#অবুঝ_প্রেম
পর্ব ২২
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno
প্রতিদিন যতবার তুর্জ রীতিকে দেখে কখনো সে দেখতে পাইনি রীতি তাকে দেখছে বা কখনো ভুল করে ও চোখাচোখি হয়নি। এতে তুর্জের ভিষণ ইগো হ্যাক হয়। সেই স্কুল লাইফ থেকে মেয়েরা তার পিছনে ঘুরঘুর করছে আর এখন এই মেয়ে তাকে পাত্তা দেয় না। আসলে তুর্জের প্রব্লেম টা হচ্ছে,, মেয়েটা কেন তাকে এভাবে ইগ্নোর করছে,,?
রীতি তার প্রতিটি কাজ খুব যত্নসহকারে করে,, শত চেষ্টা করেও ভুল ধরার ওয়ে পাই না তুর্জ। বর্তমানে অফিসের প্রায় অনেক ছেলে স্ট্রাফ রীতিমতো রীতির উপর ক্র্যাশ খেয়েছে। প্রতিদিন তুর্জ সিসি ফুটেজ গুলো বারবার চেক করে,, যদি কখনো অসাবধানতাবশত রীতি নিজের ফেস ওপেন করে তা দেখার জন্য। কিন্তু প্রতিদিনই ব্যার্থ হয়, মেয়েটা জন্ম থেকেই খাস পর্দাশীল।
নারীদের কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার ব্যাপারে ইসলামের কোনো বাধা নেই। প্রয়োজনের তাগিদে ক্ষুধা নিবারণে নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে পুরুষরা যেভাবে চাকরিতে ছুটছে, একজন নারীও একইভাবে তার পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নিতে পারবে। একজন শিক্ষিত নারী তার মেধা ও যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে দেশ, সমাজ, রাষ্ট ও পরিবারের জন্য বয়ে নিয়ে আসবে সম্মান। ঠিক তাই রীতি হয়তো এভাবে নিজের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে।
দিনদিন রীতির প্রতি তুর্জের ভালো লাগা টা বেড়েই চলেছে। পুরো রাত নির্ঘুম কাটিয়েছে সারা,,কিন্তু তুর্জের সেদিকে কোন হেলদোল নাই। মাঝে মাঝে তুর্জের দিকে তাকিয়ে ভেবেছে, এই বুঝি সে বলবে, এতো টেনশন করছো কেন? দেখো তোমার রেজাল্ট খুব ভালো হবে। কিন্তু কল্পনা গুলো কল্পনাতেই রয়ে গেছে। তুর্জ নিজের কাজ শেষ করে ঘুমিয়ে পড়ে। সারা তুর্জের এমন ব্যাবহার মেনে নিতে পারেনি, তাই ওয়াশরুমে গিয়ে কান্না করতে থাকে। কিছু কিছু মুহুর্তে সবচেয়ে আপনজনের উইশ বা সান্ত্বনা পেতে মন আকুপাকু করে।
তুর্জ রাতের মতোই সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে যায়। এদিকে আজ সারার রেজাল্ট, সেই কথা মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে। সেই ভোর থেকে চুপচাপ খাটের ওপর বসে আছে সারা। একটু পরপর মামুনি আর বাবাই ফোন করছে। তারা কিছুক্ষণ পরেই এখানে চলে আসবে। সবাই খুব করে বোঝাচ্ছে, কিন্তু বারবার মনে হচ্ছে আমি দুটো আণ্ডা পাবো আর রিক্সায়ালার সাথে বিয়ে হবে। অবুঝ মন কিছুতেই বুঝতে চাইছে না আমার বিয়ে তো হয়েই গেছে। তুর্জ সেই সকাল থেকে সবার এমন গাম্ভীর্যপূর্ন মুখ দেখে ভাবছে,,
আজ কি দিবস ?? নিশ্চয়ই ফেসবুকে এর উত্তর আছে,,তুর্জ নিজের ওয়ালে যেতেই দেখে সবাই এসএসসি পরিক্ষার্থীদের জন্য অগ্রিম শুভকামনা জানিয়েছেন। ঘুমের ফাঁকে ফাঁকে মাঝে মাঝে চোখ খুলে সারাকে বিষন্ন ভগ্নহৃদয় অবস্থায় থাকতে দেখেছে কিন্তু কেন এমন করে আছে তা জিজ্ঞেস করে নি। খুব গিল্টি ফিল হচ্ছে এখন,, মেয়েটাকে এভাবে সারারাত কষ্ট পেতে দেওয়া ঠিক হয় নি।
সারার,, রাতের অভিমান গুলো এখন রাগে পরিনত হয়েছে। আর বেশ কিছু দিন থেকেই এমন অনেক ছোট ছোট রাগ সারার মনে দানা বেঁধেছে। হয়তো এভাবেই কখনো ছোট রাগ জমাট বেঁধে বড় কোন রাগে পরিনত হবে।
সারা,,কি হলো, এভাবে ভেজা বেড়ালের মতো চুপসে আছো কেন,, তুমি কি জানো? তুমি কতটা ট্যালেন্ট?? দেখো তুমি আজ গোল্ডেন প্লাস পাবে। নিজের প্রতিই তো তোমার বিশ্বাস নেই দেখছি,, সব সময় নিজের করা সকল কিছুর উত্তর আস্থা রাখবে,, এভাবে ভেঙে পড়বে না,, দেখি হা করো, আজ আমি তোমাকে খাইয়ে দিবো।
সেই রাত থেকে বিন্দু বিন্দু রাগ-অভিমানের কণা গুলো যে শক্ত বরফে পরিনত হয়েছিল তা এক নিমিষেই উষ্ণ পানির স্পর্শ পেয়ে ঝর্ণার মতো ঝরে পড়ছে। সারা তুর্জকে জরিয়ে ধরে ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো,,
কেন আপনি এমন,, জানেন কাল থেকে কতবার আপনার এই সামান্য সান্ত্বনা শুনতে ব্যাকুল হয়ে ছিলাম। আপনি অনেক পঁচা, সত্যিই আমার মন বুঝেন না আপনি, বলেই নাক টানতে শুরু করে আবারও।
তুর্জ এখন সারাকে টিস্যু দিবে নাকি খাইয়ে দিবে ভেবে পাচ্ছে না। মেয়েটা এত ন্যাকামি করতে পারে,,
সারা একটু থামো প্লিজ,,মনে হচ্ছে Boat ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই, দাড়াও একজনকে ফোন করে বলি যে, আমার জন্য একটা Boat কিনে রাখে??
এখানে Boat কেনার কথা কিভাবে আসলো? আর আপনি নৌকা দিয়ে কি করবেন?
তুমি হুটহাট করে যে ভাবে কান্না করো তাতে তোমার চোখে পানিতে ভেসে যাওয়ার আশংকা আছে আমার,,
কিইই আপ্পনিইই,,,,,না থাক কিছু বলবো না,,
আচ্ছা সত্যিই কি আমি খুব ট্যালেন্ট??
হ্যাঁ অনেক,,,,
একটা কথা বলি?
শুধু বলবেন কেন? আদেশ করুন,, আপনার আদেশ পালনে এই বান্দা হাজির,, বলুন কি করতে পারি আপনার জন্য,,,
ফাজলামো বাদ দেন,,শুনুন না,,আমার রেজাল্ট খারাপ হলে কি আমাকে আবারও রিক্সায়ালার সাথে বিয়ে দিবেন?
অহ আল্লাহ,, তুমি উপর থেকে একটা মই ফেলাও,, আমি তা বেয়ে বেয়ে উপরে চলে যায়,,, (মনে মনে) হঠাৎ এই কথা কেন?
ওইযে সবাই বলে না, রেজাল্ট খারাপ হলে রিক্সায়ালার সাথে বিয়ে দিবে,, কিন্তু আমার তো আগেই বিয়ে হয়েছে তাই বললাম,,,,
তুর্জ কি উত্তর দিবে ভেবে না পেয়ে সারার মুখের ভিতর পুরো একটা পরোটা ঢুকিয়ে দিলো। তবুও অন্তত মুখটা কিছুক্ষণ বন্ধ থাকুক। সারাকে আর কোন কথা বলতে দেয় নি তুর্জ। খাওয়া শেষে চিরুনি নিয়ে সারার চুল আচঁড়ে দেওয়া জন্য কাছে যেতেই নিচে থেকে তুর্জের মা বলে,,
সারায়ায়াহহ,,,,তোমার মামুনি রা আসছেন,,
একটু রোমান্টিক মুহুর্ত পার করার ধান্দায় কাছে যেতেই তাতে বাগড়া পড়ে গেলো। সারা সাথে সাথে নিচে চলে আসে,,
মামুনি,,আমার খুব ভয় করছে,, প্লিজ রেজাল্ট খারাপ হলে আমাকে বকবা না তোমরা,,,
আরে পাগলী তোমার রেজাল্ট খারাপ হবে না,, দেখো খুব ভালো রেজাল্ট হবে।
তুর্জ নিজের ফোন বের করে সারার রোল রেজিস্ট্রেশন নাম্বার দিয়ে সার্চ করে দেখে, সত্যিই সারা গোল্ডেন প্লাস পেয়েছে। এই মেয়েটা এতো ট্যালেন্ট তা কখনো বুঝে নি তুর্জ। তুর্জের মাথা দুষ্টু বুদ্ধি হানা দেয়। সে সারাকে আরো বেশি টেনশনে ফেলতে চাই। ফোন হাতে,,মর্মাহত ফেস করে নিচে এসে বলে,,
একবার না পাড়িলে দেখো শতবার,, এমন একটা কবিতা আমি ছোট বেলায় পড়েছিলাম। মন খারাপ করো না তুমি,,
সারা এবার হাত পা ছড়িয়ে কান্না জুড়ে দেয়,,
নাকের আর চোখের পানি একাকার হয়ে গেছে,,,
আয়ায়ামিই অনেক ভালো পপরিক্ষা দিয়েছি,, কেন এমন হলো,, মামুনি বিশ্বাস করো আমাকে,,,,
সারা এভাবে ভেঙে পড়ে না,, তুমি নিজেই দেখো তুমি কতটা ভালো লিখেছিলে,,এই নাও, দেখো দেখো,,!
বাম হাতের কুনুই দিয়ে চোখের পানি মুছে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে,, সে A+
আমি জানতাম আমার রেজাল্ট ভালো হবে।। বাপ্রে এখনি আমার রুহু টা উড়াল দিতে লাগছিলো,, ভাগ্যিস উপরে ছাদ ছিলো। নয়তো আজ রুহের মাগফেরাত কামনা করা হতো।
সারার এখন ইচ্ছে করছে, লবণ মরিচের গুড়ো দিয়ে তুর্জকে চিবিয়ে খেতে। কিভাবে ভয় টাই না দেখালো। সবাই সারাকে অনেক আদর করলো। সারা ফোন নিয়ে মিঠি তুতুল রাহুল শিমুল সবার রেজাল্ট জেনে নিলো। সবার রেজাল্ট ই অনেক ভালো। সবাই অনেক খুশি আজ। তাদের ইচ্ছে করছে একটা ডিজে পার্টি করতে।
সারা এতো ভালো রেজাল্ট করেছে তাই খুশি হয়ে
তুর্জ বিকালে সবাইকে ট্রিট দিতে চাই। এটা যেন তাদের আনন্দ কে আরও দ্বীগুন করে দিলো।
তুর্জ আজ অফিসে যায় নি, সারাদিন বাসায় ছিলো। দুপুর পরে থেকে সারা রেডি হতে শুরু করেছে,, এখন তিনটা পার। এখনো কমপ্লিট হয় নি। তুর্জ এবার হালকা রাগ দেখিয়ে বলে,, তুমি স্লো-লি রেডি হয়ে পরে এসো আমি টাটা,,,
আরে হয়ে গেছে তো,, এই তো এটাই শেষ।
যেহেতু সারা মহা খুশিতে ট্রিট নিতে যাচ্ছে, কাজেই চোখের মেকআপ বেশ ভেবেচিন্তে করতে হবে। কাট-ক্রিজ বা স্মোকি আইজ এক্ষেত্রে একেবারেই চলবে না। নুড বা হালকা বাদামী আইশ্যাডো ব্যবহার করে আর আইলাইনারের স্টাইল ক্যাট আই স্টাইল দেয় । লিপস্টিকের ক্ষেত্রেও নুড শেড করে, এতে দেখতেও ভাল লাগবে সঙ্গে রেস্টুরেন্টের ডেকোরমও মেন্টেন করা হবে।
সারা পিছনে ঘুরে তাকাতেই তুর্জের হার্ট ব্লক হওয়ার উপক্রম। এ যেন নতুন এক পরিকে দেখছে সে।
এইযে, পরে দেখেন আমাকে আগে চলুন, এখনি তো তারা দিচ্ছিলেন।
রেস্টুরেন্টে পাঁচ বানর কে এক সাথে করে তুর্জের অবস্থা মফিজের মতো হয়ে গেছে। তুর্জ ভাবতো সারা বোধহয় একাই এতো চঞ্চল কিন্তু এখন দেখছে কেউ কারো থেকে কম না। এদের ফাজলামোর ঠেলায় বাধ্য হয়ে তুর্জ রেস্টুরেন্টের এক সাইডে গিয়ে দাড়িয়ে আছে।
এমন সময় তুর্জ কাউকে ফোনে কথা বলতে বলতে আসা দেখে। চোখ দুটো খুব পরিচিত, মনে হচ্ছে বহুদিন আগে থেকেই চেনা।ক্যাজুয়াল প্যান্টের সঙ্গে হাই নেক টি-শার্ট , কানে বড় দুল ও হাতে মোটা চুড়ি, গলায় চিকন চেইনের লকেট টা মর্মান্তিক আকর্ষণীয় করে তুলেছে। খোলা চুল গুলো কাঁধের নিচে বিছিয়ে আছে, কয়েক গুছো চুল অবাধ্য হয়ে বাম চোখের উপর দিয়ে কপাল ঢেকে দিয়েছে। সাজসজ্জা দেখে কিছুতেই মনে করতে পারছে না কে উনি,,
উনি অন্যমনস্ক হয়ে কথা বলতে বলতে তুর্জের পাশ দিয়ে যায়।
চলবে,,,