যেদিন তুমি এসেছিলে – পর্ব 7

0
589

#যেদিন_তুমি_এসেছিলে
#পর্ব_৭
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
________________
বিকেলে রেস্টুরেন্টে গিয়ে ঘটল এক চমকপ্রদ ঘটনা। যেটার জন্য গ্যাঞ্জাম পার্টি মোটেও প্রস্তুত ছিল না। গতকাল রাত থেকে রেস্টুরেন্টে আসা অব্দি, এবং ছেলেকে দেখার আগ অব্দি যেই লামিয়া ফ্যাসফ্যাস করে কাঁদছিল; নাকের পানি মুছতে মুছতে দশ প্যাকেট পকেট টিস্যু শেষ করেছিল সে-ই লামিয়া হুট করে পল্টি খেল। শুধু পল্টি নয়, চরম লেভেলের পল্টি যাকে বলে! ছেলেকে দেখে তার মাথা ঘুরে গেছে।
অস্থিরতায় নাকি উত্তেজনায় নাকি ঢং করেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে তা অবশ্য এখনো বোঝা যায়নি। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়েছে আহিলের ওপর। ভাগ্যক্রমে আহিলের জায়গায় দিদার কিংবা আশিক ছিল না। ওরা দুজন হলে লামিয়ার এই পল্টি খাওয়ার জন্য ধরা তো দূরে থাক রেস্টুরেন্টের ছাদ থেকে ছুঁড়ে নিচে ফেলত।
অর্ষার কাঁধে মাথা রেখে প্রায় অচেতন অবস্থায় বসে রয়েছে লামিয়া। লামিয়ার একপাশে বসেছে রেশমি। আর পেছনে দাঁড়িয়ে রয়েছে জুঁই। ওরা দুজনেই হাত দ্বারা লামিয়াকে হাওয়া দিচ্ছে। এদিকে ওদের হঠাৎ এমন কাণ্ড দেখে বিচলিত হয়ে পড়েছে পাত্র।
সে জুঁই এবং রেশমির উদ্দশ্যে গাঁইগুঁই করে বলল,’ফ্যান আছে তো! ফ্যান ছেড়ে দিতে বলি?’
ওরা কেউ পাত্রের কথায় বিশেষ পাত্তা দিলো না। আশিক বসেছিল আহিলের পাশের চেয়ারে। ও কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,’ড্রামাবাজগুলা কী শুরু করছে?’
দিদার পাশ থেকে একইভাবে ফিসফিস করে বলল,’এই বালের মাইয়া এমন চিৎ-কাইৎ হইয়া গেল ক্যান হঠাৎ?’
আশিককে হতাশ দেখাল। সে ঠোঁট উল্টে বলল,’জানিনা। লামিয়া রেস্টুরেন্টে ছেলেকে ধুইতে আসছে নাকি শুইতে আসছে আমি তো সেটাই বুঝতে পারছি না।’
‘ও কীসের জন্য আসছে জানিনা ভাই। কিন্তু আমি তো আসছি খাইতে।’ বিড়বিড় করে বলল দিদার।
পাত্রের অস্বস্তিবোধ বাড়ছে বৈ কমছে না। সে একবার একবার করে সকলের দিকে তাকাচ্ছে। চোখে-মুখে বিচলিত ভাব আর কপালে চিন্তার ভাঁজ। সে ইতস্ততবোধ করে লামিয়ার উদ্দশ্যে বলল,’আপনি কি বেশি অসুস্থ?’
লামিয়া নিরুত্তর। এবার পাত্র বলল,’আমাদের মনে হয় সময় নষ্ট না করে উনাকে ডাক্তারের কাছে নেওয়া উচিত।’
সঙ্গে সঙ্গে অদ্ভুতভাবে সোজা হয়ে বসল লামিয়া। দু’পাটি দাঁত বের করে হেসে বলল,’না, না। এখন আমি ঠিক আছি।’
ওর হুট করে জাগ্রত হওয়ায় বাকিরা ভয় পেয়ে গেল। এমনকি পাত্র নিজেও। সে ইতস্ততভাবেই বলল,’শিওর?’
‘হানড্রেড পার্সেন্ট শিওর। নো ডাউট!’
‘ঠিকাছে।’ মাথা নাড়িয়ে বলল পাত্র।
কে কোথা থেকে কথা শুরু করবে কিছু বুঝতে পারছে না। তাই আহিল জিজ্ঞেস করল,’আপনার পরিচয়টা ভাইয়া?’
পাত্র হেসে বলল,’আমার নাম নিহাল। বর্তমানে বাবার বিজনেস দেখছি।’
‘ওহ আচ্ছা।’ বলল আহিল।
এরপর লামিয়া খুশিতে গদগদ হয়ে সকলের সাথে নিহালের পরিচয় করিয়ে দিলো। নিহাল সবার পছন্দমতো খাবার অর্ডার দিতে বলল। সেই সময়ে লামিয়া ফট করে বলল,’না, না। পছন্দের খাবার আবার কী? আমরা সবাই খেয়ে এসেছি। প্রচণ্ড গরম এখন! আপনি বরং সবার জন্য একটা করে কোল্ড ড্রিঙ্কস অর্ডার করুন।’
লামিয়ার এ কথা শুনে সকলে হা করে তাকায়। এই মেয়ে বলে কী? বিশেষ করে দিদার চোখমুখ কুঁচকে তাকায়। ওর চোখের দৃষ্টি বলছে,’একবার শুধু বের হই রেস্টুরেন্ট থেকে!’
নিহাল অবশ্য লামিয়ার কথা শুনল না। সে ওদেরকে পছন্দ অনুযায়ী অর্ডার করতে বলো। কিন্তু যেখানে লামিয়া বলেই দিয়েছে, সবাই খেয়ে এসেছে তখন ওরা আর বাড়তি কী-ই বা অর্ডার করবে? বেহায়াপনা তো আর করা যায় না! তাই সকলে ভদ্রতা বজায় রাখতে লামিয়ার কথাই রাখতে বলল।
প্রথম দেখায় হবু বউয়ের বন্ধুদের শুধু কোল্ড ড্রিঙ্কস খাওয়াবে বিষয়টা নিহালের কাছে দৃষ্টিকটু লাগল। তাই সে কোল্ড ড্রিঙ্কসের সাথে বার্গার, চাউমিন অর্ডার করল। তার আগে ওয়েটারকে সবার জন্য কফি দিয়ে যেতে বলল। ওরা খেয়ে এসেছে বলা সত্ত্বেও নিহাল যে নিজে থেকে এতটুকু খাওয়াচ্ছে, ওর এই আন্তরিকতায় উপস্থিত সকলেই মুগ্ধ হয়ে গেছে। খেতে খেতে সকলে বেশ আড্ডাও দেয়।
খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বিদায় নেয় সবাই। অর্ষা বাদে বাকি সবাই তেড়েমেড়ে যায় লামিয়ার দিকে। লামিয়া ভয়ে অর্ষার পেছনে লুকিয়ে বলে,’আমায় বাঁচা বোকারানী!’
দিদার দাঁত খিঁচিয়ে বলল,’কেউ তোকে বাঁচাতে পারবে না। তুই এভাবে পল্টি খেল কেন বেয়া’দব?’
আশিক আহতকণ্ঠে বলল,’সেটাই তো। পল্টি যদি খাবিই তাহলে কুমিরের কান্না কাঁদলি কেন? অযথা টিস্যু কিনে আমার টাকা নষ্ট করলাম।’
লামিয়া অর্ষার গলা জড়িয়ে ধরে কল্পনায় অভিনিবেশ হয়ে বলে,’কী করব ইয়ার! সে যে এত হ্যান্ডসাম আর সুদর্শন হবে তা কে জানত?’
অর্ষা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,’তার মানে তুই বিয়েতে রাজি?’
‘আলবৎ রাজি। তোরা সবাই তৈরি হয়ে যা বিয়ে খাওয়ার জন্য।’
দিদার কটমট করে বলল,’গিরগিটিও তোকে দেখলে লজ্জা পাবে বেঈমানের বেঈমান!’
লামিয়া হাসে। বাকিরাও খুশি। ছেলে যখন লামিয়ার পছন্দ হয়েছে তখন বন্ধুমহলেরও আপত্তি করার কোনো কারণ নেই। লামিয়া জুঁই এবং রেশমিকে বলল,’তোদের একজন প্রতিদ্বন্দ্বী কমে গেল যা!’
রেশমি বলল,’শান্তি, শান্তি!’
আশিক মুখ বাঁকিয়ে বলল,’এত শান্তি আশা কইর না চুমকি। একা পথে তুমিও বেশিদিন চলতে পারবা না। দেখবা খুব শীঘ্রই তোমারও বিয়ের সানাই বেজে যাবে।’
রেশমি ওর কথায় খ্যাঁক করে ওঠে।
______
অর্ষা আর আহিলের বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বাসায় ফিরে দেখে রেণু ছাড়া কেউ নেই।
আহিল সোফায় শরীর এলিয়ে জিজ্ঞেস করে,’বাসার সবাই কোথায়?’
রেণু ঠান্ডা পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল,’আপনের চাচার বাসায়। আপনেরে তো কত্তডি ফোন দিলো। ধরেন নাই ক্যান?’
আহিল প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে বাবা-মা দুজনে মিলে ১৬বার ফোন করেছে কিন্তু ফোন সাইলেন্ট থাকায় আহিল টের পায়নি। ও কলব্যাক করে। কথা বলে ফোন রেখে রেণুকে বলে,’চাচার বাসায় যেতে হবে। অর্ষাকে একটু ডেকে দাও তো।’
রেণু গিয়ে অর্ষাকে ডেকে আনে। অর্ষার অবস্থা ঘুমে ঢুলুঢুলু। সে হেলতে-দুলতে এসে বলে,’কী হয়েছে?’
‘তুই ঘুমুচ্ছিলি?’
‘না। শুয়ে ছিলাম। কিছু বলবি?’
‘আব্বু, আম্মু চাচার বাসায়। রাতে ওখানেই ডিনার করবে। তোকে নিয়ে যেতে বলল।’
‘না, না বাবা! আমি এখন আর কোথাও যেতে পারব না। এমনিই শরীর ভালো না। তারমধ্যে মাত্র বাহির থেকে আসলাম।’
‘তাহলে কি তুই একা থাকবি?’
‘একা কোথায়? রেণু আপা তো আছে।’
‘তো কী? চল যাই।’
‘না রে। জোর করিস না প্লিজ!’
‘শিওর থাকতে পারবি?’
‘হ্যাঁ রে বাবা। তুই চিন্তা করিস না।’
‘আচ্ছা সাবধানে থাকিস। কিছু লাগলে রেণু আপাকে বলবি।’ অর্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল আহিল।
অর্ষা হেসে ফেলে। কেয়া, তিয়াস আর আহিল ছাড়া কেউ তাকে এভাবে আদর করে না। এই মানুষগুলোর জন্যই বোধ হয় সে বেঁচে আছে। এরা ছাড়া তার তো আর কেউ নেই! সে কখনো নিজের একটা মানুষ হবে এটাও ভাবে না। নিজের মানুষ নিয়ে তার কোনো স্বপ্ন নেই।
আহিল যাওয়ার আগে রেণুকে বলে গেল,’অর্ষার কাছে কাছে থেকো আপা।’
‘আইচ্ছা ভাইজান, আপনে কুনো চিন্তা কইরেন না।’
আহিল চলে যাওয়ার পর অর্ষা নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে। অসময়ে ঘুম পাচ্ছে তার। দু’চোখের পাতা এক করতেই কয়েক মিনিটের মধ্যে সে ঘুমিয়ে যায়।
অর্ষা আর রেণু ছাড়া বাড়িতে কেউ নেই। দুজনের উপস্থিতিও আলাদা স্থানে। রেণু অবশ্য অর্ষার সাথে অর্ষার রুমেই থাকতে চেয়েছিল। তবে অর্ষা রাজি হয়নি। সে ঘুমাবে আর অন্যজন জেগে পাহারা দেবে ব্যাপারটা তার পছন্দ নয়। এত সুখ তার জন্য নয়। এ বাড়িতে আসার পর যেই আরাম-আয়েশ করছে সেটাও তো তার কল্পনাতীত ছিল। অর্ষা ঘুমাচ্ছে, রেণুর কোনো কাজ নেই তাই সে ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছে।
রাত প্রায় এগারোটা। কলিংবেলের শব্দ শুনে দৌঁড়ে যায় রেণু। তবে দরজা খুলে তার চক্ষু চড়কগাছ। সে ভেবেছিল আহিল ওরা ফিরে এসেছে। কিন্তু দরজার ওপাশে মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে আহনাফ। ক্লান্ত শরীর, রক্তে ভেজা সাদা শার্ট! সম্পূর্ণ শার্ট নয়; ঘাড়ের দিক দিয়ে ছোপ ছোপ রক্তের শুকিয়ে যাওয়া দাগ।
রেণু গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে ডাকল,’অর্ষা আপা গো!’
আহনাফ হাত দিয়ে দু’কান চেপে ধরে। রেণুর চিৎকারে ঘুমন্ত অর্ষা ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে। সে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে। বোঝার চেষ্টা করল সে স্বপ্নে দেখছে এসব নাকি বাস্তবেই তার সাথে হচ্ছে। যখন দ্বিতীয়বার রেণুর গলা শুনল তখন সে বুঝতে পারল, আসলে এটা তার স্বপ্ন বরং বাস্তব।
ক্লান্ত ও অসুস্থ শরীরটাকে সে জোরপূর্বক টেনে নিয়ে গেল ড্রয়িংরুমে। সেখানে কেউ নেই। রেণুর অকারণে এত জোরে চিৎকার করায় বিরক্ত হয়ে আহনাফ ধমকে বলেছিল, না চেঁচিয়ে যেন ওর ঘরে কফি নিয়ে আসে। তাই অর্ষা ড্রয়িংরুমে গিয়ে কাউকেই পেল না। হঠাৎ করে এই রেণু আপাটা কোথায় উধাও হয়ে গেল। সে কোথায়-ই খুঁজবে এখন?
এটা তার মতিভ্রম বা ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্ন দেখেছে ভেবে ফিরে আসছিল। তখন হন্তদন্ত হয়ে রান্নাঘর থেকে বের হয় রেণু। অর্ষাকে দেখে পেছন থেকে ডেকে বলে,’আপা, আপা খাড়ান! কই যান?’
অর্ষা ভড়কে যায়। দ্বিধান্বিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,’একটু আগে কি তুমি আমাকে ডেকেছিলে?’
‘হ আপা। জানেন না তো কী হইছে!’ অস্থির হয়ে বলল রেণু।
অর্ষা কপালে ভাঁজ টেনে বলে,’কী হয়েছে?’
‘বড়ো ভাইজান এক্সিডেন্ট করছে।’
‘কীহ্!’ আচমকা শব্দটা বের হয়ে যায় অর্ষার কণ্ঠনালী থেকে। একটু থেমে সেও রেণুর মতো অস্থিরচিত্তে জিজ্ঞেস করে,’কীভাবে? কোথায় এখন সে?’
‘জানিনা গো আফা! এহন হের ঘরেই আছে। আমারে কইল কফি নিয়া যাইতে।’
অর্ষা আর সেখানে না দাঁড়িয়ে আহনাফের রুমে দৌঁড়ে গেল। পিছু পিছু কফি নিয়ে রেণুও এলো। আহনাফ তখন ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছিল। একটা ট্রাউজার শুধু তার পরনে। এই অবস্থায় অর্ষার সামনে তার ভীষণ লজ্জা লাগছিল। তাই হাতের তোয়ালেটা পিঠের ওপর দিয়ে শরীরটা ঢেকে নিল।
ভ্রুঁ কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,’কী?’
অর্ষা হা করে তাকিয়ে আছে। খালি গায়ে থাকার দরুণ আহনাফের হাতের বাহুতে আর পেটের দিকে ক্ষত সে দেখে ফেলেছে। লাল হয়ে ফুলে আছে ক্ষতস্থানগুলো। মাথায়ও সম্ভবত ভালোই আঘাত পেয়েছে; নয়তো ব্যান্ডেজ নিশ্চয়ই করা লাগত না? এই অবস্থায়ও একটা মানুষ এত কুল? এত শান্ত?
অর্ষা বোকার মতো বলে ফেলল,’আপনার ব্যথা করছে না?’
আহনাফ হাতের ইশারায় রেণুকে কফির মগটা দিতে বলল। রেণু এগিয়ে এসে কফির মগ দিয়ে আবার অর্ষার পেছনে গিয়ে দাঁড়াল।
আহনাফ কফিতে চুমুক দিয়ে বলল,’তোমার কী মনে হয়?’
‘আমার কী মনে হবে? ব্যথা তো আর আমি পাইনি। আপনি এত কুল আছেন কীভাবে এক্সিডেন্ট করেও! আমি হলে তো মনে এক মাস আগে হাসপাতালের বেড থেকে উঠতেই পারতাম না।’
আহনাফ হেসে ফেলে। ওর হাসিতে বিব্রত হয় অর্ষা। সে কি হাসির মতো কিছু বলেছে? পেছন থেকে রেণু ফিসফিস করে অর্ষাকে বলে,’এক্সিডেন্ট কইরা ভাইজানের মনে হয় মাথা নষ্ট হইয়্যা গেছে আপা। দেহেন হুদাই হাসতাছে! ভাইজানরে কি পাবনা হাসপাতালে ভর্তি করব? হুনছি ঐহানে সব মেন্ডাল (মেন্টাল) মানুষ থাকে।’
অর্ষা পা দিয়ে রেণুর পায়ে আস্তে খোঁচা দেয়। রেণু থেমে যায়। এদিকে মগের সবটুকু কফি শেষ করে বিছানায় বসে আহনাফ। শরীরের ব্যথাগুলো আবার জাগ্রত হয়েছে। সে দাঁতে দাঁত চেপে ব্যথা নিবারণ করার আপ্রাণ চেষ্টা করে। ব্যথাকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এনে অর্ষার দিকে তাকিয়ে বলে,’আমার এই ব্যথাগুলো তোমার ভাবির মারের কাছে কিছুই নয় অর্ষা। তুমি তো প্রতিনিয়ত সেগুলো সহ্য করছ।’
অর্ষা এবার চুপসে যায়। বাড়ির প্রসঙ্গ কোথাও উঠলে সে কিছু বলতে পারে না। সত্যি বলতে তার বলার মতো কিছু থাকে না আর তখন। আহনাফ ওর চুপসে যাওয়া মুখটা দেখে প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,’অনেক ব্যথা করছে। কিন্তু আমি প্রকাশ করতে পারছি না।’
‘আপনার না সুইজারল্যান্ড যাওয়ার কথা আজ?’ অর্ষাও প্রসঙ্গ পাল্টে ফেলল।
‘হু। যাওয়ার পথেই তো এক্সিডেন্ট হলো।’
‘কীভাবে?’
‘অন্য একটা প্রাইভেট কারের সাথে ধাক্কা লেগেছিল। আমাদের গাড়ি কাৎ হয়ে গেছিল তাও আবার আমি যে সাইডে বসা ছিলাম। তাই এখন এই অবস্থা। ড্রাইভার অবশ্য এখনো হাসপাতালে ভর্তি।’
‘আঙ্কেল-আন্টিকে বলেননি?’
‘না। অযথা টেনশন! হাসপাতালে গিয়ে কান্নাকাটি জুড়ে দিত। ওরা কোথায় এখন?’
‘আপনার চাচার বাসায়। আপনার তাহলে সুইজারল্যান্ড যাওয়া ক্যান্সেল?’
‘আপাতত!’
অর্ষা নিশ্চুপ। তার আর কিছু বলার নেই। আহনাফ নিজেই জিজ্ঞেস করল,’তুমি যাওনি কেন চাচার বাসায়?’
‘এমনি। ভালো লাগছিল না।’
রেণু আহনাফকে জিজ্ঞেস করল,’কিছু খাইবেন ভাইজান?’
‘হ্যাঁ, ক্ষুধা লেগেছে খুব। বের হব না। ঘরে নিয়ে আয়।’
রেণু চলে গেল খাবার আনতে। অর্ষা মেঝের দিকে দৃষ্টি রেখে পায়ের নখ দিয়ে টাইলসের ওপর আঁকিবুঁকি করছিল।
‘কিছু বলবে?’ জিজ্ঞেস করে আহনাফ।
অর্ষা মাথা তুলে তাকায়। আহনাফের দিকে তাকিয়ে আঁৎকে ওঠে। আতঙ্কিতস্বরে বলে,’আপনার পিঠ থেকে রক্ত বের হচ্ছে!’
আহনাফ ঘাড় ঘুরিয়ে দেখার চেষ্টা করে বলল,’কোথায়?’
অর্ষা এগিয়ে যায়। তোয়ালে ধরতে গেলেই আহনাফ সাবধানীস্বরে বলে,’খবরদার! তোয়ালে সরাবে না। আমার লজ্জা লাগে।’
অর্ষা দোটানাময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সে হাসবে নাকি আহনাফের জন্য দুঃখ প্রকাশ করবে বুঝতে পারছে না।
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here