গোধূলি লগ্নে সেই তুমি – অন্তিমপর্ব [শেষাংশ]

0
796

#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#অন্তিম_পর্ব [শেষাংশ]
সদ্য জন্মানো বাচ্চা’টাকে কোলে নিয়ে আবেগে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো জেহেরের। চোখের জল দ্বারাই বুঝি বাবা হওয়ার সুখ ঝড়ে পড়ছে। চুমুতে ভরিয়ে দিলো বাচ্চা’ মেয়ে’টার সারা মুখ। আরজা’র হাতে স্যালাইন লাগানো। চোখ দুটো তৃষ্ণার্ত কাকের মতো ওদের দিকে তাঁকিয়ে তৃষ্ণা মিটিয়ে নিচ্ছে। ওর চোখ থেকে ও পানি গড়িয়ে পড়ছে। আর না ভেবেই শুধু মাত্র বেস্ট ফ্রেন্ডের কষ্ট’টা কমানোর জন্য ওত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলো। যদি সিদ্ধান্ত’টা অটল থাকতো তাহলে আজ এই সুখ থেকে বঞ্চিত হয়ে যেতাম? ভাবতেই আরজা’র বুক’টা কেঁপে উঠলো। আল্লাহ হয়তো কোনোদিন ও’কে ক্ষমা করতো না এই সিদ্ধান্তের জন্য। কারন আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য। আর তার উপর অন্য কারোর সিদ্ধান্ত চলে না। যদি সেদিনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমার বাচ্চা’টাকে ফাইজাকে দিয়ে দিতাম আর বাচ্চা’টা বড় হয়ে কোনোদিন এই সত্যি’টা জানতো তাহলে নিশ্চয়ই পৃথিবীর সব থেকে খারাপ মায়ের কাতারে পড়তাম আমি। জেহেরের খুশির কান্না দেখে আরজা কথাগুলো ভাবতে ভাবতে নিজেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। আরজা’কে কান্না করতে দেখে জেহের বেডে বসে আরজা’র হাত’টা শক্ত করে ধরে বলে উঠলো……
—কাদঁছো কেনো বোকা মেয়ে? এইযে দেখো এইটা আমাদের সন্তান। আমার মেয়ে। আমাদের রাজকন্যা। যার জন্য আমরা এই দশ’টা মাস অপেক্ষা করে ছিলাম। আমাদের অবসান ঘটিয়ে সে এসে গেছে আমাদের মধ্যে। আর তুমি কাদঁছো। আমার মেয়ে এখন কি বলবে জানো? বলবে আমার বাবার বাচ্চা বউ’টা কান্না করছে বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে…..
জেহেরের কথা শুনে আরজা না চাইতেও হেসে দিলো। জেহের বাচ্চা’টাকে আরজা এক হাতের উপর রাখলো। আরজা বাচ্চা’টার হাত ধরতেই বাচ্চা’টা তার ছোট ছোট আঙ্গুল দিয়ে আরজা’র আঙ্গুল শক্ত করে ধরলো। এইবার আরজা খুশিতে জোরেই কান্না করে উঠলো। কোলে নেওয়ার তীব্র আকাঙ্খা হচ্ছে কিন্তু পারছেনা। জেহের ও বাচ্চা’টার আরেক হাত ধরে কাদঁছে। আজ ওদের খুশির দিন। এই কান্না’টা খুশির। বাবা-মা হওয়ার সুখের কান্না। যা পৃথিবীর সমস্ত সুখ’কেও হার মানাবে। দরজার দাড়িয়ে এতক্ষন ওদের দেখছি ফাইজা আর ফারদিন। ওদের দুজনের চোখ পানি। আইয়াজ ফারদিনের বুকেই ঘুমিয়ে পড়েছে। আইয়াজ না থাকলে হয়তো ফাইজা এখন এই সুখের জন্য কান্না করতো। কিন্তু আজ ফাইজা মা হওয়ার সুখের জন্য কান্না করছে না। কেনো কাঁদবে? ও তো আজ মা। আইয়াজের মা। এক পুত্র সন্তানের জননী। আল্লাহ তো ওদের এই সুখ থেকে বঞ্চিত করে’নি। আল্লাহ ওদের কোল আলো করে’ই আইয়াজ’কে দিয়েছে। যার চেহারার দিকে তাঁকালে ফাইজা পৃথিবীর সমস্ত সুখ খুঁজে পায়। যার চেহারার দিকে তাঁকালে ফাইজা ওর সব দুঃখ, বিষাদ ভুলে যায়। আজ ফাইজা কাঁদছে কারন আরজা নিজের মাতৃত্বের সুখ ভুলে শুধু মাত্র বেস্ট ফ্রেন্ডের জন্য সব থেকে বড় আর জঘন্য সিদ্ধান্ত’টা নিয়েছিলো। কত’টা ভালোবাসলে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় ফাইজা’র তা জানা নেই। ফারদিন নিজের চোখের পানিটুকু মুছে ফাইজা’র কাঁধে হাত রাখতে’ই ফাইজা মুখে হাসি টেনে ফারদিনের দিকে তাঁকালো। ফারদিনের ইশারায় ও’কে চোখের পানি মুছতে বললো। ফাইজা চোখের পানি মুছে নিয়ে মুচকি হাসলো। ফারদিন ফাইজা’কে এক হাতে জড়িয়ে ধরে ওর মাথায় ঠোঁট ছোঁয়ালো তারপর ঘুমন্ত আইয়াজের মুখপানে চু’মু খেলো। ফাইজা এইবার নিজেকে সামলে খুশিতে চেঁচিয়ে বলে উঠলো……
–কই দেখি? আমার পিচ্চি রাজকুমারী’কে একবার দেখি। কেমন হয়েছে আমার রাজকন্যা’টা…..
বলতে বলতে এগিয়ে গেলো। ফারদিন ও ওর সাথে পা বাড়ালো। ফাইজা’কে দেখেই জেহের হেসে বাচ্চা’টাকে নিয়ে কোলে তুলে নিয়ে দাড়িয়ে বলতে লাগলো…..
–আমার মেয়ে একদম আমার মতো হয়েছে। গাল দুটো দেখ কি টকটকে লাল।
বলে ফাইজা’র দিকে এগিয়ে দিলো বাচ্চা’টাকে। ফাইজা খুব যত্নসহকারে বাচ্চা’টাকে কোলে তুলে নিতে’ই বাচ্চা’টা ঠোঁট ফুঁলিয়ে কেঁদে উঠলো। তা দেখে ফাইজাও বাচ্চা’টাকে নকল করে ঠোঁট ফুঁলিয়ে বলতে লাগলো…..
–ওরে আমার আম্মু’টা দেখতে একদম মাশ-আল্লাহ। নজর না লাগে কারোর?
বলেই বাচ্চা’টার মুখে চু’মু খেয়ে আবারো বললো…..
–শোন আমার আম্মুজান একদম আমার বেস্টুর মতো কিউটিপাই হয়েছে। তোর মতো খা’রুশ মার্কা হয়নাই বুঝেছিস। তাই একদম বলবিনা আমার আম্মুজান তোর মতো হয়েছে…..
ফাইজা’র কথা শুনে জেহের মিছে মিছে রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো….
–মোটেও না। আমার মেয়ে একদম এই পে’ত্নী মার্কা বাচ্চা’টার মতো হয়েনাই।
এইবার আর কি লেগে গেলো দুই ভাই বোনের ঝগড়া। ফাইজা বলে আরজা’র মতো আর জেহের বলে ওর মতো। দুজনে মিলে চেঁচিয়ে ঝগড়া করছে। কোমড় বেঁধে ঝগড়া করছে। আরজা ওদের দুজনের ঝগড়া দেখে হাসচ্ছে। আর ফারদিন হা করে তাঁকিয়ে আছে৷ এ কি রে বাবা? এরা কি ছোট এখনো বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করছে? জেহেরের সাথে ঝগড়ায় পেরে উঠছে না ফাইজা। তাই জেহের’কে থামানোর জন্য অভিনয় করে ফাইজা এইবার বাচ্চা’দের ঠোঁট ফুঁলিয়ে কান্না করে দিলো। তা দেখে জেহের থেমে গেলো। কিন্তু ফারদিন ঠিকি বুঝতে পারলো এসব ফাইজার ড্রামা। ফাইজা বাচ্চাদের মতোই ন্যাকা স্বরে বললো…..
–তুই আমাকে একটুও ভালোবাসিস না। আমাকে এইভাবে বলতে পারছিস। আমাকে এমন ভাবে অপমান করতে পারছিস….
বলে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদঁতে লাগলো। জেহের পুরো বোকা বনে গেলো। ও তো মজা করছিলো আর ফাইজা কেঁদে দিলো। তাই ফাইজা’কে শান্ত করার জন্য কান ধরে অপরাধী কন্ঠে বললো……
–আচ্ছা আচ্ছা সরি বাবা। ও ওর মায়ের মতো হয়েছে। আমার ভুল হয়েছে তোর সাথে এমন করা। এইবার কান্না থামা।
জেহেরের মুখের অবস্থা দেখে ওরা তিনজনে’ই উচ্চস্বরে হেসে দিলো। ওদের হাসতে দেখে জেহের বুঝে গেলো ফাইজা এইসব ঢং করছিলো। তাই ফাইজা’র দিকে তাঁকিয়ে রাগী স্বরে বলে উঠলো….
–এত ঢং কিভাবে করতে পারিস। স্টুপিড….
ফাইজা এইবার ভেংচি কেটে ঢং করেই বললো…..
–মেয়েরা তো জন্মগত ঢংঙ্গী। মেয়েরা ঢং করবে না তো তুই ঢং করবি। স্টুপিড…..
ফাইজা’র কথা শুনে জেহের ফোস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো। এই মেয়ে দমবার পাত্রী নয়। তাই চুপ থাকায় শ্রেয়। ফাইজা এইবার একটু ভাবুক স্বরে বললো…..
–ওর নাম কি দেওয়া যায়??
বলে ভাবতে লাগলো। কিছুক্ষন ভেবে আচমকা চেঁচিয়ে বলে উঠলো….
–পেয়েছি….
ফাইজা’র চেঁচানো’তে দুইটা বাচ্চা’ই ভয় পেয়ে কেঁদে উঠলো। তা দেখে ফারদিন এইবার রাগী স্বরে বললো….
–বুদ্ধি জ্ঞান কি সব গরু চড়াতে গেছে। এক বাচ্চা’র মা হয়ে গেলো এখনো স্বভাব চেঞ্জ হলো না। ই’ডিয়ট
বলে আইয়াজ’কে শান্ত করতে লাগলো। জেহের আর আরজা মিটমিটিয়ে হাসচ্ছে। ফাইজা অসহায় ফেস করে কোলের বাচ্চা’টাকে শান্ত করতে লাগলো। ওরা দুজন এক পর্যায় শান্ত হয়ে গেলে ফাইজা এইবার একদম নিঁচু স্বরে বলতে লাগলো….
–ওর নাম হচ্ছে মিফতাহুল আরিশা। এটা মায়ের নামের সাথে মিলিয়ে। আর বাবার সাথে মিলিয়ে ডাক নাম হলো জেহনাফ…
ফাইজার নাম দুটো ওদের সবার পছন্দ হলো। আরেকবার বাচ্চা’টার মুখদ্বয়ে চুমু খেয়ে বললো….
–আমার বউমা বানাবো তোকে জেহনাফ…..
ওর কথায় সবাই এক সাথে হেসে উঠলো। সুখে থাকুক আরজা জেহনাফ জেহের। এভাবেই কেটে যাক ওদের বাকি জীবন। ইতি টানলাম ওদের অধ্যায়৷ কল্পনা করে নিবেন ওরা তিনজন খুব ভালো আছে।
____________________________________________
“কিছুদিন পর”
ফারদিন ক্লান্ত শরীরে ভেতরে প্রবেশ করলো। ওর চোখে মুখে লেগে আছে বিষন্নতা। ফাইজা হাসি মুখে দরজা খুলে ফারদিনের বিষন্ন চেহারা’টা দেখতে হাসি’টা মিলিয়ে গেলো। তা দেখে ফারদিন মুখে হাসি টেনে প্রশ্ন করলো….
–আমার বাবাই সোনা কোথায়?
ফারদিনের প্রশ্ন শুনে ফাইজা এক গাল হাসলো প্রতিদিন যতই ক্লান্ত থাকুক বাসায় ফিরে দরজার দাড়িয়ে তার প্রথম প্রশ্ন থাকবে তার ছেলে কোথায়? ফাইজা ফারদিনের গাল দুটো টেনে হাসি মুখে বললো…..
–আপনার বাবাই সোনা ঘুমাচ্ছে মিস্টার….
ফাইজার কান্ড দেখে ফারদিন ভ্রু কুচকে বলে উঠলো…
–আজ দেখি আমার বউ রোমান্টিক মুডে আছে ব্যাপার কি? বরের চুমু খেতে ইচ্ছে করছে বুঝি। তাহলে ইচ্ছে’টা আর আমি অপূর্ণ রাখি কি করে?
বলে ভ্রু নাচালো। ফাইজা প্রতিউওরে হাসলো। ফারদিন ওর দিকে এগিয়ে আসতেই ফাইজা ছুটে দিলো দৌড়। এক দৌড়ে কিচেনে ঢুকে গেলো। ফারদিন সেদিকে তাঁকিয়ে সশব্দে হেসে উঠলো। ক্লান্ত শরীরে রুমে ঢুকেই দেখলো আইয়াজ ঘুমিয়ে আছে দোলনায়। দোলনার কাছে গিয়ে হাটু ভেঙে বসে আইয়াজের ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাঁকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন। এতক্ষনের সমস্ত ক্লান্তি নিমিশেই উড়ে গেলো। ঠোঁট ছোঁয়ালো আইয়াজের গোলাপি বর্ণের ঠোঁট পানে। ওর মাথায় কিছুক্ষন হাত বুলিয়ে খাটের উপর ধপ করে সুয়ে পড়লো। আজ শরীর’টা একটু বেশিই ক্লান্ত। কলেজের চাকরি’টা ছেড়ে দিয়েছে ফাইজা’র এইচ এস সির পর। এখন সেই আগের মতোই নিজেদের অফিস সামলাচ্ছে। সায়মা খানক আর আগের মতো শক্ত নেই। তাই ফারদিনের উপরে সব দায়িত্ব তুলে দিয়েছে। ফারদিন বিছানায় কপালে হাত রেখে সুয়ে আছে। ফাইজা রুমে ঢুকে আইয়াজ’কে একবার দেখে নিয়ে ফারদিনের পাশে গিয়ে বসলো। আলতো করে ফারদিনের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠলো…..
—আজ মুখ’টা একদম শুকিয়ে গেছে। একটু বেশিই ক্লান্ত তাইনা মিস্টার….
ফাইজার কথা শুনে ফারদিন চুপটি করে ফাইজার কোলে মাথা রেখে মিন মিনিয়ে বলে উঠলো….
—অনেক বেশি টায়ার্ড জান…..
ফাইজা ফারদিনের কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। তারপর শান্ত স্বরে’ই বললো….
–আমার বরের জন্য এখন আমি কি করতে পারি? আদেশ করুন মিস্টার অ’ভ’দ্র……
ফাইজার কথা শুনে ফারদিন হাসলো। তারপর আচমকা ফাইজার বুকে মাথা রেখে ঘোর লাগা কন্ঠে বললো…..
—উহু কিছু লাগবেনা। শুধু একটু জড়িয়ে ধরে রাখো কিছুক্ষন।
ফাইজা হেসে ফারদিন’কে জড়িয়ে ধরে বললো….
–আমি জড়িয়ে ধরলে কি হবে?
ফারদিন এইবার পূর্বের মতোই ঘোর লাগা কন্ঠে বললো…..
–তুমি যে আমার ক্লান্ত শরীরের এক মারাত্নক ওষুধ। যাকে দেখলেই সব ক্লান্তিরা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়…..
বলে ফাইজা’র গলায় চু’মু খেলো। তারপর আগের মতোই ফাইজা’র বুকে মাথা রেখে চোখ বুজে নিলো। ওর ফাইজা এক হাতে ফারদিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
____________________________________________
সূর্য’টা ডুবে যাবে কিছু সময়ের মধ্যে ৷ পশ্চিমাকাশ লাল বর্ন ধারন করেছে। ছাদের দোলনায় বসে আছে ফারদিন আর ফাইজা। আইয়াজ ফারদিনের বুকে লেপ্টে রয়েছে। আর কিছুক্ষন পর পর গুটি গুটি হাত দিয়ে ফাইজা’র খোলা চুল গুলো আকড়ে ধরছে। অনেকক্ষন যাবৎ সহ্য করে এইবার ফাইজা মিছে মিছে রাগ দেখিয়ে আইয়াজের দিকে তাঁকিয়ে রাগী স্বরে বললো….
–ফাতিন তুমি কিন্তু দিন দিন বেশি দুষ্টু হয়ে যাচ্ছো। তোমাকে শাস্তি দিতে হবে। তাহলে যদি তুমি ঠিক হও…..
ফাইজা’র কথার মানে অবুঝ আইয়াজ কি বুঝলো জানা নেই। কিন্তু ঠিকি ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে দিলো। তা দেখে ফাইজা হেসে দিলেও ফারদিন ফাইজা’র গালে আস্তে করে একটা থা’প্প’ড় দিয়ে বলে উঠলো…..
–তোমাকে এত বড় সাহস কে দিয়েছে শুনি? আমার ছেলে’কে শাস্তি দেওয়ার কথা চিন্তা করলেও তোমার শরীরে জ্বর উঠিয়ে ফেলব……
ফারদিনের কথা শেষ না হতেই অদ্ভুত ভাবে আইয়াজ খিলখিল করে হেসে উঠলো। তা দেখে ফাইজা হা করে তাঁকিয়ে আছে। আইয়াজের গুলুমুলু গাল দুটো টেনে বলে উঠলো….
–কি দুষ্টু দেখেছো তোমার ছেলে। আমাকে বকে দিয়েছো এখন হাসচ্ছে।
ফারদিন ও প্রতি উওরে হাসলো।।দুজনে মিলে আইয়াজ’কে জড়িয়ে ধরলো। ফারদিনের কাঁধে মাথা রেখে ফাইজা বললো….
–একটা কবিতা শুনান তো মিস্টার অভদ্র….
ফারদিন ভাবুক স্বরে বললো….
–উম শুনাতে পারি। তবে একটা শর্ত আছে….
ফাইজা ভ্রুদ্বয় কুচকে বললো….
–কি শর্ত আবার?
ফারদিন ফাইজা’র গালে চু’মু খেলো আচমকা। তারপর বললো….
–আজ থেকে আমাকে তুমি বলতে হবে। আর কত কাল আপনি বলে কাটিয়ে দিবে…..
ফাইজা মুখে হাত দিয়ে হাসলো। তারপর হাসতে হাসতেই বললো…
–আমার একটা কবিতা শুনাবে জাননন
জান শব্দ’টা ফাইজা ফারদিন’কে নকল করার জন্য টেনে বললো। ফারদিন হেসে ওর কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে কাব্যিক ভঙ্গি’তে বলতে লাগলো…..
“গোধূলির সেই লগ্নে এসেছিলে তুমি”
এক মুঠো ভালোবাসা নিয়ে..
স্বপ্নের ঠিকানা বানাতে…..
ভালোবেসে কাছে টেনে নিয়ে…
সব দুঃখ ভুলিয়ে দিলে এক নিমিশে….
হয়ে গেলে যেদিন আমার স্বপ্নের রানী…
তাইতো তোমার নাম দিয়েছি…
#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
কবিতা শেষ হতে’ই ফাইজা পরম আবেশে ঠোঁট ছোঁয়ালো ফারদিনের গালে। আকড়ে ধরলো আইয়াজ আর ফারদিন’কে একসাথে। ফারদিন একটু হেসে বললো….
–তোমাদের বুকে আগলে এভাবে বাঁচতে চাই কয়েক যুগ….
বলে ফারদিন আর ফাইজা এক সাথে দুজন দুইদিক থেকে আইয়াজের দুই গালে চু’মু খেলো। আইয়াজে’র দিকে ফাইজা গাল পেতে দিতেই অবুঝ আইয়াজ মায়ের গালের সাথে গাল লাগিয়ে নিশ্চুপ হয়ে রইলো। ফারদিনের কোল থেকে হামাগুড়ি দিয়ে ফাইজা’র কোলে যেয়ে ফাইজা’র গালে গাল লাগিয়ে রইলো নিশ্চুপ হয়ে। ফারদিন ওদের দুজন’কে একসাথে এক হাতে বুকে আকড়ে নিলো। ফাইজা আইয়াজ’কে আকড়ে ধরে মনে মনে প্রার্থনা করতে লাগলো
“সময়’টা এখানেই থমকে যাক। কোনো দুঃখ যেনো আর ছুঁতে না পারে। সব দুঃখের গ্লানি ডুবে যাক এই রক্তিম সূর্যের সাথে। সুখের সূর্য উঠুক আকাশ জুড়ে”
#সমাপ্ত
[আসসালামু আলাইকুম। সব অপেক্ষার অবসান ঘটলো আজ। এই গল্প’টা আমি অনেক যত্ন সহকারে সাজিয়ে লিখেছি জানিনা কত’টা পেরেছি তবে চেষ্টা করেছি। অনেক ভুল ত্রুটি আছে দয়া করে ক্ষমা করে দিবেন। ক্ষমা মহৎ গুন। আর পারলে ভুল গুলো আজকে শেষে দেখিয়ে দিবেন আমি শুধরে নিব। এই গল্প’টায় অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। তার জন্য আপনাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
আপনাদের কাছে আমার একটা ছোট্ট আবদার যদি গল্প’টা ভালো লাগে তাহলে দয়া করে রিভিউ গ্রুপ গুলো’তে একটা রিভিউ দিবেন।
পরিশেষে সবাই’কে বলতে চাই “ভালোবাসি” দোয়া করবেন আমার জন্য। জানিনা কবে ফিরব আবার সামনে এইচ এস সি এক্সাম। ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here