ্রাপ্ত হলো আতইয়াবের। চোখ মুখ শক্ত করে বলে উঠলো,
আমি চাইনা আমার বোনের জীবনে হৃদান চৌধুরীর কোনোরকম ছায়া থাকুক। আমার বোন থেকে দূরে থাকবেন। নাহলে আমি আতইয়াব তাযিন ইততেয়াজ কি করতে পারি সেটিও দেখতে পারবেন।একদম মাটির সাথে মিশিয়ে দিবো হৃদান চৌধুরীর নাম। মাইন্ড ইট!
আদরকে নিয়ে হাটা ধরলো আতইয়াব। হৃদানের নিজেকে হেল্পলেস লাগছে। এই প্রথম কেউ তাকে হুমকি দিলো। এই প্রথম হৃদান চৌধুরী তার পরাজয় মেনে নিচ্ছে শুধুমাত্র ভালোবাসার জন্য। পেছন ঘুরে তাকালো আদর। চোখ থেকে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। চোখ বন্ধ করে নিলো হৃদান। ওই চোখে তার মরণ লুকিয়ে আছে! ওই চোখেতেই হৃদান চৌধুরী নিঃশেষ! আদর রা চলে যেতেই হৃদান ধপ করে সোফায় বসে পড়লো। তারিমের চোখেও পানি। কিন্তু সে একটা কথাও বলেনি আতইয়াবকে। না বুঝে এমন করার কারণে আতইয়াব কে শাস্তি পেতে হবে! সেই শাস্তি সে ভালোবাসা থেকে দূরে থেকেই পাবে। দুটো লাফবার্ড কে আলাদা করে সে তো নিজে ভালোবাসার গল্প রচনা করতে পারেনা। তার ও প্রাপ্রতা আছে। কষ্টের বদল কষ্ট!
গোপন কক্ষের দরজায় দাড়িয়ে আছে পান্চু। তার চোখে মুখে রাগের সাথে ব্যাথাতুর একটা আবাশ পাওয়া যাচ্ছে। সন্দেহজনক চারজনের এখনো জ্ঞান ফেরেনি। ফেরার পরেই পান্চু তার খেলা দেখাবে এই আশায় দরজায় দাড়িয়ে আছে। যদিও সে যথেষ্ট কনফিউস হৃদান চৌধুরী তাকে সেই সুযোগ দিবে কিনা তবুও আশা তো থাকতেই পারে! অন্ধকার নয় আলোতেই চারজন কে রাখা হয়েছে। যেন জ্ঞান ফেরার পর একেঅপরকে দেখে চমকে উঠে। ভয় ই তো দেখবে আজকে হৃদান চৌধুরী। হঠাৎ ভেতর থেকে চিৎকার আসতেই পান্চু হেসে দিলো। জ্ঞান ফিরেছে সবার। নিশ্চিত পান্চু; একেঅপরকে দেখে ওরা ভাবছে কি করে হলো। দরজাটা একটু খুলে চোখ রাখলো ভেতরে। আদরের উপর ছুরি চালানো লোকটা একজন কে বলছে,
তুই এখানে কিভাবে? সারাবাড়ি খুঁজেছি তোকে। তোর জন্যই সব ব্লান্ডার হলো!
লোকটি হতাশ কন্ঠে বলে উঠলো,
আমি প্রশিক্ষণ রুম চেক করছিলাম। হঠাৎ কে যেন এসে এমন জোরে চিৎকার করে উঠলো আমি ভেবেছি আমাকে দেখে চিৎকার করেছে। সে ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম!
পান্চু ফট করে নিচের দিক তাকালো। তাকাতেই তার চোখ মুখে ব্যাথা ফুটে উঠলো। যেন চেইন লাগানোর সময় পাওয়া ব্যাথাটা এখনো পাচ্ছে সে। আবার নিজেকে বাহুবাও দিলো পান্চু। সে যদি ব্যাথার জন্য ওইভাবে প্রশিক্ষণ রুমে গিয়ে চিৎকার না করতো চক্র টা ধরা পড়তো না। খুব বড় ক্ষতি হয়ে যেতো তাহলে। তার জন্যই সম্ভব হয়েছে ভেবেই নিজের টাক মাথায় হাত বুলিয়ে নিলো সে। ভেতরে গার্ড চারটি নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করেই যাচ্ছে। কে কার দোষ কাকে দিতে পারবে। তারা ভুলেই গেছে যে হৃদান চৌধুরীর হাতে পড়েছে তারা। প্রাণপাখিটা উড়ার অপেক্ষা শুধু। হঠাৎ ই পায়ের ফট ফট শব্দে পান্চু দরজাটা ঠাস করে অফ করে দিলো। সোজা হয়ে দাড়িয়ে রইলো। এই হাটা তার বসে। সে চিনে!
গোপন রুমের সামনে পান্চুকে দেখেও হৃদান কিছু বললো না। সে বলার মধ্যেই নেই। দরজা টা খুলে ভেতরে ঢুকে গেলো। পিছনে পান্চুও গেলো। পিয়াস দরজায় এসে দাড়িয়েছে। আবার সেই রক্তের খেলা। অনেকদিন হলো দেখে না। ভালোয় চলছিলো তো হঠাৎ করে কার মরার শখ হলো যে ঘুমন্ত নিষ্ঠর হৃদান চৌধুরীকে জাগিয়ে তুলতে হলো। আবার শুরু হবে রক্ত দেখে আনন্দ নেওয়া। যতদিন পযর্ন্ত শেষ না দেখছে হৃদান ততদিন থামবে সে পিয়াস শিউর।সে বললেও কিছু হবে না উল্টো তাকে বন্দী করে নিজের কার্য সচল রাখবে হৃদান।
হৃদানকে দেখেই চারজন গার্ড ঝগড়া থামিয়ে দেয়। এতক্ষণে হয়তো মনে পড়েছে তারা জমের দুয়ারে রয়েছে। চোখ মুখে একরাশ ভয় এসে হানা দিলো। কাঁপতে লাগলো তারা। সবচেয়ে বেশী ভয় তো তার রে ছুরিটা চালিয়েছে। হৃদান এটিটিউটের সাথে চেয়ারে বসলো। কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,
তোদের কে পাঠিয়েছে জিজ্ঞেস করবো না। হৃদান চৌধুরীর রুলসের বাহিরে এটা। সোজা উপরে পাঠিয়ে দিবো। তোদের সাহস আছে তাইনা? হৃদান চৌধুরীর বাড়ি এসে হৃদান চৌধুরী কলিজার উপর হামলা! দম আছে বলতে হবে! তো শুরু করা যাক দমের খেলা! কত দম আমাকেও তো দেখতে হবে নাকি?
হো হো করে বিকট আওয়াজে হেসে উঠলো হৃদান। উন্মাদ লাগছে তাকে এখন। পান্চু পিছিয়ে এসে পিয়াসের সাথে দাড়িয়েছে। তার ও ভয় করছে এখন। তবুও সাহস নিয়ে বলে উঠলো,
বস ক্ষমা করবেন কাজের মধ্যে কথা বলার জন্য। কিন্তু আমার একটা অনুরোধ আছে। আর অনুরোধ টা আপনাকে রাখতেই হবে। আমি বিনা পয়সায় আপনার গোলামি করে যাবো সারাজীবন তবুও আমার অনুরোধ আপনাকে আজ রাখতেই হবে।
হৃদান ভ্রু কুচকে তাকালো পান্চুর দিকে। এই মুহূর্তে তার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে কতটা বিরক্ত হয়েছে সে। পান্চু ঢোক গিলে স্ট্রং হয়ে বলল,
আপনি সবাইকে মারেন কাটেন যাই করেন ছুরি চালানো কালপ্রিটটাকে শেষ আঘাত আমিই করবো। আমার সামনে ম্যামের গায়ে ছুরি চালিয়েছে ও। আমি শেষ করতে চাই ওকে। প্লিজ বস!
হৃদান হাসলো। ভালোবাসা! সত্যিই ভালোবাসা সুন্দর। আগে কখনোই এমন সময়ে তার মুখে হিংস্রতা ছাড়া কিছু থাকতো না বাট আজকে! তার মুখে হাসি, প্রিয়জনকে পাওয়ার আকুলতা, প্রিয়জনকে হারানোর ব্যাথা প্রকাশ পাচ্ছে! ভালোবাসা সুন্দর! মাথা নেড়ে সায় জানাতেই পান্চুর মুখ কঠিন হয়ে এলো। যেন সে এখনি কুচি কুচি করে কা! ট! ছে। পান্চু এগিয়ে গিয়ে হৃদানের সামনে কিছু অস্ত্র তুলে ধরলো। পছন্দ সই অস্ত্র নিয়ে একের পর এক আঘাত করতে লাগলো তিনজন কে। বেচারা তিনজন চিৎকার ও করতে পারছে না মুখ বন্ধ থাকায়। ভেতর থেকে মরে যাচ্ছে। প্রাণ পাখি যাই যাই তবুও যেন যায় না। আর একজন তো এসব দেখে ভেতর থেকে শেষ ই হয়ে যাচ্ছে ভয়ে। ওদের তিনজনকে ছেড়ে হৃদান ছুরি চালানো লোকটার সামনে এসে দাড়ালো। চিৎকার করে বলে উঠলো,
এই হাত দিয়ে আঘাত করেছিলি আমার কলিজাকে? এই হাত দিয়ে? এই কেমনে পারলি আঘাত করতে। তোর একটুও মনে হলো না হৃদান চৌধুরীর সামনে তার কলিজাকে আঘাত করলে এর পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে। কিছু না ভেবেই ছুরিটা বসিয়ে দিলি। এই দেখ মনে হচ্ছে তোর ছুরির আঘাতটা ওর হাতে না আমার কলিজায় লেগেছে। ক্ষত বিক্ষত হয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে কলিজাটা। দগ্ধ হচ্ছি প্রতি সেকেন্ড। যাকে ধরতে গেলে আমি একশো বার ভেবে ধরি, ব্যাথা পাবে কিনা; যার সাথে কথা বলতে গেলে একশো বার ভাবি, আমার কথায় কষ্ট পাবে কিনা; সেই ফুলটাকে তুই আঘাত করলি? এমন আঘাত করলি রক্ত ঝরলো ফুলের শরীর থেকে। ওর লাল রক্ত যে তোর রক্তের পিপাসা জাগিয়েছে আমার। রক্ত চাই তোর! তোর চোখ মুখে আতঙ্ক দেখতে চাই! বাঁচার জন্য আকুলতা দেখতে চাই! হৃদান চৌধুরীক শেষ করে দিতে চাইছিলি তুই? নিজের চোখে নিজের মৃত্য দেখ!
কথাটা বলেই শরীর থেকে হাতটা আলাদা করে দিলো লোকটা। চোখ থেকে টপটপ পানি পড়ছে। চোখে মুখে আঘাতের ভয়াবহ ব্যাথা স্পষ্ট। হৃদান থামলো না একেরপর এক আঘাত করতে লাগলো বাকি অংশ টুকুই। এই ভাবে সারা শরীরে
দুটো ঘন্টা নিজের নিষ্ঠুর তম অত্যাচার চালিয়ে চুপ করে বসে রইলো হৃদান। তাকে কে বসতে দেখেই পান্চু দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে ছুরি চালানো লোকটা সামনে গিয়ে দাড়ালো। নিজের হাত দিয়ে চোখের ভেতর আচড় মারলো। এই চোখ তার ম্যামের উপর পড়েছে এই চোখে কোনো অধিকার নেই বেঁচে থাকার। পিয়াস চুপচাপ সব দেখে যাচ্ছে। পান্চুর কাজ দেখে সে রিতীমতো অবাক। আজ পান্চু যথেষ্ট স্ট্রং থেকে সবটা দেখে গেছে আর নিজেও আঘাত করছে! অন্যদিন তো তার পেছনে চোখ মুখ খিঁচে দাড়িয়ে থাকে। ভালোবাসা সুন্দর! পিয়াস হাসলো। হৃদান বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। গোপন রুমের দরজাটাও বন্ধ হয়ে গেলো!
নিজের ঘরে উদাসীন হয়ে বসে আছে আদর। হাতের ব্যাথার থেকে মনের ব্যাথাটা প্রখর বেশী। সে হৃদান কে ছাড়া কিভাবে থাকবে। আতইয়াব কে বুঝাতেও পারছে না তার উপর হামলার পেছনে হৃদান দায়ী না। সে যে প্ল্যান টা করেছে এমন হওয়ার ই ছিলো। আতইয়াব আদরের ফোন টাও নিয়ে নিয়েছে। হৃদান কেমন আছে, কি অবস্থায় আছে সে খুঁজ ও নিতে পারছে না। ঘুম যেন চোখে ভর করে আছে। আতইয়াব ব্যাথার ঔষধের সাথে ঘুমের ঔষধ ও খাইয়ে দিয়েছে আদরকে। সে জানে তার বোন আজ এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমাবে না। তাই তো এই পন্থা।
ঘুমে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিবে হঠাৎ কিছু পড়ার শব্দ আসতেই ফট করে চোখ খুললো সে। আবছা চোখে একটা অবয়ব দেখেও কিছু বলতে পারলো না। আদরের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। অস্পষ্ট সুরে হৃদ নামটা বলে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো আদর। তখনি কাছে এসে দাড়ালো হৃদান। অনেক কষ্টে বেলকনি টপকে আদরের ঘরে এসেছে সে। কালো টিশার্ট আর ট্রাউজার পড়ে এসেছে। বাম হাতের ঠিক মাঝখানটাই ব্যান্ডেজ করা। যেমনটা আদরের ব্যান্ডেজ করা। নিজেকেই নিজে আঘাত করেছে সে। নিজের ভালোবাসাকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে না পারার দায় টা মাথায় নিয়ে নিজের হাতেই ছুরি চালিয়ে দিয়েছে। ব্যান্ডেজ ও করতে চায়নি। পিয়াস জোর করে ; ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে ব্যান্ডেজ করিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে।
আদরের ঘুমন্ত মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে হৃদান। মুখটা তেলতেলে হয়ে আছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে বিছানায় ছড়িয়ে আছে। পাগল পাগল লাগছে আদর কে। কিন্তু হৃদানের চোখে এই আদর টাকেও অসম্ভব সুন্দর লাগছে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী সে তার মাকেই মনে করতো। তারপর যোগ হয়েছিলো ছোট হৃদযা। এখন তার জীবনে তিনজন রয়েছে। তাদের মধ্যে আদর একজন।
আদর কিছুটা হা করে ঘুমাই। দেখতে খুব খারাপ না লাগলেও বেশী ভালোও লাগেনা। হৃদান মুচকি হেসে হা টা বন্ধ করে দিলো। একটু পর আবার মুখটা হা হয়ে এলো। হৃদানের বেশ ভালো লাগছে এমন করতে। যতবার হা করছে ততবার বন্ধ করে দিচ্ছে হৃদান। আর মরার মতো দিনদুনিয়া ভুলে ঘুমাচ্ছে আদর। টেরই পাচ্ছে না তার অগোচরে কেউ একজন তার পাশে বসে চোখ, মনের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে!
ভোর রাত হতেই হৃদান অনিচ্ছা সত্তেও বের হয়ে আসে ঘর থেকে। আদরের অগোচরে সে গভীর ভাবে স্পর্শ করেনি। যদিও কপালে চুমু খাওয়ার ইচ্ছে টা জেগে উঠেছিলো ; পরমুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়েছে সে। আসার আগে একটা প্যাকেজ রেখে এসেছে হৃদান। যা শুধু আদরের চোখেই পড়বে। ভুল বশত ওই ইবলিশটার চোখে পড়লে তার গর্দান নিবে নিশ্চিত!
সকাল ১০ টা বাজে। আতইয়াব একেরপর এক ফোন দিয়ে যাচ্ছে তারিম কে। কিন্তু তারিম ফোন সামনে রেখে বসে আছে তবুও ফোন ধরছে না। তার ভাইকে কষ্ট দিয়ে এখন পিরিত করতে আসছে! তা তো হবে না চান্দু। শিক্ষা কাকে বলে এবার টের পাবে আতইয়াব। এসব ভেবে কিটকিটিয়ে হেসে দিলো তারিম। তার যেন এমন করতে খুব আনন্দ হচ্ছে। অন্যদিকে আতইয়াব রেগে যাচ্ছে। তবুও নিজেকে শান্ত রেখে ফোন দিয়ে যাচ্ছে। প্রবলেমটা হৃদানের সাথে; সে কেন নিজের বউ ছাড়া থাকবে? দরকার পড়লে মামলা করবে তবুও তার বউ লাগবেই। এই তারিম কে যদি শিক্ষা না দিয়েছে সে। তার সাথে এমন করা, তাকে ইগনোর করা; একবার কাছে পাই তখন বুঝাবো। মনের মধ্যে ফন্দি এটে নিলো আতইয়াব।
কে কাকে শিক্ষা দিবে? শেষে কার জয় হবে? তারিমের প্ল্যান কি সফল হবে? হৃদানের ভালোবাসা কি জয়ী হবে? নাকি আতইয়াবের ভুলের জন্য হেরে যাবে?
চলবে….?