#যেদিন_তুমি_এসেছিলে
#পর্ব_৫০ (অন্তিম পর্ব)
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_________________
(বর্ধিতাংশ)
অফিস ছুটি এখন। জহির চৌধুরী, আহনাফ এবং আহিলও এখন থেকে বাড়িতেই থাকে। আফরিন গতকাল শ্বশুরবাড়ি চলে গেছে। বিয়ের পর তার প্রথম ঈদ। শ্বশুরবাড়িতেই করতে হবে। ঈদের দু/তিন দিন পর আসবে আবার।
আহনাফ, নিহিত আর আহিল ড্রয়িংরুমে বসে খেলা দেখছিল। সন্ধ্যার পর আর কিছুতে মন না বসলেও খেলা দেখাতে একটুও অনাগ্রহ কাজ করে না। নেহা এসে দাঁড়িয়েছে টিভির সামনে।
আহিল নাক-মুখ কুঁচকে বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে,’কী হয়েছে? টিভির সামনে দাঁড়িয়ে আছো কেন?’
নেহা দু’হাত বগলদাবা করে একটু ভাবসাব নিয়ে বলে,’খেলা দেখা বন্ধ।’
‘সমস্যা কী তোর? আ’জা’ই’রা কথা না বলে সামনে থেকে সর।’ বলল নিহিত।
নেহা দমে যাওয়ার মেয়ে নয়। সে এবার কোমরে হাত গুঁজল। রাগে হিসহিস করে বলল,
‘হুমকি-ধামকি দিয়ে লাভ হবে না কোনো। খেলা দেখা বন্ধ মানে বন্ধ। ব্যস!’
‘কী চাই তোর?’ জানতে চাইল আহনাফ।
‘লুডু খেলব।’ বলল নেহা।
‘তো খেল। বারণ করল কে? আমাদের কেন বিরক্ত করছিস?’
‘কারণ তোমাদের সাথেই লুডু খেলব।’
‘সবসময় কিন্তু সব আবদার ভালো লাগে না নেহু। অর্ষার সাথে গিয়ে খেল।’
‘ভাবি তো আছেই। সাথে তোমরাও।’
‘এবার কিন্তু সত্যিই রাগ লাগছে নেহা। সবসময় বাচ্চামো করা লাগবে?’
ধমক খেয়ে কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে নেহা। এরপর লম্বা পা ফেলে ছুটে চলে যায় ড্রয়িংরুমে। মিনিট পাঁচেক বাদেই ড্রয়িংরুমে এসে উপস্থিত হয় অর্ষা। কোনো কথা না বলেই আগে টিভি অফ করে। উপস্থিত তিনজনেই হকচকিয়ে যায়। আহনাফ কিছু বলতেই যাবে তার পূর্বে অর্ষা বলে,
‘আপনার কি বুদ্ধিশুদ্ধি কখনোই হবে না? মেয়েটা ক’দিনের জন্য এসেছে বাংলাদেশে? ওর কথা বাদ দিলাম। আপনি নিজেই ক’দিনের জন্য এসেছেন? ঈদের পরই তো আবার দৌঁড় লাগাবেন সুইজারল্যান্ডে। পরিবার-পরিজন ছেড়ে ব্যস্ত জীবন শুরু করবেন আবার। যে ক’টা দিন দেশে আছেন সে ক’টা দিন কি সবার সাথে মিলেমিশে সময় কাটানো যায় না? এই খেলা কি আপনি পরে আবার দেখতে পারবেন না?’
আহনাফ নিরুত্তর। নিহিত মিনমিনে গলায় বলল,’যখনের খেলা তখনই দেখার মাঝে আলাদা মজা আছে ভাবি!’
‘তাই? খেলা যদি দেখতেই হয় তাহলে সুইজারল্যান্ডে বসেই দেখতেন। বাংলাদেশে কেন এসেছেন? বোন এখন কাছে আছে তো মর্ম বুঝতে পারছেন না। যখন বিয়ে হয়ে যাবে তখন আর আবদার করার জন্য বোন থাকবে না। তখন বুঝবেন কেমন লাগে।’
‘শান্ত হ অর্ষা! এত হাইপার হয়ে যাচ্ছিস কেন?’ বলল আহিল।
অর্ষা গম্ভীর হয়ে বলল,’তুই তো আর কথাই বলিস না! চুপ হয়ে থাক একদম।’
আহনাফ বলল,’আচ্ছা বেশ! ভুল হয়ে গেছে। স্যরি। চলো এবার লুডু খেলা যাক। নেহা কোথায়?’
‘আমাদের ঘরে। ধমক কেন দিয়েছেন ও’কে? কাঁদছে এখন মেয়েটা।’
আহনাফ আর কিছু বলল না। আহিল এবং নিহিতকে নিয়ে গেল নিজের রুমে। বিভিন্ন ছলাকলা, হাসির কথা বলে মুহূর্তেই নেহার রাগ ভাঙিয়ে ফেলে। এরপর পাঁচজনে মিলে একসাথে ফোনে লুডু খেলতে বসে। সবার আগে ছক্কা ওঠে আহনাফের। এবং আস্তে আস্তে সে-ই সবার আগে এগিয়ে যায়। একে একে তিনটা গুটিই পাকিয়ে ফেলেছে। বাকিরা এখন আদাজল খেয়ে নেমেছে আহনাফের একটা গুটির পেছনে। অনেক কষ্টে সে গুটিটা বাঁচিয়ে প্রায় পাকার ঘরের কাছে নিয়ে আসে। ঐ সময়েই পরের দান থাকে অর্ষার। সে এক ছয়, চার উঠিয়ে আহনাফের পাকা গুটি খেয়ে ফেলে।
আহনাফ চেঁচিয়ে বলে ওঠে,’হায় হায় গো! আল্লাহ্ গো! আমার এ কী সর্বনাশ হয়ে গেল। নিজের বউ! নিজের বউ এই কাজটা করতে পারল। আল্লাহ্! পাকা টসটসে গুটিটা এভাবে খেয়ে ফেলল! ইয়া আল্লাহ্ এই কষ্ট কী করে সহ্য করি। আমার এত বড়ো সর্বনাশ তুমি করতে পারলা বউ?’
আহনাফের হায়-হুতাশ দেখে বাকিদের অবস্থা হেসে কুটিকুটি। বিশেষ করে নেহা তো হাসির জন্য দম-ই নিতে পারছে না ঠিকমতো।
আহনাফ মেকি ধমক দিয়ে নেহার উদ্দেশ্যে বলে,’তুই হাসবি না খবরদার! তুই, তুই হচ্ছিস ঘষেটি বেগম।’
‘আহারে, আহারে!’ আহিল ও নিহিত সমস্বরে বলে ওঠে।
আহনাফের রাগ বাড়ে তাতে। ওদেরও ধমক দিয়ে বলে,’তোরা দুটো চুপ থাক মীর জাফরের দল!’
অর্ষা হাসছে মুচকি মুচকি। আহনাফ ওর দিকে তাকিয়ে কাঁদোকাঁদো হয়ে বলে,’তুমি হচ্ছ বউ মানুষ! তোমারে তো কিছু বলতেও পারি না। তবে খুবই দুঃখ দিলা তুমি আমারে।’
________
চাঁদ রাতের আগের দিন কেয়া ও সিফাত এই বাড়িতে আসে। সঙ্গে রুহুল আমিন, কুসুম আর তিয়াসও। জহির চৌধুরী এতবার ফোন করে আসার কথা বলেছেন যে, দাওয়াত উপেক্ষা করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
বাড়ি ভর্তি এখন মেহমান। বিকেলের দিকে আহনাফের বড়ো খালার পরিবার আর ছোটো খালার পরিবারও চলে এসেছে। এবার সবাই মিলে একসাথে ঈদ করবে। শুধু আফরিনের জন্যই একটু খারাপ লাগছে। তবে কিছু করারও নেই। বিয়ের পর মেয়েদের কতকিছুই তো স্যাক্রিফাইজ করতে হয়। মেহমান বেশি হওয়ায় রেণু কিংবা আমেনা বেগম একা কাজ করে কুলিয়ে উঠতে পারে না। তাই তাদের সাথে বেশিরভাগ সময়টা অর্ষাও কাজে ব্যস্ত থাকে। ফ্রি সময় কাটানোর ফুরসত নেই এখন তেমন একটা।
কেয়া আসার পর থেকে ঘরের মধ্যেই ছিল। বাইরে বের হয়নি। সে যা করেছে এরপরও সবার সামনে হেসে-খেলে ফ্রি হওয়া এতটা স্বাভাবিক ব্যাপার নয়। ড্রয়িংরুমে এখন সব বাচ্চাকাচ্চারা রয়েছে শুধু। সে খুব ভয় নিয়েই রান্নাঘরে পা রাখে। আমেনা বেগম তখন হেঁশেল সামলাতেই ব্যস্ত।
কেয়াকে প্রথম রেণুই দেখতে পায়। জিজ্ঞেস করে,’কিছু লাগব আপা?’
কেয়া নার্ভাস ফিল করে। অনেক বেশি অস্বস্তি লাগছে তার। আমেনা বেগম তাকিয়ে হাসেন। সেও রেণুর মতো জানতে চায় কিছু লাগবে কিনা।
কেয়া জড়তাগ্রস্ত হয়ে বলে,’না, এমনিই আসলাম। ঘরে ভালো লাগছিল না।’
‘এখন তোমার গরমের মধ্যে না থাকাই ভালো। তুমি রেস্ট করো ঘরে গিয়ে।’
‘সমস্যা নেই আন্টি।’
‘ঠিক তো?’
‘হ্যাঁ।’
তিনি রেণুকে দিয়ে একটা চেয়ার আনিয়ে কেয়াকে বসতে বলেন। জানতে চান,
‘রোজা আছো?’
‘জি।’
‘ইফতারের পর আচার খেলে বলিও। অনেক আচার আছে ঘরে। যেদিন চলে যাবে মনে করে দু’বয়াম নিয়ে যেও।’
কেয়া মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। এতকিছুর পরও এতটা স্বাভাবিক ব্যবহার কি কেউ করতে পারে? এতটা ভালোও কেউ বাসতে পারে? এই মানুষটা ভালো। শুধু ভালো নয়। প্রয়োজনের চেয়ে কয়েকশো গুণ বেশিই ভালো বোধ হয়। আবেগে চোখের কোণে জল এসে জমা হয়। সবার অগোচরে শাড়ির আঁচলে ভীষণ সন্তর্পণে মুছে নেয় পানিটুকু। সবার দৃষ্টি এড়িয়ে যেতে পারলেও অর্ষার দৃষ্টি এড়িয়ে যেতে পারেনি।
কেয়ার কাছে আরো বেশি অদ্ভুত লেগেছে ইফতারের সময়ে। সংকোচে সে তখন সবার সামনে আসতে চায়নি। আমেনা বেগম জোর করে নিয়ে এসেছেন। একসাথে ইফতার করার যেই আনন্দ, সেটা কি একা ইফতার করার মধ্যে আছে? তিনি কেয়ার স্বামী সিফাতের সাথে সবার পরিচয়ও করিয়ে দিলেন। অবাক করা বিষয় হচ্ছে উপস্থিত একজনও কোনো রকম কটু কথা শোনাননি। এমনকি একবারের জন্য জানতেও চায়নি কেন সে সেদিন এমনটা করেছিল। উপরন্তু সবাই সিফাত এবং কেয়ার সাথে এত ভালো ব্যবহার করেছে যেটা তাদের দুজনেরই প্রত্যাশার বাইরে ছিল। এমনকি আহনাফও সিফাতের সাথে বিনয়ের সাথে কথা বলেছে। কেয়ার সাথে স্বাভাবিক কথোপকথনও হয়েছে দু’তিনটা। সবমিলিয়ে কেয়া আপ্লুত ও আনন্দিত। মন থেকে সে এই পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং আহনাফ, অর্ষার জন্য দোয়া করে। এই মানুষগুলো সারাজীবন এমনই থাকুক। কখনোই যেন পরিবর্তনের ছোঁয়া এদের ধারেকাছে না ঘেঁষতে পারে।
ধীরে ধীরে অর্ষা ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কখনো কেয়ার সাথে সময় কাটানোতে ব্যস্ত, আবার কখনো খালামনি, ফুপি এদের ছোটো ছোটো ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ব্যস্ত। আহনাফকে তার সময়ই দেওয়া হয়ে ওঠে না। অভিমান হয় আহনাফের। সারাদিনের ব্যস্ততা কাটিয়ে আহনাফের কাছে গেলে এড়িয়ে যায় সে অর্ষাকে। ঠিকমতো কথাও বলে না। রাতে ঘুমায় নিহিত আর আহিলের সাথে। বিষয়টা অর্ষাও ভালোভাবে নিতে পারে না।
চাঁদ রাতের দিন সবাই যখন মেহেদী নিয়ে উৎসব, আনন্দে মেতে উঠে আহনাফ, অর্ষা তখন মান-অভিমানের স্রোতে ভাসছিল। অর্ষা ভেবেছিল অন্তত রাতে সবকিছু ঠিকঠাক হবে। তাও হয়নি। রাগে, জিদ্দে সে হাতে মেহেদীও নেয়নি। কেয়া, নেহা বাড়ির সবাই অনেকবার জোড়াজুড়ি করলেও অর্ষা পরে দেবে এই বাহানা দিয়ে কাটিয়ে দিয়েছে। ইফতারের পর সবাই বাড়ির সামনে থাকা খোলা জায়গায় আতশবাজি ফুটাচ্ছিল। অর্ষা তখন আহনাফের হাত ধরে টেনে বাড়ির অন্য সাইডে নিয়ে যায়।
আহনাফ গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞেস করে,’কী হয়েছে?’
অর্ষা ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে,’কী হয়েছে সেটা তো আপনি বলবেন।’
‘আমি বলব মানে? এখানে নিয়ে এসেছ কেন?’
‘আপনার সমস্যাটা কী? এমন করছেন কেন?’
‘আমি কী করেছি? কিছুই তো করিনি।’
‘কিছুই করেননি? কেয়া আপু এই বাসায় আসার পর থেকে আপনার ব্যবহারে, আচরণে পরিবর্তন এসেছে। কেন? আপুকে সহ্য করতে পারছেন না আপনি?’
‘তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে। এমন কিছুই না।’
‘এমন কিছুই না? এই ব্যবহার যদি কেয়া আপুর চোখে পড়ে? তাহলে কী ভাববে সে?’
‘আমি কিছুই করিনি অর্ষা। বরং তোমারই এখন আমার জন্য কোনো সময় নেই। সবার জন্য তোমার সময় হয়। এমনকি রেণু আপার জন্যও। শুধু আমার বেলাতেই তোমার ব্যস্ততা। ডাকলেও তোমার সাড়া পাওয়া যায় না। ভালোবাসা প্রকাশ করার পর থেকে আমি তো ফেলনা হয়ে গেছি। ভ্যালুলেস এখন আমি তোমার কাছে। ঠিক আছে, আমার তো সমস্যা নেই। থাকো তুমি তোমার মতো করে।’
আহনাফ চলে যায় সেখান থেকে। অর্ষা নিরবে কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে। গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে কয়েক ফোঁটা অশ্রুকণা। হাতের উল্টোপিঠে চোখের পানি মুছে চলে যায় রুমে। ঘর অন্ধকার করে শুয়ে থাকে। কাঁদতে কাঁদতে একটা সময় ঘুমিয়েও পড়ে। আমেনা বেগম ডাকতে এসে দেখেন অর্ষা ঘুমিয়ে আছে। সারাদিন খাটাখাটনি করে বলে তিনি আর ঘুম নষ্ট করলেন না। রাতে কেউই ডিনার করল না। বাচ্চারা কয়েকজন খেয়েছে শুধু। বাকিরা রাত জেগে গল্পগুজব করছে। আহিল সকালের সাথে ফোনে কথা বলছে। নিহিতও হোয়াটসএপে নিজের গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছে। নেহা ফোনে কথা বলছে তার বাংলাদেশী সেই বন্ধুর সাথে। দূর-দূরান্তে থেকেও সবাই তার প্রিয় মানুষ, প্রিয় বন্ধুর সাথে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছে। ব্যতিক্রম শুধু অতি নিকটে থাকা মানুষ দুটোর মধ্যে। একই বাড়িতে, একই রুমে, একই বিছানায় শুধু দুজনে দু’দিক ফিরে শুয়ে রয়েছে। একজন ঘুমালেও অন্যজনের নিদ্রাহীন রাত্রি কাটে।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই নিজেকে স্বাভাবিক করে ফেলে অর্ষা। গোসল করে রান্নাঘরে চলে যায় সেমাই, পায়েস, নুডুলস, খিচুড়ি রান্না করার জন্য। সেমাই রান্না করার পর আমেনা বেগম আসেন রান্নাঘরে। তিনি জোর করে অর্ষাকে বের করে দিয়ে বলেন,
‘আজ আর তোমার রান্নাঘরে কোনো কাজ নেই। যাও, যাও।’
রুমে গিয়ে আহনাফকে পাওয়া গেল না। গোসল করতে গেছে হয়তো। ফোন হাতে নিতেই বন্ধুদের মিসডকল আর ম্যাসেজ দেখতে পায়। ভুলেই গিয়েছিল সকালে একসাথে সবার ভিডিয়ো কলে থাকার কথা। অর্ষা গিয়ে আহিলকে ডেকে তোলে। এরপর নিজের রুমে এসে ভিডিয়ো কলে জয়েন হয়।
রেশমি ধমক দিয়ে বলে,’তোদের সমস্যা কী? তোদের বর কি অনলাইনে আসতে দেয় না? সবার আগে আমি এসে ওয়েট করতেছি।’
আশিক হাই তুলে বলল,’দুইদিন পর তোমারেও খুঁইজা পাওয়া যাইব না। সো, নাটক কম করো।’
‘তুই চুপ কর।’
‘আমি ক্যান চুপ করুম? আমার ফোন, আমার হোয়াটসএপ, আমার ওয়াইফাই, আমার মুখ আমি কথা বলি। তাতে তোর কী?’
অর্ষা ধমক দিয়ে বলে,’ইয়া মাবুদ! আজকের দিনটা অন্তত ঝগড়া বাদ দে তোরা।’
‘হ, ঝগড়া বাদ। বাই দ্য ওয়ে, বোকারানী তুই হাতে মেহেদী দিসনি কেন?’ জিজ্ঞেস করল লামিয়া।
সেই সময়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয় আহনাফ। অর্ষা একবার সেদিকে তাকিয়ে বলল,’এমনি।’
জুঁই বলল,’এমনি কী আবার আজব! মেহেদী কেন দিবি না তুই? কী হয়েছে?’
‘আরে কিছু হয়নি।’
হেডফোন ছাড়া কথা বলায় সবার কথা আহনাফও শুনতে পাচ্ছিল। বিকেলের দিকে সবাই একসাথে বের হবে ঘুরতে।
বাড়ির ছেলেরা ঈদের নামাজ পড়তে ঈদগাহে চলে গেছে। ফিরে আসলে সালামি নেওয়া হবে। অর্ষা বাদে সবাই সেজেগুজে রেডি হয়ে থাকে। নেহা সাজার সময় অর্ষা পাশেই বসে ছিল।
সাজতে সাজতে নেহা বলে,’ভাবি মনে আছে তো?’
‘হু, মনে আছে। আশিককে আমি সব বলে দিয়েছি। আজ বিকেলেই সবাই দেখা করব।’
‘থ্যাঙ্কিউ ভাবি।’
‘নাম কী তোমার বন্ধুর? আর কী করে সে?’
‘ওর নাম সিয়াম। তোমাদের সাথেই এবার অনার্সে ভর্তি হবে।’
‘যাক, ভালোই হলো তাহলে।’
নামাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরে সবাই একসাথে সেমাই, খিচুড়ি খায়। এরপর সবার থেকে সালামি উঠিয়ে ঝোলা ভর্তি করে। আহিল বেশ তাড়াহুড়া করেই বাড়ি থেকে বের হয়। দুপুরে চলেও আসবে জানায়। এতটা তাড়াহুড়া করে সে কোথায় যেতে পারে বাকি কেউ আন্দাজ করতে না পারলেও অর্ষা ঠিকই বুঝতে পারে।
.
.
সাদা লং গাউন পরে রেস্টুরেন্টে বসে অপেক্ষা করছে সকাল। একটু পরপর ফোনে সময়ও দেখছে। ছয় বারের মতো যখন ফোনে সময় দেখতে যাবে তখন আহিল রেস্টুরেন্টে এসে পৌঁছায়। গাল ফুলিয়ে তাকিয়ে থাকে সকাল।
আহিল অপরাধীর ভঙ্গিতে বলে,’স্যরি।’
ঝাঁঝিয়ে ওঠে সকাল,’কীসের স্যরি? বাড়িতে কত নয়ছয় বলে বের হয়েছি আমি, জানেন? আর আপনি আসলেন লেট করে।’
‘এজন্যই তো স্যরি।’
‘বিকেলে তো আজ দেখা হতোই। তাহলে এখন দেখা করার দরকার কী ছিল?’
‘দরকার ছিল বলেই তো দেখা করতে বলেছি। তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।’
‘বলুন।’
‘আগে খাবার অর্ডার দিই?’
‘আমি দিয়েছি।’
আহিল হেসে বলে,’সো ফাস্ট!’
‘এভাবে বলছেন কেন? শুধুমাত্র কোল্ড ড্রিঙ্কস অর্ডার করেছি। আর যা খাবেন আপনি অর্ডার করে নিয়েন।’
‘আচ্ছা এবার শোনো।’
‘হু।’
‘চলো আমরা একটা কমিটমেন্টে যাই।’
‘কীসের কমিটমেন্ট?’ অবাক হয়ে জানতে চায় সকাল।
‘আমাদের মধ্যে কোনো প্রেমের সম্পর্ক থাকবে না।’
‘তাহলে?’
‘আমরা থাকব কমিটমেন্টে। কমিটমেন্টটা হচ্ছে এইযে, আমরা কোনো রিলেশনে থাকব না। এবং অন্য কারো সাথেও কখনো রিলেশনে জড়াব না। তুমিও না। আমিও নই।’
‘সেটা কী রকম?’
‘এরকমই। আমরা ভালোবাসব কিন্তু সম্পর্কে জড়িয়ে নয়। এখন তো তুমি ছোটো। যখন তুমি এইচএসসি পরীক্ষা দেবে তখন আমাদের বিয়ে হবে।’
‘এত তাড়াতাড়ি? আমার পরিবার রাজি হলেও কি আপনার পরিবার রাজি হবে?’
‘আমার পরিবারকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার। যদি আমায় বিশ্বাস করতে না পারো তাহলে এখনই দুই পরিবারকে দিয়ে কথা বলিয়ে রাখতে পারি।’
‘আমি আপনাকে বিশ্বাস করি।’
‘তাহলে আপাতত পড়াশোনায় মনোযোগ দাও। চাইলে এখনই পরিবারকে বলে রেজিস্ট্রি করে রাখা যায়। কিন্তু বিষয়টা ঠিক হবে না। তোমারও পড়াশোনায় ক্ষতি হবে আর আমারও। তাছাড়া বাবা-মাকে এখনই বিয়ের কথা বললে তারাই বা কী ভাববে! তাই আমি চাই একটা কমিটমেন্টে থাকতে। তুমি কি রাজি?’
সকাল সময় না নিয়েই বলল,’অবশ্যই রাজি। ভালো কিছু পাওয়ার জন্য মানুষ যুগের পর যুগও পার করতে পারে; আর আমি আপনাকে পাওয়ার জন্য তিনটা বছর অপেক্ষা করতে পারব না?’
আহিল খুশি হলো। মুচকি হেসে সকালের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। সকাল ভেংচি কেটে বলে,
‘এবার আমার সালামি?’
আহিল হেসে বলে,’অবশ্যই দেবো হবু বিবিজান।’
__________
ভরদুপুর। আজ রোদের উত্তাপও অনেক। তাও ভালো! বৃষ্টি হচ্ছে না। তাহলে অনেকের ঈদই মাটি হয়ে যেত। কাজটাজ কিছু না থাকায় অর্ষা শুয়ে আছে। এক হাত তার বন্ধ চোখের ওপর, অন্য হাত পেটের ওপর রাখা।
নিঃশব্দে দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে আহনাফ। নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে অভিমানী প্রিয়তমার দিকে। হাতে তার মেহেদী। সে নিঃশব্দেই এগিয়ে যায়। খাটে বসার সময় হালকা শব্দ হওয়ায় অর্ষা চোখ মেলে তাকায়। আহনাফকে দেখে কুঁচকানো ভ্রুঁ আরো কুঁচকে যায়। অন্যপাশ ফিরে শুতেই হাত ধরে টানে আহনাফ।
অর্ষা বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে,’কী হয়েছে?’
‘ওঠো।’
‘কেন?’
‘দরকার আছে।’
অর্ষা উঠে বসে। গলায় আহনাফের দেওয়া চেইনটা এখন নেই। নাকে নাকফুলটা আছে শুধু।
‘চেইন খুলে রেখেছ কেন?’ জানতে চাইল আহনাফ।
অর্ষা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল,’এমনি।’
‘পছন্দ হয়নি?’
‘হবে না কেন?’
দীর্ঘশ্বাস নিল আহনাফ। এই প্রসঙ্গে আর কিছু না বলে অন্য প্রসঙ্গ টানল। বলল,
‘হাতটা দাও?’
অর্ষা তাকায় আবার। তবে হাত সামনে আনে না। আহনাফ একটা বালিশ নিয়ে কোলের ওপর রাখে। এরপর নিজেই অর্ষার হাতটা নিয়ে বালিশের ওপর রাখে। ইউটিউবে গিয়ে মেহেদী দেওয়ার টিউটোরিয়াল ভিডিয়ো বের করে বলে,
‘আফরিন যখন খুব ছোটো তখন একবার চাঁদ রাতে মায়ের ডান হাতের আঙুল কেটে যায়। কাটা হাত নিয়ে তো মেহেদী দেওয়া সম্ভব না। কে দিয়ে দেবে ও’কে তখন মেহেদী? আব্বু পার্লারে নিয়ে যেতে চাইল তখন। ও এত জেদ আর কান্না করছিল যে বাইরেও কোথাও যাবে না। রাত বাজে তখন এগারোটা। কাঁদতে কাঁদতেই আফরিন ঘুমিয়ে যায়। চাপা স্বভাবের হওয়ায় ও’কে কাছে টেনে কান্না থামানোর ইচ্ছে হলেও পারিনি তা করতে। ও ঘুমিয়ে যাওয়ার পর রাত বারোটার পর মেহেদী নিয়ে আফরিনের কাছে যাই। ইউটিউব দেখে দেখে ওর ছোট্ট হাতে মেহেদী দিয়ে দেই। খুব একটা ভালোও হয়নি। হাতের মেহেদী শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত ওর পাশেই বসে ছিলাম হাত ধরে। নয়তো চোখ-মুখ যদি মাখিয়ে ফেলে? সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজের মেহেদী রাঙা হাত দেখে ওর যেই খুশিটা আমি সেদিন দেখেছিলাম, আমার মনে হয়েছিল সেবারের ঈদে ঐটাই আমার সবচেয়ে বড়ো গিফ্ট। যখন জানতে পারল মেহেদী অন্য কেউ নয় বরং আমিই দিয়ে দিয়েছি তখন তো ওর খুশির সীমা-ই ছিল না। আনন্দে নেচে নেচে সারা বাড়ি ঘুরেছে। এরপর থেকে প্রায়ই বায়না ধরত মেহেদী দিয়ে দেওয়ার জন্য। আমি দিতাম না। আর আজ দ্বিতীয়বার আমি কাউকে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছি, যেই মেয়েটিকে আমি ভালোবাসি আমার মা আর বোনের পর। ভালো না হলেও কিছু বোলো না প্লিজ!’
কথাগুলো শুনে অনেকটা আবেগে আপ্লুত হলেও অর্ষা প্রকাশ করল না। আহনাফ ইউটিউব দেখে দেখে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে। আহামরী সুন্দর না হলেও খারাপও বলা যাবে না। অর্ষার ইচ্ছে করছে সময়টা এখানেই থেমে যাক। নয়তো অনন্ত, সীমাহীন হয়ে যাক; যার কোনো শেষ নেই। আচ্ছা আফরিনকে যেমন একবারই মেহেদী দিয়ে দিয়েছিল, অর্ষার বেলাতেও কি তাই? এমন সুমধুর, সুন্দর মুহূর্ত আর কখনো আসবে না?
নেহার উপস্থিতি ঘটে তখন। দুজনের অনেক কথা বলার থাকলেও বলা হয়ে ওঠে না। আহনাফের প্রশংসায় পঞ্চমুখ নেহা। মেহেদী দেওয়া শেষ হলে আহনাফ বলে,
‘একটা সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য।’
অর্ষা সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আহনাফ হোয়াটসএপে গিয়ে হানির বাবাকে ভিডিয়ো কল করে। আধো আধো ভাবে বাংলায় বলার চেষ্টা করে, ‘ঈদ মোবারক।’
হানি, এলিসা, লিলিয়া আর স্মিথের সাথেও কথা হয়েছে।
অর্ষা ভীষণ খুশি হয়। সবচেয়ে বেশি খুশি হয় অ্যানিওন আর ক্যাথিওনকে দেখে। বাচ্চা দুটো কীরকম করে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে ছিল। এই পর্যায়ে অর্ষার কান্না আটকে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ে। ইমোশোনাল হয়ে যায় সে। নেহা পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘কাঁদে না আমার লক্ষী ভাবি। খুব তাড়াতাড়ি আবার দেখা হবে ওদের সাথে।’
মেহেদী শুকানোর পর অর্ষা আর নেহা একসাথে তৈরি হয়ে নেয়। এরপর আহনাফ, অর্ষা, আহিল, নিহিত, সিফাত, কেয়া আর নেহা একসাথে বের হয়। সবাই মিলে একটা রিসোর্টে একত্রিত হয়। সেখানে উপস্থিত থাকে আশিক, দিদার, নিহাল, লামিয়া, সুবাস, জুঁই, মাহিত, রেশমি, সকাল আর সিয়াম।
অর্ষা যেভাবে যেভাবে শিখিয়ে দিয়েছিল আশিক সেভাবেই সবার সাথে সিয়ামের পরিচয় করিয়ে দেয়। দুইটা বড়ো টেবিল একত্রে করে সবাই গোল হয়ে বসে। নানান গল্পে, হাসি আড্ডায় মেতে ওঠে আসর। ঈদের আনন্দের জোয়ার বইছে সবার মনে মনে। সব জোড়া জোড়া দেখে আশিক দিদারকে বলে,
‘আমরা ভার্সিটিতে গিয়ে না হয় প্রেম করব কী বলিস?’
দিদার কোকের বোতলে চুমুক দিয়ে বলে,’তাছাড়া আর উপায় কী!’
‘তোর তো শা’লা গার্লফ্রেন্ডের দরকার নাই। খাওন পাইলেই তুই খুশি।’
‘এটাও সত্য কথা।’
আশিক বিরক্ত হয়ে কবিতার মতো করে বলে,’কেউ কেউ জোড়ায় জোড়ায় পায় সুখ, কেউ দেয় কোকের বোতলে মুখ। শালার আমারই একটা কপাল, এসব দেখলে হুহু করে আমার বুক।’
ওর বিখ্যাত আ’জা’ই’রা কবিতা শুনে সবাই একসঙ্গে হেসে ওঠে। আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া সবকিছু শেষ করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়। নিঃসন্দেহে আজকের ঈদটি সবার জন্যই ছিল অন্যরকম সুন্দর।
বাড়িতে ফিরে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে অর্ষা। আহনাফও ফ্রেশ হয়ে আসে। তখন উঠে বসে সে।
আহনাফ ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল,’উঠতে হবে না। ঘুমাও তুমি।’
অর্ষা কিছুক্ষণ ইতস্তত করে আহনাফকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে। আহনাফ মুচকি হেসে মাথায় হাত রাখে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে অর্ষা বলে,
‘স্যরি। ভুল হয়ে গেছে আমার। প্লিজ! আমাকে দূরে সরিয়ে রাখবেন না। অনেক বেশিই ভালোবাসি।’
অর্ষার মুখ দু’হাতের আজলায় তুলে নেয় আহনাফ। আঙুল দিয়ে গালে আলতো করে বুলিয়ে বলে,
‘সম্পর্কে রাগ-অভিমান, ঝগড়া হবেই। ভুল বুঝাবুঝি হবেই। তাই বলে ছেড়ে তো যাওয়া যাবে না। দূরে সরিয়ে রাখার জন্য তো ভালো বাসিনি। আচ্ছা কবে ভালোবেসেছি বলতে পারো? উমম… ভালো হয়তো সেদিনই বেসে ফেলেছি, যেদিন প্রথম তুমি আমার দৃষ্টিতে পড়েছিলে। হয়তো পরিস্থিতি ছিল অন্যরকম আর আমার বোঝার ভুল ছিল তাই দেরি হয়েছে উপলব্ধি করতে।’
‘জানিনা কিছু।’ বলে ফের জড়িয়ে ধরে অর্ষা। আহনাফ হাসে। নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে লাইট নিভিয়ে দেয়। ডিম লাইট জ্বলছে শুধু। অর্ষার মুখোমুখি বসে অর্ষার হাতটা নিজের হাতের ওপর নেয়। দু’হাত টেনে কাছে নিয়ে আসে। কপালে কপাল ঠেকিয়ে কিছুক্ষণ দুজনই চুপ করে থাকে। দুজনের ভারী নিঃশ্বাস আর ফ্যানের শব্দ ব্যতীত অন্য কোনো শব্দ নেই।
অর্ষার দু’গালে হাত রাখে আহনাফ। দৃষ্টি মিলে যায় দুজনার। নিঃশ্বাস ভারী হয়। ভারী কণ্ঠে আহনাফ দ্বিতীয় বারের মতো নিজের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করে কাব্যের মাধ্যমে,
‘কখনো সুখের দেখা পাব
সেদিনও ভাবিনি,
যেদিন তুমি এসেছিলে।
মেঘমন্দ্র কণ্ঠে;
ভালোবাসি কথাটি শুনব
সেদিনও বুঝিনি,
যেদিন তুমি এসেছিলে।
শক্ত করে জড়িয়ে ধরার জন্য
নিজের একটা মানুষ হবে
কখনো সেটাও আশা করিনি
যেদিন তুমি এসেছিলে।
নিশুতি এই রাতে
নিজের মলাটবদ্ধ অনুভূতিগুলো,
কোনো রমনীর সামনে প্রকাশ করব;
সেদিনও ভাবিনি, বিশ্বাস করো
একটাবারের জন্যও বুঝিনি
যেদিন তুমি এসেছিলে।
আমার আমিটা তোমার মাঝে
বিলীন হয়ে যাব, সেদিনও কি জেনেছিলাম?
যেদিন তুমি এসেছিলে।’
চোখের পাতা বন্ধ হয়ে যায় অর্ষার। আবেগে, আনন্দে বন্ধ চোখের পাতা ভেদ করে অশ্রু নির্গত হয়ে। সেই অশ্রুকণায় চুমু খায় আহনাফ। বুকের মাঝে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অর্ষাকে। এমন করেই ভালোবাসায় ভালো থাকুক দুটি ভালোবাসার মানুষ।
(সমাপ্ত)