#তোমাতেই_সীমাবদ্ধ_আমি
#লেখনীতে:মাইশা চৌধুরী
সূচনা পর্ব
“তোর হবু বর হাফ প্যান্ট পড়ে তোকে দেখতে এসেছে।”
কথাটি বলেই হেসে কুটিকুটি তোরশা।আনিশা খালাতো বোন তোরশার কথায় অবাক হলো।
আনিশা এবার সবে ইন্টারে উঠেছে। বিয়ে করার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে তার নেই। কিন্তু মায়ের কথার উপর সে কিছু বলতে পারবেনা আর তাই চুপচাপ তৈরি হয়ে গেছে পাত্র পক্ষের সামনে যাওয়ার জন্য।
বাড়ির ছোট মেয়ে সে তার বড় ১ ভাই আছে।বাবা জার্নালিস্ট।মা টিচার।
আনিশাকে নিয়ে পাত্র পক্ষের সামনে গেলো তোরশা।
আনিশার মাথায় ঘোমটা দেওয়া।কিন্তু তার মন ছটফট করছে হাফ প্যান্ট পরে থাকা লোকটিকে দেখতে।
কে এমন বেক্কল মার্কা কাজ করেছে তাকে দেখতে চায় আনিশা।
আনিশাকে দেখেই পাত্রের মা মিসেস রাহিমা চৌধুরী উঠে এলেন।
তোরশা আনিশা কে ইশারা করল উনাকে সালাম করতে।
আনিশা সালাম করতে নিলে রাহিমা বেগম আটকে দিলেন,,
“থাক মা থাক সালাম করতে হবে না।ভারী মিষ্টি দেখতে তুমি।এসো আমার পাশে বসো।”
আনিশাকে রাহিমা বেগমের পাশে বসানো হলো।আনিশা বার বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। কে হাফ প্যান্ট পড়ে আছে তাকে দেখাতে।
কিন্তু দেখতে পেলো না কাউকেই।
কিন্তু সামনের সোফার দিকে খেয়াল করতেই দেখলো কেউ একজন প্লাজুর সাথে পাঞ্জাবি পরে বসে আছে।
আনিশার প্রচুর হাসি পেলেও সেটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।
ওদিকে যার এতো দুর অবস্থা সে মনে মনে রাগে ফুলছে।
তার পাশেই বসা তার বাবা।সে তার বাবাকে বলে,,
“বাবা বাসায় কি যাবা না?”
“আহ ইয়াশ থামো তো। এমনিতেই তো পাজামা না পরে এসেই এক কেলেঙ্কারি বাধিয়েছো। এখন আবার এভাবে ছটফট করছো। তোমার আম্মু কিন্তু বাসায় গিয়ে চিল্লাবে।”
বাবার কথায় মুখ আরও তেতো হয়ে গেলো ইয়াশের।
সে মনে করছে সকালের কথা।সে কেনো পাজামাটা পড়লো না।
Flashback,,
গভীর ঘুমে আছন্ন ইয়াশ তখনই তার রুমে আসে রাহিমা বেগম।
ছেলের মুখে এক জগ পানি ঢেলে দেয়।লাফিয়ে উঠে ইয়াশ।
“আম্মু এটা কি করতেছো? এমনে পানি দাও কেন?”
“সন্ধ্যা ৭টা বাজে তুই এখন ঘুমাস কেন? সারাদিনই দেখি ঘুমাস। এমনে তো ম/ই/রা থাকবি তাও বুঝবো না যে ম/র/ছি/স ভাব্বো ঘুমিয়ে আছিস।”
মায়ের কথায় কি উত্তর দিবে তা জানা নেই ইয়াশের। সে এখন প্রচন্ড বিরক্ত।
“ইয়াশ বাবু শোন না। ”
“বলো আম্মু?”
“তোর জন্য ভালো একটা সম্মন্ধ এসেছে।”
“আমি কতোদিন বলছি আম্মু আমি এখন বিয়ে টিয়ে করবো না।”
“তুই করবিনা তোর বাবা করবে।”
“এসব তুমি কি বলো ইয়াশের আম্মু?”
রুমে ডুকতে ডুকতে বলে উঠে রিশাদ চৌধুরী।
কথাটা বলে নিজেই বেক্কল হয়ে গেছেন রাহিমা বেগম। তাই কথা পাল্টিয়ে বলে,,
“কাল মেয়ে দেখতে যাবো।রেডি থাকবি।সকাল সকালই বের হবো।আর খবরদার এবার যদি মেয়ে দেখে এসে ক্যান্সেল করিস তো তোকে বাসা থেকে বার করে দিবো।আমার ছেলে বউয়ের মুখ দেখা থেকে কেউ আটকাতে পারবেনা এবার।”
বলে হনহন করে চলে যায় রাহিমা বেগম।রিশাদ সাহেব ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে,,
“বুঝলে ইয়াশ তোমার মা একা আর ঝগড়া করে পেরে উঠছে না।তাই একটা সঙ্গী চাইছে। এনে দেও তো তারাতাড়ি। ”
বলে রুম ত্যাগ করে রিশাদ সাহেব।
ইয়াশ ভাবে এমন ফ্যামিলি কার আছে?ধ্যাত তার ঘুম টা।ইয়াশ উঠে সোফায় সুয়ে আবারো ঘুমিয়ে পড়ে।
পরেরদিন,,
সকাল ১১:৩০ সবাই বাড়ির বাহিরে ওয়েট করছে।ইয়াশের বড় ভাই ইরফান,তার বউ ইরা,রাহিমা বেগম,রিশাদ সাহেব সকলে।
কিন্তু বরের কোনো খবর নেই!রাহিমা বেগম রেগে বলেন,,
“এই ছেলের ঘুম কি এ জীবনে ভাঙ্গবে না ইরফানের বাবা?”
“তোমার মতো হয়েছে।”
“কি কি বললে?এই জন্য আমি তোমার সাথে কথা কম বলি।”
শশুর শাশুড়ীর এই মিষ্টি ঝগড়া দেখে ইরা হেসে বলে,,
“মামনি তুমি এমন করো না।আমি ভাইয়াকে ডেকে আনছি দাড়াও।”
“আচ্ছা মা।”
ইরা গেলো ইয়াশকে ডাকতে।ইরা গিয়ে দেখে ইয়াশ মনের সুখে ঘুমাচ্ছে। ইরা গিয়ে জানালার পর্দা সরিয়ে দেয়। চোখে আলো পড়তেই উঠে বসে ইয়াশ।
“ভাবীজান এভাবে আমার ঘুমের শত্রু হচ্ছো কেনো? ”
“কারণ তুমি এখনো উঠো নাই আর সবাই বাহিরে ওয়েট করছে।”
“কি! কেনো?”
“কেনো আবার মেয়ে দেখতে যাওয়ার কথা না আজ!”
“শিট..আমি তো ভুলে গিয়েছিলাম।”
“এখন তারাতারি উঠে রেডি হয়ে এসো নাহলে মামনি আসলে তোমার খবর আছে। ”
“আমি আসছি ৫মিনিটে।”
“ওকে।”
ইরা রুম থেকে চলে যায়।আর ইয়াশ ফ্রেস হয়ে এসে কাবাড খুলে একটা পাঞ্জাবি পড়ে নেয়।তারপর চুল সেট করে হাতে ওয়াচ পড়তে পড়তে বাহিরে আসে।
ইয়াশ দেখে সবাই গাড়িতে বসে আছে।ও গিয়ে বসে।
তারপর চলে আসে।কিন্তু কারোর ই খেয়াল নেই যে ইয়াশ প্যান্ট পড়ে নাই। রাতে হাফ প্যান্ট আর গেঞ্জি পড়ে ঘুমিয়েছিলো কিন্তু উঠে পাঞ্জাবি পরলেও পাজামাটা আর পড়েনি।
আনিশাদের বাসায় গাড়ি এসে থামতেই সকলে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। ইয়াশ ফোনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি থেকে নামে।
তারপর সামনে তাকিয়ে দেখে সকলে অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
আর রাহিমা বেগম রেগে তাকিয়ে আছে।মেয়ের বাড়ির সকলে মুখ টিপে হাসছে।
কথায় কথায় ইয়াশের কানে এক কথা এলো তা হলো,,
“হবু বর হাফ প্যান্ট পড়ে পাত্রী দেখতে এসেছে।”
কথাটা কানে যেতেই ইয়াশ নিচে তাকিয়ে দেখে সে সত্যি পাজামা পড়তে ভুলে গেছে।এমন ঘটনা বোধহয় আগে হয়নি।মেয়ে দেখতে এসেছে হবু বর হাফ প্যান্ট পড়ে।
চলবে…!!