#স্মৃতিতে_তোমার_বন্দনা
#পর্ব_১৮
#Saji_Afroz
.
.
-কি হলো? বলো??
.
শফিউল আহম্মেদের কথায় ছোঁয়া জবাব দিলো-
আসলে বাসায় না জানিয়ে এভাবে তো বলতে পারছিনা ।
-তুমি কথা বলে দেখো ।
.
পরশ এসে বললো-
আমি নিজে গিয়ে বলবো উনার বাসায় ।
.
শফিউল আহম্মেদ অবাক হয়ে তাকালেন তার দিকে । পরশ একটু কেশে বললো-
তোমার কাজ সহজ করে দেয়ার জন্য বললাম ।
-ভালো বলেছিস!
.
ছোঁয়া বললো-
আপনি কষ্ট করবেন? থাক না….
-প্রিয় মানুষদের জন্য অনেক কিছুই করতে হয়, এই আর এমন কি!
.
শফিউল আহম্মেদ মুচকি হেসে বললেন-
কার জন্য করছিস এখন কষ্ট? মনেতো হচ্ছেনা আমার জন্য?
.
কিছুটা ঘাবড়ে গেলো পরশ । তার বাবা কি কিছু আঁচ করতে পেরেছে!
শফিউল আহম্মেদ গম্ভীরগলায় বললেন-
নাকি মায়ের জন্য?
.
পরক্ষণেই হো হো শব্দে হেসে বলে উঠলেন-
মজা করলাম । ওকে তাহলে আজ কথা বলে আয় ছোঁয়ার ফ্যামিলির সাথে ।
.
পরশ ড্রাইভ করছে । তার পাশেই বসেছে ছোঁয়া । দুজনেই চুপচাপ ।
নীরবতা ভেঙে পরশ বললো-
ক্লাস শুরু হয়নি?
-ভর্তি হয়েছি । এখনো শুরুর দিকতো তাই ক্লাস হচ্ছেনা । আর তেমন একটা ক্লাস না করলেও সমস্যা নেই । আন্টির দেখাশোনায় কোনো অসুবিধে হবেনা ।
-ক্লাস মিস করার প্রয়োজন নেই । ক্লাস শেষেই কাজে এসো ।
-এই মাসে কোনো অসুবিধে নেই ।
-উফ্! তুমি করে বলে ফেললাম ।
-সমস্যা নেই ।
-গান শুনবে?
-না থাক ।
-আমি গাইলেও শুনবেনা?
-আপনি গান গাইতে পারেন?
-টুকটাক ।
-শোনালে মন্দ হয়না ।
-যদি গাড়ি থেকে নেমে যাও গান শুনে?
-কেনো?
-ভয়েস ভালোনা ।
.
উচ্চশব্দে হেসে ফেললো ছোঁয়া । পরশ তার দিকে তাকাতেই সে বললো-
সামনে তাকিয়ে গাড়ি চালান ।
.
পরশ সামনে তাকালো । ছোঁয়া বললো-
গাড়ি থেকে নামাতে ইচ্ছে করছেনা । যদি ইচ্ছেও করে, নামতে দিবেন না । ধরে রাখবেন । এবার গানটা শোনান?
.
পরশ নিজেরমনে বললো-
হু, আজীবন ধরেই রাখবো ।
.
আজ ছোঁয়া হালকা গোলাপি রঙের একটা কামিজ পড়েছে । খোঁপা করেছে সে ।
ছোঁয়ার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে পরশ গান ধরলো–
আলগা করোগো খোঁপার বাঁধন,
দিল ওহি মেরা ফাঁস গেয়ি!
বিনোদ বেণীর জরিন ফিতায়,
আন্ধা ইশক মেরা কাস গেয়ি…..
.
পরশের গান শুনে মুগ্ধ হলো ছোঁয়া । আসলেই ছেলেটি ভালো গান গায় । ছোঁয়া বললো-
খুব ভালো!
-সত্যি?
-হু । আমার তো এখন গাড়িতেই থেকে যেতে ইচ্ছে করছে ।
.
বিড়বিড়িয়ে পরশ বললো-
খারাপ হয়না ।
-কিছু বললেন?
-নাহ ।
.
.
পরশ ও ছোঁয়া বাসার পাশে আসতেই চেঁচামেচির শব্দ শুনতে পেলো । ছোঁয়া দৌড়ে ভেতরে গেলো । পরশও ছুটে এলো তার পিছুপিছু । তার মা ও বোনের সাথে বাড়িওয়ালী তর্ক করছে ।
ছোঁয়া বললো-
কি হয়েছে?
.
নয়নতারা পরশকে দেখে বললো-
আরে আপনি! আসুন না! মা উনাকে বসতে দাও । উনি ডাক্তার পরশ ।
.
বাড়িওয়ালী বললেন-
এসব খাতির যত্ন পরে করবে । আগে আমার টাকা দাও ।
-আন্টি আমরা পরে কথা বলি?
.
ছোঁয়া বললো-
কিসের টাকা? ভাড়া তো দেয়া হয়েছে । বাকি নেই ।
-আমার সামনে খরচা আছে । আগামী দুই মাসের ভাড়া সবার কাছ থেকেই অগ্রিম নিচ্ছি । তোমাদেরও দিতে হবে ।
-এটা কেমন কথা? এভাবে হুটহাট দেয়া যায় নাকি?
-এসব আমি জানিনা । আমার লাগবে নাহলে বের হয়ে যাও এই বাড়ি থেকে । আমিতো জোর করছিনা থাকার জন্য! কতো আসবে কতো যাবে এমন ভাড়াটিয়া ।
-আমাদের দুই একদিন সময় দিন ।
-দুই একদিন! কেনো? তুমি না চাকরী করো ভালো? ওখান থেকে এডভান্স নিয়ে দাও ।
.
এসব শুনতে পরশের একদমই ভালো লাগছেনা । তার সামনে তার ভালোবাসার মানুষ অপমানিত হচ্ছে । এটা সহ্য করা যেনো কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে!
পরশ এটাও জানে, সে এমনিতে টাকা দিতে চায়লে ছোঁয়া তা নিবেনা । তাই সে বুদ্ধি খাটিয়ে বললো-
ছোঁয়া, তোমাকে আমি এডভান্স দিতে রাজি আছি । তবে একটা শর্তে ।
-কি?
-এই মহিলাকে দুই মাসের ভাড়া দিয়ে, এই বাসা থেকে বেরিয়ে যাবে তোমরা ।
-কিন্তু….
-তোমাকে প্রয়োজন ছোঁয়া আমার ।
-মানে?
-আমার মা এর আশেপাশে থাকলে তুমি, আরো বেশি ভালো হয় ।
-আশেপাশে বলতে?
-আমাদের বাসায় একটা ফ্ল্যাট খালি আছে । আমি চাচ্ছি তোমরা ওখানে থাকো ।
-আমরা, মানে…
-আমতাআমতা করোনা ছোঁয়া । ফ্ল্যাটটা এমনিতেই পড়ে আছে । তোমরা থাকলে ভালোই হয় । আবার ভেবোনা তোমাকে হেল্প করতে চাচ্ছি । আমি আমাদের কথা ভেবেই বললাম । মায়ের একদম পাশে থাকলেই ভালো হয় তুমি ।
.
আফিয়া জান্নাত বলে উঠলেন-
ছোঁয়ার জন্যও ভালো হবে, কষ্ট কম হবে ।
.
নয়নতারা কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি বাড়িওয়ালী বললেন-
এই আফিয়া জান্নাতের যোগ্যতা আছে নাকি এই এলাকা ছেড়ে অন্য কোথাও বাসা নেয়ার?
.
সাথে সাথেই ছোঁয়া বললো-
আমরা এখুনি যাবো এখান থেকে, শুধু এখান থেকে নয় । এই এলাকা থেকেও….
.
ছোঁয়াদের নিয়ে নিজেদের বাড়ির সামনে এলো পরশ । বাসার কাউকে কিছু না জানিয়ে এতোবড় একটা সিদ্ধান্ত নিলো সে । তার মা বাবা কি তার এই কর্মে নাখোশ হবেন?
.
.
এদিকে একের পর এক নয়নতারাকে ফোন করে চলেছে রাফসান । কিন্তু সে রিসিভই করছেনা ।
বেশ কয়েকদিন ধরে ছোঁয়ার খবর নেয়া হয়নি । হঠাৎ করেই অজানা এক ভয় কাজ করছে তার মনে । এই দুরত্ব যদি তাকে ছোঁয়ার কাছ থেকে আরো দূরে সরিয়ে দেয়? নাহ, এটা হতে দিতে পারেনা সে । এখন থেকে নয়নতারাকে নয়, ছোঁয়াকেই ফোন দিবে সে । এটা তার অধিকার!
.
চলবে