#হৃদয়ের_সুখ_আপনি
#পর্ব-১৬
#Nishi_khatun
কোন এক দরকারি কাজের জন্য বদুরুদ্দিন চেয়ারম্যান রিমশাদের গ্রামে আসে। বাড়িতে ফিরে যাবার পথে তার শরীরটা বড্ড খারাপ লাগছিল। তখন সে পথ দিয়ে রিমশা’র বাবা যাচ্ছিল। তিনি চেয়ারম্যান সাহবের অস্বস্তিকর অবস্থা দেখে দ্রুত তার বাড়িতে আসার জন্য অনুরোধ করেন। চেয়ারম্যান সাহেব এবং তার কিছু কর্মচারী ছিলো। তারা কেউ কোন রকম বারণ না করে রিমশা’র বাবার সাথে তার বাড়িতে যেতে রাজি হয়।
বদুরুদ্দিন সাহেব কে সাথে করে বাড়ির অন্দরমহলের ভেতরে নিয়ে প্রবেশ করেন রিমশা’র বাবা শাওন শেখ।
শাওন শেখ সবাইকে ড্রয়িংরুমে বসার জন্য অনুরোধ করেন। রান্নাঘরের ভেতরে যেয়ে বউ আর মেয়েকে দ্রুত নাস্তার ব্যবস্থা করতে বলে। বাবার মুখে শুনেছে কেউ একজন অসুস্থ! রিমশা ড্রয়িংরুমে অসুস্থ ব্যক্তিকে একপলক দেখতে ডু মেরে চলে যায়।
রিমশা বুঝতে পারে অতিরিক্ত গরমের জন্য তার শরীরটা খারাপ করেছে। করবে না কেন? বাহিরে সূর্যমামা যে অ্যাটিটিউড নিয়ে তার উত্তাপ ছড়াচ্ছে!
তাতে যে কোন প্রাণীর বারোটা বেজে যাচ্ছে।
তা-ই দ্রুত রান্নাঘরে যেয়ে শরবত, গ্লুকোজ, আর ডাবের পানি নিয়ে সোজাভাবে ড্রয়িংরুমে এসে হাজির।
উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে সালাম প্রদান করে বদুরুদ্দিন সাহেবের সামনে শরবতের ট্রে এগিয়ে দিয়ে বলে,” এখানে তিন রকমের পানিও আছে আপনার যেটা পছন্দ ওটা নিয়ে খেতে পারেন।”
বদুরুদ্দিন সাহেব রিমশা’র এমন কান্ড দেখে মুচকি হাসি দিয়ে শাওন শেখ কে উদ্দেশ্য করে বলে,” আমার মেয়েটাও একদম আপনার মেয়ের মতো! আমার শরীরটা একটু খারাপ হলে এমন ভাবে সামনে চার পাঁচটা আইটেম নিয়ে হাজির হয়।
তখন এতো আইটেম দেখে নিজেই কনফিউজড হয়ে বসে থাকি। কোনটা ছেড়ে কোনটা খাবো তা ভেবে।”
রিমশা বলে,”আপনি প্রথমে ডাবের পানি পান করুণ।
এত শরীরটা দ্রুত এনার্জি পাবে। এর কিছুটা সময়পর গ্লুকোজের পানি পান করবেন তার কিছু সময়পর শরবত সিম্পল।”
শাওন এবার একটু মেয়ের এমন গাধামি দেখে বিরক্তিবোধ করে বলে ওঠে,”রিমশা! এই দুপুরবেলা বাসায় মেহমান আসলে তাদরে শুধু শরবত পান করিয়ে পেট ভরাতে হয় বুঝি? তাদের জন্য মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করতে হয় না?”
রিমশা এবার নিজের জিব্বাহ তে কামড় দিয়ে বলে,”দুঃখীত বাবা! আমার ভুল হয়েগেছে, দাঁড়াও আমি এখুনি তাদের খারাবের ব্যবস্থা করছি।”
এরপর বদুরুদ্দিন সাহেব শাওন শেখের বাড়িতে দুপুরবেলার খাবার খেয়ে একটু আরাম করছিল। তখন শাওন শেখের সাথে টুকটাক কথা বলতে বলতে বলে,”তা আপনার মেয়ের বিয়ের বেপারে কিছু চিন্তা ভাবনা করেছেন?”
শাওন শেখ বলে,”জি, ভালো পাত্রের সম্বন্ধ আসলে ইনশাআল্লাহ কন্যার বিবাহ দিয়ে দিবো।”
তখন বদুরুদ্দিন সাহেব বলে,”আমি আমার ছোট পুত্রের জন্য পাত্রী খুঁজছিলাম। আপনার যদি কোন আপত্তি না থাকে তাহলে আমার ছোট ছেলের জন্য আপনার মেয়ের হাত চাইছি।
আমি চেয়ারম্যান বলে ভাববেন না ছেলে মেয়েদের মানুষের মত মানুষ করতে পারি নাই। আলহামদুলিল্লাহ্ আমার সন্তানদের সঠিক ভাবে মানুষ করেছি। তবুও আপনার ইচ্ছা হলে খোঁজ খবর নিয়ে না হয় আপনার মতামত প্রকাশ করবেন।”
শাওন শেখ একগাল হেসে বলেন,” ভাই সাহেব আপনি কী যে বলেন না। আমার রিমশা আম্মাজান আপনার বাড়িতে গেলে যে রাজরানি হয়ে থাকবে এটা আমি জানি। আপনার পরিবার সম্পর্ক আশেপাশের সকল গ্রামের লোকদের মুখে সুনামের সাথে উচ্চারিত হয়। সেখানে আপনি আমার মেয়ের হাত চাইছেন, আর আমি সেখানে মতামত দিতে দেড়ি করতে পারি না। আমি আপনার কনিষ্ঠ পুত্রের সাথে আমার কন্যার বিবাহ দিতে রাজি।”
বদুরুদ্দিন সাহেব আলহামদুলিল্লাহ্ বলে ওঠেন। তারপর তিনি আবারো বললেন- দেখুন সারাজীবন সংসারটা আপনার মেয়ে করবে। আমি চাইছি আপনি আপনার কন্যার থেকে এ বিষয়ে মতামত জানুন। তারপর না হয় বিয়ের কথাবার্তা আমরা সামনে আগাবো।
শাওন শেখ তখন তার স্ত্রী আর কন্যাকে বসার ঘরে ডেকে ওঠেন। মা মেয়ে দুজনে কিছু সময়পর সেখানে এসে উপস্থিত হয়।
রিমশা এসে দেখে তার বাবার চোখ মুখ আনন্দময়। ঠোঁটের কোণায় তৃপ্তিজনক হাসি লেগে আছে। বাবার চেহারাতে এতো আনন্দের আভা দেখে রিমশা মনে মনে খুশি হয়।
শাওন শেখ রিমশা কে উদ্দেশ্য করে বলে,”আম্মাজান, তোমার জন্য চেয়ারম্যান সাহেবের কনিষ্ঠ পুত্রের বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছেন। আমার এ সম্বন্ধে কোন আপত্তি নাই। তা শুনে চেয়ারম্যান সাহেব তোমার মতামত জানতে চেয়েছেন। আমি জানি আমার মেয়ের মতামত হ্যা হবে। তবুও তোমার মুখ থেকে কথাটা জানতে চাইছি মা।”
বাবার এমন কথা শুনে রিমশা’র কলিজায় মোচড় দিয়ে ওঠে। রিমশার চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছা করছিল। কিন্তু বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে সে কাজ করার সাহস তার হচ্ছে না। তার মনের ভেতরে চলা যুদ্ধের খবর তো বাবা- মা জানে না। তাহলে অযথা তাদের উপর রাগারাগি করার মানে হয় না। আবার এমন কোন রিলেশনে সে আবদ্ধ না যার জন্য বিয়েতে সে অমত করতে পারে। এখন তার সামনে একটাই পথ খোঁলা আছে বাবা-মা’র পছন্দমত ছেলেকে বিয়ে করে জীবনটা কে নতুন করে সাজানোর। এসব কিছু এতো সহজ হবে না। তবে মানুষ ইচ্ছা করলেই যে কোন কাজ করতে পারে। তাহলে বিয়েতে সমস্যা কোথায়?
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রিমশা বলল- বাবা তোমার যা ইচ্ছা হয় তা-ই করতে পারো। এই বিয়েতে আমার কোন আপত্তি থাকবে না। বলে সে স্থান ত্যাগ করে।
রিমশা’র মা বলে,”এতো মানুষের সামনের মতামত জানতে চেয়েছ একটু লজ্জা পেয়ে উল্টাপাল্টা ভাবে হলেও মতামত কিন্তু সে দিয়েছে।”
সে যেভাবে কথা বলুক তাতে সমস্যা নাই। আমরা সবাই বুঝি মেয়ে লজ্জায় এভাবে কথা বলেছে। এতে সমস্যা নাই।
এরপর চেয়ারম্যান সাহেব সহ তার কিছু কর্মচারীরা মিলে রিমশাদের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজন সম্পন্ন করে সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তার বাড়িতে চলে যায়।
চেয়ারম্যান সাহবে তার বাড়িতে যেয়ে বিবাহের কথা স্ত্রী কে বলেন। তার স্ত্রী কোন কিছুই বলে না, শুধু বলে,”ছেলেটা বিয়ের জন্য রাজী হবে মনে হয় না!”
বদুরুদ্দিন সাহেব বলেন,”ছেলে বিয়ে না করলে ওর ঘাড়ে বিয়ে করবে।”
রেহেনা বেগম বলে,”সে ছেলের ঘাড় বিয়ে করবে তাতেই খুশি।”
বদুরুদ্দিন সাহেব বলে,”সে সব পরে দেখা যাবে। এখন এ বেপারে কারো সাথে কোন আলাপ করবে না। পরে সময় হলে আমি নিজে সবাইকে এ বিষয়ে অবগত করবো।”
রেহেনা বেগম- দু দিকে মাথা নাড়িয়ে সম্মিত প্রকাশ করে।
*
*
নিজের রুমে এসে জানালার পাশে বসে দূরের ঐ আকাশের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ঐ নীল আকাশের নিচে কতো মানুষের বসবাস। তাদের মাঝে আমিও একজন যার জীবনটা কেমন যেনো তিক্ত হয়ে গেছে। তবুও আমি আমার পরিবারের জন্য সুখে থাকতে চেষ্টা করবো।
এদিকে নিলুফা বেগম এসে তার কন্যার কাছে নিজের খুশি প্রকাশিত করতে বলে ওঠে,”জানিস রিমশা বিয়ের আলোচনা চলছে শেখ বাড়িতে।”
ইফা ভ্রু কুঁচকে বলে,”ঐ চরিত্রদোষ আলা মেয়ের জন্য সম্বন্ধ আনলো কোন হালায়?”
নিলুফা নিজের মেয়েকে হাতের কনই দিয়ে গুতা দিয়ে বলে,”বেয়াদব মেয়ে, মুখ খুললেই খারাপ কথা বলতে হয় তোর? জানিস কোন বাড়ির সম্বন্ধ এসেছে?”
ইফা তাচ্ছল্যের সাথে বলে,”মেম্বার সাহেবের পোলা ছোট। আর তাছাড়া ঐ মেয়ের জন্য কোন ফকিন্নি বাড়ির সম্বন্ধ আসবে। এতে ডাকঢোল পিটানোর কি আছে?”
নিলুফার বলে,”চেয়ারম্যান সাহেবের কনিষ্ঠ পুত্রের জন্য সম্বন্ধ এসেছে রিমশা’র।”
ইফা দ্রুত মায়ের কাছ থেকে কিছুটা দূরে যেয়ে দাঁড়িয়ে বলে,”ঐ শহরে নানান পুরুষের সাথে মেলামেশা করা মেয়ে না কি চেয়ারম্যান বাড়ির বউ হবে? ওমা কোন ভাবে বিয়েরদিন বউ বদল করে আমাকে ঐ বাড়ির বউ করে দিতে পারবে? তাহলে ঐ মেম্বারের সাথে আমার পরকিয়ার সম্পর্কের ইতি টানবো। ”
নিলুফার নিজের মেয়ের গালে কষিয়ে এক থাপ্পড় দিয়ে বলে ওঠে,”বেয়াদ মেয়ে! যাদের নুন খাচ্ছিস তাদের সাথে বেইমানি করতে বলছিস? একদম বাপের রক্ত তোর শরীরে, এখন আফসোস হয় এতো কষ্ট করেও তোকে মানুষের মতো মানুষ করতে পাড়লাম না। নয়তো তুই মেয়ে হয়ে মায়ের কষ্ট বুঝবি না?”
ইফা বিরক্তির সাথে বলে,”তোমার কষ্ট বুঝি বলেই তো অন্যদের সাথে গভীর প্রেমের সম্পর্ক করে নিজের সকল চাহিদা পূরণ করি। আমি কখনো কোন কিছুর জন্য তোমার কাছে আবদার করি না। জানি তো পরের বাড়িতে কাজ করে তুমি কখনো আমার চাহিদা পূরণ করতে পারবে না।”
নিলুফার কান্না জড়িত কন্ঠে বলে,”হারাম সম্পর্ক গড়ে তুই যে বাহাদুরি করছিস তা দু দিনের। মনে রাখিস বেশি বারা ভালো না! একদিন ঝড়ে ভেঙে পড়বি। তখন একূল ওকূল দু কূল হারিয়ে কান্নায় হবে তোর শেষ সম্বল। ”
মায়ের মুখে এমন কথা শুনে ইফা নিলুফা কে জোড়ে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলেদিয়ে বলে,”তোর মতো মা বেঁচে থাকলে আমাকে সারাজীবন কাঁদতে হবে। ধুর তোর কাছে কিছু আশা করার থেকে নিজেই কিছু বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করি তাহলে হবে।”
বলে হনহন করে সে বাড়ির বাহিরে বেড়িয়ে যায়।
(গল্পটা লেখার মনে কোন আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে না। মাঝপথে অসমাপ্ত রাখতে পারবো না বলে মন আর মস্তিষ্কের সাথে যুদ্ধ করে গল্পটা লিখছি।)
”
”
”
চলবে…