#অপরাজিতা
#৩য়_পর্ব
#স্নিগ্ধতা_প্রিয়তা
আনানকে দেখে কেউ চিনতে পারছিল না। আর সবাই রাজিতার বরকে খুঁজছিল। কিন্তু কোথাও হুইলচেয়ার না দেখে ভাবতে থাকে যে রাজিতার বর আসেনি। কিন্তু নিলার বাবা যখন এসে আনানকে উদ্দেশ্য করে বলল,
–“আনান বাবা, ভেতরে আসো। ”
তখন নিলা আর রিমি এটা ভেবে অবাক হলো যে, এই ছেলেটিকে ওর বাবা কি করে চিনে! একথা জিজ্ঞেস করতে যাবে, তখন আনান ওর মিষ্টি কণ্ঠে বলল,
–“আমি ভেতরে কি করে যাবো বলুন, আপনাদের মেয়েতো আমাকে রেখেই হনহন করে চলে যাচ্ছে।”
রাজিতা পেছন ফিরে বলল,
–“আপনার কি পা নেই! নাকি হাঁটতে পারেন না! যে আমাকে নিয়ে আসতে হবে। ”
রাজিতার চাচা ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
–“নিজের স্বামীর সাথে অমন করে কথা বলতে হয় না মা।”
নিলা আর রিমি নিজের বাবার মুখে একথা শুনে বুঝে গেলো যে ওদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এই সুন্দর ছেলেটাই রাজিতার বর। কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব! নিলা যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না৷
আনান রাজিতার চাচার সাথে বাসায় ঢুকছিল তখন নিলা ওর সামনে এসে বলল,
–“আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”
–“জ্বি বলুন। ”
–“এখানে নয়। একটু পার্সোনাল কথা।”
এটুকু বলতেই ওর বাবা বললেন,
–“নিলা মা, শান্ত হ। বাড়ির নতুন জামাই, মাত্র আসলো। বাসায় আসতে দে, বসতে দে, একটু রেস্ট করুক, তারপর যা বলার দরকার বলিস। ওতো আর কোথাও চলে যাচ্ছে না।”
রাজিতার সাথে অন্যসবাই এতক্ষণে বাসার মধ্যে চলে গেছে পুরো ঘটনা শোনার জন্য। আর রাজিতা সবার কাছে ওর সাথে ঘটে যাওয়া কালকের ঘটনাগুলো বলে যাচ্ছে। সবাই সিনেমার কাহিনী শোনার মতো মনোযোগ দিয়ে শুনছে রাজিতার কথা।
নিলা ওর বাবাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
–“বাবা তুমি নিজের মেয়ের সাথে এটা কি করে করতে পারলে? আমার চেয়ে রাজিতা তোমার কাছে আপন হয়ে গেলো?”
ওর বাবা নিজের মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে বলল,
–“তুই এসব কি বলছিস! আমি নিজেও কিছু জানতাম না এ ব্যাপারে। এসবতো আনান বাবার প্ল্যান ছিলো। আমিতো রাজিতার সাথে বিয়ের পর পুরো ঘটনা জানতে পারলাম।”
–“বাবা তুমি কাজটা মোটেও ঠিক করো নি।”
নিলার নিজের বাবার সাথে এমনভাবে কথা বলতে দেখে আনানের প্রচুর রাগ হচ্ছিলো৷ কি বলবে বুঝতে পারছিলো না।
–“দেখুন আপনি আংকেলকে শুধু-শুধু দোষ দিচ্ছেন। আংকেল কালকেই আমাকে প্রথম দেখেছেন। উনি নিজেও আমার প্ল্যান সম্পর্কে কিছু জানতেন না। আমিই জানতে দেইনি।”
–“আর আপনি? আমাকে বিয়ে করতে এসে আমারি নিজের চাচাতো বোনকে বিয়ে করে নিয়ে গেলেন। লজ্জা করলো না?”
–“দেখুন আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন। আমি আপনার ছোটবোনকে বিয়ে করতে নয়, আপনাকেই বিয়ে করতে এসেছিলাম। সেতো আপনি নিজেই নিজের বিয়ে ভেঙে দিলেন।”
–“হ্যাঁ, ভেঙে দিয়েছিলাম কারণ আমি ভেবেছিলাম আপনি…”
–“আমি কি একবারের জন্যও বলেছিলাম যে, আমি হাঁটতে পারি না?”
–“তাহলে ওই হুইলচেয়ার?”
–“সেতো আমার কালকে হাঁটার কোনো মুড ছিলো না জন্য এনেছিলাম। ”
–“মজা করছেন আমার সাথে? আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়ে মজা লাগছে আপনার?”
–“সরি! এক মিনিট! আমি আপনার জীবন নষ্ট করলাম মানে!”
–“তাহলে কালকের ওইসব নাটক কি জন্য?”
–“দেখুন বিয়ে নিয়ে বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন স্বপ্ন থাকে। তেমনি আমারও স্বপ্ন ছিল যে, হুইলচেয়ারে বসে বিয়ে করতে আসবো।”
–“তাহলে সেটা আগে কেন বলেন নি?”
–“আগেইতো বলেছিলাম৷ কেন আপনার বাবা আপনাকে বলেনি যে, ছেলে যেমনি হোক আপনাকে বিয়ে করতে হবে? আমিতো সেই প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিলাম যে, যাই হয়ে যাক না কেন বিয়ে করেই যাবো। সো, বিয়ে করে বউ নিয়েই বাসায় ফিরেছি। আপনিইতো আপনার কথা রাখতে পারেননি।”
নিলা আর কিছু বলার মতো না পেয়ে নিজের বাবার দিকে আগুনচোখে তাঁকিয়ে বলল,
–“বাবা, তোমাকে আমি কখনো ক্ষমা করতে পারবো না।!”
বলেই কান্না করতে করতে ওখান থেকে চলে গেলো নিলা।
নিলার বাবা আনাননে উদ্দেশ্য করে বলল,
–“ওর কথায় কিছু মনে করো না বাবা! ওর হয়ে আমি ক্ষমা চাচ্ছি। ”
–“আরে আংকেল, কি যে বলেন না। আপনি কেন ক্ষমা চাইবেন৷ আমি কিছু মনে করিনি।”
আনান বাসায় ঢুকতেই শুনতে পেলো যে রাজিতা কয়েকটা মেয়ের সাথে বসে গল্প করছে। রাজিতা সবাইকে উদ্দেশ্য করে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলছে,
–“জানিস তারপর কি হলো! আমি এতসুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিলাম আর ওই কানা এসে আমার মধুর স্বপ্নে জল ঢেলে দিলো!”
ওর কথা শুনে সামনের সবাই শব্দ করে হাসছে। রাজিতা একটু থেমে আবার বলল,
–“আরে আমি এমনি জলের কথা বলছি না। সত্যি সত্যি হাতিটা আমার চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে… ”
এটুকু বলতেই আনানের দিকে চোখ গেলো রাজিতার। আনানকে দেখেই ও বোবা হয়ে গেলো।
রাজিতার চাচাও লজ্জা পেয়ে গেলো রাজিতার কথাগুলো শুনে। তারপর রাজিতাকে ডেকে বলল,
–“অনেক গল্প হয়েছে। এইবার এইদিকে আয়, আনানকে তোর রুমে নিয়ে যা। দুজনেই ফ্রেস হয়ে আয়। ”
রাজিতা অনিচ্ছা থাকা সত্বেও উঠে এলো। আনানকে নিয়ে রুমে চলে গেলো।
আনান ফ্রেস হয়ে রাজিতাকে বলল,
–“তোমার চাচির সাথে দেখা করেছো?”
রাজিতা জিভ কেটে বলল,
–“ধুর! ভুলেই গিয়েছি। ওদের সাথে গল্প করতে করতে মনেই নেই যে ছোট আম্মুর সাথে দেখা করতে হবে। ছোট আম্মু কি যে ভাববে!”
এইবলেই দৌড়ে ছুটে যেতে লাগল রাজিতা। আনান পেছন থেকে ডেকে বলল,
–“আস্তে ছোটো, পড়ে যাবেতো৷ আমিও যাচ্ছি চলো।”
রাজিতা পিছন ফিরে আনানকে বলল,
–“আপনি কেন যাবেন?”
–“আচ্ছা পাগলী মেয়েতো! আমি কোথায় এসেছি বলোতো?”
–“আমাদের বাসায়।”
–“আমার কিছু হয়না?”
রাজিতা লজ্জা পেয়ে বলল,
–“হুম। আপনার শশুরবাড়ি। ”
–“জ্বি মহারানী। আপনিতো নিজের বাসায় এসেই আমার নামে বদনাম ছড়ানো শুরু করেছেন।”
–“কি বদনাম ছড়ালাম?”
–“ওই যে বলছিলে, কানা, হাতি, আরো কি কি যে বলেছো কে জানে!”
রাজিতা মুচকি মুচকি হাসছে।
আনান আর রাজিতা ওর চাচির রুমের সামনে যেতেই শুনতে পেলো যে, ওর চাচি বলছে,
–“ওই যে কথায় আছে না, ‘ দুধ-কলা দিয়ে কালসাপ পোষা’। তো আমিও এতদিন তাই করেছি। দুধ-কলা দিয়ে কালসাপ পুষেছি। যে আজ আমাকেই ছোবল মারলো।”
চলবে……