শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক – Part 14

0
353

#শহর_জুড়ে_সন্ধ্যা_নামুক
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
১৪
নিতু টিউশনি থেকে এসেই কাধের ব্যাগটা টেবিলের ওপর রেখেই ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে। চড়া মেজাজে বলে,
এই শ্রেয়ু এক গ্লাস পানি দে।
প্রিয়ন্তি বইয়ের পাতা থেকে মুখ উঠিয়ে নিতুর দিকে তাকিয়ে বলে,
মহারানির মেজাজ এতো চওড়া কেনো?
জ্যামের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। এই মারাত্নক জ্যামের কারণে আমার মারাত্মক একটা ইচ্ছে হচ্ছে। এই মহাবিশ্বকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে মঙ্গলগ্রহে চলে যেতে ইচ্ছে করছে।
শ্রেয়সী নিতুর দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বলে,
ফুয়াদ ভাইকে ছাড়াই চলে যাবি? আমি হাসিনা আপাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করবো তোকে যেনো খুব তাড়াতাড়ি মঙ্গলগ্রহে পাঠিয়ে দেন আর সঙ্গী হিসেবে যেনো ফুয়াদ ভাইকেই দেন।
নিতু বিরক্ত হয়ে বলে,
বাল সব জায়গায় ফুয়াদরে কেনো টানিস?
প্রিয়ন্তি চোখ-মুখ কুঁচকে বলে,
তোরা দুজন মিহান আর তন্ময়ের সাথে থাকতে থাকতে দিন দিন অশ্লীল হয়ে যাচ্ছিস। ছিঃ কী বাজে ভাষা ইউস করছিস।
শ্রেয়সী প্রিয়ন্তির কথায় পাত্তা না দিয়ে বলে,
মুহিব, মিহান, তন্ময়, ইভা ওরা টিএসসিতে আসছে। তোরা যাবি?
নিতু ভ্রু কুঁচকে বলে,
যাওয়ার কথা বাদ দেন আফা। আগে আপনার কেমিস্ট্রি বলেন। এতো সাজগোজ কারণ কী?
সারপ্রাইজ সেটা পরে বলবো। এখন বল যাবি কী না?
অলমোস্ট সন্ধ্যা হয়ে গেছে। ফিরতে ফিরতে তো রাত হয়ে যাবে। খাবার পাব না। মেইন পয়েন্ট হচ্ছে ঐ পোলট্রির মুরগি হলে ঢুকতে
দিবে না।
ঐ পোলট্রির মুরগি কী ঢুকতে দিবে না? আজকে আমরাই হলে ফিরবো না। আজকে সবাই আমরা ইভাদের বাসায় সারা রাত আড্ডা দিব।
প্রিয়ন্তি মন খারাপ করে বলে,
আমি যাব না। আব্বু সাতটার দিকে ফোন দিবে। যদি বুঝতে পারে আমি বাইরে আছি তাহলে ভীষণ রাগ করবে।
নিতু বিরক্ত হয়ে বলে,
তোর প্রফেসার বাপকে নজরদারি একটু কম করতে বল। মেয়ে বড় হইছে এখনো এতো চোখে চোখে রাখতে হয়। এখনি তো ঘোরাঘুরির সময়। এখন না ঘুরলে কী বিয়ের পর পন্ডিত জামাই নিয়ে ঘুরবি?
প্রিয়ন্তি অবাক হয়ে বলে,
তুই কী করে জানলি আমার জামাই পন্ডিত হবে?
নিতু একটু ভাব নিয়ে বলে,
তোর বাপ একজন পন্ডিত। সে নিশ্চয়ই আরেক পন্ডিত ছাড়া বিয়ে দিবে না। তোর বাপকে ফোন দিয়ে বল তোরে ফোনে চার্জ নাই। যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। হলে কারেন্ট নাই। তাই ফোন বন্ধ থাকলে যেনো চিন্তা না করে। তারপর নিজের ফোনটা ঠাস করে অফ করে দে।
প্রিয়ন্তি বিরস মুখে বলে,
আব্বুকে মিথ্যা বলবো?
শ্রেয়সী প্রিয়ন্তির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,
বাবার রাজকন্যাটা একদিন বাবাকে মিথ্যা বললে কিছু হবে না। এরকম টুকটাক মিথ্যা বলাই যায়।নে তাড়াতাড়ি ফোন দে।
প্রিয়ন্তি ভয়ে ভয়ে নিজের বাবাকে ফোন দেয়। এক দমে কথাগুলো বলেই ফোন রেখে দেয়। নিতু ঝট করে প্রিয়ন্তির হাত থেকে ফোন নিয়ে বন্ধ করে দেয়। প্রিয়ন্তি ভয়ে ভয়ে মৃদু স্বরে জিঙ্গেস করে,
কোনো জামেলা হবে না তো?
কীসের জামেলা প্রিয়ু বেবি? এখন আমরা বিন্দাজ মুডে আড্ডা দিব। তোরা রেডি হতে থাক আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
_____________
টিএসসির দুইটা বেঞ্চ জুরে বসে আছে শ্রেয়সীরা। তাদের প্রত্যেকের হাতেই গরম গরম এক কাপ চা। মুহিব আশেপাশে তাকিয়ে বলে,
সুন্দরী মেয়েরা এখন আর নিজের টাকাই চলে না। সব বয়ফ্রেন্ডের টাকায় ফুটানি দেখায়।
মিহান বিরক্ত সুরে বলে,
কোন আবাল এই গানটা বলছিল, সুন্দরী ললনা বাপের টাকাই করে ছলনা। এই গানটা হওয়া উচিত ছিল, সুন্দরী ললনা বয়ফ্রেন্ডের টাকাই করে ছলনা।
তন্ময় আলতো হেসে বলে,
ভাই সাবধান। তোদের সামনে চার চারটা সুন্দরী ললনা বসে আছে।
ইভা বিরক্ত হয়ে বলে,
বাল তোদের মেয়ে দেখা ছাড়া আর কোনো কাজ নাই? মেয়েরা নিজেদের বয়ফ্রেন্ডের টাকাই ফুটানি দেখাক বা বাপের টাকাই তোদের কী? মেইন পয়েন্টে এমন লাথি মারবো মেয়ে দেখার সখ জন্মের মতো মিঠে যাবে।
তোরা আবার স্ল্যাং ইউজ করছিস।
ইভা প্রিয়ন্তি দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে বলে,
এই মিহান এর জন্য দেশির মাঝে একটা বিদেশী বলদ দেখ। যারা বহু বছর বিদেশ থেকে বুড়া বয়সে বিয়ে করা। তারা ভীষণ বউ ভক্ত হয়। প্রিয়ন্তি যদি বলে, ওগো তুমি এসব ভাষা বলো না। উনি সেটা বেদ বাক্য বলে মেনে নিবেন। আমাদের দেশী ছেলেগুলো প্রিয়ন্তির জন্য না।
আমি নিজের বান্ধবীকে এভাবে দুঃখের সাগরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে পারি না। প্রিয়ন্তির জামাই যদি এমন হয়। পরে তো প্রিয়ন্তি ফোনের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে গান গাইবে, ভাতার আমার কাতার গেছে চাকরি করিতে।
প্রিয়ন্তি মিহানের চুল টেনে ধরে বলে,
মিহান তুই এই অশ্লীল গানটা একদম আমার সামনে গাইবি না।
ছিঃ প্রিয়ন্তি ছিঃ। তুই একজনের আবেগ ভালোবাসাকে এভাবে অশ্লীল বলতে পারিস না। “ভাতার আমার কাতার গেছে” এই গানটার মাঝে প্রবাসীদের ওয়াইফের দুঃখ-কষ্ট, আবেগ ভালোবাসা লুকিয়ে আছে। তুই হুট করে এভাবে একজনের ইমোশনকে অশ্লীল বলতে পারিস না। এটা অন্যায়। আমি মিহান এই অন্যায় কিছুতেই মেনে নিব না।
এই বিশ্রী গানটা আরেকবার আমার সামনে গাইলে আমি তোকে লাথি মারবো।
মুহিব ঠোঁট টিপে হাসে। নিতু প্রিয়ন্তির দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিয়ে বলে,
মামা তুমিও আমাদের লাইনে চলে আসছো।
_______________
সাউন্ড বক্সে মৃদু আওয়াজে গান বাজছে,
একদিন মাটির ভিতর হবে ঘররে,
মন আমার কেনো বান্দো দালান ঘর?
মন আমার কেনো বান্দো দালান ঘর?
একদিন মাটির ভিতর হবে ঘররে,
মন আমার কেনো বান্দো দালান ঘর?
মন আমার কেনো বান্দো দালান ঘর?
মিরাজ সরকার মন খারাপ করে বারান্দায় বসে আছেন। মিরাজ সরকারের মন খারাপ থাকলে তিনি এই গানটাই শুনেন। উনার মন খারাপের এই মুহূর্তে দুইটা কারণ রয়েছে। প্রথম কারণ বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে তাই তিনি বাইরে যেতে পারছেন না আড্ডা দেওয়ার জন্য। দ্বিতীয় কারণ এই যে তিনি বাসায় বসে আছেন উনাকে কেউ পাত্তা দিচ্ছে না। মিরাজ সরকার উঁচু গলায় বলে,
আজকে আমার মেয়ে বাসায় নেই বলে তোমরা আমাকে পাত্তা দিচ্ছো না। আমার মেয়ে আসুক বাসায় আমিও তোমাদের পাত্তা দিব না। দেখো বাপ মেয়ে মিলে কেমন আড্ডা দেই।
ভিতর থেকে শ্রেয়া বেগমের গলা ভেসে এলো,
সেই আশায় বসে থাক।
আশায় বসে থাকবো না। দেখো আজকেই আমার মেয়ে আমার কাছে আসবে।
মিরাজ সরকারের কথা সত্যি প্রমাণ করে দিয়ে এই ঝুম বৃষ্টি মাথাই নিয়ে দুপুরবেলা শ্রেয়সী বাসায় এসে উপস্থিত। বৃষ্টির পানিতে ভিজে কাকভেজা হয়ে গেছে। নিজের মেয়েকে দেখে মিরাজ সরকার বাচ্চাদের মতো খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। নিজের মেয়েকে বুকে আগলে নেয়।
শ্রেয়া বেগম বিরক্ত হয়ে বলে,
মেয়েটাকে একটু ফ্রেশ হতে দিবে। এই বুড়ো বয়সে বাচ্চাদের মতো করছো। আর তোকেও বলি এই বৃষ্টিতে ভিজে আসার কী খুব দরকার ছিল? বৃষ্টি থামলে আসতি।
শ্রেয়সী মৃদু হেসে বলে,
আমি না আসলে হতো? আমার আব্বুটা যে আমাকে মিস করছিল। আমাকে যে আসতেই হতো। আব্বু তুমি একটু ওয়েট করো আমি ফ্রেশ হয়ে আসি। তারপর এই মা ছেলেকে আমরা পাত্তা দিব না।
শ্রেয়সী নিজের রুমে চলে যায়। ফ্রেশ হওয়ার জন্য জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে অনুপমকে নিজের রুমে দেখে চমকে ওঠে শ্রেয়সী। অনুপমকে এখানে সে মোটেও আশা করেনি। শ্রেয়সী গম্ভীর কন্ঠে বলে,
আপনি এখানে কী করছেন?
অনুপমের সোজাসাপ্টা জবাব,
তোমার সাথে কিছু কথা ছিল।
আর কী বলার বাকি আছে আপনার?আপনার সাথে আমার কোনো কথা নেই। আপনি বেরিয়ে যান আমার রুম থেকে।
অনুপম দুই পা এগিয়ে এসে বলে,
শ্রেয়সী তুমি একটু শান্ত হও। তোমার সাথে আমার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। তুমি যাকে ভাবছো আমি সে নই।
শ্রেয়সী রাগে হিসহিসিয়ে বলে,
আপনি আমার সাথে ফাজলামো করেন? বেরিয়ে যান আমার রুম থেকে।
শ্রেয়সী আমি অনুপম না।
থেমে যায় শ্রেয়সী। মনে করার চেষ্টা করে এই নামটা যেনো সে কোথায় শুনেছিল। হুট করে মনে পড়ে যায় সে আয়াতের মুখে এই নামটা শুনেছিল।
চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here