আজ ৬বছর পরও ঠিক ওই জায়গাটায় এসে দাঁড়িয়ে আছি! এটাই সেই জায়গা যেখানে আমি ৬বছর আগে আমার স্যার-কে ভালোবাসি বলে প্রপোস করে ছিলাম!
কিন্তু স্যার আমার ভালোবাসা প্রত্যাক্ষণ করে চলে গিয়ে ছিলো যাওয়ার আগে কিছু কথা বলে গিয়েছিল!
আমি ভাবতাম স্যারও আমাকে ভালোবাসে শুধু বলতে পারছে না। তাই আমিই সাহস করে বলে ছিলামএকদম পুরাই ফিদা, টোটাল ফিল্মি স্টাইলে প্রপোস করে ছিলাম। আমাদের শহরে সন্ধ্যার পরের দৃশ্যটা অনেক সুন্দর। আমি মনে মনে ঠিক করে ছিলাম এমন এক সন্ধ্যে বিকেলে তাকে আমার মনের কথা জানাবো।
আজ যে করেই হোক প্রাইভেট পড়ানো শেষ হলেই স্যারকে বাহিরে আমার সাথে ঘুরতে নিয়ে যাবো
তাই আজকে একটা গোলাপি রাঙা শাড়ি পরেছি।
দুই হাত ভর্তি চুড়ি, চোখে গাড় করে কাজল!
ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক!
আর চুল গুলো খুব সুন্দর ভাবে ফুলিয়ে খোঁপা করে বেধে নিয়েছি!
আর সামনে দিয়ে কয়েকটা চুল বের করে রেখেছি!
কানে (স্যারের দেওয়া) ঝুমকো ঝোড়া পরেছি!
এর আগে একবার স্যারকে নিয়ে বাহিরে ঘুরতে গিয়েছিলাম তখন আমার এই কানের ঝুমকো জোড়া অনেক পছন্দ হয়েছিল।
বাড়ি ফিরার পর বাড়িতে ঢুকতে যাবো তখন স্যার পিছন থেকে আওয়াজ দেয় আমাকে আমি পেছনে ঘুরে তাকাই উনি চোখের ইশারায় উনার সামনে যেতে বলেন।
আমি উনার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলি,
– জি স্যার।
– তোমার হাতটা দাও তো!
– কিন্তু কেনো?
– দাও বলছি।
– হুম দিলাম। (স্যারের দিকে এক হাত বাড়িয়ে)
স্যার উনার হাত আমার হাতের উপর রেখে বললেন!
এটা তোমার জন্য ভাবতে পারো ছোটো একটা গিফট!
কিন্তু এখন খুলবে না সোজা রুমে গিয়ে দেখবে!
ওকে এখন আমি যাই!
-যা চলে গেলো যাই রুমে গিয়ে দেখি এই প্যাকেট এর মধ্যে কি আছে
রুমে গিয়ে প্যাকেট টা খুলতেই আমি অবাক
এটা তো ওই ঝুমকো দুই জোড়া যেটা আমি পছন্দ করে ছিলাম শুধু স্যার সাথে ছিলো বলে লজ্জায় নিতে পারিনি,, তার মানে স্যার লক্ষ করেছিলো আমার যে ঝুমকো জুড়ো পছন্দ হয়েছিল
ভাবতে ভাবতে অনেক খুশি হয়ে গেলাম,,,
ভেবেছিলাম একদিন স্যারকে পরে দেখাবো তাই আজকেই পরলাম!
এখনো পুরোনো সৃতির কথা মনে করলে কত খুশি হয়ে যাই। আজও আছে স্যারের দেওয়া ঝুমকো জোড়া আমি আজও খুব যতন করে রেখে দিয়েছি আমার স্যারের দেওয়া প্রথম ও শেষ উপহারটা।
সেই দিনের কথা মনে পরলে আজও অন্ততর কেঁপে কান্না আসে!
জানি না স্যার কোথায় আছে? কেমন আছে?
কি করছে? কিচ্ছু জানি না সে দিন সন্ধ্যার পর আর স্যারকে দেখতে পাইনি অনেক খুঁজে ছিলাম স্যারের বাড়িতেও গিয়েছিলাম কিন্তু যেতে অনেক টা দেরি করে ফেলেছিলাম!
গিয়ে দেখি স্যার উনার মা-কে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন!
আশে পাশের প্রতিবেশীদের জিজ্ঞেস করে জানতে পারি স্যার শহর ছেড়ে চলে গেছেন!
সেই রাস্তায় বসে চিৎকার করে কেঁদেছিলাম!
কি দোষ ছিল আমার ভালোবাসায় স্যার
কি ভুল ছিলো, কি অপরাধ ছিলো আমার
যে এইভাবে চলে গেলেন আমাকে ছেড়ে
ভালোবাসেন না ঠিক আছে শহর ছেড়ে কেনো চলে গেলেন, একটা বার দেখার সু্যোগ ও দিলেন না
স্যারররররররররর, আমি আপনাকে ভালোবাসি স্যার!
তারপর আমার আর কিচ্ছু মনে ছিলো না!
দুইদিন পর জ্ঞান ফিরলে দেখি আমি হসপিটালে
আম্মু পাশে বসে কান্না করছে! নার্স আমাকে দেখে ডাক্তার কে ডাকতে থাকে
ডাক্তার রোগীর জ্ঞান ফিরেছে!
ডাক্তার আমাকে দেখে বাবাকে বাহিরে নিয়ে কি যেনো বলে চলে যায়!
“ আম্মু আমার কি হয়েছে আমি হাসপাতালে কেনো? ”
আম্মু কান্না করার জন্য কথা বলতে পারছে না চোখ মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেক কান্না করেছে আর হয়তো কিছু খায়ওনি।
-“ মা’রে তোর যে এক্সিডেন্ট হয়েছিল মা, আজ দুইদিন পর তোর জ্ঞান ফিরেছে মা! ডাক্তার বলেছিলো তুই কোমায় চলে গেছিস! কিন্তু আমার আল্লাহর উপর ভরসা ছিলো উনি আমার মেয়েকে আমার বুকে আমার ফিরিয়ে দিয়েছেন! ”
(আম্মু কথা গুলো কান্না করতে করতে বললো)
“ আম্মু দুইদিন আমি অজ্ঞান ছিলাম! ”
“ ইতি মামনি এখন তুমি বেশি কথা বলো না তুমি পুরো পুরি সুস্থ হওনি! তুমি সুস্থ হয়ে উঠু আগে, তারপর আমরা বাড়ি গিয়ে অর কথা বলবো। ওকে মামনি! ”
“ কিন্তু আব্বু? ”
আব্বু আমাকে আর কিছু বলতে দিল না আম্মুকে নিয়ে কেবিনের বাহিরে চলে গেলো?
আমি শুয়ে শুয়ে স্যারের কথাই ভাবছিলাম!
ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ি!
আজ ২২ আগষ্ট ঠিক সন্ধ্যে ৭:৪৫ মিনিট সেই দিনটায় সেই টাইমে ৬ বছর আগে স্যারকে প্রপোস করি ব্রীজটার উপরে দাঁড়িয়ে, হাতে ছিলো এক গুচ্ছ সাদা গোলাপ। স্যার সাদা গোলাপ অনেক পছন্দ করতেন তাই সেটা দিয়েই প্রপোস করি।
স্যার আমার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল, আমি স্যারের সামনে দাঁড়িয়ে এক পা হাঁটু গেঁড়ে বসে স্যারের দিকে তাকিয়ে দুই হাত দিয়ে ফুলগুলো স্যারের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলি!
“ স্যার I Love You ”
৬বছর পর আজও আমি স্যারকে সে-রকমই ভালোবাসি সময়ের সাথে সাথে আমার ভালোবাসাও বেড়েই চলেছে!
প্রতি সপ্তাহে এক বারের জন্য হলেও আমি এই জায়গাটায় আসি, কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পর একা একাই হাঁটি!
আজও হাঁটছি এখানে আসলে মনে হয়, স্যার আমার সাথেই আমার হাত ধরে আছেন।
আর বলছেন, “ আর কত অনেক তো হলে চলো তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেই! ”
জানেন তো স্যার এখন আর কেউ বলে না, অনেক তো হলে চলো তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেই।
আজও অনেক ভালোবাসি স্যার আপনাকে অনেক মিস করি আপনাকে নিজের থেকেও বেশি!
আপনার কসম!
ব্রীজের নিচে বসেই কেঁদে কেঁদে বললাম আর কত কষ্ট করবো? আমি যে আর পারছি না স্যার আপনাকে ছাড়া থাকতে।
চলবে?
#স্যার_i_love_you
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
#সূচনা_পর্ব