#স্মৃতিতে_তোমার_বন্দনা
#পর্ব_৭
#Saji_Afroz
.
.
বাড়িতে এসে মোবাইল থেকে সিমটা খুলে ড্রয়ারে রেখে দিলো রুপালি । অবশ্য ফোনের লাইন কাটার সাথে সাথেই সে বন্ধ করে রেখেছিলো । এই সিমটা সে ব্যবহার করেনা । পরিত্যক্ত বলা যায় । তবে এমন কার্যকলাপের সময় ব্যবহার করা হয় ।
রুপালি ড্রয়ারটার দিকে তাকিয়ে বললো-
পাগলের ডাক্তারকে পটানো আমার কর্ম না । যতোদিন না নতুন কাউকে পাচ্ছি তুই এখানেই থাক সিম বাবাজী!
.
.
এদিকে সেই নাম্বারে ফোন করতে করতে ক্লান্ত পরশ! ফোন বন্ধ কেনো করে রাখলো? তার মানে তার অনুমানই ঠিক?
দুষ্টুমি করেই কেউ এই কাজটি করেছে । তার মন বলছে, ছোঁয়া ফোনের ওপাশে হেসে উঠা মেয়েটিই ।
আরেকটা সুযোগ হারালো সে!
.
.
-আন্টি আজ আমার মনটা ভালো নেই ।
.
রাফসানের কথা শুনে আফিয়া জান্নাত বললেন-
কেনো?
-আজ অফিসে জানালো, আমার ট্রান্সফার হতে হবে । তবে বেশি সময় থাকতে হবেনা । বছর খানেকের মতো ।
-কোন জায়গায়?
-নওগাঁয় ।
.
রাফসানের কথা শুনে আফিয়া জান্নাতের কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো ।
রাফসান তার অবস্থা বুঝতে পেরে বললো-
আমি আপনার অবস্থাটা বুঝতে পেরেছি । কিন্তু আমি দূরে গেলেও আপনার চিন্তা করার কোনো প্রয়োজন নেই । যেকোনো দরকারেই পাশে পাবেন আমাকে ।
-সেটা আর বলতে! তবে বাবা মরা দুই সুন্দরী যুবতী মেয়ে নিয়ে থাকা এতোটাও সহজ নয় । তুমি ছিলে, ভরসা পেতাম ।
-নয়নতারার সাথে বিয়েটা হলে হয়তো…
-আর কোনো চিন্তায় থাকতোনা মেয়েদের নিয়ে আমার । আপত্তি তো আমারো ছিলোনা । তবুও অপেক্ষা করতেই হবে । কি আর করার! তবে তুমি চলে যাবে, এটা শুনে শান্তি পাচ্ছিনা মনে ।
.
নয়নতারা এসে বললো-
কে কোথায় যাচ্ছে?
-রাফসানের বদলি হয়েছে । সে যাচ্ছে ।
.
রাফসান বললো-
তোমার মা আমাকে অনেক বেশিই ভালোবাসেন! যেতে দিতে চায়ছেন না ।
-মায়ের কথা শুনলে হবে! তোমার কাজের জন্য যেতে তো হবেই ।
.
আফিয়া জান্নাত ছোঁয়াকে ডেকে বললেন-
রাফসানের জন্য চা আন ।
-দোকান থেকে ডালপুরি নিয়ে আসি ।
.
রাফসান বললো-
এই সময়ে দোকানে যাওয়ার প্রয়োজন নেই ।
-আরে বিট্টুর দোকানের নাস্তা খেয়েই তো দেখেন! অনেক মজা ।
-বিট্টু?
-এটা আমার দেয়া নাম । ওর আসল নাম হলো…
.
মাথা চুলকোতে লাগলো ছোঁয়া । নয়নতারা বললো-
বরকত ।
.
ছোঁয়া হেসে বললো-
হুম বরকতই । মনে ছিলোনা ।
-এসব দোকানদানদের এতো মাথায় তোলার দরকার কি?
-মাথায় কই তুললাম?
-আলাদা নাম দিচ্ছো তার । এসব মাথায় তোলাই বলা হয় ।
-ওহ তাই বলেন! আমি ভাবছিলামও, এতো মোটা ছেলেটাকে কোলে নেয়াতো দূরে থাক, মাথায় নেবো কিভাবে!
সেই যাই হোক, আজকে একদিন খেয়ে দেখেন ওর দোকানের ডালপুরি । একসাথে চার থেকে পাঁচটা যদি না খান, তবে আমার নাম ছোঁয়া নয় ।
-তুমি দেখছি ফ্রিতে বরকতের দোকানের বিজ্ঞাপন দিচ্ছো ।
-আপনি চায়লে ওর বিজ্ঞাপনও দিতে পারি ।
-ইন্টারেস্ট নেই শোনার ।
-তাহলে আরো বেশি শুনতে হবে ।
.
আফিয়া জান্নাত মুচকি মুচকি হাসতে লাগলেন।
নয়নতারা বললো-
শোনো রাফসান শোনো!
.
রাফসান বললো-
বলো শুনি!
-বিট্টু অনেক দুষ্টু একটা ছেলে ছিলো । বখাটেও বলতে পারেন । সিগারেট খাওয়া, মেয়েদের বিরক্ত করা যেনো তার পেশা ছিলো । বিট্টুর বাবা মারা যায় এক্সিডেন্টে । সেই থেকে সে বদলে যায় । সংসার চালানোর জন্য দোকান দেয় । ঘরে মা আর ছোট বোন রয়েছে । এখন ও আগের মতো নেই ।
-হুম । তাহলে মাথায় তুলতেই পারো ।
-আচ্ছা আপনি বসুন । আমি গরম গরম ডালপুরি নিয়ে আসি ।
.
ছোঁয়াকে থামিয়ে রাফসান বললো-
ঝাল নাস্তা আরো কিছু থাকলে এনো ছোঁয়া ।
.
মৃদু হেসে ছোঁয়া বললো-
আচ্ছা ।
.
.
ক্লান্ত ভারাক্রান্ত শরীর নিয়ে নিজের রুমে এলো পরশ । এমন সময় তার ফোন বেজে উঠলে তাড়াহুড়ো করে রিসিভ করে বললো-
হ্যালো কে?
-আমার নাম্বার সেইভ নেই তোর কাছে?
.
স্ক্রিনে তাকিয়ে পরশ দেখলো, তার বান্ধবী তোহার নাম ভাসছে । ছোঁয়ার চক্করে পড়ে সবটা যেনো এলোমেলো লাগছে পরশের ।
হতাশ কণ্ঠে পরশ বললো-
ওহ তুই!
-আমি মানে? কার ফোনের অপেক্ষা করছিস তুই?
-আছে কেউ ।
-সিরিয়াসলি! প্রেম করছিস আর আমাকেই জানালি না?
-প্রেম করছিনা । প্রেমে পড়েছি ।
-কে সেই ভাগ্যবতী?
-সে ভাগ্যবতী হলেও আমি ভাগ্যবান নয় ।
-কেনোরে?
-আমি তাকে ভালোবাসলেও, সে বাসেনা ।
-কেনো? তোর প্রেমে পড়বেনা এমন মেয়ে হতে পারে নাকি?
-সে জানেনা আমি তাকে ভালোবাসি ।
-শুরু থেকে সবটা খুলে বলতো ।
.
পরশের মুখে সবটা শুনে তোহা বললো-
আমার মনেহয়না, তুই আর ওই মেয়ের দেখা পাবি ।
-কিন্তু আমার মন বলছে, ফোনটা তার ছিলো ।
-কেনোরে! অন্য কারো কাছে কি তোর নাম্বার নেই নাকি?
-তা আছে ।
-আচ্ছা একটা কাজ কর ।
-কি?
-যে ছেলেটার নাম্বারে তুই ফোন দিয়েছিস, তার নাম্বারটা আমায় দে ।
-কেনো?
-কোনো ছেলেকে পাত্তা না দিলেও মেয়েকে পাত্তা দিতে বাধ্য ছেলেরা । আর আমার মতো মেয়ে হলেতো কথায় নেই! কিছু বুঝেছিস?
-তোর মাথাটা ফেটে যায়না?
-মানে?
-এতো বুদ্ধি নিয়ে ঘুরিস কিভাবে! আমি দিচ্ছি নাম্বার ।
-দে ।
-ওই তোহা?
-বল?
-পারবি তো ছোঁয়ার সাথে কথা বলিয়ে দিতে?
-চেষ্টা করে দেখি!
.
.
ছোঁয়াদের সাথে বসে আড্ডায় মজে আছে রাফসান । এমন সময় তার ফোনের রিংটোন বেজে উঠলে, রিসিভ করে বললো-
কে বলছেন?
.
ওপাশ থেকে তোহা বললো-
হাসপাতাল থেকে নার্স বলছিলাম । ছোঁয়া ম্যাডাম একটা জিনিস ফেলে গিয়েছেন ।
-কি?
-সেটা তাকেই বলা যাবে ।
-আমাকে কেনো নয়?
-আসলে মেয়েদের পারসোনাল জিনিস তো তাই ।
.
বাড়ির সবাই বলে, রাফসানের মাথায় অনেক বুদ্ধি । তাকে সহজে কেউ বোকা বানাতে পারেনা । তোহাও তাকে বোকা বানাতে পারলোনা । সে ভালোভাবেই বুঝলো, কোনো ছেলে তোহাকে ফোনটা করতে বলেছে, যাতে ছোঁয়ার সাথে যোগাযোগ করতে পারে । সেই ফোনের ছেলেটেরই কাজ এটি!
ফোনের ওপাশের মেয়েটির উদ্দেশ্যে রাফসান বললো-
না আপনি ভুল করছেন ।
-আপনি একটু ছোঁয়া ম্যাডামকে…
-একটা মেয়ে হয়ে ছেলেকে ডিস্টার্ব করতে লজ্জা করছেনা? বুঝলাম আমাকে আপনার ভালো লাগে । কিন্তু আমার আপনাকে ভালো লাগেনা এটা আপনার বুঝতে হবে । রাখুন তো!
.
শেষের কথাটি ফোনের লাইন কেটেই বলেছে রাফসান । ফোনের ওপাশের মেয়েটি শুনেনি এসব । মূলত তারা কিছু না বুঝতেই এসব বলা । এবং তা হয়েছেও!
আফিয়া জান্নাত বললেন-
কি হয়েছে বাবা?
-একটা মেয়ে আমাকে চরমভাবে বিরক্ত করছে । আমাকে নাকি ভালোবাসে সে ।
-সে কি! সে জানেনা তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে?
-বলেছি । তাও…
-আমার কাছে নিয়ে এসো বেহায়া মেয়েটিকে । চুলের মুঠি ধরে কয়েকটা চড় মেরে শিক্ষা দিয়ে দিবো ।
-আমার হবু শ্বাশুড়ী এমন দর্জাল জানলে পিছু ছাড়তে বাধ্য!
-দর্জাল শুধু মেয়েটির জন্য ।
-তা আর বলতে!
.
তাদের কথা শুনে নয়নতারা হাসলেও ছোঁয়ার হাসি পেলোনা । ভালোবাসা কি কোনো অন্যায়? মেয়েটির সম্পর্কে এসব কথা বলা তাদের উচিত হয়নি ।
.
.
তোহা সবটা জানিয়ে ফোনের অপরপাশে পরশের উদ্দেশ্যে বললো-
ছেলেটি তাদের বাসার কেউই হবে । তাইতো জানে, হাসপাতালে কিছু ফেলে আসেনি ছোঁয়া ।
-হুম ।
-তুই হতাশ হবিনা । কোনো না কোনো উপায় বের হবে ।
-হুম ।
-কি হুম হুম করছিস? এই মেয়ে কি তোকে পাগল করে ফেলছে?
-হ্যাঁ! মানসিক ডাক্তারকেই মানসিক রোগী বানিয়ে ছাড়বে, ছোঁয়া নামক মেয়েটি!
.
চলবে