অবুঝ প্রেম – পর্ব ২৫

0
456

#অবুঝ_প্রেম
পর্ব ২৫
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno
যেভাবেই হোক আজ রাতেই মধ্যে ফুল ডিটেইলস বের করতে হবে। সব নাটকের ইতি টানার সময় হয়ে গেছে।
ওকে স্যার,,
সারা চোখ ফুটিয়ে তাকিয়ে আছে তুর্জের দিকে। এ কেমন কাহিনী, সে বলবে একটা আর তুর্জ করছে আরেকটা। ব্যাক্কেলের মতো হা করে তাকিয়ে আছে তুর্জের দিকে।
মুখ বন্ধ করো, নয়তো হাতি ঢুকে যাবে।
এএহহহ্ মোটেও আমার এতো বড় মুখের হা নয় হুহ্।
আচ্ছা সোনা,,তোমার ছোট্ট মুখের ছোট্ট হা। আমার বুদ্ধির ডিব্বা তোমাকে এত্তগুলা উউম্মায়াহহ।
এই,, হাতে নাতে নিউ গার্লফ্রেন্ড এর সাথে ধরা খেয়ে এখন আমাকে ভুজুংভাজুং বুঝিয়ে কথা টা তলিয়ে দেওয়ার ফন্দি আঁটছেন বুঝি?
আরে না, বোকা রানী, কলসিনী,,পুরো টা শোনো আগে।তুমিও অবাক হয়ে যাবে গো রস কুমারী।
নতুন ড্রামা শুরু করবেন নাকি এখন??
আরে না,, আসলে তুমি যার সাথে আমাকে দেখেছো সে আমার PA বেশ কয়েক মাস হলো জইন করেছে। তার চলাফেরা কথা বার্তায় কখনো আমার সন্দেহ হয় নি। কিন্তু যেদিন তোমার রেজাল্ট এর ট্রিট দিতে রেস্টুরেন্টে যায় সেদিন ওই মেয়েকে তার আসল রুপে দেখতে পাই। তারপর থেকে ওর সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ শুরু করি। কিন্তু মেয়েটা গভীর জলের মাছ, অনেক ধুর্তবাজ,,তার সম্পর্কে তেমন কোন ক্লু পাওয়া যাচ্ছিলো না। তোমার দেওয়া এই ছবিটি দেখে তার সম্পর্কে অনেক কিছু বের করা যাবে।
সব কিছু কেমন মাথার উপ্রে দিয়ে যাচ্ছে,,
তুর্জ সারার কাছে গিয়ে বলে,, কেন আমার পিছনে এমন গোয়েন্দাগিরী করো হুম? আমাকে অন্য কারো সাথে দেখলে খুব জেলাস ফিল হয় তা-ই না?
তো হবো না? আপনার দশ টা গার্লফ্রেন্ড থাকলে তো আর আমার দশ টা বয়ফ্রেন্ড নেই। আমার তো একমাত্র আপনিই,, তাই তো সব সময় নজরে রাখি,,
বাব্বাহ আমার কচিকাঁচা রসগোল্লা দেখি অনেক বড় হয়ে গেছে। কেমন বড় মানুষি কথা বলা শিখে গেছে।
সারা মুখ ভিঞ্চি কেটে পাশ ফিরে সুয়ে পড়ে। তুর্জ লাইট নিভিয়ে সারার বালিশে মাথা দিয়ে সুয়ে পড়ে।
কি মতলব হুম? নিজের সিক্রেট জেনে গেছি তাই পটানোর ধান্দা?
কি বলো এইসব,, আমি তো অনেক আগেই পটিয়েছি তোমায়,, নতুন করে আবারও কি পটাবো তোমাকে?
চুপচাপ নিজের বালিশে ঘুমান, নয়তো আবারও কামড় বসিয়ে দিবো!
এই প্লিজ না না,, কাল আমার ইমার্জেন্সি কাজ আছে। তোমার কামড় আর হায়েনার কামড় সেইম।
তুর্জ ভয়ে নিজের বালিশে গুটিসুটি মেরে সুয়ে পড়ে,, এই মেয়েকে বিশ্বাস নেই, কি থেকে কি করে বসে, পরে দেখা যাবে লজ্জায় এক সপ্তাহ রুম থেকে বেরুতে পারবো না।
সকাল ১০ টা!
তুর্জ বারবার বলছে তারাতাড়ি রেডি হতে কিন্তু সারা সেই ন’টা থেকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রংচং মাখছে। তুর্জের পরিচিত একটা কলেজে সারাকে ভর্তি করাতে নিয়ে যাবে, তারপর যাবে অফিসে। তুর্জ জানে সারাকে ধামকিয়ে কিছু বললে তার বিপরীত হবে তাই সারার সামনে এগিয়ে গিয়ে বলে,,,
ওহ্ মাই গড,, আজকে তো আমার পুতুল পুতুল বউয়ের থেকে চোখ সরানোই সম্ভব না। একদম বিজলির মতো লাগছে তোমাকে,,
এই বিজলি টা আবার কে? অহ্ আল্লাহ গো আর কত জন কে দেখবো গো,, উনি কি প্রেম করে গিনেস বুকে নাম উঠানোর কম্পিটিশনে ফার্স্ট হওয়ার চেষ্টা করছে নাকি??৷ য়্যায়্যায়্যা বাবা গো,, আর কত সহ্য করবো গো,,ইয়া মাবুদ দয়া করে আমার হার্টের কোন প্রব্লেম দিও না প্লিজ। উঠতে বসতে এমন নিউজ দেখলে বা শুনলে আমি নির্ঘাত হার্ট অ্যাটাক করে মারা যাবো। আমি নাতিনাতনি না দেখে মরতে চাই না।
উউফফ্ প্লিজ মাফ চাই,, এই বিজলি কোন মেয়ে বিজলি না,, এটা আকাশের বিদ্যুৎ চমকানোর অন্য নাম,, আর এখন তোমার রুপের আগুনে বিজলি চমকাচ্ছে তাই বললাম।
ওহ্ তাই বলো,, তাহলে ঠিক আছে,, চলুন হয়ে গেছে।
অবশেষে তুর্জ সারাকে নিয়ে কলেজে এসে সকল ফর্মালিটি সম্পুর্ন করে সারাকে ভর্তি করিয়ে দিলো। তারপর সারাকে আবারও বাসায় রেখে ১২ টাই অফিসে যায়। রীতি আগের মতোই বোরখা হিজাবে মুড়িয়ে নিজের কাজ করছে,,
হ্যালো মিস রীতি!!
হ্যালো স্যার,,
আজ ইভিনিংয়ে একটা রেস্টুরেন্টে বাংলাদেশের বিখ্যাত সব বিজনেসম্যানদের নিয়ে মিটিং আছে। আমার সাথে তোমাকে ও সেখানে যেতে হবে। মেন্টালি প্রিপারেশন নিয়ে রাখবে।
ওকে স্যার!!
তুর্জ আবারও বাইরে চলে যায়। অনেক কিছু সেটিং করা এখনো বাকি আছে। সে আবারও কাউকে ফোন করে ,,
হ্যাঁ কতদূর??
,,,,,,,
ইভিনিং এর আগে সব কিছু প্ল্যান মতো দেখতে চাই!!
,,,,,,,,
গুড বয়,,
(তুর্জ আবারও অন্য কাউকে ফোন করে,,)
বাইকের ডিটেইলস বের হয়েছে??
,,,,,,,
ছেলেটাকে সুস্থ এবং নিখুঁত অবস্থায় সন্ধ্যা সাত টার আগে প্ল্যান অনুযায়ী নির্দিষ্ট স্থানে দেখতে চাই!
,,,,,,,,
তারপর তুর্জ ম্যানেজারের রুম থেকে সেই ফাইল টা নিয়ে নিজের গাড়িতে রাখে। যে রীতি কে অফিসে জইন করার জন্য রিকুয়েষ্ট করছিলো তুর্জ তাকেও ফোন করে বলে, ইভিনিংয়ের মিটিংয়ের কথা। তুর্জের সব কিছু গোছানো কমপ্লিট, শুধু মাত্র সঠিক সময়ের অপেক্ষা।
তুর্জ লান্স শেষে আবারও অফিসে বসে ল্যাপটপে নজর দিয়ে আছে। রীতি তার কাজ গুলো করে যাচ্ছে তার মতো। সে বুঝতেও পারছে না তার প্রতিটি কাজ কেউ একজন নিখুঁত ভাবে পর্যাবেক্ষন করছে। সে কাকে কিভাবে ফোন থেকে টেক্সট করে সব গুলো কেউ একজন দেখে।
অবশেষে তুর্জের প্ল্যান সাকসেস হওয়ার সময় এসেছে। তুর্জ রীতিকে নিয়ে শহরের নির্জন একটা রেস্টুরেন্টে যায়। এখানে তেমন কেউ নাই বললেই চলে। হাতে গুনা কয়েকজন লোক আশেপাশে ঘোড়াঘুড়ি করছে। রীতি বেশ অবাক হয়ে গেছে,, এতো বড় মিটিং অথচ তেমন কেউ ই নাই,,,
স্যার এখানে তো কেউ নেই?
ভিতরে সবাই আছে, আর যেহেতু ইমপোর্টেন্স মিটিং তাই পুরো রেস্টুরেন্ট আজ রাতের জন্য নিয়ে নিয়েছি, আমরা ছাড়া সাধারণ পাবলিকের জন্য প্রবেশ নিষিদ্ধ।
রীতি ধিরে ধিরে সামনে এগুলোতে থাকে,, ভিতরে তেমন কাউকে দেখা যাচ্ছে না। দুরের একটা টেবিলে হালকা পিংক কালার শার্টের সাথে নেভি ব্লু কালার প্যান্ট পড়া একজন কে দেখা যাচ্ছে। দূর থেকেও কেমন চেনা চেনা লাগছে রীতির। বারবার মনে মনে বলছে তার আশংকা যেন ভুল হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত সামনে গিয়ে বড় রকম শকড খায় রীতি। কিন্তু যেভাবেই হোক বিষয়টি সামলিয়ে নেই দুজনেই। ওদের ধারণা তুর্জ মনে হয় তাদের মনের অবস্থা বুঝতে পারছে না।
ওই ছেলেটি,, চুপচাপ বসে আছে, পাশে বসেছে রীতি। তুর্জ ফোনে কথা বলে যাচ্ছে। একটু পরে অফিসের সেই স্টাফ কে নিয়ে আসা হয়। তারপর তিন জন কে পাশাপাশি বসিয়ে তুর্জ বলেন,,,
কি?? খুব অবাক হচ্ছেন তাই না? কিছু তো শুরুই হলো না,, তাতেই এমন অবস্থা,,, আমি আজ বেশ কিছু ম্যাজিক দেখাবো সবাই কে!!
আসুন,, 1স্ট ম্যাজিক দেখুন
তুর্জ দুই আঙুলে তুরি বাজাতেই একজন ছুটে এসে একটা ফোন দেয় তুর্জের হাতে,,, ফোন টা দেখার সাথে সাথে রীতি নিজের ব্যাগ চেক করতে শুরু করে।
হেই কিউট গার্ল,, ব্যাগে ফোন নেই,, এটাই আপনার ফোন। ওয়েস্টার্ন পোশাকে আপনাকে বলিউড হিরোইন দের চেয়েও বেশি সুইট দেখায়।
ইয়েএ স্যার কি বলছেন এইসব?? আর আমি এইসব পোশাক কেন পড়বো?? আর এটা কার ফোন, কে ওই মেয়ে??
ওহ্ রিয়েলি!! এই পিক টা তাহলে আপনার না?? দেখুন তো এদের চিনতে পারেন নাকি??
(সারার তোলা সেই huge এর পিক সামনে ধরে)
স্যার প্রব্লেম কি আপনার?? আমার পার্সোনাল পিক আপনি কিভাবে পেলেন?
হেই মিস্টার রুদ্র,,দেখুন তো ছেলেটাকে চিনেন কি না??
কে উনি,, আর উনি তো হেলমেট পড়ে আছেন কিভাবে চিনবো (কাপাকাপা কণ্ঠে)
কিন্তু উনি যে বাইক নিয়ে আছেন সেই বাইক টা আপনার নামে রেজিস্ট্রেশন করা,,লুকড,,,,!
মিস রীতি,, বিশ্বাস করুন আপনার এমন মায়াবী পোশাক আর মিষ্টি কণ্ঠের ক্র‍্যাশ খেয়েছিলাম ফাস্ট দেখায়। কিন্তু আপনার হিজাবের ভিতরের কালনাগিনী ফেস উন্মোচন হয় ওইদিন রেস্টুরেন্টে,, আপনার চোখ দেখে এবং ভয়েস শুনেই আমি কনফার্ম ছিলাম ওটা আপনি। কিন্তু অফিসে আপনাকে জিজ্ঞেস করার সাথে সাথে যখন বললেন আপনি অফিস টাইমে অফিসে ছিলেন তখনই আমার কেমন যেন খটকা লাগে। তাই সিসিটিভির ফুটেজ চেক করি,, কিন্তু সামনের গেট দিয়ে আপনাকে একবার ঢুকতে দেখা গেলেও আর বেরুতে দেখা যায় নি। আর আমার চোখ এখনো এতোটাও ভুল দেখে না যে রেস্টুরেন্টে ভুল কাউকে দেখবো।
তারপর একে একে সব গুলো ফুটেজ চেক করে দেখি পিছনের গেট দিয়ে সেই ওয়েস্টার্ন পোশাক পড়া মেয়ে অফিসে আসছে। এখন আর সন্দেহ বলে কিছু থাকে না,, যা থাকে সব বিশ্বাস। তাই সেদিন রাতেই আপনার ডেক্সের ঠিক উপরে সিসি ক্যামেরা সেট করি আর আমি আমার নিজের ল্যাপটপে প্রতিনিয়ত আপনার কর্মকাণ্ড দেখি। কিন্তু আপনার মেইন উদ্দেশ্য কি তা জানতে আপনার সাথে বেশ কিছু দিন নাটক করতে হয়েছে।
আমার বিশ্বস্ততার সুযোগ নিয়ে এক কোটি টাকার কন্ট্রাক্ট ফাইনালে আমার সাইন নেওয়া, সব কিছু আমি জেনে বুঝে করেছি,,
চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here