স্মৃতিতে তোমার বন্দনা – Part 33

0
233

#স্মৃতিতে_তোমার_বন্দনা
#পর্ব_৩৩
#Saji_Afroz
.
.
খোলা চুলে সাদা শাড়ি পরে ছোঁয়া আসলো ।
তার দিকে নজর যেতেই, সরিয়ে ফেললো পরশ ।
কি সুন্দর টায় না লাগছে আজ ছোঁয়াকে । ইচ্ছে করছে পলকহীনভাবে তাকিয়ে থাকতে । কিন্তু আদৌ কি এটা ঠিক?
মোটেও না । ছোঁয়ার মনে রয়েছে অন্য কারো বসবাস । পরশ চাইলেও সে জায়গাটি নিতে পারেনা । ছোঁয়া পরশের নয় । কেনোই বা তাকাবে সে তার দিকে!
নয়নতারা বলল-
কেক কাটা যাক?
.
ছোঁয়া বলল-
একটু দাঁড়াও ।
.
পরশের পাশে এসে ছোঁয়া ধীর কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো-
কোথায় সে?
-কে?
-আরে যাকে আপনি আজ প্রপোজ করবেন । আন্টিকে সারপ্রাইজ দেয়ার কথা আজ ।
-ওহ ।
-ওহ! কিছু জিজ্ঞাসা করেছি আপনাকে । তাকে ছাড়া কেক কাটা কেমন যেন লাগছেনা?
-সে আসতে পারছেনা ।
-আসতে পারছেনা?
-হুম ।
-কেন?
-কাজ আছে তার ।
-আমাকে ফোন দিন, আমি রিকোয়েস্ট করি । এত প্লান ভেস্তে যাবে সব!
-বাদ দাও ছোঁয়া । আজ আমার মা বাবার দিন । ওদের দিনই নাহয় থাকুক ।
.
ছোঁয়া কথা বাড়ালো না । কেক কাটা শুরু করলো । এরপর সবাই মিলে ছবি তুললো অনেক ।
সাফিনা আহম্মেদ ও শফিউল আহম্মেদও কিছু প্রকাশ করলেন না ।
আফিয়া জান্নাত কথার এক ফাঁকে বললেন-
কত আপন হয়ে গিয়েছি এই কয়েকদিনে আপনাদের পরিবারের সাথে । এবার মেয়ে বিদায় করার প্রস্তুতি নিন । আরেকটা বান্ধবী জোগাড় করতে হবে আপনার ।
.
হাসতে থাকলেন তিনি । সাফিনা আহম্মেদ মুখে হাসি আনার চেষ্টা করলেন । কিন্তু কিছুতেই পারছেন না ।
শফিউল আহম্মেদ তার অবস্থা বুঝে বললেন-
বুঝলেন আফিয়া আপা, ছোঁয়া চলে গেলে আপনার চেয়েও বেশি কষ্ট এই সাফিনা পাবে ।
.
আফিয়া জান্নাত কথাটির মানে বোঝার চেষ্টা করতে থাকলেন ।
নয়নতারা বলল-
তা অবশ্য ঠিক । বান্ধবী বলে কথা!
.
.
বাগানের পাশে বেতের সোফাটায় বসে আছে পরশ । ছোঁয়া এসে তার পাশে বসতে বসতে বলল-
মন খারাপ?
-হুম ।
-সে আসেনি বলে?
-হু ।
-কি খারাপ! এমন একটা ছেলের কথা কেউ ফেলতে পারে?
-হুম ।
-ছেলে হয়ে এতটা মন খারাপ করতে পারে কেউ?
-তোমার মত কষ্ট লুকিয়ে রাখতে পারছিনা হয়তো ।
.
নিশ্চুপ ছোঁয়া ।
পরশ বলল-
আচ্ছা ছোঁয়া, একটা কথা বলবে?
-হু?
-তুষার যদি ফিরে আসে তোমার কাছে, যাবে তুমি ওর কাছে?
-নাহ ।
-কেন?
-অনেক কিছুই উলোটপালোট হয়ে যাবে ।
-কিন্তু তার জন্য তুমি নিজের ভালোবাসা হারাবে কেন?
-অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছি ।
-ভালোবাসো তুষারকে?
-হুম ।
-সব ঠিক হয়ে গেলে যাবে ওর কাছে?
-আই উইশ যদি হত!
.
ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে ছোঁয়া চলে গেল ।
পরশ বিড়বিড়িয়ে বলল-
হবে । তোমার ভালোবাসা তুমি পাবে । আর তুমি খুশি থাকলেই আমিও থাকব ।
.
.
বাসায় আসতেই পরশকে সাফিনা আহম্মেদ বললেন-
আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ।
-কি?
-আফিয়া জান্নাতকে সবটা জানাবো । উনি না করবেন না ।
-মা!
-হ্যাঁ, আমি যতটুকু উনাকে চিনেছি উনি তার মেয়েদের ভালো চায় । আমি যদি সবটা বুঝিয়ে বলি তাহলে তিনি অবশ্যই মেনে নিবেন । রাফসানের চেয়ে সবদিক থেকে আমাদের ফ্যামিলি এগিয়ে । রাজি না হবার কার‍ণ নেই ।
-কিন্তু ছোঁয়া হবেনা ।
-ওকে তো একবার বলে দেখ?
-ছোঁয়া যদি আমাকে ভালোবাসতো তবে কখনো তুষারের কথা আমাকে জানাতো না । আমাকে সে স্পষ্ট বলেছে, ভালোবাসে তুষারকে ।
-তুই ওকে ভালোবাসিস এটা সে জানেনা পরশ । নিজের ভালোবাসার কথা জানানোর দরকার আছে বলে তোর মনেহয় না? সারাজীবন আফসোস করে যাবি?
-ছোঁয়া সুখে থাকলে আমি কোনোদিনও আফসোস করব না মা । তাই প্লিজ এমন কিছু তুমি করবে না । প্লিজ!
.
সাফিনা আহম্মেদ হনহনিয়ে নিজের রুমে চলে গেলেন ।
পরশ তার মনের অবস্থা বুঝতে পারছে । কিন্তু করার কিছুই নেই । জোর করে ভালোবাসা আদায় করা যায়না । তার চেয়ে বরং ছোঁয়ার খুশিটায় নাহয় দেখুক সে ।
.
.
আজ রাতেও ঘুম হলোনা পরশের । তুষার ও ছোঁয়ার সম্পর্কটা কিভাবে ঠিক করা যায় এই ভাবনায় মগ্ন সে ।
ভাবতে ভাবতে নয়নতারার কথা মনে এলো তার । হ্যাঁ, এখন নয়নতারাই তাকে সাহায্য করতে পারে, ছোঁয়ার খুশি ফিরিয়ে দিতে পারে!
.
.
ঘড়িতে চোখ পড়লে দেখল, সকাল ৬টা বাজে ।
এত সকালে কিভাবে ডাকবে সে নয়নতারাকে?
মোবাইলটা হাতে নিয়ে ডায়েল করলো তার নাম্বারে ।
ঘুমঘুম কণ্ঠে সে রিসিভ করে বলল-
আসসালামু-আলাইকুম ।
এত সকালে আপনি? কোনো সমস্যা?
-জ্বি । কাউকে কিছু না জানিয়ে বাগানে আসুন প্লিজ । কিছু কথা আছে ।
-এখুনি?
-হ্যাঁ ।
-আচ্ছা ।
.
মিনিট পাঁচেকের মাথায় বাগানে উপস্থিত হলো নয়নতারা ।
পরশ বলল-
খুব বেশি দেরী হবার আগে অনেক গুলো সত্যি জানা দরকার আমার ।
-কি সত্যি?
-ছোঁয়াকে কেনো বলেছেন? আপনি রাদিব কে ভালোবাসেন, যেখানে আপনি ভালোবাসেন রাফসানকে ।
.
প্রশ্নটা শুনে ঘাবড়ে গেলো নয়নতারা ।
পরশ বলল-
অবাক হবার কিছু নেই । কিছুটা জানি । সবটা না । সবটা আপনি বলবেন আমাকে ।
-দেখুন এসব আমাদের পারসোনাল বিষয় । আমরা আপনাদের বাসায় থাকি মানে এই না যে, পারসোনাল বিষয়েও কথা বলবেন ।
-ঠিক আছে, এসবের উত্তর আপনাকে দিতে হবেনা । একটা প্রশ্নের উত্তর দিন । ছোঁয়াকে ভালোবাসেন না আপনি?
-অনেক বেশি ।
-ও কতটা কষ্টে আছে জানেন? কাল যখন তুষারকে সে দেখেছিল, ওর চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল কত কষ্টে আছে সে । আরে আমি বাইরের একটা ছেলে হয়েও যেটা বুঝতে পারছি, আপনি আপন বোন হয়ে সেটা কিভাবে বুঝলেন না?
-আমি ছোঁয়ার ভালো চেয়েছি । রাফসান ওকে অনেক সুখী রাখবে ।
-তুষারের থেকেও?
-হ্যাঁ ।
-কিভাবে বুঝলেন?
-কারণ রাফসান বলেছে, ছোঁয়া তার না হলে সুইসাইড করবে সে । যে নিজের জীবনের থেকে বেশি আমার বোনকে ভালোবাসে, তার সাথেই তো সে সুখে থাকবে । তাইনা?
.
হাসতে থাকলো পরশ । নয়নতারা বলল-
হাসছেন যে?
-ঘটনা তাহলে এখানে! রাফসানের জীবন বাঁচাতে এসব সহ্য করছেন আপনি । আসলে আপনি এটায় ভেবেছেন, ছোঁয়ার কথা নয়, ওর খুশির কথা নয়!
.
নয়নতারার মুখে কোনো কথা নেই । পরশ বলল-
আপনি এটা কি ভেবেছেন? যে নিজেকে ভালোবাসতে পারেনা, সে অন্যকে কিভাবে ভালোবাসবে? এসব সুইসাইড এর হুমকি দিয়ে অন্যকে নিজের কাছে আঁটকে রাখা কোন ধরনের ভালোবাসা? আপনিও তো ভালোবাসেন । এমন কিছু তো আপনি করেন নি!
.
নয়নতারা ডুকরে কেঁদে উঠলো । কাঁদতে কাঁদতে বলল-
আমি ভয় পেয়েছিলাম । ভেবেছিলাম সত্যি রাফসান নিজের ক্ষতি করবে । তাই এসব করেছি । আর মাকেও শিখিয়ে দিয়েছিলাম সুইসাইড এর নাটক করতে । যাতে ছোঁয়া রাজি হয়ে যায় ।
.
এবার বেশ অবাকই হলো পরশ । সে বলল-
আপনি যেমন নাটক করেছেন ঠিক তেমনি রাফসানও করেছে । সত্যিকারের ভালোবাসা মানে ছিনিয়ে নেয়া নয়, মানুষটাকে খুশি দেখা । যেটা আপনি করেছেন, আমি করছি ।
-আপনি?
-হ্যাঁ । আমি ছোঁয়াকে ভালোবাসি । আমি চাইলেই অনেক কিছু করে নিজের করে রাখতে পারি ওকে । কিন্তু সে এতে সুখী হবেনা । ওর খুশি তুষারেই!
.
একনাগাড়ে কথা গুলো বলে থামলো পরশ । নয়নতারা বলল-
তার মানে ছোঁয়াকে ভালোবেসেই নিজের কাছে রাখার জন্য এসব করেছেন আপনি?
-হ্যাঁ । কিন্তু আর করব না । কারণ আমি জানি, সে ভালোবাসে তুষারকে ।
-ছোঁয়া জানে? আপনি ভালোবাসেন তাকে?
-নাহ ।
.
পরশের কথা শুনে নয়নতারা কান্না উধাও হয়ে গেল । এভাবেও ভালোবাসা যায় কাউকে! নিজের ভালোবাসার সুখের জন্য ছটফট করছে পরশ । এটাই বুঝি সত্যিকারের ভালোবাসা?
.
পরশ বলল-
আপনি কি ছোঁয়ার দিকটা ভাববেন না? আমরা নাহয় নাই পেলাম আমাদের ভালোবাসা । ও পাক না?
.
মুচকি হাসলো নয়নতারা ।
পরশও হাসলো ।
নয়নতারা বলল-
কি করতে হবে আমায়?
-সব সত্যিটা জানাতে হবে ছোঁয়াকে । তাতেই ছোঁয়া এসব থেকে বের হয়ে নিজের ভালোবাসার কাছে ছুটে যেতে পারবে । বলুন পারবেন না?
.
চোখ মুছতে মুছতে নয়নতারা বলল-
পারবো ।
.
বিশ্বজয়ের হাসি পরশের মুখে । হাসতে হাসতেই চলে গেল সে । নয়নতারা নড়লোনা । স্থির দাঁড়িয়ে রইল সে জায়গায় । আর ভাবতে লাগল-
কোন সত্যিটা জানাব ছোঁয়াকে? রাফসানের সত্যি নাকি পরশের?
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here