শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক – Part 16

0
381

#শহর_জুড়ে_সন্ধ্যা_নামুক
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
১৬
বন্ধু তিনদিন তোর বাড়ি গেলাম,
তোর দেখা পাইলাম না।
নাহিন ল্যাপটপে কিছু টাইপ করছিল। মিহানের গান শুনে নাহিনের আঙ্গুল থেমে যায়। নাহিন বিরক্ত হয়ে বলে,
এইসব বিশ্রী গান আমার সামনে গাইবে না।
আপনি এই গানটাকে বিশ্রী বলতে পারেন না দু-লা-ভা-ই।
মিহান লাস্ট শব্দটা একটু টেনে টেনে বলে। নাহিন এতক্ষণ ল্যাপটপের স্কিনের দিকে তাকিয়ে থাকলেও এবার মিহানের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
তুমি আমাকে দুলাভাই কেনো বলছো? তোমার কোনো বোনকে আমি বিয়ে করেছি বলে তো আমার মনে পড়ছে না।
মুহিব মুচকি হেসে বলে,
ভাইয়া আপনি ভুল বুঝছেন। মিহান আসলে বলতে চেয়েছিল আপনার টি-শার্টের পিছনে ধুলো লেগে আছে। জানেন তো ও কেমন। সবকিছু একসাথে ঝট পাকিয়ে ফেলেছে। এই প্রিয়ু ভাইয়ার টি-শার্টের ধুলো পরিষ্কার করে দে।
নাহিন ল্যাপটপটা নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। প্রিয়ন্তি চোখ গরম করে তাকালো মুহিবের দিকে। মুহিব মাথা চুলকে হেসে ফেলে।
__________
তন্ময়, মুহিব আর মিরাজ সরকার বাজার করে নিয়ে এসেছে। রান্নার ডিপার্টমেন্ট ছেলেদের আর কাটা-কুটির ডিপার্টমেন্ট মেয়েদের। সবাই তুমুল উৎসাহ নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু কোনো উৎসাহ নেই অনুপম আর নাহিনের মাঝে। দুজন দুজনের কাজে ব্যস্ত। অনুপম ফোনে কারো সাথে কথা বলছে আর নাহিন বই পড়ছে।
যেখানে রান্না হচ্ছে সেখানে সাউন্ড বক্সে মৃদু আওয়াজে গান বাজছে। রান্না শেষ করে সবাই হইচই করে খাওয়া শেষ করে। খাওয়া-দাওয়া শেষ হতেই মিরাজ সরকার আর শ্রেয়া বেগম চলে যান। বাকিরা ছাদে মাদুর পেতে বসে। নাহিনের ফোন আসায় নাহিনও চলে যায়। অনুপম চলে যেতে নিলে মুহিব আটকে দেয়। মুহিব অনুনয় স্বরে বলে,
স্যার আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন প্লিজ। আসলে ঐদিন মাথা একটু গরম ছিল। তাই একটু রুড বিহেইভ করে ফেলেছিলাম। সরি। আই’ম এক্সট্রেমলি সরি।
ইট’স ওকে। আমি এখন আসি।
আপনি এখান থেকে চলে গেলে বুঝবো আপনি আমার সরি একসেপ্ট করেননি।
অনুপম বাধ্য হয়ে বসে পড়ে।মিহান ফুরফুরে মেজাজে বলে,
অনুপম স্যার আপনার সাথে যে আবার দেখা হবে আমি কল্পনাও করিনি। পরীক্ষার পর থেকে আপনার সাথে কাকতালীয় ভাবে প্রায় দেখা হয়ে যাচ্ছে। আমাদের সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য আপনি আমাদের সাথে আমাদের পিকনিকে জয়েন করেছেন। আপনাকে কিন্তু আমাদের আরেকটা দাওয়াত গ্রহণ করতে হবে।
অনুপম ভ্রু কুঁচকে বলে,
কীসের দাওয়াত?
খুব তাড়াতাড়ি আমাদের শ্রেয়সী বিয়ে করতে চলেছে। আপনাকে কিন্তু শ্রেয়সীর বিয়েতে আসতেই হবে। আপনাকে স্পেশালি দাওয়াত দেওয়া হবে।
আমাকে স্পেশালি দাওয়াত দেওয়ার কারণ কী? আমি তো স্পেশাল কেউ না।
আপনি অবশ্যই স্পেশাল। আপনি যদি শ্রেয়সীর বিয়েতে আসেন তাহলে শ্রেয়সীসহ শ্রেয়সীর জামাই ধন্য হয়ে যাবে।
নিতু মিহানের কানে ফিসফিস করে বলে,
অভার এক্টিং কম কর।
মুহিব ওঠে দাঁড়ায়। সাথে মিহানকে টেনে তুলে।
এই ইভা, প্রিয়ন্তি একটু নিচে চল। আন্টিকে বলেছিলাম লাচ্চি বানাতে। এতক্ষণ হয়তো বানানো শেষ। চল আমরা নিয়ে আসি।
ইভা, প্রিয়ন্তি, মুহিব আর মিহান নিচে চলি যায়। একটু পর নিতু আর তন্ময়ও চলে যায় ওয়াশরুমের বাহানা দিয়ে। ওরা চলে যেতেই শ্রেয়সী অনুপমের গা ঘেষে বসে।
আপনি কিন্তু অবশ্যই আমার বিয়েতে আসবেন।
আমি অবশ্যই যাব না। আমি গেলেই কী না গেলেই কী? আমার জন্য কী বিয়ে আটকে থাকবে?
অবশ্যই বিয়ে আটকে থাকবে। আপনি না গেলে হবে? আপনি তো জানেন আমি হুটহাট জ্ঞান হারায়। আপনি না থাকলে আমার সেন্স ফেরাবে কে?
কেনো তোমার প্রফেসার বর আছে না?
আহা এই দায়িত্বটা তো শুধু আপনার। আমি তো ঠিক করেছি আপনাকে আমার বাসর ঘরেও নিয়ে যাব।
তোমার বাসর ঘরে নিয়ে যাবে তোমার আর তোমার প্রফেসার বরের রোমান্স দেখার জন্য?
আহা আপনি এতো রেগে যাচ্ছেন কেনো? আপনাকে তো নিয়ে যাব আমার সেন্স ফেরানোর জন্য। আপনি চাইলে রোমান্সও দেখতে পারেন আমি মাইন্ড করবো না।
অনুপম কটমট করে শ্রেয়সীর দিকে। শ্রেয়সী সামনের চুলগুলো পিছনে ঠেলে দিয়ে বলে,
ধরুন আমার ঐ প্রফেসার বর আস্তে আস্তে আমার হাতটা ধরলো। তা দেখে যদি আমি খুশির ঠেলায় অজ্ঞান হয়ে যাই। তখন তো আপনাকেই জ্ঞান ফেরাতে হবে। চুমু-টুমুর ব্যাপার আছে।
যাস্ট শাট আপ।
অনুপমের ধমকে কেঁপে ওঠে শ্রেয়সী। ছিটকে দুই হাত দূরে সরে যায়। অনুপম শ্রেয়সীর বাহু চেপে ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আসে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
মজা নিচ্ছো আমার সাথে? আমাকে জ্বলতে দেখে খুব শান্তি লাগছে না?
শ্রেয়সী একটা ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে বলে,
আপনি জ্বলতে যাবেন কেনো? এখানে প্লেন করা হচ্ছে আমার বিয়ে নিয়ে। আমার বিয়ে নিয়ে আপনার জ্বলা-জ্বলির কারণ তো বুঝতে পারছি না?
বুঝতে পারছো না নাকি বুঝেও না বুঝার ভান করছো?তোমার প্রতি আমার ফিলিংস তুমি বুঝতে পার না?
আমার প্রতি আপনার আবার কীসের ফিলিংস? আপনি তো অন্য কারো ব্যক্তিগত পুরুষ। আমি ঐ প্রফেসারকে বিয়ে করি, বিয়ে করে রোমান্স করি বা বাচ্চার মা হয়ে যায় তাতে আপনার কী ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব?
রাগে অনুপম নিজের চুল খামছে ধরে। রাগে শ্রেয়সীর বাহু স্বজুড়ে চেপে ধরে বলে,
একদম আমার সামনে প্রফেসারের কথা বলবে না। তুমি বুঝো না আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আমিও তো আপনাকে ভালোবাসি। কিন্তু আপনার মতো এতো ইগো দেখায় না। কী হতো ঐদিন আমাকে বুঝিয়ে বললে? আমি কী জানতাম আপনার জমজ আরেকজন ভাই আছে? আপনি তো সবসময় বলতেন আপনি অন্য কারো ব্যক্তিগত পুরুষ।
আমি তো ওঠা মজা করে বলতাম। এমনিতে আমি তো তোমার ব্যাক্তিগত পুরুষ। তোমাকে তো আমি ঐদিন বুঝিয়ে বলতে গিয়েছিলাম। তুমি আমাকে বলার সুযোগ দিয়েছিলে? উল্টো আমার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলে। তাই তো মেজাজ গরম হয়ে গিয়েছিল।
সরি ঐদিনের জন্য। আপনি বিবাহিত সেটা আমি মানতে পারছিলাম না। তাই তো একটু রুড বিহেইভ করে ফেলেছিলাম।
এতক্ষণ ধরে কী এসব নাটক চলছিল?
হ্যাঁ। আপনি তো কিছু বলেননি। আজকে রুপম ভাইয়া আমাকে সব বলে। আমি তো এতদিন জ্বলেছি। তাই ভাবলাম আপনাকে একটু জ্বালানো দরকার।
______________
বান্ধবী যখন বয়ফ্রেন্ড লইয়া আমার বাড়ির সামনে দিয়া রঙ্গ কইরা হাইটা যায়, বুকটা ফাইটা যায়।
মিহান তোর বুক ফাটাইলো কেডা?
তোরা সবগুলো মেয়ে বয়ফ্রেন্ড লইয়া রং ঢং করছ আর আমি আর মুহিব সিঙ্গেল। মুহিব তোর আর আমার নামের প্রথম অক্ষর ‘ম’। এই ‘ম’ আমাদের গার্লেফ্রন্ড ভাগ্যে কুফা লাগাইয়া দিছে।
মুহিব একটু ভেবে বলে,
চল নাম পাল্টাইয়া ফেলি।
নিতু হাসতে হাসতে বলে,
হ্যাঁ নাম পাল্টাইয়া ফেল। নাম পাল্টাইয়া বক্কর আর কাশেম রাখ। মিহান তোর ক্যারেক্টার একদম বক্কর, বক্কর টাইপ।
তন্ময় একটু কেঁশে বলে,
এটেনশন গাইস। এক জোড়া কবুতর যে আমরা ছাদের রেখে আসলাম। তার কী করছে আমাদের দেখা উচিত। চল একটু দেখে আসি।
আমি যাব না।
ইভার প্রিয়ন্তির চিবুক ধরে বলে,
আমাদের প্রিয়ু বেবি যাবে কীভাবে? তার কৃষ্ণ যে এখানে। যাও রাধা তোমার কৃষ্ণের কাছে যাও।
এর মাঝে শ্রেয়সী চলে আসে।
_______________
সবাই একসাথে ডিনার করতে বসেছে। মিহানরা আজকে কেউ যাবে না। শ্রেয়সীদের বাসায় থাকবে। নিতু, ইভা আর প্রিয়ন্তি শ্রেয়সীর রুমে থাকবে। আর ছেলেদের জন্য নাহিনের রুমে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মিহানের এক কথা সে সারা রাত বৃষ্টির মাঝে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে রাজি কিন্তু নাহিনের রুমে থাকবে না। মুহিব আর তন্ময়ও মিহানের কথায় সায় জানায়। তাই আজকে আর কেউ ঘুমাবে না। সবাই আড্ডা দিবে।
তন্ময় পানি খাওয়ার জন্য গ্লাস হাতে নিতেই কেউ তার পায়ে খোঁচা মারে। তন্ময় চোখ বড় বড় করে বলে,
এই পা সেই পা না, এই পা তন্ময়ের পা।
চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here