যেদিন তুমি এসেছিলে – পর্ব 41

0
548

#যেদিন_তুমি_এসেছিলে
#পর্ব_৪১
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
___________________
নিষ্পলক দৃষ্টিতে আহনাফ তাকিয়ে রয়েছে অর্ষার দিকে। অর্ষার দৃষ্টি নত। চোখ ছলছল করছে। বুকের ভেতর চাপা কষ্ট। সে তখনো ক্যাথি এবং অ্যানির মাথায় হাত বুলাচ্ছিল।
কিছুক্ষণ মৌন থেকে আহনাফ বলল,’ওহ।’
অর্ষা না তাকিয়েই বলল,’আপনার মনে ছিল না?’
‘খেয়াল ছিল না।’
‘আচ্ছা।’
‘তোমার কি এজন্যই মন খারাপ?’
অর্ষা মৃদু হেসে বলে,’কই না তো! আমি ঠিক আছি।’
অর্ষা আর কথা না বাড়িয়ে স্মিথকে বলল বিড়াল দুটোকে যেন ঘরে নিয়ে যায়। এরপর সে আহনাফকেও ঘুমাতে যেতে বলে। দু’জন দু’দিকে ঘুরে শুয়ে রয়েছে। আহনাফ ঘুমিয়ে পড়েছে হয়তো। অর্ষার চোখে ঘুম নেই। সে কাঁদছে নিরবে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। যাতে করে আহনাফ টের না পায়। সকালে অর্ষার ঘুম ভাঙার আগেই আহনাফ অফিসে চলে যায়। সকালে ডাকেওনি।
সকাল ১১টার দিকে অর্ষা ঘুম থেকে ওঠে। চোখ-মুখ ফুলে গেছে। সে ফ্রেশ হয়ে নেয়। পেটে ক্ষুধা আছে, কিন্তু খাওয়ার ইচ্ছে নেই। খাবার সামনে নিয়ে সে নিরবে বসে রয়েছে। মানতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে যে, খুব অল্প সময়ই সে আহনাফের সাথে রয়েছে। তারপর তাকে চলে যেতে হবে। অনেক দূরে। যেখান থেকে চাইলেও হুট করে চলে আসা যাবে না। আহনাফকে একবার ছুঁয়ে দেখা যাবে না। কী অদ্ভূত এক কষ্টের সীমানায় তাকে পাড়ি জমাতে হবে।
অর্ষার ফোনটি তখন বেজে ওঠে। সে খাবার রেখে রুমে যায়। আহনাফ কল করেছে। ফোন রিসিভ করে বলল,’হ্যালো।’
‘ঘুম থেকে উঠেছ?’
‘হুম।’
‘রেডি হয়ে নাও।’
‘কেন?’
‘ঘুরতে যাব।’
অর্ষা ‘না’ বলল না। যেটুকু সময় আহনাফের সাথে সে কাটিয়ে যেতে পারবে, ততটুকুই সে স্মৃতি হিসেবে সাথে করে নিয়ে যেতে পারবে।
ফোন রেখে সে হালকা বেগুনি রঙের একটা জামদানি শাড়ি পরে। মুখে হালকা মেকাপ আর হাতে ম্যাচিং করে চুড়ি পরে। রেডি হতে হতে আহনাফও বাসায় পৌঁছে যায়। আহনাফকে দেখলেই অর্ষার বুকটা কেমন যেন মোচড় দিয়ে ওঠে। কষ্ট হয় খুব। একটুও ইচ্ছে করে না মানুষটাকে ছেড়ে যেতে।
‘হয়ে গেছে তোমার?’
আহনাফের প্রশ্নে মাথা দুলিয়ে সায় দিল অর্ষা। দুজনে একত্রে বাড়ি থেকে বের হয়। গাড়িতে বসে অর্ষা জিজ্ঞেস করে,’আজকে অফিসে যাননি?’
‘গিয়েছিলাম। ছুটি নিয়ে এসেছি।’
‘কেন?’
‘তোমার জন্য। চলেই তো যাবে। তাই ভাবলাম এই সময়টুকু তোমার সাথেই থাকি। সুইজারল্যান্ডের কোথাও ঘুরতে যেতে চাও?’
অর্ষা তেরছাভাবে হেসে বলল,’না।’
আহনাফ এরপরও অনেক কথা বললেও বা বলার চেষ্টা করলেও অর্ষা তেমন কোনো রেসপন্স করেনি। প্রথমে দুজন একটা রেস্টুরেন্টে যায়। সেখানে হেলেনসহ আরো কিছু বন্ধুরা আসে আহনাফের। অর্ষা বাংলাদেশে ফিরে যাবে শুনে হেলেন খুবই আপসেট হয়।
বিষন্ন মন নিয়ে বলে,’তোমায় মিস করব অশা।’
অর্ষা স্মিত হাসে। সে এই কথাটি অন্য কারো মুখ থেকে শুনতে চেয়েছিল। বন্ধুদের সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে দুজনে জেনেভা শহরে যায় ফুপির বাসায়। আজ রাতটা সেখানেই থাকবে। হুট করে ঐ বাড়িতে যাওয়ায় সকলেই বেশ অবাক হয়।
ফুপি মেকি রাগ দেখিয়ে আহনাফকে বলে,’তোরা যে আসবি আগে বলিসনি কেন?’
আহনাফ দুষ্টুমি করে বলল,’তাহলে কি বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে অন্য কোথাও চলে যেতে?’
ফুপি আহনাফের পিঠে চাপড় দিয়ে বলে,’শুধু ফাইজলামি! আগে বলে রাখলে ভালোমন্দ রান্না করে রাখতাম।’
‘তো এখন রান্না করো। সমস্যা কোথায়?’
‘কয় দিন থাকবি তো?’
‘না। সকালেই চলে যাব। হঠাৎ করে আসলাম দেখা করতে কারণ অর্ষা চলে যাবে।’
‘চলে যাবে মানে? কোথায়?’ বিস্মিতকণ্ঠে জানতে চাইলেন ফুপি।
উত্তরে অর্ষা বলল,’বাংলাদেশে ফিরে যাব ফুপি। ভিসার মেয়াদ শেষ।’
‘তাহলে আবার কবে আসবে?’
প্রশ্ন শুনে অর্ষা আহনাফের দিকে তাকায়। আহনাফ কিছুই বলল না। অর্ষার ব্যথিত মুখটি লক্ষ্য করে ফুপি এই বিষয়ে আর কোনো কথা না বলে বললেন,’তোমরা বসো। আমি কিছু বানিয়ে আনছি।’
আহনাফ পিছু ডেকে জিজ্ঞেস করল,’নিহিত আর নেহা কোথায়?’
‘ক্লাসে। চলে আসবে একটু পর।’
আহনাফ টিভি ছেড়ে দেয় দেখার জন্য। অর্ষা চুপচাপ টিভির দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
‘তুমি হঠাৎ করে এমন চুপচাপ হয়ে গেছ কেন?’
অর্ষা আহনাফের দিকে তাকিয়ে বলল,’কোথায়?’
‘তোমার পরিবর্তন কি তুমি দেখছ না? অবশ্য এখন তোমাকে অনেক বেশি ইনোসেন্ট মনে হচ্ছে।’
অর্ষা কিছু বলল না। আহনাফ বলল,’এভাবে মন খারাপ করে থাকার মানে কী?’
‘মন খারাপ না।’
একটুখানি থেমে জিজ্ঞেস করল,’আচ্ছা আমি চলে গেলে আমায় মিস করবেন না?’
আহনাফ কয়েক সেকেন্ড চুপ করে তাকিয়ে থেকে বলল,’করব।’
ফুপি তখন খাবার নিয়ে আসে। পাশে বসে যাওয়ার প্রসঙ্গে কথাবার্তা বলেন। তবে ফিরে আসার বিষয়ে ওদেরকে কোনো প্রশ্ন করে না। এই সব বিষয় না হয় ভাই এবং ভাবির সাথে ফোনে আলোচনা করা যাবে।
বিশ্রাম করার জন্য আহনাফ আর অর্ষা যখন রুমে আসে তখন কিছুটা সময় অর্ষা চুপচাপ ভাবে। তার এখানে ভালো লাগছে না। সে বারান্দায় কিছুক্ষণ পায়চারি করে রুমে ফিরে আসে। আহনাফ উপুর হয়ে শুয়ে আছে।
দ্বিধা কাটিয়ে অর্ষা ডাকল,’শুনছেন?’
আহনাফ মাথা তুলে বলল,’বলো।’
‘চলেন বাড়ি ফিরে যাই।’
আহনাফ এবার উঠে বসে। ভ্রুঁ কিঞ্চিৎ বাঁকা করে জিজ্ঞেস করে,’কেন?’
‘ভালো লাগছে না এখানে।’
‘কাল সকালেই তো বাড়ি ফিরে যাব।’
‘আমার একটুও ভালো লাগছে না। মন টিকছে না।’
আহনাফ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে কী যেন ভাবল। এরপর বলল,’ঠিক আছে। চলো।’
এখনই যাওয়ার কথা শুনে ফুপি ভীষণ রেগে গেলেন। কিছুতেই এখন ওদেরকে যেতে দেবেন না। আহনাফ বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বলল,অনেক গোছগাছ বাকি আছে। তাই না গেলেই নয়! প্রথম দফায় ফুপি একদম রাজি না হলেও পরবর্তীতে রাজি হয়ে যান। নিহিত এবং নেহার সাথে দেখা না করেই ওরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। কোনো কিছুতেই অর্ষার অস্থিরতা কমছে না।
.
.
রাতে গ্রুপ কলে জয়েন হয় অর্ষা। সে বাংলাদেশে ফিরে আসবে বলে সবাই ভীষণ খুশি। আশিক বারবার করে মনে করিয়ে দেয়,
‘লামিয়া কিন্তু আমার জন্য কম্বল আনেনি। এটলিস্ট তুই ভুলে যাস না।’
রেশমি বলে,’তুই চলে আসবি, ভালোই হবে। সবাই মিলে আবার এক সাথে হব। আমার যার সাথে বিয়ের কথা চলছে সবাই মিলে যাব তার সাথে দেখা করতে।’
‘আমার জন্য কিন্তু চকোলেট আনবি মনে করে।’ বলল দিদার।
অর্ষা সবার কথা শোনে। বন্ধুদের কথা ভেবে তারও খুশি লাগে। তবে যখনই আহনাফের কথা মনে পড়ে তখনই মন বিষাদে ছেঁয়ে যায়।
জুঁই জিজ্ঞেস করে,’ভাইয়া সাথে আসবে না?’
অর্ষা ছোটো করে বলল,’জানিনা।’
তখন আহিল বলল,’মনে হয় আসবে না। আসলে তো আমাদের জানাতো।’
‘ওহ।’
সব সময়ের মতো আজ বন্ধুদের আড্ডাতে খুব একটা মনোযোগ দিতে পারল না অর্ষা। তবে বাকিরা বিভিন্ন রকম প্ল্যানিং করছিল অর্ষা দেশে আসলে কোথায় কোথায় ঘুরবে, কত আড্ডা দেবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
তিনদিনের মধ্যে একদিন কেটে গেছে। বাকি দু’দিনে সব গোছগাছ শেষ। আহনাফের তেমন কোনো ভাব পরিলক্ষিত হয়নি অর্ষার কাছে। সে কি খুব খুশি হবে চলে যাওয়ায়? অর্ষার কত না বলা কথা ছিল। কত কিছু বলতে ইচ্ছে হয়েছিল। কিন্তু বলা হয়ে ওঠেনি। এতগুলো মাসেও যা বলা হয়নি, একদিনের ব্যবধানে সেসব কথা বলবেই বা কীভাবে? সব কথা কি মুখে বলা আবশ্যক? চোখের কি ভাষা নেই? নাকি মানুষটির চোখের ভাষা পড়ার ক্ষমতা নেই। হয়তো নেই! একজন মানুষ কী করেই বা অন্য মানুষের মনের খবর জানবে? এটা তো কখনো সম্ভব নয়। সেদিক থেকে বিবেচনা করতে গেলে আহনাফ তার স্থানে সঠিক।
ফ্লাইটের আগের দিন আহনাফ অর্ষার জন্য অনেক কিছু এনেছে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে সে সত্যি সত্যিই আশিকের জন্য একটা কম্বল কিনে দিয়েছে। অর্ষা তখন হেসে ফেলে।
আহনাফ বলে,’থ্যাঙ্কস গড! অবশেষে তোমার হাসি তো দেখতে পারলাম।’
‘আমার হাসি না দেখলেই বা কী? আপনি তো খুশি?’
‘আমার খুশি হওয়ার কী হলো এখানে?’
‘আমি আর আপনার সাথে থাকব না। এতে তো আপনার খুশি হওয়ারই কথা। আপনি তো এটাই চেয়েছিলেন।’
আহনাফ চুপ হয়ে যায়। অর্ষা বলে,’যাই হোক। যে ক’টা মাস এখানে ছিলাম আপনাকে হয়তো খুব জ্বালিয়েছি। কষ্ট দিয়েছি। এজন্য স্যরি। মাফ করে দিয়েন।’
‘এসব ফর্মালিটি কেন দেখাচ্ছ?’
‘আমাদের মধ্যে থাকা সম্পর্কটাও তো ফর্মালিটির মধ্যেই পড়ে তাই না? একটা সুযোগ কি আপনি দিয়েছিলেন সম্পর্কটিকে? একটাবারও কি দিয়েছিলেন স্ত্রীর অধিকার? মন থেকে কি আপনি আমায় মেনে নিতে পেরেছেন? জানি, সবগুলো প্রশ্নের উত্তরই নেগেটিভ। তাহলে কি সম্পর্কটা ফর্মালিটির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়?’
‘তুমি নিজে থেকেও কখনো আমায় এসব বলোনি।’
‘আমার বলে দিতে হবে? আমি কেন আপনাকে ফোর্স করতে যাব? যাই হোক, রাতের ফ্লাইটে তো চলেই যাচ্ছি। অতীত টেনে এনে অযথা এটুকু সময়ে ঝগড়া করার কোনো মানে হয় না।’
‘তুমি রেগে আছো নাকি এখনো তোমার মন খারাপ?’
‘কোনোটাই না।’
অর্ষা অপেক্ষা করে না কোনো রকম কথা বলার জন্য। শ্বশুর-শাশুড়ির সাথে তার কথা হয়েছে। তারা বলেছেন, আগে অর্ষা দেশে ফিরুক। পরে কিছু একটা করা যাবে। অর্ষার কোনো কিছুতে আগ্রহ নেই আর। সে বুঝে গেছে তার প্রতি আহনাফের এখনো যা আছে তা শুধু দয়া,সফ্ট কর্ণার আর সিমপ্যাথি। ভালোবাসা নেই নিশ্চয়ই।
অর্ষা রেডি হয়ে বসে থাকে। প্রচণ্ড কান্না পেলেও সে কাঁদে না। লিলিয়া পরম মমতায় মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। স্মিথ জড়িয়ে ধরে পাশে বসে থাকে। মন খারাপ করে বলে,’তুমি জলদি ফিরে এসো আবার। আমি অপেক্ষায় থাকব তোমার জন্য।’
অর্ষা প্রত্যুত্তর না করে স্মিথের কপালে চুমু খায়। আহনাফ রেডি হয়ে আসলে সন্ধ্যার একটু আগ দিয়ে ওরা বাড়ি থেকে বের হয়। যাওয়ার পূর্বে বুকটা হাহাকার করে ওঠে। ক্যাথি আর অ্যানি কেমন কাতর চোখে তাকিয়ে থাকে। স্মিথের সাহায্যে অর্ষা বিড়াল দুটোকে কোলে তুলে নেয়। হাত-পা কাঁপছে তার ভয়ে। তবুও সে কোলে নিয়েছে। কান্নারা গলায় দলা পাকিয়ে আছে। সে বিড়াল দুটোর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
‘তোদেরকে অনেক মিস করব। তোরা আমায় ভুলে যাবি নিশ্চয়ই?’
নিরীহ প্রাণী দুটো চুপ করে থাকে। কোনো সাড়াশব্দ নেই। ওদেরও বুঝি আজ মন খারাপ। যাওয়ার পূর্বে অর্ষা হানির সাথেও দেখা করে যায়। সবাই তার ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকবে জানিয়েছে। গাড়িতে বসে আহনাফ অবশ্য ফিরে আসার অপেক্ষা করবে এই কথা বলেনি; সে বলেছে,’আমি বাংলাদেশে খুব তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করব।’
অর্ষা কিছুই বলল না। এয়ারপোর্টে পৌঁছেও থম মেরে বসে থাকে। দুজন চুপচাপ পাশাপাশি বসে রয়েছে। কত না বলা কথা বলার ছিল। তবে ইচ্ছে নেই। আর কিছু বলেই বা কী হবে! এনাউন্সমেন্ট শুনে অর্ষা উঠে দাঁড়ায়।
লাগেজ হাতে নিয়ে মলিনকণ্ঠে বলে,’আসছি। ভালো থাকবেন।’
আহনাফও উঠে দাঁড়িয়েছে। ইমিগ্রেশন পার হলেই মেয়েটা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে। কত দূরত্ব তৈরি হবে মাঝখানে! ‘আসছি’ বলেও অর্ষা দাঁড়িয়ে আছে। কেন দাঁড়িয়ে আছে এটা সে জানে না। হয়তো প্রতিক্ষিত কোনো কথা শোনার জন্য। আহনাফ কিছু বলল না। শুধু অর্ষাকে বিস্মিত করে দিল। শক্ত করে জড়িয়ে ধরল সে অর্ষাকে। এতক্ষণ ধরে আটকে রাখা কান্না আর চেপে রাখতে পারল না অর্ষা। মোম যেমন আগুনের তাপে গলে যায়, সেও তেমনই আহনাফের সংস্পর্শে এসে গলে গিয়েছে। ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে সে। লাগেজ ছেড়ে আহনাফকে সেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here