#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_উনচল্লিশ
বিয়ে শুরু হওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে জেহের আরজা’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। উপস্থিত সবাই এক সাথে করোতালি দিয়ে উঠলো। এতক্ষন আরজা’কে খুশি দেখে জেহের অবাক হলে ফাইজা সব’টা বুঝিয়ে বলে। সব’টা শুনে জেহের মনে মনে একটা স্বস্তি পেলো। বিয়ে’টা রীতিমতো শুরু হলো। ফারদিন’কে কবুল বলতে বলা হলে ফারদিন ফাইজা’র দিকে তাঁকিয়ে একদমে তিন’বার কবুল বলে ফেলে। তা দেখে সবাই হাসি’তে ফেটে পড়ে। জেহের’কে কবুল বলতে বলা হলে জেহের ধীরে সুস্থে তিন’বার কবুল বললো আর আরজা ঠিক তার উল্টো ফারদিনের মতো আরজাও একনাগাড়ে তিন’বার কবুল বলে লাজুক হাসতে লাগলো। মেয়ে’টা পারেও বটে। সমস্ত নিয়ম মেনে বিয়ে’টা শেষ হলো। ফারদিন আর জেহের ফ্রেন্ড সার্কেল মিলে ওদের বাসর ঘর আগে’ই সাজিয়ে রেখেছিলো। সব অতিথি’রা চলে যেতে ফ্রেন্ড’দের সাথে ফারদিন আর জেহের সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে’ই ফাইজা আর আরজা দুজনে’ই সিড়ির সামনে বুকে হাত গুঁজে রাস্তা আটকে দাড়িয়ে পড়লো। ওদের দুজনের চোখে কালো সানগ্লাস পড়া। মুখে রয়েছে দুষ্টুমি হাসি। তা দেখেই ফারদিন আর জেহের বুঝে গেছে এদের মাথায় নিশ্চয়ই অন্য কিছু ঘুরছে। ফারদিন স্টাইল করে বুকের থেকে সানগ্লাস’টা নিয়ে ফুঁ দিয়ে চোখে পড়তে পড়তে বললো……
—আপনারা যদি একটু সরে দাড়াতেন তাহলে আমাদের জন্য সুবিধা হতো। আসলে আমাদের নতুন বউ’য়েরা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে…..
,
বলে জেহেরের দিকে তাঁকিয়ে সানগ্লাস’টা নাকের ডগায় এনে জেহের’কে ইশারা করতে জেহের ও বাঁকা হেসে ওর সানগ্লাস’টা পড়ে নিলো। তারপর জেহের আরজা’কে আর ফারদিন ফাইজা’কে ধাক্কা দিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে দিতে বলে উঠলো…..
—সাইড প্লিজ…..
বলে ওরা দুজন স্টাইল মে’রে হেটে দুজন দুজনের রুমে’র দিকে এগিয়ে গেলো। আরজা আর ফাইজা হা করে কিছুক্ষন বোকার মতো তাঁকিয়ে থেকে দুজনেই এক সাথে চিৎকার করে উঠলো…..
—স্টপ……
ওদের চিৎকার শুনে ফারদিন্নার জেহের দুজনে থেমে গেলো। ফাইজা আর আরজা এইবার রেগে ওদের সামনে গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে দাড়ালো। ফাইজা’র সানগ্লাস’টা খুলে নিয়ে ফারদিনের দিকে একটু ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে কিছু একটা বললো। তা জেহেরের কান অব্দি পৌঁছালো না। এইবার ফারদিন নিজের রুপ পরিবর্তন করে জেহেরের দিকে তাঁকিয়ে বললো…..
–আপনি হচ্ছেন আমার বড় ভাই। ইয়ে মানে আপনাকে ছেড়ে আমি আগে কি করে যাই বলুন তো????
ফারদিনের কথা শুনে জেহের পুরো বোকা বনে গেলো। এই ছেলে তো গিরগিটির থেকেও খারাপ। মুহূর্তে’ই কেমন রুপ বদল করে নিলো। জেহের কিছু বলতে চেয়েও পারলো না তার আগেই আরজা জেহেরের হাত ধরে সুর টেনে বলে উঠলো….
–ওগো চলো না ঘরে যাই। ওরা আমাদের জন্য ওয়েট করছে তো??
আরজার কথা শুনে জেহের হা করে তাঁকিয়ে বলে উঠলো…..
–কারা অপেক্ষা করছে গো?
আরজা এইবার লাজুক হেসে বললো…..
-আমাদের জন্য ফুল দিয়ে সাজানো বিছানা…..
এইটুকু বলে লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গি’তে দুইহাতে মুখ ঢেকে নিলো। আর জেহের চোখ বড় বড় করে তাঁকিয়ে আছে। এই মেয়ের কি লজ্জা শরম বলতে কিছু নেই। সবার সামনে কিসব বলছে? জেহের তব্দা খেয়ে দাড়িয়ে আছে। ফারদিনবার ফাইজা মুখ টিপে টিপে হাসচ্ছে। আরজা সেকেন্ড কয়েক পরে মুখ থেকে হাত সরিয়ে জেহেরের হাত ধরে টেনে রুমের দিকে পা বাড়ালো। ফারদিন আর ফাইজা ওদের আগে যেয়ে দরজা আটকে দাড়ালো। ফাইজা দরজায় দাঁড়িয়ে জেহেরের দিকে হাত বাড়িয়ে বলে উঠলো……
—বেশি না অনলি টেন থাউজ্যান্ড……
জেহের জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো….
–হোয়াট? এই তুই না আমার বোন তুই আমার সাথে এমন করতে পারছিস?
ফাইজা ভাব নিয়ে হাত দিয়ে বাতাস করতে করতে বলে উঠলো….
–উহু ব্রো আজ আমি আপনাকে আমি চিনিনা। আজ তো আমি আমার বেস্টুর জামাই এর পকেট খালি করার ধান্দায় নেমেছি…..
ফাইজার সাথে তালে তাল মিলিয়ে ফারদিন ও বলে উঠলো….
–আজ আমি আমার শা’লিকার জামাই এর পকেট খালি করার ধান্দায় নেমেছি…..
বলে একটু হাসলো। আর জেহের ওদের কান্ড দেখে হা করে তাঁকিয়ে আছে। এরা দুজন কত তাড়াতাড়ি রুপ বদল করতে পারে তা দেখছে। এইবার আরজা ও ওদের সাথে তাল মিলিয়ে বললো….
–আরে এত কমে কি হয়? দশ হাজার খুব কম হয়ে যায়। আমার বি’শ হাজার লাগবে…….
বলে আরজা ও জেহেরের দিকে হাত বাড়ালো। জেহের সবার কান্ড দেখে মাথায় হাত দিয়ে নিচেই বসে পড়লো। তারপর হতাশ কন্ঠে বলে উঠলো……
–তোরা আমাকে বাঁচতে দিলিনা….
আরজা এইবার ভেংচি কে’টে বললো….
–আহ ম’রন টাকাই তো চেয়েছি তোমার জান তো চাই’নি। বেশি ফটফট করে না করে টাকা দাও। আমার ঘুম পেয়েছে ঘুমাব। থাক তোমার দেওয়া লাগবে না আমিই নিচ্চি…
বলেই জেহের কে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে টান দিয়ে ওর পকেট থেকে ওয়ালেট’টা বের করে টাকা বের করলো। গুনে দেখলো পনেরো হাজার টাকা আছে। তা দেখে আরজা মুখ’টা অন্য রকম করে বললো…..
–থাক পাঁচ হাজার টাকা মাফ করলাম…..
বলে ফাইজা’র দিকে টাকা গুলো এগিয়ে দিয়ে বললো….
–ননদিনী এইবার আমার জামাই’টাকে ছেড়ে দাও…..
জেহের বসা থেকে উঠে আরজার চুলে টান দিয়ে বললো…
–এহহ আমাকে নিঃস্ব করে দিয়ে এখন আইছে দরদ দেখাতে। লাগবে না তোর দরদ আমার……
জেহেরের কথা শুনে ফাইজা আর ফারদিন সশব্দে হেসে উঠলো। আর আরজা জেহেরের গলা জড়িয়ে আদর মাখা কন্ঠে বললো…..
—আহ বাবু রাগ করছো কেনো? তোমার মানেই তো আমার। আমার মানেই তো তোমার। আসো একটা চু’মু খাই তোমাকে……
বলে জেহের’কে চু’মু খাওয়ার জন্য তৈরি হতে’ই ফারদিন ফাইজা’র চোখে হাত দিয়ে জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো…….
—আমরা এখানে আছিইইইই……
ফাইজা চোখ ছাড়াতে ছাড়াতে বললো….
–আরে চোখ ছাড়ুন আমি একটু দেখব….
বলে চোখ ছাড়িয়ে নিলো। জেহের এইবার আরজা’কে সরিয়ে ফাইজা’র সামনে গিয়ে ওর মাথায় গাট্টি মে’রে বললো….
—স্টুপিড আমি তোর বড় ভাই। লজ্জা করেনা তোর এইসব বলতে…..
ফাইজা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরজা এগিয়ে এসে বললো…..
–কি বলছো? লজ্জা করবে কেন? বেস্টুর রোমান্স দেখবে এতে লজ্জার কি আছে? তাইনা ননদিনী…..
বলে দুজনেই একসাথে হেসে দুজন’কে জড়িয়ে ধরলো। ফারদিন ফাইজার হাত ধরে অধৈর্য কন্ঠে ফাইজা’র কানে কানে বলে উঠলো…..
–জান আমরা কি এখানে দাড়িয়ে অন্যের বাসর দেখব। তাহলে, আমাদের’টা কি হবে?
ফারদিনের কথা শুনে ফাইজার হাসি মুখ’টা চুপসে গেলো। ভয়ে ঢোক গিললো বার কয়েক। ফারদিন জেহের আর আরজার উদ্দেশ্যে বললো…..
–আপনারা রোমান্স করুন আমরা যাই….
বলে ফাইজা’র হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। আর ফাইজা যেতে যেতে জোরে চেঁচিয়ে বলতে লাগলো……
—অল দ্যা বেস্ট ভাবি আর ভাইয়া…..
ফাইজার কথায় আরজা লাজুক হাসলেও জেহের রাগান্বিত হয়ে “ঢং” বলে রুমে ঢুকে গেলো। আর আরজা এইবার আরো জোরে হেসে দিয়ে নিজে নিজেই বলে উঠলো….
–আজকে দেখো চান্দু তোমার কি হাল করি। আমাকে কষ্ট দেওয়ার ফল এইবার হাড়ে হাড়ে টের পাইবা তুমি……
____________________________________________
ফারদিনের রুমের সামনে এসেই ফাইজা নিজের হাত’টা ছাড়িয়ে নিয়ে দরজা আগলে দাড়িয়ে বলে উঠলো……
–ভাই আপনি ব্যবসায়ী একজন মানুষ। সাথে আবার কলেজের শিক্ষক। আপনার থেকে তো আমার পঞ্চাশ হাজার দাবি করা। আমি আবার খুব দয়ালু মানুষ তাই বেশিনা মাত্র পঁচিশ হাজার চাচ্ছি…..
ফাইজা’র কথা শুনে ফারদিন চোখ বড় বড় করলো। পরক্ষনেই মুখে দুষ্টু এঁকে চারদিকে নজর বুলালো। তারপর ফাইজা’কে চমকে দিয়ে ফাইজা’র ঠোঁট জোড়া নিজের করে নিলো। সেকেন্ড কয়েকপর ঠোঁট জোড়া ছেড়ে ফাইজা’র একদম কাছে ঝুঁকে বলে উঠলো….
–দিয়ে দিলাম তোমার পঁচিশ হাজার। কিছুক্ষন পর পঞ্চাশ হাজারের খালি ঘর’টা পূরণ করে দিব জান…..
ফাইজা’কে ঘেষে ফারদিন ভেতরে ঢুকে গেলো। এদিকে ফারদিনের কথা শুনে ফাইজা’র অটোমেটিক হেচকি উঠে গেছে……
#চলবে